banglalive logo
Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

উপন্যাস: নাগবন্ধন- শেষ পর্ব

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

এপ্রিল ১৯, ২০২৩

Bengali Novella by Indira Mukhopadhyay
Bengali Novella by Indira Mukhopadhyay
Bookmark (0)
ClosePlease login

No account yet? Register

আগের পর্ব পড়তে: [১] [] [] [] [] [] []

পুরো মল্লেশ্বর ঘুরে দেখে এসে সেই বটগাছের নীচে বসে সায়ন, সীমা আর ছিদাম। ছিদামের হাতে সঙ্গে আনা চকোলেট, বিস্কুট আর কমলালেবু দেয় সীমা। ছিদাম বলে, “তুমরা কবে ফিরে যাবে?” 

সায়ন বলে, “আজকেই এখান থেকে বোলপুরে গিয়ে থাকবো রাতটা.. কাল দুপুরের দিকে কলকাতার দিকে আবার.. পরশু থেকে আবার ইশকুল আমাদের.. তোরও তো ইশকুল..” 

ছিদাম বলে, “আমি কলকাতা দেখিনি কোনওদিন.. খুব ভিড় না? অনেক গাড়ি, টেরাম, বাস চলে?” 

ওর চোখের কোণে যেন টলটলে জল দেখতে পায় সীমা। 

বলে, “যাবি না কী আমাদের বাড়ি?” 

ছিদাম বলে, “নিয়ে যাবে? দাঁড়াও মা কে বলে আসি তবে..” 

“আরে দাঁড়া দাঁড়া.. তুই আবার ফিরবি কী করে?.. তোর তো পরশু ইশকুল আছে না?..” 

“সেই তো..” ছিদামের মনখারাপটকু আঁচ করতে পারে ওরা। 

“তুমরা আবার আসবে তো এই গ্রামে?” ছিদাম বলে। 

“আমাদের গ্রামে পুজো পার্বণ লেগেই থাকে.. খুব ভালো লাগবে তুমাদের তখন এলে..”

মলুটী গ্রামের প্রধান উৎসব দুর্গাপুজো, কালীপুজো, ধর্মরাজপুজো। তাছাড়াও রাস, দোল আর মৌলীক্ষা মায়ের মহোৎসব তো আছেই। আর বারোয়ারিতলায় লক্ষ্মী, সরস্বতী, অন্নপূর্ণার পুজো তো বেড়েই চলেছে দিন দিন।

“ঠিক তুমাদের বাংলার মতো। কে বলবে এটা ঝাড়খণ্ড? ওহ! আরেকটা পুজো তো আরও ধুমধাম করে হয়.. বলতেই ভুলে গেছি.. মনসা পুজো..” 

সীমা সর্পদেবীর নাম শুনেই চমকে ওঠে। মা মৌলীক্ষার থানে মনসা মাতার পুজোও হয় নাকি রে? 

ছিদাম বলে, ও বাবা! মলুটী গ্রাম জুড়ে প্রায় ছয়টা মনসা পুজো হয়.. মলুটীর মনসাপুজো বাউড়ি এবং বাগদীদের পুজো.. তারাই উদ্যোগ নেয়.. মা মনসার পুজো না দিলে যে ফসল হবে না.. সাপখোপ তো ভর্তি এখানকার জঙ্গলে.. মনসাদেবী তো চাষবাস, বৃষ্টি সকলের দেবী.. জানো? আমাদেরও অল্প ধানজমি আছে যে..তাই আমার মাও পুজো দেয়..আমরা ডিঙে ফেরানোর শোভাযাত্রায় যাই গ্রামশুদ্ধ সবাই.. খুব মজা হয়.. ঢাক বাজিয়ে, দল বেঁধে চিয়েন গান গাইতে গাইতে যাই.. মনসাপুজোর ঘট ভরে আনাকে এখানে বারি আনা বলে..” 

“ডিঙে ফেরানো ?.. সেটা আবার কী রে? শুনিনি কখনও..”, সীমা জানতে চায়। 

“চাঁদ সদাগরের নাম শুনেছো তো তুমরা? বেহুলার শ্বশুরটা মনসার অ্যান্টি ছিল তো। ওঁর বাণিজ্যে গিয়ে ডুবে যাওয়া সপ্তডিঙা মনসার দয়ায় ফিরে পাবার নাম হল ডিঙে ফেরানো..”

Bengali novel

“হ্যাঁ রে ছিদাম?.. তুই এই মনসার বারি আনার গান জানিস?.. কী যেন নাম বললি?.. গাইতে পারিস?”

সীমার চোখ চিকচিকিয়ে ওঠে। 

ছিদাম বলে, “হ্যাঁ.. চিয়েন গান..”

গেয়ে ওঠে গলা ছেড়ে। সায়ন ভিডিও তোলে ছিদামের গানের।  

“মাকে আনতে চলো রে ভাই দীঘি সরোবর

কি আনন্দ হল রে মায়ের তপিনি নগর

মাকে আনতে চলো রে ভাই দীঘি সরোবর।

মনসার জল ভর্তি ঘট মাথায় নিয়ে আমার মায়ের মতন উপোসী সব ভক্তরা এগিয়ে চলে মন্দিরের দিকে। সমানে বাজতে থাকে ঢাক  ঢোল, কাঁসর। পিছনে দলবেঁধে আমরা ছেলেপুলেরা যাই গান গাইতে গাইতে। 

তোরা দেখ গো দাঁড়ায়ে মা মনসার বারি এল লহরী খেলিয়ে।

আসা যাওয়ার পথে গ্রামের এ-দল ও-দলে আবার মুখোমুখি দেখা হয়ে গেলে ছড়া কাটতে থাকে। আমরা বলি বোল কাটাকাটি। একপক্ষের ছড়া বা বোলকে অন্যপক্ষ ছড়া বলে কাটান দেবে।” 

“সেটা আবার কেমন শুনি?”, সায়ন বলে।

ছিদাম বলে, 

“ধরো একপক্ষ গলা তুলে বলল 

থান বন্ধন, সেবা বন্ধন, বন্ধন বসুমতী 

এপার ওপার ঘাট বন্ধন দেবী সরস্বতী

ওঠরে নাগিনীর বিষ গড়ুরের সহায় 

নাই বিষ তো নাই, মা মনসার দয়।।

অন্য পক্ষ তখন গলা তুলে কাটান দেয়। ঠিক গাঁয়ের মেলার তরজা গানের মত। জানো? শুনবে?”

বলেই আবারও গায় সে। 

“ওরে মা মনসা যে দাঁড়িয়ে আছে, গলে ফুলের মালা,

শঙ্খের ভিতরে বিষ করিছেন খেলা

ওঠরে নাগিনীর বিষ গড়ুরের সহায় 

নাই বিষ তো নাই, মা মনসার দয়।।”

“এ তো পুরো এক ধরনের কবির লড়াই রে” সীমা বলে ওঠে। 

সায়ন বলে, “বিকেল হয়ে এল.. শীতকালে তাড়াতাড়ি সন্ধে নামে.. এবার তো যেতে হবে না কী পুরো মনসামঙ্গলের কাব্যটাই বসে পড়া হবে ছিদামের সঙ্গে?..”

novel by Indira Mukhopadhyay

সীমা বলে, “তুমি বড় বেরসিক.. ছেলেটা এত সুন্দর করে গাইছে..আরেকটু শুনতে দাও..”

সায়ন বলে, “তোমার বাপু এই সাপ আর মনসার সঙ্গে একটা মাখোমাখো কেমিস্ট্রি আছে.. আগেও দেখেছি.. আজও দেখছি..” 

সীমা ঠোঁট উলটিয়ে বলে, “কী আর করা? পড়েছ ঝখন যবনের, থুড়ি নাগকন্যের হাতে, খানা খেতে হবে সাথে..” 

ছিদাম বলে, “আবার জানো? মলুটীর মনসা পুজোয় পাঁঠা বলিও হয়..বলিদানের পরে চাকা লাগানো ছোট ছোট কাঠের নৌকা গ্রামের পথে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়..আমরা গান গাইতে গাইতে চলি বাগদী আর বাঊড়ি বন্ধুদের সঙ্গে.. হেব্বি মজা হয় আমাদের মনসা পুজোয়..” 

ছিদাম নিজের মনে আবারও গেয়ে ওঠে। 

“কাঞ্চন বরণী মনসা জ্বলজ্বল করে

লাল জবা, পুষ্প জবা দিব স্তরে স্তরে।”

সায়ন বলে,”তোর ভাণ্ডারে আর কী কী আছে বলবি এই মলুটী নিয়ে?”

ছিদাম মনের আনন্দে আবারও গাইতে থাকে.. কিন্তু তবুও যেন বাবুরা চলে যাবার ক্ষণ এগিয়ে আসার কারণে মনের ভেতর টা খালি খালি লাগে। সেটা চাপা দেবার জন্যেই বুঝি গান গায়। প্রসঙ্গ ঘোরায়। আরও কিছুক্ষণ থাকতে পারবে বাবুদের সঙ্গে। 

“কাঁচের ভরণে মনসা জয় জয় করে

লাল জবা, পুষ্প জবা দিব তরে তরে।”

“খুব আশ্চর্যের কথা বল? তোদের এই মলুটী গ্রামের মনসা পুজো? কিন্তু অন্ধকার হয়ে গেলে যে আমার গাড়ি চালিয়ে বোলপুর যেতে খুব চাপ হয়ে যাবে। তার কী হবে ভেবেছিস একবার?”  সায়ন বলে  

ছিদাম বলে, “এইটুকুন শুনে যাও বাবু..আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পুজো হলেও মলুটীর নানকার রাজবংশের ছয় তরফের কুলদেবীও যে মনসা.. এই তরফ কাছেই কাষ্ঠগড়া গ্রামে মনসা প্রতিষ্ঠা করেন যে.. সেখানে এখনও পুজো হয়.. তবে এত দেবদেবী থাকতে তাঁরা কেন যে দেবী মনসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাও আবার মা মৌলীক্ষার সিদ্ধ পিঠে তা নেপাল দাদুও জানে না..সব থেকে বড় ব্যাপার কী জানো?  মলুটীর মেইন দেবী মৌলীক্ষা থাকা সত্ত্বেও ছয় তরফের জমিদাররা ছেলে মেয়ের বিয়ে, পৈতে, মুখেভাত এসবের আগে কাষ্ঠগড়ার মনসা থানে পাঁঠা উৎসর্গ দিয়ে পুজো দিত..” 

সীমা বলে,”খুব ইন্টারেস্টিং!.. একবার আসব তোদের এই মনসা পুজোয়, তোর স্যারের এসব পুজোটুজো পছন্দ নয়..আমার বাড়িতে হত যে মনসা পুজো তাই আমার খুব ভালো লাগবে এলে..”

Bengali novella on Maluti village

অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। বিকেল পাঁচটাতেই অন্ধকার নেমে এল আদিগন্ত মাঠের ওপর। ছিদামের মনখারাপ। চলে যাবেন ওঁরা। আর হয়ত জীবনে কখনও দেখা হবে না এই স্যার আর দিদিমণির সঙ্গে।

“ঠিক আছে তবে চলি বাবু। আবার কথা হবে। তুমরা আবার আসবে তো?”

ছিদামের কথায় সায়ন আর সীমা দুজনেই ভাবে ছেলেটাকে অন্ধকারে একলা ছেড়ে দিয়ে ওরা গাড়ি হাঁকিয়ে ফিরে যাবে কী করে? মানবিকতা বলেও তো একটা কথা আছে না কী। তায় তাঁরা দুজনেই আবার ইশকুলে মাস্টারি করে। স্টুডেন্টদের কত ভ্যালুজ শেখায়। 

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সায়ন বলল,”নে তুইও চল আমাদের সঙ্গে, তোকে তোর বাড়িতে নামিয়েই নাহয় আমরা যাব বোলপুরের দিকে”

তা ছাড়াও বেশ মায়া পড়ে গেছে ওদের ছিদামের ওপর। 

“তুমাদের আরও দেরি হয়ে যাবে বাবু” ছিদাম কিন্তু কিন্তু করে। তবে গাড়ি চড়ে বাড়ি ফেরার লোভটাও যে হয়না তা নয়। 

সীমাও সায় দিল সায়নের কথায়।

 “তাহলে তাই চলো”

সায়ন গাড়ি ঘোরায়। যথারীতি এবারেও ছিদাম সায়নের পাশে, মানে সামনের সিটে বসে। সীমা পেছন থেকে ছিদামের হাতে আরও পাঁচশো টাকা দিয়ে বলে,

“বইখাতা কিনিস বুঝলি?.. বাজে খরচা করিস না যেন..”

ছিদাম লজ্জা পায় যেন। বলে, “আবার টাকা দিলে কেন দিদিমণি ?.. তখন বাবু দিল তো..”

সীমা বলে, “এটা আমি দিলাম.. সারাদিন অনেক ঘুরেছিস আজ..বাড়ি ফিরেই পড়তে বসবি কিন্তু..” 

ছিদাম বলে, “আমাদের ঘরে যাচ্ছ যখন চা কিন্তু খেতেই হবে.. পাশেই হরদা’র দোকানের গরম সিঙ্গারা ভাজছে এখন..খুব ভালো খেতে.. আমি নিয়ে আসবই তুমাদের জন্যে।” 

আবার ছেলেটার কথায় সেই গ্রামের সারল্য টের পায় ওরা। সীমা বলে,

“ঠিক আছে খাবো.. কিন্তু বেশিক্ষণ বসবো না রে..” 

সায়ন বলে, “দেরি যখন হয়েই গেলো তখন ওদের ঘরে একটু বসেই যাবো নাহয়.. কাল তো হোটেল থেকে চেক আউট সেই দুপুরবেলায়..হোটেলে ফিরেই বা কী করবে এখন?”

মনে মনে ভাবে। ছেলেটা এই নিয়ে সারাদিনে দু’বার নেমন্তন্ন করল। ওদের কুঁড়ে ঘরে গিয়ে একটু অন্তত না বসলে ওরা সবাই কে বলে বেড়াবে কলকাতার লোকেদের খুব ডাঁট। কথায় কথায় টাকা দেয় অথচ গরীবের কুঁড়ে তে গিয়ে বসে চা খাবে না শহুরে বাবু-বিবি। 

আবার ফেরে ওরা সেই মলুটীতে। সেখানেই মন্দিরের খুব কাছেই থাকে ছিদামরা। আঁকাবাঁকা অচেনা গলি এঁকে বেঁকে নদীর মতো গিয়ে পড়েছে একটা অন্ধ গলিতে। সেখান থেকে গাড়ি ঘোরাবে কীভাবে ভাবে সায়ন। একেই অন্ধকার তায় রাস্তার আলোর তেমন জোর নেই। ছিদামদের কাঁচাবাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামতেই সীমা শুনতে পায় ভেতর থেকে শাঁখ বাজার শব্দ। ছিদামের মা বুঝি সন্ধে জ্বালে তুলসী তলায়। হন্তদন্ত হয়ে ছিদামের মা মাথায় এক গলা ঘোমটা দিয়ে বেরিয়ে আসে। বুঝে পায়না। তারপর ছেলে কে দেখে বুঝতে পারে। দুপুরে খেতে এসে ছিদাম বলেছিল কী না তার কলকাতার অংকের স্যার আর বিজ্ঞানের দিদিমণির গল্প। ছেলের দেরী দেখে তেমনি ভাবছিল সে মনে মনে। এত ভালো লোক তাঁরা নিশ্চয়ই ছেলে কে ঘরে ছেড়ে দিতেই এসেছেন তবে!

‘আসুন, আসুন” বলে অন্ধকারে প্রদীপ হাতে নিয়ে সায়ন আর সীমা কে যথোচিত ওয়েলকাম পর্ব সারেন। সেই ফাঁকে ছিদাম মায়ের কানে কানে চা বসানোর কথা বলেই দৌড়ে চলে যায় তার হরদা’র দোকানে। সিঙ্গাড়া আনতে। 

এবার মাটির দাওয়ায় একটা ক্যাম্প খাটে বসতে দেয় ছিদামের দিদি। ঘরে বিজলি বাতি জ্বলছে টিমটিম করে। বাইরে প্রদীপ। কারোর মুখ ভালো করে দেখা যায়না। 

“তোমার নাম কী? অনেক শুনেছি ভাইয়ের মুখে.. সারাদিন তোমার কথা..” সীমা বলে । 

লজ্জায় মেয়েটি বলে, “আমার নাম রাধা। আমিও শুনেছি আপনাদের কথা.. ইশকুলের বিজ্ঞানের দিদিমণি তো আপনি..” 

ইতিমধ্যে ছিদামের মা আসে চিনেমাটির কাপে করে গরম চা নিয়ে। 

“এই রাধা, লম্ফ টা রান্নাঘর থেকে নে আয় মা একবার..” বলে সে। 

ছিদামের বাবা নেই। আগেই শুনেছে ওরা। তবুও গ্রামের মানুষ হয়েও সে রঙিন কাপড় পরে। সেটা দেখে ভালো লাগে সীমার। “তোমার নাম কী গো?”

“আমার নাম বাসন্তী.. ওদের বাবা তো সেই কবে মরে গেছে.. আমার এই দুটো ছেলেমেয়ে আর চাষবাস নিয়েই..আমাদের মলুটী গ্রামে এত পুজো, পাব্বন, মোচ্ছব, মেলা এই নিয়েই থাকি আমরা.. তা আপনাদের ছেলেপুলে?.. বিয়ে হয়েছে কদ্দিন হল?.. বাড়িতে কে কে আছে?..”

Maluti village near Dumka

গ্রামের মানুষের সব ভালো তবে বিবাহিত দম্পতি দেখলেই কদ্দিন বিয়ে হয়েছে আর কটা ছেলেপুলে সে খবর তারা নিয়েই ছাড়বে। 

সীমা বলে, “আমাদের অনেকদিন বিয়ে হয়েছে..ছেলেপুলে হয়নি আর হবেও না হয়ত..” 

“আমাকে একটা কয়েন দেবেন? মনসার থানে পুজো দিয়ে দেখবখন.. ঠিক হবে..”

ছিদামের মা বাসন্তী বলে।

 সীমা ব্যাগ থেকে দশটাকার কয়েন বের করে পুজো দেবার জন্য দেয় বাসন্তীর হাতে।

তার মধ্যে সিঙ্গাড়া নিয়ে ছিদাম এসে পড়তেই সেই আলোচনায় ভাঁটা পড়ে যায়। সবাই মিলে হইহই করে ঝাঁপিয়ে পড়ে গরম চা, সিঙ্গারার সদগতি করতে। অনেকক্ষণ থেকেই উঠছি উঠব করে আর ওঠা হয়না সায়ন ও সীমার। 

সায়ন বলে, “অনেক আগে এসব জায়গায় এসেছি, তবে মলুটীতে এমন সব মন্দির আছে দেখিনি..আপনার ছেলেটা খুব ভালো করে ঘুরিয়ে দেখিয়েছে আজ.. কত গল্প শুনলাম!”

ততক্ষণে লম্ফর আলোয় অন্ধকারেও বেশ উজ্জ্বল চারিদিক। হঠাত মাথা থেকে ঘোমটা সরে যায় বাসন্তীর। 

সায়নের খুব চেনা লাগে সেই মুখ। বিশেষত চোখদুটো। কোথায় যেন দেখেছে তাকে..সেই মেয়ের চোখদুটো এমনি ছিল যে!..এদ্দিনে সেই মেয়েটার হয়ত বাসন্তীর মতোই বয়স হয়েছে! 

এমনই কোনও প্রত্যন্ত এক গ্রামেই তো শ্রাবণ মাসে অঝোরে বৃষ্টি পড়ছিল। সাপে কাটা সায়ন কে অচৈতন্য অবস্থায় কোনও এক গ্রামের কুঁড়েতেই সেবা শুশ্রূষা করে ভালো করে তুলেছিল সেই মেয়ে। তার নাম মনে নেই আজ আর কিন্তু স্মৃতির ক্যানভাসে আজও তুলে ধরা আছে অনেক কিছু। সীমা বাসন্তীর সঙ্গে ওদের ঘর দুয়ার দেখতে ব্যস্ত। সায়ন ভাবে আরও অনেক কিছু যা শুধু জানে সায়ন আর সেদিনের সেই সেবিকা। সাধারণ এক গ্রামের মেয়ে ছিল সে। তিন চারদিন সেই গ্রামে থেকে সেই মেয়ের সেবায় সে যাত্রায় সুস্থ জীবন ফিরে পেয়েছিল সায়ন। মেয়েটার চেহারায় চটক ছিল। আর ছিল বুদ্ধি। ওকে তিনদিন সেবা-যত্ন করে, সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলেছিল সে। ছেড়ে দিতে সেদিনও সেই মেয়ের মন চায়নি। ঠিক আজ ছিদামের মতোই ছিল সে মেয়ের আতিথেয়তা। “আরেকটা দিন থেকে যাও.. ঘা টা আরেকটু শুকিয়ে যাক..” সাপের কামড়ে পায়ের সেই জায়গাটা তখনও দগদগে। কাঁচা ঘা। বলেছিল সে। তার সঙ্গে সেই শেষ রাতটা আজও স্পষ্ট মনে পড়ে সায়নের। দিশী মুরগীর ঝোল আর গরম ধোঁয়া ওঠা মোটা চালের ভাত বেড়ে খেতে দিয়েছিল সে। পরম যত্নে। সেই শেষ দিনটায় তার হাতের রান্না যেন আরও সুস্বাদু লেগেছিল। সঙ্গে ছিল ওদের ক্ষেতের কী একটা শাকভাজা। সেও খিদের মুখে ছিল অমৃত। 

Bengali novel

সামনে বসে খেতে দিয়ে মেয়েটা বলেছিল, ঠিক ছিদামের মতোই। বারেবারে শুধিয়েছিল সে। 

“আবার আসবে তো?” 

সায়ন কোনও উত্তর দিতে পারেনি। তবে শ্রাবণের সেই রাতেই খেয়েদেয়ে মেয়েটা পাশের ঘরে গিয়ে শোবার আগেই তাকে খুব আদর করেছিল। হ্যাঁ। সেই প্রথম বছর ছাব্বিশের যুবক সায়ন চৌধুরী একটা গ্রামের মেয়ের সরলতার সুযোগ নিয়েছিল। বর্তমানে অঙ্কের সিরিয়াস মাস্টারমশাই সিলেবাসের সব অঙ্ক মেলাতে অভ্যস্ত কিন্তু সে-রাতের কাজটা পাপ না পুণ্যের কাজ তার হিসেব সে এতদিনেও মেলাতে বসেনি। অঙ্কের সিরিয়াস ছাত্র সায়নের জীবনের প্রথম নারী স্পর্শ। জীবনের প্রথম নারীর সঙ্গসুখ। সীমা তো তার জীবনে এসেছিল তারও অনেক পরে। স্কুল সার্ভিসের পরীক্ষা দিতে গিয়ে আলাপ হয়েছিল। অনেকটাই জুনিয়র সায়নের থেকে। দুজনের বিষয়ই বিজ্ঞান। একজনের অঙ্ক, অন্যজনের পদার্থবিদ্যা। তাই বুঝি মনের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এ বড় মিল। তাই কাছাকাছি এসে পড়া আর ক্রাশ। সীমার জীবনের প্রথম প্রেম। তারপর হাবুডুবু খাওয়া। 

“আজ রাতে খেয়ে যাবেন কিন্তু আমাদের এই কুঁড়েঘরে। যাবেন তো বোলপুর। কতক্ষণই বা লাগবে?”

সেদিন বাসন্তীও যেন ছাড়তে চাইছেনা ওদের। ছিদাম, বাসন্তী, রাধা… এরা সবাই কেমন আপনার হয়ে উঠেছে ওইটুকু সময়ের মধ্যে। কেমন যেন আত্মীয়তার সুর ওদের কথাবার্তায়। 

সায়ন আর সীমারও যেন অনেকদিন বাদে এমন আতিথেয়তায় মন কানায় কানায় সেদিনের সন্ধেয়। কুঁড়েঘরের টিমটিমে আলো রাজবাড়ির ঝাড়বাতিকেও হার মানায় অনেক সময়। আসলে সবটাই মনের ব্যাপার। 

কলকাতায় থাকলে হয়ত এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাইরে থাকা যায় না। বাড়ির লোকজন ভাববে। ঠিক সময়ে বাড়ি না ফিরলে মা চিন্তা করবেন, তাই… কিন্তু সেদিন সেই বেড়াজাল থেকে সায়ন আর সীমা মুক্ত। 

“বলছিলাম কী দু’টো লুচি ভেজে দেব.. সঙ্গে আমাদের ক্ষেতের মিষ্টি বেগুন ভাজা.. চলবে তো?” বাসন্তী বলে। 

ছিদাম ফোড়ন কাটে মায়ের কথায়।

“তুমি জিগেস কর কেন মা? রান্নাঘরে যাও বরং দিদি কে নিয়ে..ততক্ষণে আমি একটু পড়ার কথা জেনে নিই মাস্টারমশাইয়ের কাছ থেকে.. একজন না আবার..দু-দু’জন মাষ্টারমশাইয়ের পায়ের ধুলো পড়েছে আজ আমাদের ঘরে..” 

সায়ন ছিদামের উৎসাহ দেখে খুব খুশি হয়। সেইসঙ্গে সীমাও। 

খানকয়েক লুচি আর বেগুনভাজা আর সামান্য একটু সুজির হালুয়া। স্টিলের রেকাবি সাজিয়ে বাসন্তী নিয়ে আসে। ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে সাতটা পেরিয়েছে। গাঁয়ে-ঘরে লোকজন তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ে। ইলেকট্রিক বাঁচে। ভোর ভোর উঠে ক্ষেতের কাজে যায় তারা। তবে ছিদাম লম্ফ জ্বেলে পড়ে। এমন জানিয়েছে ওদের। একরত্তি কুঁড়েঘরে, দু ফোঁটা আলোয় যেন হাজার বাতির রোশনাই সেদিন। ফুলকো লুচি ছিঁড়ে তুলতুলে বেগুন ভাজায় মুড়ে মুখে দেয় সবাই। শুধু বাসন্তী বাদে। সে সেদিনের সন্ধের হোস্ট। 

সায়ন আর সীমা পরিতৃপ্তি করে খায়, বলে, “খুব ভালো..”

“আপনাদের হোটেলের সব কত ভালো ভালো খাবার.. এ আর এমন কী?” বাসন্তী বলে ওঠে, “সামান্যই তো!” 

Indira Mukhopadhyay novella

সায়ন মনে মনে ভাবে, কুঁড়ে ঘরের সাদামাটা অভ্যর্থনা, আপ্যায়ন ফাইভ-স্টার হোটেলের রাজকীয় পঞ্চব্যঞ্জন কে ছাপিয়ে কখনও কখনও লাখ তারার হয়ে ওঠে বৈকি।

বাসন্তী জলের গেলাস এগিয়ে দেয়। কী যেন বলতে চায় ওদের। 

সীমা বলে, “কিছু বলবে?” 

বাসন্তীর মনে যেন ষোলো আনার ওপর আঠারো আনা কুণ্ঠা। সংকুচিত হয়ে বলে, “অনেকক্ষণ ধরেই বলব বলব করছি.. 

ছিদাম কে কলকাতার কোনও ভালো ইশকুলের হোস্টেলে রেখে পড়ানো যায়না বাবু?.. খুব মাথা আছে ছেলেটার.. ও কী সব ইঞ্জিন টিঞ্জিন হতে চায়.. এখানে কী সেসব সুবিধে হবে পড়াশুনোর, আপনারা কলকাতায় রইলেন.. একটু খোঁজখবর নিতে পারবেন?.. ওর যখন আপনাদের এত ভালো লেগে গেছে.. নিজের ছেলে বলে বলব না..:ছিদামের মাথা আছে.. খাটতে পারে জানেন বাবু?” 

সায়ন বলে, “ক্লাস এইটের পরে তো নতুন করে কোথাও ভর্তি কী নেবে?.. তবে আমার ইশকুল ছেলেদের.. সেখানে জিজ্ঞেস করতে পারি..” 

“আসলে ছেলেটা বড় মুখ চাওয়া.. অনেক গুণ..নিজের ছেলের মত হয়ে গেছে.. পেটে ধরিনি তো কী হয়েছে.. আমার রাধা আর ছিদামের কোনও তফাত করিনি কোনদিন..” 

“পেটে ধরোনি মানে?” সীমা চমকে ওঠে। 

বাসন্তী শুরু করে, “ও আমার ছোটো বোনের ছেলে.. বেচারি এমন ছেলের জম্ম দিতে গিয়েই মরে গেছলো..তারপর থেকে আমার কাছেই মানুষ হয় বেচারা ছিদাম..”

“তা ওর আর কেউ ছিল না?” সায়নের কপালে প্রশ্নের ভাঁজ। 

“নাহ! পোড়া কপাল আমার বোনটার.. গাঁয়ের মধ্যে একমাত্র সে মেয়ে যে ছিল ডাকাবুকো!.. সাপখোপ ধরে বাউড়ি, বাগদীদের ডেরায় দিয়ে আসত.. উহারা কী সব ওষুধ বানায় সাপের বিষ দিয়ে.. সাপেকাটা মাত্রই সেই জায়গায় কোথায় কাপড় বেঁধে রোগীকে কীভাবে চিকিৎসা করতে হয় সব শিখে ফেলেছিল আমার বোন কামিনী..”

সায়ন চমকে উঠল সেই শুনে! সবার চোখ এড়িয়ে গেল তা, ” কী বললে তোমার বোনের নাম?” 

বাসন্তী বলে, “কামিনী.. আমরা দুই বোনই পিঠোপিঠি ছিলাম..বাবা আমার বিয়ে দিল.. আমার রাধা কে কামিনী বড় করছিল..কিন্তু কামিনীর তখনও বিয়ে হয়নি বাবু.. সবই আমাদের অদৃষ্ট..”

সায়ন বুঝতে পারে।  সেদিন তবে সেই লম্ফের আলোয় বাসন্তীর ঘোমটা সরে যাওয়ায় অত চেনা লেগেছিল কেন বাসন্তীর মুখটা। অবিকল সেই টানাটানা চোখ। পাতলা ঠোঁট। মাজামাজা গায়ের রঙ। 

আমার কামিনী হাসপাতালের নার্সের বাড়া..পড়াশুনো ক্লাস ফাইভ অবধি হলে হবে কী?.. বুদ্ধিসুদ্ধি খুব ছিল.. ছিদাম বুঝি ওর মতোই হয়েছে!”

সায়নের সব মনে পড়ে যায়। সেই রাতে জঙ্গলের লোকজন পাঁজাকোলা করে নিয়ে এসেছিল তাকে যেখানে তা এই কামিনীরই মাটির ঘর? কামিনী সত্যিসত্যিই একদম পেশাগত কম্পাউন্ডারের মতোই দেখভাল করেছিল সায়নের। সব শিখে নিয়েছিল তবে। 

Last episode of Bengali novella

সায়ন জিজ্ঞেস করেই ফেলে, “তা তোমার বোনের সেই ডেরা মানে যেখানে সাপেকাটা রোগীদের চিকিৎসা করে সেটা কদ্দূর এখান থেকে?” 

বাসন্তী বলে, “সে তো ময়ূরাক্ষী নদীর ধারেই ছিল..এখন ধুয়েমুছে সাফ..কামিনী তো আমার কাছেই থাকত, খেত.. ক্ষেতের কাজ করত.. ওটা আমাদের বাপের ঘর ছিল..বাপ, মাও নেই..আমাদের ভাইও নেই.. নদীর ভাঙনে সে ঘরও নেই আর..”

সায়নের আবারও মনে পড়ে। ঠিকই তো। ময়ূরাক্ষী নদীর ধারেই তো কেটেছিল সেবার তার চার চারটে রাত। 

ছিদাম ততক্ষণে ফিজিকাল সায়েন্স বই খুলে সীমা দিদিমণির কাছ থেকে কী সব বুঝতে শুরু করে দিয়েছে। বাসন্তী আর সায়নের কথাবার্তায় ভ্রূক্ষেপ নেই তার। 

কামিনী শুধু সাপে-কাটার প্রাথমিক চিকিৎসাই জানতো না সেইসঙ্গে রোগীর দেখভালের পাশাপাশি কাউন্সেলিং করতেও ওস্তাদ ছিল। মনে পড়ল সায়নের। 

সায়ন চোখ খুলতেই সেবার বলেছিল হাসিমুখে, “একদম ভয় পাবে না বাবু.. আমাদের গ্রামীণ জীবনে সাপে কাটার বিষয়টি রোজকার ঘটনা.. বর্ষায় আরও বেশি.. তবে সাপে কাটলেই যে বিষক্রিয়া হবে, তা কিন্তু ভুল..আমাদের এখানে বিষধর সাপের চেয়ে নির্বিষ সাপই বেশি..কিন্তু আজকাল গাঁ-ঘরে অপ-চিকিৎসা আর অজ্ঞতার কারণে সাপেকাটা মানুষের জীবন বাঁচেনা.. এই যেমন আপনি..আমার কাছে এসে পড়েছেন.. আর ভয় নেই.. এই যদি অন্য গ্রামে হত?..সেখানে মানুষ ওঝা ডেকে ঝাড়ফুঁক করে সময় নষ্ট করে দেয়..ফলে বেশিরভাগ রোগীই মারা যায়.. আপনার হাসপাতালে যেতেও হবেনা..”

কী ভাগ্যি সায়ন কে সেবার বিষহীন সাপেই কেটেছিল। সেই মুহূর্তে বাড়ির বাইরে, অচেনা, অজানা পরিবেশে এমন একটা ঘটনা। ভয় যে সে পায়নি তা নয় তবে সেই মুহূর্তে কামিনী তাকে এত মনের জোর দিয়েছিল যে সে চারদিনেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছিল। এক্সপার্ট ছিল সেই মেয়েটা।  

সায়নের পায়ের দংশিত স্থান জল দিয়ে ধুয়ে, কী সব মলম দিয়ে ক্ষতস্থান মুছে দিয়েছিল তার নরম হাতে। সে অনুভূতি ছিল না সায়নের। জেনেছিল অনেক পরে। তারপর কাপড় দিয়ে বাঁধন দিয়েছিল। সব একা হাতে। মেয়েটা সব জানে যে। জ্ঞান আসতেই সায়ন দেখতে পেয়েছিল খুব আঁটসাঁট বা ঢিলেঢালা নয় সে বাঁধন। 

“এ তো এখুনি খুলে যাবে..” 

জিজ্ঞেস করতেই সে বলেছিল,

“না গো বাবু, খুব বেশি শক্ত করে বাঁধলে অঙ্গে রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে তো..”

Bengali novel on Maluti village

মাংসপেশির সংকোচনে না কী সাপের বিষ দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, তাই পা নড়াচড়া করতে বারণ করেছিল। সায়নের মনে ধরেছিল খুব। গ্রামের মেয়েটা তো খুব বিজ্ঞান মনস্ক। চব্বিশঘণ্টা শুয়ে থেকেই ধীরেধীরে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠছিল সায়ন। কিন্তু মেয়েটা ছাড়েনি তাকে।

সাধারণত নির্বিষ সাপেকাটা রোগীকে সে দু-তিন দিনেই ছেড়ে দেয়। সামান্য টাকার বিনিময়ে পুরো প্যাকেজ ছিল কামিনীর। রোগীর চিকিৎসা, পথ্য সব সে একা হাতে করে সুস্থ হলে তবেই ছাড়ে। যদি দেখে উনিশ-বিষ মানে রোগী সেরে উঠছে না তখন স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাবারও ব্যবস্থা ছিল তার। 

গ্রামের মাটির কুঁড়েঘরে চিকিৎসার এমন ব্যবস্থা দেখে সায়নের সেবার মনে হয়েছিল শহরে কেন এমন ব্যবস্থা হয়না? লাখ লাখ টাকা দিয়েও ভালো পরিষেবা মেলেনা।  এ মেয়ে তো একাধারে নার্স, ডাক্তার এবং কাউন্সেলর। এসবেরও অনেকখানি ওপরে।  

সায়নের ঘোর লেগেছিল যেন। হঠাত সীমা এসে বলল,

“কী গো? আজ তাহলে আমরা ফিরে যাব না? আর কত দেরি করবে?” 

সায়ন বলল, “তাই তো। এবার না উঠলে হোটেলের গেটে তালা পড়ে যাবে যে।”

 কিন্তু ছিদাম? তাকে ফেলে কেমন করে যাবে সে? উথালপাথাল অবস্থা তার সেই মুহূর্তে। কামিনী ছাড়াও সীমার আসার পথে নবরত্নগড়, মনসা চালির স্বপ্ন, সেই নাগিনী এমন কী মলুটীর মা মৌলীক্ষার থানেও মা মনসার রমরমা সব মিলিয়ে অঙ্কের এহেন নাস্তিক মাষ্টারমশাইয়ের মন তখন ক্ষতবিক্ষত নানান প্রশ্নে।  

গাড়ির স্টিয়ারিং হুইলে বসে মন কেবলই অন্যমনস্ক হতে থাকল। সীমা রেডিও চালাতে গেলে দড়াম করে তা বন্ধ করে দিয়ে সায়ন বলল,

“আচ্ছা শ্রীদামের তবে কোন সালে জন্ম বলত?.. ওকে যদি আমার স্কুলে ভর্তি করে দিতে পারি তবে?”

সীমা বলে, “এখন ক্লাস এইট মানে ঠিক তেরো বছর আগে.. মানে ২০০৮.. ওর মতো ছেলে নিশ্চয়ই বছর নষ্ট করেনি..”

সায়নের হিসেব ঠিকঠাক মিলে যায়। ২০০৭ এর জুনে তাকে সাপে কেটেছিল। ছিদামের জন্ম নিশ্চয়ই ২০০৮ এর মার্চ মাস নাগাদ। হতেই হবে। 

সীমা ভাবে অন্য কথা। সে কী তবে না-বিইয়ে কানাইয়ের মা হতে চলেছে? আজকের যুগে ছিদামের মতো ছেলে পাওয়া ভাগ্যে থাকা চাই।  

ছিদাম নাহয় মলুটী মায়ের আশীর্বাদে তাদের ঘরের রাজবসন্ত হয়েই যাবে। বাসন্তীর ছেলে বলে কথা। আর আসার পথে সেই সাপ? সেই মনসাচালির স্বপ্ন? নবত্নগড়ের সেই নাগিনীর সঙ্গে। কিংবা তার মায়ের দেখা তাদের কোলাপ্সিবল গেটের বাইরে জড়িয়ে থাকা সাপটা? ছিদামের মুখে শোনা মলুটীর থানে মা মনসার এত্ত রমরমা? ছিদামের গলায় মনসার ডিঙে ভাসানো কিম্বা সেই অপূর্ব চিয়েন গান? এসব মিথ তো তাহলে মিথ্যে হয়ে যাবে! 

সায়ন অবিশ্যি ভাবছে অন্য কথা। কামিনীর ডাক নাম নিশ্চয়ই ছিল। সেটা আর জিগেস করা হল না বাসন্তী কে। ছিদামের কাছ থেকে আবার জেনে নেবে কোনোদিন। আর বাসন্তী? সে নিশ্চয়ই এতক্ষণে গিয়ে মনসার থানে সেই দশ টাকার কয়েন চড়িয়েই এসেছে। নাগবংশের কন্যা সীমার জন্য।

অলংকরণ: শুভ্রনীল ঘোষ

(সমাপ্ত)

রসায়নের ছাত্রী ইন্দিরা আদ্যোপান্ত হোমমেকার। তবে গত এক দশকেরও বেশি সময় যাবৎ সাহিত্যচর্চা করছেন নিয়মিত। প্রথম গল্প দেশ পত্রিকায় এহং প্রথম উপন্যাস সানন্দায় প্রকাশিত হয়। বেশ কিছু বইও প্রকাশিত হয়েছে ইতিমধ্যেই। সব নামীদামি পত্রিকা এবং ই-ম্যাগাজিনের নিয়মিত লেখেন ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, রম্যরচনা ও প্রবন্ধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com