Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

পরিকাঠামো: ডিজিটাল পরিকাঠামো ও বিশ্বায়ন

অরূপ দাশগুপ্ত

নভেম্বর ১৮, ২০২৪

Arup Dasgupta
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

গত শতাব্দীর শেষের দিক থেকে বিশ্বায়ন নিয়ে দিকে দিকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা সামাজিক স্তরে তর্ক বিতর্ক শুরু হলেও বিশ্বায়নের শুরু কিন্তু সেই প্রাচীনকাল থেকেই যখন থেকে বিভিন্ন দেশের মানুষ বা নানান সম্প্রদায় নিজেদের মধ্যে পণ্য, জ্ঞান, ধর্ম বা সাংস্কৃতিক কার্যকলাপের বিনিময় করতে আরম্ভ করেছিল। (Digital Infrastructure)

শ্যামলী: রবীন্দ্রনাথের এক অভিনব গৃহ-পরিকল্পনা: উৎসব চৌধুরী

হেলেনিস্টিক যুগে খ্রিষ্টপূর্ব (৩২৩ – ১০০) নাগাদ গ্রিকরা প্রথম নানান দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সংযোগ স্থাপন করে নিজেদের সংস্কৃতি ও ধারণা বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।

এরপরই খ্রিষ্টপূর্ব ১০০ সাল নাগাদ মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের সাথে দূরপ্রাচ্যকে সংযুক্ত করতে ভূমধ্যসাগর আর ভারত মহাসাগর বরাবর একটি বাণিজ্য পথের পরিকাঠামো গড়ে ওঠে যার নাম ছিল সিল্করুট।

অনেকবছর এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের ব্যবসা বাণিজ্য বা অন্যান্য ধ্যানধারণা আদানপ্রদান হলেও সেরকম বড়সর আকারে বিশ্বব্যাপী কিছু ঘটেনি।

১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ব্যবসা করার নাম করে কলোনাইজেশনের মাধ্যমে এক নতুন ধরনের বিশ্বায়ন শুরু করে।
১৯০০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যে বিশ্বায়ন শুরু হয় অর্থনীতিবিদরা তাকে বাণিজ্য আর অর্থের “প্রথম বিশ্বায়ন” বলে অভিহিত করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত যে বিশ্বায়ন চলেছিল তা “দ্বিতীয় বিশ্বায়ন” নামে পরিচিত।
আর বর্তমানে আমরা যে বিশ্বায়নকে আঁকড়ে ধরে চলেছি তাকে বলা হয় “বিশ্বায়নের তৃতীয় যুগ”।
বিশ্বায়নের এই তৃতীয় যুগই প্রকৃত অর্থে সমগ্র বিশ্বকে এক ছাতার তলায় এনে সবদিক থেকে পারস্পরিক যোগাযোগের জালে আবদ্ধ করতে পেরেছে।

আদর্শগতভাবে বিশ্বায়ন কাম্য হলেও রাজনৈতিক অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে সমাজের সব স্তরের মানুষ এতে কতটা বা আদৌ উপকৃত হয় কী না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

সেইসময় বিশ্বায়ন বন্ধুত্বপূর্ণ আবহাওয়াতে কম হয়ে অধিকাংশ সময়ই যুদ্ধ এবং শক্তিশালী দেশের দুর্বল দেশের উপর আক্রমণের মাধ্যমেই হত।

অতীতে বিশ্বায়নের নাম করে জোর করে ধর্মের প্রচার এবং সঙ্গে ধর্মান্তর করা বা শক্তিশালী দেশের নিজেদের মতো করে দুর্বল দেশের রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক ব্যবস্থা বদল করাটা একরকম প্রচলিত পদ্ধতি ছিল। সেইসময় বিশ্বায়ন বন্ধুত্বপূর্ণ আবহাওয়াতে কম হয়ে অধিকাংশ সময়ই যুদ্ধ এবং শক্তিশালী দেশের দুর্বল দেশের উপর আক্রমণের মাধ্যমেই হত।

কিন্তু বিশ্বায়ন যখন যেভাবেই হোক না কেন সেটা ঠিকভাবে করার জন্যে সবসময় দরকার পড়েছে সঠিক এবং উপযুক্ত পরিকাঠামো। অতীতে মানুষ বিশ্বায়নের নামে যখন এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেত তখন কোথাও প্রয়োজন ছিল জলপথে যাওয়ার উপযুক্ত পরিকাঠামো বা কোথাও স্থলপথে যাওয়ার জন্যে উপযুক্ত রাস্তার পরিকাঠামো। কখনও কখনও গন্তব্যের স্থানীয় ভূ-খণ্ডের সঙ্গে পরিচিতি না থাকার দরুণ বা সেই ভূ-খণ্ড অতিক্রম করার জন্যে উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকার জন্যে তথাকথিত বিশ্বায়ন সফল হয়নি।

পরিকাঠামোগত প্রযুক্তি যত উন্নত হ’য়েছে বিশ্বায়নের ব্যাপ্তি ততই সুদূর প্রসারিত হ’য়েছে। আবার বিশ্বায়নের ব্যাপ্তি বাড়ানোর তাগিদে পরিকাঠামোর উন্নতি এবং নতুনত্বও এসেছে সহজে।

যেকোনও সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং ব্যাবসায়িক সম্পর্কের বিস্তারের জন্যে একাধিক স্টেকহোল্ডারের মধ্যে যোগাযোগের ব্যবস্থা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অতীতে এর সম্ভাবনা সীমিত ছিল উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে। কিন্তু মানুষের অজান্তেই পারস্পরিক যোগাযোগের এই পরিকাঠামো গড়ার বৈপ্লবিক পদ্ধতির গোড়াপত্তন শুরু হয় যখন ১৮৭৬ সালের ১০ই মার্চ গ্রাহাম বেল তাঁর অ্যাসিস্টেন্ট থমাস ওয়াটসনের সঙ্গে তাঁর আবিষ্কৃত টেলিফোনের মাধ্যমে কথা বলেন। শুরু হয় যোগাযোগ পরিকাঠামো গড়ার এক নতুন যুগের।
প্রথমে একই ঘরের দুই প্রান্তে, আস্তে আস্তে শহরের নানান প্রান্তে তারের মাধ্যমে দুটি বা এক জোড়া যন্ত্রকে কানেক্ট করে কথা বলা শুরু হয়। এই কথা বলা এক জোড়া মানুষের মধ্যে সীমিত না রেখে বহু জোড়া মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হাঙ্গেরিয়ান তিভাদার পুসকাসের প্রস্তাব অনুযায়ী বেল টেলিফোন কোম্পানি নিয়ে আসে অপারেটর অ্যাসিস্টেড ম্যানুয়াল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ। যেখানে গ্রাহকের অনুরোধ অনুযায়ী অপারেটর একজন গ্রাহকের টেলিফোনকে এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে অন্য এক গ্রাহকের টেলিফোনের সাথে জুড়ে দিতেন। আস্তে আস্তে এই ম্যানুয়াল এক্সচেঞ্জের বদলে আসে অ্যানালগ সুইচিং এক্সচেঞ্জ। বর্তমানে অটোম্যাটিক ডিজিটাল সুইচিং এক্সচেঞ্জ এসে গেছে। যোগাযোগের পরিকাঠামো এইভাবে আরও উন্নত হতে থাকে।

শব্দতরঙ্গের বা সাউন্ড ওয়েভের শক্তি যেহেতু কম তাই তাকে দূরে পাঠানোর সময় ট্রান্সমিশন লস হয় আর এই লস থেকে বাঁচানোর জন্য সাউন্ডওয়েভকে শক্তিশালী বেশি ফ্রিকোয়েন্সির ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভের মধ্যে গুঁজে দেওয়া হয়। এই ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভকে বলা হল ক্যারিয়ার ওয়েভ যা কথার থেকে তৈরি হওয়া শব্দতরঙ্গকে বা ইনফরমেশন ওয়েভকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারবে। সমস্যা দাঁড়াল এই ইনফরমেশন ওয়েভকে কীভাবে ক্যারিয়ার ওয়েভের মধ্যে গুঁজে দেওয়া যায় যাতে গন্তব্যে পৌঁছে তাকে আবার চেনা যায়। এই সমস্যার সমাধানে ক্যারিয়ার ওয়েভকে ইনফরমেশন ওয়েভের প্যাটার্ন অনুযায়ী মড্যুলেট করা হল। শুরুতে ক্যারিয়ার ওয়েভের অ্যামপ্লিচুড মড্যুলেশন করা হলেও ১৯৭৪ সাল থেকে ফ্রিকোয়েন্সি মড্যুলেশন আর বর্তমানে এই ক্যারিয়ার ওয়েভকে ডিজিটাল মড্যুলেশন করা হয়।

