Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

অম্লান ইউটোপিয়া

দিলীপ কুমার ঘোষ

অক্টোবর ১৫, ২০২৫

Short Story
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close
(Short Story)

“এবারের নির্বাচনে বিশুদ্ধ সন্ত্রাস দলের মূল প্রতিশ্রুতি তাহলে কী হতে পারে?” অম্লান মিত্রের দিকে সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন জাতীয় সম্পাদক প্রশান্ত সরকার।
তাঁর দিকে সোজাসুজি না তাকিয়ে একটু বিরক্ত স্বরে অম্লান মিত্র বলে উঠলেন, “সেটা নিয়ে আলোচনার জন্যই তো আজ আমাদের এখানে বসা। আমরা এখনও সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারিনি।” (Short Story)

“সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া! সিদ্ধান্ত তো আপনি আগে থাকতেই স্থির করে আসেন। দলকে দিয়ে তা শুধু অনুমোদন করিয়ে নেন।”
“শাট আপ… হোয়াট ডু ইউ মিন! আমি ডিক্টেটর? আমি ডিক্টেটরশিপ চালাচ্ছি?”
“তা নিয়ে কোথাও কোনও প্রশ্নের অবকাশ নেই।” (Short Story)

আরও পড়ুন: সহোদরা

অম্লান মিত্রের হাতে উঠে আসে আগ্নেয়াস্ত্র এবং সেটার মুখ ঘুরে যায় প্রশান্তর দিকে। আগ্নেয়াস্ত্র গর্জন করে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আর্তনাদ করে পড়ে যান প্রশান্ত এবং যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন। প্রশান্তর ঘুম ভেঙে যায়। স্বপ্নের আতঙ্ক থেকে বাস্তবে ফিরতে একটু সময় লাগে। কিছুক্ষণ পর ধাতস্থ হন। (Short Story)

ওঃ, এতক্ষণ তাহলে তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন! সেটাই স্বাভাবিক। বাস্তবে অম্লান মিত্রের বিরোধিতা করা তো দূরস্থান, তাঁর বিরুদ্ধে একটা কথা বলার জায়গা রাখেননি সর্বাধিনায়ক। তিনি তো শুধু সর্বাধিনায়ক নন, তিনি দলের সর্বোত্তম সেবক। তাঁর বিশ্বাস মানবসেবা করলেই দলের সবচেয়ে বেশি উপকার হয়। তাই তিনি মানবসেবাকেই করে তুলেছেন জীবনের মূলমন্ত্র এবং বিনিময়ে অর্জন করেছেন দল এবং সাধারণ মানুষের নিরঙ্কুশ সমর্থন-বিশ্বাস-আস্থা। (Short Story)

Short Story
“আমি বলছি কী স্যার, এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা খোঁজা কি একান্ত প্রয়োজন? না-ই বা খুঁজলেন এর ব্যাখ্যা”

সে কারণেই এবারের দৈবপ্রদেশের জাতীয় নির্বাচনে দৈবশান্তি দলের জয় এবং পঞ্চমবারের জন্য সরকার গঠনের ব্যাপারে কারও মনে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই। শেষ দু’বার দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। এবারও তেমন হওয়ার দিকেই জল গড়াচ্ছিল। কিন্তু নির্বাচনের মাসছয়েক আগে দৈবপ্রদেশের সর্বোচ্চ শাসক অম্লান মিত্র অমরাবতী ময়দানে আয়োজিত জনসভায় ঘোষণা করলেন, তিনি গণতন্ত্রকে আরও বেশি মজবুত ভিতের উপর স্থাপন করতে আগ্রহী। তাই এবারে নির্বাচন যাতে ভোটদান এবং ভোটগণনা পর্যন্ত গড়ায়, তার জন্য তিনি সবিশেষ ব্যবস্থা নেবেন। (Short Story)

তিনি দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যাওয়া বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান করলেন ওভাল টেবিল বৈঠকে এবং সেখানে তাদের প্রস্তাব দিলেন দৈবশান্তি দলের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ের ময়দানে নামার জন্য। নিজের দলের প্রায় সকলেই তাঁর এই প্রস্তাব সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করলেন। মন থেকে বিষয়টা মানতে পারেননি শুধু প্রশান্ত। কিন্তু দলের বিরুদ্ধে যাওয়ার কথা তিনি ভাবেননি। (Short Story)

“তিনি কি স্বপ্নের মধ্যে দলের নাম উচ্চারণ করেছিলেন— ‘বিশুদ্ধ সন্ত্রাস দল’! কেন? তাঁদের দলে কেন, গোটা দৈবপ্রদেশে যেখানে সন্ত্রাসের নামগন্ধ নেই, সেখানে বিশুদ্ধ সন্ত্রাসের ভাবনা আসে কোত্থেকে?”

তাহলে এমন দুঃস্বপ্ন দেখলেন কেন? কোন অবচেতনে লুকিয়ে রয়েছে এমন ভাবনা? মাঝরাতে স্বপ্নের অভিঘাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় প্রশ্নগুলো প্রশান্তকে ভাবিয়ে তুলল। তিনি সবচেয়ে অবাক হলেন এমন স্বর্গরাজ্যে থেকেও মানুষের মনের অবচেতনে এমন ভাবনার উদ্রেক হতে দেখে। মানুষের মনের রহস্য সত্যিই আজও অগম্য-অজ্ঞাত-অজ্ঞেয়! (Short Story)

আচ্ছা, তিনি কি স্বপ্নের মধ্যে দলের নাম উচ্চারণ করেছিলেন— ‘বিশুদ্ধ সন্ত্রাস দল’! কেন? তাঁদের দলে কেন, গোটা দৈবপ্রদেশে যেখানে সন্ত্রাসের নামগন্ধ নেই, সেখানে বিশুদ্ধ সন্ত্রাসের ভাবনা আসে কোত্থেকে? বিরোধী দলগুলো অবশ্য স্থিতাবস্থা বিরোধী মোর্চা নামের ব্যানারে সমবেত হয়েছে। তবে কি স্থিতাবস্থার বিরোধিতা করাই বিশুদ্ধ সন্ত্রাস? তা-ই বা হয় কী করে! সন্ত্রাস নিয়ে বা সন্ত্রাসের বিরোধিতা করে একটা শব্দও তো উচ্চারণ করেনি বিরোধী মোর্চা। আর ভাবতে পারেন না প্রশান্ত! অনেক চেষ্টা-চরিত্র সত্ত্বেও তাঁর আর ঘুম আসে না। (Short Story)

দুই

“কী বলছ প্রশান্ত, আমার হাতে আগ্নেয়াস্ত্র! শুনলে দৈবপ্রদেশের লোক তো ভিরমি খাবে।… তোমার হয়তো বিশ্বাস হবে না প্রশান্ত, কিন্তু এটা সত্যি কথা যে সারাজীবনে আমি একটা মশা, নিদেনপক্ষে একটা পিঁপড়েও টিপে মারিনি।… কিন্তু তুমি এমন স্বপ্ন দেখলে কেন বল তো! প্রাচীন গ্রিসের মতো আমাদের দৈবপ্রদেশে তো কোনও দৈবজ্ঞ পণ্ডিতও নেই! এখন তাই তোমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কার কাছ থেকে পাব, তা-ও যে ছাই মাথায় আসছে না!” (Short Story)

“প্রশান্ত, কিছুক্ষণ আগে আমি তোমাকে বলেছিলাম মনে আছে, আমি জীবনে কখনও মশা-মাছি-পিঁপড়ে মারিনি। তা যতটা সত্যি, দৈবপ্রদেশে একমাত্র আমার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার কথাটাও সত্যি। সেটা কিন্তু ভুলে যেয়ো না।”

“আমি বলছি কী স্যার, এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা খোঁজা কি একান্ত প্রয়োজন? না-ই বা খুঁজলেন এর ব্যাখ্যা। তার থেকে বরং এবারের নির্বাচনে আমাদের দলের ইস্তেহার কী হবে সেটা নিয়ে আলোচনা করুন। সেটা বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”

“তা তুমি মন্দ বলোনি প্রশান্ত, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি একটা ঠিক না করলেই নয়। কিন্তু… নতুন করে আর কী প্রতিশ্রুতি জনগণের সামনে পেশ করা যায় বলো তো! বিগত চারটে সাধারণ নির্বাচনেই তো আমরা সব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেছি এবং পূর্ববর্তী সমস্ত ঘোষিত প্রতিশ্রুতি ইতিমধ্যে রূপায়িতও হয়েছে। প্রতিশ্রুতি দেওয়ার মতো নতুন কোনও বিষয়ই তো আর খুঁজে পাচ্ছি না!” (Short Story)

আরও পড়ুন: ভাঙাগানের ভেলা

“আচ্ছা, বিরোধীরা এই যে স্থিতাবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, সেই স্থিতাবস্থা ভেঙে দেওয়ার কোনও প্রতিশ্রুতি কি দেওয়া যায়? তাহলে বিরোধীদের প্রচার একেবারে শুরুতেই ভোঁতা করে দেওয়া যাবে।”

“এ তুমি কী বলছ প্রশান্ত! স্থিতাবস্থাই তো আনে শান্তি-স্বস্তি-নিশ্চিন্তি। দৈবপ্রদেশ যে আজ এত উন্নত এবং সমৃদ্ধ, তার পিছনে তো এই স্থিতাবস্থাই। এখানকার মানুষ যে এত দুশ্চিন্তাহীন এবং সুখী, তার মূল কারণও তো এই স্থিতাবস্থা। আর সেই স্থিতাবস্থাকেই কিনা তুমি ভেঙে দিতে বলছ!” (Short Story)

Short Story
“তুমি কী বলতে চাও বলো তো প্রশান্ত! তুমি কি দলে নেতৃত্ব পরিবর্তনের ডাক দিতে চাইছ?”

“কিন্তু এই স্থিতাবস্থা তো নতুন সবকিছুর পরিপন্থী। আর নতুনত্বের আমদানি না হলে তো ভবিষ্যৎ একদিন গতিহীন রুদ্ধ হয়ে যেতে বাধ্য। আপনি খেয়াল করেছেন নিশ্চয়ই, আপনি নেতৃত্বের জোয়াল নিজের কাঁধে এমন সফলভাবে চাপিয়ে এগিয়ে চলেছেন যে, আপনি দলে ক্রমশ নির্বিকল্প হয়ে উঠেছেন। তার ভাল দিকটা সবাই দেখছে। কিন্তু আপনার অবর্তমানে দল যে এর ফলে কেমনভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে, তা কিন্তু কেউ ভাবছে না!’ (Short Story)

“তুমি কী বলতে চাও বলো তো প্রশান্ত! তুমি কি দলে নেতৃত্ব পরিবর্তনের ডাক দিতে চাইছ?”
“একদমই নয়। আমি বলছি দলের স্বার্থে নতুনদের নেতৃত্বের জন্য তৈরি করে নেওয়া উচিত।”
“প্রশান্ত, কিছুক্ষণ আগে আমি তোমাকে বলেছিলাম মনে আছে, আমি জীবনে কখনও মশা-মাছি-পিঁপড়ে মারিনি। তা যতটা সত্যি, দৈবপ্রদেশে একমাত্র আমার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার কথাটাও সত্যি। সেটা কিন্তু ভুলে যেয়ো না।”
“আপনি কী বলতে চাইছেন, স্যর!” (Short Story)

“দৈবশান্তি দলের মুকুটহীন সম্রাট হওয়া সত্ত্বেও এবং আমৃত্যু দলে সর্বাধিনায়ক থাকার সুবর্ণ সুযোগ থাকা নিশ্চিত জেনেও স্বেচ্ছায় নিজের পদ ছেড়ে দিয়ে তিনি জণগনের নয়নের মণি হয়ে উঠলেন।”

“না না, বলতে আমি কিছুই চাইছি না। তোমার দেখা ভোররাতের স্বপ্নটা তোমাকে কেবল মনে করিয়ে দিতে চাইছি!”

তিন

সাধারণ নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার দু’দিন আগে যে ঘটনা ঘটল তা দৈবপ্রদেশের মতো আলোড়নহীন জায়গাতেও প্রবল আন্দোলন সৃষ্টি করল। এমন চমকের জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। দৈবশান্তি দলের প্রধান তথা দৈবপ্রদেশের কুড়ি বছরের সর্বোচ্চ শাসক অম্লান মিত্র গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তোলার জন্য যোগ দিলেন প্রধান বিরোধী শক্তি স্থিতাবস্থা বিরোধী মোর্চায়। এবং যোগ দিয়েই নির্বাচনী লড়াইয়ের ময়দানে দলকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার স্বার্থে সকলের অনুরোধ ফেলতে না পেরে, একান্ত বাধ্য হয়েই মোর্চার সর্বোচ্চ পদে আসীন হলেন। (Short Story)

নিজের দলের বিরুদ্ধে গিয়ে বিরোধী দলকে অক্সিজেন যোগানোর জন্য তাঁর এমন স্বার্থত্যাগে দৈবপ্রদেশে ধন্য ধন্য পড়ে গেল। সর্বত্র শুধু এই এক আলোচনা। অশীতিপর ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও তাঁর এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ঘটনা সকলকে হতচকিত করল। দৈবশান্তি দলের মুকুটহীন সম্রাট হওয়া সত্ত্বেও এবং আমৃত্যু দলে সর্বাধিনায়ক থাকার সুবর্ণ সুযোগ থাকা নিশ্চিত জেনেও স্বেচ্ছায় নিজের পদ ছেড়ে দিয়ে তিনি জণগনের নয়নের মণি হয়ে উঠলেন। জণগন তাঁর উপর আস্থাশীল তো ছিলই, এখন সেটা বদলে গেল অদ্ভুত এক বিশ্বাসে। অম্লান মিত্র সাধারণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে হয়ে উঠলেন জণগনের চিরন্তন বিশ্বাসের প্রতীক। (Short Story)

“প্রশান্ত, তুমি জানো রসিকতা আমার স্বভাবে নেই। আই অ্যাম অলওয়েজ সিরিয়াস। আমি সত্যিই তোমাকে সর্বোচ্চ শাসক হিসাবে চাইছি।”

নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হল। কারণ নির্বাচনের আগেই সকলে জেনে গেল নির্বাচনের ফল কী হতে চলেছে। অম্লান মিত্রের নেতৃত্বে স্থিতাবস্থা বিরোধী মোর্চা যে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে সে বিষয়ে কারও মনে কোনও সন্দেহের অবকাশ ছিল না। আর বাস্তবে ঘটলও তা-ই। সমস্ত আসনে জয়লাভ করে দৈবপ্রদেশের শাসনভার নিজেদের হাতে তুলে নিল স্থিতাবস্থা বিরোধী মোর্চা। (Short Story)

দৈবশান্তি দলে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়লেন প্রশান্ত সরকার। তাঁর নেতৃত্বে দলের এই ভরাডুবি তাঁর রাজনৈতিক জীবনকে চরম সঙ্কটের মধ্যে ফেলে দিল। অম্লান মিত্রের পরে দৈবশান্তি দলের প্রতীকে দৈবপ্রদেশের সর্বোচ্চ শাসক হওয়ার যে সুপ্ত বাসনা তাঁর মনে এতদিন সযত্নে লালিত হচ্ছিল তার সম্ভাবনা সুদূর পরাহত বলে তাঁর নিজেরই মনে হতে লাগল। তিনি রাজনৈতিক সন্ন্যাস নেবেন কী না যখন সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারছেন না, সেই সময় এক আমন্ত্রণ এসে পৌঁছল তাঁর কাছে, যে আহ্বানের জন্য তিনি একদম প্রস্তুত ছিলেন না! (Short Story)

আরও পড়ুন: অর্থ কোনও খুঁজে নাহি পাই রে

আমন্ত্রিত প্রশান্ত উপস্থিত হলেন অম্লান মিত্রের বাসভবনে। অম্লান মিত্রের পঁচাশিতম জন্মদিনে পরিবারের লোকের বাইরে তিনিই একমাত্র আমন্ত্রিত অতিথি। খাওয়া দাওয়ার পর তাঁরা একান্তে বসলেন।

“দৈবশান্তি দলে নাকি এখন শুনছি চরম ডামাডোল চলছে?” মুখ খুললেন অম্লান মিত্র।
“ঠিকই শুনেছেন স্যর। আপনার অবর্তমানে দলের স্থিতাবস্থা এমনভাবে বিঘ্নিত হয়েছে যে দলকে আর এককাট্টা রাখা মুশকিল হয়ে উঠেছে। অশান্তি আমারও আর ভাল লাগছে না, ভাবছি সব ছেড়ে ছুড়ে দেব।”
“এমন পলায়নপর মানসিকতা নিয়ে তুমি দেশের সর্বোচ্চ শাসক হবে কী করে, প্রশান্ত?”
”আ… আমি… দেশের সর্বোচ্চ শাসক! আমার দুরবস্থায় আপনি কি আমার সঙ্গে নিষ্ঠুর রসিকতা করছেন, স্যার?” (Short Story)

Short Story
“প্রশান্ত, কিছুক্ষণ আগে আমি তোমাকে বলেছিলাম মনে আছে, আমি জীবনে কখনও মশা-মাছি-পিঁপড়ে মারিনি। তা যতটা সত্যি, দৈবপ্রদেশে একমাত্র আমার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার কথাটাও সত্যি। সেটা কিন্তু ভুলে যেয়ো না।”

“প্রশান্ত, তুমি জানো রসিকতা আমার স্বভাবে নেই। আই অ্যাম অলওয়েজ সিরিয়াস। আমি সত্যিই তোমাকে সর্বোচ্চ শাসক হিসাবে চাইছি।”
“কিন্তু সেটা কী করে সম্ভব, স্যার? আমার তো কিছুই মাথায় ঢুকছে না!”
“কেন সম্ভব নয়! আমিই যেখানে আইন, আমিই যেখানে শাসক, আমিই যেখানে দৈবপ্রদেশে শেষ কথা বলার অধিকারী, সেখানে আমি চাইলে সব হতে পারে। কি, পারে না?” (Short Story)

“হ্যাঁ স্যার, তা হতে পারে। আপনি চাইলে যে কী করতে পারেন, তা তো এবারের নির্বাচনে চোখে আঙুল দিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছেন। আপনি অলৌকিক জাদুক্ষমতার অধিকারী। বাপরে বাপ, কী ক্যারিশমা আপনার!… তা, আপনি হঠাৎ সর্বোচ্চ শাসকের পদ ছেড়ে দিতে এমন ব্যগ্র হয়ে উঠলেন কেন?” (Short Story)

“না, আমাকে ভগবানতুল্য বলো না, আগে আমাকে মহাপুরুষ হতে দাও। জীবনে অনেক সংগ্রাম করেছি, দিয়েছি অনেক কিছু— শ্রম-মেধা-পরিশ্রম-সময়। কম কিছু পাইওনি। জীবনে অনেক কিছু পেয়েছি। এ জীবনে আমার আর চাহিদা কিছু নেই…”

“দেখো প্রশান্ত, শাসক কথাটার মধ্যে কোথায় যেন একটা উচ্চ-নীচ ভেদাভেদ রয়েছে। শাসকের অবস্থানই তাকে সকলের সঙ্গে মিলতে দেয় না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার একটা দূরত্ব থেকেই যায়। দূরত্ব তো কখনও মানুষকে আপন করতে পারে না। আর মানুষকে আপন করতে না পারলে তুমি যত ভালই শাসক হও না কেন, সকলের হৃদয়রাজ্যে তোমার স্থান নাও হতে পারে। যেমন এই দেখো না কেন, আমি কি তোমার হৃদয়রাজ্যে স্থান করে নিতে পেরেছি?”
“এ কী বলছেন, স্যার! আপনি আমার কাছে ভগবানতুল্য।” (Short Story)

“না, আমাকে ভগবানতুল্য বলো না, আগে আমাকে মহাপুরুষ হতে দাও। জীবনে অনেক সংগ্রাম করেছি, দিয়েছি অনেক কিছু— শ্রম-মেধা-পরিশ্রম-সময়। কম কিছু পাইওনি। জীবনে অনেক কিছু পেয়েছি। এ জীবনে আমার আর চাহিদা কিছু নেই। এবার আমি চাই আমার সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ। চাই ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠতে। আর তুমি তো জানো ইতিহাসে রাজা-রাজরা-শাসকের নাম যতই থাক না কেন, ইতিহাস সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে মহাপুরুষকে। তাই আমার এবারের সাধনা মহাপুরুষ হয়ে ওঠা।” (Short Story)

আরও পড়ুন: সিঙাড়া

“আর তার জন্যই কি আপনি সর্বোচ্চ শাসকের পদ ত্যাগ করবেন? ত্যাগের মাধ্যমে মহান হয়ে উঠবেন?”
“একদম ঠিক ধরেছ। জীবনে মানুষের জন্য অনেক কিছু করলেও কখনও আমি ত্যাগস্বীকার করিনি। আজ এই বয়সে আমার বর্তমান অবস্থানে দাঁড়িয়ে আমার মনে হয় ত্যাগস্বীকারই জীবনের ব্রত হওয়া উচিত, বিশেষ করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ক্ষেত্রে। তবেই সে অর্জন করতে পারে মানুষের শ্রদ্ধা-সম্মান-ভালবাসা। আমি তাই ত্যাগের পথেই নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। তুমি আমাকে সহযোগিতা করবে না, প্রশান্ত?” (Short Story)

“আমাকে কী করতে হবে, বলুন?”
“খুব সহজ একটা কাজ। দাঁড়াও…” মুহূর্তের মধ্যে অম্লান মিত্রের হাতে উঠে আসে আগ্নেয়াস্ত্র এবং আগ্নেয়াস্ত্রের মুখ ঘুরে যায় প্রশান্তর দিকে। আতঙ্কে শিউরে ওঠেন প্রশান্ত।
“কী হল প্রশান্ত, তুমি ভয় পেয়ে গেলে কেন? এই আগ্নেয়াস্ত্র আজ থেকে তোমার। আমি স্বহস্তে এটা তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি।” অম্লান মিত্র আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দেন প্রশান্তর হাতে। বলে ওঠেন, “হাতিয়ার হাত থেকে ফেলে দিয়ে আমি আজ থেকে আর শাসক নয়, মসিহা হয়ে বাঁচতে চাই।”
“সেই সুযোগ আপনি পেলে তো!” প্রশান্তর হাতের আগ্নেয়াস্ত্র গুড়ুম শব্দ করে ঝলসে ওঠে। (Short Story)

মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত

Author Dilip Kumar Ghosh

পেশায় শিক্ষক দিলীপকুমার ঘোষের জন্ম হাওড়ার ডোমজুড় ব্লকের দফরপুর গ্রামে। নরসিংহ দত্ত কলেজের স্নাতক, রবীন্দ্রভারতী থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। নেশা ক্রিকেট, সিনেমা, ক্যুইজ, রাজনীতি। নিমগ্ন পাঠক, সাহিত্যচর্চায় নিয়োজিত সৈনিক। কয়েকটি ছোটবড় পত্রিকা এবং ওয়েবজিনে অণুগল্প, ছোটগল্প এবং রম্যরচনা প্রকাশিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে 'সুখপাঠ' এবং 'উদ্ভাস' পত্রিকায় রম্যরচনা এবং দ্বিভাষীয় আন্তর্জালিক 'থার্ড লেন'-এ ছোটগল্প প্রকাশ পেয়েছে।

Picture of দিলীপ কুমার ঘোষ

দিলীপ কুমার ঘোষ

পেশায় শিক্ষক দিলীপকুমার ঘোষের জন্ম হাওড়ার ডোমজুড় ব্লকের দফরপুর গ্রামে। নরসিংহ দত্ত কলেজের স্নাতক, রবীন্দ্রভারতী থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। নেশা ক্রিকেট, সিনেমা, ক্যুইজ, রাজনীতি। নিমগ্ন পাঠক, সাহিত্যচর্চায় নিয়োজিত সৈনিক। কয়েকটি ছোটবড় পত্রিকা এবং ওয়েবজিনে অণুগল্প, ছোটগল্প এবং রম্যরচনা প্রকাশিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে 'সুখপাঠ' এবং 'উদ্ভাস' পত্রিকায় রম্যরচনা এবং দ্বিভাষীয় আন্তর্জালিক 'থার্ড লেন'-এ ছোটগল্প প্রকাশ পেয়েছে।
Picture of দিলীপ কুমার ঘোষ

দিলীপ কুমার ঘোষ

পেশায় শিক্ষক দিলীপকুমার ঘোষের জন্ম হাওড়ার ডোমজুড় ব্লকের দফরপুর গ্রামে। নরসিংহ দত্ত কলেজের স্নাতক, রবীন্দ্রভারতী থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। নেশা ক্রিকেট, সিনেমা, ক্যুইজ, রাজনীতি। নিমগ্ন পাঠক, সাহিত্যচর্চায় নিয়োজিত সৈনিক। কয়েকটি ছোটবড় পত্রিকা এবং ওয়েবজিনে অণুগল্প, ছোটগল্প এবং রম্যরচনা প্রকাশিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে 'সুখপাঠ' এবং 'উদ্ভাস' পত্রিকায় রম্যরচনা এবং দ্বিভাষীয় আন্তর্জালিক 'থার্ড লেন'-এ ছোটগল্প প্রকাশ পেয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

দিলীপ কুমার ঘোষ
আলোলিকা মুখোপাধ্যায়
বিতস্তা ঘোষাল

সংস্কৃতি

আহার

অমৃতা ভট্টাচার্য
শ্রুতি গঙ্গোপাধ্যায়
অমৃতা ভট্টাচার্য

বিহার

মণিদীপা ব্যানার্জী
প্রদীপ্ত চক্রবর্তী

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

বিতস্তা ঘোষাল
বিতস্তা ঘোষাল
বিতস্তা ঘোষাল
[adning id="384325"]
[adning id="384325"]

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com