Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

সহোদরা

সাদিক হোসেন

অক্টোবর ৪, ২০২৫

Short Story
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(Short Story)

আমাদিগের চক্ষুলজ্জা নাই। দয়িত আলোয় যে আশ্রুকণার দপদপা তাহা গড়াইয়া পড়িলে  উৎপন্ন হয় শব্দগুচ্ছ। উহার না আছে আঁধার, না আছে অতল। অক্ষর ছিন্নবস্ত্রা হেতু আপোষে বহন করিতেছে শুধুমাত্র অর্থ; তাও গুটিকতক। ফলত স্নানরতা রাজিয়াকে ‘সুলতানা’ উপাধিতে ভূষিত করিয়া রাবেয়া ভাবিতেছিল ইয়ার্কি। ঠেঁস। যাহার গঠন নভিস  নিবন্ধের মতো শীর্ণ, টীকা ও টিপ্পনী নাই; ফলত স্নানঘরে জলের শব্দছটায় সে অনুমান করিতে পারে মাই-এর কাঠামোতে কুঞ্চিত চামড়ার ব্যাভিচার, দুই কুড়ি পেরোয়নি এখনও, ইতোমধ্যে কাষ্ঠ– জলকণা গাত্রে আটকাইয়া যায়, যেন বা বনস্পতির কাণ্ডে পিপিলিকার সারিবব্ধ গমন; ফাটাফাটা রোঁয়া ওঠা সোয়েটার যেমন– যদিও তাহা নরম ও পশম নির্মিত; ইহাতে সেটুকুও মোলায়েম ভাব নাই; শরম নাই– এক্কেবারে বাকোয়াস। (Short Story)

বেলার মাজা রৌদ্র আঞ্জিরের গায়ে ঢলাঢলি করিয়া ঘরের ভিতরে জমিয়া রহিয়াছে। ঈষৎ সবুজাভ। ডালে একখানা ডাঁসা। মার্জারের ন্যায় লক্ষ করিতেছিল রাবেয়াকে। সে কচি পাতা তুলিয়া এমন চিবোয় যেন জিহ্বা লাল হইবে এখন। ঠোঁটের ধার বেয়ে খুন নামিবে। সে কালী হইবে। ভরদুপুরে। (Short Story)

আরও পড়ুন: ভাঙাগানের ভেলা

রাজিয়া গামছা দিয়া আড়াল করিয়াছিল নিবন্ধ। এবার সম্পাদকের নিকট তাহা প্রকাশ করিলে রাবেয়া অনাবধানতা খুঁজিল। তাহাতে রাজিয়ার বুঝি কৌতুক জন্মাইয়া ছিল। আয়নায় নিজেই দেখিল প্রমাদ। আড়চোখে রাবেয়াকে বলিল, মজা তো শুধু আমি লুটি না। তার ভাগ তোকেও দিতে হয় মুখপোড়া। আজ আসুক। আসুক আজ। ভাগ নয়। আস্ত মানুষটাকেই চিবিয়ে খাস। তাতে আমার ব’য়েই গেছে। (Short Story)

রাবেয়া কামিজটা আগাইয়া দিল। বলিল, তুই মুখপোড়া। বেশরম! নিজেরে খুলিয়া দেখাইতেছো গড়ন? তাও যদি মণিমুক্তা কিছু থাকিত। কেবলি খড়খড়ে গা। ভাঁজ নাই। অথচ আওয়াজ রহিয়াছে। (Short Story)

সে দন্ত উন্মুক্ত করিলে দেখা গেল– তাহাতে টেরাকোটার কাজ। মুখ পুড়েছে কী পোড়েনি, কিন্তু শরীরে নিপুন কারুকার্য ফুটিছে। সাদা, ফলত লালাভ। নিতম্বখানি কলসীর ন্যায়। ঢকঢক করিতেছে। বোঁটা দুটো যেন বা অর্জুনস্য মিত্রম্‌! দুগ্ধে নিধন হইবে। আহা ব্যথা। আহা নিবীত! তুমি ওরে ভুঁদো বানাইয়া দাও। (Short Story)

-মরণ! রাজিয়া কামিজ পরিল।

দরজাটি আধখোলা রাখিয়া রাবেয়া জলের নিচে দাঁড়াইয়া ফোড়ন কাটিতেছে। বঁটিতে ধার নাই। ফলত গাদা কাটার খচখচানি শুনিয়া রাজিয়া গ্রিলে ঠেস দিয়া অপেক্ষা করিল। (Short Story)

“রাজিয়া মাছটির প্রতি তাকাইয়া কহিল,  ইনি নিত্য, সর্বগত, স্থিরভাব, অচল ও অনাদি; অতএব অচ্ছেদ্য, অদাহ্য, অক্লেদ্য ও অশোষ্য।”

ভাদ্রের আঁতাত বাহিরে। আসমান রঙিন, আবার ধুসর হইতেছে। বাতাস প্রাণ ব্যাতীত। সালংকারহীন। মওকা বুঝিয়া মক্তব ছুটি দিয়াছে। তবুও মনসিজ তির ছুড়িয়াছে বোধহয়, ওধারে, জলের হুতাশে টের পাওয়া যায়। বাউরা মাগী- রাজিয়া কহিল। তাহার তো কলস নাই, ঘটি- ওদিকে রাবেয়া ঠুনকা নহে; তাহার সবই অপর্যাপ্ত; গুহ্যের প্রতি টান সে অনুভব করে নাই; প্রকাশ্যে গুলাল ছিটাইতে পারে, গোবুচন্দ্র স্বামী না হইলেও সে গোপাঙ্গনা। দুই ঊরুর মাঝে গোমস্তা পুষিয়াছে- এমন ভাব। (Short Story)

রাবেয়া মাথায় গামছা বাঁধিল। বলিল, শয্যার সুখ শীতলরে পাটি আন্ধাইরে সুখ বাতী। মনের সুখ হাসনকান্দন নারীর সুখ পতি।
-সেই সুখে ছাই মাখি। জ্বলিতেছে লাল আঁখি।
-কাছছাড়া করিও না দেবানা ছাগল। আলাল দুলালে দিবে দিলের আছর।
-কলিজা কাটিয়া দিব এমন স্বভাব। ছাগশিশু সে তোমার, ভুলিয়া যেও না।
-আইজ সকালে দেখি ব্যথা করে মাই। শিশুকে খাওয়াব দুধ, যম সরে যাক। (Short Story)

Short Story
রাজিয়া, যাহার লড়াই-এর ইতিহাস রহিয়াছে, এখন অস্ত্রহীন, ঘোড়া হইতে পতিত যেন বা

হাসিয়া বাহির হইল রাবেয়া। স্নানঘরে তখনও সাবানের ফেনা। চন্দন উড়িছে। ফেনায় ফু দিলে বুদবুদ উঠিবে কি যাহার ভেতরে বাতাস স্থির? (Short Story)

রাজিয়া বলিল, আমার উপর যত তোর রাগ। যেন আমরা বোন নই কারও।

-আসলে তুই পিউরিটান। যতটা এগোস, তারথেকে বেশি নজর পেছনের দিকে।
-কবরের দিকে?
-সেদিকে যাইনি কখনও।
-আব্বার কবর দেখেছিলাম। শেয়াল এসে গর্ত খুঁড়ছিল।
-মরণেও রেহাই নেই।
-খাবলে খাবে।
-এই তোর দোষ। যা নেই, তার দিকে টান।
-আমার পেট খোলতাই। এই তোর সুবিধা। (Short Story)

“রাজিয়া হাসিয়া কুটিকুটি হইল, হে মহাবাহো, যদি জীবাত্মা সর্বদা জন্মগ্রহণ ও মৃত্যুমুখে প্রবেশ করিয়া থাকেন বলিয়া তাহাকে জাত ও মৃত বোধ কর, তাহা হইলে ত ইহার নিমিত্ত শোক করা কর্তব্যই নহে; কেন না…”

রাবেয়া হাসিয়া কহিল, তবে বুঝেছিস জোর!

-জোর নয়। ওটাকে ছিনিয়ে খাওয়া বলে।
-সে খাওয়ায় বড় স্বাদ। অর্জন থাকে যে।
-সেই খাওয়া হারাম।
-হারাম কাজে মজা অনেক।
-তা বুঝি। সে এলে ছিনিয়ে খাস। (Short Story)

সাদা বেলফুলের মতোন ভাতের দানাগুলি গামলায় ঘুমাইতেছিল। শিশুসুলভ তাহাদের ভঙ্গি। কেহ পাশ ফিরিয়া রহিয়াছে, তো কেহ উপুড়; বেশকয়েকটি এ-ওর গায়ে হেলান দিতেছে। চাদর নাই। নগ্ন। চামচে করিয়া পাতে তুলিয়া দেওয়ার পর তাহাদের ঘুম ভাঙিল। তবে ট্যাঙরাটা ঝোলে ড্যাবড্যাব করিতেছে। কলমি শাক নিয়া পাতে নাড়িতেছিল রাবেয়া। রাজিয়া মাছটির প্রতি তাকাইয়া কহিল,  ইনি নিত্য, সর্বগত, স্থিরভাব, অচল ও অনাদি; অতএব অচ্ছেদ্য, অদাহ্য, অক্লেদ্য ও অশোষ্য। ইনি চক্ষুরাদির অগোচর, মনের অবিষয় (অনুভব) ও কর্মেন্দ্রয়ের অগ্রাহ্য। অতএব তুমি এই জীবাত্মাকে এবম্প্রকার (এইরূপ) অবগত হইয়া অনুশোচনা পরিত্যাগ কর। (Short Story)

রাবেয়া থালা রাখিয়া উঠিয়া পড়িল। দৌড়াইল। কলঘর হইতে ওয়াক শব্দ আসিল।

রাজিয়া হাসিয়া কুটিকুটি হইল, হে মহাবাহো, যদি জীবাত্মা সর্বদা জন্মগ্রহণ ও মৃত্যুমুখে প্রবেশ করিয়া থাকেন বলিয়া তাহাকে জাত ও মৃত বোধ কর, তাহা হইলে ত ইহার নিমিত্ত শোক করা কর্তব্যই নহে; কেন না… (Short Story)

“রাজিয়া পড়িতে থাকিল, ওঁ নমঃ যে চাস্মাকং কুলে জাতা, অপুত্রা-গোত্রিণো মৃতাঃ।
তে তৃপ্যন্তু ময়া দত্তং, বস্ত্র-নিষ্পীড়নোদকং।।

রাবেয়া তখন ফিরিয়া আসিয়াছে। কাঁসার গেলাসটি ঠকাস করিয়া টেবিলে রাখিল।
রাজিয়া ট্যাঙরার কাঁটা ছাড়াইতেছিল। শব্দে দৃকপাত করিল না।
রাবেয়া তাহার পাতে জল ঢালাইয়া দিল।
হাঁস ব্যাকরণ মানে। তাই উহা গোল, সফেদ ও ফাঁপা। ঢোলক বিশেষ। চাঁটি দিলে বাদ্য হইবে। নতুবা অস্থির চইচই। (Short Story)

রাবেয়া ডাঁসাটির প্রতি নজর দিয়া বিছানায় হেলান দিতেছিল। এঁটো বাসন ক’টা মাজিয়া রাজিয়া কহিল, আব্বা থাকলে আজ তুই ঝামটা খেতিস।

-মৃতদের প্রতি আমার অরুচি। ও নিয়ে কথা বলতে চাই না।
-কী চাস তবে?
-গিলাটিন। সেই গিলাটিনে গলা দিব সকলের সামনে। গ্যালারি শো হবে।
-তারপর?
-তারপর আবার কী? কিছু না।
-সত্যিই কিছু না? এত রাগ তোর?
-নিজের উপর নয়। নিজের উপর রাগ সামলানো যায়। কিন্তু তোর উপর কি আমার নিয়ন্ত্রণ আছে।
-বেঁধে রাখবি কোথায়?
-বাঁধতে তো চাই না। হিপোক্রিটদের মৃত মনে করি। অরুচি সেখানে। (Short Story)

আরও পড়ুন: অর্থ কোনও খুঁজে নাহি পাই রে

রাজিয়া, যাহার লড়াই-এর ইতিহাস রহিয়াছে, এখন অস্ত্রহীন, ঘোড়া হইতে পতিত যেন বা। পিতা হইতে সালতানাত ছিনিয়া নিয়া চিচিংফাঁক করিবে ভাবিয়াছিল; একদা- এইক্ষণে, ক্ষণে ক্ষণে, রাবেয়ার কাজলরাগে মোহিত তথা নিজ রূপ প্রকাশে কাছুটি বাঁধিয়া সহদোরার প্রতি তৃষ্ণীম্ভূত হইল। (Short Story)

রাবেয়ার পায়ের গোছ তুম্বা বুঝি বা। তাহাতে মিহি লোম স্পর্শে কাতর হইতে পারে। হত্যাকারী হইতে পারে। তবে ইহার মধ্যে মৃত্যুর আকাংখা তুলোভাব বিশেষ। হাওয়া উঠিলে উড়িবে। হয়তো বা। কিন্তু খেচরজাত নহে। পরোক্ষে উৎফুল্লা। উহাতে বিপদসংকেত নাই। (Short Story)

রাজিয়া বোনের পাশে বসিয়া পাঠ্য খুলিল।
রাবেয়া আড়চোখে তন্ত্রীর ন্যায় টানটান। (Short Story)

রাজিয়া পড়িতে থাকিল, ওঁ নমঃ যে চাস্মাকং কুলে জাতা, অপুত্রা-গোত্রিণো মৃতাঃ।
তে তৃপ্যন্তু ময়া দত্তং, বস্ত্র-নিষ্পীড়নোদকং।।
(Short Story)

“আচমকা দরজায় কলিংবেল। পুরুষ আসিয়াছে। রাজিয়া রাবেয়ার দিকে তাকাইল। যেন অনুমতি চাহিছে সে। রাবেয়া পোশাকে গিঁট বাঁধিয়া গৃহত্যাগ করিতেছে।”

রাবেয়া কর্ণপটহে তালা বাঁধিল। এবার বাজিবে। সে রাজিয়ার কামিজ আঁকড়াইয়া ক্রন্দনরত তন্বীর ন্যায় কাঁপিতে লাগিল, হ্যাঁ, তর্পণ কর্‌ মুখপুড়ি। খানকি। আমাকে এবার রেহাই দে’। যা নিয়েছিলিস, তা ফেরত দে’। আমাকে খুন করে দে’। (Short Story)

রাজিয়া ঝিউড়ি হইল। কাঁপনে সাড়া দিল। বাহিরে ঝরঝর। মন্দ বাতাস ঝাপসা করিতেছে। সে জিজ্ঞাসিল, ঝিনুকের খোল বড় কঠিন হইয়াছে। ভেতরের আর্দ্র মাংস নিজেকে গোপন করিবে এইভাবে?

Short Story
মাংসের সন্ধান পেতে হলে উপরের খোলটিকে ভাঙিতে হইবে। তাহাতে মৃত্যু অনিবার্য

-মাংসের সন্ধান পেতে হলে উপরের খোলটিকে ভাঙিতে হইবে। তাহাতে মৃত্যু অনিবার্য।
-যাহা অনিবার্য, তাহা রুখিবে কে?
-যদি প্রেতবেশে সে আসে?
-যদি মলমাস শেষ নাহি হয়?
-যদি ক্ষুধা নিমিত্ত জেনে শিকারি শিকার করিতে উদ্যত হয়?
-যদি জঙ্গল পুড়াইয়া দিয়া পশুদিগের বলি চায় পরীক্ষিত?
-যদি সে আসে পিতৃরূপে?
-মাতৃরূপে?
-কন্যারূপে?

অচেনা পূর্বপুরুষ যদি আসে যদি ভিক্ষা চায়, যদি আশ্রয় যায় যদি দাসত্ব ত্যাগ করিতে বদ্ধ পরিকর হয় যদি না শোনে সঙ্গীত বাজনা দ্রিমদ্রিম রাত্রির ইঙ্গিত যদি কীট চামড়া হেতু মন্ত্র তর্জমা নিশি… যদি… অভিশাপ ফলে কুষ্ঠ হয় ব্যাধিতে ব্যাধিতে জীবন কাটাইয়া চলি যদি বীর্য তাহার অকুস্থল হইতে নির্গত হইয়া আমাদিগের অশ্রুমোচনে সহায়তা করে… যদি… (Short Story)

আচমকা দরজায় কলিংবেল। পুরুষ আসিয়াছে। রাজিয়া রাবেয়ার দিকে তাকাইল। যেন অনুমতি চাহিছে সে। রাবেয়া পোশাকে গিঁট বাঁধিয়া গৃহত্যাগ করিতেছে। (Short Story)

“সে ছাগশিশুর ন্যায় ব্যাঁ ব্যাঁ ডাকিবে। তাহাকে চুপ করাইবে না রাজিয়া। তাহার গর্দানে অঙ্গুলি চালাইয়া বশ করিতে পারে। করিবে না- আজ শপথ নিল।”

তাহার পায়ে নিক্কন। কলসীর শব্দে জলের ঢকঢক। তাহার তুম্বা দণ্ডের সহিত যোগাযোগ স্থাপন করিয়া সেতার হইবে এখুনি। হইতে পারিত। হইল না রাজিয়ার দরজা খুলিবার শব্দে।
সে আসিয়াছে। (Short Story)

সে ছাগশিশুর ন্যায় ব্যাঁ ব্যাঁ ডাকিবে। তাহাকে চুপ করাইবে না রাজিয়া। তাহার গর্দানে অঙ্গুলি চালাইয়া বশ করিতে পারে। করিবে না- আজ শপথ নিল।
সে আসিয়া বসিয়াছে বিছানায়। (Short Story)

আহারাদি লইয়া রাজিয়া যখন প্রবেশ করিল পুরুষটির চক্ষু লোলুপতা হেতু ভার বহন করিতেছে। ফলত কোমর হইতে বুক, বুক হইতে চিবুক, চিবুক ছাড়াইয়া পদপদ্মে ঘুরিয়া পুনারায় মসৃন বুকে নকিবদার হইয়াছিল। (Short Story)

পর্দার ওপারে রাবেয়া ছিল না। থাকিলে এই মর্মস্পর্শী দৃশ্যের নিকট হইতে সমস্ত অর্থ ছিনাইয়া উহাদিগকে মূল্যহীন করিতে পারিত। ভার লাঘব হইত।
রাজিয়া জিজ্ঞাসিল, ইহাতে আরাম পাও? (Short Story)

“রাবেয়া বনোমধ্যে হরিণশাবকের ন্যায় ইতস্তত ঘুরিতেছিল। কখনও পালঙ্কে, কখনও টেবিলের কোণায়, কখনও জানালার শিকে ধাক্কা খাইতেছিল। ঈষৎ আঘাতপ্রাপ্ত হইয়া ছিল।”

সে কহিল, নিশ্চয়। তবে আরাম দিবার আরাম অনেক। ত্যাগ নয়। তাও আসলে পাওয়া।

-পাওনাগন্ডা বুঝে নেওয়া যাকে বলে।
-তা বলতেই পারো। অপরের ধনসম্পদ লুঠেই তো সভ্যতা টিকে থাকে।
-জ্ঞানও তাই। লুঠের উপরিমাল!
-তাই কি?
-তা নয়তো কী?
-অভিসম্পাত!
-অভিশাপ!
_যেমন? (Short Story)

রাজিয়া হাসিয়া ফেলিল। বলিল, এইখানে তাকে ডাকি।
-কাকে?
-সহোদরা। (Short Story)

রাবেয়াকে ডাকিয়া আনিল রাজিয়া।
রাবেয়া প্রকাশিল বৃষ্টিমধ্যে ধ্বস্ত ঝিঁকরা হেন। (Short Story)

“উহাদের অজ্ঞানতার নিকট পুরুষটি আপোষ করিতে চাহিতেছিল। কিন্তু শব্দ হইতে ততক্ষণে অর্থ ঝরিয়া পড়িবার উপক্রম। ফলত এই যজ্ঞে সে ছাই হইতে পারিল না।”

পুরুষ আহারাদি ত্যাগি সেদিকে ধাবিত হইলে রাজিয়া তাহাকে নিরসন করিল, যজ্ঞে বাধা দিও না পতি, সে বলিল, অগ্নিস্পর্শে তুমি ছাই হয়ে যেতে পারো।

-ছাই অর্থে ভূত?
-ছাই অর্থে মরণ!
-মরণে আবার আমার অরুচি। রাবেয়া কহিল।
-তবে?
-জগতে শুক্ল ও কৃষ্ণবর্ণ দুইটা শাশ্বত গতি আছে; তন্মধ্যে একতর দ্বারা অনাবৃত্তি ও অন্যতর দ্বারা আবৃত্তি হইয়া থাকে।
-তুমি, হে নারী, শুক্লগতি সম্পন্না? পুরুষ জিজ্ঞাসিল।
-আমি, হে পুরুষ, অগতি। রাজিয়া উত্তরিল।
-এখন? রাবেয়া রাজিয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলিল।
-তুমি অগ্নির ন্যায় প্রভাসম্পন্ন হও।
-তাহলে তো তুমি ছাই হইবে। মন্দ বাতাসে বিলীন হইয়া যাইবে। তুমি অপদার্থ হইবে। ধাতুরূপ সকল গুন ঝরিয়া পড়িবে। (Short Story)

Short Story
রাজিয়া বলিল, আমার উপর যত তোর রাগ। যেন আমরা বোন নই কারও

রাবেয়া বনোমধ্যে হরিণশাবকের ন্যায় ইতস্তত ঘুরিতেছিল। কখনও পালঙ্কে, কখনও টেবিলের কোণায়, কখনও জানালার শিকে ধাক্কা খাইতেছিল। ঈষৎ আঘাতপ্রাপ্ত হইয়া ছিল। উহার উপরিতলে বহিতেছিল ঝর্না। সেইখানে পিপাসা মেটাইতে গিয়া আচমকা যেন ব্যাধের উপস্থিতি টের পাইয়াছে রাজিয়া। সে জিজ্ঞাসিল, ভ্রাদ্রে কি আশ্বিন আসিতে পারে না? (Short Story)

পুরুষকণ্ঠ ব্যাঁ ব্যাঁ করিয়া উঠিল।
বাহিরে তখন বৃষ্টি। ঝরঝর। হাওয়া ও ছাঁট।
তস্মিন্নদ্রৌ কতিচিদবল্যাবিপ্রযুক্তঃ স কামী
নীত্বা মাসান্ কনকবলয়ভ্রংশরিক্তপ্রকোষ্ঠঃ।
আষাঢ়স্য প্রথমদিবসে মেঘমাশ্লিষ্টসানুং
বপ্রক্রীড়াপরিণতগজপ্রেক্ষণীয়ং দদৰ্শ॥
রাজিয়া কহিল, তবে এই থাক। (Short Story)

আরও পড়ুন: সিঙাড়া

সিক্ত বিছানায় যেন বা কান্তা শুইয়া ছিল। রাবেয়া পুরুষটিকে নকল করিয়া বলিল, ব্যাঁ ব্যাঁ।

উহাদের অজ্ঞানতার নিকট পুরুষটি আপোষ করিতে চাহিতেছিল। কিন্তু শব্দ হইতে ততক্ষণে অর্থ ঝরিয়া পড়িবার উপক্রম। ফলত এই যজ্ঞে সে ছাই হইতে পারিল না। (Short Story)

গৃহত্যাগের পূর্বে আহারাদি ভক্ষণ করিয়াছিল। কারণ উহাতে পাপ ছিল না।

মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
অলংকরণ- আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়

Author Sadique Hosen

লেখক পরিচিতিঃ
সাদিক হোসেন - ১৯৮১ সালের ১১ই ডিসেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগণার মহেশতলায় জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের স্কুল থেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ইনফর্মেশন টেকনলজি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে ছিলেন। কিন্তু এই পড়াশোনা ব্যবহারিক অর্থে বৃথা যায়। পরবর্তীকালে মাল্টিমিডিয়া চর্চা করে বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত।

দেবতা ও পশুপাখি (কবিতা সংকলন, ২০০৭) সম্মোহন (গল্প সংকলন, ২০১১), মোমেন ও মোমেনা (উপন্যাস, ২০১৪), গিয়াস আলির প্রেম ও তার নিজস্ব সময় (গল্প সংকলন, ২০১৪), রিফিউজি ক্যাম্প (গল্প সংকলন, ২০১৭), মোন্দেলা (উপন্যাস, ২০১৯), হারুর মহাভারত(গল্প সংকলন, ২০১৯), আনন্দধারা (গল্প সংকলন, ২০২২) – এখনো পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের তালিকায়।

‘সম্মোহন’ বইটির জন্য পেয়েছেন সাহিত্য আকাদেমি যুবা পুরস্কার (২০১২) ও ডলি মিদ্যা স্মৃতি পুরস্কার। ‘গিয়াস আলির প্রেম ও তার নিজস্ব সময়’ বইটির জন্য পেয়েছেন নমিতা চট্টোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার (২০১৫)। ছোটোগল্পের জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সোমেন চন্দ পুরস্কার(২০২৪)।

Picture of সাদিক হোসেন

সাদিক হোসেন

লেখক পরিচিতিঃ সাদিক হোসেন - ১৯৮১ সালের ১১ই ডিসেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগণার মহেশতলায় জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের স্কুল থেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ইনফর্মেশন টেকনলজি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে ছিলেন। কিন্তু এই পড়াশোনা ব্যবহারিক অর্থে বৃথা যায়। পরবর্তীকালে মাল্টিমিডিয়া চর্চা করে বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। দেবতা ও পশুপাখি (কবিতা সংকলন, ২০০৭) সম্মোহন (গল্প সংকলন, ২০১১), মোমেন ও মোমেনা (উপন্যাস, ২০১৪), গিয়াস আলির প্রেম ও তার নিজস্ব সময় (গল্প সংকলন, ২০১৪), রিফিউজি ক্যাম্প (গল্প সংকলন, ২০১৭), মোন্দেলা (উপন্যাস, ২০১৯), হারুর মহাভারত(গল্প সংকলন, ২০১৯), আনন্দধারা (গল্প সংকলন, ২০২২) – এখনো পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের তালিকায়। ‘সম্মোহন’ বইটির জন্য পেয়েছেন সাহিত্য আকাদেমি যুবা পুরস্কার (২০১২) ও ডলি মিদ্যা স্মৃতি পুরস্কার। ‘গিয়াস আলির প্রেম ও তার নিজস্ব সময়’ বইটির জন্য পেয়েছেন নমিতা চট্টোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার (২০১৫)। ছোটোগল্পের জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সোমেন চন্দ পুরস্কার(২০২৪)।
Picture of সাদিক হোসেন

সাদিক হোসেন

লেখক পরিচিতিঃ সাদিক হোসেন - ১৯৮১ সালের ১১ই ডিসেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগণার মহেশতলায় জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের স্কুল থেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ইনফর্মেশন টেকনলজি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে ছিলেন। কিন্তু এই পড়াশোনা ব্যবহারিক অর্থে বৃথা যায়। পরবর্তীকালে মাল্টিমিডিয়া চর্চা করে বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। দেবতা ও পশুপাখি (কবিতা সংকলন, ২০০৭) সম্মোহন (গল্প সংকলন, ২০১১), মোমেন ও মোমেনা (উপন্যাস, ২০১৪), গিয়াস আলির প্রেম ও তার নিজস্ব সময় (গল্প সংকলন, ২০১৪), রিফিউজি ক্যাম্প (গল্প সংকলন, ২০১৭), মোন্দেলা (উপন্যাস, ২০১৯), হারুর মহাভারত(গল্প সংকলন, ২০১৯), আনন্দধারা (গল্প সংকলন, ২০২২) – এখনো পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের তালিকায়। ‘সম্মোহন’ বইটির জন্য পেয়েছেন সাহিত্য আকাদেমি যুবা পুরস্কার (২০১২) ও ডলি মিদ্যা স্মৃতি পুরস্কার। ‘গিয়াস আলির প্রেম ও তার নিজস্ব সময়’ বইটির জন্য পেয়েছেন নমিতা চট্টোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার (২০১৫)। ছোটোগল্পের জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সোমেন চন্দ পুরস্কার(২০২৪)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সাদিক হোসেন

সংস্কৃতি

আহার

অমৃতা ভট্টাচার্য
শ্রুতি গঙ্গোপাধ্যায়
অমৃতা ভট্টাচার্য

বিহার

প্রদীপ্ত চক্রবর্তী

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

বিতস্তা ঘোষাল
বিতস্তা ঘোষাল
[adning id="384325"]
[adning id="384325"]

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com