আগের পর্ব- ঈশ্বর: পর্ব ১, ঈশ্বর: পর্ব ২
অতুল: খুবই দুর্ভাগ্য জনক ঘটনা। (ভক্ত দের উদ্দেশ্যে) সেই কারণেই আমি বলছি, লোকের কথা শুনে বিভ্রান্ত হবেন না। নিজের অন্তরের কথা শুনুন – নিজেকে বোঝার চেষ্টা করুন। ইংরেজিতে একটা কথা আছে যার তরজমা করলে দাঁড়ায়, ঈশ্বর তাকেই সাহায্য করেন যে আগে নিজেকে সাহায্য করতে উদ্যোগী হয়। ঈশ্বরের কৃপা তার প্রতি বর্ষিত হয় যিনি নিজের উপর আস্থা রাখেন –
শাশ্বতী: চুপ করুন আপনি। (ভক্তদের উদ্দেশে) সেই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার দুজন সাক্ষী আজ এখানে উপস্থিত। এক সেই দুর্ভাগা অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবী – আমি। অন্যজন সেই জোচ্চোর, ঠগ, মিথ্যেবাদী বিজ্ঞানী – আপনাদের অতুলানন্দ মহারাজ – ওরফে অমিত মুখার্জি।
(ভক্তদের মধ্যে একটা গুঞ্জন ওঠে। মৃণাল অবস্থার সামাল দিতে সামনে এসে দাঁড়ান)
মৃণাল: আপনি কি বলছেন ম্যাডাম? ছি ছি ছি! আপনি আমাদের পরম পূজনীয় গুরু মহারাজকে ঠগ জোচ্চোর বলছেন। আপনি এই মুহূর্তে এখান থেকে বেরিয়ে যান।
অতুল: দাঁড়াও মৃণাল। শাশ্বতী, আমি আবার আপনাকে বলছি – আপনি ভুল করছেন। হয়ত কোনও গভীর মানসিক ক্ষত আপনার মনে এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। আপনি যদি আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন, তাহলে সেই ক্ষত নিরাময় করতে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি।
শাশ্বতী: তুমি আমাকে সাহায্য করবে? কী ভেবেছ তুমি আমাকে? আবার আমি তোমাকে বিশ্বাস করব? আমি আর সেই বোকা সরল মেয়ে নই অমিত। আমি অনেক ঝড় জল সহ্য করে নিজেকে তৈরি করেছি। তোমার মেয়েকে মানুষ করেছি। সে যখন এসে তোমাকে প্রশ্ন করবে, কেন এমন করলে বাবা? জিজ্ঞাসা করবে, আমি কী দোষ করেছিলাম বাবা যে আমাকে এভাবে ফেলে চলে গেলে? কী উত্তর দেবে?
অতুল: আমি সন্ন্যাসী। আমার কোনও সন্তান নেই, কোনও সংসার নেই। তবু তোমার মেয়েকে আমি বলব, সে যেন তার পিতাকে ক্ষমা করে।
শাশ্বতী: ক্ষমা? কক্ষনও না। তোমাকে তোমার শাস্তি পেতে হবে। আমি সারা পৃথিবীকে জানিয়ে দেব, তুমি ঠগ – তুমি জোচ্চোর। আপনারা শুনুন, এই ক্রিমানাল্টাকে বিশ্বাস করবেন না। এ আপনাদের পথে বসিয়ে ছাড়বে। আপনাদের ধ্বংস করে আবার পালিয়ে যাবে।
অতুল: মিথ্যে! সব মিথ্যে! মৃণাল এই মহিলাকে এখান থেকে বের করে দাও।
মৃণাল: কিন্তু মহারাজ উনি টাইমস থেকে এসেছেন –
অতুল: তাতে কী হয়েছে? আমার নামে এইরকম অপবাদ করবে আর তোমরা তা সহ্য করবে? আমি চাই না টাইমসে ইন্টার্ভিউ। দূর করে দাও একে।
মৃণাল: কিন্তু যদি খারাপ কিছু লিখে বসেন ?
শাশ্বতী: খারাপ? আমি ওকে জেলের ঘানি টানিয়ে ছাড়ব। শেষ করে দেব ওঁকে। তবে আমার নাম শাশ্বতী।
(শাশ্বতী ছুটে দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। অতুলানন্দ কিছুক্ষণ সেদিকে চেয়ে থাকে। তারপর আবার ভক্তদের উদ্দেশ্য করে বলে।)
অতুল: আমি দুঃখিত। উনি যে এরকম ব্যবহার করবেন আমি ভাবতে পারিনি। যাই হোক, আসুন আমরা আমাদের আলোচনা আবার শুরু করি। আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। আমি কে?
ভক্ত ১: কিন্তু মহারাজ, ওই পৃথিবী ধ্বংস হবার খবরটা কি সত্যি?
অতুল: বললাম তো, আজ নয়ত কাল – পৃথিবী ধ্বংস হবেই। এখন আজ হবে, না কাল হবে, সেটা নির্ভর করছে আমাদের উপর।
ভক্ত ২: আমাদের উপর? কেন মহারাজ? কী করেছি আমরা?
ভক্ত ৩: কিছু একটা উপায় করুন মহারাজ। আপনার যা চাই আমরা তাইই জোগাড় করে দেব। আপনি যেভাবে হোক আমাদের বাঁচান।
(চলবে)
ছবি সৌজন্যে Pixabay
সুদীপ্ত ভৌমিক একজন প্রতিষ্ঠিত নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা। ওঁর নাটক অভিবাসী জীবনের নানা দ্বন্দ ও সংগ্রামের কথা বলে। সুদীপ্তর নাট্যদল একতা (ECTA) উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিমবঙ্গের নাট্যপ্রেমীদের কাছে এক পরিচিত নাম। ভাষানগর পুরস্কার, নিউ জার্সি পেরি এওয়ার্ড নমিনেশন, সিএবি ডিস্টিংগুইশড সার্ভিস এওয়ার্ড ইত্যাদি সম্মানে ভূষিত সুদীপ্ত ড্রামাটিস্ট গিল্ড অফ আমেরিকার পূর্ণ সদস্য। ওঁর পডকাস্ট স্টোরিজ অফ মহাভারত অ্যাপল আইটিউনস-এ শ্রেষ্ঠ পডকাস্টের স্বীকৃতি পেয়েছে।