Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

রোল-অ্যাকশন-কাট্: তৃতীয় দৃশ্য (৩)

ব্রাত্য বসু

জানুয়ারি ৩০, ২০২১

featured image for bratya basu play
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

[ডাউন রাইটে একটি বড় মোবাইল ফোনের কাট আউট আসে। তার মধ্যে যেন লাইভ ভিডিওকলে অভিনেতা সাগির হুসেন (বয়স ৬৫) এসে দাঁড়ান। মহেশ বলে]

মহেশ: হ্যালো সাগিরভাই, শুনতে পাচ্ছেন?

সাগির: হ্যালো। হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি। বলুন।

মহেশ: না, মানে আপনার শিব খান্নাকে নিয়ে করা টুইট নিয়ে ইতিমধ্যেই বলিউডে তুমুল হইচই শুরু হয়েছে। আপনি আমাদের একটু জানাবেন কি?

সাগির: কী জানাব?

মহেশ: মানে আপনি শিব খান্না বিষয়ে যে টুইটটি করেছেন, তা নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া…

সাগির: আমার করা টুইট নিয়ে আমিই প্রতিক্রিয়া দেব? কেন ভাই? কী অদ্ভুত!

মহেশ: না, না। আমি তা বলছি না। বলছি এইরকম একটা টুইট আজকের দিনে আপনি কেন করলেন?

[the_ad id=”270088″] 

সাগির: আমি যা বিশ্বাস করি, তাই লিখেছি। সো হোয়াট?

মহেশ: কিন্তু কারণটা যদি একবার খোলসা করে বলেন। মানে যদি একটু ভেঙে বলেন।

সাগির: এত ভাঙাভাঙি এই বয়সে আর আমি করতে পারছি না ভাই। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, যা বলেছি বেশ করেছি। আচ্ছা, আপনারা বলুন তো একটাও সিরিয়াস সিনেমা শিবকুমার খান্না জীবনে করেছেন, যে সিনেমাগুলো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতবর্ষের সম্মান বাড়িয়েছে? একটাও না। তিনি কিছু হিট সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার সঙ্গে শিল্পের সম্পর্ক কোথায়? ওঁর একটা সিনেমাও কি কান’-এ গেছে? উত্তর, না যায়নি। একটি সিনেমাও কি ভেনিসেগেছে? উত্তর, না যায়নি। পৃথিবীর কোনও সিরিয়াস ডিরেকটর কি শিব খান্নার কোনও ছবিকে পাসমার্ক দেবেন? উত্তর, না দেবেন না। তাহলে একজন অভিনেতাকে আমরা কোন কষ্টিপাথরে যাচাই করব? তা ছাড়া আমাদের দেশে কোনও অভিনেতা আসলে হিট করে না। হিট করে সিনেমাটা। সিনেমা হিট হলে, তবে সেই চরিত্রকে লোকে মনে রাখে। তাহলে বিচারটা করতে হবে সিনেমার, অভিনেতার নয়। আমি জীবনে অনেক সিরিয়াস সিনেমায় অনেক ভাল ভাল পার্ট করেছি। সিনেমাটা চলেনি, তাই আমাকেও লোকে মনে রাখেনি। কিন্তু আমি যেই মশলাদার ঝিনচ্যাক ছবিতে পার্ট করতে শুরু করলাম, লোকে আমার নাম বলতে শুরু করল। আমিও প্রচুর টাকা আর নাম কামাতে শুরু করলাম। কিন্তু ওগুলো কি আদৌ ভাল সিনেমা? উত্তর হচ্ছে, না। ওগুলো পটবয়লার কমার্শিয়াল সস্তা, জঘন্য সিনেমা। ওঁচা সিনেমা, ওঁচা। যেখানে জনতাকে বিনোদন তথা মস্তি, মস্তি, মস্তি দেওয়াই সিনেমাগুলোর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল। তাহলে…

[the_ad id=”270086″] 

মহেশ: আপনি কি মনে করেন, অভিনেতা মঞ্চে যদি অভিনয় জীবন শুরু না করেন, তিনি বড় অভিনেতা হতে পারেন না?

সাগির: কে বলেছে? হ্যাঁ, আমি থিয়েটার করি। আবার অনেক খারাপ অভিনেতাও থিয়েটার করে। আবার অনেক বড় অভিনেতা পৃথিবীতে আছেন যাঁরা কোনও দিন থিয়েটার করেননি। যেমন ধরুন ড্যানিয়েল র‍্যাডক্লিফ। তারপর ধরুন মার্ক রাফেলো বা বরিশ ইয়েভুতশেঙ্কো। যাকগে, এসব নাম আপনারা শোনেননি। বাদ দিন। প্রশ্নটা মাধ্যমের নয়, প্রশ্নটা হল শিবকুমার খান্না। কী এমন বড় অভিনেতা উনি? উনি নন। তাহলে উনি কে? উনি ছিলেন একজন স্টার। হ্যাঁ, আমি মেনে নিচ্ছি উনি স্টার। তার ওপর উনি কিছুদিন এমপি তথা সাংসদ ছিলেন। অভিনেতারা রিটায়ার করার পর পলিটিকসে এলে বাড়তি কিছু কদর, বাড়তি কিছু সমীহ লাভ করেন। কারণ আমাদের দেশে অধিকাংশ জনগণই মূর্খ। তারা শিল্পীর ক্ষমতার থেকে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখে। সেইজন্য শিবকুমার খান্নাকে নিয়ে আজ এত মাতামাতি হচ্ছে। কিন্তু স্টার মানেই ভাল অভিনেতা নন। ভাল অভিনেতা কী, তা বোঝার একমাত্র উপায় হচ্ছে কোন ধরনের চরিত্র তিনি সারাজীবনে পর্দায় নির্বাচন করলেন।

মহেশ: (বাধা দেয়) কিন্তু সাগিরজি, অনেকেই বলছেন আজকের দিনে, মানে শিবকুমার খান্না প্রয়াত হওয়ার দিনে এধরনের কথা বলাটা কি রুচিসম্মত

সাগির: না, এ বিষয়ে আমার বক্তব্য আছে। আমিও কথাটা শুনেছি। কিন্তু আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমি আজকের দিনে এই ধরনের টুইট করতাম না। কিন্তু করতে বাধ্য হলাম শুধুমাত্র আপনাদের জন্য, মানে মিডিয়ার জন্য। সকাল থেকে মিডিয়া এই মৃত্যু নিয়ে যা নাকিকান্না শুরু করেছে, যেন মার্লন ব্র্যান্ডো বা আল পাচিনো মারা গেছেন। কই, মারাঠি অভিনেতা লালু আঠোলে মারা গেলে তো আপনারা এত হইচই করেন না? কেন? লালু আঠোলে দলিত বলে? কই, বিখ্যাত কিংবদন্তী গণনাট্য সঙ্ঘের অভিনেতা ইশতিয়াক মুস্তাক মারা গেলে তো আপনারা সকাল থেকে একটা মাত্র খবর নিয়ে মিডিয়া জ্যাম করে ছেড়ে দেন না। কেন? তার মানে শিবকুমার খান্নারা মারা গেলে খবরের কাগজে দশ পয়েন্ট পাবে, আর আমি বা আমরা মারা গেলে পাঁচ পয়েন্ট পাব, তাই তো? কেন? আমি, ইশতিয়াক মুস্তাক, আমরা মুসলমান বলে? তাই তো? জানি, আমার একথায় অনেকেই ভুরু কুঁচকোবেন। ভাববেন, আমি মুসলমান বলে জাতভাইদের হয়ে কথা বলছি। কিন্তু জানবেন, অভিনেতার কোনও ধর্ম হয় না। কোনও জাত হয় না। অভিনেতার পরিচয় একটাই– সে  অভিনেতা। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, ভারতবর্ষে কোনো বর্ণহিন্দু স্টার মারা গেলে মিডিয়া যে পরিমাণ হইচই করে, কোনও দলিত বা মুসলমান অভিনেতা মারা গেলে সেই পরিমাণ হইচই হয় না। দয়া করে এখানে পাকিস্তানের উদাহরণ টানবেন না, কারণ পাকিস্তান একটা ইসলামিক দেশ। ওরা অনেকাংশে মৌলবাদী। কিন্তু আমাদের দেশ তা নয়। আমরা সেকুলার দেশ। সেকুলার – হাঃ। আমার জেঠু পঁয়ষট্টির পাক-ভারত যুদ্ধে ভারতের আর্টিলারি ফৌজে জওয়ান ছিলেন। দয়া করে অন্তত সঙ্ঘপরিবারের থেকে শেখা দেশপ্রেমের ট্যাবলেট আমাকে গেলাতে আসবেন না। আমি এ দেশেই বড় হয়েছি। এই দেশ আমাকে সব দিয়েছে। কিন্তু পরের প্রজন্মের হাতে আমরা এ কোন দেশ তুলে দিয়ে যাচ্ছি? যে দেশে আমি জন্মেছিলাম,  অন্তত আজ এ  দেশ সেই দেশ  নয়। প্রত্যেক সেকেন্ডে এই দেশ বদলে যাচ্ছে। এই দেশকে আমি চিনি না। আমি এই দেশের…

মহেশ: কিন্তু স্যার, আপনাকে জানাই, একটু আগে শিবকুমার খান্নার মেয়ে নবনীত পুরী রি-টুইট করেছেন। উনি বলেছেন, অন্তত ওঁর বাবা বেঁচে থাকতে এ কথাগুলো আপনি বললে ভাল করতেন। কারণ, উত্তর যিনি দিতে পারতেন, সেই শিবকুমার খান্না আজ নীরব। অন্তত আপনি আর কিছু না পারুন, সেই নীরবতাটুকুকে সম্মান জানান।

[the_ad id=”270085″]

সাগির: এটা কে বলেছে?

মহেশ: শিব খান্নার মেয়ে স্যার। নবনীত পুরী।

সাগির: অ্যাঁ? ও এটা বলেছে নাকি? তাহলে শুনুন ভাই, আমার বলা সব কথা আমি প্রত্যাহার করছি। টুইটটাও ডিলিট করে দিচ্ছি। থ্যাঙ্কিউ। শিবকুমার খান্নার আত্মীয়-পরিজনদের আমার শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানাবেন। চলি।

[সাগিরের মুখ থেকে আলো মিলিয়ে যায়। মহেশ বলতে থাকে।]

মহেশ: হ্যালো, হ্যালো।

[পুনম ঢোকে।]

পুনম: ভাল হয়েছে লাইভটা। আমি মোবাইলে দেখছিলাম। গুড জব।

মহেশ: কিন্তু এ তো শিব খান্নার মেয়ের নাম শুনে পালিয়ে গেল।

পুনম: আরে সাগির হুসেন মহা চালাক। জাতে মাতাল, তালে ঠিক। একদিকে ঝালও ঝাড়ল, অন্যদিকে মেয়ের নাম শুনে দেখাল ও মহিলাদের প্রতি কত শ্রদ্ধাশীল।

মহেশ: ঠিক বলেছিস।

পুনম: আচ্ছা অভিনেত্রী সাবিনা ফারহানকে একবার ধরব? তোর কী সাজেশন?

মহেশ: আবার সে কেন? সে তো প্রায় অস্তাচলে চলে গেছে।

পুনম: আরে ও একবার শিব খান্নার এগেনস্টে মিটুদিয়েছিল না? ‘দাদাজি কোন্ডদেবসিনেমাটা যখন হচ্ছিল তখন?

মহেশ: ঠিক ঠিক। শিবকুমার নাকি ওকে শটের সময় ইচ্ছে করে মলেস্ট করেছিল।

পুনম: শিবকুমার খান্না করছিল দাদাজি কোন্ডদেবের পার্ট। আর সাবিনা করছিল শিবাজির মা জিজাবাঈয়ের পার্ট। বউমাবলে নাকি থেকে থেকে শিব খান্না সাবিনাকে জড়িয়ে ধরত। সাবিনা বিরাট ক্ষেপে গেছিল।

মহেশ: গুড আইডিয়া। কিন্তু আজকের দিনে কেসটা খোঁচানো কি ঠিক হবে? সাবিনা তো শুনেছি অ্যাকটিং প্রায় ছেড়ে দিয়েছে।

পুনম: ছাড় তো। বাজার এসব খবর পেলে মুচমুচ করে খাবে। সকালবেলা চায়ের সঙ্গে নোনতা বিস্কুটের মতো। এই, তুই কিন্তু আগে ওকে ধরবি না। আইডিয়াটা আমার। আমি এটা ব্রেক করব।

মহেশ: ওরে, না রে ভাই আমি সাবিনাকে ধরছি না। আমাদের চ্যানেলে এসব যাবেও না, এডিটার নিজে একবার সেম কেস খেয়েছিল না?

পুনম: কারেক্ট।

মহেশ: শোন পুনম, সাবিনার বুক দুটো কিন্তু খুব বড় ছিল। অনেকটা তোর মতো।

পুনম: চোপ রাস্কেল। ইউ ফাকিং ম্যারেড মিডলক্লাস বাস্টার্ড।

(দুজনে হাসে। অন্ধকার, পেছনের দ্বিতীয় ঘরে আলো জ্বলে। জাফর, অর্জুন, কোকনদ, প্রণব আর টিকলি আছে। জাফর কিছু একটা বলছে। সবাই হাসছে। হঠাৎ প্রণব ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। ঘরে একটা নীরবতা নেমে আসে। এক দু সেকেন্ড পরে টিকলিও বেরিয়ে আসে। সে এসে ডাউন-লেফটে সিগারেট খেতে থাকা প্রণবকে ধরে।)

টিকলি: কী হল, চলে এলে?

প্রণব: (গম্ভীর) বাড়ি যাব, মিটিং আছে। ঢোলাকিয়াদের আসার কথা। নতুন সিনেমা নিয়ে।

টিকলি: তার জন্য হঠাৎ করে সিন ক্রিয়েট করে বেরিয়ে এলে কেন?

প্রণব: কেন? কারণটা তুমি জানো।

টিকলি: না, জানি না। তুমি বল।

প্রণব: তুমি আমাকে ডিভোর্স করছ না কেন? করে জাফরকে বিয়ে করছ না কেন? ও তো মুসলিম। দুটো বিয়ে ওরা করতেই পারে।

টিকলি: প্রণব কী হচ্ছে কী?

প্রণব: দয়া করে অন্তত আমার সামনে ওর সঙ্গে এত ফ্লার্ট কোরো না। পেছনে যা খুশি করো, আমি তো আর দেখতে যাই না।

টিকলি: তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?

প্রণব: হ্যাঁ তাই। আমি মাথামোটা ফাইটমাস্টার। টেকনিশিয়ান। অত সূক্ষ্মতা আমার নেই। কিন্তু তোমাদের ভেতরের চক্কর ধরার মতো বুদ্ধি অন্তত আমার আছে।

টিকলি: আমি আর জাফর এতক্ষণ ওই ঘরে ফ্লার্ট করছিলাম?

প্রণব: নয় তো কী? আমাকে আর বোকা বানাতে এস না টিকলি। সারা ভারতবর্ষ জানে তোমাদের কথা। অনেকেই তোমাদের রিয়েল স্বামী-স্ত্রী ভাবে।

টিকলি: সেটা ওইভাবে আমরা বাজারে নিজেদের প্লেস করেছি বলে। বিজনেসের জন্য। এবং সেটা তোমার সঙ্গে কথা বলে নিয়েই করেছি।

প্রণব: (বলে যায়) তুমি বললে পি.এম.কে.পিমানে পেয়ার কো মেরে কিসনে পুকারা’-র রিলিজের সময় দুজনে একসঙ্গে সব চ্যানেলে ইন্টারভিউ দেবে। নাকি চারশো কোটি টাকার ব্যবসা হবে। ভাল কথা, দাও ইন্টারভিউ। কিন্তু টি.ভি-তে প্রশ্নের এ কি ছিরি! লোকে বলছে আপনারাই আসল স্বামী-স্ত্রী। একি! প্রশ্ন করার সময় লোকে আমার বা জাফরের বউয়ের কথা একবারও ভাববে না?

টিকলি: কত টাকার ব্যবসা হয়েছিল বলো পি.এম.কে.পি’-?

প্রণব: ভাঁড়ে যাক ব্যবসা। পরের বারও একই কাণ্ড।

টিকলি: পরের বার মানে?

প্রণব: ন্যাকা সেজো না। এ.জে.সি.কে’-র সময়?

টিকলি: এ.জে.সি.কে’?

প্রণব: ন্যাকা। আভি না যাও ছোড় কর। ভুলে গেছ যেন?

টিকলি: হ্যাঁ কি?

প্রণব: ওই ন্যাকার বাচ্চা অর্জুন তোমার কানে মন্ত্র দিল দু’জনে সারা পৃথিবী ঘুরে ঘুরে এন.আর.আই-দের কাছে প্রমোশন করবে। দু’জনে মিলে তখন সারা পৃথিবী ঘুরলে। আজ লন্ডন তো কাল শিকাগো। রাতে একটা ফোন করলে অব্দি তুমি সেসময় ফোন ধরতে না।

টিকলি: কারণ তোমার এখানে যখন রাত, ওখানে তখন দিন, তখন হয়তো আমরা প্রমোশন করছি।

প্রণব: আর এখানে যখন দিন, তখন তো ওখানে রাত? তখন কি করছ? কমোশন? নাকি ইমোশন?

টিকলি: ছিঃ, তোমার মন খুব নোংরা প্রণব।

প্রণব: সত্যি কথা বললে তো নোংরা হবোই ভাই। বললাম তো আমরা মাথামোটা টেকনিশিয়ান। ফাইটমাস্টার। কিন্তু তোমাদের মতো চটপটে ধূর্ত নই। ওই জাফর, জাফর একটা ধড়িবাজ চতুর চূড়ামণি  আর  তুমি হচ্ছ ন্যাকার হদ্দ। (ভেঙায়) আমরা আসলে খুব ভাল বন্ধু। আমাদের দারুণ কেমিস্ট্রি। প্রণব আর উমাও এটাও জানে!বন্ধু? হিরো-হিরোইন বন্ধু? আমার অ্যাসিস্ট্যান্টগুলো পর্যন্ত পেছনে আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। বলে, ‘আমাদের স্যার পাক্কা আয়ান ঘোষ। রাধাকৃষ্ণের লীলা দেখেও দেখে না।

টিকলি: (শান্তভাবে) ওরা এসব বলে না। যদি বা বলেও ভুল বলে। শোনো প্রণব, তুমি যাই ভাবো, সিনেমার নায়ক-নায়িকা জীবনে বন্ধু হতে পারে।

প্রণব: একদম পারে না । বাল।

টিকলি: সে তুমি কুড়িটা খিস্তি দিয়ে নিজের রুচি প্রকাশ করতে পারো, সত্যিটা মুছে দিতে পারো না।

প্রণব: কোনটা সত্যি টিকলি? কোনটা? তোমাকে দিন দশবার জাফরের ফোন করাটা? বাড়িতে থাকলে তোমার ফোন কন্টিনিউয়াস সাইলেন্ট মোডে রেখে দেওয়াটা?

টিকলি: বাড়িতে কেন, ফ্লোরেও আমার ফোন সবসময় সাইলেন্ট মোডে থাকে।

প্রণব: আর বাড়িতে সারাক্ষণ তোমার ফোনের দিকে তাকিয়ে বসে থাকাটা? জাফরের ফোন এলে আমি দেখেছি তোমার চোখমুখ পাল্টে যায়।

টিকলি: ভুল দেখেছ। ওটা তোমার ধারণা।

প্রণব: একদম টুপি পরাতে আসবে না। আমি কিছু বলতে গেলেই সঙ্গে সঙ্গে চারশো কোটি, পাঁচশো কোটির গল্প! এইসব বলে বলে আমার মুখ চাপা দেওয়ার চেষ্টা।

টিকলি: তোমার মতো অশিক্ষিত এ ছাড়া আর কিইবা বলতে পারে?

প্রণব: লাথ মারি ওই শিক্ষায় আমি। বলছি তো, আমাকে ডিভোর্স করো। ডিভোর্স দিয়ে ওই শিক্ষিত জাফর খানকে বিয়ে করো।

টিকলি: কেন তা করব? আমি তোমাকে ভালবাসি।

প্রণব: ভালবাস? আমাকে? হাঃ আমি বিশ্বাস করি না।

টিকলি: তুমিও আমাকে বাসো।

প্রণব: মোটেও না। আগে বাসতাম। এখন আর বাসি না।

টিকলি: এখনও বাসো।

প্রণব: স্যরি ম্যাডাম। আই হেট দ্যাট ওয়ার্ড। লাভ! ভালবাসা! ঢের হয়েছে।

টিকলি: (হাসে) নইলে এত জ্বলে যাও কেন আমাদের দেখলে? পাবলিকলি কোন সুস্থ লোক এরকম সিন ক্রিয়েট করে?

প্রণব: সেটা নিজের অপমানবোধ থেকে। মেল ইগো আহত হয় বলে। আমার মনে হয় সারা পৃথিবী আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

টিকলি: আমি তো কতবার বললাম তুমি একটা সিনেমায় নিজে অভিনয় করো। আমি তোমার এগেনস্টে থাকব। দরকার হলে অ্যাকশন-প্যাকড ছবি করো। যেটায় তুমি কমফর্টেবল।

প্রণব: আমার কাজ অভিনয় করা নয়। আমি টেকনিশিয়ান। আর আমি তাতেই খুশি। শালা আরেকবার লাইফ পেলে আর যাই হোক সেলিব্রিটি বউ ঘরে নিয়ে আসব না।

টিকলি: আমিও আরেকবার লাইফ পেলে কোনো গোঁয়ারগোবিন্দ অ্যাকশন-ডিরেকটার বরকে অন্তত বিয়ে করব না।

প্রণব: যাও। যাও। ভেতরে যাও। গিয়ে ওই জাফর আলির সঙ্গে ঢলাঢলি করো, আমি চললাম।

টিকলি: (প্রণবকে আটকায়) কই, আমি তো তোমায় বেগম বব্বুর সঙ্গে রিলেশন নিয়ে এত কথা শোনাই না।

প্রণব: বব্বুর সঙ্গে আমার আর যাই হোক প্রেম নেই।

টিকলি: না শুধু ফোনে সেক্স চ্যাট হয়? তাইতো?

প্রণব: একদম বাজে বদনাম দেবে না বলে দিচ্ছি।

টিকলি: ওকে। এক কাজ করা যাক। আজ থেকে আমার মোবাইল তোমার কাছে থাকবে, আর আমারটা তোমার কাছে। সাতদিন পরে যে যার মোবাইল ফেরত দেব। 

প্রণব: নো ওয়ে। একদম চালাকি করবে না। তোমার ফোনে পাসওয়ার্ড দেওয়া আছে। যেটা আমি জানি না।

টিকলি: আমি খুলে দিচ্ছি পাসওয়ার্ড। কিপ ইট।

(প্রণবের হাতে ফোন দেয়)

এবার তোমারটা দাও।

প্রণব: নো চান্স। তুমি তোমার ফোন রাখো। আমি আমারটা আমার কাছে রাখব।

টিকলি: কেন স্যার, কেন?

প্রণব: তার কারণ, মেয়েরা আমাকে এমনি সাধারণ মেসেজ করলেও তুমি রিঅ্যাক্ট করো। আমি বাড়িতে কোনো অশান্তি চাই না।

টিকলি: নিঘঘাৎ ওই ঊষা আপ্তে, তাই তো? আবার তোমরা চালাচ্ছ? ডাইনির বাচ্চা একটা ওই ঊষা আপ্তে!

প্রণব: হুঃ। ঊষা আপ্তে! কে বলেছে? বাজে কথা যত।

টিকলি: দেখি দেখি তোমার ফোন।

প্রণব: কখনও না।

(প্রণব দৌড়ে বেরিয়ে যায়। পেছন পেছন ধাওয়া করে টিকলিও বেরোয়। মুখে বলতে বলতে ইউ হিপোক্রিট মেল। মাঝখানের ঘরে আলো জ্বলে। জাফর, কোকনদ আর অর্জুন আছে।)

 

*ছবি সৌজন্য Pinterest
পরবর্তী পর্ব প্রকাশিত হবে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
আগের পর্বের লিংক –

জন্ম ১৯৬৯, ২৫ সেপ্টেম্বর, মেদিনীপুর। পূর্বতন প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। পরবর্তীতে সিটি কলেজে অধ্যাপনা। নাটককার, পরিচালক, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, চলচ্চিত্রাভিনেতা, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, গীতিকার সম্পাদক। 'কালিন্দী ব্রাত্যজন' নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার ও 'ব্রাত্যজন নাট্যপত্রের' প্রধান সম্পাদক। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের মন্ত্রী। পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও স্বীকৃতি। উল্লেখ্য সত্যেন মিত্র পুরস্কার, শ্যামল সেন স্মৃতি পুরস্কার, দিশারী পুরস্কার, রমাপ্রসাদ বণিক স্মৃতি পুরস্কার, খালেদ চৌধুরী স্মারক সম্মান, অন্য থিয়েটারের শ্রেষ্ঠ নাট্য নির্মাণ সম্মান। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন গজেন্দ্র কুমার মিত্র-সুমথনাথ ঘোষ স্মৃতি সম্মান। তাঁর সম্পাদনায় 'গিরিশ কথা' ও 'শিশির কথা' দু'টি বই তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, প: ব: সরকার কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। পেয়েছেন এবিপি আনন্দ 'সেরা বাঙালি ২০১৯' সম্মান। পেয়েছেন বাংলার নাট্যশিল্প জগতের সর্বোচ্চ সম্মান 'দীনবন্ধু মিত্র পুরস্কার'।

Picture of ব্রাত্য বসু

ব্রাত্য বসু

জন্ম ১৯৬৯, ২৫ সেপ্টেম্বর, মেদিনীপুর। পূর্বতন প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। পরবর্তীতে সিটি কলেজে অধ্যাপনা। নাটককার, পরিচালক, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, চলচ্চিত্রাভিনেতা, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, গীতিকার সম্পাদক। 'কালিন্দী ব্রাত্যজন' নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার ও 'ব্রাত্যজন নাট্যপত্রের' প্রধান সম্পাদক। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের মন্ত্রী। পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও স্বীকৃতি। উল্লেখ্য সত্যেন মিত্র পুরস্কার, শ্যামল সেন স্মৃতি পুরস্কার, দিশারী পুরস্কার, রমাপ্রসাদ বণিক স্মৃতি পুরস্কার, খালেদ চৌধুরী স্মারক সম্মান, অন্য থিয়েটারের শ্রেষ্ঠ নাট্য নির্মাণ সম্মান। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন গজেন্দ্র কুমার মিত্র-সুমথনাথ ঘোষ স্মৃতি সম্মান। তাঁর সম্পাদনায় 'গিরিশ কথা' ও 'শিশির কথা' দু'টি বই তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, প: ব: সরকার কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। পেয়েছেন এবিপি আনন্দ 'সেরা বাঙালি ২০১৯' সম্মান। পেয়েছেন বাংলার নাট্যশিল্প জগতের সর্বোচ্চ সম্মান 'দীনবন্ধু মিত্র পুরস্কার'।
Picture of ব্রাত্য বসু

ব্রাত্য বসু

জন্ম ১৯৬৯, ২৫ সেপ্টেম্বর, মেদিনীপুর। পূর্বতন প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। পরবর্তীতে সিটি কলেজে অধ্যাপনা। নাটককার, পরিচালক, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, চলচ্চিত্রাভিনেতা, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, গীতিকার সম্পাদক। 'কালিন্দী ব্রাত্যজন' নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার ও 'ব্রাত্যজন নাট্যপত্রের' প্রধান সম্পাদক। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের মন্ত্রী। পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও স্বীকৃতি। উল্লেখ্য সত্যেন মিত্র পুরস্কার, শ্যামল সেন স্মৃতি পুরস্কার, দিশারী পুরস্কার, রমাপ্রসাদ বণিক স্মৃতি পুরস্কার, খালেদ চৌধুরী স্মারক সম্মান, অন্য থিয়েটারের শ্রেষ্ঠ নাট্য নির্মাণ সম্মান। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন গজেন্দ্র কুমার মিত্র-সুমথনাথ ঘোষ স্মৃতি সম্মান। তাঁর সম্পাদনায় 'গিরিশ কথা' ও 'শিশির কথা' দু'টি বই তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, প: ব: সরকার কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। পেয়েছেন এবিপি আনন্দ 'সেরা বাঙালি ২০১৯' সম্মান। পেয়েছেন বাংলার নাট্যশিল্প জগতের সর্বোচ্চ সম্মান 'দীনবন্ধু মিত্র পুরস্কার'।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস