(Anjali Das)
কবিতাসংগ্রহ: অঞ্জলি দাশ
প্রচ্ছদ: শোভন পাত্র
প্রকাশক: আদম
বিনিময় মূল্য: ৫০০ টাকা
ইদানিং বিস্মৃত কোনও কবি বা নিভৃতচারী কবির কবিতাসংগ্রহ ছোট প্রকাশনীর এক প্রধান দায়বদ্ধতা, এমনকি বাজার সফলতাও বটে। দশকের বিভিন্ন মহীরুহর পুজো পেরিয়ে যে বৃক্ষের দিকে নজর দেওয়া উচিত ছিল এতদিন, অথচ মিডিয়া আর বিপণনের গোপন আঁতাতে তা সম্ভব হয়নি, আজ সমস্ত মনোপলি ভেঙে যাওয়ার পর এই এক সুবর্ণ সুযোগ। ফলত শঙ্খ-সুনীল-শক্তির পাশাপাশি মনীন্দ্র গুপ্ত কিংবা উৎপলকুমার বসু আজ অনিবার্য হয়ে ওঠেন তরুণ কবি ও পাঠকের কাছে। অনেক মিথ এবং মিথ্যে ভেঙে যায়। যদি লক্ষ্য করি প্রায় সব ছোট প্রকাশনীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিস্মৃতির পুনরুদ্ধার। তাই যুগান্তর চক্রবর্তী থেকে দীপঙ্কর দাশগুপ্ত, গৌরাঙ্গ ভৌমিক থেকে শ্রীধর মুখোপাধ্যায় এক অনিবার্য সাঁকো তৈরি করে দেয় পাঠক স্বভাবের মধ্যে। এই কাজটি দুই দশক ধরে সুনিপুণভাবে করছেন আদম প্রকাশনী। (Anjali Das)
ভাবনাসঞ্চারী অবচেতনের সংলাপ: পঙ্কজ চক্রবর্তী
অশোক দত্ত, অনুরাধা মহাপাত্র চন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল, অনির্বাণ ধরিত্রীপুত্র, অশোক দত্ত চৌধুরী, যুগান্তর চক্রবর্তী, বীরেন্দ্রনাথ রক্ষিত এমনই অনেক বিস্মৃত কবির কবিতাসংগ্রহ এই প্রকাশনীর ভান্ডারে। সাম্প্রতিক অতীতে প্রকাশিত হয়েছে সত্তরের আড়ালে থাকা কবি অঞ্জলি দাশের কবিতাসংগ্রহ, এই প্রকাশনী থেকেই। এখানেই অনিবার্য হয়ে ওঠেন সত্তরের গৌতম বসু বা গৌতম চৌধুরী। কিংবা দেবদাস আচার্যর মতো অনিবার্য এক কবি। (Anjali Das)
তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ যে বছর প্রকাশিত হয় সেই বছর সত্তরের অপর এক কবি জয় গোস্বামী তাঁর অষ্টম গর্ভের সন্তান নিয়ে হাজির হচ্ছেন।
তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ যে বছর প্রকাশিত হয় সেই বছর সত্তরের অপর এক কবি জয় গোস্বামী তাঁর অষ্টম গর্ভের সন্তান নিয়ে হাজির হচ্ছেন। বিপুল জনপ্রিয়তা আর অনির্বচনীয় হুন্ডি হাতে নিয়ে দীর্ঘদিন শহরে ও মফঃস্বলে মায়াজাল বিস্তার। কমবেশি সব কবিই সেদিন যেন অবান্তর হয়ে গেছেন। আমরা সেদিন পাঠক হিসেবে প্রস্তুত ছিলাম না অঞ্জলি দাশের জন্য।
তিনিও সত্তরের কবি অথচ প্রথম কাব্যগ্রন্থ নিয়ে প্রকাশিত হতে দুই দশক পেরিয়ে গেল। কবিতার ইতিহাসের মান্য আলোচনায় তাঁকে সত্তরের একজন প্রধান কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। সেসব অবশ্য তাঁর ভাবনার বিষয় নয়। বরং নিজের সৃষ্টি নিয়ে নিজেই মেতে রয়েছেন এবং অপ্রকাশ্যতাই যাঁর দিনলিপি তেমনই একজন সম্পন্ন কবি তিনি। সত্তরের অনেক কবির মতোই অতিপ্রজ নন। বরং পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল উৎপলকুমার বসু, সৈয়দ জমিল দেবারতি মিত্র এমনই দু-একজন শুভার্থী বিরল পাঠকের ভরসায় তিনি লিখে চলেছেন। কবিতার চেয়ে না লেখায় আগ্রহ বেশি। পাতায় রূপান্তরের চেয়ে অন্তরে লালনের মাতৃত্ব তাঁকে অনেক বেশি সুখ দেয়। সে এক অভিশপ্ত জীবন। সে কথা বলতে নেই কাউকে। অপ্রকাশ্যতা এবং অপসৃয়মাণ এক নিয়তি তাঁর কবিতার ভাগ্যরেখা তৈরি করেছে যেন। (Anjali Das)

অঞ্জলি দাশের (Anjali Das) প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘পরীর জীবন’ প্রকাশিত হয় ১৯৯১ সালে। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের ফসল মাত্র পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ। একে একে প্রকাশিত হয়েছে- চিরহরিতের বিষ (১৯৯৯), এইমাস নিশ্চুপ তাঁতের (২০০১), সহজে বোঝো না (২০০৯), মুগ্ধ হয়ে থাকি(২০১৭), হৃদয়ের বোন(২০১৯) এবং রয়েছে অপ্রকাশিত এবং অগ্রন্থিত আরও কিছু কবিতা। সংযমে এবং কৃপণতায় রইল অজস্র না-লেখা, জন্মের আগেই প্রত্যাখ্যান।একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে অঞ্জলির কবিতায় একটি আড়াআড়ি ভাগ আছে। প্রথম তিনটি কাব্যগ্রন্থের সুর এবং শেষ তিনটে কাব্যগ্রন্থের সুর সম্পূর্ণ আলাদা। যদি প্রকাশকাল বিস্মৃত হই তাহলে এক উল্টোরকম বিবর্তন দেখতে পাই। মনে হয় শেষ তিনটি কাব্যগ্রন্থের পরে প্রকাশিত হয়েছে প্রথম তিনটি কাব্যগ্রন্থ। এর একটা নির্দিষ্ট কারণ আছে মূলত পাঠকের অভিপ্রায়ের দিক থেকে, কবির দিক থেকে তা নাও হতে পারে। বিস্তৃতি বা বিস্তারের দিক থেকেও নয়, গভীরতার কথাটি এখানে অপ্রাসঙ্গিক। বরং এ-কথা স্পষ্টভাবে বলা যায় অঞ্জলি দাশ সারাজীবনে একটিও দুর্বল কবিতা লেখেননি। লিখলেও প্রকাশের দায়িত্ব নেননি। এই আত্মসংযম থেকে আজ আর আমরা শিক্ষা নিতে পারব না। বরং গৌরবটুকু দিয়ে প্রকাশক সেজে বাণিজ্য করতে পারব। এর সঙ্গে রয়েছে স্মৃতি বিস্মৃতির কত না রঙিন খেলা। (Anjali Das)
প্রথম থেকেই লক্ষ্য করি অঞ্জলি দাশের কাব্যগ্রন্থে রয়েছে তীব্র এক অধিকারবোধের কথা। নারীর স্বাধিকার বিষয়ে তিনি একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর কবিতায়। খুবই নীরবে প্রায় না দেখার মতো।
প্রথম থেকেই লক্ষ্য করি অঞ্জলি দাশের কাব্যগ্রন্থে রয়েছে তীব্র এক অধিকারবোধের কথা। নারীর স্বাধিকার বিষয়ে তিনি একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর কবিতায়। খুবই নীরবে প্রায় না দেখার মতো। খুব জোরালো গলায় হয়তো নয়, কিন্তু স্পষ্ট ভাবে। কোনও আড়ালের দরকার হয়নি আবার উচ্চকিত স্বরের লঘু চপলতাও রাখতে হয়নি। পূর্ববর্তী কোনও কবির উত্তরাধিকার, এমনকি কবিতা সিংহের উত্তরাধিকারও তাঁর নেই। যা আছে একান্ত নিজস্ব বয়ান। প্রতিদিনের জীবন নিয়ে একটু একটু চলা-দেখা। দৃশ্য অদৃশ্যের রূপান্তর, ডায়েরিতে টুকে রাখা কয়েকটি হারিয়ে যাওয়া মুহূর্ত। একে কবিতা বললে কবিতা, কবিতা না বললেও যেন চলে অঞ্জলির অভিপ্রায় তেমনই। কোনওভাবেই পাঠকের কাছে সামান্য প্রত্যাশা নেই। পাঠকের দিকে এগিয়ে যাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই তাঁর। পাঠকের প্রশ্নটিকে অবান্তর করে দিয়ে এমন নির্মোহ কবিতা কজনই বা লিখতে পারেন! পাঠকের উদ্দেশ্য যখন অবলুপ্ত তখন একজন কবি চিরাচরিতের পথ প্রত্যাখ্যান করবেন সেটাই স্বাভাবিক। ফলত পরীর জীবন সঙ্গোপনে সঙ্গীহীন, বিচ্ছিন্ন এক অনিবার্য টিলা। (Anjali Das)
এই গ্রামদেশ, স্বপ্নাদেশে লিখিত কবিতা: পঙ্কজ চক্রবর্তী
কীভাবে জীবন কাটান তিনি, কীভাবে জীবন কাটাচ্ছেন তিনি, কীভাবে জীবন কাটাবেন তিনি এই সব সাধারণ কথাগুলি মিশে আছে তাঁর কবিতায়। সুর হয়ে, গৃহস্থালির অনুচ্চারিত বিষাদ নিয়ে। এই জীবন কি আসলে কোনও নারীর, যার প্রতিমুহূর্তে নানা সম্ভাবনা চায় সংসার অথচ কোনও অর্জন নেই? এক অভিশপ্ত পরীর জীবন আর ধূসর সবুজের শান্ত চরাচর। তারা ভরা আকাশের নীচের নদী আর পলির দেহপ্রতিমা নিয়ে গড়ে ওঠে তাঁর কবিতা। তাই প্রথম কাব্যগ্রন্থের বিভাব কবিতায় তিনি লক্ষ্য করতে বলেন-
‘নতুন গ্রহটি স্পষ্ট,নামকরণের আগে /দেখে নেওয়া যাক এর চাঁদ, পলিমাটি…’
এই গ্রহটি একান্তই তাঁর নিজস্ব। সুস্পষ্ট তার অবস্থান ও তরিকা। এক নামকরণ দিয়ে চিহ্নিত করার সমাজপন্থাটি অবান্তর। একটি কবিতা পড়ুন-
“যেটুকু রাখি, থাকে- জতুপাথরছড়ায় যা, পাখির ঠোঁটের নীচে, ঘনশ্বাস হাওয়া আড়ে আড়ে লোভে ছত্রখান
জিভ মেলে ছুঁয়ে আসে পুজোপাঠ দেহ
এই পাপ, বংশপরম্পরা হয়ে
প্রবাদবাক্যের মতো অর্ধসত্য হয়ে ঘোরে।
যেখানেই হাহাকার স্পষ্ট হয়,
ছাদ ঢালাইয়ের শ্রম গান হয়ে ওঠে;
সংসার বসাব বলে ভগ্নদশা রুগ্নঘুম দু-হাতে সরাই,
প্রত্নছাই বেজে ওঠে পায়ের তলায়- ভাসায়, উদ্ধারের ঠিক আগে ভরাডুব, জলতল শেষ,
তেল ও কয়লার স্তর পার হলে বল্কলবিলাস-আর পুত্রলোভী নিষাদের অব্যর্থ ধনুক।
ইতিহাস পিছনপাতার দিকে আঙুল বাড়িয়ে হাসে,
‘পুষ্পবিন্যাসের নীচে শিকলের শব্দ কেন তোর’”
(ইতিহাস) (Anjali Das)
একজন কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ এতখানি নিজস্বতা অর্জন করে কীভাবে? নাকি দীর্ঘ সময় ধরে তিনি একটু একটু করে মুছে দিয়েছেন সব দুর্বলতা। বিবর্তনের চিহ্ন মুছে হাজির হয়েছেন নিজস্ব স্বর নিয়ে। বলবার কথা এই বিষয়ের দিক থেকে হয়তো এইসব প্রসঙ্গ এসেছে কিন্তু দৃশ্যকল্প এবং শব্দ ব্যবহার এতটাই নিজস্ব যে কোনও প্রভাবের ভগ্নাংশ লেগে নেই কোথাও। সবচেয়ে আশ্চর্য করে কবিতার স্থাপত্য। (Anjali Das)

একেবারে শুরু থেকেই সচেতন অঞ্জলি। অন্তত প্রথম তিনটি কাব্যগ্রন্থে স্থাপত্যের দিক থেকে নিজস্ব এক চিহ্ন রচনা করতে পেরেছেন। কোথাও উঁকি দিয়ে একটি চমৎকার লাইন খুঁজে পাওয়ার জো নেই। কোনও একটি মুগ্ধচরণ যা প্রায় বাগধারা হয়ে উঠতে চায় অঞ্জলি তার কোনও সুযোগ রাখেননি। এতটাই ঘন, এতটাই নিবিড়। কোনও বিচ্ছিন্নতায় সেই সুর জেগে ওঠে না। প্রায় সব কবিরই স্মৃতিধার্য পঙক্তি রচনার ঝোঁক থাকে। অঞ্জলি প্রথম থেকেই তা পরিহার করেছেন। তার কারণ পাঠকের বিষয়টি তাঁর কাছে অবান্তর। সামনে কোনও পড়ুয়া নেই। মঞ্চ নেই। সমালোচকের হাততালি বা বিষোদগার নেই। দীর্ঘদিন এক শীতল ছায়ার ভেতর অঞ্জলি কবিতাগুলোকে ধরে রেখেছিলেন একটি মাটির ভাঁড়ে। তাঁকে সময় চিহ্নহীন করেছেন। তাঁর কবিতায় দিন এবং রাত মুছে গিয়ে রয়েছে এক অনন্ত বিকেল। সেখানে আবাহন নেই বিসর্জন নেই। ফেরা নেই শুধু আছে সুদীর্ঘ অপেক্ষা। নিজের ভিতরে যাওয়ার। ভিজে চোখের মুগ্ধ অনুরাগ। (Anjali Das)
সেই বিরহে একজন পুরুষের কোনও সংবেদনশীল পারিবারিক অবস্থান নেই। সামাজিক অবস্থান তো অবান্তর। তাই অমোঘ এক বিরহের প্রান্তিক অবস্থান নিয়ে অঞ্জলি কবিতা লেখেন, না হলে হয়তো লিখতেন না
চোখের কথা বলতেই মনে পড়ে যায় অঞ্জলি দাশের চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ থেকে এক বাঁকবদলের কথা। এখান থেকে শুরু হচ্ছে অঞ্জলি দাশের কবিতায় প্রবল শরীর এবং প্রান্তিক বিরহ। শরীর আগেও ছিল কিন্তু সেখানে সামাজিকতার থেকে পরিত্রাণ নেই। এখানে অঞ্জলি তীব্র শরীরী। শরীর নিয়ে তীব্র এক আচমন। কোনও উপেক্ষা বা শিথিলতা নয় বরং শারীরিক উদ্যাপন। বিছানা থেকে শুরু করে ঘরের অন্তরাল সর্বত্রই শরীর। যৌন আকাঙ্ক্ষা। অবদমন মুছে গেছে। কিন্তু আশ্চর্য এই যন্ত্রণা মুছে যায়নি। তাই অবসাদ আছে। আছে বিরহ। সেই বিরহে একজন পুরুষের কোনও সংবেদনশীল পারিবারিক অবস্থান নেই। সামাজিক অবস্থান তো অবান্তর। তাই অমোঘ এক বিরহের প্রান্তিক অবস্থান নিয়ে অঞ্জলি কবিতা লেখেন, না হলে হয়তো লিখতেন না। পড়ুন তবে-
“পথে পা রাখলেই পিছনে শুনতে পাই ‘সাবধানে যেয়ো’
আর কতদিন আমি সাবধান হব!
একঘেয়ে সময়ের মাঝখানেএকটু অন্যমন, একবার বাতাস কাঁপিয়ে দিয়ে কেঁদে ওঠা,
সামান্য স্বেচ্ছাচারে আমারও তো আজন্মের লোভ।
তাই জেব্রাক্রসিং ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি…
প্রতিটি গোধূলিবেলা,
প্রত্যেক সজীব পাতা ঝরার একটু আগে জেনে যাক
আমিও মৃত্যুর মতো সত্যি হয়ে বেঁচে আছি।”
(জেব্রাক্রসিং) (Anjali Das)
অথবা –
‘ভেবে বলো,
কতদূর থেকে দেখা যায় চোখের জলের দাগ। ঠিক তার পাশে রেখে দেব এই বালির খেলনাগুলো,
যাকে তুমি স্বপ্ন বলো।
যাকে তুমি অঙ্কের নিয়মাবলি শেখাতে শেখাতে রোজ রাতে বারবার ঘুমিয়ে পড়,
আর মাঝরাতে ঘুম ভেঙে
নদীর সামনে গিয়ে গোপনে গোপনে বলে আসো আমার নিয়ম না-মানার কথা,
আমার বালির সংসারের কথাও।’
(বালির সংসার) (Anjali Das)
এভাবেই এগিয়েছে অঞ্জলি দাশের কবিতা বাংলা কবিতার পরম্পরার তোয়াক্কা না করেই। আশ্চর্য সতেজ। অজস্র তার বন্ধন কিন্তু কোথাও ডানা ভেঙে যায়নি এমন এক চিরন্তন সবুজ ডানা লুকিয়ে আছে অঞ্জলির কবিতায়।
এভাবেই এগিয়েছে অঞ্জলি দাশের কবিতা বাংলা কবিতার পরম্পরার তোয়াক্কা না করেই। আশ্চর্য সতেজ। অজস্র তার বন্ধন কিন্তু কোথাও ডানা ভেঙে যায়নি এমন এক চিরন্তন সবুজ ডানা লুকিয়ে আছে অঞ্জলির কবিতায়। এত অনুচ্চকিত যে, চোখে পড়ে না। শুরুর দিকের কবিতায় যে কথা অন্তর্জীবনে তাকিয়ে স্পষ্ট ভাবে বলেছেন অঞ্জলি। শেষ পর্বে এসে তাকে খানিকটা ঘষা কাচের মতো আবছা করে দিয়েছেন। শরীর বিছানা এবং ঘর পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত অঞ্জলির কবিতা খুঁজে নেয় এমন এক বিকেল, যেখানে অভিযোগ নেই প্রান্তিক এক বিরহ আছে যা জীবনকে ছোট এক পরিসর থেকে চরাচরে ব্যক্ত করে দেয়। অঞ্জলি নিজের কবিতায় ছোট ছোট স্মৃতি চিহ্নে খুঁজে পেয়েছেন পরাবাস্তবতার সত্যিটুকু। সেই সত্যিই তাঁর কবিতা। সুখ লিখে দুঃখের আঁচড়ে কাটা এক বিষাদ আত্মস্থ জীবন। তার শরীরী বেদনা পতঙ্গপ্রবণ। তার আত্মময়তাও পতঙ্গপ্রবণ। শোভন পাত্রের অসামান্য প্রচ্ছদে সেই সব কথাই লেখা আছে অমোঘ দিনলিপিতে। (Anjali Das)
জন্ম ১৯৭৭। লেখা শুরু নব্বইয়ের দশকে। পঞ্চাশের বাংলা কবিতার আতিশয্যর বিরুদ্ধে এযাবৎ কিছু কথা বলেছেন। ভ্রমণে তীব্র অনীহা। কিংবদন্তি কবির বৈঠকখানা এড়িয়ে চলেন। এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - বিষণ্ণ দূরের মাঠ চার ফর্মার সামান্য জীবন, উদাসীন পাঠকের ঘর, লালার বিগ্রহ, নিরক্ষর ছায়ার পেনসিল, নাবালক খিদের প্রতিভা। গদ্যের বই- নিজের ছায়ার দিকে, মধ্যম পুরুষের ঠোঁট। মঞ্চ সফলতা কিংবা নির্জন সাধনাকে সন্দেহ করার মতো নাবালক আজও।