Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

অভিজিৎ সেন- জনতার অর্থনীতিবিদ

অমিতাভ রায়

নভেম্বর ৩, ২০২২

Abhijit Sen economist
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

প্ল্যানিং কমিশন তখন অতীব কর্মব্যস্ত। নতুন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই প্ল্যানিং কমিশনের পুরনো সদস্যদের জায়গায় সদ্য যোগ দিয়েছেন একদল নতুন সদস্য। তাঁরা প্রত্যেকেই বিশেষজ্ঞ। কিন্তু প্ল্যানিং কমিশনের কাজের ধারার সঙ্গে তেমন পরিচয় নেই। প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী বিশারদদের সঙ্গে চলছে নিয়মিত আলোচনা। সমান্তরাল ভাবে শুরু হয়ে গেছে দশম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মূল্যায়ন এবং একাদশ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার রূপরেখা প্রণয়ন। দেশের সমস্ত প্রান্ত থেকে বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত আসছেন। চলছে মত বিনিময়। আলোচনা-পর্যালোচনার কোনও খামতি নেই।

সময়টা ২০০৪-এর জুলাই-আগস্ট। সেই মরসুমে যুক্ত হল এক নতুন প্রকল্প। নতুন সরকারের  ঘোষণা– বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় সরকারের উদ্যোগে এবং আর্থিক সহায়তায় গ্রামের মানুষের কাজের বন্দোবস্ত করা হবে।  এমন আইনসম্মত প্রকল্পের কথা এর আগে কখনও শোনা যায়নি। কাজেই শূন্য থেকেই শুরু হয়ে গেল প্রকল্প প্রণয়নের কাজ।

প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য হিসেবে সদ্য দায়িত্ব নিয়েছেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) অর্থনীতি বিভাগের সেন্টার ফর ইকনমিক স্টাডিজ অ্যাণ্ড প্ল্যানিং-এর অধ্যাপক অভিজিৎ সেন। অর্থনীতি, বিশেষতঃ কৃষি অর্থনীতিতে তাঁর প্রজ্ঞা সর্বজনস্বীকৃত। তার উপর ১৯৯৭ থেকে ২০০০ পর্যন্ত ভারত সরকারের কমিশন অব এগ্রিকালচারাল কস্ট অ্যান্ড প্রাইসেসের (সিএসিপি) চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। দক্ষ অর্থনীতিবিদ তথা পরিকল্পনা বিশারদের নেতৃত্বে শুরু হল নতুন সরকারের ঘোষিত প্রকল্পের খসড়া নির্মাণের কাজ। প্রস্তাবিত প্রকল্পের লাভ ক্ষতি বিবেচনা করার জন্য সমাজের সর্ব স্তরের মানুষের সঙ্গে সারা দিন ধরে চলছে তথ্যভিত্তিক আলোচনা। তাঁর দপ্তরে দেশের বিভিন্ন দলের শীর্ষ  নেতৃবৃন্দ, বিশেষজ্ঞ, অন্যান্য মন্ত্রকের আধিকারিক, বিভিন্ন রাজ্যের মন্ত্রী, গণ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের সারাদিন আনাগোনা ও আলোচনা। কখনও কখনও কৃষি, গ্রাম উন্নয়ন সংক্রান্ত বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সামনে উত্থাপিত হচ্ছে বিস্তারিত যুক্তি তর্কের অবতারণা। যোজনা ভবনের কনফারেন্স হলগুলিতে দিনরাত এক করে সকলের সঙ্গে বিতর্ক-আলোচনায় ব্যস্ত সুদীর্ঘ শ্মশ্রুগুম্ফশোভিত সাদামাটা পোশাকের সদাহাস্যময় স্মিতবাক এবং স্পষ্ট উচ্চারণে অভ্যস্ত অভিজিৎ সেন। 

manmohan singh and abhijit sen
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর কাছে
প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য হিসেবে শপথ নিচ্ছেন অভিজিৎ সেন।

