(P C Sorcar)
১৯১৩ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি পূর্ববঙ্গের টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা ভগবানচন্দ্র সরকারও ছিলেন জাদুবিদ্যায় পারদর্শী। পরিণত বয়সে তৎকালীন কলকাতায় এসে বসবাস শুরু করেন। জাদুবিদ্যাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করে বর্মা, সিঙ্গাপুর, জাপান, চীন, ইউরোপ প্রভৃতি দেশে ভারতীয় জাদু প্রদর্শন করেন তিনি। পৃথিবীর প্রায় ৭০ টি দেশে তাঁর এই জাদু মঞ্চস্থ করেছেন সফল ভাবে। তিনিই এই উপমহাদেশের প্রথম জাদুকর, যিনি রাজকীয় বেশে পাগড়ি পরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জাদু প্রদর্শন করতে থাকেন। সর্বশ্রেষ্ঠ মঞ্চ জাদু প্রদর্শনের জন্য নিউ ইয়র্ক থেকে দুই বার ‘দি ফিনিক্স অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছিলেন। (P C Sorcar)

পৃথিবীতে সর্বপ্রথম ‘গোল্ডবার’ পুরষ্কার, জার্মানি থেকে ‘সুবর্ণ লরেল মালা’ তেও সম্মানিত হয়েছিলেন। ভারত সরকার তাঁকে ১৯৬৪ সালে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে সম্মানিত করে। তাঁর এক্সরে আই, করাত দিয়ে মানুষ কাটা, ওয়াটার অফ ইণ্ডিয়া এসব খেলা অগণিত দর্শককে চমকে দিয়েছে। তাঁর রচিত ১৬ টি গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ‘ছেলেদের ম্যাজিক’, ‘ম্যাজিকের কৌশল’, ‘দেশে দেশে’, ‘মেসমেরিজম’, ‘সম্মোহন বিদ্যা’ প্রভৃতি। ১৯৭১ সালের ৬ ই জানুয়ারি জাপানের হক্কাইডো দ্বীপের সিবেতসু শহরে তিনি দেহত্যাগ করেন। (P C Sorcar)
আরও পড়ুন: সংগ্রাহক শিরোমণি পরিমল রায়
জাদুসম্রাট পি সি সরকার ছিলেন, তাঁর জীবদ্দশাতেই একজন কিংবদন্তী। পৃথিবীর যে দেশে যখনই গিয়েছেন সেখানকার সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছেন তিনিই। এমনই একজন মঞ্চশিল্পী, যাঁকে নিয়ে বিভিন্ন সময়েই মজাদার সব কার্টুন ছবি এঁকেছেন পৃথিবীর বিশিষ্ট চিত্রশিল্পীরা। এমন ভারতীয় মঞ্চশিল্পীর আর বিকল্প কোনও হদিশ পাওয়া যায় না বলেই মনে করা যায়। জাদুসম্রাট পি সি সরকারের তুলনা তিনি নিজেই। তাঁর মঞ্চজাদু প্রদর্শন দেখে শুধু সাধারণ দর্শকরাই মোহিত হননি। দেশ বিদেশের রাজা-রাণী, নেতা, মন্ত্রী, রাষ্ট্রনায়ক, বিশিষ্টজনেরাও মুগ্ধ হয়েছেন এবং সময়ে সময়ে তাঁর গুণগ্রাহী ভক্ততেও পরিণত হয়েছেন। (P C Sorcar)

তাঁকে নিয়ে আঁকা ছবি, কার্টুন এসব কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দেশে দেশান্তরে। সেসবের মধ্যে থেকেও যেটুকুর সন্ধান পাওয়া গেল, তা দেখে চমকিত হতেই হয়। চল্লিশের দশকে ভারত বিখ্যাত কার্টুনিস্ট ছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র লাহিড়ী, যিনি কাফি খাঁ নামে পরিচিত, তিনি পিসিএল নামেও ছবি আঁকতেন। তিনি জাদুসম্রাট পি সি সরকারকে নিয়ে বহু কার্টুন ছবি এঁকেছেন। তৎকালীন সময়ের অমৃত বাজার পত্রিকায় প্রকাশিত আঁকার একটিতে- তিনটি চরিত্র, যার মধ্যে মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা এক খর্বকায় মানুষ তাঁর বাম দিকে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের বেল্ট ধরে ডান দিকের জাদুকরের দিকে কিছু বলছেন, আর নীচে লেখা আছে “আমি এই ভারতীয় হুডিনির দেখে ভয় পাই”। আবার সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও জাদুসম্রাটকে নিয়ে বিভিন্ন রকম ভাবে ছবি এঁকেছেন তিনি। ১৯৪১ সালের জুন মাসে আঁকা একটি কার্টুনে দেখা যায় ‘শের-ই-বেঙ্গল’ ফজলুল হক, জাদুসম্রাট পি সি সরকারকে কিছু বলছেন। ছবির নীচে লেখা আছে “আমরা সকলে সরকারের পক্ষ্যে পদত্যাগ করছি”। এখানে সরকার অর্থে পি সি সরকারকেই বোঝানো হয়েছে। ব্যক্তি চরিত্রকে কেন্দ্র করে ছবির মাধ্যমে যে রসবোধ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তা এসব ছবিগুলি দেখলেই বোঝা যায়। (P C Sorcar)
আরও পড়ুন: বিশ্বনাগরিক চার্লি চ্যাপলিন
(P C Sorcar) আমেরিকা থেকে প্রকাশিত, ১৯৪৬ সালের জুন মাসের ‘দি লিংকিং রিং’ পত্রিকার ২৩ পৃষ্ঠায় ‘পৃথিবীর বিস্ময়কর জাদুকর’ এই নিয়ে একটি কার্টুনে জাদুসম্রাট পি সি সরকারই ছিলেন মধ্যমণি। ১৯৫০ সালের মে মাসে আমেরিকার চিকাগ’র ডবলু জি এন টেলিভিশনে পি সি সরকারের ম্যাজিক প্রদর্শনের পর শিল্পী নিউটন, পি সি সরকারের মুখাবয়বের যে রেখা চিত্র আঁকেন। তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। তাঁর দেখানো মঞ্চজাদুবিদ্যায় যখন দর্শকরা বিভোর তখন তিনি টেলিভিশনের ডাকেও সেখানে ম্যাজিক প্রদর্শন করে সফল হয়েছেন। ১৯৫১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ‘ফিল্ম ইণ্ডিয়া’ পত্রিকাতেও তাঁর নেতাদের নিয়ে জিভ কাটার ম্যাজিক প্রদর্শনের ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর বেশ শোরগোল পড়ে যায় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে।
পি সি সরকারের ম্যাজিক প্রদর্শনের পর শিল্পী নিউটন, পি সি সরকারের মুখাবয়বের যে রেখা চিত্র আঁকেন। তা দ্রুত ছড়িয়ে পরে সর্বত্র।
১৯৫৫ সালে ১৮ ই নভেম্বর প্যারিসের ‘লে ফিগারো’ পত্রিকায় পি সি সরকারের জিভ কাটার খেলা ‘টাং টুইস্টার’ দেখানোর মুহূর্তের ছবি কার্টুন আকারে প্রথম আঁকা হয়েছে। এই একই বছরের ২৩ নভেম্বর ‘সান্স পারোলিস’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি কার্টুনে দেখা যায় দেওয়ালে সাঁটানো পি সি সরকারের পোস্টার দেখে পথচারী মানুষও উড়ে উড়ে তাঁর কাছে চলে আসছে। অর্থাৎ তিনি নিজেই যে অসম্ভব আকর্ষণীয় ছিলেন, তা শিল্পীদের এসকল ভাবনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। ১৯৫৫ সালের ২৭ শে নভেম্বর ‘নাইসি ম্যাটিন’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত ‘ম্যাজিশিয়ান সরকার’ শিরোনামে কার্টুন ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন নারীর সামনে দাঁড়িয়ে জাদুকর। ঐ একই সময়ে প্যারিসে তাঁকে নিয়ে কার্টুন চিত্র এঁকেছিলেন ফ্রেঞ্চ কার্টুনিস্ট জিন বউলেট। জাদুসম্রাটের অনেক অল্প বয়সের ছবি সেখানে ফুটে উঠেছে। (P C Sorcar)

১৯৫৬ সালের ১৩ জানুয়ারি ফ্রান্সের ‘প্যারিস নরম্যানডাই’তে প্রকাশিত তিনটি ব্লকের কার্টুনে দুইজন মানুষের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়াকেই দেখানো হয়েছে, যার মধ্যে একজন পি সি সরকারের বিজ্ঞাপন নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, আর যিনি তা দেখছেন তিনিও শুধু পি সি সরকারের চোখ দেখেই সম্মোহিত হয়ে সেই বিজ্ঞাপনের পিছনে পিছনে উড়ে চলেছেন। অবশ্য এই সম্মোহন বিদ্যায় তখনই তিনি এত পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন যে সমাজের সকল স্তরের মানুষ আকৃষ্ট হতেন। আবার এই একই পত্রিকার ১৭ জানুয়ারিতে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটি ছেলে একজনকে জিভ বার করে ভাঙচি কাটছে, হঠাৎ তাদের পিছনে জাদুকর পি সি সরকার এক হাতে তাঁর সরকার লেখা বাক্স আর এক হাতে কাঁচি নিয়ে এগিয়ে আসছেন টাং টুইস্টার খেলা দেখানোর জন্য, যা দেখে সেই বাচ্চা ছেলেটি ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। (P C Sorcar)
১৯৫৬ সালের ১৫ই এপ্রিল লন্ডনের ‘সানডে ডিস্প্যাচ’-এ দেখা যায় সাজপোশাক পরে অন্যজনের জাদুকর সরকার সাজার এক অভিব্যাক্তি নিয়ে কার্টুন। মাত্র কয়েকদিন পরেই, ২৩ এপ্রিল লন্ডনেরই ‘ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড’ পত্রিকায় প্রকাশিত কার্টুনে এক ঝলকে দেখা যায় গৃহস্থের বাড়িতে টিভিতে জাদুকর পি সি সরকারের পেট কাটার ম্যাজিক দেখার যে উৎসাহ তা ছাপা হয়েছে। ১৯৫৭ সালের ১৬ ই অক্টোবর নিউজিল্যান্ড থেকে প্রকাশিত দি ওটাগো ডেইলি টাইমস খবরের কাগজেও তাঁকে নিয়ে কার্টুন ছবি প্রকাশ করেছে। পরের বছর ২ রা ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার সিডনী শহরে তাঁর ম্যাজিক শো চলাকালীন সময়ে সেখানকার ‘সানডে টেলিগ্রাফ’ খবরের কাগজে প্রকাশিত কার্টুনে দেখা যাচ্ছে পি সি সরকারের চমকদার জাদু প্রদর্শন, যেখানে একটি গাড়ির চাকার নীচে অনেক পেরেক আর গাড়ীর গায়ে লেখা আছে “সরকার ম্যাজিক অফ ইণ্ডিয়া”। (P C Sorcar)

(P C Sorcar) এমন ইঙ্গিতপূর্ণ কার্টুন চিত্র দেখেই বোঝা যায় তাঁর জাদু প্রদর্শনের ব্যাপ্তি কী পর্যায়ে ছিল। এই বছরের ৫ ই ফেব্রুয়ারি সেদেশের জাতীয় সংবাদপত্র ‘দ্যা বুলেটিন’-এ তাঁকে নিয়ে যে কার্টুন প্রকাশিত হয় সেখানে দেখা যাচ্ছে তাঁর পাগড়ি কে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করা হয়েছে। আবার ২২ ফেব্রুয়ারি অ্যাডিলেড থেকে প্রকাশিত ‘দি নিউস’ সংবাদপত্রের প্রকাশিত কার্টুন ছবিতে জাদুকর পি সি সরকার অ্যাডিলেডের পথে মানুষজনকে যে সম্মোহিত করছেন তা ফুটে উঠেছে। অর্থাৎ দেশের আপামর জনগণের মধ্যে পি সি সরকারের ম্যাজিক শো-এর ব্যাপক প্রচারের জন্যই এসব কার্টুন যে দিনের পর দিন ধরে প্রকাশিত হতে থেকেছে তা বোঝাই যায়। ১৯৫৮ সালের ১৮ ই অক্টোবর আনন্দবাজার পত্রিকায় রেবতী ভূষণের আঁকায় আছে পৃথিবীকে নিয়েই ম্যাজিক দেখাচ্ছেন জাদুসম্রাট পি সি সরকার। এই ছবি দেখলেই বোধগম্য হয় যে পি সি সরকার সেসময় বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, ভারতীয় সংস্কৃতির পতাকা উড়িয়ে নিয়ে। ১৯৫৯ সালের ‘হসন্তিকা’ ৭ম খণ্ডে ‘শপ ম্যাজিক’ শিরোনামে শিল্পী শৈল চক্রবর্তী-র আঁকা চারটি ব্লকের কার্টুন প্রকাশিত হয়েছিল। যেখানে পি সি সরকার ও পি সি সেন এই দুজনই কার্টুনের মুখ্য চরিত্র। উল্লেখ্য এটি তৎকালীন রাজনীতির প্রেক্ষাপটে যে অঙ্কিত হয়েছিল তা বোঝাই যায়। (P C Sorcar)
আরও পড়ুন: সিনেমা যখন মানুষতন্ত্রের আয়না
আবার ১৯৬০ সালের এপ্রিল মাসের ‘নব কল্লোল’ পত্রিকার ৮৯ পৃষ্ঠার ছবিতে আছে- ‘পৃথিবীর বিস্ময় পি সি সরকার’ যিনি একটি গ্লোব সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আর তাঁর সামনে তাসের কার্ড সাজিয়ে লেখা আছে ‘ওয়ান্ডার’। এই ছবিরও শিল্পী ছিলেন শ্রী শৈল চক্রবর্তী। জাদুসম্রাট পি সি সরকার জাপান দেশকে মনেপ্রাণে ভালোবেসে ফেলেছিলেন, একাধিকবার তাঁর ম্যাজিক শো প্রদর্শন করেছেন সেখানে। জাপানে তাঁর পরিচিতিও ছিল বেশ গগনচুম্বী। ১৯৬৮ সালেই এই জাপান থেকে প্রকাশিত একাধিক কার্টুন কমিক্স ছাপা হয়েছিল পি সি সরকারকে নিয়ে। যেখানে তাঁর দেখানো ইন্ডিয়ান রোপ ট্রিক, কামান চালানো, এক্সরে আই, মানুষ কাটা, তাসের খেলা, ওয়াটার অফ ইণ্ডিয়া, শূন্যে গাড়ি ভাসানো এসব একাধিক বিষয়ে ছবি আঁকা হয়েছে। (P C Sorcar)

১৯৬৯ সালের ৭ ই ডিসেম্বর, নতুন দিল্লী থেকে প্রকাশিত দি হিন্দুস্থান টাইমস পত্রিকায় ‘দি ফ্যাকাল্টি অফ ছু মান্তর’ শিরোনামে কার্টুনে দেখা যায় পরীক্ষা ভীতিকেও ছু মন্তর করে ভ্যানিশ করে দিচ্ছে ছাত্ররা। জাদুকর পি সি সরকার যে কী অসম্ভব প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছেন শিল্পীদের মনজগতে। ১৯৭০ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ‘শঙ্কর’স উইক্লি’তে সরকার শিরোনামে তাঁর কার্টুন চিত্রে দেখা যায় জাদুদণ্ড নিয়ে সম্মুখপানে দাঁড়িয়ে জাদুসম্রাট পি সি সরকার। একই বছরে যুগান্তর পত্রিকায় নভেম্বর মাসে তৎকালীন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাদুকর পি সি সরকারকে নিয়ে একাধিক কার্টুনচিত্র প্রকাশিত হয়। যেখানে দেখা যায় রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের ইচ্ছাধীন ম্যাজিককে ব্যবহার করছেন। (P C Sorcar)
(P C Sorcar) তবে ১৯৭১ সালে তাঁর মৃত্যুর পর শিল্পী সুফির আঁকা কার্টুনে দেখা যায় প্রথম ছবিতে জাদুকর পি সি সরকারের পাগড়িসহ মুখমণ্ডল উপস্থিত থাকলেও তার ঠিক নীচের ছবিতে শুধুই পাগড়ি আছে- যা ‘শেষ ম্যাজিক’ হিসাবে লিখিতও হয়েছে। তাঁর মৃত্যু পরবর্তী হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় চণ্ডী লাহিড়ী আঁকেন জাদুসম্রাট পি সি সরকারের ছবি, যেখানে শূন্যে ভাসমান একটি চেয়ারে বসে তিনি, যার নীচে আইফেল টাওয়ার বিগবেন প্রভৃতি। রাজার মৃত্যু হলেও, জাদুকরদের রাজা যে অমর তাও লিখে দেওয়া হয়েছিল এই কার্টুন ছবিতে। জাদুসম্রাট পি সি সরকার চোখ বেঁধে জনবহুল রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে সমগ্র পৃথিবীবাসীকে চমকে দিয়েছিলেন।
তাঁর মৃত্যু পরবর্তী হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় চণ্ডী লাহিড়ী আঁকেন জাদুসম্রাট পি সি সরকারের ছবি, যেখানে শূন্যে ভাসমান একটি চেয়ারে বসে তিনি, যার নীচে আইফেল টাওয়ার বিগবেন প্রভৃতি।
(P C Sorcar) কার্টুনশিল্পী কাফি খাঁ এই বিষয় নির্ভর করে অসাধারণ একটি কার্টুনচিত্র আঁকেন, যার শিরোনাম হল- ‘দি নিউ এভারেস্ট ক্লাইম্বার’। ছবিতে শিল্পীর তুলিতে ফুটে উঠেছে জাদুসম্রাট চোখ বাঁধা ও পিছমোড়া করে বাঁধা দুই হাত অবস্থায় প্যারিসের খাড়াই আইফেল টাওয়ায়ের ওপরের দিকে অবলীলাক্রমে হেঁটে উঠে যাচ্ছেন। এই ছবিটি ‘অ্যাক্মি নিউসপিকচারস’ ও ‘ইউনাইটেড প্রেসে’ বহুল প্রচারিত হয়েছিল। শিল্পীর সৃষ্টি এমন ছবি দেখলে সত্যই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। আবার ভারতীয় শীর্ষস্থানীয় চিত্রশিল্পী রেবতীভূষণ, জাদুসম্রাট পি সি সরকারকে নিয়ে চমকদার সব কার্টুন এঁকেছেন। দৈনিক যুগান্তর সংবাদপত্রে সেসব সফলভাবে প্রকাশিতও হয়েছে। কেবলমাত্র কালো কালির ছোঁয়ায় পি সি সরকারের রাজমুকুটসহ হাসি মুখের ছবি একটা সময়ে বিশেষ বিখ্যাত হয়েছিল। করাত দিয়ে পেট কাটা, তাসের ম্যাজিক প্রভৃতি নিয়েও তিনি একাধিক কার্টুন এঁকেছেন। (P C Sorcar)
আরও পড়ুন: নীরবে নিতান্ত অবনত বসন্তের সর্ব-সমর্পণ
জাদুসম্রাট পি সি সরকারকে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এত যে কার্টুন চিত্র প্রকাশিত হয়েছে তাতে তাঁর সুউচ্চ খ্যাতির কথাই স্পষ্ট ইঙ্গিত করে। এক বাঙালি শিল্পী তাঁর জীবদ্দশাতেই ভারতীয় পতাকা নিয়ে পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে যে সফল মঞ্চ প্রদর্শন করেছেন তা আজও বিস্ময়কর ঘটনা। বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁর বিজয় পতাকা উড়েছিল পত পত করে। তাঁর জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো যায় যেকোনও ভাবেই। কিন্তু আপাত হাসির ছলে তাঁকে নিয়ে যে সকল কার্টুনচিত্র প্রকাশিত হয়েছে, তা সব দেখার পর আজও অবাক হতেই হয়। এখনও বোধহয় তাঁর জাদু প্রদর্শন সামনে থেকে দেখার মনবাসনা বাঁচিয়ে রেখেছেন অগণিত মানুষ। জন্মশতবর্ষ অতিক্রম করে এসেও, মানুষের হৃদয়ে আজও উজ্জ্বল নাম জাদুসম্রাট পি সি সরকার। (P C Sorcar)
সংগ্ৰাহক ও সুন্দরবন বিষয়ক গবেষক,
ফোকলোর বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।