আজ শুনে নেওয়া যাক দ্বিতীয় মানহানির মামলাটির কথা, যার নায়িকা, বাংলার প্রথম মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম প্রায় সকলেরই জানা। কারণ সাম্প্রতিককালে জনপ্রিয় ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে তাঁর জীবনী দেখানো হয়েছে, এবং আনন্দবাজার পত্রিকায় ২০১৭ সালে শামসুল হক এবং ২০১৯ সালে পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয় নিয়ে বিশদে লিখেছেন। কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সমবয়সী। বিপুল সামাজিক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে তাঁকে ন্যায্য সম্মান অর্জন করতে হয়েছিল। এই প্রতিকূলতার মধ্যে অন্যতম ছিলেন মেডিকেল কলেজের অতি রক্ষণশীল অধ্যাপক রাজেন্দ্রচন্দ্র চন্দ্র– যিনি মৌখিক পরীক্ষায় এক নম্বর কম দিয়ে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়কে ফেল করিয়ে ডাক্তারির ডিগ্রি আটকে দেন– যতটুকু অনিষ্ট করা তাঁর সাধ্যের মধ্যে ছিল, তিনি করে দেখান।
কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের পক্ষে ছিলেন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ জন মার্টিন কোটস (John Martin Coates)– তিনি কাদম্বিনীকে লাইসেন্সিয়েট ইন মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি– বা এল-এম-এস- সার্টিফিকেট পেতে সাহায্য করেন। কিন্তু দু’বছর পরে, সে পরীক্ষার ফাইনালেও সেই রাজেন্দ্রচন্দ্রের ষড়যন্ত্রে আবার তাঁকে এক নম্বরের জন্য ফেল করানো হয়। তবে এতেই হেরে যাননি কাদম্বিনী, সুদূর এডিনবরাতে গিয়ে তিন মাস কঠোর পরিশ্রম করে ডিগ্রি অর্জন করেন। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের অধ্যবসায় দেখে মুগ্ধ হয়ে প্রশংসা করেছিলেন।(Defamation case)

মজার বিষয়, শুধু শিক্ষাজগতেই যে তাঁকে এরকম বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছিল তা নয়– সর্বসাধারণের কাছেও এই পথিকৃতকে হেনস্থা হতে হয়েছে বারংবার। নারীশিক্ষাবিরোধী মানুষের অভাব ছিল না তখন সমাজে। বঙ্গবাসী কাগজে তাঁকে নিয়ে একটি কার্টুন ছাপা হয়, যাতে দেখানো হয়েছিল যে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর স্বামী দ্বারকানাথের নাকে দড়ি দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। নীচে লেখা নানান অশালীন মন্তব্য– যার একটিতে তাঁকে পতিতা বলা হয়! বঙ্গবাসীর এই সংখ্যাটি অনেক খুঁজে এখনও পাওয়া যায়নি– তাই শুধু শামসুল হকের ও অন্য কিছু ইংরিজিতে লেখা জীবনীর ভিত্তিতে এটা জানানো হল।
কিন্তু কাদম্বিনী ও দ্বারকানাথ বঙ্গবাসীর সম্পাদক মহেন্দ্রলাল পালকে ছেড়ে দেননি। তাঁরা আদালতে অভিযোগ করেন, ও বিচারে মহেন্দ্র পালের ছ’মাসের জেল এবং একশো টাকা জরিমানা হয়। হেনস্থার বিরুদ্ধে একজন মহিলার রুখে দাঁড়ানোর এই মামলা তখনকার সমাজে বেশ আলোড়ন ফেলেছিল।
এবার তিন নম্বর মামলাটির দিকে আলোকপাত করা যাক! কাদম্বিনী, দ্বারকানাথ, হেরম্বচন্দ্র– এঁরা নিজেরাই সব ডাকসাইটে মানুষ– এবং আত্মীয়তা-কুটুম্বিতাসূত্রে এঁদের সঙ্গে জড়িত নানান লোকেরা বাংলায় এক ডাকে পরিচিত। সে তুলনায় আমাদের পরের গল্পের (খল)নায়ক উইলিয়াম হেস্টি (William Hastie – ১৮৮২ – ১৯০৩) এবং নায়িকা মেরি পিগট (Mary Pigot ১৮৩৭ – ১৯২৪) হয়তো অপেক্ষাকৃত অপরিচিত– তাই তাঁদের নিয়ে একটুখানি বিশদে লিখছি।
উইলিয়াম হেস্টি স্কটল্যান্ডের লোক। ১৮৭৫ থেকে বছর তিন হল্যান্ড ও জার্মানিতে কাটিয়ে ১৮৭৮ সালে ছত্রিশ বছর বয়সে তিনি চার্চ অফ স্কটল্যান্ডে যোগ দিয়ে কলকাতা আসেন ও তখনকার জেনারাল অ্যাসেম্বলি ইন্সটিটিউশনে (বর্তমানে স্কটিশ চার্চ কলেজ) অধ্যক্ষের পদে নিযুক্ত হন।
উইলিয়াম হেস্টি স্কটল্যান্ডের লোক। ১৮৭৫ থেকে বছর তিন হল্যান্ড ও জার্মানিতে কাটিয়ে ১৮৭৮ সালে ছত্রিশ বছর বয়সে তিনি চার্চ অফ স্কটল্যান্ডে যোগ দিয়ে কলকাতা আসেন ও তখনকার জেনারাল অ্যাসেম্বলি ইন্সটিটিউশনে (বর্তমানে স্কটিশ চার্চ কলেজ) অধ্যক্ষের পদে নিযুক্ত হন।
১৮৮২ সালে শোভাবাজার রাজবাড়ির এক শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে সে বাড়ির গোপিনাথের বিগ্রহ রূপোর আসনে বসিয়ে পুজো করা হয়। স্টেটসম্যান কাগজে এই অনুষ্ঠানের বর্ণনা পড়ে হেস্টি রেগেমেগে পৌত্তলিকতা বিরোধী তিনটি চিঠি পাঠান– যাতে পরোক্ষভাবে তিনি লেখেন যে হিন্দুদের উদ্ধার পাওয়ার একমাত্র আশা হল খ্রিস্টান হয়ে যাওয়া।
চিঠিগুলি পড়ে বঙ্কিমচন্দ্র কেমন রাগে জ্বলে উঠবেন তা তো আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি। রামচন্দ্র ছদ্মনামে পাঠানো একটি চিঠিতে তিনি লিখলেন যে এইসব আবর্জনা না ছাপিয়ে স্টেটসম্যান যদি কেবল দুর্গাপুজোর ছুটির উপযোগী নানা বিজ্ঞাপন ছাপায় তাহলে কোনও ক্ষতি নেই! হিন্দুধর্ম সম্বন্ধে যাঁর অগাধ অজ্ঞতা তাঁর সঙ্গে বিতর্ক অপ্রয়োজনীয়। তারপর উত্তর দিলেন হেস্টি, এবং প্রত্যুত্তর দিলেন বঙ্কিমচন্দ্র– এইবার নিজের নামে। এই চিঠিচালাচালি চলেছিল মাস দুই। হেস্টির এক জীবনীকার লিখেছেন যে এই জন্য বেচারিকে কলকাতার রাস্তায় একদিন গণধোলাই খেতে হয়েছিল।
এই হেস্টিই নাকি তাঁর ছাত্র নরেন্দ্রনাথ দত্তকে প্রথম বলেন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে গিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে– অন্তত নরেন্দ্রনাথের সহপাঠী হরমোহন মিত্রের বর্ণনাতে তাই পাওয়া যায়। শোনা যায় হেস্টি একদিন ইংরিজির ক্লাসে বিকল্প শিক্ষক হয়ে এসে তাঁদের ওয়ার্ডসওয়ার্থের ‘এক্সকারশন’ কবিতাটি পড়িয়েছিলেন।
কিন্তু আর একটি প্রচলিত গল্প অনুযায়ী, ঠিক ওই সময়তেই, ১৮৮১ সালের শেষ দিকে, এই হেস্টিই নাকি তাঁর ছাত্র নরেন্দ্রনাথ দত্তকে প্রথম বলেন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে গিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে– অন্তত নরেন্দ্রনাথের সহপাঠী হরমোহন মিত্রের বর্ণনাতে তাই পাওয়া যায়। শোনা যায় হেস্টি একদিন ইংরিজির ক্লাসে বিকল্প শিক্ষক হয়ে এসে তাঁদের ওয়ার্ডসওয়ার্থের ‘এক্সকারশন’ কবিতাটি পড়িয়েছিলেন। প্রকৃতির রূপে কবির সন্মোহিত হয়ে যাওয়া বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন যে এরকম ভাবরসে সন্মোহিত বা সমাধিস্থ অবস্থা বুঝতে গেলে রামকৃষ্ণকে গিয়ে দেখা উচিত।
তবে হেস্টির কথা শুনেই যে স্বামী বিবেকানন্দ প্রথম দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে গিয়েছিলেন তা সম্ভবত ঠিক নয়– কারণ আরও দু’তিনটি মত আছে এই নিয়ে যেগুলি ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে বেশি।

এখানেও আরেক মজার কথা, হেস্টিকে নিয়ে মানহানির মামলাটি হিন্দুধর্মের বিষয় নিয়ে হয়নি। বলা যেতে পারে সেটি হয়েছিল খ্রিষ্টধর্মের মধ্যেই রক্ষণশীলতার সঙ্গে অপেক্ষাকৃত আধুনিকতার সংঘর্ষে।
হেস্টির চেয়ে পাঁচ বছর বড় মেরি পিগট জন্মেছিলেন চন্দননগরে অর্থাৎ তিনি মেমসাহেব হলেও বাংলার মেয়ে। যদিও তাঁর বাবা জুলিয়াস পিগট ছিলেন ইংরেজ নীল-আবাদী, আর মা ডেসিরে কাসাবঁ (Desiree Casabon) ছিলেন ফরাসী, তবু কোনও কারণে মেরি ইউরেশিয়, বা আধা ভারতীয় বলেই গণ্য হতেন। এটি উল্লেখযোগ্য কারণ তখনকার সমাজে খাস ইংরেজ ‘অ্যাংলো ইন্ডিয়ান’দের চেয়ে ইউরেশিয়দের স্থান ছিল অনেক নীচে।
১৮৪০ নাগাদ চন্দননগরে নীলের ব্যবসা কমে এলে সেসব বিক্রি করে কলকাতায় চলে আসেন জুলিয়াস, এবং এখনকার গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলের কাছে ওয়াটার্লু স্ট্রিটে ক্ল্যারেন্ডন হোটেলের একটা অংশ কিনে সেখানেই তাঁরা বসবাস শুরু করেন। উনিশ বছর বয়স থেকেই মেরি শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন, এবং বছর তিন লখনৌতে কাটানোর পর ১৮৬৫ সালে কলকাতায় ফিরে বেথুন স্কুলের প্রধান শিক্ষক হন। সেই সময়ে ওই স্কুলের সেক্রেটারি ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। মেরি চেয়েছিলেন স্কুলটি বড় করতে, কিন্তু সরকারের মত ছিল অন্য– এইসব মতভেদের জন্য ১৮৬৮ সালে সরকার তাঁকে বরখাস্ত করে, এবং মেরি যোগ দেন লোয়ার সারকুলার রোডে ক্যালকাটা গার্লস স্কুলে।
মেরি ছিলেন সাবলীল বাংলাভাষী। বাঙালি খ্রিস্টান ও ব্রাহ্মসমাজের অনেকের সঙ্গেই, বিশেষ করে কেশব চন্দ্র সেনের সঙ্গে ছিল তাঁর বন্ধুত্ব ও যোগাযোগ। কেশবচন্দ্রের মেয়ের বিয়েতে তিনি গিয়েছিলেন ও ছেলের বিয়েতে নিজেই এক বিশাল ভোজের আয়োজন করেছিলেন। কেশবচন্দ্রের বামাহিতৈষিণী সভারও সদস্য ছিলেন তিনি।
মেরি ছিলেন সাবলীল বাংলাভাষী। বাঙালি খ্রিস্টান ও ব্রাহ্মসমাজের অনেকের সঙ্গেই, বিশেষ করে কেশব চন্দ্র সেনের সঙ্গে ছিল তাঁর বন্ধুত্ব ও যোগাযোগ। কেশবচন্দ্রের মেয়ের বিয়েতে তিনি গিয়েছিলেন ও ছেলের বিয়েতে নিজেই এক বিশাল ভোজের আয়োজন করেছিলেন। কেশবচন্দ্রের বামাহিতৈষিণী সভারও সদস্য ছিলেন তিনি। ইন্ডিয়ান রিফর্ম অ্যাসোসিশনের সদস্য তালিকায় উমেশচন্দ্র বোনারজি, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, মহেন্দ্রলাল সরকার ইত্যাদিদের সঙ্গে মেরি পিগটের নামও দেখা যায়। বস্টন শহর থেকে আসা এক অতিথিকে নিয়ে ব্রাহ্মসমাজের আর কজনের সঙ্গে মেরি স্টিমারে দক্ষিণেশ্বর গিয়েছিলেন, শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে।
১৮৭০ সাল থেকে মেরি যোগ দেন স্কটিশ লেডিস অ্যাসোসিয়েশনে, ১২৫ বৌবাজার স্ট্রিটে ওঁদের চালানো এক অনাথ আশ্রমের অধ্যক্ষ হয়ে। নানান সমস্যার মধ্যেও বছর দশেক তিনি স্কুলটি মোটামুটি ভালই চালান বলে মনে করা হয়। স্কুলটি চালানোর টাকা আসত স্কটল্যান্ডের চার্চ থেকে, যাঁরা হেস্টিকেও কলকাতা পাঠিয়েছিলেন। হেস্টির একটি অন্যতম কাজ ছিল স্কুলটি ঠিকমতো চালানো হচ্ছে কী না তা দেখা।
হেস্টির সঙ্গে মেরির সম্পর্ক প্রথম দিকে খারাপ ছিল না– নানান চিঠিতে তা দেখা যায়। কিন্তু মেরি হেস্টিকে খুব একটা পছন্দ করতেন না– মনে করতেন একটু হামবড়া ও কর্তৃত্ব ফলানো স্বভাবের মানুষ। অনেকগুলি কারণে তা আরও তিক্ততার পর্যায়ে চলে যায়। মেরি ও হেস্টির সম্পর্ক খানিক জটিল এবং অন্য নানা চরিত্রের সঙ্গে জড়িত। সেসব কুটকচালিতে না গিয়েও হয়তো মোটামুটি বলা যায় যে স্কটল্যান্ড থেকে আসা তিন মহিলা, জর্জিয়ানা স্মেইল, তাঁর বোন অ্যানি ওয়াকার ও গ্রেস গর্ডন মেরির স্কুল-চালানোর এবং পুরুষদের সঙ্গে, বিশেষ করে জেমস উইলসন ও কালীচরণ ব্যানার্জির সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতা নিয়ে রোমহর্ষক ও সাংঘাতিক রগরগে অনেক অভিযোগ আনেন, ও সেগুলি চিঠিতে লিখে হেস্টির টেবিলে রেখে যান। হেস্টি সেই সময়তেই যেমন বঙ্কিমচন্দ্রকে হিন্দুধর্ম নিয়ে বোঝাচ্ছিলেন, তেমনই অন্য খ্রিস্টান সম্প্রদায়গুলিকেও তাঁদের ভুল দেখানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন– কয়েকজন মহিলার এসব ঝগড়ার মধ্যে যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছা তাঁর ছিল না। কিন্তু একবার চোখে আসা অভিযোগগুলি উপরমহলে না জানিয়েও তাঁর উপায় ছিল না। তিনি ওগুলি স্কটল্যান্ডে পাঠিয়ে দিন– তার সঙ্গে এটা যোগ করে যে তাঁর নিজের হাতে পুরো প্রমাণ না থাকলেও মেরির এইসব দুষ্কৃতি তারও সন্দেহে এসেছে।
মেরি চেয়েছিলেন হেস্টিকে ছেড়ে স্মেইল ও ওয়াকারকে মামলায় নিয়ে আসতে। কিন্তু একগুঁয়ে হেস্টি স্বীকার করতে রাজি হলেন না যে তিনি অন্যায় কিছু করেছেন
এসব জেনে স্কটল্যান্ডের চার্চ কমিটি মেরিকে তৎক্ষণাৎ বরখাস্ত করে এবং এই কারণে হেস্টির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন মেরি। মেরি ও হেস্টি দুজনেই চেয়েছিলেন এইসব কেলেঙ্কারির কথা বাইরে ছড়ানোর আগে নিজেদের মধ্যেই মিটিয়ে ফেলতে। মেরি চেয়েছিলেন হেস্টিকে ছেড়ে স্মেইল ও ওয়াকারকে মামলায় নিয়ে আসতে। কিন্তু একগুঁয়ে হেস্টি স্বীকার করতে রাজি হলেন না যে তিনি অন্যায় কিছু করেছেন– তাঁর হাতে আসা চিঠি উপরমহলে না পাঠিয়ে উপায় ছিল না– একথা তিনি বিশ্বাস করতেন।
তাই মামলা চলল– যা নিয়ে ১৮৮৩ সালে কলকাতা শহর রীতিমতো মেতে ছিল। বাংলা ইংরেজি কাগজগুলি ছিল মেরির দিকে এবং চার্চদলভুক্তরা ছিল হেস্টির দিকে। চোদ্দ দিন ধরে শুনানির পর বিচারক নরিস তাঁর রায় দিলেন– হেস্টি মেরির চরিত্রহনন করেছেন ঠিকই, কিন্তু মেরি নিজেই চরিত্রহীনা– তাই তাঁর সত্যি করে কিছুই হারায়নি! মেরিকে এক আনা ক্ষতিপূরণ ও দুজনকেই আদালতের খরচ দিতে বলা হল।
যেহেতু মেরির দিকে ছিল জনমত, স্টেটসম্যান পত্রিকা মেরির তরফে টাকা সংগ্রহ শুরু করল, এবং আপিল করার খরচ জোটাল। আবার চলল মামলা– কিন্তু এইবারে হেস্টি হেরে গেলেন। বিচারক তাঁকে ৩০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ ও দুটি মামলার সমস্ত খরচ মিলিয়ে মোট ১৫,০০০ টাকা জরিমানা করলেন। হেস্টি কোথায় অত টাকা পাবেন! তিনি জেলে গেলেন ও নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে ছাড়া পেলেন। মেরি কিছুই পেলেন না– এবং নিজেকে লোকচক্ষু থেকে একেবারে সরিয়ে নিলেন। ১৯১০ সালে কেশব চন্দ্র সেনকে নিয়ে তিনি একটি বই লেখেন– ও ১৯২৪ সালে দার্জিলিঙে মারা যান।
আর হেস্টি? ১৮৮৫ সালেই তিনি ফিরে গেলেন স্কটল্যান্ডে অনুবাদকের কাজ নিয়ে। তিনি ইমানুয়েল কান্টের একটি বই– প্রাকৃতিক ইতিহাস– জার্মান ভাষা থেকে ইংরিজিতে প্রথম অনুবাদ করেন। ১৯০৩ সালে এডিনবরা শহরে তাঁর মৃত্যু হয়।
