(Gopal Bhar)
২০১৩ সালে কলেজে পড়াকালীন এই পত্রিকার পথ চলা শুরু হয়। কমবয়সের যে আবেগ-অনুভূতি থাকে তা পরবর্তীতে এতটা জাঁকিয়ে বসবে ভাবিনি। কলকাতায় পড়াশোনার জন্য নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা ছিল না। হস্টেল, এ-মেস থেকে ও-মেস যখন যেভাবে ঘুরেছি সেভাবেই হয়েছে পত্রিকার ঠিকানা। হস্টেল, মেসের বন্ধুদের নিয়েই মূলত গড়ে উঠেছিল পত্রিকার টিম। প্রথম দিকে পত্রিকা ছিল ত্রৈমাসিক। তখন সাধারণ সংখ্যা হিসেবে— গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ নিয়ে পত্রিকা বেরোত। এরপর ‘নৌকা’ সংখ্যা দিয়ে শুরু হয় বিশেষ সংখ্যার কাজ। পরপর ‘বাংলার কুটির শিল্প’, ‘গোপাল ভাঁড়’, ‘সত্যজিৎ রায়’, ‘ঋতুপর্ণ ঘোষ’ সংখ্যা বেরোয়। বর্তমানে ‘বাংলার হারিয়ে যাওয়া খেলা’ নিয়ে কাজ চলছে। ২০১৩ থেকে ২০২৫, এক যুগ। পাঠকের ভালোবাসায় ‘তবুও প্রয়াস’ আজ একযুগ অতিক্রম করেছে। (Gopal Bhar)

সম্পাদকীয়
দাহপত্র সম্পাদক কমলকুমার দত্ত, একবার জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘নৌকা’, ‘বাংলার কুটির শিল্প’-পর ‘গোপাল ভাঁড়’-কে নিয়ে সংখ্যা! তুমি তো কবিতাপাগল লোক, কবিতা নিয়ে কোনো কাজ করো না!’ (Gopal Bhar)
‘তবুও প্রয়াস’ থেকে যখন আমরা ঠিক করেছিলাম, সাধারণ সংখ্যার পাশাপাশি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করব তখনই ভেবেছিলাম— এমন কোনো সংখ্যা করব যে বিষয়গুলো সেভাবে কাজ হয়নি। প্রথম সংখ্যাতে ঠিক হল ‘নৌকা’। নির্জন বা আড়ালের লেখকদের নিয়ে যেমন কাজ করব ঠিক করেছি, তেমন ঠিক করেছি গ্রামবাংলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করব। বিভিন্ন মিথ থেকে শুরু করে শিল্প, সংস্কৃতি, গান এমনকী তাদের জীবনযাপনের বিভিন্ন বৈচিত্র্য নিয়ে। দুটো বিশেষ সংখ্যা (নৌকা, বাংলার কুটির শিল্প) প্রকাশের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ‘গোপাল ভাঁড়’ নিয়ে কাজ হবে। লেখক থেকে শুরু করে বিভিন্ন অগ্রজ-অনুজ অনেকেই নাক সিঁটকায়। যার অস্তিত্বই নেই, একটা শুধু মিথ— এমন লোক নিয়ে কাজ! (Gopal Bhar)
আমরা ‘গোপাল ভাঁড়’-এর অস্তিত্ব সন্ধানের জন্য এই সংখ্যা করছি না। ইতিপূর্বে অনেকেই এই চেষ্টা করে ব্যর্থও হয়েছেন। তাহলে আমরা কেন এই সংখ্যা করছি? পত্রিকা প্রকাশের পর পাতা ওলটালেই বোঝা যাবে কেন এই সংখ্যা। আমরা অস্তিত্ব সন্ধান করিনি ঠিকই তবে ‘গোপাল ভাঁড়’-এর অস্তিত্ব ছিল কি ছিল না, তার সমস্ত সম্ভাবনা বা না-সম্ভাবনা সমস্তটাই তুলে ধরেছি বিভিন্ন লেখায়। তবুও কয়েকটি কথা বলছি— গোপালের গল্পে যেমন নানা মনস্তাত্ত্বিক দিক আছে, তেমন আছে সামাজিক গুরুত্ব। সেইসঙ্গে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ভারতের গোপাল ভাঁড়ের আজকের দিনে কী ভূমিকা বা এখনো সে সমান গুরুত্বপূর্ণ কেন? এমন নানাদিক তুলে ধরার চেষ্টা বলা যায়। দেড় বছর ধরে সংখ্যাটির কাজ চলছে। সেভাবে কোনো তথ্য নেই। কোনো রেফারেন্স বই নেই। মাঝেমাঝে হতাশ হয়েছি, তবুও হাল ছাড়িনি। যেটুকু তথ্যসূত্র (গোপাল বংশধর নগেন্দ্র দাসের ‘নবদ্বীপ কাহিনী’ থেকে) পেয়েছি, তা ধরে আমরা মুখোমুখি হয়েছি গোপালের বংশধরের (শ্রীমলয় দাস)। শুনেছি জানা-অজানা নানা কথা। ঘূর্ণিতে খুঁজতে খুঁজতে পেয়েছি কৃষ্ণনগর পৌরসভা চিহ্নিত ‘গোপালের বাড়ি’। (Gopal Bhar)

বইয়ের পাতা বা টিভি কার্টুনের বাইরেও গোপালকে নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। পত্র-পত্রিকায় লেখালেখির পাশাপাশি গবেষণাও যে হচ্ছে না তা নয়। গৌতম ভদ্র, সুজিত রায়ের মতো মানুষও গবেষণা করেছেন। তবে সংখ্যাটা করতে গিয়ে আমরা পেয়েছি অসিত কুমার সাহা। তাঁর গোপাল নিয়ে উদ্দীপনা দেখলে অবাক হতে হয়। ঘূর্ণির একটু আগে গোপালের যে মূর্তিটা দেখা যায় ওটা ওঁর উদ্যোগেই স্থাপিত। এছাড়াও তিনি কৃষ্ণনগরে (কারবালা ময়দান, রাধানগর) দু-বছর (২০১৭-২০১৮) ধরে ‘গোপাল ভাঁড় মেলা’ করছেন। দ্বিতীয় বছর আমি গেছিলাম। মেলার গেট বা মঞ্চ না-দেখলে হয়তো বোঝা সম্ভব না যে ওটা গোপাল ভাঁড়-কে নিয়ে মেলা। তবে ওটুকুই বা কম কীসের ‘গোপাল ভাঁড়’কে উদ্দেশ্য করে মেলা! অসিতবাবুর এই উদ্যোগকে কোনোভাবেই ছোটো করা যায় না। আগামী প্রজন্ম এই মেলাকে আরো সুগঠিতভাবে পরিচালনা করলে নদিয়ার ইতিহাস আরো এক ধাপ আগিয়ে যাবে। আর এই সংখ্যার আরেক বড়ো প্রাপ্তি রাজবাড়ির বর্তমান সদস্য (মণীশচন্দ্র রায়) কর্তৃক পাওয়া গোপাল ভাঁড় বিষয়ক তথ্য। এই তথ্য হয়তো, গবেষকদের নতুন করে উসকে দেবে। তবে শুধু আমরা নয়, যিনিই গোপালকে নিয়ে কাজ করতে চেয়েছেন বা করুন না কেন ‘হোমশিখা’ পত্রিকার (১৩৬০-১৩৬১ সংখ্যা) আকরগ্রন্থ। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার এই সংখ্যাটি কোনো লাইব্রেরি সংরক্ষণ করেনি! (Gopal Bhar)
‘নবদ্বীপ কাহিনী’ বইটির কথা অনেকেই শুনেছেন। ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপেও দেখেছি এই বইটি অনেকেই খোঁজ করছেন। কেউই বইটির ঠিকঠাক সন্ধান দিতে পারেননি। পাঠকদের কথা মাথায় রেখে আমরা শ্রীনগেন্দ্র দাস প্রণীত ‘নবদ্বীপ কাহিনী’ বইটি সম্পূর্ণরূপে ফ্যাক্সিমিলিতে রাখছি। সেই সঙ্গে শ্রীইন্দুমাধব ভট্টাচার্য্যের ‘রাজা কৃষ্ণচন্দ্র’ নাটকটির প্রথমদিকের কিছু পাতার ফ্যাক্সিমিলিও। এই ফ্যাক্সিমিলিগুলো দেখলে বোঝা যাবে, গোপাল ভাঁড়কে চর্চা সেইসময়েও কতটা তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। রাখা হয়েছে সঞ্জিতকুমার সাহার ‘গোপাল ভাঁড় অমনিবাস’ বই থেকে নির্বাচিত কিছু গল্প। আমরা সেই গল্পগুলোই রাখার চেষ্টা করেছি যেগুলো খুব বেশি পরিচিত নয় কিন্তু তার এইসময় দাঁড়িয়ে গুরুত্ব অপরিসীম। বংশলতালিকা, দুষ্প্রাপ্য ছবি থেকে শুরু করে নানা তথ্যসহ সংখ্যাটি আমরা প্রকাশ করছি, পরবর্তীতে এই সংখ্যা যদি কোনো কাজে লাগে তাহলে আমাদের এই পরিশ্রম সফল হবে… (Gopal Bhar)
বিশেষ সংখ্যা মানে একটা রাস্তা ধরে হাঁটা। আর হাঁটলেই পাওয়া যাবে পথ। পথ থেকে গলি। বাঁক। এ-এক ক্লান্তিহীন হাঁটা। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য মনকে পায়ের সঙ্গে গলিয়ে দেওয়া। চলতে চলতে কতটা পথ হেঁটেছি? আমাদের পায়ের ছাপ পথকে কি ক্ষত-বিক্ষত করেছে? না আমাদের চলার সুরে পথও গেয়ে চলেছে— “যে-কথা বলিতে চাই,/বলা হয় নাই, /সে কেবল এই–/ চিরদিবসের বিশ্ব আঁখিসম্মুখেই…” (Gopal Bhar)
(বানান অপরিবর্তিত)
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।