(Syria) মধ্য ডিসেম্বরের মস্কো। বরফ ঢাকা রাস্তার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছেন জর্জিনা দেইরাতানি। রুশ রাজধানীর এক বহুতলের ফ্ল্যাটের জানলা থেকে বছর সাইত্রিশের এই সিরীয় চিকিৎসক আসলে মস্কোর রাজপথ দেখছেন না। তাঁর চোখের সামনে ভাসছে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার লাতাকিয়ার ধূ ধূ প্রান্তর। মনে পড়ছে তাদের ছোট্ট জনপদে সিরিয় খ্রিস্টানদের মহাধূমধাম করে বড়দিন পালন করা। আবার আরেক বড়দিন চলে এল। কিন্তু যিশুর জন্মদিনের আনন্দ কি কোথাও হারিয়ে গেল? বাবা মারা যাওয়ার পর রুশ মাকে নিয়ে মস্কো চলে এসেছেন জর্জিনা। তাও বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল। এতদিন ভাবতেন ঠিক একদিন পশ্চিম এশিয়ার সেই জনপদে ফিরবেন। (Syria)
কিন্তু বাসার অল আসাদ জমানার পতনের পরে সবই যেন কেমন তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে জর্জিনার মতো ইউরোপ আর পশ্চিম এশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ সিরীয় উদ্বাস্তুর। অনেকেই ভাবছেন দেশে ফেরার কথা। এর মধ্যে কেউ কেউ উদ্বাস্তু শিবির থেকে পাট উঠিয়ে পরিবারের হাত ধরে ফেলে আসা দেশের পথও ধরেছেন। কিন্তু মনে মনে জানেন যে দেশ ফেলে গিয়েছিলেন আর যে দেশে ফিরছেন তা এক দেশ নয়। অজানা এক শঙ্কা যেন সিরিয়ার পথঘাট ঘিরে রেখেছে। এক অন্ধকার পেরিয়ে আরেক আঁধারের পথে পা বাড়াচ্ছেন না তো? (Syria)
আরও পড়ুন: কেন থমকে গেল কমলার হোয়াইট হাউজ অভিযান
সিরিয়া আদতে বহু খণ্ডিত ভূখণ্ড
আদতে এই শঙ্কার শিকড় রয়েছে সিরিয়ার বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে। নামেই সিরিয়া এক দেশ কিন্তু আদতে সেই দেশ এখন বহুধা বিভক্ত। হায়াত তাহরির অল শাম (এইচটিএস) নামে যে জঙ্গি গোষ্ঠী ১১ দিনের যুদ্ধে বিদ্যুৎগতিতে উত্তর পশ্চিমে সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো থেকে শুরু করে একে একে ইদলিব, হামা, হোমসের মতো বড় শহরগুলো দখল করে বিনাযুদ্ধে রাজধানী দামাস্কাস করেছে, তারাও কিন্তু আদতে সিরিয়ার উত্তর থেকে দক্ষিণ একটা অংশ মাত্র দখলে রাখতে পেরেছে। দেশের উত্তর পূর্ব অংশের পুরোটাই মার্কিন ও ওকুর্দ সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্রাটিক ফোর্সের (এসডিএফ) হাতে। এই দুই প্রধান প্রতিপক্ষ ছাড়াও সিরিয়া-তুরস্ক, সীমান্ত অঞ্চল তুরস্ক সমর্থিত জঙ্গিদের হাতে। আবার দেশের দক্ষিণাঞ্চল বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের দখলে। অন্যদিকে দক্ষিণ পশ্চিমে ইজরায়েল সীমান্ত বরাবর গোলান মালভূমি পুরোটাই তেল আভিভের দখলে। অর্থাৎ সিরিয়া এখনই কার্যত কয়েক টুকরো হয়ে গিয়েছে। (Syria)

জটিল ঘূর্ণাবর্ত
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সর্বনাশের এটা কোনও শেষ দৃশ্য তো নয়ই, বরং আসন্ন আরও বৃহৎ বিপদের অশনিসঙ্কেত মাত্র। দেখা যাচ্ছে ৫৩ বছরের আসাদ জমানার পতনে পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতিতে যেমন শিয়াপন্থী ইরান ও রাশিয়া কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, তেমনই লাভবান হয়েছে সুন্নিপন্থী তুরস্ক ও ইজরায়েল। এবং ঘটনাপ্রবাহ যেদিকে যাচ্ছে তাতে তেল আভিভ ও আঙ্কারার সংঘাতও অনিবার্য হয়ে পড়ছে, কারণ দু’পক্ষই চাইবে সিরিয়াতে তাদের প্রভাব বাড়াতে।
শুধু তাই নয়, দেশের পূর্বাঞ্চলের ক্ষমতাসীন এসডিএফ ও দামাস্কাসে ক্ষমতা দখলকারী এইচটিএসের মধ্যে সংঘাতও অনিবার্য হয়ে পড়ছে। আর এতে আদতে ওয়াশিংটনের শ্যাম রাখি না কূল রাখি অবস্থা। (Syria)
শঙ্কার শিকড় রয়েছে সিরিয়ার বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে। নামেই সিরিয়া এক দেশ কিন্তু আদতে সেই দেশ এখন বহুধা বিভক্ত।
কারণ একদিকে যেমন কুর্দ সমর্থিত এসডিএফকে সরাসরি ওয়াশিংটন সহায়তা দেয়, দেশের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে সিরিয়া -ইরাক ও সিরিয়া জর্ডন সীমান্ত বরাবর আমেরিকার স্বঘোষিত অল তনাফ ‘ডিকনফ্লিকশন জোন’ বা সমরবিরোধী এলাকায় থাকা মার্কিন ঘাঁটি থেকে প্রয়োজনীয় সামরিক রক্ষাকবচ দেয়, তেমনি দামাস্কাসে ক্ষমতা দখলকারী এইচটিএসের মূল মদতদাতা তুরস্ক আবার ওয়াশিংটনের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সামরিক জোটের সদস্য। ইতিমধ্যেই এইচটিএসের সঙ্গে কুর্দ বাহিনীর বিচ্ছিন্ন কয়েকটি সংঘর্ষ হয়েওছে। তাই ওয়াশিংটন দ্রুত পরিস্থিতি না সামলালে পুরো ঘটনাপ্রবাহ পেন্টাগনের হাতের বাইরে চলে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে হয়তো সরাসরি ওয়াশিংটনকে রঙ্গমঞ্চে নামতে হতে পারে। ঠিক এই পরিস্থিতিই পেন্টাগন এড়াতে চাইছে। কারণ সিরিয়ায় এখনও রুশ উপস্থিতি বর্তমান। (Syria)
আরও পড়ুন: ডিপফেক-মানবসভ্যতার মারিয়ানা ট্রেঞ্চ?
আঙ্কারা ন্যাটোয় থাকলেও মস্কোর সঙ্গে তার সম্পর্ক মোটেই শীতল নয়। আর পরাজিত আসাদ জমানার পৃষ্ঠপোষক মস্কো বর্তমানে কোনঠাসা হলেও ভূমধ্যসাগর বরাবর সিরিয়ায় লাতাকিয়াতে নৌঘাঁটি আর সন্নিকটেই খেইমিমে বিমানঘাঁটি রয়েছে। (এই খেইমিম বিমানঘাঁটি থেকে রাশিয়ায় পালিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুৎ বাসার অল আসাদ)। তাই ইজরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মস্কোকে দোসর করতেই পারে আঙ্কারা। আর সেক্ষেত্রে সিরিয়া তথা পশ্চিম এশিয়ায় ফের পায়ের তলায় জমি পেয়ে যাবেন রুশ রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন। (Syria)

সিরিয়াকে বাগে আনতে তুর্কি চাল
এতদিন পর্যন্ত সিরিয়া, জর্ডন বা ইরাকে চেষ্টা করেও তেমন কোনও প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি তুরস্ক। মস্কো পন্থী আসাদ জমানা যেমন ছিল এই পথে এক প্রধান অন্তরায় তেমনই আরেক অন্তরায় হল কুর্দরা। পশ্চিম এশিয়ার চারটি দেশ তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক, ইরানের পাহাড়ি অঞ্চলে হাজার বছর ধরে ছড়িয়ে রয়েছে এই গোষ্ঠীর ৩ কোটি মানুষ। স্বাধীনতার জন্য এরা প্রতিটি দেশে লড়ে যাচ্ছে। সাদ্দাম হুসেন পরবর্তী জমানায় ইরাক সিরিয়া জুড়ে থাকা ইসলামি স্টেটকে ধ্বংস করতে ওয়াশিংটনকে সর্বত ভাবে সহায়তা করে কুর্দ মিলিশিয়া বাহিনী পেশমার্গ। তারপর ইসলামী স্টেটের ধ্বংসস্তুপের উপরে এসডিএফ র পতাকার নীচে উত্তর সিরিয়াতে গড়ে তুলেছে নিজস্ব এলাকা। (Syria)
ঠিক এখানেই তুরস্কের চিন্তা। তুরস্কে তুর্কি কুর্দদের জন্য লড়াই করা কুর্দ রাজনৈতিক দল পর্টিয়া কার্কেরেন কুর্দিস্থান (সংক্ষেপে পিকেকে যা কুর্দিস্তান ওর্য়ার্কাস পার্টি নামেও পরিচিত)-র সঙ্গে আঙ্কারার রিসেপ তায়িপ এর্ডোগান সরকারের বিরোধ অনেক দিনের। পিকেকের সামরিক বাহিনী হেজেন পারাসতিনা জেল (সংক্ষেপে এইচপিজি যা পিপলস ডিফেন্স ফোর্স নামেও পরিচিত) সঙ্গে তুর্কি সেনার সংঘর্ষও প্রায়ই হয়। আঙ্কারার চিন্তা আসাদ জমানার পতনের পরে তুরস্কে কুর্দিস্থান বানানোর উদ্যোগ আরও গতি পেতে পারে। তাই সিরিয়ায় কুর্দদের বিরোধিতা করা এইচটিএস ও অন্য জঙ্গিবাহিনীকে মদতও দিচ্ছে আঙ্কারা। কারণ আঙ্কারার হিসাবে পিকেকের মূল মদত আসবে কুর্দ সমর্থিত এসডিএফের কাছ থেকে। তাই এসডিএফকেই দুর্বল করার জন্য এইচটিএস ও অন্য জঙ্গিবাহিনীকে ব্যবহার করছে আঙ্কারা। প্রাথমিকভাবে ফলও মিলেছে। এসডিএফের হাত থেকে আলেপ্পো ছিনিয়ে নিয়েছে তুর্কি মদতপুষ্ঠ জঙ্গিরা। আপাতত এইচটিএসের মাধ্যমে দামাস্কাসে প্রভাব বাড়াতে উদ্যোগী এর্ডোগান। (Syria)
অগস্ট আন্দোলন কিংবা মধ্যবিত্তের এগিয়ে আসার গল্প
তুরস্ক যে এ ব্যাপারে কতটা সিরিয়াস তা বোঝা যায় যখন সেদেশের বিদেশমন্ত্রী ও এর্ডোগানের সম্ভাব্য উত্তরসূরী হাকান ফিদান নিজে দামাস্কাসে এসে এইচটিএস নেতা আবু মহম্মদ অল জোলানি ওরফে আহমেদ হুসেন অল শারার সঙ্গে একান্ত বৈঠক তো করলেনই, সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনও করলেন। সেই সাংবাদিক সম্মেলনে কুর্দ পিতা ও তুর্কি মায়ের সন্তান ফিদান সাফ জানিয়ে দিলেন সিরিয়া প্রশাসনে কুর্দদের কোনও ভূমিকা থাকবে না। আঙ্কারা ইতিমধ্যে জোলানি প্রশাসনের গুপ্তচর বিভাগ ঢেলে সাজতে সাহায্য করছে তাই নয়, নয়া জমানার পায়ের তলার জমি শক্ত করার জন্য নয়া সংবিধান লেখার কাজে সাহায্য করছে। অন্যদিক দিয়ে দেখলে এটা তুরস্কেরও সিরিয়াতে পায়ের নীচে জমি শক্ত করার চেষ্টা। (Syria)
জোলানির নব অবতার
সত্যি বলতে কি একদা অল কায়দার সহযোগী জোলানির নিজেরও বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর তাগিদ রয়েছে কারণ জোলানি নিজে বিলক্ষণ জানেন রুশ বিমান ঘাঁটি ও নৌঘাঁটি সিরিয়াতে রয়ে গিয়েছে। তাঁর বাহিনীর এখনও এত ক্ষমতা নেই যে রুশ সামরিক শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। বিশেষত ইজরায়েলি টার্গেট বম্বিংয়ের ফলে সিরিয়ার নৌ আর বিমানবাহিনী যখন ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। অস্ত্রভাণ্ডারেরও সিংহভাগ ইজরায়েলি হানায় জ্বলে রাখ হয়ে গিয়েছে। আরও বিপদ হল মার্কিন সেনাঘাঁটিও দক্ষিণ সিরিয়াতে আছে এবং আপাতত দেশের মধ্যে তাঁর প্রতিপক্ষ কুর্দরা ওয়াশিংটনের ছত্রছায়ায় রয়েছে। (Syria)
আরও পড়ুন: ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদেশনীতি ও সমকালীন বিশ্ব
এর্ডোগান প্রশাসনের দু’নম্বরের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে সে কাজ শুরুও করে দিয়েছেন জোলানি। অ্যারন ওয়াই জেলিন তাঁর ‘দ্য এজ অফ পলিটিক্যাল জিহাদিজম-আ স্টাডি অফ হায়াত তাহরির অল-শাম’ বইয়ে স্পষ্ট লিখছেন, জোলানির পরিবারের আদি বাসভূমি ছিল সিরিয়ার গোলান মালভূমি। ১৯৬৭ সালে ৬ দিনের লড়াইয়ের পর ইজরায়েল গোলান মালভূমি দখল করে নিলে জোলানির পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়। ১৯৮২ সালে রিয়াধে জন্ম আহমেদ হুসেন অল শারার। ২০০৩ সালে অল কায়দায় যোগ দেওয়ার মাধ্যমে অল শারা ওরফে জোলানির সন্ত্রাসবাদে হাতেখড়ি। অল কায়দার নির্দেশেই ২০১১ এর পর অশান্ত সিরিয়াতে জিহাদি কাজকর্ম চালানোর জন্য জাবাৎ অল নুসরা গড়ে তোলেন। ২০১৬ সালে অল কায়দার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে গড়ে তোলেন জাবাৎ ফাতাহ অল শাম যা কী না এইচটিএসের পূর্বসুরী। (Syria)
অ্যারন ওয়াই জেলিনের মতে, জোলানি নিজে ভাল করেই বোঝেন জনমানসে ভাবমূর্তি ঠিক না করতে পারলে আমেরিকার সন্ত্রাসবাদীর তালিকা থেকে বেরোনো যেমন সম্ভব নয় তেমনি বিশ্বে মাণ্যতা পাওয়াও সম্ভব নয়। অন্য সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের নেতারা যখন প্রকাশ্যেই আসেন না, তখন উত্তর পশ্চিম সিরিয়ার ইদলবে প্রকাশ্যে জোলানি খাবার খেয়েছেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন। দামাস্কাস দখলের পর আপাত দৃষ্টিতে প্রতিশোধের রাস্তায় হাঁটেননি। গুরুতর অপরাধের অভিযোগ না থাকলে আসাদ প্রশাসনের সবার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। বাসার অল আসাদ পতনের পরে দামাস্কাসের প্রাচীন উমিয়াদ মসজিদে দাঁড়িয়ে জোলানি নতুন সিরিয়া গড়ার ডাক দিয়েছেন। (Syria)

পড়শিদেরও শান্তিবার্তা শুনিয়েছেন জোলানি। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসা লেবাননের দ্রুজ ধর্মীয় নেতা ওয়ালিদ জুম্বলাতকে দামাস্কাসের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদে বসে জোলানি আশ্বস্ত করেছেন যে সিরিয়া আর লেবাননের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না। আদতে এই আশ্বাস দেওয়ার কারণ আছে। ১৯৭৬ সালে সিরীয় সেনা লেবাননে ঢোকে আর ২০০৫ সালে দামাস্কাসের মদতপুষ্ঠ হিজবুল্লা জঙ্গিদের হাতে তৎকালীন জনপ্রিয় লেবানন প্রধানমন্ত্রী রফিক হারারি নিহত হলে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দামাস্কাস সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় লেবানন থেকে। (Syria)
জুম্বলাতের পিতাও নিহত হন হিজবুল্লার হাতে। অর্থাৎ জুম্বলাতকে সাদরে আপ্যায়ণ করে আসাদ জমানায় ভুক্তভোগী পড়শিদের শান্তিবার্তাই দিচ্ছেন জোলানি।
আর একটি বিষয় লক্ষ্যনীয়। জোলানির পোষাকও বদলে গিয়েছে। তুর্কি বিদেশমন্ত্রী বা লেবাননের ধর্মীয় নেতা, উভয় ক্ষেত্রেই জোলানিকে আর জিহাদি যোদ্ধার বেশে দেখা যায়নি। বরং জোলানির পরনে ছিল পুরোদস্তুর পশ্চিমি স্যুট। এটাও ইঙ্গিত দিচ্ছে এইচটিএস এখন জঙ্গি কার্যকলাপ ছেড়ে রাষ্ট্রচালনায় আগ্রহী।
এতে কাজও হয়েছে। আমেরিকা তাঁর উপর থেকে ১০ কোটি ডলারের পুরস্কার প্রত্যাহার করেছে। পশ্চিমি বিশ্ব একে একে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছে। জোলানির আশা ওয়াশিংটন পাশে থাকলে পুরো সিরিয়াকে এক পতাকার তলায় আনা সম্ভব হবে। (Syria)
আরও পড়ুন: ফেসবুকের অক্সিজেন ও কলকাতার জেগে ওঠা
এবার কি ইজরায়েল-তুর্কি সংঘাত?
তবে বিশেষজ্ঞরা অদূর ভবিষ্যতে তেল আভিভ আঙ্কারা সংঘাতের আশঙ্কা করছেন। কারণ উভয়েই সিরিয়ার প্রভাব বাড়াতে মরীয়া। সেই উদ্দেশ্যে আসাদ জমানার পতন হতেই গোলান মালভূমি কব্জা করেছে ইজরায়েল। সিরিয়ার সামরিক শক্তিও প্রায় ধূলিসাৎ করে দিয়েছে ইজরায়েল।
এতে অবশ্য শাপে বর হয়েছে আঙ্কারার। জোলানি আরও বেশি করে এর্ডোগানের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। আঙ্কারার আরও সুবিধা হয়েছে জোলানির ইরান নিয়ে আরেক ঘোষণায়। জোলানি যেহেতু প্রকাশ্যেই বলেছেন যে সিরিয়াকে আর তেহরানের কোনও গেমপ্ল্যানের অংশ হতে দেবেন না। এতেই আঙ্কারা এক ঢিলে দুই পাখি মারার ছক কষছে। এক তো আসাদ জমানা বিদায়ের সঙ্গে ওই জমানার মদতদাতা মস্কো আর তেহরানেরও বিদায় ঘণ্টা বেজেছে। অর্থ্যাৎ প্রকৃত অর্থেই আপাতত এক্ষেত্রে এর্ডোগানের সামনে দামাস্কাস কার্যত ফাঁকা মাঠ। শুধু দেশের পূর্বে কুর্দরা আর দক্ষিণে ইজরায়েল তাদের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। (Syria)
ইরান চলে যাওয়ায় তুরস্কের সামনে আরেক সম্ভাবনার দরজাও খুলে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এতদিন তেহরান সিরিয়ার মধ্য দিয়ে তাদের মদতপুষ্ঠ দুই জঙ্গিগোষ্ঠী লেবাননের হিজবুল্লাহ আর প্যালেস্তাইনের হামাসকে সব ধরণের সাহায্য পাঠাত। ইজরায়েলের আক্রমণে দুটো জঙ্গিগোষ্ঠীর অবস্থা শোচনীয়। আসাদ জমানা পতনের সঙ্গে তেহরান থেকে সরবরাহ চ্যানেলও ডেড সিতে গিয়ে মিশেছে। ঠিক এই সময় তুরস্ক সাহায্যের হাত বাড়ালে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে এক নয়া ফ্রন্ট খুলে যেতে পারে যা পুরো পশ্চিম এশিয়াকে যুদ্ধের হোমানলে ঠেলে দিতে পারে।
জর্জিনার কথায় ফিরি। এই মহিলা চিকিৎসকের কথায়, “সবাইয়ের এত আনন্দ উচ্ছ্বাসের তো কোনও কারণ দেখি না। আমি তো সিরিয়ায় আরও আঁধার দেখছি।” (Syria)
তথ্যসূত্রঃ ‘দ্য এজ অফ পলিটিক্যাল জিহাদিজম-আ স্টাডি অফ হায়াত তাহরির অল-শাম’- অ্যারন ওয়াই জেলিন
মূলত শিল্প বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাংবাদিকতায় ব্যপ্ত বিগত তিন দশক। তবে সুযোগ পেলে ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়া বা অন্য ধরনের লেখাতে প্রাণের আরাম খোঁজার চেষ্টাও চলে