Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

অন্ধকার রঙ্গমঞ্চে একাই ঈশ্বরী

মন্দার মুখোপাধ্যায়

নভেম্বর ৮, ২০১৯

Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

দৃপ্ত পৌরুষের মধ্যেও এমন টলটলে মায়া, নবনীতাদি ছাড়া এ আর কার অস্তিত্বে দেখেছি। ওই মায়াটাই সব। ওই মোহময় মায়া দিয়েই বার বার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছেন। আর সেই প্রতিবিম্বের স্বাদু স্বাদ  গোগ্রাসে গিলে কতবার যে জীবনে ফিরেছি আমরা! সহজের পথটাই চেয়েছিলেন।কিন্তু বার বার আড় হয়ে, বেঁকেচুরে সে রাস্তা মিলিয়ে গিয়েছে দূরে। কোমরে আঁচল জড়িয়ে, ‘ তবে রে’, বলেই কঠিনতর বাঁকে পথটাকে সিধে করে ছেড়েছেন।শধু কি লেখা! যাপনের টুকিটাকি, আলুরঝালুর এটা ওটা – সব, সবটুকু চাই। সম্পর্কের চালচিত্রে কে নেই! মানুষের পর মানুষ, মানুষের স্রোত,  অসংখ্য গাছ, প্রতিবেশী বাড়িগুলি আর পায়রা – টিয়া- প্যাঁচা – ঈগল ও নেংটি ইঁদুর। সক্কলেই  যেন সেই চিরনির্ভর ‘ কানাই ‘ আর  ‘ ঝর্না ‘। সক্কলেই সেই কিছু না কিছু। আর উনি  নিজে তাই ‘নটী নবনীতা’। অন্ধকার রঙ্গমঞ্চে একাই ঈশ্বরী।

অনায়াসে এত মেধা আর মেধার  শান। তুলনাহীন পাণ্ডিত্য, আলোকিত প্রেমের বাবা মা আর ওই ‘ ভালোবাসার’ বারান্দা। তাই বোধহয় শেষ লেখাতেও সেই অগম্য যাত্রা। শব্দে না লিখলেও পরের পংক্তি তো তাই – ‘ জানিস আমি স্যান্ডো করি’! ঠিক যেন স্টিয়ারিং-এ জাঁকিয়ে বসে হুস করে বেরিয়ে গেলেন এক লং ড্রাইভে। ছুটি নয় ছুট। রহস্যময় মৃত্যুর উজান ঠেলে নিশ্চয়ই নতুন কোনো পথে। সহপাঠী স্বজন অমিয়  (দেব ) আর মানবেন্দ্র ( বন্দ্যোপাধ্যায়)’ কর কী’ – ‘কী কর’ বলবার আগেই। বলতেন,  ‘তোমাদের মস্ত অসুবিধে কী জান? তোমরা কোনো কথা শেষ পর্যন্ত মন দিয়ে শোন না। আমি সবটুকু মন দিয়ে শুনি’।  তাঁর এ কথাটাই আজ আবার নতুন করে মনে আনতে ইচ্ছে হলো। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বসবাস করেও আধুনিকতম সাহিত্যভাবনা এমনকি বিশ্ব সাহিত্য ও শিল্পের নানা দিক বুঝতে তাঁর কোথাও হোঁচট লাগেনি। বোধ আর ভাষাকে নিয়ে এক নিজস্ব অবগাহনে ডুবে থেকেছেন। তর্কবিতর্ক এড়িয়ে যাননি কখনো।  তাই বাদ পড়ে গেলেই কুরুক্ষেত্র। সে ছোটই হোক বা বড়, নগণ্য বা বিশিষ্ট! ফাইভ স্টার টু মুড়ি – তেলেভাজা। বাদ মানেই তো জীবন বরবাদ। ওসব চলবে না। সিলেবাসে নেই। তাই অভিমানে সম হতেও সময় লাগেনি খুব। কত বছর হল অবসর নিয়েছেন। তবু এক জাত মাষ্টারমশাই। আবার একই সঙ্গে ছাত্রও বটে।  বললেই হল, ‘এই  শোন’।

কনিষ্ক বিমান দুর্ঘটনার পর অক্লেশে লিখেছিলেন ‘ স্বভূমি ‘। মর্মান্তিক হাহাকারের মধ্যে আরো একবুক হু হু জুড়ে  তা হলো সম্পর্কের বাঁধন। যে মেয়ে সবার জন্য ভাবতো, সে চলে গেল। দেহাবশেষ হারিয়ে গেল সাগরে ভাসা কতগুলো পোড়া টুকরোয়। ওই একই বিষয় নিয়ে ইংরেজিতে লিখেছিলেন ভারতী মুখোপাধ্যায়। কিন্তু নবনীতাদি এক বৃহৎ সংকেতকে যেন ধরলেন একফোঁটা চোখের জলে। এই মরমী মায়াই তাঁর মুন্সিয়ানা। ছোট হতে হতেও কখন যেন তা মস্ত একটা কিছু হয়ে যায়। আর ভীষণ অনায়াসে। কবিতায় যেভাবে লিখতেন, ধানের শিষে দুধ ভরে আসে – তেমনি, ঠিক তেমনি। কোথাও কোনো অপূর্ণতা নয়।  দায়বদ্ধতায় পরিপূর্ণ বাঁচা। সমৃদ্ধিতে বাঁচা। অভিমানে বাঁচা। আনন্দে খিল খিল করে হেসে।

উপন্যাস, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, ফিচার, অনুবাদ এবং ভ্রমণ – কোথায় তিনি নেই!  বলতেন ‘বামুনের পৈতের মতো আমার এই লেখার কলমটি’। সে অর্থে বিশেষ কোনো সাহিত্য ঘরানার মধ্যে গোষ্ঠীবদ্ধ করা যায় না তাঁকে। অথচ তিনি নিজেই এক প্রতিষ্ঠান। আড়ম্বডর, জৌলুস, হাঁক – সবই তো রাণীর মতো ছিল। কিন্তু তারই মধ্যে যেন একজন একতারা বাজানো বাউলনী,  যে একবস্ত্রে হেঁটে চলেছে কৃষ্ণনাম  জপতে জপতে। না আছে তার চাল, না তার চুলো, না সেই বৃন্দাবন। পথপার হয়ে গন্তব্যও নয়। পথটুকু যেন শেষ না হয়, শুধু এই প্রার্থনা।

 ‘করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে’ – এ খুব সহজ ভ্রমণ নয়। তেমনই সহজ নয় কুম্ভস্নান এবং তা নিয়ে বই লেখা। সহজ নয় একের পর এক অনুবাদের কাজ। সহজ নয় ছোটদের জন্য এই এত এত লেখা। সহজ নয় প্রায় এক দশক ধরে একটি সাপ্তাহিক কলাম জনপ্রিয়তার সঙ্গে চালানো। পুরস্কার সবাই পান না। কেউ কেউ পান। আবার পুরস্কৃত হলেই যে তিনি আগ্রহী পাঠকও পাবেন এমনটাও নয়। নবনীতাদি দুটোই পেলেন। সকলের জন্যেই যেন লেখা। আর তা লেখার জন্যেই লেখা। লক্ষ লক্ষ মুহূর্তকে যেন লক্ষ্মী  বেঁধে রাখার মতো করেই সাহিত্যের ভাঁড়ারে আটক করে রেখে গেলেন। জীবনের ওপর এত বড় প্রতিশোধ নেওয়ার স্পর্ধা তিনিই দেখিয়ে গেলেন,  অথচ হাসতে হাসতে। সবটাই যেন  সেই এক্কা আর দোক্কা।

কয়েক ঘণ্টা আগেও গুগল ক্লিক করলে তাঁর জীবন পরিসরে শুধু জন্ম সাল আর তারিখ ভেসে উঠছিল। এই কিছুক্ষণ হলো সেখানে ছেদ পড়েছে। মৃত্যুর সীমানায় পৌঁছে গেলেও তিনিই তো আমাদের  সেই ভালোবাসার বারান্দা। সেখানেই মায়া বিছিয়ে বারে বারে খেলতে ডাকবেন তিনি। জানি না কি, যাবো না বললেই ঠোঁট ফুলিয়ে পা ছড়িয়ে অভিমান!

নবনীতাদি, তোমার আদরের টবে যে চাঁপা ফুটে আছে, আজ তাই দিয়ে সাজিয়ে দিলাম তোমাকে। কপালে পরিয়ে দিলাম বড়ো লাল টিপখানি। গাঢ় নীল কাঞ্জিভরম শাড়িতেও চাকা লাগানো যে পা দু’খানি কিছুতেই ঢাকা পড়েনি, সেখানেই চুমু খেয়ে প্রণাম করলাম তোমাকে। আদর আদর আদর।

Author Mondar Mukherjee

আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে।
লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান। ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।

Picture of মন্দার মুখোপাধ্যায়

মন্দার মুখোপাধ্যায়

আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে। লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান। ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।
Picture of মন্দার মুখোপাধ্যায়

মন্দার মুখোপাধ্যায়

আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে। লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান। ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস