“বাতাসে বহিছে প্রেম নয়নে লাগিল নেশা…”
হ্যাঁ, এসেই পড়ল বসন্ত হুড়মুড় করে…না, না, হুড়মুড় করে নয়, বলা ভালো রয়ে সয়ে ধীরেসুস্থে মন্থর লয়ে। এবার শীতকালটা অনেক দীর্ঘ ছিল, এখনও হালকা একটা আমেজ রয়েছে। এইরকম দীর্ঘ শীতের পর বসন্তের রোমান্স বাতাসে ঘুরছে ক্যুপিডের তিরের মতো। তাই খুব সাবধান— প্রেমে পড়ার বারণ মানা অত সহজ নয় কিন্তু। প্রেমে পড়ুন, নিজের সঙ্গীর প্রেমেই নতুন করে পড়ুন। যার কখনও প্রেম নেই জীবনে, সেও পড়ুক। তবে শুধু মানুষ কেন, গাছপালা, প্রকৃতি, প্রিয় গান, বই, ভ্রমণ— যা যা ভালো লাগে, সৃষ্টিশীলতা সৃজনশীলতা যাপনকে সমৃদ্ধ করে ভালো কিছু ভাবতে শেখায় সেই সবকিছুর প্রেমে হাবুডুবু খান। এটাই তো সময়। (Food Art)

নববসন্তের রূপের ডালি সাজবে ধীরে ধীরে। শীতের হাওয়ায় আমলকির ডালে ঝরে যাওয়া পাতা ওড়ার শেষে বসন্তের নবপত্রিকা কিশলয় উন্মিলিত হবে। আকাশে বাতাসে শীতের চলে যাওয়ার এক মৃদুমন্দ আমেজ রেশ থেকে যাবে। সবমিলিয়ে প্রকৃতি তার অশেষ রূপ যৌবনের পসরা নিয়ে ফের সুসজ্জিত হবে। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের মননও গভীরভাবে যুক্ত। তাই এই সময় বাতাসে কান পাতলে প্রেমের গুঞ্জন শোনা যায় বৈকি!
আর তাই, গাজরের হালুয়া আর কড়াইশুঁটির মিষ্টি দিয়ে তৈরি করেছি এই মিষ্টি কিউপিড (Cupid), যে আসলে ভুবনজোড়া প্রেমের দূত… (Food Art)

দেখতে দেখতে সরস্বতী পুজোও এসে গেল। মাঘ মাসের বসন্ত পঞ্চমীর শ্রেষ্ঠ পুজো সরস্বতী ঠাকুরের আরাধনা। বিদ্যা থেকে শিল্প সবকিছুর দেবী, যাকে শিক্ষয়িত্রী থেকে শিল্পী সকলেই আরাধনা করে। আর এই বছর ভ্যালেন্টাইন’স ডে আর সরস্বতী পুজো একইদিনে। প্রেম এবং পুজো পর্যায় একসঙ্গে যেন। রবিঠাকুরের কথা সবার আগে মনে পড়ে যায়।
আরও পড়ুন- ফুড আর্ট: এক প্লেট টিনটিন
বাঙালি হৃদয়ে প্রেম তুঙ্গে আজ। ভালবাসার আবার প্রাচ্য পাশ্চাত্য কী! বাসন্তী শাড়িতে, খোলা চুলে, প্রেয়সীদের আড়চোখে দেখে নেয় বঙ্গ-প্রেমিকেরা। হাতের পেছনে থাকে কার্ড, ফুল। আর প্রেমিকার মুখে থাকে সলাজ প্রশ্রয়ের হাসি। একসাথে একটু ঘুরতে যাওয়া হাত ধরে, এটাই তো বাঙালির ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন।
প্রেম দিবসের ফুড-আর্ট (Food Art) হিসেবে কেমন লাগছে আমার তৈরি এই লাভ বার্ডস! বানিয়েছি ঘি লাড্ডু, তেজপাতা আর চেরি দিয়ে।

আমার এবারের ফুড আর্টেও তাই বসন্ত আর ভালবাসার সিরিজ। ভ্যালেন্টাইন’স উইক চলে একটানা এক সপ্তাহ ধরে। রোজ ডে, চকোলেট ডে, টেডি ডে, প্রোপোজ ডে, প্রমিস ডে, হাগ ডে, কিস ডে ইত্যাদি।
আসলে প্রেম থাকুক সারা বছর জুড়ে— এটাই সবাই চায়, কিন্তু তার বিশেষ উদযাপনেরও তো দিন চাই। যেমন বাকি সব বিশেষ দিনগুলো থাকে। আজকালকার দুনিয়ায় সত্যিকারের ভালোবাসাগুলো হয়তো অনাদরে হারিয়ে যাচ্ছে, তবু প্রকৃত প্রেম তো আজও আছে। সেসব প্রেম পূর্ণতা পাক, ভালবাসার মানুষ তার প্রেয়সীকে বা প্রিয়তমকে মনের কথা জানাক, অকৃপণ হোক প্রেমবারিধারা, সিক্ত হোক কেজো ব্যস্ততার দ্রুতগামী জীবন দুদণ্ডের জন্য— আজকের দিনে এটুকুই তো অনেক। আজ একটা টুকটুকে লাল গোলাপ বা একটা সাধারণ চকোলেটও মন ভরিয়ে দেওয়ার ম্যাজিক জানে।
ঠিক যেমন আমার বানানো এই ফুড-আর্ট (Food Art) গোলাপ এবং গোলাপ পাতা। গোলাপ ফুল বানিয়েছি অনিয়ন পরোটা আর পাতা বানিয়েছি কড়াইশুঁটির কচুরির পুর দিয়ে।

এই প্রেমের সপ্তাহে মাঘ মাসের বিশেষ দিনগুলোর উদযাপন রইল আজ আমার ফুড-আর্টে (Food Art)। হৃদয়ে পৌঁছানোর রাস্তা যদি পেট থেকেই হয় তবে তো সোনায় সোহাগা। সেই কারণে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে নানারকম খাবার পরিবেশন করলাম শিল্প-ভালবাসার হাত ধরে।
প্রথমেই রইল হংসমিথুন, বানিয়েছি ক্ষীরের পুর-ভরা দুধপুলি আর পায়েস দিয়ে। আমন্ড দিয়ে পদ্মফুল।

দ্বিতীয়টি মানে টেডি বিয়ারটি বানিয়েছি আলুর পরোটা, টক দই আর টোম্যাটো কেচাপ দিয়ে।
আরেকটি টেডি বিয়ার বানিয়েছি, প্যান কেক আর ড্রাই ফ্রুট দিয়ে।

তৃতীয়টি রইল পরোটা আর ফুলকপির সবজির শীতকালীন যুগলবন্দি দিয়ে সারমেয় যুগল, নাম দিয়েছি ডগওমগো প্রেম।
চতুর্থ রইল চকোলেট দিয়ে একটি যুগল। তারা প্রপোজ ডে-তে একজন আরেকজনকে সারপ্রাইজ গিফট করছে।

পঞ্চমটি রইল বেসিল সিডস আর কাজু দিয়ে কিউট কাপল।
ক্যাপশন রাখলাম “লাভ ইউ টু দ্য মুন অ্যান্ড ব্যাক”…

পরের ফুড-আর্ট ডিজাইনার পাটিসাপটা আর ক্ষীর দিয়ে বেড়াল দম্পতি।

সাত নম্বরে রইল খরগোশ দম্পতির চাকচাকার সাইকেল চড়ে ঘুরতে যাওয়া, বানিয়েছি সুজি আর চালের গুঁড়োর দোসা দিয়ে,সাথে সাম্বারের সবজি।

আর সবার উপরে রইলেন দেবী সরস্বতী, যা বানিয়েছি সম্পূর্ণ প্রসাদ দিয়ে। ভোগের খিচুড়ি, কড়াইশুঁটির চপ, বিনসের সবজি, টম্যাটো চাটনি, চালের আর নতুন গুড়ের পায়েস, খেজুর, কাজু, আমন্ড এবং লাড্ডু দিয়ে।
*ছবি সৌজন্য: লেখক
আঁকা, ফুড আর্ট ও রান্নাবান্না সৌমীর প্যাশন। গাছপালা, প্রকৃতি ভালোবাসেন। যেকোনও সৃজনশীল কাজে আনন্দ পান। বিজ্ঞাপণ ও বিপণন নিয়ে পড়াশুনা করেছেন। লেখালেখি করতে পছন্দ করেন।