এখানকার লোকেরা সিগারেট খাওয়ার জন্য যুক্তি একখান বানাইছে। কী শুনবেন? তাদের ট্যাক্সের টাকায় নাকি বাংলাদেশের পদ্মাসেতু হয়েছে। তারা ট্যাক্স না দিলে নাকি যমুনাসেতু, পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল কিছুই হত না। আর আমাদের দুর্দশার নাকি শেষই হত না।
আরও একটা নতুন যুক্তি আছে বই না পড়া লোকদের। তারা বই (Book) না পড়ার কারণে নাকি আজও পরিবেশ টিকে আছে। প্রতিটি মানুষ মাসে ১টা বই (Book) পড়লে বইয়ের কাগজ বানাতে যে গাছ কাটতে হচ্ছে সেই গাছগুলো এখনও দিব্যি বেঁচে আছে আর আমাদের অক্সিজেন দিয়ে যাচ্ছে।
তবে যারা এমন কথা বলে তাদেরকে আমি কখনও পরিবেশের কোনও উপকার করতে দেখিনি। অন্য কেউ দেখলে জানাবেন। এমনকি এদের মধ্যে শতকরা ২/১ জন ব্যতিত বাকিদের ডিজিটাল বইও পড়তে দেখিনি।
যাই হোক মানুষ যখন ঠিক কাজটা না করে তখন সেটা আরও বেশি না করার জন্য কিছু মোটিভেশন দরকার হয়।

বই পড়ার অপরাধ
বই পড়ার অপরাধে যুগে যুগে কত মানুষ যে কত জনের বিরাগভাজন হয়েছেন আর নানারকম হাস্যকর উপাধি পেয়েছেন তার হিসেব কে আর রাখে? ভাগ্য ভালো যে, বই না পড়ার জন্য কোনও উপাধি দেওয়া হয় না। যদি হত তাহলে অনেক বেশি উপাধির প্রয়োজন হত, অথবা একটি উপাধি অনেক লোককে দিতে হত।
যারা সংখ্যায় কম তারাই উপাধি পায়। সেটা ভালো অর্থে হোক কিংবা মন্দ অর্থে। যেমন, প্রমথ চৌধুরী পেয়েছিলেন ‘উদাসীন গ্রন্থকীট’ নামের বিশেষ উপাধি। একবার ভেবে দেখুন, এটা যদি বংশ পরম্পরায় ব্যবহার হত তাহলে তার নাম হত ‘প্রমথ উদাসীন গ্রন্থকীট’। অথবা ‘উদাসীন গ্রন্থকীট প্রমথ চৌধুরী’। অবশ্য আজকালকার ছেলেদের মধ্যে তারা হয়তো এটাকে একটা উচ্চমর্যাদার উপাধি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে নিত, নয়তো এটার সংক্ষিপ্ত রূপ করে নিত, যেমন ‘ইউ জি প্রমথ চৌধুরী’। সেটাই তো হচ্ছে চারদিকে। নামের বাহার দেখে তো তাই মনে হয়।
বিদ্যা নাকি বীণা?
বই পড়ার নেশা নিয়ে প্রমথ চৌধরী লিখেছেন, ‘‘চা পান করলে নেশা হয় না অথচ ফুর্তি হয়। চা পান করলে নেশা না হোক, চা-পানের নেশা হয়। সংবাদপত্র সম্বন্ধে ঐ একই কথা খাটে। তার পর অতিরিক্ত চা-পানের ফলে মানুষের যেমন আহারে অরুচি হয়, অতিরিক্ত সংবাদপত্র পাঠের ফলেও মানুষের তেমনি সাহিত্যে অরুচি হয়। ’’
তাহলে অতিরিক্ত টিভি দেখা, ফেসবুক ইউটিউব দেখা কী পরিমাণ বদহজম নিয়ে আসতে পারে? ভাবা যায়?

লোকে বলে বীণা আর বিদ্যা দুইই সরস্বতীর দান। কেউ না হয় বিদ্যা নিল, কেউ নিল বীণা। হয়তো বা কেউ নিল বিদ্যে বেশি, কেউ বীণা নিল অধিক। ক্ষতি কী? দেবী তো দুই হাতে দুই বর দিতেই নেমেছেন মর্ত্যে।
স্ট্যাচু অব লিবার্টি দেখেননি? সেও তো এক হাতে বই আর অন্য হাতে মশাল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু বই…বই… আর বিদ্যা… বিদ্যা…করলে চলে?
না চলে না।
আরে তাই বলে বইকে অচ্ছুৎ করে দিয়ে কেবল রঙিন সালুর লীলায় মাতলে হবে? নজরুলের ‘‘একহাতে মম বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতুর্য’’ সেকথায় আর না-ই বা গেলাম। তাহলে এই লেখাটি যুদ্ধ অথবা বাঁশি বিষয়ে লিখতে হবে।
প্রমথ চৌধুরী এও লিখেছেন, ‘‘বই পড়ার শখটা মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ শখ হলেও আমি কাউকে শখ হিসেবে বই পড়তে পরামর্শ দিতে চাই নে।
প্রথমতঃ সে পরামর্শ কেউ গ্রাহ্য করবে না, কেননা আমরা জাত হিসেবে শৌখিন নই; দ্বিতীয়তঃ অনেকে তা কুপরামর্শ মনে করবে, কেননা আমাদের এখন ঠিক শখ করবার সময় নয়।
আমাদের এই রোগশোক-দুঃখদারিদ্র্যের দেশে জীবনধারণ করাই যখন হয়েছে প্রধান সমস্যা, তখন সে জীবনকে সুন্দর করা আর মহৎ করার প্রস্তাব অনেকের কাছেই নিরর্থক এবং সম্ভবত নির্মমও ঠেকবে।’’
বুঝতেই পারছেন, সে কালেও একথা মুখ ফুটে কেউ একজন কয়েছিল যে, সাহিত্য বা বই শুধু বিনোদনের জন্য নয়, উন্নতির জন্য পড়তে হবে বৈ কি?
বই পড়া আর বই কেনা নিয়ে আরও এক কাঠি সরেস রম্য বাঙালিকে উপহার দিয়েছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলী, আর সেটা বাঙালির বই নিয়ে বালখিল্যতা দেখে। তিনি ওমর খৈয়ামের বরাতে লিখেছেন, ‘‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত-যৌবনা-যদি তেমন বই হয়।’’

বই কিনে দেউলিয়া বই পড়ে আউলিয়া!
বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না? কথা সত্য। বই পড়ে কি কেউ আউলিয়া হয়? এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া সহজ, কারণ বই না পড়ে কিংবা বিদ্যা শিক্ষা না করে তো আর কেউ আউলিয়া হয়নি।
মরি মরি, বই পড়েই যদি পীর, মুর্শিদ, আউলিয়া আর গুরু হবে, ভদ্র আর শিক্ষিত হবে তাহলে এত এত চুরি চামারি, দুর্নীতি, বিদেশে টাকা পাচার এসব করছে কোন বর্গিরা। এখানেই আমাদের ভাবনার ফারাক। সঠিক বিদ্যা, সঠিক বই যদি না পড়েন তাহলে আপনার মননের মুক্তি দুরূহ। ওই পাঠশালার পরীক্ষায় যে বই থেকে প্রশ্ন আসে সে বই যদি আত্মার মুক্তি দিত, তাহলে কোনও আত্মাই দুরাত্মার কালিমায় ঢেকে যেত না।
পণ্ডিতেরা বলেন, যত গন্ডা দোষ ওই ব্রিটিশদের।
আমাদের গাছতলার পণ্ডিতেরা তাদের পাঠশালায় যে বিদ্যা-শিক্ষা দিত, তাতে কতেক ছিল অক্ষরজ্ঞান আর বেশিরভাগ ছিল মানুষ হওয়ার ছবক। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার স্কুল বানিয়ে সেখানে পরীক্ষা আর সনদ দেওয়ার বাহানায় কেবল পাশ করা বিদ্যার বহর কিংবা নহর তৈরি করেছিল। সেখানে মানুষ হয়ে মানুষের জন্য কাজ করার কথা চাপাই পড়ে গেল। কিন্তু ব্রিটিশরা অন্তত আমাদের চেয়ে বেশি পড়ে। সে কথা কি আর হলফ করে বলার দরকার আছে?

কেউ বা বলেন, মানুষ তো হতে হয় নিজের ভেতর থেকে মানবিক চর্চার মাধ্যমে। স্কুল আর কলেজের কী দোষ! তারা তো কেবল রাস্তা দেখায়। বই পড়ে নিজেকে যে গড়ে তুলবে সে স্কুলের বইতে আটকে থাকবে। তাহলে তো আমরা একজন রবীন্দ্রনাথ, একজন নজরুল পেতাম না। ভাগ্যিস তাঁরা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ কিংবা এ-প্লাস পেয়ে বড় চাকরি পাওয়ার জন্য লেখাপড়া করেননি। তাহলে আমরা বাংলা সাহিত্য, দর্শনে যে উৎকর্ষতা পেয়েছিলাম; পরে যা আমাদের সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি ও জীবনধারায় প্রবাহিত হয়েছিল, তা থেকে নিশ্চিত বঞ্চিত হতাম।
আর বই কেন পড়ছি? বিদ্যা কেন দাগছি? সে কারণটিও মনে রাখা জরুরি। যদি শুরুতেই গলদ বা নিয়তেই গরমিল থাকে তাহলে আমার রসাতল ঠেকায় কে?
শুধুমাত্র তক্ষশীলার ব্যাকরণ, রেওয়ামীলের অন্ত্যমিল পড়লে লেখাপড়া হয় না বা শিক্ষা সম্পন্ন হয় না, চিন্তায় পূর্ণতা আসে না, আচরণের সাবালকতাও থাকে দূরে। স্বামী বিবেকানন্দের মতে, শিক্ষা পরিপূর্ণতার এক প্রকাশ। তা মানুষের মধ্যেই থাকে। তিনি বলতে চেয়েছেন, এটা খুব বেদনার বিষয় যে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা কোনও মানুষকে সত্যিকার অর্থে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে না, বা মানুষের মধ্যে আত্মনির্ভরতা ও আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে তুলতে কাজ করে না। কথা তো সেটাই হল যে, বিদ্যালয়-নির্ভর শিক্ষা আসল বা পূর্ণ শিক্ষা নয়। পূর্ণ শিক্ষা তার বাইরে রয়েছে। সেটা মানুষের জীবনধারায় আছে, প্রকৃতিতে আছে, ইতিহাসে আছে। বলাবাহুল্য জ্ঞানের বাহক নানা বইতেও আছে।

পড়াশোনাহীন অশিক্ষিত?
আমি একজন জ্ঞানী মানুষকে জানি। বিভিন্ন বিষয়ে কথা উঠলে তিনি চট করে বলতেন ‘পড়াশোনা নেই’, মানে লোকটাকে একরকম ‘অশিক্ষিত’ বলা হল। প্রথমবার বেশ ধাক্কা খেলেও পরে বুঝেছি উনি আসলে সেইসব লোকদের অশিক্ষিত মনে করেন যারা এইকালে শুধু স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যবইয়ের জোরে বড় বড় চেয়ার দখল করে বসে আছেন। তার বাইরে সাহিত্য ও জ্ঞানের কোনও বই পড়েন না, ইতিহাস কিংবা বিজ্ঞান জানেন না, প্রযুক্তি কিংবা শিষ্টাচারও আয়ত্ত করেননি। জীবনের আসল অর্থপূর্ণ বিদ্যা অর্জন না করে কেবল মেশিনের মতো কলম চালানোর বিদ্যা তো প্রকৃত শিক্ষা নয়। সে বড়জোর কলম বেচা মজুর। সেটাও যথার্থ কিনা, ভেবে দেখার অবকাশ আছে বৈ কি?
চোখের আলো
আমি জ্ঞানী ও পড়ুয়া মানুষদের সান্নিধ্য পেতে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করতে পছন্দ করি। তাঁদের জ্ঞানের আলোয় আমার অন্ধকার হৃদয় আলোকিত করার চেষ্টা করি। একটা স্মৃতি আমার মনে পড়ছে, এমনই একজন মানুষের কাছে একদিন শুনলাম, তিনি বললেন ’’একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। ছাত্রদের সাথে কথা বলেছিলাম। তাদের চোখে আলো দেখতে পাইনি। শিক্ষিত মানুষের চোখে আলো থাকে। তাদের চোখে নেই।’’ এর পর থেকে আমি মানুষের চোখে আলো খুঁজি।
কথাটি অদ্ভুত হলেও সত্য যে, আমি শিক্ষিত মানুষ ছাড়া অন্যদের চোখে আলো দেখি না, দৃষ্টির গভীরতা দেখি না এবং বুদ্ধির দীপ্তি দেখি না। আমি সনদ বা সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিতদের কথা বলছি না, আমি প্রকৃত বিদ্যা শিক্ষায় শিক্ষিতদের কথা বলছি।

একখানা বই
সৈয়দ আলী তাঁর ‘বই কেনা’ প্রবন্ধে একখান মোক্ষম কৌতুক করেছিলেন, ‘‘বিহারিণী গিয়েছেন বাজারে স্বামীর জন্মদিনের জন্য সওগাত কিনতে। দোকানদার এটা দেখায়, সেটা শোঁকায়, এটা নাড়ে, সেটা কাড়ে, কিন্তু গরবিনী ধনীর (উভয়ার্থে) কিছুই আর মনঃপূত হয় না। সব কিছুই তার স্বামীর ভাণ্ডারে রয়েছে। শেষটায় দোকানদার নিরাশ হয়ে বললে, ‘তবে একখানা ভাল বই দিলে হয় না?’ গরবিনী নাসিকা কুঞ্চিত করে বললেন, ‘সেও তো ওঁর একখানা রয়েছে।’
বিহারিণীর চেয়ে খুব বেশি দূর এগোয়নি একালের সমাজ। কারও বিদ্যালয়-জীবন পার হওয়ার পর তারা ভাবছে দুনিয়ার তাবৎ বিদ্যা তাদের হাতের মুঠোয়, আর লেখাপড়ার দরকার নেই। পরীক্ষা কিংবা ফলাফলের পর আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের প্রথম কাজ হল পুরনো বইগুলো বস্তায় ভরে ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি করে দেওয়া। কী ভয়ংকর! সে তো সেই বই ভাণ্ডারের সব শিক্ষা শিখতেই পারেনি, তার উপর সামনে কত কাজ আর জীবন রয়েছে পড়ে। ভাগ্য ভালো যে সে বই তো বিদ্যার ভাণ্ডার অতি যৎসামান্য আর সীমিত। নইলে সব বিদ্যা খোপে পুরেছি ভেবে বিদ্যার বই আবর্জনায় ফেলার চর্চা আরও বেশি ভয়ংকর হত।
যদি কলেজের পাঠ্যবই বেচে আরও কিছু জ্ঞানের বই কেউ সংগ্রহ করেন, কোনোকালে, তবে তথাস্তু। যদিও জ্ঞানীরা বলবেন, এই মড়ার দেশের পাঠ্যবইতে আর কী-ই বা থাকে? কিন্তু যার বাইরের বিদ্যার খবর নেই, তার জন্য পাঠ্যবিদ্যাটাও ঠিকভাবে হজম করলে মন্দ কি? অন্তত বেচে দেওয়ার আগে।

একালেও ঘরের কোণে সুদৃশ্য বইয়ের দেরাজখানা যদি ভরে যায়, তাহলে মনে হয় আর বই কেনার দরকার কী? দেরাজে জায়গা তো নেই। আরও আছে। এখনকার সময়ে টাকার দেরাজের মতো কিংবা সোনার দেরাজের মতো বইয়ের দেরাজেও পাকাভাবে তালা দেওয়া যায়, যাতে বইটি কেউ ধরতে না পারে।
আহা রে! বাংলার এই দেশের লোকেরা বইকে টাকার মতোই আদর, ভালোবাসা আর মানমর্যাদা দিয়ে যত্ন করে। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় বেরসিক লেখকেরা বাঙালির বই-প্রীতি দেখে না, দেখে কেবল গ্রন্থভীতি।
বইয়ের এই উপস্থাপন দেখে মনে হয় এগুলো বই নয়, বইয়ের পুতুল। তালায় আবদ্ধ হলেও তা স্বচ্ছ গ্লাসের আলমারিতে থাকে তো। নেহায়েত মনে মানবে না, তা না হলে এই দূরাচারের দেশে আলমারির জন্য দামি দামি বইয়ের ডামি বা বাক্স বিক্রি করলে বেশ ভালো বিক্রি হবে বই কি? মানে বই সাজিয়ে রাখার চেয়ে বইয়ের ছবি সাজিয়ে রাখলেই তো হয়। ছবিও পড়া হবে না, বইও না।
বাঙালি, বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষের কাছে এখন ওই বই বলতে ক্লাসের বই, দোকানের হিসেবের বই এসবই পুষ্যি। বড়জোর যাত্রাপালা, নাটক আর সিনেমার গল্পকে বই বলতে শিখেছে। সে বেলতলাতে যাওয়ার জন্যও ন্যাড়ার অভাব আছে বৈকি? এমনকি ধর্মের কেতাবও তার কাছে দুফোঁটা চোখের জল ফেলে দু-দণ্ড আখেরি মোনাজাতের দায় চুকালে ভাবে ল্যাঠা চুকে যায়। তার পঠনপাঠনও কম, চলন মানন তো আরও কম। তাহলে বাঙালি করেটা কী?

আমরা কোন পথে?
আমি বলি, আমরা বড় বেশি হাততালি দিতে পছন্দ করি। উদার জাতি তো। অন্যেরা খেলবে, আমরা হাততালি দেব। অন্যরা পড়বে আমরা দেখব। অন্যরা বলবে আমরা তালিয়া বাজাব। এভাবেই চলছে বলা যায়।
কিন্তু এটা আমরা অন্যভাবে চিন্তা করতে পারি না? আমরা খেলা দেখাব, অন্যরা দেখবে। আমরা নতুন কথা বল্ অন্যরা হাততালি দেব। আমরা পথ তৈরি করব, অন্যরা অনুসরণ করবে। আমরা বলব, অন্যরা শুনবে। আমরা লিখব, সবাই পড়বে।
হাঁ পারি তো। তার জন্য শিখতে হবে, জানতে হবে, মানতে হবে এবং আসল কথা পড়তে হবে।
এই রে সেরেছে! আবার সে পড়া?
ফ্রান্সিস বেকন মনে করতেন, ভিন্ন ভিন্ন ব্যায়াম যেমন ভিন্ন ভিন্ন শারীরিক সমস্যার সমাধান দিতে পারে, বইপাঠ তেমনি দিতে পারে মন বা বুদ্ধিচর্চার সমস্যা সংক্রান্ত সমাধান। তিনি মনে করতেন, তিনটি আবিষ্কার মানুষকে আদিমতা থেকে আধুনিকতার পথে নিয়ে গেছে। প্রিন্টিং প্রেস, গান পাউডার আর ম্যাগনেট। ছাপাখানার সাফল্য হল বই।
আমি সামাজিক বক্তৃতায় লোকেদের প্রশ্ন করি। এই মুহূর্তে আপনার সঙ্গে যে সহচর থলে বা ব্যাগটি রয়েছে তাতে আপনার দরকারি জিনিসপত্রের সঙ্গে কতজন মানুষের কাছে বই আছে? শতকরা ১/২ জন ব্যতিত বাকি মানুষেরা আমাকে হতাশ করেন এবং এহেন প্রশ্নের জন্য তাঁরাও হতাশ হন। তাহলে মুক্তি কিংবা উন্নয়ন, ভালো থাকা কিংবা আনন্দে থাকার চাবি সঙ্গে না রাখলে তা খুঁজে পেতে কষ্ট হবে। সে কথা আর বলতে! বলা বাহুল্য রমণীকূলের লোকেরা যেহেতু সঙ্গে ব্যাগ রাখেন আর ব্যাগে সাজনগোজনের জিনিস রাখেন, তারা মনে মনে আমার উপর চটেও যেতে পারেন। তাই এমন প্রশ্নের জন্য পাঠকের কাছে গোস্তাকি মাফই চাইব।
ছবি সৌজন্য: Istock, Shutter stock, Adobe Stock, Wikimedia Commons,
একজন বাংলাদেশী লেখক, পর্যটক ও সমাজকর্মী। পেশায় একজন কমার্শিয়াল কনটেন্ট রাইটার। লেখালেখি করেন ছাত্রজীবন থেকে। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৬টি। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সর্ব উত্তর প্রান্ত থেকে সর্বদক্ষিণ প্রান্ত পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করেন। ৪৬ দিনে ১২৭৬ কিলোমিটার পদব্রজে ভ্রমণের গল্প নিয়েও রয়েছে তাঁর একটি বই। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নাগরিক সেবার মান উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় ২০২১ সালে বাংলাদেশের আইসিটি খাতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার' অর্জন করেন। লেখালেখিতেও পেয়েছেন তিনটি জাতীয় পুরস্কার। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং ই-কমসার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।