সাইবার বুলিইং ও অন্যান্য কথা
‘আমি আমার নিজের ইচ্ছায় ঝাঁপ দিচ্ছি। কারণ আমি আর বেঁচে থাকতে চাই না। ফিস্তিকের খেয়াল রেখো। আমি আমার জীবনে সবার কাছে ভাল ছিলাম, কিন্তু নিজের কাছে ভাল হতে পারিনি। ভাল হয়ে বেঁচে থেকে আমি কিছু পাইনি। জীবনে স্বার্থপর হও। তবেই তুমি সুখী হবে। দিনের পর দিন আমি লড়াই করে গেছি, কিন্তু কেউ দেখতে পায়নি। আমি চলে যাচ্ছি কারণ আমি নিজেকে ভালোবাসি এবং একবারের জন্য নিজের কথা ভাবতে চাই…”
এটি একটি সুইসাইড নোট। লিখেছিলেন তুরস্কের মেয়ে কুবরা আইকুত। (Cyberbullying)
এই বছর ২৯শে সেপ্টেম্বরের ঘটনা। কুবরা নিজের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের পাঁচ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। ২৬ বছরের কুবরা একজন পৃথিবী-বিখ্যাত টিকটকার। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। টিকটক করে এত কম বয়সে পৃথিবী জোড়া খ্যাতি কুড়িয়েছেন তিনি। টিকটকে তাঁর এক মিলিয়নের বেশি ফলোয়ার ছিল। ইন্সটাগ্রামে দুই লক্ষেরও বেশি ফলোয়ার। কেন ফলো করতেন এত মানুষ তাঁকে? কী এমন করতেন কুবরা? ‘ওয়েডিং উইদাউট আ গ্রুম’ নাম দিয়ে ভিডিও বানিয়েছিলেন তিনি। (Cyberbullying)
আরও পড়ুন: পরিকাঠামো: ডিজিটাল পরিকাঠামো ও বিশ্বায়ন
সেই ভিডিওটিতে কুবরাকে দেখা যায় বিয়ের সাদা গাউন পরে হাতে একটি ফুলের বোকে নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। তারপর তিনি সেই পোশাকেই একটি বার্গার খেয়েছিলেন। ট্যাগলাইন ছিল – ‘নিজের জন্য আমি ভাল বর খুঁজে পাইনি। তাই নিজেই নিজেকে বিয়ে করলাম’। ভিডিওটি ভয়ঙ্কর ভাইরাল হয়। লাইফস্টাইল ব্লগার কুবরার এই বিলাসবহুল ‘একা থাকা’র মধ্যে পৃথিবীর লাখ লাখ মহিলা নারী-স্বাধীনতার প্রকৃত রূপ খুঁজে পাচ্ছিলেন।
ভাবা যায়! লাখ লাখ ফলোয়ার, এত আলোর মধ্যে থেকেও লাস্যময়ী কুবরা দিন-কে-দিন ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছিলেন। ওই ভুবনভোলানো হাসি, একা থাকা ছিল তাঁর ইউ এস পি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর এই ‘হ্যাপিলি সিঙ্গেল’ ইমেজ পাহাড়প্রমাণ চাপ তৈরি করছিল তাঁর মনের ওপর। (Cyberbullying)

মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে কুবরা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানিয়েছিলেন তাঁর ওজন হ্রাস নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা। তিনি বলেছিলেন, এনার্জি বাড়ছে কিন্তু ওজন কমছে প্রতিদিন এক কেজি করে। শুষে নিচ্ছিল সোশ্যাল মিডিয়া এই ‘আপাত সুখী’ ইনফ্লুয়েনসারের জীবন।
কুবরা দেখাতেন তাঁর বিলাসী জীবনের কাহিনি। আর নুন-ভাত ও বরের মার খাওয়া আফ্রিকার কোনও এক নারী তা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবতেন, যদি আমার জীবনও ওর মতো হতো! সোশ্যাল মিডিয়া সারা পৃথিবীকে জুড়েছে, মানুষকে জুড়েছে। তারই সঙ্গে নতুন এই পেশা সামনে এসেছে! সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার বা ভ্লগার। মানুষ চেষ্টা করছে। কিন্তু শিকে ছিঁড়ছে কিছু জনের ভাগ্যে। হঠাৎ করেই কেউ হয়ে যাচ্ছেন সেলিব্রিটি। পেয়ে যাচ্ছেন স্পটলাইট। (Cyberbullying)
দার্জিলিং ঘুরতে যাবেন? হোটেল খোঁজার জন্য প্রিয় ট্রাভেল ভ্লগারের ব্লগ দেখুন। অথবা গড়িয়াহাটের দোকানে মাটন রোলে কতটা মাংস দেয়, সেই তথ্যও আপনার হাতের মুঠোয়। মোবাইল কেনার আগে জেনে যাচ্ছেন ফোনটি গেম খেলতে খেলতে গরম হয়ে যায় কী না।
কিন্তু.. কিন্তু..কিন্তু… এর সত্যতা ঠিক কতটা? প্রথমদিকে যখন কোনও ভ্লগার স্ট্রাগল করেন, তখন তিনি হয়তো ঠিক রিভিউ দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি যখন বিখ্যাত হয়ে যান, তখন তাকে দিয়ে পণ্য বা হোটেল বা খাবারের বিজ্ঞাপন দেওয়ানো হয় – যাকে ভাল ভাষায় বলে পেইড প্রমোশন। ব্যাপারটা ঠিক কেমন? মনে করুন দার্জিলিংয়ের একটি হোটেল এক ট্রাভেল ভ্লগারকে দিয়ে প্রমোশন করাল। দাদা তো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়ে দিলেন বাথরুমের মগ থেকে বিছানার সাদা চাদর। দাদার অনেক ভক্ত। দাদা বলেছে মানে তারা সেই হোটেলেই উঠবেন। আপনিও তাকে ফলো করে হোটেলে গিয়ে দেখলেন বাথরুমের মগে ফুটো, বিছানার চাদরের তলায় ছাড়পোকা। কাকে ধরবেন? সেই ভ্লগারের ব্লগের নীচে কমেন্ট লিখেও এখন লাভ নেই আর। তিনি তো দার্জিলিং থেকে এখন সাইবেরিয়ায় পৌঁছে গেছেন! (Cyberbullying)

সেরকমই বিরিয়ানিতে মাংস সেদ্ধ না হতে পারে, মোবাইল ফোন হ্যাং হতে পারে। হলেও কিছু করার নেই। খারাপ জিনিসের সহজে বিজ্ঞাপন দেওয়ার এর থেকে ভাল উপায় আর নেই। অনেক সময় ক্ষতি হয়। সেল্ফ ক্লেইমড ফিনান্সিয়াল অ্যানালিস্টের পরামর্শে শেয়ার বাজারে ডুবেছে এমন লোক যেমন আছেন, তেমনই রেকমেন্ডেড হোটেলে থাকতে গিয়ে পালিয়ে আসতে হয়েছে, তেমন ঘটনাও ঘটছে আকছার। (Cyberbullying)
প্রশ্ন হল বাছবেন কীভাবে? মানে কে ভরসাযোগ্য, তাকে চিনবেন কী করে? উপায় নেই কোনও। অন্যদিকে সোশ্যাল ইনফ্লুয়েনসারেরা? তারা ফলোয়ার বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় অদ্ভুত একটি বাজার তৈরি করেছেন। রান্না করার সময় শাড়ির আঁচল খসে পড়ছে অথবা লাইফস্টাইল ব্লগে স্বচ্ছ রাতপোশাক পরে মহিলা শেখাচ্ছেন কীভাবে ত্বকের যত্ন নিতে হয়। আর যাদের সেটুকুও ইনভেস্ট করার অর্থ নেই? তারা দেখাচ্ছে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স। বেল্ট দিয়ে মারা হচ্ছে বাড়ির বউকে। হাসছে বাকীরা। ইমোজিতে রঞ্জিত মল্লিক। ছোট বাচ্চাকে ক্যামেরার সামনে নিয়ে এসে কাঁদানো হচ্ছে। হয়তো সেটা দেখে কেউ উত্তেজিত হচ্ছে। লাইক বাড়ছে। উড়ছে টাকা। ছুটছে একটা গোটা প্রজন্ম…
রান্না করার সময় শাড়ির আঁচল খসে পড়ছে অথবা লাইফস্টাইল ব্লগে স্বচ্ছ রাতপোশাক পরে মহিলা শেখাচ্ছেন কীভাবে ত্বকের যত্ন নিতে হয়।
কিন্তু কেরিয়ার অপশন হিসাবে কি এই সোশ্যাল মিডিয়া ভ্লগিং সত্যিই ভরসাযোগ্য? কেরালার প্রিয়া এবং সেলভারাজ যেমন চেষ্টা করছিলেন। প্রিয়া ভাল রান্না করতেন। সেই ভরসাতেই খুলেছিলেন ইউটিউব চ্যানেল ‘সেলুলু ফ্যামিলি’। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বাড়ছিল। ১৪০০ ভিডিও আপলোড করার পর সাবস্ক্রাইবার বেড়ে দাঁড়ায় ১৮০০০। স্বচ্ছল হচ্ছিল সংসার। সোশ্যাল মিডিয়ার আয়ে বুক বেঁধে মেয়ের বিয়েও দিলেন তাঁরা। তারপর? একদিন হাসিমুখে দুজনে মিলে একটি ভিডিও আপলোড করলেন। ততক্ষণে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। তাই হয়তো ভিডিওতে যে মালায়ালি সাউন্ড ট্র্যাকটি তাঁরা ব্যবহার করেছেন তার অর্থ ছিল ‘অন্তিম যাত্রা’। কারণ কী ছিল? আর্থিক দুশ্চিন্তা? (Cyberbullying)
গত এক বছরে প্রচুর সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েনসারের আত্মহত্যা প্রমাণ করে এই অনিশ্চিয়তার জীবনে প্রাচুর্য হয়তো আছে, কিন্তু তা উপার্জনের জন্য অনেক বড় মূল্য দিতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রভাব পড়ছে ব্যক্তিগত জীবনে। যারা পারছেন, টিকে আছেন। আর গর্ভিত ও নন্দিনীর মতো জনপ্রিয় ইউটিউবার জুটি এই পাহাড়-প্রমাণ চাপের কাছে নতিস্বীকার করে ঝাঁপ দিচ্ছেন ফ্ল্যাটের সাত-তলা থেকে। উঁচু তলার জানালায় কি বেশি আলো ঢোকে?
হাতে হাতে ক্যামেরা ফোন। বিক্রি হচ্ছে ব্যক্তিগত জীবন। চাইল্ড সেক্স, ভায়োলেন্স, বডি শেমিং সব পরপর আসছে আপনার মোবাইলে। লাইক, কমেন্ট উড়ছে। রিলস এর নামে পেডোফিলিয়া প্রমোট করা হচ্ছে। বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়েদের শরীর দেখানো হচ্ছে। লোকে গালাগালি দিচ্ছে। বাজে কথা বলছে। যত গালাগালি, তত ভিউ, তত লাইক। তত পয়সা। লোভ জমছে। কত অশ্লীল করা যায়, কত নিষ্ঠুরতা, হিংসা দেখানো যায়। (Cyberbullying)

রিল বানানো হচ্ছে রেললাইনে, হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের ছাদের পাঁচিলে উঠে। যত বিপজ্জনক, যত নোংরা- তত ভিউ। স্টান্ট দেখাতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছে ছেলেটি বা মেয়েটি। ডানা কাটা যাচ্ছে। তার লাশের উপর দাঁড়িয়ে উল্লাসে মত্ত একটি সমাজ। টাকা ছুঁড়ে দিচ্ছে জনগণ। মাদারি কা খেল। তারপর? এই রাস্তা দিয়েই কিন্তু আমার আপনার বাচ্চাটি স্কুলে যায়, খেলতে যায় মাঠে। সেই স্কুলে, খেলার মাঠে আমাদের সন্তানের জন্য কী অপেক্ষা করছে? (Cyberbullying)
রাকেশ। ১৫ বছরের কিশোর। বন্ধুর সঙ্গে নিজের ঘুমন্ত অবস্থার ছবি আপলোড করেছিল ফেসবুকে। তারপর কমেন্টের ফুলঝুড়ি। কেউ বলল ‘হোমো’, কেউ ‘ছক্কা’। রেগে মেগে রাকেশ প্রতিবাদ করার চেষ্টা যত করল, ফল হল বিপরীত। আরও বাজে বাজে কমেন্ট পড়তে আরম্ভ করল। ভাইরাল হল পোস্ট। অপ্রস্তুত রাকেশের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেল। বাবা মা জানতে পারলেন পরদিন ভোরে। রাকেশের নিথর শরীর দেখে। বাবার ক্যাবিনেট থেকে বের করে ঘুমের ওষুধের সব স্ট্রিপ খালি করে দিয়েছিল সে। (Cyberbullying)
পূজা। দিল্লীর ১৩ বছরের কিশোরী। মায়ের কাছে ডেবিট কার্ড নাম্বার চেয়েছিল অনলাইনে কেনাকাটা করবে বলে। এক সপ্তাহ পর মা আবিষ্কার করলেন পূজার ওয়ার্ডরোবে অদ্ভুত সব শরীর দেখানো জামা কাপড় ও অন্তর্বাস। পূজার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে বেরিয়ে এল আসল ঘটনা। দিনের পর দিন কম লাইক পেতে পেতে হতাশাগ্রস্ত পূজা একের পর এক শরীর দেখানো ছবি দিতে আরম্ভ করেছে। শুধু তাই নয়, পূজার ওয়ার্ডরোবে পাওয়া গেল মাদকদ্রব্য ও ঘুমের ওষুধ। (Cyberbullying)
অথবা বিনোদ। তরতাজা ১৬ বছর। প্রেমে পড়েছিল যে মেয়েটির, সে উঁচু জাতের। স্কুলে সবার সামনে অপমান করে শান্তি হয়নি। ফেসবুকে পোস্ট করল ছবি দিয়ে- মুখটা দেখুন, পুরো বাঁদর। নিচে জাত তুলে পরপর কমেন্ট। বিনোদ নিতে পারেনি। আত্মহত্যা করল মজদুর বাবার সব স্বপ্নকে ভেঙে ফেলে। (Cyberbullying)
সাইবার বুলিইং। সামাজিকভাবে কাউকে ভেঙে ফেলা। ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি প্রকাশ করে দেওয়া। বন্ধুদের সামান্য মজা কিন্তু প্রাণঘাতী হতে পারে। হ্যাঁ, এটাই এখন ভারতে আত্মহত্যার একটি প্রধান কারণ। এবং আমার আপনার বাড়ির বাচ্চাটি এর শিকার কী না, আমরা এখনও জানি না। কোভিড দিয়ে গেছে মোবাইল, ল্যাপটপ, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। আমরা নিশ্চিন্ত হয়ে বিরিয়ানি বানিয়ে ফেসবুক পোস্ট করছি। কিন্তু জানতে পারছি কি, এই জালের আড়ালে কেউ আমাদের সন্তানকে শিকার করছে কি না? হয়তো জানছি, কিন্তু দেরী হয়ে যাচ্ছে… (Cyberbullying)

তথ্য বলে ভারতে ৮-১৬ বছর বয়সী ৮১% বাচ্চা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। এবং এদের মধ্যে ২২% সাইবার বুলিইংয়ের শিকার। বিশ্বে সর্বাধিক। আরও ভয়ঙ্কর তথ্য হল এর মধ্যে ৫২% বাচ্চা স্বীকার করেছে তারা কাউকে না কাউকে অনলাইন র্যাগিং করেছে। হ্যাঁ, আগে র্যাগিং মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন ইন্টারনেটের দৌলতে তা আমাদের বাড়িতেও ঢুকে পড়েছে। আজেবাজে ছবিতে ট্যাগ, গুজব রটানো, অপমানজনক মন্তব্য বা না জানিয়ে বাজে ছবি বা ভিডিও তুলে পোস্টিং- শিকারী শিকার খুঁজছে। যে করছে সেও জানে না অপরাধের গুরুত্ব, যার সাথে হচ্ছে সেও না জেনে অতলে তলিয়ে যাচ্ছে। (Cyberbullying)
মিনিটের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে পোস্ট। গুটিয়ে যাচ্ছে বাচ্চারা ঘরের কোণে। হতাশা ছেয়ে যাচ্ছে। আর শেষে, পালিয়ে যেতে চাইছে এর থেকে। বন্ধুহীন, একা আমার আপনার সন্তান বলতে চাইছে অনেক কিছু। কিন্তু বলতে পারছে কি? সময় আছে আপনার হাতে? লক্ষ্য করছেন বেশ কিছুদিন ওর ক্ষিদে কমে গেছে। বাথরুমে বেশি সময় কাটাচ্ছে। কথা বলছে না ভালো করে। মেজাজ হারাচ্ছে। আর আপনি কী করছেন? বকা দিচ্ছেন। ঠেলে দিচ্ছেন আপনার সন্তানকে অন্ধকারে… (Cyberbullying)
লাইক, কমেন্ট, শেয়ার। আপনার সন্তানকে এই রাস্তায় কে নিয়ে আসছে? কে দেখাচ্ছে লোভ? ৮৯% ভারতীয় কিশোর কিশোরী মনে করে তাদের ব্যক্তিত্ব নির্ধারণ করে ফেসবুকের ছবিতে কত লাইক পড়ল তার ওপর। ওর প্রথম গান, নাচ বা কবিতার ভিডিওটা কে আপলোড করেছিল? আপনি। এর থেকে বেরও করতে হবে আপনাকে। (Cyberbullying)
রাস্তা দেখাতে হবে আপনাকেই। বন্ধু হন। সোশ্যাল নেটওয়ার্ককে ব্রাত্য রাখার যখন উপায় নেই, সাইবার বুলিইং নিয়ে বলুন আপনার সন্তানকে। অনলাইন সেফটি নিয়ে বোঝান। কোন পেডোফাইল যদি টোপ ফেলে তাহলে সে যেন বুঝতে পারে। আপনিও আইনের সাহায্য নিন। আপনার সন্তানকে বোঝান, সে একা নয়। আপনি আছেন তার সঙ্গে। ওকে বলুন, লাইক, কমেন্টের বাইরেও একটা সুন্দর পৃথিবী আছে।
তার থেকেও বড় কথা ওকে শেখান নিজেকে ভালোবাসতে। শেখান পরিবারের মূল্য, জীবনের মূল্য, বেঁচে থাকার মূল্য। ভালোবাসা। এর থেকে বড় কোনও প্রতিরোধ নেই এই বেড়ে চলা অপরাধের প্রতি। আসুন আমাদের সন্তানকে বিশ্বাস দিই, ভরসা দিই।
একটা ফুলও ঝরে যেতে দেওয়া যাবে না…(Cyberbullying)
অলংকরণ: আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়
জন্ম ১৯৭৯ সালের ২৬ শে জানুয়ারি। পেশায় সরকারী আধিকারিক। নেশা ঘুরে বেড়ানো, ছবি তোলা ও লেখালেখি। মানুষ চিনতে ভালোবাসেন। তাঁর লেখায় বারেবারে উঠে আসে মধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক মানুষদের জীবনকথা। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১২ টি।