দিনটা ছিল ২৬শে ডিসেম্বর ২০১২। শান্তিনিকেতন পৌষমেলায় প্রথম দেখেছিলাম মানুষটিকে। তখন চলছিল ‘জীবনস্মৃতি’র শুটিং। গাঢ় তুঁতে রঙের তসরের পাঞ্জাবি আর মেরুন পাগড়িতে যথারীতি অনন্য দেখাচ্ছিল তাঁকে। সামনাসামনি না হলেও সেই প্রথম ঋতুদার সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছিল মনে মনে। আঙ্গিক পত্রিকা তখন সদ্য পা রেখেছে সাত মাসে। ভাবলাম— আঙ্গিক কি এই মানুষটিকে নিয়ে বিশেষ সংখ্যা করতে পারে না? বললামও ওঁকে, ‘ঋতুদা’ আমরা তোমাকে নিয়ে একটা সংখ্যা করব ভাবছি। তুমি যদি অনুমতি দাও…’। উত্তর এল, ‘আমাকে নিয়ে আবার সংখ্যা করা কেন বাবু! আচ্ছা ঠিক আছে, ভালো করে করিস’। হয়ে গেল আঙ্গিকের ঋতুপর্ণ সংখ্যার পাকাপাকি কথা। তারপর কেটে গেছে পাঁচটা মাস। আঙ্গিক তখনও ঋতুপর্ণ ঘোষ (Rituparno Ghosh) সংখ্যার মুখ দেখেনি। মে মাসের শুরু শুরু ভাব; মনে এল ঋতুদার ফোন নম্বর তো আমার কাছেই আছে। একটা ফোন করি, এবার সত্যি সত্যি কথা বলে নেওয়া দরকার। দিনটা ছিল ১২ মে, রোববার। ফোনের ওপাশ থেকে কোনো সাড়া পেলাম না— হতাশ হলাম। হয়তো ঋতুদার জীবন-মরণের সত্যিকারের লড়াইটা তখন শুরু হতে যাচ্ছিল। (Little Magazine)

এর কিছু পর এক মেঘলা দিনে (৩০ মে) আঙ্গিকের দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সংখ্যার একগুচ্ছ কাজ নিয়ে কলকাতার পথে রওনা হলাম। সঙ্গে টিম রূপ- কথার আরো দুই বন্ধু, তীর্থ আর দীপু। ট্রেন চলছে মন্থর গতিতে। একটা অজানা নম্বর থেকে এস.এম.এস এল— শহরে পরিচালকের অকাল মৃত্যু’। সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি থেকে ফোন এল। মা— ‘বাবু, এইমাত্র শুনলাম, গতকাল রাতে ঋতুপর্ণ ঘোষ মারা গেছেন।’ কথাটা শোনার পর কিছু ভাবতে পারিনি— কিছু বলতে পারিনি— কাঁদতেও পারিনি। ট্রেনের অন্য যাত্রীরা যদি সেই কান্না দেখে নেয়! কোথায় যাব, কি করব? কোনো উত্তর নেই।
সেইদিনই শপথ নিয়েছিলাম আমরা একটি ঋতুপর্ণ ঘোষ বিশেষ সংখ্যা করব। আপন মনের মাধুরী মেশানো থাকবে তাতে। সেরকমভাবেই একটু একটু করে প্রতিদিনের প্রতিমুহূর্তের ভালোবাসা-শ্রদ্ধা এই সংখ্যার পাতায় পাতায় রয়েছে। রয়েছে নীরবতাও। সংখ্যাটির জন্য আলাদা করে ধন্যবাদ জানাব অতিথি সম্পাদক অভিষেক মণ্ডলকে। অভিষেক দা’র অনন্য সাধারণ ভাবনা চিন্তার মধ্য দিয়ে আঙ্গিকের এই সংখ্যা একটি পরিপাটি রূপ পেয়েছে। সেই সঙ্গে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি বর্ণসংস্থাপক আশীষ রায়-এর কাছে। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পত্রিকাটির প্রকাশ সম্ভব হত না ৷ প্রসঙ্গত একটি কথা বলে নেওয়া প্রয়োজন, এটি আঙ্গিকের ঋতুপর্ণ ঘোষ সংখ্যার প্রথম পর্ব। অর্থানুকূল্য এবং আয়তনের কথা মাথায় রেখেই এই পরিকল্পনা ৷
জীবনে তো কোনোকিছুরই শেষ হয় না। কারণ শেষের পরেই শুরু হয় নতুনের শুভযাত্রা। ঋতুদার জীবন ফুরোয়নি। ঋতুদাকে, তাঁর সৃষ্টিকে আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভাবে আবিষ্কার করি। আঙ্গিকের এই সংখ্যার প্রতিটি লেখায় নতুনত্বের স্বাদ রয়েছে। এক এক জন এক এক রকমভাবে ঋতুপর্ণকে নিয়ে ভেবেছেন— বিশ্লেষণ করেছেন। ঋতুদার পঞ্চাশতম জন্মদিনে টিম আঙ্গিকের পক্ষ থেকে এটিই রইল তাঁর জন্যে বিশেষ উপহার। উপহারের পরিমাণ ছোট হলেও, এর মধ্যে ভালোবাসা, গভীর শ্রদ্ধা লুকিয়ে আছে। আর আমি তো জানি এ উপহার ঋতুদা’র পছন্দ হবেই। শুধু দুর্ভাগ্য এটাই, ঋতুদা’র সমালোচনাটা পাওয়া যাবে না; জানা যাবে না আঙ্গিক ঋতুদা’র কেমন লাগল। তাঁর একটি মন্তব্য যে আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের!
যেখানেই থেকো, ভালো থেকো ঋতুদা। প্রণাম নিও ৷
শ্রাবণ, ১৪২১
সুমন সাধু
প্রথম প্রকাশ: ২০১৪
পরিবর্ধিত সংস্করণ: ২০১৬
সম্পাদক: সুমন সাধু
অতিথি সম্পাদক: অভিষেক মণ্ডল
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।