Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

প্রয়াণের এক যুগ পরেও মান্নার প্রেমের গান অমর

রূপায়ণ ভট্টাচার্য

অক্টোবর ২২, ২০২৫

Manna Dey
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(Manna Dey)

তীব্র জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে সামনের রেলপথ। জোছনার সঙ্গে সঙ্গী ঘন কুয়াশা। দুটি ইস্পাতের সরলরেখা ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না আর। ওই সময় জনশূন্য মফস্বলি স্টেশনের সামনের আধাবন্ধ দোকান থেকে ভেসে আসে গান।
যখন তুমি আমায় পাগল বলো, ধন্য যে হয় সে পাগলামি। (Manna Dey)

ট্রেনের অপেক্ষায় প্ল্যাটফর্মে বসে থাকা যাত্রী সবিস্ময় শুনতে থাকে ঠিক পঞ্চাশ বছর আগের এই গান। আজও তার হৃদয়ে ঘোর।
পঞ্চাশ বছর হয়ে গেল গানটার?
এইচএমভির শারদ অর্ঘ্যের রেকর্ড নম্বর 7EPE 3100। উল্টোদিকে ছিল আরও দুটি গান। প্রেমের অমর দুটি গান। (Manna Dey)

আরও পড়ুন: বদলে যাওয়া মানচিত্রে বিস্মিত লালদীঘি!

জড়োয়ার ঝুমকো থেকে একটি মোতি খসে পড়েছে।
ও কেন এত সুন্দরী হল।
এই দুটি গানের বয়সও অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেল তা হলে! (Manna Dey)

ওদিকে তখন স্টেশন সংলগ্ন আধাবন্ধ দোকান থেকে পর পর শোনা যাচ্ছে গান। একই লোকের গান। চাই না বাঁচতে আমি প্রেমহীন হাজার বছর।

Manna Dey
প্রেমের যে কথাগুলো বাংলা গানে বলেছেন মান্না, অনেক লাইনে অমর হয়ে রয়েছে

চাই না বাঁচতে-র পর অপবাদ হোক না আরও বয়েই গেল, লাল মেহেদির নকশা হাতে, ক ফোঁটা চোখের জল, নিন্দুকে যা বলছে বলুক, এ জীবনে যত ব্যথা, লাল জবাকে লজ্জা দিয়েছে, বর্ষা তুমি ঝোরো নাকো, সব তোমারই জন্য, আমি আকাশ হতে পারি। (Manna Dey)

গান পাগল কোনও লোক প্ল্যাটফর্মে বসে থাকলে ভাববেন, ১৯৫৩ থেকে কী করে এক গায়কের ২০০৯ পর্যন্ত গান এখনও শুনে শুনে ক্লান্ত হয় না মানুষ।
এমনই এক হেমন্ত দিনে, যখন চারপাশে সবুজ শস্য ক্ষেত্র ঢেকে দিচ্ছে কুয়াশা, ছাতিম ফুলের গন্ধ ছড়াতে আরম্ভ করেছে চরাচরে, তখন সুরে মিলিয়ে গিয়েছিলেন স্বর্ণযুগের শেষ সম্রাট মান্না দে। ২৪ অক্টোবর, ২০১৩। এক যুগ হয়ে গেল ঠিক। এই এক যুগেও অম্লান রয়ে গেল মান্নার প্রেমের গানের বিচিত্র সন্ধান। প্রেমের এমন বিভিন্ন রূপকে এরকম বিভিন্নভাবে বিভিন্ন দিক থেকে আধুনিক বাংলা গানে তুলে ধরেননি কেউ। সত্যিই তিনি বাংলা আধুনিক গানে প্রেমের সম্রাট। (Manna Dey)

“হিন্দি গানে অনেকেরই ধারণা রয়েছে, মান্নার গলায় রোমান্টিক গান অতটা জনপ্রিয়তা পায়নি। এই ধারণাটা যে মারাত্মক ভুল তা দিন দিন আরও আলোর সামনে আসছে।”

বাংলা এবং হিন্দি রিয়ালিটি শো-এর প্রচুর গানে তারই প্রমাণ। হয়তো দশ বছরের কিশোরই গাইছে মান্না গান। এসব শুনলে ৯ নম্বর মদন ঘোষ লেনের বাইরের ছোট্ট ঘরে, মুখ টিপে মান্নার মজার হাসির কথা মনে পড়ে। যখন বলতেন, ‘আমার গানগুলো তো গাওয়া একটু কঠিন। ওই গানগুলো ভাল গাইলে রিয়েলিটি শোয়ে নম্বর ভাল উঠবে। তাই অনেকেই ওই গানগুলো গায়‌।’ (Manna Dey)

হিন্দি গানে অনেকেরই ধারণা রয়েছে, মান্নার গলায় রোমান্টিক গান অতটা জনপ্রিয়তা পায়নি। এই ধারণাটা যে মারাত্মক ভুল তা দিন দিন আরও আলোর সামনে আসছে।

শংকর-জয়কিষনের সুরে রাজ কাপুরের লিপে বেশ কিছু রোমান্টিক গান হিট হওয়ার পর ছবিটাই পাল্টে যায়। প্রচুর নায়কের লিপে তাঁর অনেক রোমান্টিক গান হয়েছে। নতুন করে চর্চায় এসেছে তাঁর কিছু গীত ও গজল। যা হিন্দি গানের ক্ষেত্রে রোমান্টিক মাইলফলক হয়ে রয়েছে। অনেক বাঙালিই এখনও মান্না দের গান বলতে কফি হাউস, জীবনে কি পাব না, ঠিক হয়তো তোমারই জন্যর বাইরে বেরোতে পারেননি। এখান থেকে বেরিয়ে হিন্দি ও বাংলা গানের ছায়াছবির গানের সমু্দ্রে গেলে দেখবেন এ এক অসীম সমুদ্র। যেখানে এত রকমের গান রয়েছে, তার থই পাওয়া মুশকিল। (Manna Dey)

এবং শুধু এই একটা কারণেই এই লেখায় মান্নার শুধু আধুনিক প্রেমের গানের কথাই বলছি। বাংলা ছায়াছবিতে তাঁর অশেষ বৈচিত্র্যময় প্রেমের গানের কথা ধরলে তো আরও বিপদ। সেখানে আরও বৈচিত্র, আরও রং। মাতাল, বাউল, জমিদার, জোকারের সঙ্গে একাকার প্রেমিক। এত উদাহরণ যে, বারবার লোভ হবে, অমুক গানের কথা ভুলে গেলাম কী করে? (Manna Dey)

আরও পড়ুন:উত্তর কেন দেশের সব রাজ্যই বঞ্চিত, উত্তর নেই

প্রেমের যে কথাগুলো বাংলা গানে বলেছেন মান্না, অনেক লাইনে অমর হয়ে রয়েছে। ভাবা যাক না কয়েকটা গানের কথা!

হাজার বদল হোক পৃথিবীর পুরোনো হবে না প্রেম কখনও— এই লাইনটা পৃথিবীর অনেক প্রেমিকেরই! যেরকমভাবে হৃদয়ের মধ্যে গেঁথে যায়, ‘প্রেম চিরদিন কাঁদিয়ে গেছে কেঁদেছে মানুষ তবু ভাল তো বেসেছে’ অথবা ‘হাতে থাক বেমানান কাঁকনের ঝাড়, ও হাতেই দেখি আমি ভাগ্য আমার।’ (Manna Dey)

কখনও গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, কোথাও পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গী করে মান্না তৈরি করেছেন এমন কিছু স্তবক, যা নিজের মনেই গেয়ে উঠতে পারে বাঙালি। ওঠেও। তুমি আর আমি নিয়ে কত অমর লাইন মান্নাসঙ্গীতের। কিছু লাইন লিখতে গেলে ভয় হয়, আরে, এই লাইন তো বাদ পড়ে গেল। যে লাইন বাদ দিলে পাঠক ছাড়বে না। এমন ভাবতে ভাবতেই কিছু গানের লাইন লিখে ফেলি, যেখানে প্রিলুড এবং ইন্টারল্যুড মনের মধ্যে অবিরাম বেজে চলে। (Manna Dey)

Manna Dey
কখনও গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, কোথাও পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গী করে মান্না তৈরি করেছেন এমন কিছু স্তবক, যা নিজের মনেই গেয়ে উঠতে পারে বাঙালি

যদি কাগজে লেখো নাম, কাগজ ছিঁড়ে যাবে, পাথরে লেখো নাম সে নাম ক্ষয়ে যাবে, হৃদয়ে লেখো নাম, সে নাম রয়ে যাবে।– এই লাইনের এমন মাহাত্ম্য যে বিরজু মহারাজের মতো বিশ্ববন্দিত নৃত্যশিল্পীও এ গান শোনাতে থাকেন হারমোনিয়াম বাজিয়ে।
আরও কিছু অমর লাইন মাথায় ঘোরে।
অনেক কথার মরণ হলে হৃদয় কথা বলে।
হৃদয় আছে যার সেই তো ভালোবাসে, প্রতিটি মানুষেরই জীবনে প্রেম আসে।
ভালোবেসে রাজা বা ফকির, দুই হওয়া যায়।
আজ আবার সেই পথে দেখা হয়ে গেল, কত সুর কত গান মনে পড়ে গেল।
তোমার চোখের আলোয় আমি অনেক দিয়েছি সাড়া।
দীপ ছিল, শিখা ছিল, শুধু তুমি ছিলে না বলে আলো জ্বলল না।
তোমার ওই হাসিতে কী দারুণ জ্বালা, যে জ্বলে সেই জ্বলে, তুমি শুধু জানো না। (Manna Dey)

আমার না যদি থাকে সুর, তোমার আছে তুমি তা দেবে।
কোন জোছনায় বেশি আলো এই দোটানায় পড়ে্ছি।
আজ পৃথিবীর ভালোবাসার সময় গেছে যে কমে।
সেই ফাঁকে তুমিও কখন চুরিয়ে যাবে, কাকে পাবে বাঁচাতে তোমারে।
গভীর হয় গো যেখানে ভালোবাসা, মুখেতে সেখানে থাকে না কোনও ভাষা
জানি তোমার প্রেমের যোগ্য আমি তো নই, পাছে ভালোবেসে ফেলো তাই, দূরে দূরে রই
তখনও ভাবিনি আমি কী আশা করে, নীরবে সয়েছো ব্যথা শেষ প্রহরে।
সব তোমারই জন্য, তুমি ভালোবাসো তাই তে্ামার জন্য।
আমার সারাদিন কীভাবে কেটে যায়, শুধু তুমি তুমি করে।
তে্ামাকে নিয়ে যত স্বপ্ন দেখি
ভালোবাসা হল বিপন্ন এক দাবি
সহেলি গো কী নামে তোমায় বলো ডাকি (Manna Dey)

মান্নার সত্তর দশকের প্রেমের গানের পুরো তালিকাই তুলে ধরা যেতে পারে। যা বোঝাবে, কী করে দিনের পর দিন সুপারহিট গান গেয়ে যাওয়া যায়। পঞ্চাশ বা ষাটের দশকের তুলনায় এখানে সুরের বৈচিত্র্য অনেক বেশি।

নচিকেতা ঘোষ এবং সুধীন দাশগুপ্তকে ছাপিয়ে যিনি মান্নার আধুনিক গানে সবচেয়ে বেশি সুর করেছেন, সেই সুপর্ণকান্তি ঘোষ একবার আমায় বলেছিলেন, “মানাকাকু প্রেমের গানের লেভেল টাকে একেবারে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন আধুনিক গানে। সহজ ভাষায় বিচিত্র স্টাইলে এমন গান খুব কম হয়েছে।” (Manna Dey)

মান্নার সঙ্গে একাধিকবার কথা বলে দেখেছি, তাঁর নিজের ধারণা, ৫০ বা ৬০ নয়, নিজের ৭০ দশকের গানকেই তাঁর সেরা পছন্দ মনে হয়। স্টাইল, গলা এবং জনপ্রিয়তার নিরিখেই হয়তো বলেছেন কথাগুলো। এই সময়টাই বাংলা গানে হেমন্তকে সরিয়ে অবিসংবাদী এক নম্বর হয়ে গিয়েছেন তিনি। উত্তমের গানেও মান্না তখন অপরিহার্য। এই সময়টাতেই অনেক বেশি বদল এসেছে বাংলা গানের কথায়। অনেক সরাসরি কথা বলা যাচ্ছে তখন। গৌরী প্রসন্ন-পুলক বাদে এখানে মান্না দে, আরতি মুখোপাধ্যায় ও আশা ভোঁসলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। (Manna Dey)

মান্নার সত্তর দশকের প্রেমের গানের পুরো তালিকাই তুলে ধরা যেতে পারে। যা বোঝাবে, কী করে দিনের পর দিন সুপারহিট গান গেয়ে যাওয়া যায়। পঞ্চাশ বা ষাটের দশকের তুলনায় এখানে সুরের বৈচিত্র্য অনেক বেশি। কথাতেও। গায়ক এখানে বোঝাতে পারেন, কতরকম প্রেমের গান হতে পারে বাংলায়। মিলন ও বিরহ মিশে যায় নিজের অজান্তেই। বারবার ভেঙেছেন, গড়েছেন প্রেমের গানের সংজ্ঞা। (Manna Dey)

“১৯৭৭ সালে কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দের স্মরণে চারটি গান ছিল তাঁর। ১৯৭৮ সালে বসন্তবন্দনায় বেরোয় সারা বছরের গান। এ সব গান প্রেমের বাইরে।”

১৯৭০
এ তো রাগ নয় গো এ যে অভিমান
সুন্দরী গো দোহাই দোহাই

১৯৭১
চাঁদ দেখতে গিয়ে আমি তোমায় দেখে ফেলেছি
ক ফোঁটা চোখের জল ফেলেছো যে তুমি

১৯৭২
আজ আবার সেই পথে দেখা হয়ে গেল
অপবাদ হোক না ভারি বয়েই গেল

Manna Dey
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রেমের গান গেয়ে চলেছেন মান্না

১৯৭৩
বেশ তো তাই হোক
কথা দাও আবার আসবে

১৯৭৪ (বসন্ত বন্দনা)
রাত জাগা দুটি চে্াখ
একই অপূর্ব প্রেম দিলে
তুমি অনেক যত্ন করে
অভিমানে চলে যেও না

আরও পড়ুন: বাংলার মৃত পুজোর গান ও এক অসমিয়া গায়কের মায়াজাল

১৯৭৪ (পুজো)
তুমি একজনই শুধু বন্ধু আমার
যদি কাগজে লেখো নাম
ওগো বর্ষা তুমি ঝোরো না গো
আমার ভালোবাসার রাজপ্রাসাদে

১৯৭৫
যখন কেউ আমাকে পাগল বলে
জড়োয়ার ঝুমকো থেকে
ও কেন এত সুন্দরী হল

১৯৭৫ (কমল দাশগুপ্ত স্মরণে)
কতদিন দেখিনি তোমায়
মেনেছি গো হার মেনেছি

১৯৭৬
ও চাঁদ সামলে রাখো
আমার একদিকে শুধু তুমি
কী দেখলে তুমি আমাতে
তুমি নিজের মুখেই বললে যেদিন

“জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রেমের গান গেয়ে চলেছেন মান্না। আশির দশকের শেষ দিকে একবার গাইলেন— ‘তুমি চিঠি লিখে ভুলে গেলে জুড়ে দিতে খাম আমার হলো না সে চিঠি পড়া শুধু হল বদনাম’‌।”

১৯৭৭ সালে কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দের স্মরণে চারটি গান ছিল তাঁর। ১৯৭৮ সালে বসন্তবন্দনায় বেরোয় সারা বছরের গান। এ সব গান প্রেমের বাইরে। (Manna Dey)

১৯৭৮ সালে হয়েছিল সে আমার ছোট বোন। বাকি দুটি গান প্রেমের।
আমি ফুল না হয়ে কাঁটা হয়ে
এ নদী এমন নদী

১৯৭৯ সালে নীলাম নীলাম ছিল সামাজিকতার প্রেক্ষাপটে, পরবর্তী কালের জীবনমুখী গানের অন্যতম ধারামুখ। বাকি দুটি প্রেমের।
আমায় আকাশ বলল
শুধু একদিন ভালোবাসা। (Manna Dey)

জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রেমের গান গেয়ে চলেছেন মান্না। আশির দশকের শেষ দিকে একবার গাইলেন— ‘তুমি চিঠি লিখে ভুলে গেলে জুড়ে দিতে খাম আমার হলো না সে চিঠি পড়া শুধু হল বদনাম’‌। অনেকদিন পরে এই গানটা নিয়ে আলোচনার সময় মান্না আমায় বলেছিলেন, ‘সে সময় অনেকে বলেছে মান্নাদা এই বয়সে এই গান গাইছে! আমি তো মনে করি, মনের বয়স এখনো বাড়তে দেওয়া উচিত নয়। আমি সেই ভাবেই প্রত্যেক গান বাছি। আমার মনের বয়স বাড়তে দিতে চাই না।’ (Manna Dey)

“চেনা স্বরলিপির মাঝেই অচেনা এক অনুভূতি তুলে ধরা মান্নার প্রেমের গানের এক দিকচিহ্ন। তার বেশ কিছু নমুনা আমরা পেয়েছি তাঁর নন ফিল্ম গজল এবং গীতে।”

এই মনোভাব থেকেই তিনি শেষ জীবনেও গেয়েছেন ‘একা একা আমি ছুটির সকালে জীবনানন্দ পড়ছিলাম, আর তোমার কথা ভাবছিলাম।’ অথবা ‘ও হাসিনা, আমি কি তোর এতই অচেনা, তাকাই যখন আগের মতন, দুহাতে চোখ থাকিস তখন, কিছুই কি তোর মনে পড়ে না?’ (Manna Dey)

৮৭ বছর বয়সে তাঁর জীবনে এইচএমভির শেষ রেকর্ডিংয়ে আটটির মধ্যে তিনি ছটিই প্রেমের গান গেয়েছিলেন কাকা এবং ক্রিকেটকে নিয়ে লেখা দুটি গান বাদ দিয়ে। সে গানের গীতিকার দেবপ্রসাদ চক্রবর্তী আজও বলেন, প্রেমের গান গাওয়ার জন্য তখনও কী আকুতি ছিল মান্নার। (Manna Dey)

Manna Dey
একটা কথা মনে রাখা দরকার, জীবনের শুরুতে মান্না মুম্বইয়ে অনিল বিশ্বাস, ক্ষেমচাঁদ প্রকাশ ও শচীন দেব বর্মনের সহযোগী মিউজিক ডিরেক্টর ছিলেন

চেনা স্বরলিপির মাঝেই অচেনা এক অনুভূতি তুলে ধরা মান্নার প্রেমের গানের এক দিকচিহ্ন। তার বেশ কিছু নমুনা আমরা পেয়েছি তাঁর নন ফিল্ম গজল এবং গীতে। যাঁরা মান্নার গান ফাংশানে গেয়ে থাকেন, তাঁদের অধিকাংশেরই এই অজানা খাজানা অনাবিষ্কৃত থেকে গিয়েছে। (Manna Dey)

একটা কথা মনে রাখা দরকার, জীবনের শুরুতে মান্না মুম্বইয়ে অনিল বিশ্বাস, ক্ষেমচাঁদ প্রকাশ ও শচীন দেব বর্মনের সহযোগী মিউজিক ডিরেক্টর ছিলেন। শচীন কর্তার সুরে মহম্মদ রফি, গীতা দত্তদের গান তাঁকেই তোলাতে হত অনেকবার। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর স্বপ্ন ছিল গায়কের পাশাপাশি সুরকার হওয়ারও। বেশ কিছু ছবিতে কাজ করার পর শংকর-জয়কিষেণ জুটির শংকর তাঁকে কার্যত সাবধান করেছিলেন, ‘আপনি যদি গায়ক হতে চান তাহলে সুরকার হিসেবে আর কাজ করবেন না। সব সুরকার আপনাকে তখন প্রতিদ্বন্দ্বী ভাববে। আপনার ফিল্মের জগতে বেশি গান করা মুশকিল হয়ে যাবে।’ (Manna Dey)

“চিরকালই বৈচিত্র তাঁকে টানে, বারবার সে কথা বলেছেন মান্না। তাঁর ধারাবাহিকতার পিছনে সবচেয়ে বড় সাফল্য হয়তো লুকিয়ে এখানেই। বাংলা প্রেমের গানে তিনি রাগসঙ্গীতের অসংখ্য মশলা মিশিয়েছেন, কাওয়ালি, রাজস্থানী, গুজরাতি, পাঞ্জাবি গানের ছায়ার সঙ্গে।”

মান্না অকপট বলেছিলেন, ‘শঙ্করের পরামর্শ আমার জীবনে একটা টার্নিং পয়েন্ট। ওটাই আমার চোখ খুলে দেয়। ‘এই যে সুর করতে না পারার অতৃপ্তি, তা মারাত্মক। এটা মান্না তাঁর পুজোর গানে উজাড় করে দিয়েছেন সুরকার হয়ে! খেয়াল করলেই দেখবেন, নচিকেতা, সুধীন বা সলিল কাউকে দিয়েই মান্না পুজোর আধুনিক গান করাননি বেশি। সলিল তো একেবারেই নয়, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় কিছু গান করেছিলেন শুধু। নিজের পুজোর গানে মান্না নিজেই সুর দিয়েছেন অনেক বেশি। সবই সুপারহিট। যা দেখেশুনে আশা ভোঁসলে মিউজিশিয়ানদের বলতেন, ‘মান্নাদার পুজোর গানে কী এমন থাকে, যা মানুষকে এত দোলা দিতে পারে?’ (Manna Dey)

চিরকালই বৈচিত্র তাঁকে টানে, বারবার সে কথা বলেছেন মান্না। তাঁর ধারাবাহিকতার পিছনে সবচেয়ে বড় সাফল্য হয়তো লুকিয়ে এখানেই। বাংলা প্রেমের গানে তিনি রাগসঙ্গীতের অসংখ্য মশলা মিশিয়েছেন, কাওয়ালি, রাজস্থানী, গুজরাতি, পাঞ্জাবি গানের ছায়ার সঙ্গে। অথচ আমজনতা তা গোগ্রাসে গিলেছে দিনের পর দিন। (Manna Dey)

আরও পড়ুন: দুর্নীতির শিকড় ও ডালপালার খোঁজে 

যে জনতা সাধারণত মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত থেকে, তারাই হায় হায় করেছে মান্নার প্রেমের গান শুনে। সেই ক্লাসিক্যাল টাচ কীভাবে যেন নিজের করে নিয়েছে আম বাঙালি। নিজের মনে গুন গুন করে উঠেছে ভাটিয়ার রাগে একি অপূর্ব প্রেম দিলে অথবা টোরি রাগে রাত জাগা দুটি চোখ। (Manna Dey)

রাগসংগীত যেন মান্নার সুরের হাত ধরে আম জনতার দরবারে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে নতুন করে। হিন্দি গানে এই কাজ বহুদিন ধরে করেছেন তিনি। বহু বহু সিনেমা অচেনাই থেকে গিয়েছে, অথচ সেই ছবিতে মান্নার ক্লাসিক্যাল ভিত্তিক গান অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছে। আজও যা লোকে নিজের মনে গায়। এ সব গান গায় টিভিতে, সোশ্যাল মিডিয়ায়। (Manna Dey)

প্রয়াণের এক যুগ বাদেও এইভাবে বাঙালিদের, ভারতীয়দের বুকের গভীরে থেকে যান বাংলা প্রেমের গানের সম্রাট।

মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

Rupayan Bhattacharjee

বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই সময় সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কভার করেছেন একাধিক বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিক গেমস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, খেলা, গান, সিনেমা, ভ্রমণ, খাবারদাবার, মুক্তগদ্য— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।

Picture of রূপায়ণ ভট্টাচার্য

রূপায়ণ ভট্টাচার্য

বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই সময় সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কভার করেছেন একাধিক বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিক গেমস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, খেলা, গান, সিনেমা, ভ্রমণ, খাবারদাবার, মুক্তগদ্য— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।
Picture of রূপায়ণ ভট্টাচার্য

রূপায়ণ ভট্টাচার্য

বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই সময় সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কভার করেছেন একাধিক বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিক গেমস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, খেলা, গান, সিনেমা, ভ্রমণ, খাবারদাবার, মুক্তগদ্য— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

কুন্তল মুখোপাধ্যায়
দিলীপ কুমার ঘোষ

সংস্কৃতি

আহার

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
অমৃতা ভট্টাচার্য
শ্রুতি গঙ্গোপাধ্যায়

বিহার

মণিদীপা ব্যানার্জী
প্রদীপ্ত চক্রবর্তী

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

বিতস্তা ঘোষাল
বিতস্তা ঘোষাল
বিতস্তা ঘোষাল
[adning id="384325"]
[adning id="384325"]

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com