(Dharmendra)
ধীর, অতি ধীর পায়ে হেঁটে আসছেন ধর্মেন্দ্র। বয়স হয়ে গিয়েছে। দেখলে বুক ভরা কষ্ট। ওভাবে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই তিনি গেয়ে উঠছেন, আভি না যাও ছোড় কর। (Dharmendra)
তখনই চারপাশে জ্বলে উঠছে লক্ষ ভোল্টের আলো। তাঁর মুখের হাসিতে বিষাদ এবং উচ্ছ্বাস মাখামাখি। একইসঙ্গে উঁকি দিচ্ছে খুশি এবং লজ্জা। পুরোনো প্রেমকে হঠাৎ মনে পড়লে যা হয়, পুরোনো প্রেমকে অকস্মাৎ চোখের সামনে দেখে, সব মনে পড়লে, যা হয়। ৯০ পেরোন ধর্মেন্দ্র তখন ১৯ পেরোন এক তরুণ অভিনেতার প্রাণের প্রেরণা হয়ে ওঠেন। রকি অউর রানি কি প্রেম কাহিনির ওই দৃশ্য, আইকনিক হয়ে ওঠে। (Dharmendra)
আরও পড়ুন: ডাক-হরকরার চিঠি: আজও রহস্যের মাঝে চিরবিপ্লবীর দুই বিদেশিনী স্ত্রী
আজকের সিনেমা বাজারে পুরোনো প্রেমের কথা জ্বলজ্বল করছে হঠাৎ। হিন্দি ছবি সাইয়ারা সুপারহিট। বাংলা ছবি ধূমকেতুও তাই। দুটোতেই হারানো প্রেমের জয়ধ্বনি। রকি অউর রানির ধর্মেন্দ্র-শাবানার পুরোনো প্রেমের গল্প গোটা ভারতকে স্পর্শ করে গিয়েছিল। (Dharmendra)
ধর্মেন্দ্র কি শুধুই হিম্যান? প্রশ্নটা তুলেই দেখলাম বেশ বোকা বোকা হয়ে যাচ্ছে! ধর্মেন্দ্র আসলে আবহমান। চোখের সামনে ভেসে উঠল সত্যকাম ছবিতে ধর্মেন্দ্রর অভিনয়। অথবা চুপকে চুপকে ছবিতে। গ্রিক দেবতার মতো দেখতে ওই চেহারা থেকে মাঝে মাঝেই কেমন ঠিকরে বেরোচ্ছে কৌতুক। অ্যাকশন কিংই শুধু নয়। (Dharmendra)

অথবা ভাবা যাক না নুতনের সঙ্গে ‘বন্দিনী’। সুচিত্রা সেনের সঙ্গে ‘মমতা’। শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে ‘অনুপমা’। রাখীর সঙ্গে ‘ব্ল্যাক মেল’ আজ যাঁরা ধর্মেন্দ্র বলতেই ঢিসুম ঢিসুম বলে ওঠেন, ধর্মেন্দ্র মানেই যেন মারপিট আর অদ্ভুত গলায় চিৎকার ‘তেরা খুন পি যাউঙ্গা’, এইসব সিনেমা দেখতে দেখতে তাঁরা নিজেদেরই বোকা ভাববেন। কী যে ভুলভাল ভেবেছিলাম! ধর্মেন্দ্র একবার বলেছিলেন, ‘আমি রোমান্টিক। রসিক। দুষ্টু। সবগুলো দিকই আমি অভিনয়ে ফোটাতে চাই।’ একেবারে খাঁটি কথা। (Dharmendra)
ভাবতে থাকুন, ঝিল কে উসপার ছবির একটা দৃশ্য। যেখানে ধর্মেন্দ্রকে সিডিউস করার চেষ্টায় মমতাজ বিখ্যাত গান ধরেছেন— হায় বিছুয়া। কী আভিজাত্য ধরমের অভিব্যক্তিতে! জয়া বচ্চন পর্যন্ত যে কারণে একবার কফি উইথ করণে এসে বলেছিলেন, ‘আমার ক্রাশ ছিল ধর্মেন্দ্র। আমি গুড্ডি ছবিতে ধর্মেন্দ্রকে প্রথম দেখেছিলাম। তিনি পরেছিলেন একটা সাদা পোশাক। গ্রিক দেবতার মতো মনে হচ্ছিল আমার। তাছাড়া ধর্মেন্দ্রর জন্যই শোলেতে বাসন্তীর রোলটা চেয়েছিলাম।’ এবং বলেছিলেন হেমা মালিনীর সামনেই। এবং মানতে তো হবেই, শোলে ছবিতে মহানায়ক ছিলেন ধর্মেন্দ্রই। (Dharmendra)
“হিন্দি সিনেমায় নায়ক নায়িকার সেরা প্রেম বললেই আমরা ধর্মেন্দ্র-হেমা মালিনীর নাম শুরুর দিকে রাখব। অথচ একটা সময় মীনা কুমারীর সঙ্গে ধর্মেন্দ্রর প্রেম সবচেয়ে আলোচিত ছিল।”
যতদূর মনে পড়ছে, যে তিনটে সুপারহিট ছবি দিয়ে ধর্মেন্দ্র কেবল কৃষাণ দেওলের আসলে বলিউডে ধর্মেন্দ্র হয়ে ওঠা, তাঁর সেই ছবির তিন নায়িকা ছিলেন সায়রাবানু, মীনা কুমারী ও আশা পারেখ। সেই জায়গায় যে হেমা মালিনী চলে আসবেন কোন অজান্তে, তা কে জানত! অথচ বলিউডে ধর্মেন্দ্র এঁদের বাইরেও, মমতাজ, রেখা, রাখি, জিনত আমন, অনিতা রাজ, অমৃতা সিং, ডিম্পল কাপাডিয়া, জয়া প্রদা, মৌসুমী চ্যাটার্জির সঙ্গে জমিয়ে হিট সিনেমা করেছেন। এঁদের মধ্যে অনিতা রাজের সঙ্গে ধর্মেন্দ্রর সম্পর্ক নিয়ে তুমুল গুঞ্জন উঠেছিল বলিউডে। রটে যায়, হেমা বন্ধ করে দিয়েছেন স্বামীর সঙ্গে কথাবার্তা। সেই জল্পনার মৃত্যু হয়েছিল ১৯৮৬তে, অনিতা যখন পরিচালক সুনীল হিঙ্গোরানিকে বিয়ে করলেন। (Dharmendra)
হিন্দি সিনেমায় নায়ক নায়িকার সেরা প্রেম বললেই আমরা ধর্মেন্দ্র-হেমা মালিনীর নাম শুরুর দিকে রাখব। অথচ একটা সময় মীনা কুমারীর সঙ্গে ধর্মেন্দ্রর প্রেম সবচেয়ে আলোচিত ছিল। (Dharmendra)
নার্গিস ছিলেন মীনাকুমারীর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। তিনি একবার বলেছিলেন, ধর্মেন্দ্র নেশাগ্রস্ত মীনাকুমারীর জীবনে আসার পর জীবন পাল্টে গিয়েছিল হিন্দি ছবির স্মরণীয় নায়িকার। মীনার জীবনে আবার ফিরে এসেছিল হাসি, আবার ফিরে এসেছিল উচ্ছ্বাস। নার্গিসের বিশ্লেষণ ছিল এরকম, ‘মীনা যদি কাউকে দারুণ ভালবাসে, সে হল ধর্মেন্দ্র। যদি কারও প্রতি ক্রেজি হয়, সেটা ধর্মেন্দ্র। ওটাই ওর জীবনের সেরা অধ্যায়। ধর্মেন্দ্র চলে যাওয়ার পর ও একেবারে শেষ হয়ে যায়। আমায় বলত, বাজি এটাই আমার ভাগ্য। আমি নিজেকে করুণা করি না। তুমিও আমাকে করো না।’ (Dharmendra)
“ধরম্ কিছুদিন আগে এক টিভি শোতে এসে তাঁর প্রথম প্রেমের গল্প শুনিয়েছিলেন। কোনও নামী মুখ নয়। একেবারে অচেনা। নাম ছিল হামিদা। ধর্মেন্দ্রর থেকে একটু সিনিয়র স্কুলে। তাঁর এক শিক্ষকের কন্যা।”
মীনাকুমারীর যে চমৎকার আত্মজীবনী লিখেছিলেন বিনোদ মেহতা, তাতে লিখেছেন, ধর্মেন্দ্র মীনার সঙ্গে দেখা করে বেরোনর সময় প্রতিদিন হাউহাউ করে কাঁদতেন। একবার দু’জনে পিকনিক গিয়েছিলেন অনেকের সঙ্গে। তাঁর গাড়িতে ধর্মেন্দ্রকে না দেখে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন মীনা। রাস্তায় নেমে গিয়েছিলেন গাড়ি থামিয়ে। শুধু বলছিলেন, ‘আমার ধরম কোথায়?’ (Dharmendra)
ধর্মেন্দ্রও সেরকম। একবার দিল্লি গিয়েছেন ‘কাজল’ সিনেমার প্রিমিয়ারে। রাতে মদ্যপান বেশি হয়েছিল। সকালে ধরম যখন বোম্বের প্লেন ধরতে গেলেন, তাঁকে প্লেনে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। মদে চুর ধর্মেন্দ্র তখন চেঁচাচ্ছেন, ‘আমাকে বোম্বে যেতেই হবে। আমার মীনার সঙ্গে দেখা করতে হবে।’ (Dharmendra)
হেমা মালিনীর সঙ্গে ধর্মেন্দ্রর ভালবাসার গল্প বহুচর্চিত। সেই প্রসঙ্গে বিস্তৃত যাওয়ার মানে হয় না। তবে সরল ধরম্ কিছুদিন আগে এক টিভি শোতে এসে তাঁর প্রথম প্রেমের গল্প শুনিয়েছিলেন। কোনও নামী মুখ নয়। একেবারে অচেনা। নাম ছিল হামিদা। ধর্মেন্দ্রর থেকে একটু সিনিয়র স্কুলে। তাঁর এক শিক্ষকের কন্যা। ধর্মেন্দ্রর পড়াশোনা চালাতে সাহায্য করত হামিদা। ধর্মেন্দ্র তাঁর হোমটাস্কের খাতা দেখাতেন হামিদাকে। একবার ধর্মেন্দ্র হামিদাকে একটি প্রেমের শায়রিও লিখে দিয়েছিলেন। কিন্তু দেশভাগ সেই প্রেমকে নিঃশেষ করে দেয়। হামিদা তার বাবা-মায়ের সঙ্গে পাকিস্তান চলে যায়। জীবনে আর কখনও হামিদাকে দেখেননি ধর্মেন্দ্র। এই বয়সে এসেও হামিদাকে ভুলতে পারেননি হিম্যান। তাঁর নরম মনের এটা আর একটা নমুনা। (Dharmendra)

সেই নরম মনেরই প্রেমে পড়েছিলেন হেমা মালিনী। ধর্মেন্দ্রর চার সন্তান ও স্ত্রীর উপস্থিতি কোনও সমস্যা তৈরি করতে পারেনি। (Dharmendra)
বলিউডের সেরা জুটি কোনটা? আমাদের বাংলায় যেমন উত্তম-সুচিত্রার ধারেকাছে কোনও জুটিকে রাখা যায় না, হিন্দিতে তেমন নয়। অনেক জুটিই পারেন। দেশের সেরা ফিল্ম পত্রিকা ফিল্ম ফেয়ার এই ১০ জুটিকে চিহ্নিত করেছে। (Dharmendra)
রাজ কাপুর-নার্গিস। দিলীপ কুমার-বৈজয়ন্তীমালা। ধর্মেন্দ্র-হেমা মালিনী। শাহরুখ খান-কাজল। আমির খান-জুহি চাওলা। সলমন খান-মাধুরী দীক্ষিত। অনিল কাপুর-শ্রীদেবী। রণবীর কাপুর-দীপিকা পাড়ুকোন। রণবীর সিং-দীপিকা পাড়ুকোন। শহিদ কাপুর-করিনা কাপুর। (Dharmendra)
“বীরু এবং বাসন্তী মিলে কী কী ছবি দিয়েছেন আমাদের? আইএমডিবির পরিসংখ্যান বলছে, দুজনে মিলে ৪৫ সিনেমা করেছেন। তার মধ্যে রোমান্টিক নায়ক নায়িকা ৩১টিতে। এর মধ্যে ২০টি সুপারহিট, ১৫টি ফ্লপ।”
এঁদের মধ্যে ৮ বছরে ১৬ সিনেমা করেছিলেন রাজ-নার্গিস। আওয়ারা, শ্রী ৪২০, আন্দাজ, চোরি চোরি, বরসাত এর মধ্যে ক্লাসিক। দিলীপ-বৈজয়ন্তীমালার ৭ সিনেমার মধ্যে ক্লাসিক দেবদাস, মধুমতী, নয়া দৌড়, গঙ্গা যমুনা ক্লাসিক। শাহরুখ-কাজল জুটি নিয়ে হইচই হলেও শাহরুখ-জুহি চাওলা জুটিরই বেশি সিনেমা। ধর্মেন্দ্র এবং হেমার সেখানে রয়েছে ৪০টির বেশি সিনেমা। ১৯৭০ সালে তুম হাসিন ম্যয় জওয়ান সিনেমা করতে করতে তাঁদের প্রেমে পড়া। যা বলিউডের সেরা লাভ স্টোরি। ১৯৮২ সালে দো দিশায়ে ছবিতে দুজনের একটা দৃশ্যে গান ছিল, ম্যায় তেরে পাস হু তু মেরে পাশ হ্যায়। এটা যেন দুজনের জীবনের গান। (Dharmendra)
বীরু এবং বাসন্তী মিলে কী কী ছবি দিয়েছেন আমাদের? আইএমডিবির পরিসংখ্যান বলছে, দুজনে মিলে ৪৫ সিনেমা করেছেন। তার মধ্যে রোমান্টিক নায়ক নায়িকা ৩১টিতে। এর মধ্যে ২০টি সুপারহিট, ১৫টি ফ্লপ। শোলের পাশাপাশি কয়েকটা সিনেমার নাম মনে করিয়ে দিই। দ্য বার্নিং ট্রেন, রাজা জানি, সীতা অউর গীতা, বাগবত, জুগনু, ড্রিম গার্ল, প্রতিজ্ঞা, আজাদ, দিল্লাগি, চাচা ভাতিজা, পাত্থর অউর পায়েল, নসিব, দোস্ত, নয়া জমানা, রাজিয়া সুলতানা, চরস, দো দিশায়ে, দিল কি হীরা, আসপাস, রাজ তিলক, ধরম অউর কানুন, দো দিশায়ে, আজাদ, আলিবাবা, শরাফত, প্রতিজ্ঞা, সম্রাট, মা। (Dharmendra)
“আগের আমলে হিন্দি ছবিতে সবচেয়ে বেশি কার লিপে হিট গান রয়েছে? এক কথায় রাজেশ খান্নার নাম করতে হবে। ধর্মেন্দ্রর লিপে গান শুনলে অনেকে ভাববেন, ঢিসুম ঢিসুম মারপিটে অভ্যস্ত ধরমপাজি কী করে গানে লিপ দেবেন?”
মা ছবিটিকে শেষে রাখলাম একটা কারণেই। ধর্মেন্দ্র-হেমা জুটির এই সিনেমাতেই প্রথম ধর্মেন্দ্র-হেমাকে দেখেছিলাম জীবনে। আমাদের গ্রামের দুর্গা টকিজে। সাল ১৯৭৬। হাতিকে নিয়ে সিনেমা, তাই কৈশোর ছাড়পত্র পেয়েছে সিনেমা দেখার। তাতে হেমা-ধরমের প্রেম দৃশ্য থাকল তো বয়ে গিয়েছে। (Dharmendra)
৫ বছর আগে একই তামিল প্রযোজক চিনাপ্পা থেভর তৈরি করেছিলেন রাজেশ খান্না-তনুজার হাতি মেরে সাথি। সেই ছবিতে এখনও দোলনায় দুলতে দুলতে রাজেশ তনুজার গান— দিলবর জানি, চলি হাওয়া মস্তানি এবং শুন জা ইয়ে ঠান্ডি হাওয়া কানে লেগে রয়েছে। অবধারিতভাবেই লতা-কিশোর ডুয়েট। সেখানে লক্ষ্মীকান্ত প্যায়ারেলালের সুরে শেষে একটাই গান ছিল মহম্মদ রফির— নফরত কি দুনিয়া কো। কাঁদিয়ে দিয়েছিলেন রফি। (Dharmendra)

মা ছবিতেও অনেকটা তাই। সেখানে রফির লিপে ধর্মেন্দ্রর গোটা চারেক গান ছিল অবশ্য। হাটারি, ম্যায় শিকারি। গাউঙ্গা নাচুঙ্গা। কিন্তু রফি মাতাল করে দিয়েছিলেন শেষ দৃশ্যে মা-কে হারানোর গানে। মা তুঝে ঢুন্ডু কাঁহা। ধরম-হেমার এই ছবি এত জনপ্রিয় হয়েছিল, যে তিন বছর পরে তামিল ও তেলেগু দুটো ভাষায় রিমেক হয়েছিল। তামিল ও তেলেগু দুটো ছবিতে ধর্মেন্দ্রর ভূমিকায় ছিলেন রজনীকান্ত। দুটোই সুপারহিট। (Dharmendra)
আগের আমলে হিন্দি ছবিতে সবচেয়ে বেশি কার লিপে হিট গান রয়েছে? এক কথায় রাজেশ খান্নার নাম করতে হবে। ধর্মেন্দ্রর লিপে গান শুনলে অনেকে ভাববেন, ঢিসুম ঢিসুম মারপিটে অভ্যস্ত ধরমপাজি কী করে গানে লিপ দেবেন? ভাল করে ভাবুন কিছু দৃশ্যের কথা। (Dharmendra)
শোলে ছবিতে ধর্মেন্দ্র টাঙ্গাওয়ালি বাসন্তীর সঙ্গে প্রেম করতে করতে গাইছেন—কোই হাসিনা যব রুঠ জাতি হ্যায়। বা শোলের সেই বিখ্যাত হোলির গান— হোলি কে দিন দিল। (Dharmendra)
“এই গানে মান্নাকে দিয়ে রাহুল দেব বর্মণ ধর্মেন্দ্রর লিপে বাংলা বলিয়ে দিয়েছিলেন। অথবা ওখানেই মদ্যপান করতে করতে প্রায় বেহুঁশ অবস্থায় যাচ্ছেন ধরম, মুখে মান্নার গলায়— আভি তো হাত মে…”
এর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারত হেমার সঙ্গে খুল্লামখুল্লা প্রেম করার সময় রফি কণ্ঠে প্রতিজ্ঞা ছবির গান। ম্যায় জাট ইয়ামলা পাগলা দিওয়ানা। ওটাও শোলের মতো ১৯৭৫ সালের গান। এত জনপ্রিয় গান যে ৩৬ বছর পরেও সে গানের নামে ছবি হতে পারে। এবং সেটা সুপারহিট। (Dharmendra)
ইয়াকিন ছবিতে শর্মিলার সঙ্গে একেবারে অন্য মেজাজে প্রেমে ব্যস্ত, রফির লিপে—
গর তুম ভুলা না দগে। সেদিন দেখলাম গোবিন্দা এক রিয়ালিটি শোতে গাইছেন গানটা। (Dharmendra)
ঝিল কি উসপার ছবিতে মমতাজের সঙ্গে প্রেম করার সময় ধর্মেন্দ্র গাইছেন কিশোরকুমারের ক্যায়া নজারে ক্যায়া সিতারে। মমতাজের সঙ্গে ধর্মেন্দ্র জুটিও হিট দিয়েছে অনেকে। রফির গলায় লোফার ছবির অসামান্য প্রেমের গান আজও লোকে শোনে— আজ মউসম বড়া বেইমান হ্যায়। কিংবা ওই ছবিরই আর একটা গান ম্যায় তেরে ইস্ক মে। কদিন আগে ধর্মেন্দ্র-মমতাজ যখন রিয়ালিটি শোয়ে আবার ওই দৃশ্যের পুনর্নির্মাণ করেন, বেড়ে গিয়েছিল শোয়ের টিআরপি। (Dharmendra)
“তাঁর মন্তব্যগুলোও সটান। ‘আমি নিজেকে ভাল অভিনেতার থেকেও ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত থাকতে চাই বেশি। তবে সব সময় নিজের স্টান্ট আমি নিজে করেছি। কোনওদিন ডুপ্লিকেট নিইনি’।”
কী করে ভুলি জীবন মৃত্যু ছবির সেই সুপারহিট গান? যেখানে রাখীর সঙ্গে রোমান্সে রফি কণ্ঠে রোমাঞ্চ জাগিয়েছেন ধর্মেন্দ্র— ঝিলমিল সিতারো কা অঙ্গন হোগা। (Dharmendra)
মহম্মদ রফির গলায় তুম হাসিন ম্যায় জওয়ান ছবিতে গাওয়ার সময় গাইছেন হেমার সঙ্গে— আপ কো পহলে ভি কভি দেখা হ্যায়। বা ওই ছবিরই গান চেহরা তেরা আল্লা আল্লা। বা সেই ছবিতে কিশোরের গলায়— মুন্নে কা আম্মা ইয়ে তো বাতা। (Dharmendra)
সীতা অউর গীতায় মান্না দের গলায় সেই সুপারহিট গান— জিন্দেগি হ্যায় খেল। সঙ্গী হেমা। তিনি গাইছেন আশা ভোঁসলে। এই গানে মান্নাকে দিয়ে রাহুল দেব বর্মণ ধর্মেন্দ্রর লিপে বাংলা বলিয়ে দিয়েছিলেন। অথবা ওখানেই মদ্যপান করতে করতে প্রায় বেহুঁশ অবস্থায় যাচ্ছেন ধরম, মুখে মান্নার গলায়— আভি তো হাত মে… কী চমৎকার লাগছে জিনস পরা মাতাল ধর্মেন্দ্রকে। মাতালের গলায় এত ভাল গান খুব কম আছে হিন্দি ছবিতে। (Dharmendra)

গানগুলো নতুন করে বলে দেয় ধর্মেন্দ্রর অভিনয় বৈচিত্র্য। অফুরান প্রাণশক্তি। এখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের সময় কাটানোর ছবি পোস্ট করেন তিনি। দেখলে বোঝা যায়, বেঁচে থাকার অন্য মানে। তাঁর মন্তব্যগুলোও সটান। ‘আমি নিজেকে ভাল অভিনেতার থেকেও ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত থাকতে চাই বেশি। তবে সব সময় নিজের স্টান্ট আমি নিজে করেছি। কোনওদিন ডুপ্লিকেট নিইনি।’ (Dharmendra)
সেই সময় গ্রামের সিনেমা হলে কোনও ছবি এলে রিক্সায় মাইক হাতে পাজামা পাঞ্জাবি পরা অনিলদা বলতে বলতে যেত— ‘শ্রেষ্ঠাংশে ধরমেন্দর আর হেমা মালিনী।’ ‘ধরমেন্দর’ বলার সময় গলার স্বর একেবারে পাল্টে যেত। ধরমেন্দর মানে তখন পৌরুষ, সাহস ও প্রেমের প্রতীক। যে স্বচ্ছন্দে প্রেমের জন্য সটান বহু উঁচু জলের ট্যাঙ্কে উঠে যেতে পারে, গুণ্ডাদের সামলায় অক্লেশে। (Dharmendra)
“দিলীপকুমার একবার বলেছিলেন, ‘মৃত্যুর পর যখন একবার ঈশ্বরের সঙ্গে দেখা হবে, তখন তাঁকে একটাই অভিযোগ করব। কেন আপনি আমাকে ধর্মেন্দ্রর মতো হ্যান্ডসাম করে পাঠাননি’?”
আগের সুপারস্টাররা, দিলীপকুমার, দেবানন্দ, রাজেন্দ্রকুমার বা রাজেশ খান্নারা রোমান্সের প্রতীক ছিলেন। এমন পৌরুষের প্রতীক ছিলেন না। এভাবে ধর্মেন্দ্র পরে অমিতাভ বচ্চনের অ্যাংরি ইয়ং ম্যান হওয়ার পর্বটি সহজ করে দিয়েছিলেন দুটো যুগের মাঝখানে দাঁড়িয়ে। তিনি নিজেও রোমান্স ও অ্যাকশনের যুগের মেলবন্ধন করে দিয়েছেন অনেকটা অজান্তে। কিছুটা রাজেশ খান্না ও অমিতাভ বচ্চনের মাঝের এক সেতু হয়ে। (Dharmendra)
তাঁর সময়কালের দৈর্ঘ্য ভাবা যাক। সর্বভারতীয় দৈনিক হিন্দুস্থান টাইমসে এ বছরই একটা লেখা পড়ছিলাম। হিন্দি ছবিতে সবচেয়ে বেশি হিট ছবির অভিনেতা কে? নায়ক বা গুরুত্বপূর্ণ অভিনেতার ভূমিকা ধরলে এখানে দেখা যাচ্ছে, অমিতাভ বা শাহরুখ নন, জায়গাটা ধর্মেন্দ্রর। ২৪০ এর বেশি ফিল্মে ৯৪ বাণিজ্য সফল ছবি তাঁর। এবং ৭৪টি হিট। তার মধ্যে ৭টি ব্লকবাস্টার, ১৩টি সুপারহিট। (Dharmendra)

এর পাশে অমিতাভ এবং খানেদের পরিসংখ্যান অবাক করার মতো। অমিতাভের ১৫৩ ছবিতে ৫৬ হিট। হিটের বিচারে সলমন (৩৮), শাহরুখ (৩৪), আমির (২০) অনেকটাই পিছিয়ে। অক্ষয় কুমার তাঁদের থেকে এগিয়ে, ৩৯। অক্ষয়ের শ্বশুর রাজেশ খান্নাও ৩৮। বরং জিতেন্দ্র (৫৬), মিঠুন (৫০) অনেকটা এগিয়ে। (Dharmendra)
এই পরিসংখ্যান নিয়েও ধর্মেন্দ্র কেন অমিতাভ, রাজেশ বা দিলীপকুমারের মতো সুপারস্টারের তকমা পেলেন না, তার একটা কারণ দেখানো হয়। প্রথম দিকে তিনি পার্শ্বনায়কের ভূমিকায় ছিলেন। যখন তিনি প্রধান নায়ক হলেন, তখন মাল্টিস্টারার ফিল্ম হয়ে গিয়েছে। আরও পরে যখন তিনি ফাটিয়ে অ্যাকশন ছবি করছেন, সেই ছবিগুলো একটু লো বাজেটের। অমিতাভ, এমনকী বিনোদ খান্না পর্যন্ত যে ব্যবসা দিতেন, ধর্মেন্দ্র তা দিতে পারেননি। তবে সময়কালটা দেখার মতো। ১৯৭৩ সালে তাঁর ৮টি হিট ছিল। আবার ১৯৮৭তে একই বছরে ৭টা হিট। অনুপমা, সত্যকাম, চুপকে চুপকে এক ধরনের। শোলে, মেরা গাঁও মেরা দেশ, ধরমবীর এক রকম। আবার শেষদিকের আপনে, জনি গদ্দার, লাইফ ইন এ মেট্রো. ইয়ামলা পাগলা দিওয়ানা আবার অন্য স্টাইলের। (Dharmendra)
আরও পড়ুন: গান যখন পথের, পথ যখন গানের
দিলীপকুমার একবার বলেছিলেন, ‘মৃত্যুর পর যখন একবার ঈশ্বরের সঙ্গে দেখা হবে, তখন তাঁকে একটাই অভিযোগ করব। কেন আপনি আমাকে ধর্মেন্দ্রর মতো হ্যান্ডসাম করে পাঠাননি?’ তাঁরও অনেক পরের প্রজন্মের সুপারস্টার সলমন খানের কথা ছিল, ‘বাবার পরে একজনকেই কপি করতাম। তিনি ধর্মেন্দ্র। ওঁর ছেলেদেরল থেকেও আমি ওঁকে বেশি ফলো করি।’ (Dharmendra)
এখানেই যেন হেরে গিয়েও জিতে যান শোলের বীরু। মনে পড়ে ৫২ বছর আগে তাঁর এক ছবির গান। ছবি ব্ল্যাকমেল, নায়িকা রাখী। অবশ্যই হিন্দি ছবিতে অন্যতম সেরা প্রেমের গান এটা। ‘পল পল দিল কি পাস তুম রহতে হো’ র মতো ধর্মেন্দ্রও থেকে যান মনের গহীনে। (Dharmendra)
জয় বাবা বীরুনাথ!
মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই সময় সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কভার করেছেন একাধিক বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিক গেমস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, খেলা, গান, সিনেমা, ভ্রমণ, খাবারদাবার, মুক্তগদ্য— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।