(Ghibli)
সামাজিক মাধ্যম জুড়ে যেন এক নতুন ঝড় উঠেছে, জিবলি।
সেই ঝড়ে গা ভাসিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জন ট্রাম্প, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাঁক্র, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির পুতিন থেকে শুরু করে হলিউডের তাবড় তাবড় সেলিব্রিটি। আর আমার আপনার মতো আমজনতা তো রয়েছেই। ভিভিআইপি থেকে পাড়ার তারক মুদি সবারই ইচ্ছা নিজের নানান পোজের ছবি জিবলি ইমেজ আকারে দেখার আর সেই ইচ্ছাপূরণ করছে চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স বা সংক্ষেপে এআই)। চাইলেই নিজের যে কোনও ব্যক্তিগত বা পছন্দের ছবি চ্যাটজিপিটির যাদুদণ্ডে হয়ে উঠছে জিবলি ঘরানার ছবির আদলে। শিশুরা যেমন নতুন কোনও খেলনা পেলে তা নিয়ে মত্ত হয়ে ওঠে, লক্ষ লক্ষ জিবলিরূপী ছবিও সেইভাবে ‘ভাইরাল’ হয়ে ঘুরছে সমাজ মাধ্যমে। (Ghibli)
জিবলি ঘরানার আদলে ছবি চ্যাট জিপিটি কীভাবে অবলীলাক্রমে ব্যবহার করছে? এটা কি মেধাসত্ত্ব আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে না?
আর এতেই ঝড় উঠেছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। পরিসংখ্যান বলছে চলতি বছরের ২৫শে মার্চ থেকে জিবলি ঘরানার ইমেজ আমজনতার জন্য নিয়ে এসেছে চ্যাটজিপিটি আর এই ব্যবহারে ভারত আপাতত সবচেয়ে এগিয়ে। কী ঘটছে ঘটনাটা? অনেকে যেমন নিজেকে অন্যরূপে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে নিজের এবং প্রিয়জনের যা ছবি পাচ্ছেন তাই জিবলি ঘরানার কার্টুন ছবিতে রূপান্তরিত করছেন, তেমনই যথেচ্ছভাবে চ্যাট জিপিটি ব্যবহার করে জিবলি ঘরানার এই ছবি করা নিয়েও নানান প্রশ্ন উঠছে। যেমন জিবলি ঘরানার আদলে ছবি চ্যাট জিপিটি কীভাবে অবলীলাক্রমে ব্যবহার করছে? এটা কি মেধাসত্ত্ব আইন (Intellectual Copyright) লঙ্ঘন করা হচ্ছে না? এ ছাড়াও প্রশ্ন রয়েছে চ্যাটজিপিটির মতো এআই-এর হাতে ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্য দেওয়া নিয়েও। এআই এর দুনিয়ার যখন কিছুই প্রায় জানা নেই, তখন এইসব ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষাই বা কতটুকু। (Ghibli)

জিবলি কথা
তবে এই সব প্রশ্ন নিয়ে নাড়াচাড়া করার আগে জিবলি নিয়ে একটু আলোকপাত করা যাক।
এই কাহিনির শুরুর কথা জানতে হলে চার দশক পিছিয়ে যেতে হবে। ১৯৮৫ সালের ১৫ জুন টোকিওর পশ্চিমপ্রান্তে কোগানেইতে দুই জাপানি চিত্র প্রযোজক ইসাও তাকাহাতা আর তোসিও সুজুকিকে সঙ্গে নিয়ে, জাপানি অ্যানিমেশন শিল্পী তথা চিত্র পরিচালক হায়াও মিয়াজাকি ‘স্টুডিও জিবলি’ নামে এক অ্যানিমেশন স্টুডিও খুললেন। উদ্দেশ্য অ্যানিমেশনের সাহায্যে গতানুগতিক থেকে বেরিয়ে স্বাধীনভাবে নতুন করে ছবি বানানো, ভিডিও করা। (Ghibli)
আরও পড়ুন: অ্যার্জের ছেলেবেলা বা টিনটিনের গপ্পো
কিন্তু নাম জিবলি হল কেন?
এর পিছনে এক ছোট্ট ইতিহাস আছে। মিয়াজাকির বিমান প্রীতি রয়েছে। সাহারা মরুভূমিতে পর্যবেক্ষনকারী টহলদার ইতালীয় বিমান ক্যাপ্রোনি সিএ ৩০৯কে ‘জিবলি’ নামেও ডাকা হয়। লিবীয় আরবিতে ‘জিবলি’ শব্দের অর্থ ‘গরম মরু বাতাস’। অর্থ্যাৎ বিমানপ্রীতিকে সঙ্গী করে মিয়াজাকি ভেবেছিলেন, এই স্টুডিও সেই মরু বাতাসের মতো নতুন ঝড় তুলবে অ্যানিমেশন জগতে।
যদিও জাপানিজে এই ‘Ghibli’ শব্দের উচ্চারণ দাঁড়ায় ‘জিবুরি’, তবু এই সামান্য পার্থক্যটুকু বহন করা একজন শিল্পীর উদারতা বলেই মনে করা যেতে পারে। স্টুডিও জিবলি যে কেবল একটি গতানুগতিক অ্যানিমেশন স্টুডিও নয়, তা আর নতুন করে বলে দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না এই পরিস্থিতিতে। (Ghibli)

মিয়াজাকি-তাকাহতা-সুজুকি কথা
স্টুডিও জিবলি নিয়ে বিশদে বলার আগে মিয়াজাকি, তাকাহাতা আর সুজুকিকে নিয়ে কিছু বলা যাক। ৮৪ বছর বয়স্ক মিয়াজাকি, জাপান তো বটেই, গোটা বিশ্বের অ্যানিমেশন শিল্পে এক নন্দিত নাম। তিনি যে শুধু তাঁর নিখুঁত অঙ্কনে অ্যানিমেশনের চরিত্রগুলিতে অন্য মাত্রা আনেন তাই নয়, বহু নজর কাড়া টেলিভিশন সিরিজ ও পূর্ণ দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। তাঁর অগনিত পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে তাঁর লেখা এবং প্রতিটি ফ্রেম নিজ হাতে আঁকা, ও পরিচালিত ২০০১ সালের অ্যানিমেশন ছবি ‘স্পিরিটেড অ্যাওয়ে’ যা সেরা অ্যানিমেশন ছবি হিসাবে অস্কার জিতে নেয়। আর্থিক দিক থেকে এটি স্টুডিও জিবলির সফল প্রযোজনা। প্রায় ২ কোটি ডলার বাজেটের ছবিটি ৪০ কোটি ডলারের ব্যবসা করে যা জাপানি চলচ্চিত্র শিল্পে এখনও পর্যন্ত কোনও পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবির সর্বোচ্চ আয়। এবং মিয়াজাকি ম্যাজিক একটা অস্কারেই শেষ হয়ে যায়নি। ২০২৪-এ অ্যাকাদেমি অফ মোশন পিকচার্স মিয়াজাকির রচিত ও পরিচালিত সর্বশেষ ছবি ‘দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন’কে সেরা অ্যানিমেশন ছবির মর্যাদা দেয়। মিয়াজাকি পান তাঁর দ্বিতীয় অস্কার। এই ছবির প্রযোজক সুজুকিও অস্কার পান। (Ghibli)
২০২৪-এ অ্যাকাদেমি অফ মোশন পিকচার্স মিয়াজাকির রচিত ও পরিচালিত সর্বশেষ ছবি ‘দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন’কে সেরা অ্যানিমেশন ছবির মর্যাদা দেয়।
পেশায় অ্যানিমেশন শিল্পী মিয়াজাকি হঠাৎ কেন স্টুডিও খোলার কথা ভাবলেন? আদতে মিয়াজাকি, তাকাহাতা আর সুজুকি এই স্টুডিও খোলার আগে থেকেই জাপানি অ্যানিমেশন দুনিয়ায় বেশ পরিচিত নাম। ১৯৬৫ সালে জাপানি অ্যানিমেশন ছবি ‘গ্যালিভার্স ট্রাভেল বিয়ন্ড দ্য মুন’-এ মুখ্য অ্যানিমিশন শিল্পী হিসাবে কাজ করে মিয়াজাকির বেশ নামডাক হয়। পাশাপাশি তাকাহাতা ততদিনে বিভিন্ন অ্যানিমেশন ছবিতে সহকারি পরিচালক হিসাবে কাজ করে ফেলেছেন। (Ghibli)
এখানে মিয়াজাকি আর তাকাহাতার গুরু টোকিওর তোয়ি অ্যানিমেশন স্টুডিওর অ্যানিমেশন শিল্পী ইয়াসুয়ো ওৎসুকার (যিনি পরবর্তীকালে স্টুডিও জিবলিতেও কাজ করেছেন) উল্লেখ করা প্রয়োজন। মূলত ওৎসুকার উৎসাহেই মিয়াজাকি যেমন শিল্পের দিকে ঝোঁকেন, তেমনই তাকাহাতা পা বাড়ান অ্যানিমেশন ছবি তৈরির অ আ ক খ শিখে পরিচালনায় নামতে।
১৯৬৮ সালের ২১শে জুলাই মুক্তি পায় ‘গ্রেট অ্যাডভেঞ্চারস অফ হোরাস, প্রিন্স অফ সান’। উত্তর জাপানি দ্বীপ হোক্কাইডোর আইনো জনজাতির এক প্রাচীন লোককথা ভিত্তিক পুতুলনাচ ‘দ্য সান অ্যাবোভ চিকিসানি’ অবলম্বনে তৈরি ৮২ মিনিটের এই অ্যানিমেশন ছবিতে পরিচালনায় হাতেখড়ি হয় তাকাহাতার। এই ছবির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন মিয়াজাকি। তাকাহাতা-মিয়াজাকির অর্ধশতাব্দীব্যাপী যুগলবন্দীর সূত্রপাত ওই ছবির মাধ্যমেই। (Ghibli)
১৯৭৮ সালে অ্যানিমেশন পত্রিকার অ্যানিমেজের সম্পাদক হলেন সুজুকি। আর এই পত্রিকার সূত্র ধরেই মিয়াজাকি আর তাকাহাতার সঙ্গে আলাপ সুজুকির।
তোসিও সুজুকির পথচলা অবশ্য শুরু হয়েছিল সংবাদ মাধ্যমের আঙিনা থেকে। তোকুমা সোতেন পত্রিকা গোষ্ঠীর আশাই গিনো পত্রিকার মানগা (জাপানি কমিকস আর গ্রাফিক নভেল) বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে, ৭০ এর দশকের প্রথমে সুজুকি জাপানি অ্যানিমেশন দুনিয়ায় পা রাখেন। ক্রমে ১৯৭৮ সালে অ্যানিমেশন পত্রিকার অ্যানিমেজের সম্পাদক হলেন সুজুকি। আর এই পত্রিকার সূত্র ধরেই মিয়াজাকি আর তাকাহাতার সঙ্গে আলাপ সুজুকির। ক্রমে সেই আলাপ পরিণত হল বন্ধুত্ত্বে। সুজুকির উৎসাহেই মিয়াকাজি তাঁর পেন্সিলে আঁকা ড্রইং দিয়ে মানগা ক্লাসিক ‘নৌসিকা অফ দ্য ভ্যালি অফ দ্য উইন্ড’ রচনা করেন। বিপর্যয় পরবর্তী বিশ্বে এক ছোট্ট রাজ্যের রাজকন্যা নৌসিকার কাহিনি নিয়ে ৭ খণ্ডের মানগার এই ম্যাগনাম ওপাস অ্যানিমেজ পত্রিকায় ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৯৪ সালের মার্চ মাস অবধি প্রকাশিত হয়। (Ghibli)

বলা হয় এই নৌসিকার কাহিনিই স্টুডিও জিবলির গঙ্গোত্রী। মানগা কাহিনি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপুল সাড়া পড়ে যায় পাঠকদের মধ্যে। প্রথমে ঠিক হয়েছিল এই কাহিনির চলচ্চিত্রায়ণ করা হবে না। কিন্তু মানগার বিপুল জনপ্রিয়তা দেখে এ নিয়ে তাঁরা ফের ভাবতে বসলেন। সুজুকি প্রস্তাব দিলেন ছবিটা প্রযোজনা করার। তবে তা হয়ে ওঠেনি। ১৯৮৪ সালের ১১ মার্চ মিয়াজাকির কাহিনি আর পরিচালনা এবং তাকাহাতার প্রযোজনায় জাপানি অ্যানিমেশন ছবি ‘নৌসিকা অফ দ্য ভ্যালি অফ দ্য উইন্ড’ মুক্তি পেল। সমালোচক, দর্শকদের তুমুল প্রশংসা পেল ছবিটি। আর এই ছবির সাফল্য মিয়াজাকি-তাকাহাতা জুটিকে নতুন কাজ নিজেদের আঙ্গিকে করার উৎসাহ আর সাহস যোগাল। সুজুকিকে সঙ্গে নিয়ে এই ত্রিমূর্তির স্বাধীনভাবে পথচলা শুরু হল। জন্ম নিল স্টুডিও জিবলি। (Ghibli)
১৯৮৪ সালের ১১ মার্চ মিয়াজাকির কাহিনি আর পরিচালনা এবং তাকাহাতার প্রযোজনায় জাপানি অ্যানিমেশন ছবি ‘নৌসিকা অফ দ্য ভ্যালি অফ দ্য উইন্ড’ মুক্তি পেল। সমালোচক, দর্শকদের তুমুল প্রশংসা পেল ছবিটি।
পরিসংখ্যান বলছে, স্টুডিও জিবলি ১৯৮৫ সালের জন্মলগ্ন থেকে এখনও পর্যন্ত ২২টি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি করেছে। এর মধ্যে ‘নৌসিকা অফ দ্য ভ্যালি অফ দ্য উইন্ড’কে স্টুডিওর ছবি ধরলে মিয়াজাকির ছবির সংখ্যা দাঁড়বে ১৩। আপাতত মিয়াজাকির লিখিত আর পরিচালিত ছবির সারণিতে সর্বশেষ সংযোজন ২০২৩ সালের ‘দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন’। অন্যদিকে ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল ৮২ বছর বয়সে প্রয়াত তাকাহাতার এই স্টুডিওতে পরিচালিত ছবির সংখ্যা পাঁচ। ১৯৮৮ সালে ‘গ্রেভ অফ দ্য ফায়াররফ্ললাইস’ দিয়ে যার শুরু, সিকি দশক পরে ২০১৩ সালের ‘দ্য টেল অফ দ্য প্রিন্সেস কাগুয়া’ দিয়ে শেষ। এই দুই ছবির কাহিনিকারও তাকাহাতা নিজেই। ১৯০ জন কর্মীর এই স্টুডিও এখনও পর্যন্ত লাভ করেছে সাড়ে তিনশো কোটি ইয়েনের বেশি। (Ghibli)
তুমি কেমন করে পেইন্ট করো হে গুণী
আদতে এইসব সন তারিখের কচকচিতে মিয়াজাকি-তাকাহাতা জুটিকে মূল্যায়ণ করা মুশকিল। অ্যানিমেশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কী অসম্ভব কল্পনাশক্তি, অঙ্কনদক্ষতা, ধৈর্য্য, পরিশ্রম করার ক্ষমতা লাগে তা মিয়াজাকি আর তাকাহাতার প্রতিটা আঁকার রেখার আঁচড়ে ছড়িয়ে আছে। সাধারণভাবে অ্যানিমেশন ছবির প্রতিটা দৃশ্যের জন্য ২৪টা ফ্রেম আঁকতে হয়। ফলে বোঝাই যাচ্ছে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি বানাতে গেলে কত হাজার ছবি আঁকতে হয়। আর সারাজীবন ধরে নীরবে নিভৃতে ঠিক এই কাজটাই চরম তিতিক্ষার সঙ্গে করে এসেছেন অ্যানিমেশন শিল্পীরা। আর শুধু কাজই করেননি, এমন এক ঘরানার জন্ম দিয়েছেন যা একঝলক দেখেই মানুষ বুঝে যাবে এটা স্টুডিও জিবলির আঁকা। (Ghibli)
সমালোচকরা বলছেন, মিয়াজাকি, তাকাহাতারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, কোরীয় যুদ্ধ দেখেছেন। যুদ্ধের প্রলংকারী ঝঞ্জা তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনেও লেগেছে। ফলে তাঁদের আঁকায় অন্ধকারের দিকটাও উঠে এসেছে। ফলে তাঁদের আঁকা কাহিনিগুলোতে যাদুবাস্তবের ছোঁয়া থাকলেও তারা জীবনের কথা বলে। ফলে সব বয়সের পাঠক যেমন এই মায়েস্ত্রোদের কাহিনির রসাস্বাদন করতে পারেন, তেমনি তাঁদের প্রতিটা পেন্সিলের আঁচড় জীবনের গভীরতা বোঝায়। (Ghibli)
সব বয়সের পাঠক যেমন এই মায়েস্ত্রোদের কাহিনির রসাস্বাদন করতে পারেন, তেমনি তাঁদের প্রতিটা পেন্সিলের আঁচড় জীবনের গভীরতা বোঝায়।
আর রয়েছে অসম্ভব মাত্রায় ছবিতে ডিটেলিং। মিয়াজাকির লেখা ও পরিচালিত দুই চলচ্চিত্র ১৯৮৮ সালের ‘মাই নেবার টোটোরো’ বা ২০০৪ সালের ‘হাউলস মুভিং ক্যাসেল’ এই বিষয়ে সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। মিয়াজাকির এই দুই ছবিতে হাতে আঁকা প্রাকৃতিক দৃশ্য বা কল্পবিজ্ঞানের নানান যন্ত্রের নজরকাড়া ছবি মনে দাগ কাটে। বোঝা যায় এই সব ছবির পিছনে একজন শিল্পীর কতটা পরিশ্রম, কতটা অধ্যাবসায় থাকে।

মেধাস্বত্ত্ব, ব্যক্তিগত তথ্য বিপদে পড়ছে কি?
আপত্তির জায়গাটা ঠিক এখানেই। সমালোচকরা বলছেন, যে কাজের জন্য এত পরিশ্রম, এত সময় ব্যয়, তা তো এআই এক লহমায় হুবহু নকল করে ফেলছে। এইরকম চলতে থাকলে সৃষ্টির স্বকীয়তাই হারিয়ে যেতে পারে এআই এর প্রযুক্তির চোরাবালিতে। প্রশ্ন উঠছে মেধাসত্ত্ব (Intellectual Copyright) নিয়েও। চ্যাটজিপিটির নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ওপেন এআইয়ের অবশ্য দাবি, তারা সীমিত ক্ষেত্রে বদ্ধ হয়ে থাকা শিল্পকে প্রকৃত অর্থেই বিশ্বজনীন করে তুলেছে। যদিও এতে বিশেষ চিঁড়ে ভেজেনি। জল গড়িয়েছে আদালত অবধি। (Ghibli)
আরও পড়ুন: শার্লক হোমস-জন্মদিনের সন্ধানে
সমস্যা দেখা দিতে পারে অন্যত্রও। যে ভাবে খুল্লামখুল্লা ব্যক্তিগত ছবিই জিবলিতে ব্যবহারের জন্য এআইয়ের হাতে সঁপে দেওয়া হচ্ছে তাতে রীতিমতো তথ্য সুরক্ষার প্রশ্ন অদূর ভবিষ্যতে ব্যপকভাবে দেখা দিলে আশ্চর্য্যর কিছু হবে না।
তবে শেষে হায়াও মিয়াজাকি পুত্র গোরোর বলা কথা মনে পড়ছে। গোরো নিজেও একজন নামকরা অ্যানিমেশন শিল্পী ও বর্তমানে পিতার স্টুডিওর ডিরেক্টর। গোরো সম্প্রতি টোকিওতে বলেছেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যানিমেশন শিল্পীদের কাজ কেড়ে নিতে পারে, হয়তো গোটা অ্যানিমেশন ফিল্মও বানাতে পারবে কিন্তু আরেকটা হায়াও মিয়াজাকি তৈরি করতে পারবে না”…
(Ghibli)
মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে