Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

উত্তুরে: জাকোই-বুরুং ও খলিসামারি, কুর্শামারির মাছকথা (পর্ব ২)

গৌতম সরকার

সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০

Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

‘চুউখ মেলিয়া নিন যায়
ঐকিনা জিউক মানষি খায়।’

বিজাতীয় ভাষা নয় কিন্তু। এই ভাষায় কথা বলেন উত্তরবঙ্গের রাজবংশী জনগোষ্ঠী। এই ভাষার রূপ, রস, গন্ধ আস্বাদন থেকে বঞ্চিত হলে এই গোষ্ঠীকে জানাই হবে না। আর রাজবংশীদের সম্পর্কে না জানলে উত্তরবঙ্গ অচেনাই থেকে যাবে। এই ভাষার নাম নিয়ে অবশ্য রাজবংশী সমাজেই বিতর্ক আছে। এটা ভাষা না উপভাষা, নাকি বিভাষা, তা নিয়ে বিতর্ক আছে রাজবংশী সমাজের বাইরে। রাজবংশীকে বাংলা বলেই মনে করেন অনেক ভাষাবিদ। তাঁদের মতে ঢাকাইয়া, ময়ময়সিংহা, চাঁটগাইয়া ইত্যাদি যেমন বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের কথ্যরূপ, রাজবংশীও তাই। রাজবংশীদের বৃহদংশ অবশ্য একে পূর্ণাঙ্গ ভাষা বলেই মনে করেন। এই ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে গত শতকের আটের দশকে উত্তপ্ত হয়েছিল উত্তরবঙ্গ। সে সময় থেকেই ভাষার নাম নিয়ে রাজবংশী সমাজে বিরোধ। একাংশ মনে করেন, জনগোষ্ঠীর নামেই ভাষার নাম রাজবংশী। আবার অন্য অংশের মতে, ভাষাটির নাম কামতাপুরি।
প্রাচীন কামতাপুর রাজ্যের বাসিন্দা হিসেবে রাজবংশীদের পরিচয় আসলে কামতাপুরি, বলে ওই অংশের মত। কামতাপুরিদের ভাষার নামও তাই তাদের মতে কামতাপুরি।

[the_ad id=”266918″]

এই বিরোধ আরও উস্কেছে রাজ্য সরকার কামতাপুরি ও রাজবংশী, দুই নামে দুই ভাষা অ্যাকাডেমি গঠন করায়। ভাষা অ্যাকাডেমি আলাদা নামে হলেও উন্নয়ন পর্ষদের নাম কিন্তু রাজবংশী উন্নয়ন পর্ষদ। আসলে ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে ফেললাম। শুরু করেছিলাম যে দু’টি পংক্তি দিয়ে, সেটা আসলে রাজবংশী ভাষার নমুনা। বাস্তবে ওটা একটা ধাঁধা। আর পাঁচটা জনগোষ্ঠীর মতো রাজবংশী সমাজেও ছড়িয়ে আছে নানা লোকধাঁধা। এই ধাঁধাটি ভালো করে খেয়াল করুন। ……

চউখ মেলিয়া নিন যায়…. অর্থাৎ চোখ খুলে ঘুমোয়।
তারপরের লাইনের শেষে আছে…. ঐকিনা জিউক মানষি খায়।
ঐকিন শব্দের অর্থ ওটা। মানষি খায় মানে মানুষে খায়।
তাহলে কী দাঁড়াল?
চোখ খুলে ঘুমোয় এমন কোন জিনিস মানুষ খায়?
এবার নিশ্চয়ই সবাই হৈহৈ করে বলবেন, এ তো সহজ ধাঁধা। চোখ খুলে ঘুমোয় তো মাছ।
মানুষের অন্যতম খাদ্য এই মাছ।
ঠিক ধরেছেন, মাছ।
আসলে “উত্তুরে” কলামে গত সংখ্যাটা ছিল উত্তরবঙ্গের মাছ নিয়ে। সেই প্রসঙ্গেই এ বার ধাঁধার অবতারণা।
এর অবশ্য কারণ আছে। যে কোনও সমাজে লোকধাঁধার উৎপত্তি হয় নিত্যব্যবহার্য আশপাশের নানা সামাজিক উপাদান থেকে। মাছ সে রকমই।
রাজবংশী সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ধর্মাচরণ, ব্রত, পার্বণ সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মাছ।
মাছকে ঘিরে কত গান, ব্রতকথা। এসব না জানলে উত্তরবঙ্গকে চেনা অসম্পূর্ণ থাকে।
রাজবংশী সমাজের সঙ্গে বৈষ্ণব ধর্মের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকলেও এই জনগোষ্ঠী মূলত আমিষাশি।
মাছ তো বটেই, নানা প্রাণির মাংস খাওয়ারও প্রচলন আছে।

এই বিরোধ আরও উস্কেছে রাজ্য সরকার কামতাপুরি ও রাজবংশী, দুই নামে দুই ভাষা অ্যাকাডেমি গঠন করায়। ভাষা অ্যাকাডেমি আলাদা নামে হলেও উন্নয়ন পর্ষদের নাম কিন্তু রাজবংশী উন্নয়ন পর্ষদ।

সে যাই হোক, ফিরে যাই মৎস্য কাহিনিতে।
রাজবংশীরা সাধারণত উত্তরবঙ্গের নদীনালা, খালবিলের মাছের ওপর নির্ভরশীল।
চালানি মাছে খুব আসক্তি নেই তাদের। নিজেরা মাছ ধরে খাওয়াই প্রচলিত রীতি।
আজকাল অনেকে কিনে খান বটে, তবে মাছ মেরে খাওয়াই বেশি জনপ্রিয়।
এই জন্য মাছ ধরার নানা উপকরণ রাজবংশীরা নিজেরাই তৈরি করেন।
কতগুলো নাম বলি – জাকোই, ট্যাপা, শুলি, কোচা, জংলা, বুরুং, টোক-টোকা, ধোরকা, টেমাই ইত্যাদি।
অধিকাংশই বাঁশের তৈরি উপকরণ। শুলি আর কোচা দিয়ে অবশ্য মাছ গেঁথে তোলা হয়। অগভীর জলাশয়ের স্বচ্ছ জলে শুলি, কোচা দিয়ে চপলমতি মাছ গেঁথে তুলতে কসরত লাগে।
জালও আছে নানা নামে। চটকা জাল, ভাসানি জাল, নাপি জাল, চাক জাল, হ্যাঙা জাল এমন অনেক।
রাজবংশী সমাজের বয়স্করা নিজেরাই সুতো দিয়ে জাল বুনতেন একসময়। উত্তরবঙ্গের হাটে বাজারে একসময় এই জাল কিনতেও পাওয়া যেত। এখন অবশ্য জাল বোনা ও বিক্রি, দুইই কমে গিয়েছে।

[the_ad id=”266919″]

মাছ আসলে রাজবংশী সামাজিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
মাছ ধরা প্রায় একটা উৎসব। এই সমবেত মাছ ধরার নাম “বাহো মারা।”
এখন আর তেমন হয় না বটে, কিন্তু একসময় রাজবংশী সমাজে বাহো মারা একধরনের বিনোদন ছিল। এই উৎসবে শামিল হতে পাড়া-প্রতিবেশি সবাইকে ঘোষণা দিয়ে আগাম জানানো হত। ঢ্যাঁড়া পেটানোর পুরনো প্রথার মতো শিঙা ফুঁকে ঘোষণা করা হত।
জানিয়ে দেওয়া হত, কোন নদীতে বা কোন জলাশয়ে কখন বাহো মারা হবে।
এই উৎসবে কিন্তু নারী-পুরুষ ভেদ থাকত না। বরং মহিলাদের উৎসাহ থাকত বেশি।
বিভিন্ন মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে বাহো মারায় উপস্থিত হওয়ার দেওয়া ছিল। সারা গায়ে জল, কাদা মেখে এই বাহো মারা হয়ে উঠতে একধরনের লোকক্রীড়াও।
তবে সেসময় মাছ ধরে বিক্রি করার রেওয়াজ তেমন ছিল না।
এখনও গ্রামগঞ্জে মাছ বিক্রেতাদের মধ্যে রাজবংশীদের সংখ্যা কম দেখা যায়। মাছ ধরা হয় বাড়িতে খাওয়ার জন্য। প্রতিবেশী, স্বজনদের মধ্যে বিলোনোর রেওয়াজও আছে।
বাহো মারা উৎসবে তো বটেই, অন্য সময় বেশি পরিমাণে ধরা হলে, সেই মাছ শুকিয়ে রাখা হয়। পরে সারা বছর সেই শুঁটকি মাছ খাওয়া হয়।

রাজবংশীরা সাধারণত উত্তরবঙ্গের নদীনালা, খালবিলের মাছের ওপর নির্ভরশীল। চালানি মাছে খুব আসক্তি নেই তাদের। নিজেরা মাছ ধরে খাওয়াই প্রচলিত রীতি। আজকাল অনেকে কিনে খান বটে, তবে মাছ মেরে খাওয়াই বেশি জনপ্রিয়। এই জন্য মাছ ধরার নানা উপকরণ রাজবংশীরা নিজেরাই তৈরি করেন।

লোকক্রীড়া, লোক উৎসব আবার গান ছাড়া হয় নাকি! বাহো মারার-ও গান আছে।
এখানে একটি গান উল্লেখ করি। ————
“মাছ মারে মাছুয়া ভাই রে ছেকিয়া ফেলায় পানি
হামার মাছুয়া মাছ মারিছে চন্দনা পরুয়া
মাছ মারে মাছুয়া ভাই রে ইলশা শামলং কইরা। ”
এই “ছেকিয়া” শব্দের অর্থ ছেঁচা। জল ছেঁচে জলাশয়ের একপ্রান্ত শুকনো করে সেখানকার মাছ তুলে নেওয়া হত। অন্যান্য লোকক্রীড়াতেও বারবার উঠে আসে মাছের কথা। যেমন…….
“ডোমনা রে ডুমনি
মরা মাছের ঘুমনি
সর খায় শুকাতি খায়
ডোমনার ব্যাটা কোটে নুকায় … ”

[the_ad id=”270084″]

বাঙালিদের মতো রাজবংশী সমাজেও মাঙ্গলিক কাজে মাছ অতি প্রয়োজনীয়। বিয়ের সময় ও পরে পাত্রীর বাড়িতে মাছ নিয়ে যাওয়ার প্রথা আছে। বাঙালিদের মতোই সাধারণত বিয়েতে কাতলা মাছ নিয়ে যাওয়া হয়।
বিজয়া দশমীতে দেশি পুঁটি মাছের খুব কদর।
পূর্ববঙ্গীয় বাঙালিদের যাত্রাপূজাতেও পুঁটি মাছের খুব চাহিদা।
অনেক জনগোষ্ঠীর মধ্যে মাছ পুড়িয়ে খাওয়ার প্রচলন আছে।
রাজবংশীদের মধ্যেও আছে। সূর্যের আলোয় ফেলে রেখেও মাছ শুকনো হয়। তারপর ভেজে নেওয়া হয়। না ভেজেও খান অনেকে।
আজ থেকে প্রায় ৩৭ বছর আগে আমি একবার খেয়েছিলাম ডুয়ার্সে, বর্তমান আলিপুরদুয়ার জেলার মুজনাই চা বাগানে। বাগানের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে মুজনাই নদী।
তখন নানা ধরনের ছোট মাছের অফুরন্ত ভাণ্ডার ছিল মুজনাই।
চা বাগানের আর্থিক অবস্থা বরাবরই খারাপ। মাঝেমধ্যেই লকআউট হত।
খোলা থাকলেও নিয়মিত বেতন মিলত না। চা শ্রমিকরা মুজনাইয়ের মাছ ধরে খেতেন।
কিন্তু ভাজার জন্য তেল কেনার সামর্থ্য ছিল না অনেকের।
আমি তিনদিন ছিলাম চা শ্রমিক জোরগো ওঁরাওয়ের ঘরে।
ওঁদের কোনক্রমে ভাত জুটত। সঙ্গে আমার জন্য বোধহয় ডাল হত ওই কদিন।
একদিন দেখলাম, ভোরে মুজনাই নদী থেকে মাছ ধরে এনে সামান্য হলুদ আর লবণ মাখিয়ে ঘরের চালে কুলোয় রেখে দিলেন গৃহকর্ত্রী। সারাদিন ওভাবেই শুকলো ওই মাছ। রাতে সেটাই যেন অমৃত ওঁদের কাছে।
আমিও খেলাম।

মাছ আসলে রাজবংশী সামাজিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মাছ ধরা প্রায় একটা উৎসব। এই সমবেত মাছ ধরার নাম “বাহো মারা।” এখন আর তেমন হয় না বটে, কিন্তু একসময় রাজবংশী সমাজে বাহো মারা একধরনের বিনোদন ছিল। এই উৎসবে শামিল হতে পাড়া-প্রতিবেশি সবাইকে ঘোষণা দিয়ে আগাম জানানো হত।

রাজবংশী পরিবারে একসঙ্গে অনেক মাছ ধরলে পুড়িয়ে বা শুকিয়ে খাওয়ার প্রচলন খুব।
শুঁটকি হলে অনেকদিন রেখেও দেয়। এখন ওই পুড়িয়ে বা রোদে ফেলে রাখার চেয়ে শুঁটকি খাওয়ার রেওয়াজ বাড়ছে। রসুন, লঙ্কা, লবণের সঙ্গে কচু মিশিয়ে শুঁটকির একটি উপাদেয় পদ সিদল বানানো হয়।
আয়েস করে খাওয়ার মতো পদ। মুখে লেগে থাকে স্বাদ। দেখলে জিভে জল আসে।
নানা পুজোয় মাছ দরকার হয়। যেমন সাটি মাছ। এই মাছটির কথা আগের লেখায় উল্লেখ করেছিলাম। লাউ দিয়ে এই মাছ অত্যন্ত উপাদেয়। সাটি মাছ লাগে রাজবংশী সমাজের মাসান পুজোয়।
সাটি মাছ পুড়িয়ে ধানখেতের আলে পুজো দেওয়া হয়।

[the_ad id=”270085″]

মাছের কী শেষ আছে? উত্তরবঙ্গের নদী নালায় মাছের অফুরান মজুত। আগের লেখায় কিছু নাম লিখেছিলাম। উত্তরবঙ্গের কেউ কেউ অনুযোগ করেছিলেন কালা ইচলা মাছের নাম লিখিনি বলে। সত্যিই রাজবংশী সমাজে কালা ইচলার খুব কদর। বুড়া ইচলা, সাতসি ইচলাও আছে। সেই কবে ১৮৯০ সালে ব্রিটিশ সেটলমেন্ট অফিসার ডি এইচ ই স্যান্ডার্স ডুয়ার্সে সমীক্ষা করে প্রায় ষাট রকম মাছের নাম লিখে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে ছিল কালাবাউশ, পুঁটিতর, কুর্শা, চন্দন কুর্শা, পানি কুর্শা, বাই আইর, খইলসা, খট্টি, ভেদা, গচি, বাতাসি, পাঙাস, চেলা, চেকা, চেপটি… সে বলে শেষ করা যাবে না।
রাজবংশী সংস্কৃতির ভাওয়াইয়া গানেও মাছের নানা নাম মেলে। একটি ভাওয়াইয়া গানের দুই পংক্তি শোনাই……
“আরে ছোট বাপোই, বড় বাপোই, মাজিলা বাপোই হো
আরে মাছ উজাইছে বাপোই নানান জাতি
আরে ধুতরা, চান্দা, খড়িকাটি, শাল, বৈল ……। ”
এগুলো সব মাছের নাম।
ওই গানেই আরও কিছু মাছের হদিস মেলে। যেমন, মিরকা, বাইগর, ভাঙনা, দারিকা। ‘কোচবিহারের ইতিহাস’ নামে ভগবতীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বইয়ে আরও কিছু মাছের উল্লেখ পাই। যেমন গতা, নালসা, ছিপড়া, নাওয়ানি, হাড়িখাই, ডেকরা, আচিম ইত্যাদি। রাজবংশী সমাজের এই মৎস্যপ্রীতির প্রতিফলন দেখা যায় মাছের নামে উত্তরবঙ্গের অনেক এলাকার নামকরণে। কয়েকটি জায়গার নাম বলি। খলিসামারি, কুর্শামারি, শিঙ্গিমারি, খট্টিমারি, চ্যাংমারি, মাগুরমারি, পুঁটিমারি, দারিকামারি, রুইডাঙা, চান্দামারি, ছিপড়া, বাতাসি, ফলিমারি, গচিমারি, শালমারা এমন অজস্র জায়গার নাম মাছের নামে।

[the_ad id=”270086″]

রাজবংশীরা ছাড়াও উত্তরবঙ্গের আদিম জনজাতি রাভা সমাজের সংস্কৃতিতেও জড়িয়ে আছে মাছ। জাকোই দিয়ে চিংড়ি মাছ ধরার একটি নাচ অত্যন্ত জনপ্রিয় রাভা জনজাতির মধ্যে। নাচটির নাম “নাং-চেঙরানি। ” এই নাচের সঙ্গে যে গান গাওয়া হয়, তাতে চিংড়ির উল্লেখ তো আছেই, কিছু জায়গার নামও আছে। গানটির বাংলা অনুবাদের সামান্য অংশ বলি।…
“ফালাকাটার জাকোই দিদি
শিঙিমারির খোলই দিদি
সেই খোলই দিয়ে সেই জাকোই দিয়ে
নদীতে আমরা চিংড়ি মাছ ধরতে যাই….”
রাভা মহিলাদের নাচ এই নাক চেংরানি। রাভা ভাষায় গানটি হবে এরকম…
“ফালাকাটিঙি পালাও আনাও
শিঙিমারিঙি পুকু আনাও
উ দুকমৌন ঔ পালাওমৌন
চিকা ঝরা হাঁসাময় নাক চেংরৌতিয়া… ”

রাজবংশী সমাজের এই মৎস্যপ্রীতির প্রতিফলন দেখা যায় মাছের নামে উত্তরবঙ্গের অনেক এলাকার নামকরণে। কয়েকটি জায়গার নাম বলি। খলিসামারি, কুর্শামারি, শিঙ্গিমারি, খট্টিমারি, চ্যাংমারি, মাগুরমারি, পুঁটিমারি, দারিকামারি, রুইডাঙা, চান্দামারি, ছিপড়া, বাতাসি, ফলিমারি, গচিমারি, শালমারা এমন অজস্র জায়গার নাম মাছের নামে।

আগেই বলেছি, নদীনালা, খালবিল, ঝোরাবেষ্টিত উত্তরবঙ্গে মাছ রাজবংশী কৃষ্টি সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে ভাবে মিশে আছে। রাজবংশী পরিবারে সন্তানদের নামকরণেও আছে মাছের নামের প্রভাব। আজকাল অবশ্য এই পুরনো নাম আর কেউ রাখে না। কিন্তু এখনও প্রবীণ-প্রবীণাদের নামে মাছের উৎস মিলবে। যেমন, ঘারুয়া, ডিপালু, ঢেড়ুয়া, টেপা, টেপি, চান্দা ইত্যাদি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক মাছ হারিয়েও গিয়েছে। মানুষের লোভে বুঁজে যাচ্ছে খালবিল। দখল হচ্ছে নদী। এই নদীকেন্দ্রিক সভ্যতা, সংস্কৃতিও তাই বিপন্ন। নদীর বিপন্নতায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য যেমন আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে, তেমনই প্রত্যেক নদী, প্রতিটি মাছকে ঘিরে যে আলাদা আলাদা উপাখ্যান, গল্পকথা – সেসবও হারিয়ে যাওয়ার মুখে। যদি কেউ প্রতিমা বড়ুয়ার বিখ্যাত গান “গদাধরের পাড়ে পাড়ে রে” র সঙ্গী হয়ে বাংলার এই উত্তরখণ্ডে ঘুরে বেড়ান, এই মাছ আখ্যান তাঁকে মোহিত করবেই করবে। মাছময় সংস্কৃতি, মাছের আঁশটে গন্ধে একটা গতিময় জীবন। মাছ এখানে রোজনামচা।

কর্মসূত্রে কলকাতায় দীর্ঘদিন বসবাসের পর থিতু শিলিগুড়ি শহরে। নিজেকে ডুয়ার্সের সন্তান বলতে ভালোবাসেন। গ্রামের আদি বাড়ির একপাশে বোড়ো আদিবাসী বসত, অন্যপাশে সাঁওতাল মহল্লা। বক্সার রায়ডাক জঙ্গল গ্রামের কাছেই। শৈশব, কৈশোরে বাড়ির উঠোনে চলে আসতে দেখেছেন হাতি, চিতাবাঘ, হরিণ। জঙ্গলে কুল কুড়োতে কুড়োতে আর নদীতে ঝাঁপিয়ে বড় হওয়া। প্রকৃতি আর উপজাতিরাই প্রতিবেশী। যৌবনে এই পরিবেশে কিছুকাল বাউন্ডুলে জীবনের পর সিদ্ধান্ত, সাংবাদিকতা ছাড়া আর কোন কাজ নয়।

Picture of গৌতম সরকার

গৌতম সরকার

কর্মসূত্রে কলকাতায় দীর্ঘদিন বসবাসের পর থিতু শিলিগুড়ি শহরে। নিজেকে ডুয়ার্সের সন্তান বলতে ভালোবাসেন। গ্রামের আদি বাড়ির একপাশে বোড়ো আদিবাসী বসত, অন্যপাশে সাঁওতাল মহল্লা। বক্সার রায়ডাক জঙ্গল গ্রামের কাছেই। শৈশব, কৈশোরে বাড়ির উঠোনে চলে আসতে দেখেছেন হাতি, চিতাবাঘ, হরিণ। জঙ্গলে কুল কুড়োতে কুড়োতে আর নদীতে ঝাঁপিয়ে বড় হওয়া। প্রকৃতি আর উপজাতিরাই প্রতিবেশী। যৌবনে এই পরিবেশে কিছুকাল বাউন্ডুলে জীবনের পর সিদ্ধান্ত, সাংবাদিকতা ছাড়া আর কোন কাজ নয়।
Picture of গৌতম সরকার

গৌতম সরকার

কর্মসূত্রে কলকাতায় দীর্ঘদিন বসবাসের পর থিতু শিলিগুড়ি শহরে। নিজেকে ডুয়ার্সের সন্তান বলতে ভালোবাসেন। গ্রামের আদি বাড়ির একপাশে বোড়ো আদিবাসী বসত, অন্যপাশে সাঁওতাল মহল্লা। বক্সার রায়ডাক জঙ্গল গ্রামের কাছেই। শৈশব, কৈশোরে বাড়ির উঠোনে চলে আসতে দেখেছেন হাতি, চিতাবাঘ, হরিণ। জঙ্গলে কুল কুড়োতে কুড়োতে আর নদীতে ঝাঁপিয়ে বড় হওয়া। প্রকৃতি আর উপজাতিরাই প্রতিবেশী। যৌবনে এই পরিবেশে কিছুকাল বাউন্ডুলে জীবনের পর সিদ্ধান্ত, সাংবাদিকতা ছাড়া আর কোন কাজ নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস