Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

পশ্চিম এশিয়ার ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে এলি কোহেন- ঊনবিংশ শতকের প্রেক্ষাপট

Eli Cohen
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(Eli Cohen)

তেল আভিভের এক সরকারি দফতর। সেখানে এক হলঘরে, বিশাল এক মেহগনি কাঠের টেবিল। তাতে সার দিয়ে রাখা ফাইল, ক্যামেরার রোল, ফ্ল্যাটের চাবির গোছা। সব মিলিয়ে আড়াই হাজার জিনিসপত্র। (Eli Cohen)

কার এইসব জিনিসপত্র?

উত্তরটা জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে ছ’দশক আগের সিরিয়ায়। ১৯৬৫ সালের ১৮ মে-র উষাকাল। সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের মার্জে স্কোয়ারে লোকে লোকারণ্য। সবাই ইজরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের গুপ্তচর এলি কোহেনের প্রকাশ্যে ফাঁসি দেখতে এসেছে। নির্ধারিত সময়ে ফাঁসিতে ঝোলানো হল কোহেনকে। তাঁর সাদা আলখাল্লার উপর লেখা তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ। ফাঁসির পরেও মৃতদেহটি বেশ কয়েক ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখা হল। তারপর আর কোহেনের কোনও খোঁজ মেলেনি। মোসাদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এজেন্ট ৮৮ (কোহেনের এই সাংকেতিক নামই ছিল মোসাদের খাতায়), ইতিহাসেই হারিয়ে গেলেন। মোসাদের অক্লান্ত চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁর দেহাবশেষ বা তাঁর ব্যবহৃত কোনও জিনিসপত্র- কোনও কিছুরই খোঁজ মিলল না। এই ভাবেই ষাট ষাটটা বছর কেটে গেল। (Eli Cohen)

আরও পড়ুন: অন্ধকার সময় বা অ্যার্জের কাহিনি

আশার আলো দেখা গেল ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বরে যখন বিদ্রোহী সেনার আক্রমণে সিরিয়াতে বসির অল আসাদ সরকারের পতন হল। দামাস্কাসে ক্ষমতা দখল করল হায়াত তাহরির অল সাম ও তুর্কি মদতপুষ্ঠ সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি। এবার সিরিয়াতে মোসাদের স্লিপার সেল সক্রিয় হয়ে ওঠে কোহেনের ব্যাপারে। (Eli Cohen)

বিভিন্ন সূত্র মাফিক যেসব খবর জানা যাচ্ছে, তার যোগফলের সম্ভাব্য ছবিটা এইরকম, জমানা বদলের পরে কারাগার থেকে হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দী যখন মুক্তি পাচ্ছে তখন নথির খোঁজে লাখাতিয়া, আলেপ্পো আর দামাস্কাসে খোঁজ  শুরু হয়।

বিভিন্ন সূত্র মাফিক যেসব খবর জানা যাচ্ছে, তার যোগফলের সম্ভাব্য ছবিটা এইরকম, জমানা বদলের পরে কারাগার থেকে হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দী যখন মুক্তি পাচ্ছে তখন নথির খোঁজে লাখাতিয়া, আলেপ্পো আর দামাস্কাসে খোঁজ  শুরু হয়। এই কাজে ড্রোনও ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। মোসাদের নজর পড়ে আসাদের দল বাথ পার্টির সদর দফতর, মিলিটারি ইনটেলিজেন্স ২৯১-এর দফতর এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ভল্টে। সম্ভবত এইসব জায়গা থেকেই সাড়ে পাঁচ দশক ব্যাপী আসাদ পিতা পুত্রের জমানার বহু গোপন নথিও মোসাদের হাতে আসে, যার মধ্যে কোহেনের এই সব নথি ছিল। তারপর অতি গোপনে এইসব নথি ইজরায়েলে নিয়ে আসা হয়। (Eli Cohen)

তাঁর সাদা আলখাল্লার উপর লেখা তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ।

সিরিয়ার গুপ্ত পুলিশের ভল্টের নথি থেকে একথা স্পষ্ট, সিরিয়াতে কামেন আমিন থাবেট ছদ্মনামে কোহেন অত্যন্ত সুচারূভাবে মোসাদের কাজ করছিলেন। তাঁর নিখুঁত জাল পাসপোর্ট, কোহেনের হাতে লেখা মোসাদের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন নির্দেশ ও তার পরিপ্রেক্ষিতে তার কাজ, বিভিন্ন সামরিক কেন্দ্রে তোলা ছবি তো আছেই সঙ্গে রয়েছে তাঁর প্রাণদণ্ডাদেশের নথি, স্ত্রী নাদিয়াকে লেখা চিঠি, কোহেনের প্রাণভিক্ষা চেয়ে তৎকালীন সিরীয় প্রেসিডেন্টের কাছে নাদিয়ার চিঠি, মৃত্যুপথযাত্রী কোহেনের হাতে লেখা শেষ উইল, শেষ সময়ে পাশে থাকার জন্য দামাস্কাসের তৎকালীন ইহুদি সমাজের প্রধান রাব্বি নিসিম আন্দাবোকে দেওয়া অনুমতিপত্র ইত্যাদি। এলি কোহেনের স্ত্রী নাদিয়ার হাতে বেশ কিছু নথি তুলেও দিয়েছেন ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং মোসাদ প্রধান ডেভিড বার্নিয়া। (Eli Cohen)

আধুনিক ইহুদি রাজনৈতিক ভাবধারার অন্যতম পথীকৃত অস্ট্র-হাঙ্গেরীয় সাংবাদিক তথা আইনবিদ থিওডোর হার্জেলের নামাঙ্কিত মধ্য ইজরায়েলি শহর হার্জলিয়াতে এলি কোহেনের নামে এক মিউজিয়াম উদ্বোধন করে, মোসাদ প্রধান কোহেনকে এক চিরন্তন অনুপ্রেরণা হিসাবে উল্লেখও করেছেন।

আধুনিক ইহুদি রাজনৈতিক ভাবধারার অন্যতম পথীকৃত অস্ট্র-হাঙ্গেরীয় সাংবাদিক তথা আইনবিদ থিওডোর হার্জেলের নামাঙ্কিত মধ্য ইজরায়েলি শহর হার্জলিয়াতে এলি কোহেনের নামে এক মিউজিয়াম উদ্বোধন করে, মোসাদ প্রধান কোহেনকে এক চিরন্তন অনুপ্রেরণা হিসাবে উল্লেখও করেছেন। (Eli Cohen)

মোসাদের এই এজেন্ট ৮৮-এর কাহিনির গুরুত্ব বুঝতে গেলে আমাদের পৌনে দু’শতক আগের পশ্চিম এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে ফিরে যেতে হবে।

শুরু হল এলি কোহেন প্রথম পর্ব।

ভঙ্গুর অটোমান সাম্রাজ্য ও অশান্ত পশ্চিম এশিয়া

ইতিহাস বলে, উনবিংশ-বিংশ শতকের মধ্যভাগ থেকেই পূর্ব ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়া উত্তাল হয়ে ওঠে। তখন এই বিশাল ভূখণ্ড ছিল দীর্ঘ ছয় শতক ধরে ইস্তানবুলের অটোমান সুলতানদের শাসনাধীন। ঐতিহাসিকদের মতে, ১৮৫৩ সালের ক্রাইমিয়া যুদ্ধের পর থেকেই, ভিতর ও বাইরের নানা কারণে অটোমান সাম্রাজ্য দুর্বল হতে থাকে। ফলে অনেক জায়গাতেই বিদ্রোহের আগুন পুরোপুরি নেভাতে ব্যর্থ হয় ইস্তানবুল। যার পরিণতিতে পরবর্তী পৌনে এক শতকের মধ্যেই তার পতন ঘটে। (Eli Cohen)

এই পতনের মূল কারণ হিসাবে ইস্তানবুল সুলতানবাহিনীর ক্রমাগত সামরিক ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়। অথচ অটোমান সেনাবাহিনীর জানিসারি বাহিনী ছিল এক কথায় দুর্জয় ও অপ্রতিরোধ্য। তাহলে সামরিক ব্যর্থতা হল কেন? (Eli Cohen)

কারণটা নিহিত ছিল ফৌজের মধ্যেই। ১২৯৯ সালে, প্রথম ওসমান অটোমান সাম্রাজ্য পত্তন করলেও তা ছিল সামরিক দিক থেকে বহুলাংশে তুর্কি উপজাতীয় দলপতিদের উপর নির্ভরশীল। ফলে সাম্রাজ্যের স্বার্থ দেখার চেয়ে উপজাতি দলপতিদের স্বার্থ বেশি রক্ষিত হত। ১৩৬২ সালে তখতে বসে প্রথম ওসমানের নাতি, প্রথম মুরাদ সামরিক বাহিনী গঠনে মন দেন। তুর্কি উপজাতিদের প্রভাব মুক্ত করতে পূর্ব ইউরোপে তাঁর শাসনাধীন রুমানিয়া, বসনিয়া অঞ্চলের খ্রিস্টানদের পরিবার থেকে কিশোরদের ‘রক্ত কর’ নাম দিয়ে ধরে নিয়ে আসা হয়। তারপর এদের ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে, সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে, নয়া ফৌজ তৈরি করা হয়। এই নয়া ফৌজের নাম হয় ইয়ানুসারি যার অর্থ নতুন সেনা। (Eli Cohen)

তীরন্দাজিতে অত্যন্ত দক্ষ ফৌজের হাতে পরে বন্দুকও দেওয়া হয় যা কোনও ইউরোপীয় বাহিনীর কাছে তখন ছিল না। মূলত এই ফৌজের দাপটেই ইউরোপ পিছু হঠতে বাধ্য হয়।

কঠোর অণুশাসনের মধ্যে বাঁধা হয় এদের জীবন। সুলতানের প্রতি অনুগত এই ফৌজের সেনানীরা কেউ ৪০ বছর বয়সের আগে বিয়েও করতে পারত না। তীরন্দাজিতে অত্যন্ত দক্ষ ফৌজের হাতে পরে বন্দুকও দেওয়া হয় যা কোনও ইউরোপীয় বাহিনীর কাছে তখন ছিল না। মূলত এই ফৌজের দাপটেই ইউরোপ পিছু হঠতে বাধ্য হয়। ইউরোপের বড় অংশ অটোমান সাম্রাজ্যের আওতায় আসে। (Eli Cohen)

আবার ইতিহাসের পরিহাস যে এই জানিসারী ফৌজই পরে সাম্রাজের অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সপ্তদশ শতক থেকে জানিসারি বাহিনী বংশানুক্রমিক হয়ে দাঁড়ায় যা এই বাহিনীর সামরিক কার্যক্ষমতা বহুলাংশে হ্রাস করে। সুলতানের দরবারে এরা এতই ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে যে এরা কর ব্যবস্থার বাইরে চলে যায়। এছাড়াও, বাহিনীতে এরা আমৃত্যু রয়ে যায়। ফলে খাতায় কলমে সেনাসংখ্যা যা ছিল তার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ আসলে অবসরে চলে গিয়েছিল। (Eli Cohen)

Eli Cohen
মোসাদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এজেন্ট ৮৮

পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিল, যে সুলতানই সেনাবাহিনীতে আধুনিকীকরণের চেষ্টা করত, তারা হয় ক্ষমতাচ্যুৎ হত নয়তো খুন হয়ে যেত। এর সর্বশেষ উদাহরণ হল সংস্কারপন্থী সুলতান তৃতীয় সেলিম, যাকে জানিসারি ফৌজ ১৮০৭ সালে ক্ষমতাচ্যুত করে হত্যা করে স্বল্প সময়ের জন্য নিজেদের পছন্দের চতুর্থ মুস্তফা তখতেও বসায়। কিন্তু ক্ষমতার অলিন্দে তাদের অবশ্য খুব বেশি দিন থাকা হয়নি। চতুর্থ মুস্তফাকে সরিয়ে ১৮০৮ সালে দ্বিতীয় মাহমুদ ক্ষমতা দখল করেন। নতুন সুলতান প্রথমেই সংঘাতের পথে হাঁটেননি। বরং জানিসারি বাহিনীর সঙ্গে কার্যত সন্ধি করে সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণ স্থগিত রাখেন। আদতে সুলতান তলে তলে শক্তি সঞ্চয় করছিলেন। (Eli Cohen)

সংখ্যার দিক থেকে বেশি সৈন্য থাকা সত্ত্বেও পারস্যের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে এই প্রাচীন প্রথাগত সেনাবাহিনী নিয়ে যে চলবে না, তা দ্বিতীয় মাহমুদের বুঝতে বাকি রইল না। শোনা যায় ১৮২৬ সালে সুলতানের চরেরা রটিয়ে দেয় তুর্কিদের নিয়ে ইউরোপের আদলে নয়া বাহিনী তৈরি করা হচ্ছে। এতে জানিসারিরা বিদ্রোহ করে। ১৫ জুন জানিসারি বাহিনীর ব্যারাকে গোলাবর্ষন করে সুলতানের অনুগত বাহিনী। এতে হাজার চারেক জানিসারি মারা যায়। এরপরের সংঘর্ষে প্রায় ২০ হাজার জানিসারি বন্দী করা হয়, যাদের অধিকাংশকে ফাঁসি দেওয়া হয়। জানিসারি বাহিনীও অবলুপ্ত হয়। এর স্থান নেয় সুলতান অনুগত আসাকির-ই-মনসুর-ই মহম্মদিয়ে (তুর্কিতে যার অর্থ মহম্মদের বিজয়ী সেনা)। (Eli Cohen)

জানিসারির যে অংশটা সুলতানের রোষাগ্নি থেকে বাঁচতে পেরেছিল তারা অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা পূর্ব ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে জানিসারি বাহিনীকে যেভাবে শেষ করা হয়েছিল তা মুখে মুখে পল্লবিত হয়ে বাকি ইউরোপে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি।

এরপরেও অটোমান প্রায় এক শতক টিকে ছিল। কিন্তু আগের গৌরব আর ফিরে তো আসেইনি বরং সাম্রাজ্য নিজেই অবলুপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। জানিসারির যে অংশটা সুলতানের রোষাগ্নি থেকে বাঁচতে পেরেছিল তারা অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা পূর্ব ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে জানিসারি বাহিনীকে যেভাবে শেষ করা হয়েছিল তা মুখে মুখে পল্লবিত হয়ে বাকি ইউরোপে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। (Eli Cohen)

ফলে ইউরোপীয় জনমানসে তুর্কি সাম্রাজ্যের উপর বিরূপতা বাড়তেই থাকে। এছাড়া, তৎকালীন ইউরোপীয় সাহিত্যে অটোমান সাম্রাজ্যকে নীচু করে দেখানোর প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। ১৮২৮ সালে প্রকাশিত ‘দ্য লাস্টফুল টার্ক’ এর অন্যতম উদাহরণ। এ বাদে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর সঙ্গে ইস্তানবুলের নানা বিষয়ে বিবাদ লেগেই থাকত। ১৮৫৩ সালের ক্রাইমিয়া যুদ্ধের সময় রুশ জার প্রথম নিকোলাস তো ক্ষয়িঞ্চু অটোম্যান সাম্রাজ্যকে ‘ইউরোপের অসুস্থ লোক’ বলে ব্যঙ্গও করেন। (Eli Cohen)

আর্মেনীয় গণহত্যা

ইতিহাস বলে, ইস্তানবুলের খ্রিস্টান বৈরিতার নগ্নরূপ প্রকাশ পায় অটোমান সাম্রাজ্যের আওতায় থাকা, পশ্চিম এশিয়ার খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ ছোট্ট দেশ, আর্মেনিয়াতে। মূলত ধর্মীয় কারণেই আর্মেনীয়দের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করে রাখা হয়েছিল। ফলে আর্মেনিয়ায় এই নিয়ে অসন্তোষ বাড়তে থাকে। আর্মেনিয়া জুড়ে যে অবাধে লুঠ তরাজ, জমি আর সম্পত্তি দখল চলছিল তার বিরুদ্ধেও আর্মেনীয়রা সরব হন। (Eli Cohen)

কিন্তু আর্মেনীয়দের দাবি বিবেচনার বদলে অটোমান সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ নৃশংসতার রাস্তা বেছে নিল। ১৮৯৪ থেকে ১৮৯৬ অবধি আর্মেনিয়াতে চলল এক নৃশংস গণহত্যা, যার বলি হল ১ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ আর্মেনীয়। বাড়িঘর জ্বালিয়ে কয়েক লক্ষ আর্মেনীয়কে দেশ ছাড়া করা হয়। রাশিয়া আর জার্মানি নীরব দর্শক ছিল এই নরমেধ যজ্ঞের। (Eli Cohen)

আলেপ্পো থেকে আলেকজান্দ্রিয়া

আমাদের কাহিনির পর্দা উঠছে আরও দেড় দশক বাদে-১৯১০ সালে, বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন শহর, সিরিয়ার আলেপ্পোতে। উত্তর পশ্চিম সিরিয়ার এই প্রাচীন বাণিজ্যনগরীতে তখন ১ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষের বাস যার মধ্যে হাজার সাতেক ইহুদি। অটোমান সাম্রাজ্যের এই বৃহত্তম বাণিজ্যনগরীতে তখন তুর্কি ছাড়াও রয়েছে আর্মেনীয়, আরব ব্যবসায়ীরা। (Eli Cohen)

আলেপ্পোতে ইহুদিদের ইতিহাস নিয়ে লেখা আব্রাহাম কোহেন তহিলের গবেষনা গ্রন্থ ‘আলেপ্পো জুয়েরি থ্রু জেনারেশনস’, থেকে জানা যাচ্ছে ৭ম খ্রিষ্ট্রাব্দে ইহুদি ব্যবসায়ী আর মৃৎশিল্পীরা এসে আলেপ্পোতে বাস করতে শুরু করে। উনবিংশ শতকের মধ্যভাগ থেকে আর্মেনীয় আর তুর্কিদের মধ্যে বৈরিতা বেড়ে চললেও প্রথমে ইুহুদিদের উপর তেমন প্রভাব পড়েনি। বরং ইহুদিদের ‘ধিম্মি’ বা সুরক্ষিত আখ্যা দিয়ে নিরাপত্তাই দেওয়া হত। যদিও এর বদলে ইহুদিদের জিজিয়া কর দিতে হত, নির্দিষ্ট পোশাক পরতে হত, অধিকাংশ উচ্চ সরকারি পদে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। (Eli Cohen)

শুরু হল আরবদের সঙ্গে আলেপ্পোতে ব্যবসারত ইহুদিরদের রেশারেশি। এর সঙ্গে ধর্মীয় বিদ্বেষ তো ছিলই।

কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে এসে এই আপাত শান্তিও আর বজায় রাখা গেল না। ক্ষয়িষ্ণু অটোমান সাম্রাজ্যে তখন মাথাচাড়া দিয়েছে আরব জাতীয়তাবাদ। তখন আলেপ্পোর ইহুদিরা ব্যবসা করে বেশ বর্ধিষ্ণু। ফলে শুরু হল আরবদের সঙ্গে আলেপ্পোতে ব্যবসারত ইহুদিরদের রেশারেশি। এর সঙ্গে ধর্মীয় বিদ্বেষ তো ছিলই। এর ফলে প্রাচীন নগরীর ইহুদি মহল্লার গলিতে গলিতে রূধির ধারা বইতে শুরু করল। অনেক ইহুদি ব্যবসায়ীই এই হিংসাদীর্ণ পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে উত্তর মিশরের বন্দর নগরী আলেকজান্দ্রিয়া চলে যাওয়ার কথা মনস্থ করলেন। (Eli Cohen)

Eli Cohen
শল ও তাঁর স্ত্রী সোফিয়া তাঁদের সন্তানদের নিরাপদ ভবিষ্যতের কথা ভেবে এই প্রাচীন বন্দরনগরীতে যাওয়া মনস্থির করলেন।

এদেরই একজন ইলিয়াহু বেন-শল কোহেন। শলের ছিল, টাই তৈরির ব্যবসা। কিন্তু ভেঙে পড়া অটোমান সাম্রাজ্যে বাণিজ্য নগরী হিসাবে আলেপ্পোর জেল্লাও ক্রমে ফিকে হয়ে আসছে। এছাড়া, আইন শৃঙ্খলার গুরুতর অবনতি তো আছেই। তাই শল আলেপ্পোতে থাকা আর নিরাপদ মনে করলেন না। অন্যদিকে ব্রিটিশ শাসনাধীন উত্তর মিশরের প্রাচীন বন্দর নগরী আলেকজান্দ্রিয়ায় তখনও ইহুদি বিদ্বেষ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেনি। (Eli Cohen)

ফলে শল ও তাঁর স্ত্রী সোফিয়া তাঁদের সন্তানদের নিরাপদ ভবিষ্যতের কথা ভেবে রোমান, গ্রিক, মিশরীর সভ্যতার মিলনস্থল, ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী এই প্রাচীন বন্দরনগরীতে যাওয়া মনস্থির করলেন। (ধর্মভীরু  শল ও তাঁর অর্ধাঙ্গিনী সোফিয়ার স্থির বিশ্বাস তাঁদের ‘কাঙ্খিত ইজরায়েল ভূমিতে তারা ঠিক একদিন যাবেনই।’ তাই মিশর যাত্রাটা তাঁরা হয়তো এরই প্রথম ধাপ ভেবেছিলেন।) (Eli Cohen)

তথ্য বলে কোহেন পরিবার ১৯১৪ সালে আলেপ্পো থেকে আলেকজান্দ্রিয়া যায়। তবে, কবে এবং কীভাবে, সে ব্যাপারে বিশেষ কিছু জানা যায় না। অনুমান করা যায় যেহেতু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ২০১৪ সালের, ২৮শে জুলাই শুরু হয়, তাই শল কোহেন তাঁর পরিবার নিয়ে বছরের প্রথম দিকেই যাত্রা করেছেন।

তথ্য বলে কোহেন পরিবার ১৯১৪ সালে আলেপ্পো থেকে আলেকজান্দ্রিয়া যায়। তবে, কবে এবং কীভাবে, সে ব্যাপারে বিশেষ কিছু জানা যায় না। অনুমান করা যায় যেহেতু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ২০১৪ সালের, ২৮শে জুলাই শুরু হয়, তাই শল কোহেন তাঁর পরিবার নিয়ে বছরের প্রথম দিকেই যাত্রা করেছেন। এও মনে করা হয় সড়কপথে ইস্তানবুল পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে জলপথে আলেকজান্দ্রিয়া গিয়েছিলেন। তখন আলেপ্পো থেকে আলেকজান্দ্রিয়ার, এটাই ছিল সহজ রাস্তা। (Eli Cohen)

আলেকজান্দ্রিয়াতে গিয়ে কোহেন পরিবার ঠাঁই পেল শহরের ইহুদি মহল্লাতে। সেখানেই ১৯২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর, এলি কোহেনের জন্ম হয়। (Eli Cohen)

তথ্যসূত্র-(১) এলি কোহেন-আ লাইফ অফ এসপিওনাজ অ্যান্ড স্যাকরিফাইস,
(২) আলেপ্পো জুয়েরি থ্রু জেনারেশনস-আব্রাহাম কোহেন তহিল
(৩) এনসাইক্লোপেডিকা ব্রিটানিকা

ছবি সৌজন্য- আন্তর্জাল
ডিজিটাল ও মুদ্রিত মাধ্যমে সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত

Author kingshuk banerjee

মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে

Picture of কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে
Picture of কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়

মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সুতীর্থ দাশ
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

সংস্কৃতি

আহার

অমৃতা ভট্টাচার্য
শমিতা হালদার
অমৃতা ভট্টাচার্য

বিহার

রমেশ দাস
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

নির্মাল্য চ্যাটার্জি
নির্মাল্য চ্যাটার্জি

উপন্যাস

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com