“পরনে ঢাকাই শাড়ি কপালে সিঁদুর”
নতুন বছরকে (Bengali New Year) এই সাজেই বরণ করে নিতে চায় আপামর বিশ্বের সমস্ত বঙ্গললনারা। এই দিনে সব ধর্মের বাঙালির পোশাক ও খাবারের পছন্দে শুধুই বাঙালিয়ানা।
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগের চিত্রটা ছিল একটু অন্যরকম। এই দিনে মধ্যবিত্ত পরিবারে মহিলাদের জন্য কেনা হতো মূলত সুতির ছাপা শাড়ি, আর বাচ্চাদের জন্য সুতির অতি সাধারণ পোশাক…নতুন হলেই হলো। দুপুরে ভাল-মন্দ ভুরিভোজ, পারিবারিক গেট টুগেদার, এক ফাঁকে দোকানে গিয়ে হালখাতা করা… এই দিনের অন্যতম আকর্ষণ। বাংলা ক্যালেন্ডারের সাথে মিষ্টির প্যাকেট…বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই খুশি।
পোশাকের স্টাইল বা ডিজাইন নিয়ে বিশেষ কিছু মাতামাতি ছিল না। তার অন্যতম কারণ হয়তো সেই সময়ে বাঙালিরা সারা বছর বাঙালিয়ানার বাইরে খুব একটা বেশি বিচরণ করতো না, সে পোশাকের দিক থেকেই হোক বা খাবারদাবারের দিক থেকে। বাঙালির জীবনে এতো প্রবলভাবে আন্তর্জাতিকতার প্রভাব আরও অনেক পরে এসেছে। তাই এই বিশেষ দিনে বাঙালিদের বাঙালি হয়ে ওঠার উদ্যোগ, এখনকার মতো দেখা যেত না।
এখন ছবি বদলে গেছে। বাঙালি এখন সর্বাঙ্গীনভাবে আন্তর্জাতিক। পেশায় ,পোশাকে ,খাদ্যে, জীবনযাপনে সে নিজেকে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে তৈরি করেছে ও করে চলেছে। এর প্রভাবে সারা বছর বাঙালি হয়ে থাকা হয় না। পোশাকের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে পশ্চিমের পছন্দ। পুরুষ মহিলা উভয়েই স্বচ্ছন্দ তাদের পশ্চিমী ফ্যাশন (Western Fashion) স্টেটমেন্টে। এটার সবচেয়ে উৎসাহ ব্যাঞ্জক দিক হল বাংলা নববর্ষ ও দুর্গাপুজোর আগমনের অনেক আগে থেকেই সবাই পোশাক নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছেন। কারণ, পোশাক তার রুচির প্রকাশ।
নারী-পুরুষ পোশাকের বর্ণ ও ডিজাইন সামঞ্জস্য রেখে পরিধান করছে্ন , যাতে এই বিশেষ উৎসবের দিনগুলোতে সাজসজ্জায় সে আরও সৌন্দর্য্যময় হয়ে ওঠে, সুন্দরতায় ভরে যায়। ফলে অনেকেই পোশাক পরিকল্পকের (Fashion Designer) দ্বারস্থ হচ্ছেন। এই জন্যই এখন পোশাক পরিকল্পকের কাজ বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। সারা বছর ফ্যাশনের ট্রেন্ড নিয়ে তারাও নতুন নতুন ট্রেন্ড তৈরিতে মনোযোগী।
এখন ছবি বদলে গেছে। বাঙালি এখন সর্বাঙ্গীনভাবে আন্তর্জাতিক। পেশায় ,পোশাকে ,খাদ্যে, জীবনযাপনে সে নিজেকে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে তৈরি করেছে ও করে চলেছে। এর প্রভাবে সারা বছর বাঙালি হয়ে থাকা হয় না। পোশাকের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে পশ্চিমের পছন্দ। পুরুষ মহিলা উভয়েই স্বচ্ছন্দ তাদের পশ্চিমী ফ্যাশন স্টেটমেন্টে। এটার সবচেয়ে উৎসাহ ব্যাঞ্জক দিক হল বাংলা নববর্ষ ও দুর্গাপুজোর আগমনের অনেক আগে থেকেই সবাই পোশাক নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছেন। কারণ, পোশাক তার রুচির প্রকাশ।
বাংলা বর্ষবরণের জন্য দেখা যাক কী কী সাজে আমরা সাজতে পারি। যেহেতু গ্রীষ্ম প্রধান দেশ আমাদের, তাই প্রথম পছন্দ সুতি। এ ছাড়াও লিনেন, চান্দেরি, রেশম কোটা, রেয়ন এই কাপড়গুলি আরামদায়ক।
সুতি বলতে প্রথমেই মলকটন শাড়ির কথা মনে আসে। মলকটনে ভেজপ্রিন্ট , ব্লক প্রিন্ট, টাই এন্ড ডাই অসাধারণ স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করতে সাহায্য করে। এর সাথে ছন্দ মিলিয়ে কিছু বাংলা সংস্কৃতির মোটিফে এমব্রয়ডারি করা স্টেটমেন্ট ব্লাউজ অবশ্যই পরুন। অ্যাকসেসরিজে থাকুক বিভিন্ন মোল্ডেড ক্লে দিয়ে তৈরি রঙ বেরঙের গয়না ও কাঁধে আজরাখ প্রিন্ট বা বাংলার কাঁথা স্টিচের বটুয়া ব্যাগ।
হাতে এক গোছা রূপোর সরু চুড়ি , পায়ে সুতোর কাজ করা নাগরাই। আর হ্যাঁ, চুলে যেন আপনার পছন্দের যেকোন সাদা ফুলের মালা জড়াতে ভুলবেন না। আপনার উপস্থিতি অন্যদের বিমোহিত করবেই। ধনেখালি তাঁতের বুননে অদ্ভুত সুন্দর একটা মাধু্র্য আছে, যা কখনও পুরনো হবে না। নানা বর্ণে ও নক্সায় বোনা শাড়িগুলি বাংলা নববর্ষ বরণের সাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
লিনেন শাড়ি একাধিক নেই ওয়ার্ড্রোবে, এমন শাড়িপ্রেমী নারীর দেখা পাওয়া ভার। নানান নকশার সম্ভার নিয়ে বসে আছেন আমাদের বুনন শিল্পীরা। ঢাকাই জামদানির কথা আলাদা করে কি আর বলতে হবে? বাঙালির চিরকালীন ও চিরনতুন। পুরুষদের পাঞ্জাবিও এখন পাওয়া যাচ্ছে জামদানিতে। এছাড়াও যারা শাড়িতে স্বচ্ছন্দ নন, ওড়না সহ জামদানি সালোয়ার স্যুটে নিজেকে সাজিয়ে তুলুন।
নববর্ষের সাজে পুরুষদের প্রথম পছন্দ নিশ্চিতভাবেই পাঞ্জাবি, তা সে খাদির হোক, সুতির ব্লক প্রিন্টের হোক , বা বাংলার নানা ছবি এমব্রয়ডারি করা ডিজাইনার পাঞ্জাবিই হোক। এছাড়াও সুতির আজরাখ বা কলমকারি প্রিন্টের শার্টের বাজার এখন তুঙ্গে।
বাটিক শিল্পের অনির্বচনীয়তা অনুধাবন করতে পেরেই রবীন্দ্রনাথ (Rabindranath Tagore) বাংলায় এই কাজের ক্ষেত্র তৈরী করেন নিজ উদ্যোগেই। মোমবাটিক নিয়ে শিল্পীরা যে ধরনের কাজ করে চলেছেন ক্রমাগত , নতুন নতুন শিল্প সৃষ্টি হচ্ছে তাদের হাতে। তাই বাটিক শিল্পের পোশাক আশাকের চাহিদা পুরুষ নারী নির্বিশেষে ছিল, আছে ও থাকবে।
বাংলা নতুন বছর (Bengali New Year) সকলের জীবনে নতুন মাত্রা নিয়ে আসুক… নবরঙে নবরূপে আমরা নতুন দিনকে আহ্বান করি। জীবনের চলমানয়তা এভাবেই সার্থক হোক।
সুস্মিতা (চৌধুরী) দত্ত পেশাগত পরিচয়ে পোশাক পরিকল্পক। ভালবাসেন ছবি আঁকতে, চিত্রকলা বিষয়ে পড়াশোনা করতে। সিনেমা ও গ্রুপ থিয়েটার নিয়েও আগ্রহ রয়েছে। যুক্ত রয়েছেন নানা সামাজিক কল্যাণমূলক কাজকর্মের সঙ্গে। আর অবসর সময় কাটে সাহিত্যচর্চা ও বাগান করে।