কী থাকে এক নতুনের মধ্যে? থাকে বিস্তর আশা। যে আশার ডানা মেলা থাকে মনের রুক্ষ, খোঁচা ওঠা, উদ্বিগ্ন আস্তরণের ওপর। যে আশার ছায়া মোলায়েম করতে পারে ব্যথার দাগ, নিত্যকার নুন-ছাল ওঠা প্রদাহ। বৈশাখ, বাঙালি জীবনে তেমনই এক নতুন। যার মধ্যে কেবল আশার আস্তরণ থাকে না, থাকে “আনকোরা নতুন”-এর ফ্রি-প্যাক।যে ফ্রি-প্যাক দেখে বাঙালি তরতরিয়ে ওঠে মনের মধ্যে আর প্ল্যান করে ফেলে ঝকঝকে জীবন। যে নতুনের সঙ্গে বাঙালি মিশিয়ে নেয় তার আনন্দ। তবেই না বৈশাখ এলে নব-আনন্দে জেগে ওঠে নতুন বাঙালি, পাটভাঙা বাঙালি। পয়লা বৈশাখে স্নান সেরে ওঠা অমলিন বাঙালি।
কিন্তু এ বৈশাখ বড় নিদারুণ। করুণ ভাবে দগ্ধ। কেবল রৌদ্রে, তাপে নয়। এক আশঙ্কায়, এক অ-নিশ্চিত শেষের আশঙ্কা। যা তিলে তিলে, পলে পলে ভয়ের ডানা মেলে দিচ্ছে সবার মনে। যে অনিশ্চিতের মধ্যে পরিচিত নতুনের কোনও স্থান নেই, আশার কোনও বাস নেই। নিশ্চয়ই কিছু না কিছু নতুন হবেই বলে জীবনকে জড়িয়ে ধরার প্রত্যয় নেই। কেবল আছে উৎকন্ঠা।ভবিতব্য এক অজানা শেষের প্রতীক্ষা। অন্তে কী হবে, কী হতে চলেছে, তা কখনও আঁক কষে, কখনও বিজ্ঞান জপে, কখনও কেবল মনের জোর দিয়ে ভাবার ও বুঝে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা।
হ্যাঁ, এ ভয়ের এক দিন শেষ হবে। এ অসুখ এক দিন পৃথিবী থেকে সরে যাবে। এবং প্রকৃতির নিয়মেই সরে যাবে। আমরা আশা ও প্রত্যাশায় ভর করে সেই নতুন পৃথিবী, নতুন জীবনকে জড়িয়ে ধরার অপেক্ষায় থাকব।আবার পয়লা বৈশাখ, দুগ্গা পুজো আবার বাঙালির তেরো পার্বণে চুবিয়ে নেব আমাদের আত্মা। কিন্তু প্রশ্ন একটা থেকেই যাবে, এ আত্মার সঙ্গে কি পুরনো চেনা আত্মার মিল থাকবে? না কি বিশ্বব্যাপী এই অসুখ আমাদের ভোল পাল্টে, খোলনলচে বদলে দেবে চিন্তার, ভাবনার, দর্শনের! বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল কতটা তীব্র হবে, বেঁধে বেঁধে থাকার আরও চেষ্টা করব, না কি দূরে দূরে বিচ্ছিন্ন থাকার?
তবে, একটা কথা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, আর যা-ই হোক না কেন, আর একদম পুরনো, ঠিক আগের মতো সব কিছু হবে না। ফি বছর পয়লা বৈশাখে পুরনো অবশিষ্টাংশে নতুন মিলিয়ে নিয়ে এক নতুন-পুরনো খাসা মিশ্রণ তৈরি হত, যাতে থাকত অতীতের নস্ট্যালজিয়া, বর্তমানের আনন্দকণা আর ভবিষ্যতের আশা। এক বছর চলত সেই মিশ্রণ, পরের বছর পয়লা বৈশাখে ফের তার জাবর কাটা। মোটামুটি চেনা ছকে, নতুনকে জায়গা দেওয়া। কিন্তু এখন তা আর হবে না। এখন নতুন আসবে নতুনের মতো। তার ভেতর যেমন আশাও থাকবে, তেমন আশঙ্কাও থাকবে। পুরনো আত্মার প্রত্যয় দিয়ে তাকে সামলে নেওয়া সহজ হবে বলে মনে হয় না। সেই নতুনকে গ্রহণ করার জন্য সত্যিকার প্রস্তুতি নিতে হবে। নতুন ভাবনাকে জায়গা দিতে হবে, নতুন অনেক কিছু ইচ্ছে না করলেও গ্রহণ করতে শিখতে হবে। নিজের চেনা গণ্ডির বাইরে গিয়ে অপরকে বুঝতে পারবে, তাকে সঙ্গে নিয়ে চলতে পারবে, চলতে শিখবে, তবেই সে এই নতুন পৃথিবীর কাছে আবার গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে। আর তা না হলে, স্রেফ অকূলপাথার। যা খুব কাম্য নয়। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা সব বাঙালি যে দিন নিজের গোঁ ছেড়ে নমনীয় হয়ে নতুন “নতুন”কে গ্রহণ করতে শিখবে, সে দিনই আবার হবে বাঙালির সত্যিকারের নববর্ষ, সত্যিকারের বৈশাখ।তা ক্যালেন্ডারে মাসটা শ্রাবণ কী অগ্রহায়ণ, যা-ই হোক না কেন!
সঞ্চারী মুখোপাধ্যায় হাসিখুশি, এমনকী যখন সেই মোড-এ থাকেন না, নিজেকে ঠেলে হিঁচড়ে হিহিহোহো’তেই ল্যান্ড করানোর চেষ্টা করেন। জাপটে ভালবাসেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সিরিয়াল, গান, রাস্তায় নেড়িবাচ্চার লটরপটর কান। পড়াশোনার সময় ফিল্ড করেছেন, হাতুড়ি দিয়ে পাথর ভেঙেছেন, গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়েছেন, এক বার পাহাড় থেকে অনেকটা হড়কে পড়ে মুচ্ছো গেছিলেন, উঠে দেখেন, কবর! এক বার ম্যানেজমেন্ট কোর্সের অঙ্গ হিসেবে চিন গেছিলেন, রাত্তির দুটোয় সাংহাইয়ের রাস্তায় হারিয়ে গিয়েও কাঁদেননি। ফিউজ সারাতে পারেন, পাখার কার্বন বদলাতে পারেন, কাগজের চোঙ পাকিয়ে গাড়িতে পেট্রল ঢালতে পারেন, চিনেবাদাম ছুড়ে দিয়ে মুখে নিপুণ লুফতে পারেন। ব্যাডমিন্টন খেলার ইচ্ছে খুব, কিন্তু জায়গা ও র্যাকেট নেই। অরোরা বোরিয়ালিস যারা দেখেছে, তাদের একাগ্র ভাবে হিংসে করেন। দেশের বাড়িটা উনি বড় হওয়ার পর ছোট হয়ে গেছে বলে, আর আমির খান এক বার কার্টুন এঁকে দিয়েছিলেন— সে কাগজ হারিয়ে গেছে বলে, জেনুইন কষ্ট পান। এক বার ঈগলের রাজকীয় উড়ান আগাগোড়া খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন।
One Response
কঠিন কথা কত সহজ করে বলা হয়েছে। ভাল লাগলো এই নতুন ভাবনার, নতুন কথাগুলি।