স্বপ্নবৃষ্টি
ঘাসের মতো হলে পদানত হয়েই থাকতে হবে,
তার চেয়ে কাঁটাঝোপ হওয়া ভাল
অন্তত প্রতিবাদের অক্ষমতার আফসোস থাকে না।
মাটির মতো হলে জড়বৎ হয়েই থাকতে হবে,
তার চেয়ে নুড়িপাথর হওয়া ভাল
অন্তত পথিকের পায়ের সাথে কম্পিত হওয়া যায়।
ঢেউয়ের মতো হলে তীরে এসে ভেঙে পড়তেই হবে,
তার চেয়ে হিমশৈল হওয়া ভাল
অন্তত ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্বের দুঃখ থাকে না।
নক্ষত্রের মতো হলে অবিরাম জ্বলতেই হবে,
তার চেয়ে চাঁদ হওয়া ভাল
অন্তত রাতের অন্ধকারে স্নিগ্ধ আলো বিতরণের গর্ব থাকে।
রাত্রির মতো হলে সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই মিলিয়ে যেতে হবে,
তার চেয়ে প্রত্যুষ হওয়া ভাল
অন্তত অল্প আলোর আভাসের মধ্যে উজ্জ্বলতার প্রকাশ থাকে।
মেঘের মতো হলে পরনিয়ন্ত্রিত হয়েই উড়ে যেতে হবে,
তার চেয়ে আকাশ হওয়া ভাল
অন্তত অসীম পর্যন্ত বিস্তার লাভ করা যায়।
বাতাসের মতো হলে স্বেচ্ছাহীন বয়ে যেতেই হবে,
তার চেয়ে দখিনাবায়ু হওয়া ভাল
অন্তত শুষ্ক হৃদয়ে আনা যায় শীতলতার স্পর্শ।
কম্পাস
দিগভ্রান্ত নাবিকের হঠাত্ আবিষ্কার করা কম্পাসের মতো
খুঁজে পেলাম একদিন তোমাকে।
সেদিন বুঝিনি মরচে ধরা কম্পাসটি ছিল অচল।
তাই পথ ভুলেছি বারবার ।
উচ্ছ্বল আশা দু’চোখে নিয়ে পাড়ি দিয়েছি উদ্বেলিত পারাবার।
প্রাণচঞ্চলতার কল্পনায় নোঙর ফেলেছি যে দ্বীপের তীরে
বুঝিনি তা ছিল শুষ্ক নির্জীব।
মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দিকে চেয়ে গেয়েছি বসন্তের গান।
বিশুদ্ধ বাতাসের কামনায় ছুটেছি যে ডাঙার পানে,
বুঝিনি তা ছিল ক্ষণস্থায়ী মরীচিকা।
অনেক ডুবজল সাঁতরে পাড়ে উঠে বিস্ময়ে দেখি,
ভিজে বালুচরে পড়ে আছে ভাঙা
কম্পাসটির এক তীক্ষ্ম শলাকা।
*ছবি সৌজন্য: Kalagallery
কনকজ্যোতি রায় পেশায় শিক্ষক। তবে শিক্ষকতার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা ও অল্পবিস্তর লেখালেখির নেশা আছে। ইতিমধ্যে কিছু কবিতা ও প্রবন্ধ- তথ্যকেন্দ্র, ইরাবতী, সময়, আরম্ভ, কিশলয়,অবেক্ষণ, কবিতা লহরী, নবপ্রভাত, মাধুকরী, শিক্ষা ও সাহিত্য, বাংলার লেখা, প্রভৃতি পত্রিকায় স্থান পেয়েছে।