Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

পুজোর গান নাকি গানের পুজো

শ্রীমন্তী মুখোপাধ্যায়

অক্টোবর ২৭, ২০২০

Jayati Chakraborty
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

রবীন্দ্রসঙ্গীতের জগতে বলা চলে রাজত্ব করছেন এই মানুষটি। জয়তী চক্রবর্তীকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মতো কাজ মোটেও করব না খামোকা। কবে থেকে যে আলাপ, তা মনে নেই। আমার দাদাই (সুভাষ চৌধুরী) অসম্ভব স্নেহ করতেন আর তেমনই বকা দিতেন, মনে পড়ে। আর মনে পড়ে জয়তীদির মিষ্টি খাওয়ার মজার মজার গল্প। সাংঘাতিক সুইট টুথ এই মিষ্টি কণ্ঠের অধিকারিনীর। আজকের গানের জগতের এই সম্রাজ্ঞীর মধ্যে গান ছাড়া যেটা ভীষণ মনকাড়া, তা হল তাঁর আন্তরিক ব্যবহার। আজকের ‘আমাকে দেখ, আমি কী সাংঘাতিক’-এর দুনিয়ার উজ্জ্বল ব্যতিক্রম জয়তীদি। তাই বোধহয় এত সহজে সেলেব্রিটি গায়িকা জয়তী চক্রবর্তীর গানে মানুষ জয়তী চক্রবর্তীর সারল্য ও স্বচ্ছতা বেরিয়ে আসে। প্রাণ পায় কবিগুরুর বাণী।

Jayati Chakraborty

প্রশ্ন – তোমাকে যদি পাঁচটা শব্দে নিজের পরিচয় দিতে বলা হয়, কী বলবে?

উত্তর – পাঁচটা শব্দে নিজেকে বর্ণনা করতে গেলে আমি বলব আমি সত্যবাদী, কর্মে বিশ্বাসী, অধ্যাত্মবাদী (spiritual), সম্পর্কে বিশ্বাসী, ভালোবাসায় বিশ্বাসী।

আর নেগেটিভ দিক থেকে বললে আমি সময়ানুবর্তী নই, জীবন থেকে এই শেখা আমার আজও চলছে। অনেক কিছুতেই আলস্য কাজ করে আমার মধ্যে। আমার মধ্যে যে পজিটিভ এনার্জি আছে তাকে আরও সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন বলে মনে হয়। কিছু ক্ষেত্রে আমি ফাঁকিবাজ এবং আমার মনে হয় আমার কাজের প্রতি আমার আরও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। নিজেকে একজন সর্বাঙ্গীন শিল্পী ও মানুষ হিসাবে তুলে ধরতে গেলে আমায় আরও যত্নশীল হতে হবে। আমি ভীষণ ভাবে সমালোচনায় আহত হই। যদি অনেক ভালো কথার মধ্যেও আমায় কেউ কোনও বাজে কথা বলেন তাতে আমি আঘাত পাই।

[the_ad id=”266919″]

প্রশ্ন – আজকের সঙ্গীতশিল্পী জয়তী চক্রবর্তী হয়ে উঠতে তোমার ছোটবেলার প্রভাব কতটা?

যে কোনও গাছই একটা শিকড়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকে। আমার সেই শিকড় আমার শৈশব। তাই ছোটবেলার প্রভাব অবশ্যই রয়েছে আমার মধ্যে। কিছুই তেমন হয়ে উঠতে পেরেছি বলে আজও মনে হয় না। এখনও অনেক পথ চলাই বাকি থেকে গেছে আজও। যা কিছু পাওয়া তা হয়তো পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা আমার ঝুলিতে। মা-বাবা দু’জনেই গানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং বিশেষত মা গানের প্রথাগত শিক্ষা পান ও সাঙ্গীতিক চর্চা করতেন। বাবাও গানের প্রতি অত্যন্ত অনুরাগী ছিলেন। দুজনের এই সুষ্ঠ, সুন্দর মনোভাব আমায় উৎসাহ দিয়েছিল। আবার এই দুই মানুষের গানকে প্রতিদিনের জীবন যাত্রায় না পাওয়ার অপ্রাপ্তির কারণে হয়তো ওঁরা চেয়েছিলেন গান আমার সর্বাঙ্গীন সঙ্গী হোক। তা বলে কিন্তু বাড়ি থেকে আমায় কেউই কোনওদিন জোর করেননি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করতে হবে বলে। বাবা-মা শুধু চেয়েছিলেন আমি গানকে আমার সঙ্গে রাখি। পরবর্তীতে বিভিন্ন গুরুরা আলোকিত করেছেন আমায়। কতটা সফল হয়েছি জানি না, কিন্তু আমার গুরুদের কাছ থেকে জীবন বোধের যে পাঠ গ্রহণ করেছি, তা-ই আমার সঞ্চয়। তাই আজ আমার উপার্জন যেটুকু মানুষের ভালোবাসা, তার সবটুকুই আমার শৈশবের প্রভাবে।

প্রশ্ন – হঠাৎ গান কেন? ভালো লাগলেও ভবিষ্যতে গানকেই জীবিকা করবে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া তো সহজ নয়। সেই সময়ের কথা একটু জানতে ইচ্ছে করছে।

উত্তর – ভালো লাগলেই যে গানকে জীবিকা করতে হবে, এমন ভাবনা আমার মধ্যে আসেনি। প্রথমে বরং পড়াশোনার ক্ষেত্রেই আমি নিজেকে দেখতে চেয়েছিলাম। ভবিষ্যৎ জীবনে উপার্জন করতে হবে এমন ভাবনা প্রথম থেকেই ছিল, এবং বাবাও যেহেতু খুব ছোট বয়সে চলে যান তাই এমন ভাবনাই গড়ে ওঠে আমার মধ্যে। আমি ছোট থেকেই চেয়েছিলাম অধ্যাপনা অর্থাৎ শিক্ষকতাকে পেশা করতে। গান যে কোনওদিন আমার জীবিকা হতে পারে, এটা অনেক পরে এসেছেষ আমার গুরু শ্রী সুভাষ চৌধুরী মহাশয়, সুভাষদা যদিও ভীষণ ভাবে চাইতেন অন্য কোনও জীবিকায় থেকে গানকে সঙ্গে রাখা ব্যাপারটা। কিন্তু তারপরেও যখন গানকে প্রফেশন হিসাবে বাছলাম, তখন সুভাষদা বলেছিলেন এই সিদ্ধান্ত একেবারেই আমার ব্যক্তিগত মত এবং কোনওদিন যেন এই সিদ্ধান্তের জন্য আমি আমার জীবনকে দায়ী না করি। এই কথা আজও আমার কানে বাজে, এবং এই কথা আজীবন আমার সঙ্গেই থাকবে। আমার পথে যেমন জড়িয়ে আছে হাসিকান্না, তেমনি চড়াই উৎরাই, কখনও রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিন, কখনও মেঘলা আকাশ। গান আমার কাছে আজ ঈশ্বরকে স্পর্শ করার মাধ্যম, আজ আমি সত্যিই ভীষণ খুশি এই মাধ্যমে আমার জীবন চালনা করে।

Jayati Chakraborty

প্রশ্ন – তোমার প্রথম মঞ্চে উপস্থাপনা কত বছর বয়সে? কেমন সে অভিজ্ঞতা?

উত্তর – মঞ্চে প্রথম উপস্থাপনা, পেশাদারিভাবে, স্নাতক হওয়ারও অনেক পরে। পেশাদারি বলতে আমি যা থেকে রোজগার করেছি, আমার প্রথম রোজগার পাঁচশো টাকা। গ্র্যাজুয়েশনের পরের বছর। আর যদি প্রতিযোগিতার কথা বলা হয় সেটা অবশ্যই অনেক ছোট বয়সে। সেটা এখন ভালো ভাবে মনে নেই। অভিজ্ঞতা… বলতে পার, আমি এমনিতে বেশ মুখচোরা যদিও আমার প্রফেশন সেটা দাবি করে না। তাই বেশ খানিকটা কথা বলা শিখতে বা বলতে অভ্যেস করতে হয়েছে। মঞ্চে উঠলে আজও হাত পা কাঁপে। তবে মনে হয় এই নার্ভাসনেসটা থাকাই ভালো, এগুলো থেকেই আমি প্রতিদিন নতুন নতুন করে অনেকটা শিখি।

প্রশ্ন – প্রথম কার কাছে গানের হাতেখড়ি? তোমার সঙ্গীতগুরুদের কথা বল।

উত্তর – প্রথম গানে হাতে খড়ি সুপ্রিয়া ঘোষের কাছে পাঁচ বছর বয়সে। তখন আমরা হাওড়ায় থাকতাম। পরবর্তীতে শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে শিখেছি রবীন্দ্রনাথের গান। সেই সঙ্গেই ক্লাসিকাল এবং বিভিন্ন ধারার গান শিখেছি শম্ভুনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছে। তারপরে সনাতন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমার শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিক্ষা। ওঁর কাছে আমি নাড়া বেঁধে খেয়াল শিক্ষা শুরু করি। সে সময় আমি ক্লাস টেন। তারপর আমার সৌভাগ্য আমি সুভাষ চৌধুরীর মহাশয়ের সান্নিধ্যে আসি, রবীন্দ্রনাথের গানের জন্য। সুদীর্ঘ সময় ওঁর কাছে শিক্ষা নিই, এর মাঝখানে বিমান মুখোপাধ্যায়ের কাছে নজরুলগীতি শিখেছি কিছু বছর। জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের কাছে বাংলা আধুনিক গান শেখার সৌভাগ্য হয়েছে। তারপর সনাতনবাবু গত হওয়ার পর আমি পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কাছে ভোকাল ট্রেনিং করি। গুরুজি আমায় খুবই স্নেহ করেন। তারপরে জয়ন্ত সরকারের কাছেও কিছুদিন শেখার সুযোগ হয়। এমনই বিভিন্ন ধারায় শিক্ষা লাভ চলেছে, বর্তমানে আমি অপালা বসু সেনের কাছে রবীন্দ্রনাথের গান চর্চা করি।

[the_ad id=”270084″]

প্রশ্ন – জয়তী চক্রবর্তীর নিজস্ব একটা স্টাইল আছে, যা স্বতন্ত্র। এই গায়কী সম্পর্কে তোমার মুখ থেকে জানতে ইচ্ছে করছে।

উত্তর – আমার কোনও নিজস্ব স্টাইল আছে বলে আমি মনে করি না। প্রাণ দিয়ে যে গানে আমি বিশ্বাস করি, সে গানই আমার নিজের গান বলে মনে হয়। যে গান পুরুষ কণ্ঠ বা মহিলা কণ্ঠ ছাড়িয়েও আমার কাছে এক অন্য মাত্রা নিয়ে আসে। তার ব্যখ্যা আমার কাছে স্পষ্ট হতে হয়। আমার সীমিত জ্ঞানে আমি যা বিশ্বাস করতে পারি, তাই আমার কাছে আমার ভালোবাসা হয়ে যায়। এমন করেই আমার গান আমার ভালোবাসার ফসল হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথের গান আমার কাছে আমার জীবনবোধের পরিচায়ক। প্রতিনিয়ত এই গানকেই আমি আমার জীবনে যুক্ত করে চলেছি।

প্রশ্ন – পুজোর গান করতে শুরু করলে কোন সময়? কেমন সে অভিজ্ঞতা?

উত্তর – পুজোর গান প্রথম করি ২০০২ সালে, আমার প্রথম অ্যালবাম ‘দূরের পাড়ি’, নতুন বাংলা গানের সংকলন ছিল সেটি। আর এই অ্যালবামের মাধ্যমেই পড়াশোনার ইতি হয়ে যায়। প্রথম অ্যালবাম রিলিজের পরে সেই প্রায় ছোটবেলায়ই বলা যায় এখন, মনে হল গান ছাড়া আর কিছু নিয়ে বাঁচা সম্ভব নয়। জীবন খুব সুন্দর একটা ঘটনা। মনে হল অ্যালবাম রিলিজের পর প্রচুর মানুষ আমায় চিনে ফেলবেন। মানে সেই কম বয়সে যেমন স্বপ্ন দেখে মানুষ আর কি, যদিও সেসব কিছুই তেমন ঘটেনি সে সময়। ভাবনাগুলোয় স্বপ্ন ছিল, কিন্তু স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য কী করতে হবে জানতাম না। তাই মুখ থুবড়ে পড়েছিলাম। চলার পথ তো মসৃণ হয় না, আর না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু এগুলোই জীবনের অভিজ্ঞতা হয়ে আছে। সেই সময় এফ এম চ্যানেলে সে গান খুব জনপ্রিয় হলেও আমি তেমন পরিচিতি পাইনি। আসলে ঠিক সময় না এলে তো কারও কিছুই হয় না, এও হয়তো তাই।

Jayati Chakraborty

প্রশ্ন – পুজোর গানে ঈশ্বর ভক্তি নাকি গানের পুজো – কোনটা আসল?

উত্তর – আমার মনে হয় গানের পুজো, এ একেবারেই আমার বোধ বা আমার মনের কথা l আমার মনে হয় গানেরই পুজো হওয়া উচিতl সে গান যে কোন পর্যায়ের বা ধারার হতে পারেl আমার নিবেদনে সেই সততা থাকা টা জরুরীl সেই ডেডিকেশন টা খুব জরুরী মনে হয়, গান পুজো না করলে তা সম্পূর্ণ হয় না।

প্রশ্ন – এই পুজোর গানের বাজার কি শুধুই পশ্চিমবঙ্গে? বাইরে এর বাজার কেমন?

উত্তর – পুজোর গানের বাজার, যা বুঝেছি এখনও এই ছোট্ট সাঙ্গীতিক জীবনে, পশ্চিমবাংলার মধ্যেই সীমিত। বেসিক গান, সিঙ্গলস পুজোকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়। খুব আনন্দ হয় যখন ভাবি আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি কত সমৃদ্ধ, যে একটা উৎসবকে কেন্দ্র করে নতুন গান তৈরি হয়। আমি আর কোথাও পশ্চিমবাংলার বাইরে এমন মাতামাতি দেখিনি যা আমরা করি এই সময়। নতুন জামার মতো নতুন গানও পুজোকে কেন্দ্র করে থাকে। যে বছর নতুন গান হয় না, মন খারাপ হয় খুব।

[the_ad id=”270085″]

প্রশ্ন – এই যে পুজোর গান, এর বৈশিষ্ট্য কি কেবলই গান রিলিজের সময়টা, নাকি আরও কিছু?

উত্তর – না, কখনওই পুজোর গান শুধু রিলিজ়ের সময় ভেবে তৈরি হয় না। কখনওই নয়। যে কোনও শিল্পী বা স্রষ্টাই তাঁর কাজ ভবিষ্যতে স্থায়ী হবে এমন স্বপ্নেই তৈরি করেন। পরবর্তীতে সে কাজ সত্যিই স্থায়িত্ব পাবে কিনা, তা সময়ের বিচার্য। তবে একজন শিল্পী যখন কোনও পুজোর উপহারস্বরূপ তাঁর নতুন গান নিয়ে আসছেন, সে গান সেই বছর পুজোর সম্পদ। প্রতিটা গান সেই গানের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক শিল্পীর সন্তানের মতো। তাই শুধু পুজোকে ঘিরে বা এর রিলিজ় ঘিরেই এর সবটুকু বৈশিষ্ট্য, এমন আমি মনে করি না। আমি যতদিন বাঁচব, আমার গান আমার কাছে আমার সন্তানের মতোই পরম আদরে থাকবে।

প্রশ্ন – বাংলায় তো অন্যান্য আরও অনেক উৎসব পালন করা হয়। সেগুলোর কোনওটার সঙ্গে কি কখনও এরকম বিশেষ ভাবে গানের কথা ভাবা বা রেকর্ড করা হয়েছে?

উত্তর – হ্যাঁ আরও বিভিন্ন উৎসব বা পার্বণ উপলক্ষে গান আমি করেছি। শুধু পুজো নয়, স্বাধীনতা দিবস, তেইশে জানুয়ারি, ছাব্বিশে জানুয়ারি, পঁচিশে বৈশাখকে কেন্দ্র করে অনেক সময় অনেক কাজই করেছি। আবার দীপাবলির সময় আলোর গান, শিবস্তোত্র এসবও করেছি। এমন আরও বহু কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে ভবিষতেও।

[the_ad id=”270086″]

প্রশ্ন – সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চয়ই পাল্টেছে ‘পুজোর গান’। সেই বদল সম্পর্কে পাঠকদের যদি একটু বল।

উত্তর – সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুজোর গান তো অবশ্যই বদলেছে। আসলে সময়ের বহমানতায় আমাদের জীবনযাত্রা যেমন বদলায় তেমনই আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি বা গানও বাহিত হয় এবং তাই এই ধারা আবহমান। আগে পুজোর গানে যেমন মা দুর্গার কথা থাকত, শরৎ প্রকৃতির কথা থাকত। আবার অন্যান্য খুব মেলোডিয়াস গানও আমরা এসময় পেয়েছি। যেমন ‘ও তোতা পাখি রে…’ কিন্তু এখন পুজোর গান মেলোডির থেকে বেশি সেলিব্রেশন-কেন্দ্রিক মনে হয়। এখন মা দুর্গার মাতৃরূপের থেকে যেন শক্তিরূপকে কেন্দ্র করে অনেক বেশি গান তৈরি হয়। অবশ্যই ব্যতিক্রম থাকে। এ বছরই যেমন ‘ত্রিগুণধারিণী’ নামের একটা গান রিলিজ় হল দাশরথি রায়ের কথায়। কিন্তু নতুন যে গান তৈরি হচ্ছে তার মধ্যে অনেক বেশি প্রতিবাদী ভাবনা, এই সময়ের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। আর অবশ্যই উৎসবনির্ভর গান, ঢাকের আওয়াজ, শঙ্খ, মা আসছেন এসব নিয়ে অনেক গান তৈরি হচ্ছে। তাই অবশ্যই বদলের প্রভাব এসেছে এবং আমার মনে হয় এই বদল সময়পযোগী এবং কাঙ্খিত।

Jayati Chakraborty

প্রশ্ন – পুজোর গানের নতুন কী রূপ দেখতে চাইবে ভবিষ্যতে?

উত্তর – পুজোর গানে কী রূপ দেখতে চাইব ভাবতে গেলে মনে হয়, যদি আমরা একটু মানবিক দিকগুলো নিয়ে গান তৈরি করি বা আধ্যাত্মিক দিকগুলো যদি দেখাতে পারি, আর অবশ্যই যদি মেলোডিয়াস হয় তবে ভালো হয়। তবে এ ভাবে তো গান তৈরি হয় না। গান এক স্বতঃস্ফূর্ত ধারা। তাই যখন গান তৈরি হয়, তখন তা সেই শিল্পীর মনের ছবি ধরেই তৈরি হবে এটাই বাঞ্ছনীয়। আজ প্রশ্নের মুখে বললাম বটে এসব, তবে আমার যেমন পুজোর কথা মনে এলেই খুব ছোটবেলাকে মনে পড়ে। তাই মনে হয় যদি সেই সময়ের মতো গান হয়… মনে হয় মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানের কথা! ওই গানগুলো আমাদের ভাষার সম্পদ, এবং আমাদের প্রত্যেকের মানসিক ও আত্মিক টান রয়েছে ওই গানগুলোর প্রতি। তাই খুব ইচ্ছা বা বলব খুব লোভ হয় যদি মহিষাসুরমর্দিনীর মতো কোনও নতুন কাজ আবার হয় ওই মাপের গান বাজনা দিয়ে।

প্রশ্ন – আজকের যুগে আমরা গান শোনার চেয়ে দেখি বেশি। কিন্তু পুজোর সময় পুজো দেখতে দেখতে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে মানুষ গান শোনে বেশি, হয়তো। পুজোর গান কি কেবল অডিওতে বের করা সম্ভব? তাতে লাভক্ষতির অঙ্কটা কী ভাবে বদলাতে পারে বলে তোমার মনে হয়?

উত্তর – এটা খুব কঠিন প্রশ্ন এবং ব্যবসায়িক দিক আমি খুব কম বুঝি। এখন গান দেখার ঝোঁক বেশি। তাই এত ভিডিওগ্রাফির দিকে নজর দেওয়া হয়। আবার টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কে কেমন সেজে বসছেন বা কী বলছেন, সেগুলো আলোচনার মূল বিষয় হয়। মানুষ শিল্পীদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলতে ভালোবাসেন এখন। আর আমি মনে করি না কেউই গান শুনতে শুনতে ঠাকুর দেখেন। বরং যদি গান পুজো প্যান্ডেলে ক্রমাগত চালানো হয় তবেই তা মানুষের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু কটা মণ্ডপে নতুন গান চালানো হয়? সেই পুরনো গানই চালানো হয় প্রায় অধিকাংশ মণ্ডপে। হয়তো দু’একটা মণ্ডপে নতুন গান চালানো হয়। তাই দেখাটা কমে গিয়ে শোনা বেশি হচ্ছে পুজোয়, এমন বলতে পারব না। এরকম কোনও হিসাব আমি অন্তত দেখতে পাচ্ছি না। তাই লাভক্ষতির কথা সত্যিই বলতে পারব না। সারেন্ডার করছি, হাত তুলে দিয়েছি পুরো।

[the_ad id=”270088″]

প্রশ্ন – এই অতিমারী কী ভাবে বদলে দিল পুজোর গানের পরিস্থিতি?

উত্তর – অতিমারীর প্রভাব পুজোর গানে অন্তত আমি আমার ক্ষেত্রে বুঝিনি। সমস্ত বিধিনিষেধ মেনেই আমি পুজোর আগে বা পুজোর সময়ও বেশ কয়েকটি কাজ করেছি। আশা করি মানুষের ভালোবাসা পাবে এই কাজগুলো। সেটাই আমার পরম পাওয়া হবে। এর বেশি আর কিছু চাওয়ার নেই। কিন্তু যদি সামগ্রিক বাংলা গান বা পুজোর গানের অবস্থা ধরা যায়, তবে বলতেই হয় অবশ্যই এই অতিমারীর প্রভাব পড়েছে। প্রযোজনা সংস্থাগুলো একটা গানে যে পরিমাণ খরচ করত, তা অবশ্যই কমাতে বাধ্য হয়েছে তারা। সেটা ছাড়া আর উপায়ও ছিলো না। আবার গান পুজো মণ্ডপে চালানোর ব্যবস্থারও ঘাটতি হয়েছে, পুজোর বাজেট কমে গিয়েছে। এই অবস্থায় তা ছাড়া অন্য কিছু সম্ভবও নয়। তাই বলতে হয় অন্যান্য জীবিকার মানুষের মতো এই সময় প্রযেজনা সংস্থাগুলো এবং আমরা শিল্পীরা অনেকটা কম্প্রোমাইজ করতে বাধ্য হয়েছি এই সমস্ত কিছু মাথায় রেখে। অনেক শিল্পী অনেক নতুন কাজ অবশ্যই করেছেন। তবু সামগ্রিক ভাবে বলব করোনা পরিস্থিতিতে পুজোর গান সাফার করেছে অবশ্যই।

শ্রীমন্তীর জন্ম আর স্কুলের পড়াশোনা কলকাতায়। স্নাতকস্তরে দিল্লি স্কুল অফ ইকনমিকসে পাড়ি। পেশায় সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক হলেও বৃষ্টিভেজা দিনে এতোল বেতোল ভাবনা ভাবতে আর সুর ভাঁজতে ভালোবাসেন। কলম ছুঁইয়ে চেনাকে অচেনা আর অচেনাকে চেনা করে তোলা তাঁর প্রিয় শখ। ভালোবাসেন ছোটদের সঙ্গে সময় কাটাতে, বই পড়তে আর বেড়াতে।

Picture of শ্রীমন্তী মুখোপাধ্যায়

শ্রীমন্তী মুখোপাধ্যায়

শ্রীমন্তীর জন্ম আর স্কুলের পড়াশোনা কলকাতায়। স্নাতকস্তরে দিল্লি স্কুল অফ ইকনমিকসে পাড়ি। পেশায় সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক হলেও বৃষ্টিভেজা দিনে এতোল বেতোল ভাবনা ভাবতে আর সুর ভাঁজতে ভালোবাসেন। কলম ছুঁইয়ে চেনাকে অচেনা আর অচেনাকে চেনা করে তোলা তাঁর প্রিয় শখ। ভালোবাসেন ছোটদের সঙ্গে সময় কাটাতে, বই পড়তে আর বেড়াতে।
Picture of শ্রীমন্তী মুখোপাধ্যায়

শ্রীমন্তী মুখোপাধ্যায়

শ্রীমন্তীর জন্ম আর স্কুলের পড়াশোনা কলকাতায়। স্নাতকস্তরে দিল্লি স্কুল অফ ইকনমিকসে পাড়ি। পেশায় সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক হলেও বৃষ্টিভেজা দিনে এতোল বেতোল ভাবনা ভাবতে আর সুর ভাঁজতে ভালোবাসেন। কলম ছুঁইয়ে চেনাকে অচেনা আর অচেনাকে চেনা করে তোলা তাঁর প্রিয় শখ। ভালোবাসেন ছোটদের সঙ্গে সময় কাটাতে, বই পড়তে আর বেড়াতে।

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস