(Poetry)
অরুণের আগমন পাইয়ে সন্ধান,
অন্ধকার সনে নিশি করিলা প্রস্থান।
উঠ উঠ দিবাকর,
কিবা রূপ মনোহর,
অপরূপ আভাময় তোমার বিমান।
ধরা ধনী নীলাম্বর করি পরিহার,
পরিলেন পীতবাস কিরণে তোমার। (Poetry)
নাহি আর অন্ধকার কোথা পলাইল?
গিরীশ-গহ্বরে বুঝি গিয়ে লুকাইল।
কেহ ভানুর ডরে,
কাফ্ রীর কলেবরে,
কেহ বা কামিনী-কেশে মিশাইল।
অবশিষ্ট অন্ধকার অন্ধকূপে যায়,
খলের হৃদয়ে গিয়ে অথবা মিশায়। (Poetry)
বিষাদে বিষন্নমুখ বিহঙ্গম কুল
নীরবে বসিয়ে ডালে আঁধারে আকুল,
পেয়ে তব দরশন,
আনন্দে মোহিত মন,
গাইল বিভাস রাগে সঙ্গীত মঞ্জুল।
কলকণ্ঠ সহকারে ললিত কুহরে,
বিমোহিত জন মন সুমধুর স্বরে। (Poetry)
নিরানন্দে নৈশ নীরে নলিনী সুন্দরী,
বিষাদিত ছিল দামে বদন আবরি;
বিভাকর নবোদয়ে,
আনন্দে প্রফুল্ল হয়ে,
হাস্যমুখী সরোজিনী সরসী-ঈশ্বরী;
দোদুল্ল প্রফুল্ল কায় প্রভাত সমীরে,
হেরে পতি বুঝি সতী কাঁপে ধীরে ধীরে। (Poetry)
অনল বেলুনবত্ বিমল আকাশে,
ভাসি ভাসি প্রভাকর প্রভা পরকাশে;
প্রাপ্ত হয়ে শুভালোক,
পুলকে পূর্ণিত লোক,
স্বকার্য্য সাধনে সব নিমগ্ন আশ্বাসে।
কৃষক চলিল মাঠে স্কন্ধে হল ধরা,
সুকুমার তাপে মাটি হয়েছে উর্ব্বরা। (Poetry)
মধ্যাহ্নে মিহির, তব করাল কিরণ,
ফিরাইতে তব পানে পারি না নয়ন।
কর রশ্মি বিতরণ,
অনুমান বরিষণ,
অনল-কণিকাপুঞ্জ উত্তাপ ভীষণ।
সে সময় সুশীতল তরুর ছায়ায়
বসিলে দুর্বার দলে জীবন জুড়ায়। (Poetry)
দে জল দে জল বলে ডাকে চাতকিনী;
পিপাসায় প্রাণ যায় তবু পাতকিনী
খাবে না নদীর নীর,
নীরদ হইতে ক্ষীর
পড়িবে, জুড়াবে যবে তাপিত মেদিনী,
উড়িয়ে উড়ায় পান করিবে তাহায়।
স্বভাব-অঙ্কিত রেখা কে ছাড়িয়ে যায়? (Poetry)
সে সময় সুশিতল বরফের জল
পরিতুষ্ট কর্ দেয় হৃদয়-কমল;
তৃষ্ণায় উত্তপ্ত প্রাণ,
বার বার করে পান,
অনুমান পশিয়াছে হৃদয়ে অনল।
কে করিবে শীতকালে বরফে যতন,
অভাব বিহনে ভাল লাগে কি পুরণ? (Poetry)
অপার মহিমা তব আদিত্য মহান্,
পৃথিবীর পয়ঃ লয়ে পৃথ্বীকে প্রদান।
আতপে তাপিয়ে জল,
উঠাইয়ে বাষ্পদল,
নবীন নীরদকূলে কর বিনির্মাণ।
বারিরূপে বারিদের ধরায় পতন,
ফিরে তার কোলে যেন এল হারাধণ। (Poetry)
তেজঃপুঞ্জ ত্বিষাম্পতি প্রচণ্ড প্রতাপ,
ক্ষুদ্র রাহু করে গ্রাস এ বড় প্রলাপ!
লোকে করে হাহাকার,
দিবসেতে অন্ধকার,
তপন-নিধন হায় এ কি পরিতাপ!
পুনঃ প্রকাশিত তুমি, পৃথ্বী প্রভাময়,
লুকোচুরি খেলা তব গ্রহণ তো নয়। (Poetry)
জ্যোতির্ব্বিদ পণ্ডিতের স্থির বিবেচনা,
গ্রহণ রাহুর গ্রাস করিব রচনা;
গতিক্রমে নিশাপতি,
পৃথ্বী রবি মধ্যে গতি,
একটি সরল রেখা তিনের ধারণা,
তখন তপনে শশী করে আবরণ,
অমনি অবনিতলে প্রকাশ গ্রহণ। (Poetry)
নয়নের ভুলে বলি সূর্য্যের “গমন”,
চলিলে তরণী যথা কূলের চলন;
স্থিতভানু এক স্থলে,
ঘুরিতেছে গ্রহদলে,
অবিরত রবিকায় করিয়ে বেষ্টন।
মার্ত্তণ্ড প্রকাণ্ড অঙ্গ নাহি পরিমান,
ধরার সহস্র গুণ হয় অনুমান। (Poetry)
হয়ত সবিতা তুমি সহ গ্রহগণ,
শ্রেষ্ঠতর সূর্যে বেড়ে করিছ ভ্রমণ;
তোমার সমান কত,
ঘোরে ভানু অবিরত,
গ্রহ সহ সেই সূর্যে করিয়ে বেষ্টন;
শ্রেষ্ঠতর সূর্য পরে স্বদলে লইয়ে
ভ্রমিতেছে শ্রেষ্ঠতম তপনে বেড়িয়ে। (Poetry)
তা বড় তা বড় সুর্য্য আছে পর পর,
অনাদি অনন্ত দেব পরম ঈশ্বর,
বিরাজিত সর্ব্বোপর,
জ্যোতির্ম্ময় কলেবর,
নিমেষে হতেছে সৃষ্টি শত প্রভাকর।
গগনে অগণ্য তারা কে তারা কে জানে,
তা বড় তা বড় সূর্য্য জ্যোতির্ব্বিদে মানে। (Poetry)
ল্যাপল্যাণ্ডে একবার হইয়ে উদয়,
ছয় মাস প্রভাকর প্রকাশিত রয়;
দেবের আরতি যায়,
ব্রাহ্মণেরা নাহি পায়,
সন্ধ্যা করিবার কাল সন্ধ্যার সময়,
মুসলমানের রোজা ভাঙ্গে না ছ মাস,
হয় ধর্ম লোপ নয় জীবন বিনাশ। (Poetry)
ছয় মাস নিরন্তর থাকে অন্ধকার,
কালনিশি অনুরূপ নিশির আকার;
নিশিতে করিছে স্নান,
নিশিযোগে পূজা ধ্যান,
সম্পাদন নিশিযোগে আহার বিহার;
সাগরে মারিয়ে তিমি তেলের সঞ্চয়,
ছয়মাস অবিরত তাতে আলো হয়।। (Poetry)
যমুনা তনয়া তব শ্যামল বরণ,
বিরাজিত তটে তার সুখ-বৃন্দাবন;
যমুনার উপকূলে,
লইয়ে গোপিনীকুলে
করে কেলি বনমালী মুরলীমদন।
সুবাসিত স্বচ্ছ বারি শীতলতাময়,
স্নানে পানে পরিতৃপ্ত মানব নিচয়।। (Poetry)
দুর্দ্দান্ত অঙ্গজ তব ভঙ্গি ভয়ঙ্কর,
শুনিলে তাহার নাম অঙ্গে আসে জ্বর;
আতঙ্গ মণ্ডিত রূপ,
আঁখি দুটি অন্ধকূপ,
সুগোল গভীর কাল ঘোরে নিরন্তর,
উচ্চ গণ্ডে কালশিরা করাল ভুজঙ্গ,
নাকের নাহিক চিহ্ন কেবল সুড়ঙ্গ।। (Poetry)
ভয়ানক গন্নাকাটা দন্তরেখা যায়,
বিষমাখা খড়গশ্রেণী যেন শোভা পায়;
পেটের প্রকাণ্ড খোল,
অবিরত গণ্ডগোল,
আবরণ চর্ম্ম উড়ে গিয়াছে কোথায়,
নাড়ীতে জড়িত কত ভূত ভয়ঙ্কর,
গৃধিনী শকুনী শুনি শিবা নিশাচর।। (Poetry)
এ ষণ্ড মর্ত্তণ্ড তব যোগ্য সুত নয়,
বাপের মতন ব্যাটা কর্ণ মহাশয়,
সাহসিক বলবান,
অকাতরে করে দান,
কল্পতরু হয় জ্ঞান ধরায় উদয়;
দয়ার কারণে তার দাতা কর্ণ নাম,
যা যাচিবে তাই দিবে পূর্ণ মনস্কাম।। (Poetry)

বানান অপরিবর্তিত
অলংকরণ- আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়
দীনবন্ধু মিত্র (১০ এপ্রিল ১৮৩০ – ১ নভেম্বর ১৮৭৩) ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা নাটকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার। বাংলার আধুনিক নাট্যধারার প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্তের সমসাময়িক দীনবন্ধু মিত্র অবশ্য মাইকেল প্রবর্তিত পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক নাট্যরচনার পথে না গিয়ে বাস্তবধর্মী সামাজিক নাট্যরচনায় মনোনিবেশ করেন। এই ধারায় তিনিই হয়ে ওঠেন পরবর্তীকালের নাট্যকারদের আদর্শস্থানীয়।
