(Mutual Fund)
ছোট্ট গোপাল ও তার মধুসূদন দাদার গল্প শোনেননি এমন বাঙালি পাঠক খুঁজে পাওয়া বিরল। গোপালের মা বলেছিলেন, “বাবা, ভয় পেলে বা বিপদে পড়লে তোর মধুসূদন দাদাকে ডাকিস! তিনিই তোকে সব সময় রক্ষা করবেন।” মা কখনও মিথ্যা বলতেই পারেন না, এই সরল বিশ্বাসের উপর ভর করেই গোপাল পাঠশালায় যওয়ার সময় গভীর বনের পথও নির্ভয়ে পার হয়ে যেত। যে কোনও সমস্যার সমাধান তার মধুসূদন দাদা করে দেবেন, এই আস্থা তার গল্পের শেষ অবধি অটুট ছিল। এমনকি পাঠশালার পণ্ডিত মশাইয়ের পিতার শ্রাদ্ধের দিনও তাঁর দেওয়া সেই দইয়ের ভাঁড় খুলে দিয়েছিল এক অলৌকিক উপলব্ধির পথ। পণ্ডিত মশাইয়ের চোখ রাঙানি, সহপাঠীদের ঠাট্টা তামাশা সব কিছুই এক ফুঁয়ে উড়ে গেল, যখন অপার বিস্ময়ে সবাই দেখল কেমন করে সেই একরত্তি পাত্র হয়ে উঠল অফুরন্ত অমৃতের উৎস। (Mutual Fund)
গামানুষের গল্প আর অন্য রাজশেখর: আশিস পাঠক
এই অগাধ নির্ভেজাল বিশ্বাস গল্প উপাখ্যানের বাইরে বাস্তব জগতে খুঁজে পাওয়া শুধু কঠিন নয়, একরকম অসম্ভব। বিশেষ করে আজকের দিনে যখন মানুষ নিজের উপরেই সমস্ত আশা, ভরসা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে। গত কয়েক বছর ধরে পৃথিবী যে সঙ্কটের মুখে পড়ে খাবি খাচ্ছে, তা থেকে উদ্ধার করতে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরও বোধহয় বিপাকে পড়ছেন! সেক্ষেত্রে মধুসূদন দাদার দেখা পাওয়া তো দূরস্থান, তাঁর অস্তিত্ব নিয়েই মানুষের মনে আজ গভীর সংশয়। দই-মিষ্টি মাথায় থাক, সামান্য ডাল-ভাতের যোগাড় পর্যন্ত করে দেওয়ার মতো কোনও শক্তির অস্তিত্ব আজ আর নেই। (Mutual Fund)

আমার নিজের কথাই বলি। গত ২০১৭ সাল থেকে আমার মাসিক আয় শূন্য। এটি অবশ্য কোভিড-১৯, এবং তার ফলে যে বিশ্বময় অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, তার আগেকার ঘটনা। বেঙ্গালুরুর মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে ঘরের মেয়ে ঘরে, অর্থাৎ কলকাতায়, ফেরার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব। তবে কলকাতায় একটা আয়ের ব্যবস্থা নিশ্চয়ই হবে, এই বিশ্বাস আমার মধুসূদন দাদার উপর গোপালের আস্থার চেয়ে কম কিছু ছিল না। দুঃখের বিষয়, সেই আশা সম্পূর্ণ বিফলে গেছে; এবং মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো এই অতিমারি এসে সেই বিশ্বাসকে পায়ের নীচে ভেঙে গুঁড়িয়ে তছনছ করে দিয়েছে। শুধু অতিমারি নয়, সাম্প্রতিককালে পৃথিবী জুড়ে যে সংহার লীলা চলছে, তার থেকে আমরা কবে বেরিয়ে আসতে পারব, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। (Mutual Fund)
আমি জানি একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর সমস্ত বিশেষজ্ঞ একযোগে আতঙ্কে শিউরে উঠবেন। সমস্বরে চিৎকার করে বলবেন, “তফাৎ যাও! সব ঝুঠ্ হ্যায়!”
এমতাবস্থায়, পাঠক ভাবতেই পারেন যে আমি বেঁচে আছি কীকরে এবং কীভাবেই বা পরিবার প্রতিপালনের মতো গুরুদায়িত্ব সামাল দিচ্ছি? সত্যি কথা বলতে, আমার মধুসূদন দাদা আমি নিজেই; আর এখানে চুপিচুপি বলে রাখি, আমার দইয়ের ভাঁড় হল, মিউচুয়াল ফান্ড। (Mutual Fund)
আমি জানি একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর সমস্ত বিশেষজ্ঞ একযোগে আতঙ্কে শিউরে উঠবেন। সমস্বরে চিৎকার করে বলবেন, “তফাৎ যাও! সব ঝুঠ্ হ্যায়!”
বিশেষ করে সমকালীন শেয়ার বাজারের উথাল পাথাল ঢেউ কখন সঞ্চয়ের তরীকে সাগরের অতল গর্ভে তলিয়ে দেবে স্বয়ং ব্রহ্মাও জানেন না তা! সেখানে মিউচুয়াল ফান্ডের উপর ভরসা? নৈব নৈব চ! (Mutual Fund)

অথচ আশ্চর্যের বিষয়, চোদ্দ বছর আগে, ২০১১ সালে আমার বপন করা প্রথম বীজটি আজ একটি প্রমাণ মাপের বৃক্ষে পরিণত হয়েছে, যা ফল এবং ছায়া, দুটো দিয়েই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। দেশের এবং বিদেশের অর্থনৈতিক আকাশে ঝড়-বৃষ্টি-বজ্রপাত নিরন্তর লেগে আছে বটে, কিন্ত আমার গাছটিকে একেবারে উপড়ে ফেলতে পারেনি। এর প্রধান কারণ, আজকের দিনে মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যবস্থাপনা, গত শতাব্দীর থেকে অনেকটাই উন্নত হয়েছে; ক্ষতির ঝুঁকি অবশ্যই আছে, কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ করারও অনেক নতুন পদ্ধতি তৈরি হয়েছে। (Mutual Fund)
এবার পাঠক বলুন, সময় থাকতে মধুসূদন দাদার ভাঁড়ে জমা না করলে, তিনিই বা কী করে আমাদের বাঁচাবেন?
এবার পাঠক বলুন, সময় থাকতে মধুসূদন দাদার ভাঁড়ে (অল্প করে হলেও) জমা না করলে, তিনিই বা কী করে আমাদের বাঁচাবেন? ভাঁড়ে মা ভবানী বিরাজ করবেন যে! আমি যদিও জানি যে ভাল আয়ের চাকরি এক কথায় ছেড়ে দেওয়ার মতো পাগলামি খুব কম পাঠকই করবেন, তবুও আমার মতো আট বছর শূন্য মাসিক, তথা বার্ষিক আয়ে যদি কেউ থেকে থাকেন, তাঁদের প্রতি আমার প্রশ্ন -ভবিষ্যৎ দুর্দিনের জন্য কিছু চিন্তাভাবনা করেছেন তো? কারণ ভাঁড়টি মধুসূদন দাদার হলেও, তার থেকে কী বেরোবে তা কিন্ত তিনিও জানেন না। গোপাল চেয়েছিল অনুষ্ঠানের অতিথিদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ দই। তা সে পেয়েছিল। তেমনই আমাদের অভিষ্ট কী, সেটা আমাদেরই ঠিক করতে হবে। (Mutual Fund)
প্রসন্ন নকশার পট-কথায় কালীপ্রসন্ন: অরিন চক্রবর্তী
তবে হ্যাঁ, অন্ধভাবে বিনিয়োগ করলে চলবে না। এটা মনে রাখতে হবে যে পৃথিবীর অর্থব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে চলে না। মিউচুয়াল ফান্ডে অর্থ লগ্নি করতে হলে প্রথমেই বুঝতে হবে আপনার স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক লক্ষ্য কী কী। তারপর জানতে হবে কত ধরনের ফান্ড আছে? সেগুলির বৈশিষ্ট্য কী কী? এবং ঝুঁকির পরিমাণ কত? ফান্ডগুলি কোন কোন খাতে লগ্নিকারীদের অর্থ কত শতাংশ করে বিনিয়োগ করছে? কোন ফান্ড কতদিন ধরে চলছে এবং কীরকম মুনাফা অর্জন করছে? এটাও জানা দরকার যে ফান্ড চালাতে মোট ব্যয়ের অনুপাত কত, কারণ এই ব্যয়ের অঙ্কটি প্রথমে ফান্ডের সামগ্রিক লাভের থেকে, এবং পরবর্তীকালে আপনার লভ্যাংশ থেকে কাটা যাবে। সব কিছু জেনে নিয়ে এবং সব দিক বিচার করে যে ফান্ড আপনার আর্থিক লক্ষ্য পূরণ করবে সেটি বেছে নিন, এবং আপনার পুঁজি প্রয়োজন মতো লগ্নি করুন। (Mutual Fund)

এখন পাঠক প্রশ্ন করতেই পারেন যে মিউচুয়াল ফান্ড ছাড়া কি বিনিয়োগের অন্য পথ নেই, যা ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখবে এবং সম্পদ বাড়াতে সাহায্য করবে? অবশ্যই আছে। মধ্যবিত্ত বাঙালির মনে প্রথমেই আসে সোনা, রূপা এবং অন্যান্য মূল্যবান ধাতু, ফিক্সড ডিপোজিট, ভূসম্পত্তি, পোস্ট অফিস সেভিংস… এছাড়াও আছে ইক্যুইটি-লিংকড এন্ডাওমেন্ট পলিসি, সার্বভৌম স্বর্ণ বন্ড, নানা কিসিমের পেনশন বা অ্যানুয়িটি ফান্ডসহ আরও অনেক প্রকল্প। চাইলে সরাসরি শেয়ার বাজারেও বিনিয়োগ করতে পারেন, যদি উদ্বৃত্ত পুঁজি এবং যথেষ্ট অভিজ্ঞতা থাকে। সব ক্ষেত্রেই ধৈর্য ও নিজের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক রাখতে হবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর অর্থ লাভের আশা করলে চলবে না। এবং অধিক লাভের মরীচিকার পিছনে ছুটতে গিয়ে অসৎ লোকের ফাঁদে পড়বেন না। (Mutual Fund)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের মধ্যে যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে তাতে গোটা দুনিয়ার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কতখানি সেটা এখনই সম্যক বোঝা যাচ্ছে না কিন্তু বেশি দিন এই অবস্থা চললে একটা মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
এটা মানতেই হবে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের মধ্যে যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে তাতে গোটা দুনিয়ার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কতখানি সেটা এখনই সম্যক বোঝা যাচ্ছে না কিন্তু বেশি দিন এই অবস্থা চললে একটা মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তা সামলানোর জন্য প্রত্যেক দেশের সরকারকেই এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে সাধারণ মানুষ ধনে প্রাণে মারা না যায় এবং ১৯২৯ সালের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি না ঘটে। যা স্ব স্ব দেশের সরকারের দায়িত্ব। আর আমাদের দায়িত্ব, চাকরি বা ব্যবসা ছাড়াও গৃহে অর্থাগমের অন্য পন্থা অবলম্বন। (Mutual Fund)
তবে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাল করে ভেবেচিন্তে, গবেষণা করে, সমস্ত তথ্য যাচাই করে, সব সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পড়ে নিন। তারপর নিজের কষ্টার্জিত ধন লগ্নি করুন। কে বলতে পারে মধুসূদন দাদার ভাঁড়ে আপনার জন্য কী অপেক্ষা করে আছে! (Mutual Fund)
ছবি সৌজন্য- ক্যানভা ডট কমের কপিরাইট ফ্রি ছবি
প্রযুক্তিবিদ্যা, সাহিত্য, শিল্প- এই তিন জগতের মধ্যে প্রতীতি সেনগুপ্তর অবাধ বিচরণ ১৯৯৩ সাল থেকেই। দীর্ঘ চব্বিশ বছর তীক্ষ্ণ মেধা ও উদ্ভাবনীশক্তির জোরে বিশ্বের প্রধান কয়েকটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় উচ্চপদে কাজ করার পর, ২০১৭তে বেঙ্গালুরু ছেড়ে কলকাতায় প্রত্যাবর্তন এবং সাহিত্যিক জীবনের শুরু। ইংরেজিতে প্রতীতির প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ ২০২৩শে। দুই অন্যতম আদর্শ নারী হলেন বৃটিশ কবি বায়রন দুহিতা অগাস্টা অ্যাডা কিং (বিশ্বের প্রথম মহিলা কম্পিউটার প্রোগ্রামার), এবং দুবার নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী প্রাতঃস্মরণীয়া মাদাম ক্যুরি।