Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

অদৃশ্য জগৎ: পর্ব – ১

অরূপ দাশগুপ্ত

নভেম্বর ১৪, ২০২৪

Arup Dasgupta
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

রিভুর মা’র খুব ইচ্ছে একবার দিদাকে নিয়ে তার কুট্টিপিসির ওখান থেকে ঘুরে আসে।
রিভুর মায়ের কুট্টিপিসি থাকেন জামশেদপুরে। ওখানকার বহু দিনের বাসিন্দা। রিভুর মা’র পিসেমশাই টাটা কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পুরোনো দিনের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বছর আটেক হল মারা গেছেন। এখন বাড়িতে রিভুর কুট্টিপিসি-দিদা, তার ছেলে পল্টু মামা, শম্পা মামী আর তাদের ছেলে বিল্টু। রিভুর পল্টু মামা ন্যাশনাল মেটালার্জিক্যাল ল্যাবোরেটরিতে চাকরি করেন। আইআইএসসি ব্যাঙ্গালোর থেকে এমএসসি আর পিএইচডি করেছে, তার আগে রাঁচি সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে ফিজিক্সে ব্যাচেলর। (Bengali Story)

কুট্টিদাদুর মিস্ট্রি : অরূপ দাশগুপ্ত

গত সপ্তাহে রিভু মাকে নিয়ে বরানগরে মামাবাড়ি গিয়েছিল। সেখানেই ঠিক হল সবাই মিলে দিনকয়েকের জন্যে জামশেদপুরে যাবে। রিভুর ছোটমামা মানে কাজল দায়িত্ব নিল পল্টু মামার সাথে কথা বলে দিন ঠিক করে নেবে আর ট্রেনের টিকিটও কেটে নেবে। রিভু, রিভুর মা, দিদা আর ছোটমামী আগে ট্রেনে চলে যাবে, কাজল ক’দিন পরে গিয়ে দুদিন থেকে ওদের সাথে ফিরবে। আর যদি কাজল ছুটি পায় তাহলে একসাথেই যাবে। 
আসলে কাজলেরও যাওয়ার খুব ইচ্ছে। ছোটবেলায় রিভুর দাদু কিছু বছর ঝার্সুগুদা মাইনসে ছিলেন। সেইসময় কাজল জামশেদপুরে এই পিসির বাড়িতে থেকেই স্কুলে পড়াশোনা করেছে। তাছাড়া পল্টু আর কাজলও পিঠোপিঠি, তাই ভীষণ বন্ধুত্ব। ছোটবেলায় চার বছর খেলা ঘুমানো খাওয়া শোয়া সব একসাথে ছিল। 

কাজল অফিসে বসকে বলে তিনদিনের ছুটি ম্যানেজ করল যাতে একসাথেই যেতে পারে। বুধ, বৃহস্পতি শুক্র। সাথে শনি আর রবি তো আছেই। ঠিক হল বুধবার ভোরে হাওড়া থেকে ইস্পাত ধরে যাবে আর রবিবার সন্ধ্যায় ইস্পাত এক্সপ্রেসেই ফিরে আসবে। সেইমত সব ব্যবস্থা হল। মঙ্গলবার বিকেলে মাকে নিয়ে রিভু মামাবাড়ি পৌঁছে গেল। 
যেহেতু ছোটমামার কোনও ছেলেপিলে নেই। দিদার নাতি-নাতনী বলতে ঝুমাদিদি, বড় মামার মেয়ে। ঝুমাদিদির বিয়ে হয়ে গেছে, এখন শিকাগোতে থাকে। আর রিভুর বড় মামা বোম্বেতে থাকেন। তাই মামাবাড়িতে রিভুর ভীষণ আদর।

সেদিন রাত্রে কাজল সিরাজ থেকে মটন বিরিয়ানি আর চিকেন চাপ আনিয়ে ছিল, সাথে ফিরনি। নিয়ম মতো দিদা শুধু বিরিয়ানির ভাতটা খাওয়াতে রিভুর কপালে এক পিস এক্সট্রা মটন জুটল।

সেদিন রাত্রে কাজল সিরাজ থেকে মটন বিরিয়ানি আর চিকেন চাপ আনিয়ে ছিল, সাথে ফিরনি। নিয়ম মতো দিদা শুধু বিরিয়ানির ভাতটা খাওয়াতে রিভুর কপালে এক পিস এক্সট্রা মটন জুটল। কিন্তু দিদার ভাগের চিকেন চাপটা মামাই খেল। কাজল যত বড় অফিসারই হোক না কেন খাওয়ার ব্যাপারে নো কম্প্রোমাইজ।

পরদিন ভোর বেলা শঙ্করকাকু, মামাবাড়ির ড্রাইভারকাকু, এসে হাওড়া স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে এল। এসি চেয়ার কারে টিকিট ছিল। ট্রেন ছাড়ার একটু পরে ছোটমামা অপশন দিল ট্রেনের প্যান্ট্রির টোস্ট অমলেট দিয়ে ব্রেকফাস্ট নাকি খড়গপুরের পুরি ভাজি! মামী স্পস্ট ভাষায় জানিয়ে দিল ট্রেন থেকে নামা যাবে না। অতএব সবার টোস্ট অমলেট কফি আর দিদার জন্যে ভেজিটেবল কাটলেট, টোস্ট আর চা। কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবার চলে এল। দিদার ভেজিটেবল কাটলেটটা স্নেহের বশে রিভুর প্লেটে চলে এল। দিদার দাঁত নেই বলে পাউরুটি চায়ে চুবিয়ে খাওয়ার অভ্যেস তাই দিদার জন্যে দুকাপ চাও এল। 

ব্রেকফাস্ট সেরে একটু গল্প করতে না করতেই ট্রেন খড়গপুর ক্রস করে গেল। ঝাড়গ্রামে আরেকবার চা আর সাথে ভাগ করে ঝালমুড়ি খাওয়া হল।
জামশেদপুরে ট্রেন মোটামুটি রাইট টাইমেই ঢুকল। 

পল্টুমামা একেবারে প্লাটফর্মেই দাঁড়িয়ে ছিল। পল্টুমামার ছেলে বিল্টুও এসেছে বাবার সঙ্গে। রিভু আর বিল্টু প্রায় এক বয়সী। বিল্টু এবারে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে রায়পুর এন আই টিতে ইঞ্জিনীরিংয়ে ভর্তি হয়েছে আর রিভু যাদবপুরে ফিজিক্স অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছে, ভবিষ্যতে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স নিয়ে পড়ার ইচ্ছে।
প্লাটফর্মেই মোটামুটি প্রণাম আশীর্বাদের পর্ব শেষ হল।
“পল্টু তোর অফিস নেই? ছুটি নিয়েছিস নাকি?” কাজল জিজ্ঞাসা করল।
“হ্যাঁ!” পল্টু জানাল।

ফেসবুকের বেড়াল : সৌরভ হাওলাদার

গাড়িতে ওঠার আগেই দিদা কাজলকে মিষ্টি কিনে নেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিল। বিষ্টুপুরের বিখ্যাত গৌরাঙ্গ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। সেখান থেকেই রসগোল্লা আর কলাকান্দ নেওয়া হল। কলাকান্দ হচ্ছে এখানকার বিখ্যাত মিষ্টি।
স্টেশন থেকে বাড়ি মোটামুটি ঘণ্টাখানেকের ড্রাইভ। ভারী সুন্দর শহরটা। কী পরিষ্কার। পল্টু জানাল যেহেতু শহরটা এখনও টাটা কোম্পানিই মেইনটেইন করে তাই এত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন।

পল্টুমামারা যেখানে থাকে সেই জায়গাটার নাম কাগলনগর। সোনারী অঞ্চলে তিনটে রাস্তা নিয়ে কাগলনগর। সব মিলিয়ে ৮১টা বাড়ি হলেও তিন নম্বর রোডের শেষ বাড়িটার নম্বর ৭৮ যেখানে পল্টুরা থাকে। একতলা বাড়ি। গোটা বাড়ির সামনে বাগান। খুব সুন্দর জায়গাটা। সামনে থেকেই দলমা পাহাড় দেখা যায়। তবে বেশ খানিকটা দূরে। পল্টুমামাদের লাইনের বাড়িগুলো দলমা মুখো। 

মাঝে অনেক বাড়ি থাকলেও জায়গাটা যেহেতু একটু উঁচুনীচু আর সামনে অনেকটা খালি জমি তাই কোথাও চোখ আটকায় না। মনে হয় হাত বাড়ালেই দলমা পাহাড় ধরা যাবে। যদিও পাহাড়ের আগে সুবর্ণরেখা নদী আছে কিন্তু বাড়ির ছাদ থেকে বোঝা গেলেও দেখা যায় না।

কাগলনগরে সব বাড়ির একই রকম প্ল্যান। এটাই নাকি টাটা কোম্পানির নিয়ম।
সন্ধ্যাবেলায় সবাই বাগানে এসে বসল। একটু ঠান্ডা ঠান্ডা হলেও ভালই লাগছিল।

মার্চের আট তারিখ, এখনও সেরকম গরম পড়েনি এখানে। বেশ কমফর্টেবল ওয়েদার।
কাগলনগরে সব বাড়ির একই রকম প্ল্যান। এটাই নাকি টাটা কোম্পানির নিয়ম।
সন্ধ্যাবেলায় সবাই বাগানে এসে বসল। একটু ঠান্ডা ঠান্ডা হলেও ভালই লাগছিল।

সামনে ভারী সুন্দর দৃশ্য। আস্তে আস্তে দূরে পাহাড়ের গা বেয়ে সন্ধ্যা নেমে আসছে আর সারা পাহাড়ের গা জুড়ে আলোর মালার মতো আগুন জ্বলে উঠছে। পাহাড়ে সন্ধ্যা নামাটা একেবারে অন্যরকম। হঠাৎ কেমন ঝপ করে অন্ধকার নেমে আসে।
আগুনের মালাগুলোকে রিভু ভেবেছিল দাবানল, পল্টুমামা বলল ওগুলো নাকি পাহাড়ে যারা থাকে তাদের লাগানো আগুন! সন্ধ্যে হলেই সব শুকনো পাতা জড়ো করে ওরা নিজেরাই জ্বালিয়ে দেয়।
আস্তে আস্তে রাত্রি বাড়ার সাথে সাথে বাইরেটা ঠান্ডা হতে লাগল। বাকিরা সবাই ভিতরে চলে গেলেও, পল্টু কাজল আর রিভু বাইরেই বসে গল্প করতে থাকল। 
পল্টু ওদের ছোটবেলার নানান সব ঘটনা বলছিল।

বালক বীরের মহাপ্রয়াণ : শরণ্যা মুখার্জী

“আমরা এই বাড়িতে আসি প্রায় পঞ্চাশ বছর হল। আমার জন্ম এখানেই। আমাদের ছোটবেলায় বাড়ির সামনে কিছুই ছিল না। বাড়ির সামনে এই ছোট্ট মাঠটা, তারপর রাস্তা আর তারপরে কবরস্থান। কবরস্থানের পর বিস্তৃত ধানের ক্ষেত। এরপর জমিটা একটু উঁচু হয়ে গেছে, তার গা দিয়েই বয়ে যাচ্ছে সুবর্ণরেখা নদী আর ওপারে আবার বিস্তৃত ধান ক্ষেতের পর দলমা পাহাড়। সামনের ঘরে বসেই পাহাড়ের নানান রূপ এখনও দেখা যায়। আগে যেহেতু আমাদের বাড়ির সামনে দলমা পর্যন্ত কোনও ঘরবাড়ি ছিল না তাই বর্ষাকালে পাহাড়ে বৃষ্টি নামলে এখান থেকে দেখা যেত আর আয় আয় বলতে না বলতেই বৃষ্টি আমাদের বাড়ির ওপরে ঝাপিয়ে পড়ত। 

আর শরত্কাল ছিল অপূর্ব। শরতের তুলোর মেঘের ছায়ার সাথে দলমা যেন লুকোচুরি খেলত। নানান শেডের সবুজের খেলা, কখনও গাঢ় কালচে সবুজ আবার পরক্ষণেই উজ্বল ঝলমলে জঙ্গল।
আর বসন্তে? আমাদের দলমা পলাশের রঙে নতুন বউ সেজে দ্যাখা দিত। কত শেডের রং, দেখে মনে হত কেউ নানান রঙের আবির ছড়িয়ে দিয়েছে। এখন আর কিছুই দেখা যায় না। সব গাছ কেটে ফেলেছে!
আমাদের দলমা বড্ড বুড়িয়ে গেছে রে! এখন আর বসন্তে আগের মতো সেজে ওঠে না। অধিকাংশ গাছ কেটে ফেলেছে।

আমরা যখন স্কুলের একটু উঁচু ক্লাসে পড়ি, আমরা বন্ধুরা শিবরাত্রির সময় সুবর্ণরেখা পেরিয়ে দলমার মাথায় মেলা দেখতে যেতাম। কাতারে কাতারে লোক লাইন দিয়ে হেঁটে চলেছে। এক অভিনব দৃশ্য। কিন্তু একটাও গাছপালা কেউ নষ্ট করছে না। সে এক দারুণ অভিজ্ঞতা।

তবে আগে যেমন শীতকালে সুবর্ণরেখা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেত, এখনও যায়। সেইসময় বালির চড় দিয়ে হেঁটেই নদী পার হওয়া যায়। 
আমরা যখন স্কুলের একটু উঁচু ক্লাসে পড়ি, আমরা বন্ধুরা শিবরাত্রির সময় সুবর্ণরেখা পেরিয়ে দলমার মাথায় মেলা দেখতে যেতাম। কাতারে কাতারে লোক লাইন দিয়ে হেঁটে চলেছে। এক অভিনব দৃশ্য। কিন্তু একটাও গাছপালা কেউ নষ্ট করছে না। সে এক দারুণ অভিজ্ঞতা। খুব সুন্দর ছিল রে আমাদের এই পাহাড় ঘেরা সবুজে ঘেরা ছোট্ট শহর জামশেদপুর যার বুকের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে সুন্দর দুই নদী খরকাই আর সুবর্নরেখা।”
কেমন যেন ইমোশনাল হয়ে পড়ল পল্টু। 

পল্টু বলতে লাগল “সুবর্ণরেখা আর খড়কাই। সুবর্ণরেখা পশ্চিমের থেকে এসে পূবে বয়ে যাচ্ছে আর খড়কাই দক্ষিণ থেকে এসে উত্তরমুখী হয়ে সুবর্ণরেখায় মিশেছে। দুই নদীর মিলনের জায়গাটাকে দোমোহানি বলে। ইনফ্যাক্ট আমরা আজ আসার সময় যে রাস্তা দিয়ে রাইট টার্ন নিয়ে কাগলনগড়ে ঢুকলাম ওটাই সোজা দোমোহানি চলে গেছে। খড়কাই যেহেতু উত্তরমুখী হয়ে সুবর্ণরেখায় মিশেছে তাই দোমোহানি একটা পূণ্যস্থান। কাশীর গঙ্গার মতো। 
দোমোহানি যাওয়ার পথটা আগে খুব সুন্দর ছিল। দোমোহানির প্রায় দেড় কিলোমিটার আগে থেকে ঘন শাল বন ছিল। আর শাল বনের ভিতর দিয়ে চলে গেছে রিভার্স মিট রোড। এখন শাল গাছও নেই, আর জঙ্গলও নেই! আছে শুধু কুৎসিত কতগুলো ফ্ল্যাটবাড়ি।

আগে প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তির দিন দোমোহানিতে নদীর পারে বালির চরের উপর বিরাট মেলা বসত! টুসুর মেলা। এখানকার আদিবাসীদের পরব। আদিবাসী ছেলে মেয়েরা নতুন জামাকাপড় পরে মাদল বাজিয়ে টুসু গান করে নাচতে নাচতে দোমোহানিতে টুসু ঠাকুর ভাসাতে যেত। সব টুসু গানের একই সুর আর কথা রচনা তাৎক্ষণিক।
যেমন পাশ দিয়ে একজন প্রৌঢ় সাইকেলে করে যাচ্ছে, মাথায় তার কুচকুচে ঘন চুল, হঠাৎ পাশ দিয়ে নাচতে নাচতে যাওয়া টুসু পার্টি গেয়ে উঠল: 

ও তুই কে রে যাছিস সাইকেলে
কে রে যাছিস সাইকেলে!
বুড়হা তুই চুলটা কেনে করলিরে কেলে!!

আর একটা খুব বিখ্যাত গান ছিল: 

          কে দিলো রে লাল শাড়ি 
          কে দিলো রে লাল শাড়ি, 
          বিষ্টুপুরের বুড়হা পাঞ্জাবী।।

টুসু গান হল বিহার আর বাংলার বর্ডার ঘিরে যে লালমাটির দেশ, মানে রাঢ় অঞ্চল, সেখানকার আদিবাসীদের জীবনের গান।”
দারুণ লাগছে গল্পগুলো শুনতে রিভুর। যেন চোখের সামনে সব দেখতে পাচ্ছিল।
বড় সুন্দর কথা বলে পল্টুমামা। 
“আরো কিছু বলো না পল্টু মামা!” রিভু আবদার করল। 
“আচ্ছা আর একটা মজার গল্প শোন। কাজল তোর মনে আছে সেই কবরস্থানের ঘটনাটা!” পল্টু জিজ্ঞাসা করল।
“নেই আবার! বলিস না রিভুর আবার ভূতের ভয়!” কাজল বলে উঠল।
“সত্যি! মামা তুমিও পারো! প্লিজ বলো পল্টু মামা!” 
পল্টু বলল “সত্যি ভয় পাবি না তো?” 
“তুমি বলো তো! মামার কথা ছাড়ো!” 
পল্টু শুরু করল “তাহলে শোন! 

একদিন মাঝরাত্রে হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে গেছে, উঠে বসে বোতল থেকে জল খেতে খেতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি চারিদিকটা কেমন ধোঁয়াশা অন্ধকার আর তার মধ্যে একটা আলো স্পট কবরস্থানের মধ্যে ডানদিক থেকে বাঁদিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর একবার উঠছে আর একবার নামছে।

মাসটা ছিল ডিসেম্বর! আমি আর কাজল এই সামনের ঘরে শুতাম। কাচের জানালা হলেও শীতকালে কুয়াশার জন্যে বাইরেটা পরিষ্কার দেখাও যেত না। তখন জামশেদপুরে প্রচণ্ড ঠান্ডাও পড়ত। আর রাস্তায় রাস্তায় তখন এইরকম হ্যালোজেন লাইট ছিল না। ইনফ্যাক্ট আমাদের এখানে রাস্তায় কোনও লাইটই জ্বলত না। এইরকম একদিন মাঝরাত্রে হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে গেছে, উঠে বসে বোতল থেকে জল খেতে খেতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি চারিদিকটা কেমন ধোঁয়াশা অন্ধকার আর তার মধ্যে একটা আলো স্পট কবরস্থানের মধ্যে ডানদিক থেকে বাঁদিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর একবার উঠছে আর একবার নামছে। এতটাই অন্ধকার যে আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। প্রথমটা একটু বোঝার চেষ্টা করলেও যখন কিছুই বুঝতে পারছি না তখন ভয় পেয়ে কাজলকে ডেকে তুললাম। ও তো আরও ভিতু, বলে “ওটা নিশ্চয় ভূত! পিসিকে ডাক।” আমি বললাম দাঁড়া না! দেখাই যাক না। তখন তো ভয়ে পাঁচ মিনিটও পাঁচ ঘণ্টা মনে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে আলোটা আস্তে আস্তে নীচে নেমে পাঁচিলের আড়ালে চলে গেল। আমি একটু সাহস করে জানলাটা হাত দিয়ে ঘষে দেখার চেষ্টা করলাম। একটু পরেই ব্যাপারটা বোঝা গেল।” 
“কী পল্টু মামা! বলো!” রিভু খুব এক্সসাইটেড হয়ে বলে উঠল। 

অপচয় : প্রান্তিক বিশ্বাস

“আসলে এই কবরস্থানটা তখন চালু ছিল। একদল লোক কবর দিতে এসেছিল। আর তার মধ্যে একজন মাথায় একটা হ্যাজাক লাইট নিয়ে সামনে সামনে যাচ্ছিল। যেহেতু অন্ধকার ওই আলোর মুভমেন্ট ছাড়া আর কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। এছাড়া মুসলমানরা নিঃশব্দে কবর দিতে আসে, তাই কোনও আওয়াজও ছিল না। 
কেমন লাগল রিভু বাবু? মজার না?”
“শুধু কি মজার! দারুণ সাসপেন্স! আরও দু’একটা বলো না প্লিজ!” 
“আজকে আর না, কাল সকালে দোমোহানি যাব। এখন ডিনার”। পল্টু বলল। 
ডিনারের মেনু রিভুর একেবারেই পছন্দ হল না। পটলের ঝোল, ঝিঙে পোস্ত, চিকেন আর ডাল। সাথে বেগুন ভাজা। শেষ পাতে কালাকান্দ। 

রিভু বুঝতেই পারল পুরো মেনুটাই দিদার দিকে তাকিয়ে হয়েছে। খেতে বসে রিভুর মুখ দেখে দিদাও বুঝতে পারল ব্যাপারটা। সবার সামনেই বলে উঠল “আমার দাদুভাই আবার পাঁঠার মাংস আর পোলাও খুব ভালোবাসে!” 
এটা শুনে রিভুর তো কান লাল হয়ে উঠল। 

“তুমি চুপ করবে!” দিদাকে একটু ধমকের সুরেই বলে উঠল রিভু।
ডিনারের পর পল্টু বলে দিল “কাল সকালে যারা যারা দোমোহানি যাবে ভোর পাঁচটায় বেরোবো রেডি থাকবে। দেরি হলে রোদ উঠে যাবে আর যাওয়া যাবে না।” 

(চলবে)

অলংকরণ: আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়

Aroop Dasgupta Author

পড়াশোনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিয়ো ফিজিক্স বিভাগে। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তথ্য প্রযুক্তিকে। প্রায় এগারো বছর নানা বহুজাতিক সংস্থার সাথে যুক্ত থাকার পর উনিশশো সাতানব্বইতে তৈরি করেন নিজের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। বর্তমানেও যুক্ত রয়েছেন সেই সংস্থার পরিচালনার দায়িত্বে। কাজের জগতের ব্যস্ততার ফাঁকে ভালবাসেন গান-বাজনা শুনতে এবং নানা বিষয়ে পড়াশোনা করতে। সুযোগ পেলেই বেড়াতে বেরিয়ে পড়েন আর সেই অভিজ্ঞতা ধরে রাখেন ক্যামেরায়।

Picture of অরূপ দাশগুপ্ত

অরূপ দাশগুপ্ত

পড়াশোনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিয়ো ফিজিক্স বিভাগে। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তথ্য প্রযুক্তিকে। প্রায় এগারো বছর নানা বহুজাতিক সংস্থার সাথে যুক্ত থাকার পর উনিশশো সাতানব্বইতে তৈরি করেন নিজের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। বর্তমানেও যুক্ত রয়েছেন সেই সংস্থার পরিচালনার দায়িত্বে। কাজের জগতের ব্যস্ততার ফাঁকে ভালবাসেন গান-বাজনা শুনতে এবং নানা বিষয়ে পড়াশোনা করতে। সুযোগ পেলেই বেড়াতে বেরিয়ে পড়েন আর সেই অভিজ্ঞতা ধরে রাখেন ক্যামেরায়।
Picture of অরূপ দাশগুপ্ত

অরূপ দাশগুপ্ত

পড়াশোনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিয়ো ফিজিক্স বিভাগে। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তথ্য প্রযুক্তিকে। প্রায় এগারো বছর নানা বহুজাতিক সংস্থার সাথে যুক্ত থাকার পর উনিশশো সাতানব্বইতে তৈরি করেন নিজের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। বর্তমানেও যুক্ত রয়েছেন সেই সংস্থার পরিচালনার দায়িত্বে। কাজের জগতের ব্যস্ততার ফাঁকে ভালবাসেন গান-বাজনা শুনতে এবং নানা বিষয়ে পড়াশোনা করতে। সুযোগ পেলেই বেড়াতে বেরিয়ে পড়েন আর সেই অভিজ্ঞতা ধরে রাখেন ক্যামেরায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com