Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

রোল-অ্যাকশন-কাট্: তৃতীয় দৃশ্য (৫)

ব্রাত্য বসু

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১

roll action cut Bengali play
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

[অন্ধকার হয়। বাইরের রাস্তায় আলো জ্বলে। পুনম ও মহেশ। পুনম একটা সিগারেট ধরায়]

পুনম:কী রে, দুপুর গড়িয়ে গেল তো। আর কেউ কি আসবে?

মহেশ: আসবে, আসবে। আর যদি না-ও আসে, আমাকে অন্তত এই চাঁদিফাটা গরমে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে রে ভাই। এডিটর বলেছে বডি বাংলো থেকে না বেরলে এক পা-ও না নড়তে।

পুনম: হুম। আমি শালা ভাবছি, তোরা এই এন্টারটেইনমেন্ট জগতে টানা বাঁচিস কী করে? ভাগ্যিস আমাকে খালি এই জগতে বাঁচতে হয় না। পলিটিক্যাল বিট না দেখলে আমি হয়তো মরেই যেতাম।

মহেশ: কেন বলছিস?

[the_ad id=”266918″] 

পুনম: কেন বলব না? এটা একটা পৃথিবী হল? শালা ফেক ওয়র্ল্ড। দুনিয়ার মিথ্যেবাদীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সামনে মিষ্টি মিষ্টি কথা আর পেছনে জামার ভেতরে লুকনো বাঘনখ। চান্স পেলেই বুক চিরে ফালা ফালা করে দেবে।

মহেশ: সে তোর ওই পলিটিক্যাল ওয়র্ল্ড নয় বুঝি? ফেক – মিথ্যেবাদী?

পুনম: আহা। ওরা তো সমাজে এক্সপোজ়ড। সবাই ওদের সামনে গিয়ে সেলাম দেয় আর পেছনে গালি দেয়। কিন্তু তোর এরা তো পলিটিশিয়ানদেরও বাড়া। আর মূর্খ পাবলিক পতঙ্গের মতো তালি দিতে দিতে আগুনের পেছনে দৌড়চ্ছে। একটা অচল সিকিকে ওয়র্ল্ড ব্যাঙ্কের ভল্ট করে তুলছে। সভ্য দেশে হবে এসব? সেখানে একজন অ্যাকটর স্বচ্ছন্দে রাস্তার ধারে কফিশপে বসে কফি খেতে পারে। পাবলিক এসে দাঁত কেলিয়ে বলবে না, আপনার সঙ্গে একটা সেলফি তোলা যাবে স্যার?

মহেশ: সে তো খুব ভাল। লোকটার পপুলারিটি ভাব একবার। স্টার, বস, এরা স্টার।

পুনম: বললাম তো, ঝাঁটা মারি ওই ফেক পপুলারিটিকে। ওই স্টারগিরিকে।

মহেশ: এ তুই হিংসে থেকে বলছিস পুনম। তুই ওই জীবনটা পেলে ছেড়ে দিতিস?

পুনম: আলবাৎ দিতাম। শোন আমি অটোতে উঠতে ভালবাসি, বুঝেছিস? রাস্তায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভালবাসি, জুহু বিচে বসে পা দোলাতে দোলাতে ভেলপুরি খেতে ভালবাসি। সারাক্ষণ ওই কালো গাড়ি আর সিকিউরিটি নিয়ে চলা, আর ওগুলো জীবনে বাঁচিয়ে রাখতে সারাক্ষণ মিথ্যে বলা, ফেক হাবভাব করা— এ আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি না।
মহেশ: তা তোর পেশায় তোকে মিথ্যে বলতে হয় না বুঝি?

পুনম: হ্যাঁ হয়। কিন্তু সে আমার অস্তিত্ব টিঁকিয়ে রাখার জন্য। আর এরা তো মিথ্যে বলে শুধু নিজেদের যা কিছু ফোকটাই অর্জন, সেটা ধরে রাখার জন্য।

মহেশ: ওসব তোর অজুহাত, মিথ্যে বলার সান্ত্বনা। মিথ্যেটা মিথ্যেই থাকে পুনম, যেই বলুক। নেতা বা পাবলিক। (থামে) শোন পুনম। আমি কেসি কলেজে ইকনমিকস নিয়ে পড়েছিলাম। গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করিনি, তার আগেই ওয়াক-ইন ইন্টারভিউতে এই চাকরিটা পেয়ে গেলাম। অনেক চ্যানেল তৈরি হচ্ছিল তখন। অঞ্জলির বাড়িতে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। আমার একটা চাকরি খুব দরকার ছিল তখন।

পুনম: তুই কি এখন নিজের জীবনের স্ট্রাগলের গপ্পো করতে চাস? তাহলে বলি আমার সেটা শুনতে মোটেও ভাল লাগবে না।

মহেশ: বয়ে গেছে তোকে আমার স্ট্রাগলের গল্প করতে। আমি তোকে অন্য কথা বলছি।

পুনম: কী সেটা?

মহেশ: তো আমার ওই দু’বছর ইকনমিকস পড়ার শিক্ষা থেকে তোকে বলতে পারি, পুঁজি হচ্ছে এমন একটা বিষয়, যে তাকে মিথ্যে বলতেই হবে। একদম দাম্পত্যের মতো।

পুনম: জানি না রে ভাই। আমি তো আর বিয়ে করিনি। বলতে পারব না।

মহেশ: শোন, তিনটে তো মাত্র পুঁজির বড় ইভেন্ট আমাদের দেশে। পলিটিকস, সিনেমা আর ক্রিকেট। এগুলো তাই আমাদের দেশে মিলেমিশে, হাত ধরাধরি করে, গলাগলি করে চলে। আর তাই-ই চলার কথা। গ্ল্যামার আর টাকা আমাদের দেশে এই তিনের সঙ্গে যেভাবে লেপটে আছে, আর কোথায় আছে বল? নেই কোথাও।

[the_ad id=”266919″] 

পুনম: ঠিক। সেইজন্য আমাদের দেশের কিছু হবে না। অন্ধকার থেকে আরও অন্ধকারে চলে যাব আমরা। ওই পলিটিকস, সিনেমা আর ক্রিকেটের হিরোরাই শুধু বাঁচবে এদেশে।

মহেশ: না না। উল্টোরথ হবেই। (হাসে) মজার কথা কী বল তো, এই তিনের হিরোরা যখন গাড্ডায় পড়ে, তুই একটু আগে যাদের মূর্খ পাবলিক বললি, তারাই এসে তখন সবার আগে ওদের ধরে প্যাঁদায়। তোর আর আমার মতো মিডলক্লাস তখন দূরে দাঁড়িয়ে হাততালি দেয়, মাঝেমাঝে টুক করে ওদের মাথায় দু’ একটা চাঁটা মেরে চলে আসে।

পুনম: হ্যাঁ, ওই গণপিটুনি আর চাঁটাচাটিই বাঁচবে শুধু আমাদের দেশে। কেচ্ছা বিক্রি হবে, খিস্তি বিক্রি হবে আর গসিপ। ভাইরাসের নাম লোকে জানবে বেশি, ভাইরাসের ওষুধ যে আবিষ্কার করবে তার নাম লোকে জানবে কম।

মহেশ: এঃ! তুই একেবারে সিনিক নেগেটিভ হয়ে গেছিস পুনম। পজিটিভ হ, পজিটিভ।

পুনম: তোর মতো পজিটিভ? যে পলিটিক্যাল নেতাদের গালি দেয় আর সরকারকে ট্যাক্স ফাঁকি দেয় আর বউকে লুকিয়ে অন্য মহিলার সঙ্গে ছক করে আর চান্স পেলেই তার সঙ্গে শুয়ে পড়ে?

(দু’জনে হাসে। বাইরে সাইরেনের আওয়াজ হয়। পুনম আর মহেশ সচকিত হয়। আবহ আসে। সাইরেন থামলে অনেকগুলো গাড়ির দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ হয়। অনেক ভারী বুটের শব্দ হয়। এক মুহূর্ত বাদে মুখ্যমন্ত্রী গঙ্গাধর চাপেকর ঢোকেন। ওঁর সঙ্গে দু’জন নিরাপত্তারক্ষী। তার পেছনে অভিনেতা এমপি সুরেশ মোরে (৬০) এবং রাজনৈতিক কর্মী বিনায়ক শিন্ডে (৪০) ঢোকেন। সঙ্গে একটি কমবয়সী মেয়ে। তার নাম শান্তা ওয়াদেকার (২০-২২)। আবহ চলছে। ভেতর থেকে ভিকি, দিব্যা, নবনীত ও হিমাংশু বেরিয়ে আসে। ওরা গঙ্গাধরকে নমস্কার করে। গঙ্গাধরও নমস্কার করেন। পুনম আর মহেশ ছবি তুলে যাচ্ছে)

[the_ad id=”270084″]

ভিকি: আসুন স্যার, আসুন। খান্না পরিবার ধন্য হল। পিতাজির আত্মা শান্তি পেল।

গঙ্গাধর: না, আমি তো আসতামই। আমার হৃদয়ে শিবজির জন্য প্রচুর শ্রদ্ধা মজুত হয়ে আছে। এদেরও নিয়ে এলাম ভিকি। তুমি তো চেনোই এঁকে। (সুরেশকে দেখায়) আমার এমপি সহকর্মী অভিনেতা সুরেশ মোরে। আর এ হল আমার রাজনৈতিক সহকর্মী বিনায়ক শিন্ডে। আর এ আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মেয়ে, ওর নাম শান্তা ওয়াদেকার। ও আমার ওপর একটা থিসিস লিখছে। বিদেশ থেকে একটা ডেলিগেট টিম এসেছিল অফিসে। তারপর শান্তাকে টাইম দিয়েছিলাম। তা ওকে বললাম এখানে আসতে হবে, ও-ও শুনে আমার সঙ্গে গাড়িতে উঠে পড়ল।

ভিকি: নিশ্চয়ই স্যার। নিশ্চয়ই। আপনারই বাড়ি। সবাই আসবেন।

গঙ্গাধর: (নিরাপত্তারক্ষীদের বলেন) তোমরা বাইরে থাক। (পুনমদের দিকে তাকান) কী খবর?

পুনম: স্যার, বাইট একটা। একটা বাইট।

গঙ্গাধর: না, না, পরে। ওসব পরে হবে।
(ভেতর থেকে অরুণা অরোরা বেরিয়ে আসেন। পেছনে প্রমোদ ঠাকরে)

অরুণা: স্যার আসুন। আসুন স্যার। প্রণাম স্যার।

গঙ্গাধর: প্রণাম ম্যাডাম। প্রণাম।

[গঙ্গাধর হাতজোড় করেন। আবহ বেড়ে যায়। পর্দা পড়ে]

*ছবি সৌজন্য Pixabay
পরবর্তী পর্ব প্রকাশিত হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১
আগের পর্বের লিংক – [১] [২] [৩] [৪] [৫] [৬]

জন্ম ১৯৬৯, ২৫ সেপ্টেম্বর, মেদিনীপুর। পূর্বতন প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। পরবর্তীতে সিটি কলেজে অধ্যাপনা। নাটককার, পরিচালক, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, চলচ্চিত্রাভিনেতা, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, গীতিকার সম্পাদক। 'কালিন্দী ব্রাত্যজন' নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার ও 'ব্রাত্যজন নাট্যপত্রের' প্রধান সম্পাদক। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের মন্ত্রী। পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও স্বীকৃতি। উল্লেখ্য সত্যেন মিত্র পুরস্কার, শ্যামল সেন স্মৃতি পুরস্কার, দিশারী পুরস্কার, রমাপ্রসাদ বণিক স্মৃতি পুরস্কার, খালেদ চৌধুরী স্মারক সম্মান, অন্য থিয়েটারের শ্রেষ্ঠ নাট্য নির্মাণ সম্মান। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন গজেন্দ্র কুমার মিত্র-সুমথনাথ ঘোষ স্মৃতি সম্মান। তাঁর সম্পাদনায় 'গিরিশ কথা' ও 'শিশির কথা' দু'টি বই তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, প: ব: সরকার কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। পেয়েছেন এবিপি আনন্দ 'সেরা বাঙালি ২০১৯' সম্মান। পেয়েছেন বাংলার নাট্যশিল্প জগতের সর্বোচ্চ সম্মান 'দীনবন্ধু মিত্র পুরস্কার'।

Picture of ব্রাত্য বসু

ব্রাত্য বসু

জন্ম ১৯৬৯, ২৫ সেপ্টেম্বর, মেদিনীপুর। পূর্বতন প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। পরবর্তীতে সিটি কলেজে অধ্যাপনা। নাটককার, পরিচালক, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, চলচ্চিত্রাভিনেতা, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, গীতিকার সম্পাদক। 'কালিন্দী ব্রাত্যজন' নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার ও 'ব্রাত্যজন নাট্যপত্রের' প্রধান সম্পাদক। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের মন্ত্রী। পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও স্বীকৃতি। উল্লেখ্য সত্যেন মিত্র পুরস্কার, শ্যামল সেন স্মৃতি পুরস্কার, দিশারী পুরস্কার, রমাপ্রসাদ বণিক স্মৃতি পুরস্কার, খালেদ চৌধুরী স্মারক সম্মান, অন্য থিয়েটারের শ্রেষ্ঠ নাট্য নির্মাণ সম্মান। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন গজেন্দ্র কুমার মিত্র-সুমথনাথ ঘোষ স্মৃতি সম্মান। তাঁর সম্পাদনায় 'গিরিশ কথা' ও 'শিশির কথা' দু'টি বই তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, প: ব: সরকার কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। পেয়েছেন এবিপি আনন্দ 'সেরা বাঙালি ২০১৯' সম্মান। পেয়েছেন বাংলার নাট্যশিল্প জগতের সর্বোচ্চ সম্মান 'দীনবন্ধু মিত্র পুরস্কার'।
Picture of ব্রাত্য বসু

ব্রাত্য বসু

জন্ম ১৯৬৯, ২৫ সেপ্টেম্বর, মেদিনীপুর। পূর্বতন প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। পরবর্তীতে সিটি কলেজে অধ্যাপনা। নাটককার, পরিচালক, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, চলচ্চিত্রাভিনেতা, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, গীতিকার সম্পাদক। 'কালিন্দী ব্রাত্যজন' নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার ও 'ব্রাত্যজন নাট্যপত্রের' প্রধান সম্পাদক। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের মন্ত্রী। পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও স্বীকৃতি। উল্লেখ্য সত্যেন মিত্র পুরস্কার, শ্যামল সেন স্মৃতি পুরস্কার, দিশারী পুরস্কার, রমাপ্রসাদ বণিক স্মৃতি পুরস্কার, খালেদ চৌধুরী স্মারক সম্মান, অন্য থিয়েটারের শ্রেষ্ঠ নাট্য নির্মাণ সম্মান। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন গজেন্দ্র কুমার মিত্র-সুমথনাথ ঘোষ স্মৃতি সম্মান। তাঁর সম্পাদনায় 'গিরিশ কথা' ও 'শিশির কথা' দু'টি বই তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, প: ব: সরকার কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। পেয়েছেন এবিপি আনন্দ 'সেরা বাঙালি ২০১৯' সম্মান। পেয়েছেন বাংলার নাট্যশিল্প জগতের সর্বোচ্চ সম্মান 'দীনবন্ধু মিত্র পুরস্কার'।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস