Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

অহিরা: এই আমি (কবিতা বিষয়ক গদ্য)

বাংলালাইভ

অক্টোবর ৩, ২০২৩

Article of Nitya Malakar on his poetry life
Article of Nitya Malakar on his poetry life
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

নিত্য মালাকার

Nitya Malakarকবিতা লিখি না আমি। কবিতা আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেওয়া হয়। আমার দাসত্বব্রত মাত্র। — কার? — ‘স্বত্ব-স্বামিত্বের প্রশ্নে জোর আছে যার।’

ইদানীং এইসব প্রশ্ন-প্রতর্কের ভাবনা তৈরি হয় ভেতরে ভীষণভাবে। মুহ্যমান হই, তন্দ্রাঘোর হই। প্রসঙ্গান্তর হই এবং গ্রামের পথে পথে হাঁটি। বেণুবন, নীপবন এবং শেষে বয়স হারানো এক কুঁজো সহকারতরুর প্রশ্রয়ে এসে পড়ি। এখানে পূর্বপশ্চিম ও উত্তরদক্ষিণগামী রেখা দুটি একে অপরকে ছুঁয়েছে। আর এখানেই পার্শ্ববর্তিনীর বেদনার্ত কণ্ঠের চূড়ান্ত বিরহ-উক্তি, ‘আসি’।

ইদানীং পেছনের গল্পগুলি নিয়ে খুব নাড়াচাড়া করি। ফলত, প্রায়শই ভাবাবেগে থাকি। প্রেম খুঁজি। নিজেকে নিগ্রহ করি। ছি-ছিক্কারে ধিকৃত করি, এবং উপায়ান্তর কী— ভেবে ভেবে শেষে ‘গীতবিতান’ ভাবি। পূজা ও প্রেম পর্যায়ের কথাগুলি গলায় তুলে নিই। স্বকৃত চেষ্টায় এই কসরতগুলি কিছুটা সুফল দেয়। আশ্বস্তবোধে প্ৰসন্ন, স্মিত হাসিমুখ সজ্জন নাগরিকরূপে আস্থাভাজন হই পাড়ায়, বাজারে ও এই সুটুঙ্গা-মানসাই নদীদ্বয় দিয়ে ঘেরা মাথাভাঙা নামক গঞ্জ-শহর বা লোকালয়ে। — লিখি আর লিখি। এইভাবে মহা আসক্তিবশ থাকি এবং প্রেরণা পাই। লিখি।

এবং একদিন যথারীতি অসুখে পড়ি। এ-অসুখে শরীর ও মন উভয়েই সমভিব্যাহারী। এ-দশায় একদিকে শরীর শুকিয়ে কাঠ, অন্যদিকে মনের ঋদ্ধি, বল বা শক্তি-সাহস আমাকে দিয়ে বেশ কিছু গদ্য-পদ্য লিখিয়ে নিতে থাকে।

প্রেম খুঁজি। নিজেকে নিগ্রহ করি। ছি-ছিক্কারে ধিকৃত করি, এবং উপায়ান্তর কী— ভেবে ভেবে শেষে ‘গীতবিতান’ ভাবি। পূজা ও প্রেম পর্যায়ের কথাগুলি গলায় তুলে নিই। স্বকৃত চেষ্টায় এই কসরতগুলি কিছুটা সুফল দেয়। আশ্বস্তবোধে প্ৰসন্ন, স্মিত হাসিমুখ সজ্জন নাগরিকরূপে আস্থাভাজন হই পাড়ায়, বাজারে ও এই সুটুঙ্গা-মানসাই নদীদ্বয় দিয়ে ঘেরা মাথাভাঙা নামক গঞ্জ-শহর বা লোকালয়ে।

সে-এক সময় গেছে তখন। তখন নিতান্তগুলিই মুখ্যত হয়েছে। বৈয়াকরণিক ভাষায়, সূত্রে শুদ্ধ-বিশুদ্ধ নয় বটে কিন্তু ওই যা হয় আর কী। গোঁজামিল দিয়ে সব মিলিয়ে দিয়েছি। —  কী-কী সব হিজিবিজি পদ্য লিখেছি, এবং এখনও লিখি দুর্মর অভ্যাসে। সূত্র সন্ধানহীন, ভাষান্বয়হীন ফিচেলের ভাষাদর্শন ভিন্ন সার পদাৰ্থ কিছু নেই। পরে, অনেক পরে এসে বুঝেছি অমুদ্রিত, মুদ্রিত লেখাগুলির কলহ-কান্না৷ অথচ, তখন আমার গেরস্থের সংসারজ্বালা দহনসন্ত্রাস। সন্তানদের ও তাদের সতত খিটমিটে জননীকে নিয়ে নানাবিধ দুর্বিপাকে প্রায় অহরহ যথোচিত সমাধানের শব্দসন্ধান। অর্থ, অর্থানুসন্ধান। এবং খোদ কাবুলিওলা আমির খানের মহা আশ্বাস। ইনি কুশীদ মহাগান্ধারজীবী। ইনি প্রত্যক্ষ। ইনি অপরব্রহ্ম। সদ্ভাব রাখলে নিয়মিত তিনি আসল সহায়।

আমার জীবনে এসব চলেছে বহুদিন। তবু ভুলিনি তাকে। লিখেছি তাকে নানাবিধ প্রসঙ্গে, অবয়বে। সে সততই যে কবিতা হয়ে এসেছে সমানে, তা বলি না, কিন্তু মুখোমুখি তাকে কিছুক্ষণ এ-কথা সে-কথার সূত্রে তাকে এই ভেবে যে, সে তো মুখ্যত নিরাময় নয়, সে আশ্বাস-সান্ত্বনাসার। —  অবয়বী বন্ধু ভগবান।

Nitya Malakar book

মন খুব খারাপ হয়েছে। মোহ ঘুচতে বহু চৈত্র-বৈশাখের খরতাপ নিদাঘ গিয়েছে। কিন্তু, ইত্যবসরগুলিতে কী কলম, শিল্প বা মহাকাম (পুং) কী নিস্তেজ, নিষ্ক্রিয় থেকেছে? না, মহা না। এইসব ভাবতে গিয়ে প্রায়শই চূড়ান্ত বিপর্যস্ত, বিপন্ন দেখেছি নিজেকে। নানাবিধ অভিজ্ঞতার দেখা ও না-দেখাগুলির ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে সময়-সময়ান্তরের বিবিধ প্রায়-গদ্য বা প্রায় কবিতাগুলির চেষ্টা, অবয়ব।

জীবনস্যারের বিবেচিত, নির্ধারিত পাঠক্রমগুলি বুঝে বা না-বুঝে গিলে গিলে নানাবিধ বালক-বালিকাদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তরের এক সিলেবাস থেকে অন্য ভিন্নতর সিলেবাসের ভেতরে এসে শেষে সেঁধিয়ে গিয়েছি। শিক্ষা বা শিক্ষাদানের অর্থ বুঝতে-না-বুঝতেই ‘এসেছে আদেশ’ অর্থাৎ ‘বন্দরের কাল হল শেষ’ এবং ‘শুধু যাওয়া আসা, শুধু স্রোতে ভাসা/ শুধু আলো-আঁধারে কাঁদা হাসা।’ এবং ইত্যাদি ইত্যাদি। বেশ ক-বছর ধরেই এরকমটা ঘটছে। বলা ভালো সেই ‘দানা ফসলের দেশে’ থেকেই এরকমটা ঘটছে।

আরও পড়ুন- অহিরা: বাঁদনা লোকপুরাণ-কপিলা মঙ্গল

জীবন বহতা নদীর উপমাশ্রয়ী। সকলেই জানে। সকলেই জানে এ-কথাও যে, নদীর একদিকে পাড় ভাঙে, অন্যপাড়ে গড়ে ওঠে নতুন আবাদ, আকাশ ও আবাস। ‘মিরুজিন’ নদীটির অতি মন্থর তীরে এসে দাঁড়িয়েছি। ভাগ্যিস, এতটাই অর্জন করেছি যে, পিছনের কলরব কোলাহলগুলির ভেতরে থাকা অনূদিত বাক্যগুলির প্রাঞ্জল ভাষ্যটি ঠিক কী, তা বুঝতে পারছি সম্যক। ইদানীং বড় বেশি প্রত্যয়-বিশ্বাসের দ্বন্দ্বে ভুগছি। একটা কোথাও আশ্রয় বা প্রশ্রয় দরকার। নারীদের প্রশ্রয়ে নানা সময়ে নানা কাণ্ডে কিছুদিন সুখ ছিল বটে, কিন্তু আশ্বাস আশ্রয় ছিল না। অবশেষে ইদানীং প্রত্যয়ী হয়েছি এই এই কথা ভেবে যে, গীতবিতানের মুখরা ও তার অস্তরাগুলি ভেবে যে মননের চিন্তনের আর কোনো পথ নেই অভিগামী সূত্র অন্বেষণের। এবং শেষে অন্তরাটুকু ধরে পথ হাঁটা। একা একার সাথে। ফলে খুব মজা হয়। ‘এক ভাই অন্ধ হই অন্যজন খোঁড়া।’

জীবন বহতা নদীর উপমাশ্রয়ী। সকলেই জানে। সকলেই জানে এ-কথাও যে, নদীর একদিকে পাড় ভাঙে, অন্যপাড়ে গড়ে ওঠে নতুন আবাদ, আকাশ ও আবাস। ‘মিরুজিন’ নদীটির অতি মন্থর তীরে এসে দাঁড়িয়েছি। ভাগ্যিস, এতটাই অর্জন করেছি যে, পিছনের কলরব কোলাহলগুলির ভেতরে থাকা অনূদিত বাক্যগুলির প্রাঞ্জল ভাষ্যটি ঠিক কী, তা বুঝতে পারছি সম্যক।

এই যে দ্বিবিধ হওয়া, পরস্পর ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হতে হতে যে যার দুরূহ-দুর্গমপথে পর্যটনের আনন্দলাভ, তা শেষপর্যন্ত আরও তৃষ্ণা-জিজ্ঞাসার দিকে ঠেলে এগিয়ে দেয়, — শমে এসে পৌঁছোয়, ঠেকে। এসব বুঝে, মান্য করে, সুস্থির থাকি কিছুদিন।

গদ্যের ভাষা— একদিন লক্ষ করি, প্রকৃত কবিতার ভাষায় এসে অবয়ব পায়। নিজেকে অতীব স্নেহে শাসাই, বলি– মদ্যপ, অতি ধূমপায়ী, প্রায়শই বেপঘুমতী তুই, ছিঃ। আসলে, একটা আবেগতাড়িত জীবন নিয়ে চলি, হাঁটি, মিশি ও প্রাকৃতলোকে বার্তালাপ করি। ও, এগোই নতুন পথের সন্ধানে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সব মানুষেরই কিছু-না-কিছু শান্ত স্থিতিশীলতার উপলব্ধি আসে। ভালো ভালো কথা সে ভাবে। যৌবনের বিদ্রোহ-ভাঙচুর-বিপ্লবদ্রোহ ও রুদ্ররোষও স্তিমিত মিইয়ে যাওয়া পাপড়পাতার মতো নিষ্প্রভ ম্লান স্বাদহীন মনে হয়। অতি সাময়িক ঘটনা জাতীয় বিষয় বলে মনে হয়। উপলব্ধি করি। এবং আবার অসুখে পড়ি। খুব, বেজায় ভুগি। অনর্থক চিকিৎসক ইত্যাদি, ইত্যাদির টেস্ট-ট্যাব-ক্যাপসুল এবং হ্যাপায় পড়ে সমস্যা বিড়ম্বনা ক্লিন্ন হয়ে আপন আশ্রয়ে এসে পরিত্রাহি হাত-পা ছুড়ি। অথচ, কোনো ঈশ্বর বা ঈশ্বরীকে ডাকি না।

এইসব সূত্রে সহসাই একটা কথা মনে এল। অর্থাৎ, আমি আদতে একটা অ। বাংলা স্বরবর্ণের প্রথম স্বরবর্ণটির আলাভোলা অবস্থানটির মতো, ভূমিকাটির মতো অচঞ্চল, স্থির। অথবা ওই, ওই আযোগবাহ বর্ণগুলির মতো প্রয়োজনে কাজে লাগি। নানাবিধ সুরের সংগতে লাগি। বুঝি অস্তিবাদ। বুঝি, মূলত পঙ্গুত্বগুলিও।

 

 

[উৎস: অহিরা, জানুয়ারি ২০১৭। লেখাটি ২০১৯ সালে অহিরা, নিত্য মালাকার স্মারক সংখ্যায় পুনর্মুদ্রিত হয়। ]

(Nitya Malakar)

 

ছবি সৌজন্য: অহিরা পত্রিকা

Banglalive.com Logo

বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।

Picture of বাংলালাইভ

বাংলালাইভ

বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।
Picture of বাংলালাইভ

বাংলালাইভ

বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস