banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

বইমেলা ও ভাষা সংসদ

বিতস্তা ঘোষাল

জানুয়ারি ২৫, ২০২৪

Bookfair 2024 and Bhasha Samsad books
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

বইমেলা এলেই একটা গান আমাকে খুব টানে ‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছ!এখন মনে হতে পারে, বইমেলায় সর্বক্ষণ বেজে চলা ‘বই ডাকছে বই…’ বাদ দিয়ে এই গানটা কেন আমার মাথায় ঘোরে! আসলে বইমেলায় স্টল পাওয়াটা অনেকটা চাকরি পাওয়ার মতোই মনে হয় আমার। লটারির মাধ্যমে স্টল পাওয়ার পর তা ঠিক জায়গায় হল কিনা থেকে শুরু করে বই সঠিক সময় মাঠে এল তো! ঠিক মতো পাঠক আদৃত হচ্ছে, নাকি স্টলে এলেন না পাঠক — এই পুরো সময়টাই খালি মনে হয়, চাকরিটা পাকা হবে তো! টিকিয়ে রাখতে পারব তো!

আরও পড়ুন: গান গেয়ে গোটা বইমেলা ঘুরলাম বাবার সঙ্গে…

ভাষা সংসদের (Bhasha Samsad) নাম উঠলেই পাঠক, লেখক সকলের মাথাতেই আসলে কতগুলো কথা ঘুরপাক খায়। ভাষা সংসদ মানেই কেবল অনুবাদের বই। কারণ ভাষা সংসদ ও অনুবাদ পত্রিকা সমার্থক। কাজেই অন্য রকম বই এখানে পাওয়া যায় না। পাঠক এটা মাথাতে ঢুকিয়ে নিয়েই যেহেতু আমাদের স্টলে ঢোকেন, ফলে প্রকাশক হিসাবে একটা চাপ অনুভব করি।

একথা ঠিক, ভাষা সংসদ (Bhasha Samsad) অনুবাদ সাহিত্য নিয়ে দীর্ঘকাল কাজ করছে, অনুবাদ পত্রিকা শুধুমাত্র অনুবাদ সাহিত্যেরই একমাত্র বাংলা পত্রিকা, কিন্তু ভাষা সংসদ শুধুমাত্র অনুবাদ সাহিত্য-নির্ভর নয়। হ্যাঁ, আমরা গতানুগতিক বই হয়তো কম করি, কিন্তু করি না, বললে মিথ্যে বলা হয়। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, যে কোনও গ্রন্থের-ই পাঠক আছে। আর বইয়ের ভালো-মন্দ বলে কিছু হয় না। প্রতিটি গ্রন্থের নিজস্ব আলো রয়েছে। সেই আলোর রেশ একেক জন পাঠকের কাছে একেকভাবে পৌঁছায়, এবং যাঁর যেটি পছন্দ তিনি সেটি নির্বাচন করেন। ফলে বই সর্বজনীন।

Bhasa Samsad

আমরা বই করার ক্ষেত্রে লেখক নয়, গুরুত্ব দিই লেখাকে। তাই শুধুমাত্র স্বনামধন্য লেখকের বইয়ের কাজ করব, এই থিওরিতে প্রথম থেকেই আমাদের আপত্তিআর এই কারণেই প্রতি বছর আমরা অনেক নতুন লেখকের বই করি। হয়তো আর্থিকভাবে তাতে বিশাল কিছু লাভবান হই না, কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি রাতারাতি রাস্তাঘাটে মূর্তিরূপী ঈশ্বরের জন্ম হলেও লেখকজন্ম একদিনে হয় না। এ এক দীর্ঘ যাত্রা। কাজেই তাঁদের হাতটা যদি একটু ধরে এগিয়ে দেওয়া যায় তবে আগামীদিনে তাঁরাই হয়তো শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠবেন।

ভাষা সংসদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আমার বাবা শ্রী বৈশম্পায়ন ঘোষাল। যার ট্যাগলাইন ছিল ‘বিভিন্ন ভাষায় চিন্তন প্রকাশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান’। আমার মা, অনুবাদক ও লেখক সোনালী ঘোষালের হাতের চুড়ি বাউটি বন্ধক রেখে তার পথচলা শুরু হয়েছিল, ১৯৭৫ সালের ২৬ জানুয়ারি। মা বলতেন, প্রকাশনা সংস্থার কাজ ছিল খুঁজে খুঁজে নতুন তরুণ লেখকদের বই প্রকাশ করা। এভাবেই প্রকাশিত হয়েছিল পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, সুনীল কুমার গাঙ্গুলী, সোমক দাস, অতুল দত্ত, অলোকেশ ভট্টাচার্য সহ একাধিক লেখকের প্রথম কবিতা ও উপন্যাসের বই। এর পাশাপাশি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় দাশ, পুষ্পিত মুখোপাধ্যায়, সুনীল বরণ রায় এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখকের বই প্রকাশিত হয়েছিল। বাবার উদ্দেশ্যই ছিল নতুন প্রজন্মকে পরিচিত করা পাঠকের দরবারে।

Baishampayan Ghosal

ময়দানে তখন বইমেলা। মনে আছে, আমি তখন বেশ ছোট। ভাষা সংসদের স্টলে নতুন-পুরোনো সকলের সমান কদর। এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি, ভাষা সংসদ প্রকাশনা সংস্থার পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব প্রেস নীল সরস্বতীর নাম তখন লেখা হত ব্যানারে, বিজ্ঞাপনে, বইয়ের তালিকায়। এই প্রেস তৈরির পেছনে একটা গল্প আছে। আমার বাবা কালী-সাধনা করতেন। সকলে তা জানতেন এবং বিশ্বাস করতেন বাবা কালী ও তন্ত্রসাধক। ব্যারাকপুরে পুলিশের ব্যারাকে একবার সরস্বতী পুজো হবে। বাবার আই পি এস বন্ধুরা বাবাকে বললেন, তোমাকে পুজো করতে হবে। বাবা প্রথাগত পুজো করতেন না। কিন্তু বন্ধুরা এমনভাবেই বাবাকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন যে বাবা বাধ্য হলেন পুজো করতে। সেই সময় তিনি সরস্বতীকে নীল তারা রূপে পুজো করেন। শুনেছি সেই সময় শ্বেত সরস্বতী পুরো নীল তারা হয়ে উঠেছিলেন। সেই থেকে আজও ব্যারাকে ওভাবেই সরস্বতীর পুজো হয়। বাবার বন্ধুরাই এরপর আমাদের প্রেসের নামকরণ করলেন ‘নীল সরস্বতী প্রেস’।

যে কথাটা বলছিলাম, তখন থেকেই ফোকাস ছিল নতুনদের উপর। আর যেহেতু অনুবাদ পত্রিকা মাসিক পত্রিকা ছিল সেই সময়, এবং তা পুরোটাই অনুবাদ-কেন্দ্রীক, তাই প্রকাশনা সংস্থা থেকে যত বই প্রকাশিত হয়েছে তার নব্বই শতাংশ বই-ই ছিল প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, সিনেমা বিষয়ক বা ভ্রমণ কাহিনি। অর্থাৎ তখন থেকে দুটো ধারাকেই নির্দিষ্টভাবে রাখা হয়েছিল।
আমরা এখনও সচেতনভাবে তা বজায় রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু এখন যেহেতু অনুবাদ একটা বৃহত্তর ক্ষেত্র, তাই আমরা সেটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অনুবাদ বইও প্রচুর পরিমাণে প্রকাশ করি। কিন্তু ভাষা সংসদ শুধু অনুবাদের বই করে— এই তথ্যটা সম্পূর্ণভাবে সত্য নয়।

Bitasta Ghosal

২০১০ থেকে আমি প্রকাশনার দায়িত্ব নেওয়ার পর চেষ্টা করেছি পূর্বতন ধারাটিকেই বজায় রাখতে, এবং বিখ্যাতদের পাশাপাশি যতটা সম্ভব কম পরিচিত ও একেবারেই নতুনদের নিয়ে কাজ করতে। আসলে বাবার মতো আমিও বিশ্বাস করি, প্রথিতযশাদের বই করতে সব প্রকাশনা সংস্থাই প্রস্তুত। কিন্তু নতুনদের জায়গা দিতে হবে। নইলে সাহিত্য জগত একটা সময় স্ট্যাগনেন্ট হয়ে যাবে।
প্রতি বছর-ই এই আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলাকে কেন্দ্র করে লেখক, প্রকাশক, পাঠকের উত্তেজনা তুঙ্গে থাকে। বইমেলায় ঠাঁই পাওয়া প্রতিটি প্রকাশক যদি গড়ে ৫০ টি করেও নতুন বই এই উপলক্ষ্যে প্রকাশ করেন, তাহলেই সংখ্যাটা প্রায় পাঁচ-ছয় লাখের কাছাকাছি পৌঁছায়। তা বাদেও আমাদের মতো বহু প্রতিষ্ঠান আছে যারা সারা বছর বই প্রকাশ করে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি শুধুমাত্র বইমেলা-কেন্দ্রীক বই হলে একটি প্রকাশনা সংস্থা দীর্ঘদিন বাজারে থাকতে পারবে না। কারণ প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন বিষয়, টেকনোলজি ও প্রতিযোগিতার রূপ বদলে যাচ্ছে। এখানে প্রতিযোগিতা বলতে আরেকটি প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয়, নিজেদের গড়ে তোলা ইমেজের সঙ্গে নিজের সংঘর্ষের বিষয়টিকেই আমি গুরুত্ব দিচ্ছি।
যেমন ধরা যাক, আমি আগে ভাবতাম এমন কিছু বই করব যেগুলো আমাদের সারা বছর ব্যবসায়িক স্বার্থপূরণ করবে। কিন্তু গত কয়েক বছরে আমার এই ধারণা বদলে গেছে। নানান ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করার দিকে জোর দিয়েছি। তার ফলে চিরাচরিত প্রথা ভেঙে বইয়ের গঠন, আকার, টেক্সট সব নিয়েই পরীক্ষা করছি। এর ফলে চেনা বৃত্তের বাইরের পাঠকও আমাদের ভাষা সংসদ পরিবারের বৃহত্তর অংশ হয়ে উঠছে।

Kolkata cover

উপন্যাস, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ-এর পাশাপাশি আমরা আত্মজীবনী, ভ্রমণ, দেশ-বিদেশের মেয়েদের কথা, দলিত-প্রান্তিক নারীদের কথাও আমাদের প্রকাশনার গ্রন্থে নিয়ে আসছি। চাইছি আলাদা করে নারী সাহিত্যকে মর্যাদা দিয়ে তুলে ধরতে। এবছরও আমরা যত বই প্রকাশ করছি তার অর্ধেকটাই নারীদের লেখা ও নারী বিষয়ক। প্রথমেই চারটি উপন্যাসের কথা বলি। এ সময়ের পাঁচ উল্লেখযোগ্য কথাকার মহুয়া চৌধুরী, তন্বী হালদার, শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়, শুক্লা কর ও অনন্যা দাশের চারটি উপন্যাস— ‘মহাভারত’, ‘ও দয়াল’, ‘ভাবরী’ ও ‘নেপথ্য সঙ্গীতের অন্তরালে’। নাম দেখে বিষয়বস্তু কিছুটা অনুভব করা যাচ্ছে। ‘ভাবরী’ উপন্যাসটি নাচনি সম্প্রদায়কে কেন্দ্র করে। এই ধরনের লেখা বাংলা সাহিত্যে খুবই কম হয়েছে। তন্বীর লেখায় উঠে আসে প্রান্তিক মানুষের কথা। শুক্লার বিষয় রাঢ়-বাংলার প্রান্তিক জনজীবন ও তাদের সুখদুঃখ। মহুয়ার লেখা সেখানে একেবারে শহুরে জীবন। আর অনন্যা লিখেছেন রহস্য কাহিনি।

‘ভারতের ছক ভাঙা নারী’ গ্রন্থে কথা বলা হয়েছে একেবারে মধ্যযুগ থেকে বিংশ শতাব্দীর শেষ দিক পর্যন্ত যে-সব মেয়েরা সব প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ক্রমশ আলো দেখিয়েছিলেন সমাজে সেই রকম ৩৩ জন নারীকে নিয়ে। এর আগেই আমি বাঙালি নারীর সার্কাস অভিযান নিয়ে দীর্ঘ গ্রন্থ লিখেছি। আর এবার এটি। আমাদের প্রতিদিনের কলকাতার প্রতিটি রাস্তা, পুরনো বাড়ি, নদীর ঘাট, স্থাপত্য, পুরোনো যানবাহন— সব নিয়ে দীর্ঘ গবেষণালব্ধ গ্রন্থ লিখেছেন মালবিকা মুখার্জি।
সুন্দরবনের বাঘ-বিধবাদের নিয়ে উপন্যাস লিখেছেন নিরঞ্জন মণ্ডল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হোক কলরব’কে সামনে রেখে ছাত্র রাজনীতি ও তাতে মেয়েদের অবস্থান নিয়ে দীর্ঘ উপন্যাস স্ফুলিঙ্গ।

Bharater chokbhanga nari

অনুবাদেও এবার নারী। এর আগে বাংলায় বিখ্যাত তামিল দলিত লেখিকা সুকীর্তরানীর কোনও বই অনুবাদ হয়নি। এই প্রথম আসছে সুকীর্তরানীর নির্বাচিত কবিতা। অনুবাদেও রয়েছেন শীর্ষা মণ্ডল ও শক্তিশ্বরণ। ‘ভাষান্তরা— সোনার মেয়ের অন্য ভাষা’ বইটিতে দেশ বিদেশের ন-জন লেখিকার আলাপচারিতা, কবিতা ও তাঁদের কথা নিয়ে লিখেছেন তুষ্টি ভট্টাচার্য। অমৃতা প্রীতমের বিখ্যাত উপন্যাস কোরে কাগজের অনুবাদ করেছেন আরেক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছন্দা করমজাই চট্টোপাধ্যায়। অসমিয়া বিখ্যাত কথাকার রুমি লস্কর বোরার গল্প ‘আগুন’ অনুবাদ করেছেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। হিন্দির জনপ্রিয় কথাকার ঊর্মিলা শিরিষের বিখ্যাত উপন্যাস জেলবন্দি মানুষদের নিয়ে লেখা সব ঠিক আছে হুজুর, ও অপর হিন্দি কবি সবিতা সিংহর হারিয়ে যাওয়া জিনিসের শোক অনুবাদ করেছেন মিতা দাস। এছাড়া ভারতের ১৫ জন দলিত কথাকারের গল্প নিয়ে ‘দলিত নারীর স্বতন্ত্র স্বর’ সম্পাদনা করেছি আমি। মণিদীপা সান্যালের জার্মান কাব্যগ্রন্থ ‘এখন এই বসন্তে’-এও নারীদের কবিতা। সুপ্তশ্রী সোম অনুবাদ করেছেন মায়া অ্যাঞ্জেলু।

Sukirtarani Poetry book

অর্থাৎ ভাষা সংসদের নিজস্ব ঐতিহ্য মেনেই নারীদের গ্রন্থ এবারও। এই প্রসঙ্গে বলি, আমাদের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বইও কিন্তু নির্বাচিত ইসমত চুগতাই, নির্বাচিত অমৃতা প্রীতম ও কমলা দাসের আত্মজীবনী ‘মাই স্টোরি’। এই প্রতিটি অনুবাদের বই-ই গত তিন বছরে ৫০০র গণ্ডি অতিক্রম করেছে। এর পরেই রয়েছে ‘বাঙালি নারীর সার্কাস অভিযান’, ভূতের সঙ্গে সেলফি, নির্বাচিত মন্টো, আফ্রিকার নির্বাচিত গল্প ও লাতিন আমেরিকার নির্বাচিত গল্প।

বইমেলায় থাকছে নতুন অনুবাদ গ্রন্থ বিবেক চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত চিনা গল্প, শোভন সান্যালের অনুবাদে মাশাদু দে আসিসের ব্রাজিলের গল্প সংকলন, সৈয়দ কওসর জামালের অনুবাদ ও সম্পাদনায় ফরাসি গল্প সংগ্রহ ও ফরাসি কবিতা, শ্রীদীপ বিশ্বাসের অনুবাদে আর্থার কোনাল ডয়েলের ঐতিহাসিক কাহিনি সমগ্র, আমার সম্পাদনায় দক্ষিণ ভারতের গল্প, জ্যোতির্ময় দাশের ভারতীয় ভাষার ২৫ গল্প, বেবী কারফরমার অনুবাদে প্রসিদ্ধ হিন্দি অনু ও লঘু গল্পকার সুকেশ সাহানীর ‘নোনা জল’, তরুণ সিংহ মহাপাত্রের অনুবাদে বিখ্যাত ওডিয়া কথাকার মনোজ দাসের ‘লক্ষ্মীর অভিসার’, আমার ও সুপ্তশ্রীর অনুবাদে তেলুগু কবি এন গোপীর জল নিয়ে দীর্ঘতম কাব্যগ্রন্থ ‘জল গীত’ এবারের উল্লেখযোগ্য আকর্ষণ।

China Golpo

এরপরেই রয়েছে প্রখ্যাত সাংবাদিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্যর লেখা ‘বাঙালির মুখ স্মৃতির আবরণে’। এবছর আরও দুটি বই নিয়ে আমি খুবই উৎসাহিত, এবং ব্যবসায়িক ভাবনা না ভেবেই ভারতের ক্ষুদ্রতম দুই জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখেই করেছি বই দুটো। একটি ভক্ত টোটোর ‘টোটো ভাষার অভিধান’ যা ইতিমধ্যেই যথেষ্ট আলোচিত। অন্যটিও অবলুপ্তপ্রায় ‘শিয়ালগিরি’ সম্প্রদায়কে নিয়ে। এটিও ভারতীয় ইতিহাসে প্রথম। দীর্ঘদিনের গবেষণাধর্মী এই গ্রন্থের প্রণেতা সন্তু জানা। বিখ্যাত সাহিত্যিকদের উপর লেখা ও তাঁদের গ্রন্থ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন আদিত্য সেন তাঁর প্রবন্ধ সংকলন ২ তে। প্রবন্ধ সংকলন ১ বইটিও আমরাই প্রকাশ করেছিলাম। সেটি খুব ভালোভাবে পাঠক আদৃত হয়েছিল। জ্যোতির্ময় দাশের ‘অস্ট্রেলিয়ার হানা বাড়ি’ ক-দিন আগে প্রকাশিত হলেও তা এর মধ্যেই খুব ভালো সাড়া ফেলেছে।

Toto dictionary

প্রবন্ধের পাশাপাশি ভ্রমণ কাহিনিও এবারের আকর্ষণ। তবে এগুলোকে নিছক ভ্রমণ কাহিনি না বলে সম্পূর্ণ জীবনযাত্রা সেই অঞ্চলের বলাই ঠিক। মলয় সরকারের ‘তুর্কী নাচন’, রেখা দত্তের ‘ইতিহাসের পথে পথে’ ও রথীন ঘোষের ‘বাঙালির ঝোঁক পশ্চিমে যাওয়া’ পড়লেই সেটা পাঠক বুঝতে পারবেন।

আর রয়েছে কবিতার বই। অনুরাধা মহাপাত্রের ‘কাব্যসমগ্র ১’, দিলীপ চট্টোপাধ্যায়ের ‘কফির কাপে সেই মহিলা’, পবিত্র মণ্ডলের ‘কাঞ্চন ফুলের সংজ্ঞা’ সহ একাধিক কাব্যগ্রন্থ এবারেও প্রকাশিত হচ্ছে।

যদিও আমরা বিশ্বাস করি বইমেলা মিলন মেলা, সেখানে পাঠক, লেখক ও প্রকাশক মুখোমুখি হন, ভাবনার আদানপ্রদান হয়, কিন্তু ভাষা সংসদ শুধুমাত্র বইমেলা-কেন্দ্রীক বই করে না। আমরা সারা বছর ধরেই গ্রন্থ প্রকাশ করি আমাদের পছন্দ অনুযায়ী। আগেই বলেছি লেখক নন, লেখাটাই এখানে মুখ্য। আর একটি বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি থাকে। বইয়ের মূল্য। আমাদের প্রায় সব বইয়ের মূল্যই তিনশো টাকার মধ্যে। কয়েকটিই মাত্র বই আছে যা এর ওপরে। আসলে মধ্যবিত্ত মানুষ যাতে সহজেই বই কিনতে পারেন, আমাদের ফোকাস থাকে সেদিকে।

Sankarlal Bhattacharya book

তবে এ কথাও ঠিক, বাজারে কাগজের মূল্য প্রায় তিন গুণ বেড়ে গেছে। ছাপা, বাইন্ডিং সবেরই দাম বেড়েছে। কিন্তু বই পাঠকের জন্য। তাই মাথায় রাখতেই হয় তাঁদের কথা। দিনশেষে তাঁরাই ঈশ্বর।

পরিশেষে বলি, সবাই বলেন বাঙালি ক্রমশ বইবিমুখ হয়ে পড়েছেন। তার বদলে মোবাইল, টিভি সহ অন্য ক্ষেত্রে আকর্ষণ বেড়েছে। অভিজ্ঞতায় বুঝতে পারি এর জন্য বাচ্চারা নয়, অভিভাবকরাই দায়ি। বাংলা বই যাতে বাচ্চারা না পড়ে তার জন্য তারাই বেশি আগ্রহী। আর সেই জন্য প্রকাশকদের আরও বেশি করে বাচ্চাদের কথা ভাবতে হবে, যাতে তারা বইয়ের মধ্যে নিজস্ব জগত খুঁজে পায়।

ভাষা সংসদ অনুবাদ পত্রিকার এ-বছর সুবর্ণ-জয়ন্তী। আমাদের তাই অঙ্গীকার বাঙালি পাঠককে আরও বেশি বিশ্ব সাহিত্যের সঙ্গে বাঁধব। আমাদের প্রতিষ্ঠাতা বৈশম্পায়ন ঘোষাল, আমার বাবা ও মা বিশ্বাস করতেন, কেবল নিজের ঘর নিয়েই আমাদের পরিবার নয়, পড়শি সহ সারা পৃথিবী জুড়েই আমাদের পরিবার। আর সেই পরিবারকে জুড়তে পারে বই ও অনুবাদ। সেই মন্ত্রেই আমরা দিক্ষিত। 

বসুধৈব কুটুম্বকম।

 

ছবি সৌজন্য: লেখক, ভাষা সংসদ ফেসবুক পেজ

বিতস্তার জন্ম ১৯৭৩ সালে। স্কুলের পর স্কটিশ চার্চ কলেজে স্নাতকের পড়াশোনা। লেখালিখি, পত্রিকা সম্পাদনার প্যাশন বরাবরই। বর্তমানে 'অনুবাদ পত্রিকা' নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ভাষা সংসদ নামে প্রকাশনা সংস্থা চালান। প্রকাশিত বই - এলোমেলো গদ্যের খসড়া, সনাতনী রিকশার উৎস সন্ধানে, বাঙালি নারীর সার্কাস অভিযান ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com