তৈরি হল পরিশীলিত পরিকাঠামো বাস্তবায়িত করতে উন্নত ধরনের হাইস্পিড কম্পিউটার যাকে ফাস্ট সুইচিং, এরর ফ্রি মডিউলেশন ইত্যাদি কাজে লাগানো যায়।

টেলিকমিউনিকেশনের উন্নতির সাথে সাথে পরিকাঠামোকে আরও উন্নত করে কমিউনিকেশনকে ডিজিটাল করার লক্ষ্যে শুরু হল এক্সচেঞ্জে সুইচিংয়ে কম্পিউটারের ব্যবহার। কমিউনিকেশনকে আরও ফাস্ট এবং এরর ফ্রি করতে বাজারে এল উন্নত ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট বেসড ডিজিটাল ডিভাইস। তৈরি হল পরিশীলিত পরিকাঠামো বাস্তবায়িত করতে উন্নত ধরনের হাইস্পিড কম্পিউটার যাকে ফাস্ট সুইচিং, এরর ফ্রি মডিউলেশন ইত্যাদি কাজে লাগানো যায়। এই এক্সচেঞ্জ বেসড মাল্টি পয়েন্ট কমিউনিকেশন থেকে উৎসাহিত হয়ে প্রথমে তার দিয়ে কানেক্ট করে এবং পরবর্তীতে ওয়ারলেস টেকনোলজি দিয়ে অনেক কম্পিউটার জুড়ে তৈরি হল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক। দূর দূরান্তের নানা দেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে বসানো হল বিভিন্ন রিপিটার যা প্রচারিত ক্যারিয়ার ওয়েভকে ডিমড্যুলেট করে এবং এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার বা আসার সময় তাতে ঢোকা নানান ধরণের নয়েজকে পরিষ্কার করে নতুন করে মড্যুলেট করে আবার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পাঠাল। অনেকটা সেই চাবি দেওয়া পুতুলে নতুন করে দম দেওয়ার মতো। ডিজিটাল পরিকাঠামো আরও সুদৃঢ় হল।

এরপরেই এসে উপস্থিত হল ইন্টারনেট। ডিজিটাল পরিকাঠামোর নতুন দিক খুলে গেল। এয়ারলাইনস নেটওয়ার্কের এয়ারপোর্টের মতো বিভিন্ন দেশে বসানো হল উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটার, নাম দেওয়া হল সার্ভার বা হাব এবং তাদেরকে একে অন্যের সঙ্গে কোথাও সমুদ্রপৃষ্ঠে বসানো ফাইবার অপ্টিক কেবল্ দিয়ে আবার কোথাও জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জুড়ে তৈরি হল বিশ্বব্যাপি এক নেটওয়ার্ক।

পৃথিবীর নানান প্রান্ত থেকে এইসব সার্ভারে ইনফরমেশন আসতে লাগল, সেখান থেকে হয় তাদের সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হল বা তাকে সেই সার্ভারে স্টোর করা হল যাতে অন্য কেউ চাইলে ভবিষ্যতে ব্যবহার করতে পারে। ইন্টারনেট হয়ে উঠল ইনফরমেশন গেটওয়ে এবং ইনফরমেশন হাব। বিশ্বব্যাপি এত এত কম্পিউটার জুড়ে তৈরি নেটওয়ার্ক পরিকাঠামোয় ইনফরমেশনকে সুরক্ষিত রাখতে তৈরি হল ক্রিপটোলজি, যার মাধ্যমে নেটওয়ার্ক দিয়ে যাতায়াত করার সময় বা সার্ভারে ডেটা/ইনফরমেশনকে সুরক্ষিত রাখতে তাকে মুড়ে দেওয়া হল ক্রিপ্টিক এক আস্তরণ দিয়ে যা ভেদ করে আসল ইনফরমেশনের হদিশ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এই সবই করা হল ডিজিটাল পরিকাঠামোকে আরও শক্তপোক্ত করার লক্ষ্যে। যাতে ইনফরমেশন হারিয়ে বা চুরি হয়ে না যায়।

আমাদের মোবাইল ফোন যখন ইন্টারনেটে কানেক্ট করা থাকে তখন সেখানে ডাইনামিক অ্যাড্রেস অ্যাসাইন করা হয়, আর বাড়ির ওয়াইফাই বা কোনও ওয়েব সাইটে ফিক্সড অ্যাড্রেস অ্যাসাইন করা হয়।

একটা কথা তো বলতেই ভুলে গেছি। এই যে এত লক্ষাধিক কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক তৈরি হল তার মধ্যে থেকে সঠিক কম্পিউটার খুঁজে বার করা হবে কী করে। তৈরি হল ICANN (Internet Corporation for Assigned Names and Numbers) নামক সংস্থা যার দায়িত্ব ইন্টারনেট প্রোটোকল মেনে ইন্টারনেটে কানেক্টেড সব ডিভাইসের একটা ইউনিক নাম ঠিক করা, যাকে বলা হয় ডোমেইন নেম সার্ভার সংক্ষেপে ডিএনএস এবং একটা ঠিকানা ধার্য করা বা ইন্টারনেট প্রোটোকল বা আইপি অ্যাড্রেস ধার্য করা। প্রথমে ৩২ বিটের বা ৪ বাইটের অর্থাৎ ২৩২ মানে ৬৫৫৩৬ সংখ্যক অ্যাড্রেসের কাঠামো তৈরি করা হয় যেমন ১২৩.২৩৪.৩৪৫। এরপর এই সংখ্যাও যখন কম পড়ল তখন আইপি অ্যাড্রেস বদলে ১২৮ বিটের বা ১৬ বাইটের মানে ২১২৮ সংখ্যক আলফা-নিউমেরিক অ্যাড্রেস তৈরি করা হল যাতে আরও আরও অনেক ইউনিক অ্যাড্রেস এলোকেট করা যায়। প্রয়োজন অনুযায়ী এই আইপি অ্যাড্রেস প্রাইভেট বা পাব্লিক হতে পারে সঙ্গে ফিক্সড বা ডাইনামিকও হতে পারে। আমাদের মোবাইল ফোন যখন ইন্টারনেটে কানেক্ট করা থাকে তখন সেখানে ডাইনামিক অ্যাড্রেস অ্যাসাইন করা হয়, আর বাড়ির ওয়াইফাই বা কোনও ওয়েব সাইটে ফিক্সড অ্যাড্রেস অ্যাসাইন করা হয়।

এত বিশাল পরিকাঠামো তৈরি হওয়াতে আকাশ বাতাস জুড়ে আরম্ভ হল ক্যারিয়ার ওয়েভের যাতায়াত। চালু হল বিভিন্ন ব্যান্ডের ফ্রিকোয়েন্সি, এক একটা ব্যান্ডকে অ্যাসাইন করা হল এক এক ধরণের কাজের জন্যে। কোনওটা প্রাইভেট, কোনওটা পাব্লিক আবার কোনওটা কমার্শিয়াল আর কোনওটা ডিফেন্স। এমনকি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা যখন আকাশ পথে যাতায়াত করেন তখন তাদের নিজের এয়ার-টু-গ্রাউন্ড কমিউনিকেশনের জন্যে অ্যাসাইন করা হয় ডাইনামিক ব্যান্ড। এরপরেই কমিউনিকেশনের ডিমান্ড বাড়ল আর প্রয়োজন হল নানান স্পিডের কমিউনিকেশনের যেমন 2G, 3G, 4G বা 5G. ‘G’ মানে এখানে জেনারেশন। বিভিন্ন দেশের সরকার জমির সাথে সাথে কমিউনিকেশন পরিকাঠামোর জন্যে কোটি কোটি টাকায় খোলা আকাশ বেচতে আরম্ভ করল।

একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে বিশ্বজুড়ে এতবড় পরিকাঠামো মানব সভ্যতায় আগে কখনও হয়নি। এ এক এমন পরিকাঠামো যার মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তের যেকোনও মানুষের সঙ্গে যে কোনও মানুষ বা সংস্থার যোগাযোগ করা সম্ভব এবং তার কাছে সশরীরে উপস্থিত না থেকেও যেকোনও রকমের ইনট্যানজিবল পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব যেমন সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক।

এই বিস্তীর্ণ বিশাল পরিকাঠামো তৈরি হওয়ার সাথে সাথে তিনটি ব্যাপার ঘটতে আরম্ভ করল। দুই বা দুইয়ের বেশি সত্তা বা এনটিটির মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ, ব্যবসা বাণিজ্যের বিস্তার এবং সর্বোপরি জ্ঞানের ভাণ্ডার তৈরি হওয়া। তৈরি হলো ইয়াহু এবং পরবর্তীতে গুগলের মতো কোম্পানি যারা বিশাল এই জ্ঞান ভাণ্ডার থেকে প্রয়োজনীয় সঠিক তথ্য খুঁজে বার করতে মানুষকে দিল সার্চ ইঞ্জিন। ধীরে ধীরে মানুষ ইন্টারনেট পরিকাঠামোর এই মায়াজালে জড়িয়ে পড়ল, ঠিক না ভুল বিচার না করেই মানুষ ইন্টারনেটে পাওয়া তথ্যের উপর বেশি নির্ভর করতে শুরু করল। প্রিন্ট মিডিয়া ছেড়ে সবাই ডিজিটাল মিডিয়ায় মন দিল। মানুষে মানুষে যোগাযোগ মেশিন এবং ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে গেল। মানুষ তার একান্ত নিজস্ব অনুভূতি এবং ইমোশন একে অন্যের সাথে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই শেয়ার করতে শুরু করল, মানুষ অসামাজিক হয়ে পড়ল। অর্কুট, ফেসবুক, লিঙ্কডইন হোয়াটসঅ্যাপ বা ইন্সটাগ্রাম থেকে পাওয়া এইসব নানান তথ্য সংগ্রহ করে কিছু কিছু কোম্পানি সেটা ব্যবসা বাড়ানো বা মানুষকে মোহিত করতে ব্যবহার করতে আরম্ভ করল। সবাই ভাবতে শুরু করল ইন্টারনেট জানে না বা পারে না এমন কোনও কাজ নেই। তৈরি হল লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার ইনট্যানজিবল ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি। ইন্টারনেট পরিকাঠামো হয়ে উঠল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তৈরি হল ইন্টারনেট নির্ভর আরেক নতুন ধরনের পরিকাঠামো। নাম দেওয়া হল ক্লাউড সার্ভার বেসড কম্পিউটিং।

এই বিশাল অপরচুনিটির সঠিক এবং সর্বোচ্চ লাভ ওঠাতে ইন্টারনেট পরিকাঠামো আরও উন্নত করা হল। কথায় আছে –
যেখানে দেখিবে ছাই
উড়াইয়া দেখ তাই,
পাইলেও পাইতে পার
অমূল্য রতন।

ব্যস নতুন সম্ভাবনার খোঁজে সবাই মিলে ছাই উড়িয়ে দেখতে শুরু করল। তৈরি হল ইন্টারনেট পরিকাঠামো নির্ভর বিভিন্ন ব্যবসার আইডিয়ার এক নতুন ব্যবসায়িক পরিকাঠামো, নাম দেওয়া হল স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম। এর মধ্যে ইনট্যানজিবল প্রপার্টি রক্ষা করার ব্যবসা বেশ বড় চেহারা নিল। সবাইকে বোঝানো হল সার্ভার নিজের কাছে বা কোনও জানা জায়গায় রাখার আর কোনও প্রয়োজন নেই। গল্প ছড়ানো হল সার্ভারকে এখন স্বর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হোক, সেখানে কখনই কোনও টেরোরিস্ট আক্রমণ হবে না আর তার সঙ্গে নিজে সার্ভারের দায়িত্ব না রাখলে খরচও কমে যাবে। তৈরি হল ইন্টারনেট নির্ভর আরেক নতুন ধরনের পরিকাঠামো। নাম দেওয়া হল ক্লাউড সার্ভার বেসড কম্পিউটিং। স্বর্গের গল্প ছেড়ে সার্ভারদের মেঘমুলুকে পাচার করার নামে মর্ত্তেই নামিয়ে এনে রাখা হল নানান ডেটা সেন্টারে। গড়ে উঠল নানান ডেটা সেন্টার পরিকাঠামো। শুরু হল নতুন পরিকাঠামো গড়ার গল্প “ক্লাউড সার্ভার।”

এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলা দরকার যে মানব ইতিহাসে ইন্টারনেট পরিকাঠামোর মতো এত বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত এবং গ্রহণযোগ্য পরিকাঠামো আগে কখনও তৈরি হয়নি। এমনকি প্রাথমিক পরিকাঠামোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এতরকমের আনুষঙ্গিক পরকাঠামোও তৈরি হয়নি।

ইন্টারনেটের এই বিস্তীর্ণ পরিকাঠামোর উপস্থিতিতে বিভিন্ন সার্ভারে জমা হতে থাকল নানান বিষয়ের নানান ধরণের ডেটা। যার থেকে ইনফরমেশন নিয়ে ফেসবুক, লিঙ্কডইন, হোয়াটসঅ্যাপ বা ইন্সট্রাগ্রামে ব্যবহৃত ইমোজি থেকে ধরা পড়ল মানুষের বিভিন্ন অবস্থার সেন্টিমেন্ট। ইনফ্যাক্ট ইন্টারনেটের এই বিস্তীর্ণ নেটওয়ার্ক পরিকাঠামোর জন্যে একসঙ্গে ধরা পড়তে থাকল মানুষে-মানুষে, মানুষে-সংস্থায় বা সংস্থায়-সংস্থায় সম্পর্ক এবং সেই সংক্রান্ত ডেটা বা ইনফরমেশন। এই বিস্তীর্ণ নেটওয়ার্ক পরিকাঠামোর মাধ্যমে ইন্টারনেট বেসড অ্যাপ্লিকেশনগুলো মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠল।

মানুষের জীবনের সবরকম অ্যাক্টিভিটির মধ্যে ইন্টারনেট ঢুকে পড়াতে সংগৃহীত হতে থাকল প্রচুর ডেটা। ইমপর্টেন্ট হল ডেটা।

ইন্টারনেট টেকনোলজি বদলে দিল মানুষের জীবনশৈলী। মানুষের চিন্তা ভাবনা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি, সবকিছু নতুন করে নতুনরূপে দেখা দিল। মানুষের জীবনের সবরকম অ্যাক্টিভিটির মধ্যে ইন্টারনেট ঢুকে পড়াতে সংগৃহীত হতে থাকল প্রচুর ডেটা। ইমপর্টেন্ট হল ডেটা। পরিস্থিতি অনুযায়ী এই ডেটা ব্যবহার করে ইন্টারনেট বেসড অ্যাপ্লিকেশনগুলো এমন সব খেল দেখাতে শুরু করল যে সবাই ভাবল ইন্টারনেট ভগবানস্বরূপ।

এই বিশাল ইনফরমেশনের ভাণ্ডার ব্যবহার করে কী করে বুদ্ধিমত্তামূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় তার চেষ্টা শুরু হল। তৈরি হল মেশিনের ভাষা, সাহিত্য বা অন্য কাজ শেখানোর পরিকাঠামো, নাম দেওয়া হল মেশিন লার্নিং আর ডিপ লার্নিং।

এই লার্ন-এড মেশিনকে দিয়ে নানান রিপিটেটিভ এবং ইন্টেলিজেন্ট কাজ করাতে মনুষ্য মস্তিষ্কের ধাঁচে তৈরি হল নানান ধরণের নিউরাল নেটওয়ার্ক মডেল, যাকে ব্যবহার করতে উড়ে এসে জুড়ে বসল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যারে সংক্ষেপে বলে এআই সিস্টেমস্।
মানুষ উপভোগ করতে শুরু করল এক অধরা স্বপ্নের বাস্তবতা।

এই এআই কখনও সেক্সপিয়ার আর রবীন্দ্রনাথকে একই তর্কমঞ্চে হাজির করছে আবার কখনও রাজা রামমোহনকে দিয়ে বিধানসভায় সতীদাহ প্রথা নিয়ে ভাষণ দেওয়াচ্ছে। এআইয়ের মাধ্যমে বাস্তব-অবাস্তব নানান স্বপ্নের চরিত্ররা কম্পিউটারে, ফোনে প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে শুরু করল।

১৮৭৬ সালে মানুষে মানুষে যোগাযোগ পরিকাঠামোর যে সম্ভাবনা শুরু হয়েছিল তা ২০২৪এ এসে ঘনাদার সাথে টেনিদার বা ফেলুদার সাথে তোপসের অথবা বাঁটুলের সাথে কেল্টুর দেখা হওয়া এবং কথপোকথনের সম্ভবনায় দাঁড়িয়েছে।

ডিজিটাল পরিকাঠামো এবং তাকে ব্যবহার করে টেকনোলজির যে এই নানাবিধ সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে তা আজ মানুষকে এক কঠিন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। মানুষ তার মান হুঁশ নিয়ে বেঁচে থাকবে নাকি নিজের বুদ্ধি বিবেচনা খুইয়ে মেশিন নির্ভর হয়ে পড়বে!

তবে আমার বহুদিনের শখ স্বচক্ষে বাঁটুলের পিসির সাথে হাঁদা-ভোঁদার পিসের বিয়ে দেখার। যেখানে বাঁটুল ধুতি পাঞ্জাবী পরে ব্যান্ডের সাথে নাচতে নাচতে হাঁদা ভোঁদাদের বাড়িতে বরযাত্রী আসবে!

Aroop Dasgupta Author

পড়াশোনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিয়ো ফিজিক্স বিভাগে। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তথ্য প্রযুক্তিকে। প্রায় এগারো বছর নানা বহুজাতিক সংস্থার সাথে যুক্ত থাকার পর উনিশশো সাতানব্বইতে তৈরি করেন নিজের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। বর্তমানেও যুক্ত রয়েছেন সেই সংস্থার পরিচালনার দায়িত্বে। কাজের জগতের ব্যস্ততার ফাঁকে ভালবাসেন গান-বাজনা শুনতে এবং নানা বিষয়ে পড়াশোনা করতে। সুযোগ পেলেই বেড়াতে বেরিয়ে পড়েন আর সেই অভিজ্ঞতা ধরে রাখেন ক্যামেরায়।

Picture of অরূপ দাশগুপ্ত

অরূপ দাশগুপ্ত

পড়াশোনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিয়ো ফিজিক্স বিভাগে। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তথ্য প্রযুক্তিকে। প্রায় এগারো বছর নানা বহুজাতিক সংস্থার সাথে যুক্ত থাকার পর উনিশশো সাতানব্বইতে তৈরি করেন নিজের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। বর্তমানেও যুক্ত রয়েছেন সেই সংস্থার পরিচালনার দায়িত্বে। কাজের জগতের ব্যস্ততার ফাঁকে ভালবাসেন গান-বাজনা শুনতে এবং নানা বিষয়ে পড়াশোনা করতে। সুযোগ পেলেই বেড়াতে বেরিয়ে পড়েন আর সেই অভিজ্ঞতা ধরে রাখেন ক্যামেরায়।
Picture of অরূপ দাশগুপ্ত

অরূপ দাশগুপ্ত

পড়াশোনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিয়ো ফিজিক্স বিভাগে। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তথ্য প্রযুক্তিকে। প্রায় এগারো বছর নানা বহুজাতিক সংস্থার সাথে যুক্ত থাকার পর উনিশশো সাতানব্বইতে তৈরি করেন নিজের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। বর্তমানেও যুক্ত রয়েছেন সেই সংস্থার পরিচালনার দায়িত্বে। কাজের জগতের ব্যস্ততার ফাঁকে ভালবাসেন গান-বাজনা শুনতে এবং নানা বিষয়ে পড়াশোনা করতে। সুযোগ পেলেই বেড়াতে বেরিয়ে পড়েন আর সেই অভিজ্ঞতা ধরে রাখেন ক্যামেরায়।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com