অবশেষে অনেক খসড়ার কাটাছেঁড়া করে তৈরি হল একশো দিনের কাজের প্রকল্প। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সংসদের অনুমোদন পাওয়ার পর যা ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট (এনআরইজিএ) হিসেবে সারা দেশের গ্রামে চালু হয়ে যায়। পরে অবশ্য এনআরইজিএ-র আগে মহাত্মা গান্ধীর নাম সংযুক্ত হয়ে সেই প্রকল্প এমজিএনআরইজিএ নামে নথিবদ্ধ হয়েছে। তবে চলতি ভাষ্যে ‘একশো দিনের কাজ’। সেই সময় যাঁরা এই প্রকল্পের প্রবল বিরোধিতা করে নিয়মিত ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ-রসিকতা করতেন তাঁরাই এখন প্রকল্পটির সাফল্যের প্রবক্তা। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক সূচনাপর্বে প্রকল্পটির তীব্র সমালোচনা করেছিল। সেই ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কই পরে বিশ্বের সর্ববৃহৎ জনকল্যাণমূলক প্রকল্প হিসেবে একশো দিনের কাজ বা এমজিএনআরইজিএ-কে স্বীকৃতি দেয়। সেই জন্যই হয়তো শহরাঞ্চলেও এখন একশো দিনের কাজ প্রকল্পের সম্প্রসারণ হয়েছে। 

‘সামগ্রিক বৃদ্ধি’-র লক্ষ্য নিয়ে একাদশ ও দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার নথি তৈরির সময় অভিজিৎ সেন দেশের সামগ্রিক আয়ের সুষম ও ন্যায্য বণ্টনের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন। আর্থিক বৃদ্ধির যে সূত্র নীতিনির্ধারকদের কাছে মূলধারা বলে স্বীকৃতি পায় তা আসলে বিনিয়োগ করা পুঁজির মুনাফা-নির্ভর বৃদ্ধি। বিনিয়োগ বেশি হলে মুনাফা বেশি হবে এবং দেশের বৃদ্ধির হার বেড়ে যাবে অর্থনীতির এই প্রচলিত ধারণার বিপক্ষে অভিজিৎ সেন কিন্তু বারে বারেই বেকারত্ব অর্থাৎ উপার্জনহীনতা, মজুরির নিম্ন হার, দারিদ্র ও ক্রমবর্ধমান অসাম্যকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন। যখন উচ্চতর আর্থিক বৃদ্ধির লক্ষ্যে বড় পুঁজির সুবিধা করে দেওয়ার জন্য  সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ সংক্ষেপে পিপিপি), বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ইত্যাদির আলোচনা চলছিল ও প্রয়োগ হচ্ছিল তিনি তখন অসংগঠিত ক্ষেত্র এবং গ্রামীণ  অর্থনীতিতে টাকা খরচ করার কথা, ছোট উৎপাদনগুলিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলতেন।

আরও পড়ুন: ইতিহাসের ভূমিপুত্র রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়

তিনি কোনওমতেই আর্থিক বৃদ্ধির বিরোধী ছিলেন না; কিন্তু তাঁর মাথায় ছিল মজুরি-কেন্দ্রিক বৃদ্ধির কথা— জাতীয় আয়ের ন্যায্যতর বণ্টনের মাধ্যমে আয়বৃদ্ধির কথা। যদি সরকার হস্তক্ষেপ না করে এবং আয় আর মুনাফার পুনর্বণ্টন না হয় তাহলে সমাজে আয়ের অসাম্য থাকতে বাধ্য। এই সহজ অথচ অপ্রচলিত সত্যের বিশ্লেষণ করেছিলেন অভিজিৎ সেন। তাঁর মতে ভারতের অসংগঠিত কর্মক্ষেত্রর ব্যাপ্তি বিশাল হওয়ার  ফলে দেশে শিথিল মুদ্রা নীতি গ্রহণ করলেও মূল্যস্ফীতির তেমন কোনও ভয় নেই। মানুষের চাহিদা তৈরি করার জন্য খরচ করে এবং সরকারি ব্যয়ের অভিমুখ মূলত দরিদ্রতর মানুষের দিকে ঘুরিয়ে আর্থিক নীতি স্থির করলে একই সঙ্গে উচ্চ আর্থিক বৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব, এবং বেকারত্ব, দারিদ্র ও অসাম্য দূর করাও সম্ভব। ভিন্ন মতের মানুষকে বোঝাতে অধ্যাপক সেনের অস্ত্র ছিল বাস্তব উদাহরণ, এবং তীক্ষ্ণ যুক্তি ও তথ্যের মিশেল। তাঁর তাত্ত্বিক বোঝাপড়া ও বিশ্লেষণ ছিল সর্বদাই পরিসংখ্যান তথ্য নির্ভর। বাস্তব পরিস্থিতিকে পরিসংখ্যানের জটিলতা থেকে টেনে বের করে এনে তাকে সহজ সরল ভাবে তত্ত্বের কাঠামোয় বেঁধে প্রয়োগের রূপরেখা রচনায় তাঁর দক্ষতা অনবদ্য। 

আর্থিক বৃদ্ধির যে সূত্র নীতিনির্ধারকদের কাছে মূলধারা বলে স্বীকৃতি পায় তা আসলে বিনিয়োগ করা পুঁজির মুনাফা-নির্ভর বৃদ্ধি। বিনিয়োগ বেশি হলে মুনাফা বেশি হবে এবং দেশের বৃদ্ধির হার বেড়ে যাবে অর্থনীতির এই প্রচলিত ধারণার বিপক্ষে অভিজিৎ সেন কিন্তু বারে বারেই বেকারত্ব অর্থাৎ উপার্জনহীনতা, মজুরির নিম্ন হার, দারিদ্র ও ক্রমবর্ধমান অসাম্যকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন।

উনিশশো নব্বইয়ের দশকে যখন অর্থনীতির নব-উদারিকরণ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে, তখনও কিন্তু অভিজিৎ সেন পরিসংখ্যানের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন। এই কারণে বেশিরভাগ সময়ে দক্ষিণপন্থী অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে তাঁর তার্কিক লড়াই হয়েছে। এমনকি কখনও কখনও বামপন্থী অর্থনীতিবিদদের সঙ্গেও চরম বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। অভিজিৎ সেন কিন্তু কখনই পরিসংখ্যানের অর্থাৎ বাস্তবের বাইরে গিয়ে তত্ত্ব খাড়া করার চেষ্টা করেননি। এর ফলে কোনও সময়েই ওঁকে গতানুগতিক ডান-বাম বা মধ্যপন্থী এই রকম বিভাজনে ফেলে দেওয়া যায় না। প্রচুর গবেষণা-ভিত্তিক প্রকাশনা আছে তাঁর নামে এমনটা নয়, কিন্তু যেখানে যা আছে সেখানে প্রকৃত তথ্য ও ঘোর বাস্তবের প্রতি তাঁর এই আনুগত্য দৃষ্টান্তমূলক। 

এমন নয় যে অভিজিৎ সেন কোনও পক্ষ নিতেন না, বরং উল্টোটা হয়ে এসেছে চিরকাল। তিনি আজীবন সাধারণ মানুষের পক্ষে থেকেছেন, যে কোনও বিতর্কে ওঁর নিজের বিবেচনায় যা করলে মানুষের ভালো হতে পারে বলে মনে হয়েছে উনি চিরকাল সেই সব নীতির পক্ষে অনড় থেকেছেন। এই মানবিক ও চারিত্রিক দৃঢ়তা বার বার সামনে এসেছে – বিশেষ করে যখন তিনি ভারতীয় অর্থব্যবস্থায় নীতিনির্ধারকের ভূমিকা পালন করেছেন।

তিনি যে ভাবে তথ্য বিশ্লেষণ করতেন, এবং তার থেকে যুক্তি তুলে আনতেন, তা অস্বীকার করা ছিল অসম্ভব। কিন্তু, সেই দুর্ভেদ্য যুক্তির জটে তিনি কখনও সাধারণ মানুষকে, শ্রমিক-কৃষক-দরিদ্র মানুষকে হারিয়ে ফেলেননি। নীতিনির্ধারণের পরিসরে, নব্য-উদার অর্থনৈতিক যুক্তির প্রাবল্যের মধ্যেও, তিনি সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষার কাজটি চালিয়ে গিয়েছিলেন। কখনও সফল হয়েছেন, কখনও হননি। কিন্তু, ‘মানুষের অর্থনীতিবিদ’ পরিচয় থেকে তিনি কখনও বিচ্যুত হননি। 

economist Abhijit Sen
‘মানুষের অর্থনীতিবিদ’ পরিচয় থেকে তিনি কখনও বিচ্যুত হননি।

নীতি নির্ধারক হিসেবে সাধারণ মানুষের জন্য প্রচারবিমুখ অভিজিৎ সেনের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। কৃষকদের জন্যে ন্যূনতম কৃষিমূল্য (এমএসপি) নির্ধারণ তাঁর অন্যতম অবদান। এগ্রিকালচারাল কস্ট অ্যান্ড প্রাইসেস্ অর্থাৎ সিএসিপি-র চেয়ারম্যান থাকার সময় অভিজিৎ সেন সুপারিশ করেছিলেন যে, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস্ বা এমএসপি) হিসাব করার সময় বীজ, সার, বিদ্যুৎ, ট্র্যাক্টর ভাড়া, কীটনাশক, পরিবহন, ইত্যাদির সঙ্গে কৃষকের বিভিন্ন অপ্রত্যক্ষ ব্যয়, যেমন পারিবারিক শ্রম, নিজে চাষ না করে জমি ভাড়া দিলে, বা মূলধন ব্যাঙ্কে রাখলে যে সুদ পাওয়া যায় সেই টাকা ইত্যাদিকে খরচের হিসাবে রাখা দরকার। এর ফলে বিভিন্ন কৃষি পণ্যের উৎপাদন ব্যয় অনেকটাই বেড়ে যায়। ফলে ফসলের সহায়ক মূল্য প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি হয়। নীতি প্রণয়নের সময় কৃষকদের ন্যায্য দাম দেওয়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি নির্ধারণের বিষয়ে অভিজিৎ সেনের অবদান অনস্বীকার্য। পরবর্তী সময়ে এম এস স্বামীনাথন এই ধারণার যথার্থতা বিশ্লেষণ করে গড়ে তোলেন এমএসপি নির্ধারণের সূত্র যা সাধারণভাবে ‘স্বামীনাথন সূত্র’ হিসেবে পরিচিত। 

রোজকার খাবার জোগাড় করাটাই ভারতবর্ষে অধিকাংশ মানুষের জীবনের মূল সমস্যা। পরিসংখ্যান আর তথ্যের মাধ্যমে অভিজিৎ সেন এটা বুঝেছিলেন। আর বুঝেছিলেন বলেই সর্বজনীন খাদ্যবণ্টন ব্যবস্থার স্বপক্ষে জোরদার সওয়াল-জবাব করে গেছেন। গণবণ্টন ব্যবস্থা সর্বজনীন না করার পেছনে বিভিন্ন কারণে সরকারের নীতি নির্ধারকদের ভূমিকা উন্মোচন করে অভিজিৎ সেন প্রমাণ করেছিলেন রাজকোষের চাপ না বাড়িয়েও দেশের অধিকাংশ মানুষের জন্য কম দামে খাদ্যশস্য বন্টনের বন্দোবস্ত করা সম্ভব। দেশের একটা বড় সংখ্যার মানুষ এখনও যে গণবণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে কম দামে খাদ্যশস্য পাচ্ছে তার পেছনে নীতি নির্ধারক হিসেবে সেনের মতো মানুষদের ধারাবাহিক পরিশ্রমের এক বিরাট অবদান রয়েছে।

কৃষকদের জন্যে ন্যূনতম কৃষিমূল্য (এমএসপি) নির্ধারণ তাঁর অন্যতম অবদান। এগ্রিকালচারাল কস্ট অ্যান্ড প্রাইসেস্ অর্থাৎ সিএসিপি-র চেয়ারম্যান থাকার সময় অভিজিৎ সেন সুপারিশ করেছিলেন যে, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস্ বা এমএসপি) হিসাব করার সময় বীজ, সার, বিদ্যুৎ, ট্র্যাক্টর ভাড়া, কীটনাশক, পরিবহন, ইত্যাদির সঙ্গে কৃষকের বিভিন্ন অপ্রত্যক্ষ ব্যয়, যেমন পারিবারিক শ্রম, নিজে চাষ না করে জমি ভাড়া দিলে, বা মূলধন ব্যাঙ্কে রাখলে যে সুদ পাওয়া যায় সেই টাকা ইত্যাদিকে খরচের হিসাবে রাখা দরকার।

দারিদ্রসীমার নীচে থাকা জনগোষ্ঠীই নয়, আরও অনেক বেশি মানুষকে যাতে খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় আনা যায়, অভিজিৎ সেন সে কথা জোর দিয়ে বলতেন। বরাবরই তিনি সর্বজনীন গণবণ্টনের পক্ষপাতী। ভারতীয় অর্থব্যবস্থা সংক্রান্ত পরিসংখ্যানের উপর — বিশেষত ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে বা এনএসএস পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে — তাঁর মতো দখল খুব কম অর্থনীতিবিদের ছিল। দারিদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য গঠিত তেন্ডুলকর কমিটির সুপারিশ অনুসারে  ২০১১-১২-র দ্রব্যমূল্যর ভিত্তিতে গ্রামাঞ্চলে মাসে মাথাপিছু ৮১৬ টাকা এবং শহরাঞ্চলে মাসে মাথাপিছু ১০০০ টাকা খরচ করার ক্ষমতা যে সব ভারতবাসীর নেই তাঁরাই দারিদ্রসীমার নীচের মানুষ। অভিজিৎ সেন এই সুপারিশকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। 

কিন্তু তিনি এও জানতেন যে, যদি শুধু দারিদ্রসীমার নীচে থাকা জনগোষ্ঠীকে গণবণ্টন বা রেশন ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়, তা হলে পদ্ধতিগত দুর্বলতার কারণেই অনেকে বাদ পড়ে যাবেন। গণবণ্টন ব্যবস্থা সর্বজনীন হলে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি-তে ফসল ক্রয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে। এমএসপি-ই যেহেতু কৃষিপণ্যের মূল্যের নিম্নসীমাটি নির্ধারণ করে দেয়, এই পরিবর্ধিত ক্রয়ের ফলে কৃষি অর্থনীতিতে, এবং সার্বিক ভাবে গ্রামীণ অর্থনীতিতে টাকা আসবে। তাতে সরকারের খাদ্য ভর্তুকির পরিমাণ হয়তো বাড়বে, কিন্তু অভিজিৎ সেনের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, বর্তমান আর্থিক রক্ষণশীলতার চেয়ে এই খরচের গুরুত্ব অনেক বেশি। সরকার ও সংসদের অনুমোদন পাওয়ার পর খাদ্য নিরাপত্তা আইন (২০১৩) চালু হওয়ায় স্বীকৃতি পায় আমজনতার জন্য অভিজিৎ সেনের দীর্ঘদিনের যুক্তি-তর্কের সংগ্রাম। সাম্প্রতিক কোভিড অতিমারীর সময় বোঝা গেছে এই খাদ্য নিরাপত্তা আইনের (২০১৩) গুরুত্ব।

পিডিএস্ এবং খাদ্য নিরাপত্তা আইন (২০১৩) তো এখন দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খাদ্য নিরাপত্তা আইনের প্রকল্প অনুসারে মাথাপিছু মাসে পাঁচ কিলোগ্রাম খাদ্যশস্য (দুই বা তিন টাকা কিলোগ্রাম দরে) রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে গণবণ্টনের প্রকল্প চলছে। রাজকোষে টানাটানির দোহাই দিয়ে সম্প্রতি এই জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনও কোনও মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। কিন্তু এই প্রকল্পের প্রয়োজন কি সত্যি সত্যিই কমেছে? ভারতে খাদ্য নিরাপত্তার ছবি সেই ভরসা দেয় না।

গত জুলাই মাসে প্রকাশিত রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি আন্তর্জাতিক রিপোর্টে ধরা পড়েছে, ভারতে ২০১৮-১৯-এর তুলনায় ২০১৯-২০-তে ক্ষুধা ও অপুষ্টির প্রকোপ বেড়েছে। গত দু’বছরে অন্তত ছাপ্পান্ন কোটি ভারতীয় খাদ্য নিরাপত্তার অভাবে ভুগেছেন, যা ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় চল্লিশ শতাংশ। আরও আশঙ্কার কথা এই যে, চূড়ান্ত খাদ্য নিরাপত্তার কবলে মানুষের সংখ্যা ২০১৫-১৬-য় ছিল উনিশ কোটি, এখন তা তিরিশ কোটি ছাড়িয়েছে। বেড়েছে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষুধায় আক্রান্ত পরিবারের সংখ্যাও। 

ভারতের নানা সরকারি-অসরকারি সমীক্ষাতেও অপুষ্টি, বিশেষত শিশু অপুষ্টির যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে, তা বার বারই পরিবারগুলির ক্রমবর্ধমান পুষ্টির অভাবের ছবি তুলে ধরছে। ভারতের অর্থনীতির বৃদ্ধি গড় ভারতীয়ের রোজগার বাড়াচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে অনেকে গণবণ্টনকে সার্বিক করার পক্ষে সওয়াল করেছেন। কেন্দ্র বর্তমানে আশি কোটি মানুষকে খাদ্যের অধিকারের অধীনে সহায়তা দিচ্ছে, কিন্তু এই সংখ্যা ২০১১ সালের জনসংখ্যার নিরিখে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। প্রকৃত হিসেবে সংখ্যাটা নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। সবমিলিয়ে খাদ্যবঞ্চনা তীব্রতর হতে চলেছে।  খাদ্যশস্যের মূল্য মেটাতে সরকার দ্বিধা করছে — কিন্তু এই বিরাট অপুষ্টির মূল্য কী ভাবে মেটাবে দেশ? 

আরও পড়ুন: যে স্বাধীনাকে মনে রাখিনি

স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থায়, কর্মসংস্থানে এবং দারিদ্র দূরীকরণে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির দৃঢ় সমর্থক ছিলেন অভিজিৎ সেন। প্ল্যানিং কমিশনে তিনিই ছিলেন দরিদ্র মানুষের পক্ষে প্রধান কণ্ঠস্বর। আর্থিক বৃদ্ধিকে যাতে প্রকৃত অর্থেই সর্বজনীন করে তোলা যায়, তিনি সেই চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। এমজিএনআরইজিএ ছাড়াও জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন, ইনটেনসিভ চাইল্ড ডেভলপমেন্ট স্কিম (আইসিডিএস্), সর্বশিক্ষা মিশন, মিড-ডে মিল, প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা, গণবণ্টন ব্যবস্থা (পিডিএস্) এবং খাদ্য নিরাপত্তা আইন (২০১৩) ইত্যাদি দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তাতে অভিজিৎ সেনের অবদান কম নয়। এমনকি অরণ্যের অধিকার আইন (২০০৬) প্রণয়নের ক্ষেত্রেও তাঁকে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে হয়। 

এইসব প্রশ্নের উত্তর বিশ্লেষণ করেই পিডিএস্ ও খাদ্য নিরাপত্তা আইন (২০১৩) নিয়ে সদা সোচ্চার ছিলেন অভিজিৎ সেন। আর্থিক যুক্তরাষ্ট্রীয়তা ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের প্রবল প্রবক্তা অভিজিৎ সেন চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সদস্য থাকার সময়ই সিদ্ধান্ত হয় যে, সারা দেশ থেকে সংগৃহীত করের যৌথ ভান্ডার থেকে রাজ্যগুলির বরাদ্দ ৩২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪২ শতাংশ হবে। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল মানব উন্নয়ন সংক্রান্ত অধিকাংশ কাজই রাজ্য স্তরে বিশেষতঃ স্থানীয় স্তরে করা প্রয়োজন, এবং তার জন্য ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ অপরিহার্য। 

প্ল্যানিং কমিশনে তিনিই ছিলেন দরিদ্র মানুষের পক্ষে প্রধান কণ্ঠস্বর। আর্থিক বৃদ্ধিকে যাতে প্রকৃত অর্থেই সর্বজনীন করে তোলা যায়, তিনি সেই চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। এমজিএনআরইজিএ ছাড়াও জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন, ইনটেনসিভ চাইল্ড ডেভলপমেন্ট স্কিম (আইসিডিএস্), সর্বশিক্ষা মিশন, মিড-ডে মিল, প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা, গণবণ্টন ব্যবস্থা (পিডিএস্) এবং খাদ্য নিরাপত্তা আইন (২০১৩) ইত্যাদি দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তাতে অভিজিৎ সেনের অবদান কম নয়।

এমএসপি-র ধারণা কি অভিজিৎ সেন উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন? তাঁর বাবা সমর রঞ্জন সেন (১৯১৫-২০০৪) যিনি এসআর সেন নামে স্বনামধন্য, উনিশশো ষাটের দশকে জুট রিসার্চ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে এমএসপি-র প্রস্তাব করেন। পদার্থবিজ্ঞানের স্নাতক (দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়) এসআর সেন লন্ডন স্কুল অফ্ ইকনমিক্স থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি করার পর সেখানেই গবেষণা-অধ্যাপনার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু ইন্ডিয়ান ইকনমিক সার্ভিস্-এর (আইইএস) প্রথম ব্যাচের (১৯৩৮) প্রথম অফিসার এসআর সেন সেই প্রস্তাব অস্বীকার করে দেশে ফিরে আসেন। এবং ভারত সরকারের কাজে যোগ দেন।

সম্ভবতঃ এমন জাতীয়তাবাদী মানসিকতা এসআর সেন তাঁর মা আশালতা সেনের (১৮৯৪-১৯৮৬) কাছ থেকে পেয়েছিলেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে আশালতা সেন একটি উজ্জ্বল নাম। ১৯২০-র দশক থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন আন্দোলনে যোগ দিয়ে বহুবার তিনি কারাবরণ করেন। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও নারীদের অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সারা জীবন কাজ করে গেছেন। পূর্ব বাংলায় তাঁর জনপ্রিয়তার প্রমাণ দেশভাগের পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানের আইনসভায় দু’বার নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। ১৯৬৫-র ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের আগে তিনি দিল্লিতে ছেলের কাছে আসার পর আর পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে যাননি। এখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুত্র ও পৌত্ররা (অভিজিৎ ও প্রণব সেন) তাঁদের বসতবাড়ির নাম রেখেছেন ‘আশা’। 

অভিজিৎ সেন পদার্থবিদ্যার স্নাতক। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে  পড়াশোনা করতে গিয়ে অর্থনীতিতে গবেষণা শুরু করেন। তাঁর পিএইচডি-র গবেষণার কাজ দুই ভাগে ১৯৮১-তে কেম্ব্রিজ জার্নাল অফ ইকনমিকসে প্রকাশিত হয়। ভারতীয় কৃষিব্যবস্থার কাঠামো আর কৃষিতে শ্রমের নিয়ন্ত্রণের ওপর এই কাজ আজও ভীষণ ভাবে প্রাসঙ্গিক। পিএইচডি-র কাজ শেষ করার পরে অভিজিৎ সেন অক্সফোর্ড, সাসেক্স, এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপনা করেন। ১৯৮৫-তে দেশে ফিরে এসে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং অবসর নেওয়া পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। তাঁর ছাত্রছাত্রীদের মতে এম এ এবং এম ফিল কোর্সে বিভিন্ন বছর বিভিন্ন পেপার পড়িয়েছেন তিনি — কৃষি অর্থনীতি থেকে পরিকল্পনা, শ্রম অর্থনীতি, মাইক্রোইকনমিকস, ম্যাক্রোইকনমিকস, গ্রোথ থিয়োরি, স্ট্যাটিস্টিকস অর্থাৎ অর্থশাস্ত্রের সমস্ত বিষয়। শিক্ষক হিসাবে অত্যন্ত সফল, এবং ছাত্রদের মধ্যে অতি জনপ্রিয় ছিলেন অভিজিৎ সেন।

মাতামহ ছিলেন টাটা ইস্পাত কারখানার ইঞ্জিনিয়ার। সেই সুবাদে জামশেদপুরের মাতুলালয়ে ১৯৫০-এর ১৮ই নভেম্বর অভিজিৎ সেনের জন্ম। ২৯-শে আগস্ট, ২০২২ তাঁর জীবনাবসান হয়। প্রয়াণ মুহূর্তে পাশে ছিলেন স্ত্রী জয়তী, কন্যা জাহ্নবী, ভাই প্রণব এবং ভাইঝি কাজরি। জয়তী ঘোষ স্বনামখ্যাত অর্থনীতিবিদ। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করে অবসর গ্রহণের পর এখন আমেরিকার এলমহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক। জাহ্নবী জনপ্রিয় ডিজিটাল সংবাদ মাধ্যমে সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করছেন। প্রণব সেন প্ল্যানিং কমিশনের মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করে ভারতের প্রথম মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ পদে নিযুক্ত হন। আর কাজরি সেন এখন গণ সংযোগ নিয়ে অধ্যাপনায় ব্যস্ত। অভিজিৎ সেনের জীবনাবসানে দিল্লির বসন্ত বিহারের পি-৪১ পূর্বী মার্গের সেন পরিবার নিঃসন্দেহে অভিভাবকহীন হয়ে গেল। অর্থনীতির ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-গবেষক এবং পরিকল্পনা বিশারদ ও নীতি নির্ধারকরা হারালেন বিকল্প চিন্তার এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে। একই সঙ্গে হারিয়ে গেল দেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অভিভাবক। 

ছবি সৌজন্য: Wikimedia Commons

Amitabha Ray Author

প্রশিক্ষিত প্রযুক্তিবিদ ও পরিচিত পরিকল্পনাবিশারদ। পড়াশোনা ও পেশাগত কারণে দেশে-বিদেশে বিস্তর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। তার ফসল বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় বই। জোয়াই, আহোম রাজের খোঁজে, প্রতিবেশীর প্রাঙ্গণে, কাবুলনামা, বিলিতি বৃত্তান্ত ইত্যাদি।

Picture of অমিতাভ রায়

অমিতাভ রায়

প্রশিক্ষিত প্রযুক্তিবিদ ও পরিচিত পরিকল্পনাবিশারদ। পড়াশোনা ও পেশাগত কারণে দেশে-বিদেশে বিস্তর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। তার ফসল বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় বই। জোয়াই, আহোম রাজের খোঁজে, প্রতিবেশীর প্রাঙ্গণে, কাবুলনামা, বিলিতি বৃত্তান্ত ইত্যাদি।
Picture of অমিতাভ রায়

অমিতাভ রায়

প্রশিক্ষিত প্রযুক্তিবিদ ও পরিচিত পরিকল্পনাবিশারদ। পড়াশোনা ও পেশাগত কারণে দেশে-বিদেশে বিস্তর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। তার ফসল বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় বই। জোয়াই, আহোম রাজের খোঁজে, প্রতিবেশীর প্রাঙ্গণে, কাবুলনামা, বিলিতি বৃত্তান্ত ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com