(Bengali Novel)
আগের পর্ব- [১],[২],[৩],[৪],[৫],[৬]
অন্ধকার, খুব অন্ধকার একটা কুয়োর মধ্যে থেকে উঠে আসছে সোঁ সোঁ করে। কোথায় কত নীচে তলিয়েছি যেন? একটা ভীষণ কর্কশ শব্দ টেনে তুলে আনছে তাঁকে, তিনি উঠতে চাইছেন না। কবে শেষ এসেছে এরকম অজ্ঞান ঘুম? ফোন বাজছে। ফোন। চেতনার ওপরের স্তরে উঠে আসছে। কোথায়? কোন শহরে? সময় কি? আস্তে আস্তে ফিরে আসছে টিকলি আর সম্রাটের ফ্ল্যাটে। মেয়ে আর জামাই। তিনি মুম্বাইতে। কাল বিকেলে এসে পৌঁছেছেন। বেশ কিছু মাস আমেরিকা, কানাডা, আমস্টারডাম। (Bengali Novel)

এখানে দুই সপ্তাহ, ওখানে চার দিন। ঘাড় একটু ঘুরিয়ে জানলা দিয়ে আসা আলোতে বুঝলেন মুম্বাই শহরতলীতে সন্ধ্যে নামছে। ফোন এই বিশাল বেডরুমটার মধ্যে যেন কর্কশ চিৎকার করছে। প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা কাজে ডুবে থাকা সদা সতর্ক মস্তিষ্কটা বোধহয় প্রায় অচেতন হয়ে গেছিল, তাই ওরকম ফায়ার এলার্মের মতো লাগছিল। তিনি না দেখে একটু বেখেয়ালেই ফোনটা তুলে নিলেন। (Bengali Novel)
‘দিদি, হ্যালো দিদি!’
একইসঙ্গে ভীষণ তীক্ষ্ণ আর জোরালো ডাকটা, আর তার সঙ্গে অসহ্য আল্হাদিপনা তাকে সম্পূর্ণ জাগিয়ে দিল। লিলি।
ওই গলে পড়া গলা-
‘দিদি আপনি কোথায়? বলুন তো আমরা কোথায়? ও দিদি একটু ভিডিও অন করুন না?’
ধাতস্থ হয়ে উঠছেন মিতা। কী মনে হল, কোনও প্রতিবাদ না করে ক্যামেরা অন করে দিলেন।
স্ক্রীনের ওপারে যথারীতি নড়াচড়া আঙুল ক্যামেরায়। তারপর স্থির হল। ফ্যাকাশে টিউবলাইট, ক্যাটক্যাটে সবুজ দেওয়াল।
‘বলো, বলো’। (Bengali Novel)
স্ক্রিনের ওপর জুড়ে লিলির মুখ।
হঠাৎ খেয়াল হল। কী মেকাপ করেছে লিলি- আইশ্যাডো গোলাপী, সবুজ। একি তার সাথে নকল আইল্যাশ নাকি? কি চকচকে মুখ, কানে জবরজঙ কাজ করা প্রকান্ড ঝুমকো।
স্ক্রিনের ওপর জুড়ে লিলির মুখ।
হঠাৎ খেয়াল হল। কী মেকাপ করেছে লিলি- আইশ্যাডো গোলাপী, সবুজ। একি তার সাথে নকল আইল্যাশ নাকি? কি চকচকে মুখ, কানে জবরজঙ কাজ করা প্রকান্ড ঝুমকো। শাড়ির যেটুকু দেখা যাচ্ছে ক্যাটক্যাটে গোলাপী বাঁধনি। (Bengali Novel)
‘কী ব্যাপার লিলি? নেমন্তন্ন ছিল?’
‘না দিদিভাই, সেটা বলব বলেই তো। সারপ্রাইজ দেব।’
পেছন থেকে তারক-
‘দিদি আপনি না থাকলে আজ আমরা এই দিন দেখতে পেতাম না। দেখুন দিদি।’
পেছনে একটা খাট, জয়পুরী চাদর, কার বাড়ি এটা?
তারপর দেখতে পেলেন তারকের হাতে ক্যামেরা এখন অনেক স্থির। খাটের ওপর উপচানো জিনিসের সম্ভার। (Bengali Novel)
ক্যামেরা ফলো করছে বিস্কুটের প্যাকেট- শর্টব্রেড, অরেঞ্জ ক্রীম, চকোলেট, ডাবল চকলেট, তারপর তেলের পাউচ-তিনটে, ডালের অজস্র প্যাকেট, মশলা, তার পেছন দিকে মেকাপ বক্স। আবার খুলে দেখাচ্ছে লিলি, কত ক্যাটক্যাটে রঙের লিপগ্লস।
ক্যামেরা ফলো করছে বিস্কুটের প্যাকেট- শর্টব্রেড, অরেঞ্জ ক্রীম, চকোলেট, ডাবল চকলেট, তারপর তেলের পাউচ-তিনটে, ডালের অজস্র প্যাকেট, মশলা, তার পেছন দিকে মেকাপ বক্স। আবার খুলে দেখাচ্ছে লিলি, কত ক্যাটক্যাটে রঙের লিপগ্লস। তারপরে একটা মিক্সির বাক্স, টোস্টার, পাশে টেবিলে মিষ্টি। দুটো প্যাকেট, মাটির হাঁড়ি। (Bengali Novel)
ক্যামেরা আবার সরে গেল। একটা ওয়াশিং মেশিন। জুম্ করে দেখাল তারক।
কী এসব? মিতা সম্পূর্ণ চুপ।
আনন্দে উত্তেজনায় ভীষণ একটা গাঁইয়া টানে লিলি বলে উঠল-
‘বুঝতে পারলেন না তো? আমি ‘জিতে রহো দিদি’ কম্পিটিশন জিতে এসেছি। ভাবতে পারছেন দিদি? এক্কেবারে ফার্স্ট’। (Bengali Novel)

এবার বুঝতে পারছেন। জিতে রহো দিদি। মহিলাদের অন্যতম জনপ্রিয় গেম শো। প্রতিযোগীদের গল্প এবং খেলা। আর তাতে পাওয়া প্রথম পুরস্কার। লিলি আজ সপ্তম স্বর্গে।
লিলির মুখ কি অসম্ভব বিশ্রী। চুলটা স্প্রে করে উৎকটভাবে বেঁধে দিয়েছে। চেনা যাচ্ছে না। (Bengali Novel)
‘আমি ভাবতেই পারছি না। এনটিভির লোকজন যখন যোগাযোগ করল তখনই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। একেই সিনেমা আর্টিস্টের সামনে দাঁড়ানো। তারপর আমি জিতে গেলাম। উফফ… তবে সব দিদি আপনার জন্য। আমি ছেলের বাবাকে বলছি আগে মিতাদিকে ফোন করো। এই আধঘণ্টা হল এসেছি। এটা আমার দিদির বাড়ি।’ (Bengali Novel)
মিতা চুপ। লোভে চকচক করছে ওদের মুখগুলো। ঋত্বিক চকোলেটের মোড়ক ছাড়িয়ে একটা কামড় দিল। সবকিছুই এত অশ্লীল লাগছে!
মিতা চুপ। লোভে চকচক করছে ওদের মুখগুলো। ঋত্বিক চকোলেটের মোড়ক ছাড়িয়ে একটা কামড় দিল। সবকিছুই এত অশ্লীল লাগছে!
এতক্ষণে উৎসাহের পারা নামতে শুরু করেছে। একটা ঠান্ডা বিরূপ স্পর্শ স্ক্রীন ভেদ করে পৌঁছোচ্ছে ওপারেও। স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাচ্ছে সব। (Bengali Novel)
‘কবে যোগাযোগ করেছে এন টিভি’?
সেই নদীর ধারের গলা। ঝনঝন করছে।
তারক উত্তর দিল-
‘হপ্তা তিনেক আগে’।
‘আমি তো সপ্তাহ তিনেক আগে দেশেই ছিলাম। আমাকে কথাটা বলার প্রয়োজন বোধ করোনি?’
লিলি চুপ। তারক চুপ। তারক একটু মরীয়া ভাবে বলল-
‘কিন্তু দিদি আপনি তো বলেননি কোনও টিভি চ্যানেলের সাথে কিছু করতে পারব না’? (Bengali Novel)
মিতা নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলেন। তারপর গলা যথা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে বললেন-
‘তারক, লিলি তোমাদের কি মনে আছে একবার তোমরা মলে গিয়ে অনেক কেনাকাটা করেছিলে, একটা ভিডিও বানিয়েছিলে আমি পোস্ট করার পরেও সেটা তুলে নিতে বলেছিলাম’?
মিতা নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলেন। তারপর গলা যথা সম্ভব স্বাভাবিক রেখে বললেন-
‘তারক, লিলি তোমাদের কি মনে আছে একবার তোমরা মলে গিয়ে অনেক কেনাকাটা করেছিলে, একটা ভিডিও বানিয়েছিলে আমি পোস্ট করার পরেও সেটা তুলে নিতে বলেছিলাম’? (Bengali Novel)

দু’জনেই চুপ।
‘কেন সেটা মনে আছে?’
তার কথার পারা চড়তে থাকে। (Bengali Novel)
‘তোমাদের এই চ্যানেল অনেকখানি পরিকল্পনা নিয়ে বানানো। প্রত্যেক ভিডিওতে সাসটেইনেবল লিভিং, অরগ্যানিক লিভিং। মাটির কাছাকাছি, নিজেদের ক্ষেত থেকে সবজি, পুকুর থেকে মাছ, নিজেদের কাছের মানুষদের নিয়ে… কতকিছু কত কিছু, ভেবে এক একটা এপিসোড বানানো? তোমরা এগুলো কি জানো না? কলাগাছ থেকে মোচা, চিচিঙ্গে লতা থেকে চিচিঙ্গে, মনের মতো মাছ, উনুনের জ্বালানি, কোনও কিছু পেতে কোনও যেন সমস্যা না হয়। আগামী ছ’মাসের প্ল্যান করে ফেলেছে আমার টিম। আর তোমরা কাউকে কিছু না বলে ওই প্রোগ্রামে চলে গেলে? জিনিস পাবার জন্য?’ (Bengali Novel)
আর কথা বলা ঠিক হবে না।
পায়ে পায়ে উঠে গেলেন জানলার দিকে। ব্লাইন্ড খুলতে বাইশ তলা থেকে প্রায়ান্ধকার আকাশ, কিছু দূরে দূরে আকাশের দিকে হাত বাড়ানো কমপ্লেক্সের বাকি টাওয়ার গুলো।
মাথা টিপে ধরলেন তিনি।
‘দিদি মানে আমরা….’
‘পরে কথা হবে’।
বলে ফোন কেটে দিলেন। আর কথা বলা ঠিক হবে না।
পায়ে পায়ে উঠে গেলেন জানলার দিকে। ব্লাইন্ড খুলতে বাইশ তলা থেকে প্রায়ান্ধকার আকাশ, কিছু দূরে দূরে আকাশের দিকে হাত বাড়ানো কমপ্লেক্সের বাকি টাওয়ার গুলো। ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে প্লেন। (Bengali Novel)
এতদিনের এত পরিশ্রম, একবার তাঁকে বলার প্রয়োজন বোধ করল না? টিমের কাউকে? পুরো বিষয়টা লুকিয়েছে খুব চালাকির সঙ্গে। আর কি লুকিয়েছে? আর কি লুকোবে?
নাঃ। এদের দিয়ে হবে না। খুঁজতে হবে। আবার। (Bengali Novel)
(ক্রমশ)
ডিজিটাল ও মুদ্রিত মাধ্যমে সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায় বস্টন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। মূলতঃ ছোট গল্প এবং আর্টিকেল লেখেন। ছোট গল্প সংকলন ক্যালাইডোস্কোপ এবং অপরাজিতা প্রকাশিত হয়েছে, কমলিনী,দেজ পাবলিকেশন থেকে।একটি ছোট গল্পের অনুবাদ শর্টলিস্টেড হয়েছে, ‘Armory Square Prize for women writers in South Asian literature’ এ। অনুদিত গল্পটি প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত Words Without Borders এর পাতায় ।আনন্দবাজারের বিদেশ পাতার নিয়মিত লেখেন তাছাড়া রোববার-সংবাদ প্রতিদিন, বাংলা লাইভ, গুরুচণ্ডালী এবং আরো কিছু ম্যাগাজিনে গল্প এবং ছোট বড় প্রবন্ধ নিয়মিত লেখেন।