Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

বাঘতন্ত্র 

ডাঃ ভাস্কর দাস

জুলাই ২৯, ২০২৩

A special Feature on International Tiger Day
A special Feature on International Tiger Day
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

ঢেঙ্কানলের গজলক্ষ্মী প্রাসাদের বৈঠকখানায় শতাব্দীপ্রাচীন কাউচের ওপর বসে তাঁর বাঘ শিকারের গল্প বলছিলেন কুমারপ্রসাদ রণেন্দ্রপ্রতাপ সিংদেও। পাশের আলমারিতে বাঘের কাটা মাথার ট্রফি গরগর করছে। ৮৩ জন মানুষ খাওয়া ম্যান-ইটারের অবশেষ। সরকারি অনুরোধেই এই কাজটি তিনি করেছিলেন। বস্তুত তাঁর শিকারজীবনে হত্যা করা তিনটি বাঘের প্রত্যেকটিই ছিল ঘোষিত মানুষ-খেকো। 

ঘরজোড়া পুরনো দিন, ঐতিহ্য, স্মৃতির রাজত্বে আধুনিকতার অবাঞ্ছিত অনুপ্রবেশে তিনি বিরক্ত। তাই বার্ণিশ করা সোফা, সেন্টার টেবিল, বাটালির কুচির কাজ করা আলমারিতে সেজে ওঠা এ ঘরের কোণে রাখা টিভি তিনি থাকাকালীন চলা বারণ। গল্প বলতে বলতেই বিরাশি বছরের যুবক কুমারসাহেব এক অদ্ভুত প্রথার কথা জানালেন। বাঘ শিকারের জন্য যে গৃহপালিত প্রাণীটিকে টোপ হিসেবে রাখা হয়েছে, বাঘ যখন তাকে আক্রমণোদ্যত, তখন শিকারি যদি বাঘের বদলে তাকে গুলি করে মারে, তবে শিকারিকে অশৌচ পালন করতে হয়। গলায় কাছা জড়িয়ে পনেরো দিন স্থানীয় মানুষের থেকে ভিক্ষা করে গ্রাসাচ্ছাদন করতে হয়। বাঘ মরলে কিন্তু সকলের উল্লাস, রাত্রে ডবল প্রোটিনের গ্র্যান্ড ফিস্ট।

লোকাচারে ঢুকে যাওয়া এই প্রথা বাঘের প্রতি সাধারণ মানুষের ঘৃণা কত গভীরে ছিল, সে ভাবনার জ্বলন্ত প্রমাণ। গৃহপালিত পশুর প্রতি বিরাট সমবেত সমবেদনা মানুষের অস্তিত্বরক্ষায় তাদের অবদানের স্বীকৃতিতে। কিন্তু আজ থেকে ৭৫ বছর আগেও পরিবেশ আর প্রাণীর ভারসাম্য বজায় রাখতে বাঘের অবদানের কোনও ধারণা তৈরি হয়নি। এই উপমহাদেশে বাঘের সংখ্যাও ছিল বিপুল। ১৯২৪-এর গণনা অনুযায়ী তা ১ লক্ষের কম ছিল না। তুলনায় ক্ষীণকায় জনসংখ্যার অনুপাতে অনেক বেশি। ফলে বাঘে-গরুতে-মানুষে সাক্ষাতের সম্ভাবনাও ছিল অনেক বেশি। সে সাক্ষাৎ ছিল মৃত্যুর নামান্তর। তাই বাঘ মারাকে জীবনের উদযাপন বলে ভাবা হত। ক্রমে বাঘ-শিকার ক্ষমতা প্রদর্শন, ক্ষমতালাভের উৎসব হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। আমাদের সর্বশক্তিমান শিবঠাকুরকে তো আমরা কবেই বাঘছাল পরিয়ে ছেড়েছি!

Tiger trophy

বাঘ শিকারের চেয়ে জ্যান্ত বাঘ ধরায় বীরত্ব বেশি, একথায় বিশ্বাস ছিল রোমানদের। প্লিনি দ্য এল্ডার তাঁর ‘ন্যাচুরাল হিস্ট্রি’ বইয়ে জানাচ্ছেন তার বিস্তারিত বিবরণ। ঘোড়ায় চড়া শিকারি পৌঁছচ্ছে বাঘের ডেরায় যেখানে তার বাচ্চারা আছে। মায়ের অনুপস্থিতিতে সবকটা বাচ্চাকে সে তুলে নিচ্ছে। মা দেখে তাড়া করতেই শিকারি দ্রুতগামী ঘোড়ায় দৌড় দিচ্ছে। মা বাঘ যখন প্রায় ধরে ফেলেছে তাকে, তখন একটি বাচ্চাকে সে মাটিতে ফেলে দিল। মা থমকে গেল, তারপর আবার দৌড়। আবার বাচ্চা ফেলা, থমকানো, আবার দৌড়। শেষে মা দোটানায়, ফেলে আসা বাচ্চাদের কাছে যাবে না শিকারির হাতের বাচ্চাদের জন্য দৌড়বে। এই সংশয়ে সে দু’একটা বাচ্চাকে শিকারির হাতে ছেড়ে দিয়েই পিছন ফিরত। এই ফাঁকে অন্তত একটা বা দুটো বাচ্চা নিয়ে শিকারি জঙ্গল পার।     

কিন্তু রোমান সাম্রাজ্যে, মানে ইউরোপে বাঘ ছিল কখনও? ছিল। প্লিনি, সেটোনিউস প্রমুখের লেখায় দেখা যাচ্ছে পূর্ব তুরস্কের (যা রোমান সীমানার মধ্যে ছিল) নানা জায়গায় কাস্পিয়ান বাঘের যথেষ্ট প্রাদুর্ভাব ছিল। বস্তুত আজকের ইরাকের টাইগ্রিস নদীর নাম ধরেই রোমান ভাষায় প্রাণীটির নাম টাইগ্রিস দেওয়া হয় বলে মনে করা হয়, তার থেকে টাইগার। টাইগ্রিসের উপকূলভাগ একসময় বিপুল সংখ্যক কাস্পিয়ান বাঘের বিচরণক্ষেত্র ছিল। মানুষের শিকারের মুন্সিয়ানা প্রজাতিটিকে সম্পূর্ণ লুপ্ত করে দিতে সক্ষম হয়েছে। শেষ কাস্পিয়ান বাঘটিকে গুলি করে মারা হয়েছে ১৯৭০ সালে।

খ্রিস্টপূর্ব ১২ অব্দে সম্রাট অগাস্টাস যখন প্রসেনিয়ামের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে মঞ্চে প্রথমবারের জন্য একটা জ্যান্ত বাঘকে নিয়ে আসেন, তখন একই সঙ্গে বিস্ময় এবং সম্রাটের ক্ষমতার প্রতি ভীতি ও আনুগত্যের সঞ্চার হয় প্রজাদের মধ্যে। পাওয়ার প্লে-র দাবাখেলায় বাঘকে ঘুঁটি বানানোর খেলার ইতিহাস বেশ প্রাচীন।  

সে ইতিহাসের সাক্ষ্য রয়ে গেছে আরও কিছু নথিতে। 

Roman Mosaic- rider kidnapping A Little Tiger. Source: via Temporis
Roman Mosaic- rider kidnapping A Little Tiger. Source: via Temporis

তুরস্কের হারবিয়ে শহরের এক অট্টালিকায় পাওয়া গেছে এই চিত্রিত টালি, যার সঙ্গে প্লিনির বিবরণের অদ্ভুত মিল। রোমান ঐতিহাসিক ক্যাসিয়স দিও (১৬৫–২৩৫ খ্রিঃ) তাঁর বইতে সম্রাট অ্যান্টোনিনাসের কলোসিয়ামের বর্ণনায় বলছেন যে গ্ল্যাডিয়েটরদের সেখানে হাতি, গন্ডার, বাঘ আর হিপোটাইগ্রিস (হিপোপটেমাস কি?)-এর সঙ্গে লড়াই করতে হত। রোমান কবি মার্কাস মার্সেলিস তাঁর কবিতায় বর্ণনা দিচ্ছেন এক অশ্বারূঢ় সৈন্যের যার পরিধানে বাঘছালের পোশাক। 

রোম সাম্রাজ্যের কিছু ছবিও বাঘের সঙ্গে তাদের পরিচিতির নিশ্চিত প্রমাণ দেয়।

ইতিহাসের পটপরিবর্তনে এ অঞ্চলের রোমান-পরবর্তী ঘটনাক্রমের সেরকম নথি মেলে না। নইলে ইউরোপিয়ন বাঘের গল্পে আরও কটি অধ্যায় যোগ হতেই পারত। 

The Great Hunt, in the most famous mosaic in Villa Romana de Casale, an ancient Roman villa in Sicily, which depicts a tigress. Source: Gary Meaney
The Great Hunt, in the most famous mosaic in Villa Romana de Casale, an ancient Roman villa in Sicily, which depicts a tigress. Source: Gary Meaney

ভারতীয় উপমহাদেশ যে একসময় বাঘেদের শ্রীক্ষেত্র ছিল, তা আগেই বলেছি। মূলত মুঘল আমল থেকেই সেখানে থাবা বসায় মানুষ। বাবরের পূর্বপুরুষদের দেশে মঙ্গোলরা অব্যর্থ শিকারি ছিল। বধ্য পশুর তালিকায় সাইবেরিয়ান বাঘ ছিল ওপরের দিকেই। সেই ‘ট্র্যাডিশন’ বয়ে নিয়ে আসা মুঘলরা আকবর বাদশাহর আমল থেকেই এ বিষয়ে প্রচুর উৎসাহ প্রদর্শন করে। খেলা হিসেবে নেওয়া এ হত্যালীলা মহামতি আকবরের মতো সংবেদনশীল মানুষের কাছেও অন্যায় মনে হয়নি। সেসময়ে বিশেষ বিশেষ দিনে হাতির পিঠের হাওদায় বা ঘোড়ায় চেপে সম্রাট কিংবা তাঁর প্রতিভূ পাত্র মিত্র অমাত্য সহযোগে শিকারে গিয়ে একদিনে অসংখ্য বাঘ মেরে আনতেন। অনেক সময় ভৃত্যের দল আগে গিয়ে মাদক মেশানো মাংস ছড়িয়ে আসত, যা খেয়ে বাঘেদের ঝিমুনি ধরত। শিকার করা সহজ হত তাদের।

Tiger hunting India
বাঘ শিকার

মুঘলদের সরিয়ে ভারতের বুকে রাজত্ব করতে আসা ইংরেজরাও প্রজাদের মনে প্রভুত্বের আসনটি কায়েম করতে নানা পন্থার মধ্যে এটিকে এক অব্যর্থ কৌশল বলে চিনে নিতে পেরেছিল। প্রজাদের মনে ছিল বাঘের প্রতি ভীতি। আর ইংরেজদের হাতে মুঘলদের তুলনায় অনেক বেশি ‘ফায়ার পাওয়ার’, যার প্রয়োগ করে যুগপৎ বাঘ আর মানুষের মধ্যে ভীতি আর সম্ভ্রমের ঢেউ তুলে দিল তারা। ব্রিটিশরাজের শুরুর দিকের নথি না মিললেও উনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগ থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান আমাদের জানাচ্ছে ১৮৭৫ থেকে ১৯২৫ – এই ৫০ বছরে এই উপমহাদেশে বাঘ মরেছে কমবেশি ৮০ হাজার (প্রফেসর মহেশ রঙ্গরাজন, ঐতিহাসিক ও বাঘ সংরক্ষণের অন্যতম যোদ্ধা)। ১৮৭৮ সালে লাগু ফরেস্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী সমস্ত জঙ্গলকে ব্রিটিশরা মৃগয়াক্ষেত্র হিসেবে গণ্য করে। তারপর নির্বিচারে চলে তাদের Big Game Hunting. 

তাদের বশংবদ প্রসাদলোভী রাজপুরুষেরা তাদের জন্য এলাহি ব্যবস্থা করতে থাকে শিকারের। আমরা দেখি ১৮৭৮ সালে ইংরেজরা বাঘ মারছে ১৫৭৯ টি। ১৮৮২তে ১৭২৬টি বাঘ মারার ইনাম ঘোষণা হচ্ছে ৪৮০০ পাউন্ড। সরগুজার উন্মাদ মহারাজা ইন্দ্রজিত সিংদেও (১৮২৭-১৮৭৯) তার জীবৎকালে একাই মেরে ফেললেন ১৭০০র ওপর বাঘ। রেওয়ার রাজারা তাদের অভিষেকের দিনে ১০৯ টি বাঘ মেরে তার উদযাপন করতেন। ১৯১১-এ পঞ্চম জর্জের ভারতে আগমনের নিশান উড়ল ১০ দিনে নেপালের তরাইয়ে ৩৯টি বাঘের মৃতদেহের ওপর। কোটার মহারাজা তো তার রোলস রয়েসে সার্চলাইট, মেশিনগান আর লান্টাকা কামানই লাগিয়ে ফেললেন রাত্রে বাঘ মারবেন বলে।

British Tiger hunt

স্বাধীন ভারত বাঘের জন্যে কোনও ভালো খবর আনল না। ততদিনে পাশের দেশ চিনে বাঘের শরীরের নানান অংশ দিয়ে তৈরি করা ওষুধের বাজারের সঙ্গে ভারতের অন্ধকার জগতের মানুষদের অশুভ আঁতাত প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। ইউরোপ-আমেরিকার ফ্যাশনদুরস্ত মহিলাদের প্রিয় পোশাক বাঘের চামড়ার কোট, যার দাম ১৯৫০ সালে ৫০ ডলার থেকে বেড়ে ১৯৬০-এ হল ১০০০০ ডলার অবধি। লোভের হাতছানি, পাশাপাশি সরকারি নিয়ন্ত্রণের অনুপস্থিতিতে চোরাশিকার পৌঁছে গেল অস্বাভাবিক মাত্রায়। এর স্বাভাবিক ফলাফল বাঘের সংখ্যায় চূড়ান্ত হ্রাস হল। লোকসংখ্যার বৃদ্ধি, একটি বিকাশের আকাঙ্ক্ষী জাতির পরিকাঠামোর উন্নয়ন— এসবেরই দাবি জমি আর জমি। বাড়ল জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়া, বাঘেদের সীমানা সংকোচন। বাঘেদের বেঁচে থাকা দায় হয়ে উঠল।  

Tiger hunting
অভিজাতদের বাঘ শিকার, সূত্র: লেখক

টনক নড়তে ছয়ের দশক, যখন বাঘসুমারি জানালো সারা দেশে বাঘের সংখ্যা মাত্র ১৮০০-র আশপাশে। অবস্থার পরিবর্তন না হলে এ শতাব্দির শেষে বাঘ অবলুপ্ত হবে ভারতের বুক থেকে। এ সংকটে সাড়া দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৬৯ সালে মন্ত্রীসভার তরুণ মন্ত্রী করণ সিং-এর নেতৃত্বে তৈরি করলেন টাইগার টাস্ক ফোর্স। বাঘের চামড়া বা দেহাংশের দেশের বাইরে রফতানি সম্পূর্ণ বেআইনি ঘোষিত হল। দেশজুড়ে তৈরি হল ৯টি সংরক্ষিত বনাঞ্চল।

এতে অভূতপূর্ব সাফল্য মেলে। বাঘের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। দেখা যায় ১৯৮৪তে শ্রীমতী গান্ধীর মৃত্যুর সময় বাঘের সংখ্যা ৪০০০ ছুঁই ছুঁই। কিন্তু তারপর আবার বিপর্যয়। আটের দশকের শেষ থেকে তা হুহু করে কমতে থাকে। প্রোজেক্টের কাজে চরম অবহেলা, প্রজেক্টের টাকাকে বিভিন্ন রাজ্য সরকারের অন্য খাতে বইয়ে দেওয়া, চোরাশিকারিদের সঙ্গে আঁতাত, সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত বাঘের সংরক্ষণ প্রকল্প। দুর্নীতির আখড়া হয়ে ওঠা প্রকল্পের বাঘসুমারি যখন ২০০২ সালে বলছে বাঘের সংখ্যা ৩,৬৪২, তার দুবছরের মধ্যে বেসরকারি সংস্থার সুমারি জানায় প্রাপ্তবয়স্ক বাঘের সংখ্যা ১,৪১১। সরকারি পরিসংখ্যান যেখানে বলছে সারিস্কায় বাঘের সংখ্যা ১৮, সেখানে আসলে একটিও বাঘ নেই। 

দেখা যায় ১৯৮৪তে শ্রীমতী গান্ধীর মৃত্যুর সময় বাঘের সংখ্যা ৪০০০ ছুঁই ছুঁই। কিন্তু তারপর আবার বিপর্যয়। আটের দশকের শেষ থেকে তা হুহু করে কমতে থাকে। প্রোজেক্টের কাজে চরম অবহেলা, প্রজেক্টের টাকাকে বিভিন্ন রাজ্য সরকারের অন্য খাতে বইয়ে দেওয়া, চোরাশিকারিদের সঙ্গে আঁতাত, সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত বাঘের সংরক্ষণ প্রকল্প। 

এই রিপোর্ট আমূল নাড়িয়ে দেয় সকলকে। এবার সরকার ও বেসরকারি সংস্থার যৌথ প্রচেষ্টা, তীব্র নজরদারি, অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনায় সেজে ওঠে প্রোজেক্ট টাইগার। ফলস্বরূপ আজ ২০২৩ সালে তার সুবাদে বাঘের সংখ্যা ৩,১৬৭। চোরাশিকারের সংখ্যা নগণ্য। নজর পড়েছে শুধু বাঘ নয়, তার বাসস্থান ও খাবারের সরবরাহ নিয়ে যে সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্র, তার উন্নতিতে। সেই লক্ষ্যে আজ টাইগার রিজার্ভের সংখ্যা ৫৪। চেষ্টা চলছে এই ৫৪টি আইল্যান্ড রিজার্ভের মধ্যে যোগাযোগের করিডোর তৈরি করতে, যাতে বৃহত্তর বৃত্তে বাঘেরা বেড়ে উঠতে পারে। আজ সারা পৃথিবীর চোখে এই প্রকল্প একটি অনুসরণযোগ্য মডেল। 

Tiger

পৃথিবীর মাত্র ১৩টি দেশে বাঘ বেঁচে আছে। তার ৭৫ শতাংশ রয়েছে এই দেশে। প্রোজেক্ট টাইগারের দৌলতে তার সংরক্ষণে আমাদের দেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছে।  

এই বছর ভারতের উদ্যোগে সারা পৃথিবী জুড়ে সাত big cats, যথা বাঘ, সিংহ, তুষার চিতা, লেপার্ড, জাগুয়ার, পুমা ও চিতা— এদের সংরক্ষণের এক আন্তর্জাতিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সেখানে আমাদের দেশ ব্যঘ্রবিক্রমে নেতৃত্ব দেবে, এটাই আশা করা গিয়েছিল। তার বদলে ২৩ জুলাই, ২০২৩ আমরা পেলাম একটা অযাচিত ঘোষণা, স্বর্ণজয়ন্তীতে কেন্দ্রীয় সরকার গুটিয়ে নিচ্ছে প্রোজেক্ট টাইগার। বনমন্ত্রী অবশ্য অস্বীকার করে বলছেন এটা ‘রোল ব্যাক’। তাকে এক করে দেওয়া হচ্ছে হাতি সংরক্ষণ বিভাগের সঙ্গে। নিন্দুকের কথা, এর সুবাদে প্রোজেক্ট টাইগারের বরাদ্দে কাটছাঁট করতে আর অসুবিধে রইল না। অসুবিধে রইল না প্রধানমন্ত্রীর আহ্লাদি চিতা প্রকল্পে টাকার স্রোত বইয়ে দিতে। তার জন্য বাঘের প্রকল্পে বাঁধ দেওয়া জরুরি ছিল। 

এই বছর ভারতের উদ্যোগে সারা পৃথিবী জুড়ে সাত big cats, যথা বাঘ, সিংহ, তুষার চিতা, লেপার্ড, জাগুয়ার, পুমা ও চিতা— এদের সংরক্ষণের এক আন্তর্জাতিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সেখানে আমাদের দেশ ব্যঘ্রবিক্রমে নেতৃত্ব দেবে, এটাই আশা করা গিয়েছিল। তার বদলে ২৩ জুলাই, ২০২৩ আমরা পেলাম একটা অযাচিত ঘোষণা, স্বর্ণজয়ন্তীতে কেন্দ্রীয় সরকার গুটিয়ে নিচ্ছে প্রোজেক্ট টাইগার। 

চোরাশিকারিরা নিশ্চয়ই উল্লসিত। বাঘ সংরক্ষণ আবার তার প্রাগৈতিহাসিক পরিকাঠামোয় ফিরে যাবে। উপরি প্রাপ্তি, হাতির সঙ্গে গুলিয়ে দিয়ে বাঘের জন্য ‘ডেডিকেটেড ওয়ার্কফোর্স’-টিকে পঙ্গু করে দেবে সরকারি সিদ্ধান্ত। তাতে মরা বাঘের দাঁত, নখ, চামড়া, চোখ চোরবাজারে বিকিয়ে দু-পয়সা বাড়তি যা আসবে, তার মিলিজুলি ভাগাভাগির প্রাইভেট-পাবলিক-পার্টনারশিপ আগামী দশ বছরে বাঘ নামের আপদটিকে এদেশের বুক থেকে নিশ্চয়ই বিদেয় করতে পারবে। বাঘ সংরক্ষণের পুরো টাকাই তখন না হয় হরলিক্সের মতন এমনি এমনিই খাওয়া যাবে।

 

 

 

*ছবি সৌজন্য: লেখক, Wikipedia, Wikimedia Commons, Pexels

Author Dr. Bhaskar Das

ডাঃ ভাস্কর দাস পেশায় অস্থিশল্য চিকিৎসক। নেশা ফোটোগ্রাফি, লেখালেখি। ভ্রমণ ও বাংলার অতীত কৃষ্টি ও সংস্কৃতির খোঁজ প্রিয় বিষয়।
লেখা প্রকাশিত দেশ, হরপ্পা, কৃত্তিবাস, সাপ্তাহিক বর্তমান, ইত্যাদি পত্রিকায়। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পাঁচ। ২০২২ সালে ভ্রমণআড্ডা সংস্থার 'কলম' সম্মান প্রাপক।

Picture of ডাঃ ভাস্কর দাস

ডাঃ ভাস্কর দাস

ডাঃ ভাস্কর দাস পেশায় অস্থিশল্য চিকিৎসক। নেশা ফোটোগ্রাফি, লেখালেখি। ভ্রমণ ও বাংলার অতীত কৃষ্টি ও সংস্কৃতির খোঁজ প্রিয় বিষয়। লেখা প্রকাশিত দেশ, হরপ্পা, কৃত্তিবাস, সাপ্তাহিক বর্তমান, ইত্যাদি পত্রিকায়। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পাঁচ। ২০২২ সালে ভ্রমণআড্ডা সংস্থার 'কলম' সম্মান প্রাপক।
Picture of ডাঃ ভাস্কর দাস

ডাঃ ভাস্কর দাস

ডাঃ ভাস্কর দাস পেশায় অস্থিশল্য চিকিৎসক। নেশা ফোটোগ্রাফি, লেখালেখি। ভ্রমণ ও বাংলার অতীত কৃষ্টি ও সংস্কৃতির খোঁজ প্রিয় বিষয়। লেখা প্রকাশিত দেশ, হরপ্পা, কৃত্তিবাস, সাপ্তাহিক বর্তমান, ইত্যাদি পত্রিকায়। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পাঁচ। ২০২২ সালে ভ্রমণআড্ডা সংস্থার 'কলম' সম্মান প্রাপক।

6 Responses

  1. অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখা এবং তথ্যমূলক।এই প্রাণীটির যাতে অবলুপ্তি না ঘটে তার সব রকম ভাবে আরো লেখালেখি প্রয়োজন এবং বিভিন্ন দিক থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তরে প্রতিবাদ পত্র জমা করা দরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com