(Story)
সুজয়া বলল, “শন তখন ওদের ফ্যামিলি রয়্যাল এস্টেট বিজনেসের কাজে রোড আয়ল্যান্ডে কমিউট করছিল। আমি মিউজিয়ামের কাজটা ছাড়তে চাইছিলাম না। টেম্পোরারি আস্যাইনমেন্ট ছিল। এখন শেষ হয়ে গেছে।” (Story)
কথায় কথায় মনে পড়ল সামনের মাসে আমাদের জুনিয়র হাইস্কুলের ছাত্রাছাত্রীদের নিয়ে সালেম শহরে ঐ মিউজিয়ামেই যাব। একদিনের বাসট্রিপ। সুজয়া শুনেই বলল, “আগে এলে আমার সঙ্গে দেখা হত। এমনিই আপনারা একবার আমাদের কাছে বেড়াতে আসুন না নীপাদি।” (Story)
আরও পড়ুন: স্মৃতি ভবন ও জীবন: তৃতীয় পর্ব
এভাবেই কথাবার্তা শেষ হয়ে যায়। সুজয়া একদিন আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চাইল। আমি ফেসবুকে নেই জেনে অবাক। হঠাৎ বলল, “কোনও ভাল খবর শেয়ার করার জন্যে আমার নিজের দিক থেকে কেউ নেই জানেন?” (Story)
এবার আমি অবাক! ভাল খবর মানে কী! সুজয়া এক্সপেক্টিং, নাকি বাচ্চা হয়ে গেছে? তাছাড়া ওর নিজের দিক থেকেও বা কেউ নেই কেন? (Story)
জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার দাদার কথা বলেছিলে বোধহয়। তাঁরা কোথায় থাকেন? আর গুড নিউজটাই বা কী? সেটা আমার সঙ্গেই শেয়ার করো।” (Story)

সুজয়া বলল, “জানাব। আগে দাদার ইনসিডেন্টটা বলি। বেশ কয়েক বছর আগে দাদার আল্জাইমারস ধরা পড়েছিল। ঐ অবস্থায় একা একা হাঁটতে বেরিয়ে একটা ডিচ্ এর মধ্যে পড়ে ম্যাসিভ হেড ইনজুরি হল। বেঁচে আছেন এইটুকুই। আমাকে চিনতেও পারেন না।”
“দাদার ফ্যামিলি আছে তো?” (Story)
“দাদা পেনসিলভেনিইয়ায় নার্সিং হোমে থাকেন। ওঁর আমেরিকান স্ত্রী যতটা পারেন দেখাশোনা করেন। ওঁদের ছেলেমেয়ে নেই। আমিও অনেকদিন ধরে আর যেতে পারিনি।” (Story)
কী জানি কেন, সুজয়ার ভাল খবর জন্যে আর প্রশ্ন করলাম না। নিজে থেকে কথা শেষ না করলে ও সহজে ফোন রাখে না। সেদিনও আমিই ফোন রাখলাম।
সুজয়া হাসল। “নীপাদি, আ অ্যাম নট দ্যাট ইয়াং টু হ্যাভ মাই ওন বায়োলজিকায়াল চাইল্ড। আমি আর শন্ ওর ফস্টার পেরেন্ট্স। ওর ছবি দেখে কি ইন্ডিয়ান মনে হচ্ছে?”
সপ্তাহ খানেক পরে দেখি আমার সেল ফোনে দু’টো ছবি এসেছে। ছোট্ট একটা ছেলে দু’হাতে লাল বল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। অন্য ছবিতে সে সুজয়ার কোলে। পাশে সুজয়ার সেই বনমালী শন্।
আমার ফোন পেয়ে সুজয়া খুশি হল। (Story)
“ছবি দেখে অবাক হয়েছেন না? এই খবরটাই শেয়ার করতে চেয়েছিলাম।”
“আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। তোমাদের ছেলে আছে জানতাম না। খুব কিউট।” (Story)

সুজয়া হাসল। “নীপাদি, আ অ্যাম নট দ্যাট ইয়াং টু হ্যাভ মাই ওন বায়োলজিকায়াল চাইল্ড। আমি আর শন্ ওর ফস্টার পেরেন্ট্স। ওর ছবি দেখে কি ইন্ডিয়ান মনে হচ্ছে?” (Story)
বাচ্চাটাকে ছবিতে দেখে ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না। ভারতীয় হলেও হতে পারে। পাঞ্জাবী, কাশ্মীরিদের ছোট ছেলেদের মতো দেখতে।
সুজয়া তখন বলল, “আপনাকে বলেছিলাম না! মাঝে খুব স্ট্রেসের মধ্যে ছিলাম? ভারমন্টে যেতে হত বারবার। সেখানে সিরিয়ান রিফিউজী ক্যাম্পে অরফ্যান বেবীদের শেলটার থেকে ওকে নিয়ে এসেছি। অ্যাডপশনের জন্যে তো এখনই দেবে না। তবু অ্যাপ্লাই করেছি। লিগ্যাল প্রিপারেশনের জন্যে সময় লাগল। ওয়াশিংটন যেতে হয়েছিল।”
জিজ্ঞেস করলাম, “ওর নাম কী সুজয়া? বয়স কত?” (Story)
“যুদ্ধের শিশুর জন্যে বাবার শুভকামনা এখনও আমার জানানো হয়নি। শুধু ঐ শব্দ দুটো মাথার মধ্যে রয়ে গেছে।”
“রেজা। এখনও দু’বছর হয়নি। সিরিয়ায় অ্যালেপ্পোর কাছে ম্যাসিভ অ্যাটাকের পরে যাদের রেস্কিউ করেছিল, ও তাদের মধ্যে ছিল। কিন্তু ওর ফ্যামিলির কাউকে পাওয়া যায়নি।” (Story)
আমার মনে পড়ছিল টেলিভিশনে দেখা দামাস্কাসের রিফিউজী ক্যাম্পে সেই অনাথ ছেলেটির মুখ। বোমা বিস্ফোরণের পরে তার হাতে মুখে পোড়া ছাই লেগে আছে। তার বিষণ্ণ মুখের ছবি দেখে একটি আমেরিকান ছোট ছেলে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে চিঠি লিখেছিল, ওকে আমাদের কাছে এনে দাও। আমার সঙ্গে থাকবে। আমার সঙ্গে স্কুলে যাবে—

সুজয়ার সঙ্গে সেদিন অনেক কথা হয়েছিল।
বলেছিল, “স্যার বোধহয় আমার কথা ভুলেও গেছেন! যদি আপনার মনে হয়, ওঁকে জানাবেন।”
বাবা শুনে কেমন বিষাদের সুরে বলেছিলেন, “যুদ্ধের শিশু! ছোটবেলার স্মৃতি যদি থাকে, সে বড় ভয়ংকর।”
বললাম, “বাচ্চাটা খুবই ছোট। মনে রাখার বয়স নয়।”
“ভাল। সুজয়াদের কাছে স্নেহ, ভালবাসা পেয়ে মানুষ হোক। ওদের আমার শুভকামনা জানিয়ে দিস।” (Story)
আরও পড়ুন: স্মৃতি ভবন ও জীবন (দ্বিতীয় পর্ব)
যুদ্ধের শিশুর জন্যে বাবার শুভকামনা এখনও আমার জানানো হয়নি। শুধু ঐ শব্দ দুটো মাথার মধ্যে রয়ে গেছে। হেমিংওয়ের ‘ফেয়ার ওয়েল টু আর্মস’ এর শেষ কয়েকটা পাতা আবার নতুন করে পড়ছি। যুদ্ধের অভিজ্ঞতার, যুদ্ধের সিনেমা ও মিডিয়ার বছরের পর বছর যুদ্ধের খবর, যুগ যুগান্ত ধরে এক ভয়ংকর সময়ের ডকুমেন্টেশান। তবু সাহিত্যে ফেরা। হেমিংওয়ের অনুবাদটা যেন কার ছিল? (Story)
এখনও বাংলা নামটা মনে আছে। ‘হে যুদ্ধ বিদায়’…
(ক্রমশ)
মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
অলংকরণ- আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়
দীর্ঘকাল আমেরিকা-প্রবাসী আলোলিকা মুখোপাধ্যায়ের লেখালিখির সূচনা কলকাতার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্বে। আমেরিকার নিউ জার্সির প্রথম বাংলা পত্রিকা "কল্লোল" সম্পাদনা করেছেন দশ বছর। গত আঠাশ বছর (১৯৯১ - ২০১৮) ধরে সাপ্তাহিক বর্তমান-এ "প্রবাসের চিঠি" কলাম লিখেছেন। প্রকাশিত গল্পসংকলনগুলির নাম 'পরবাস' এই জীবনের সত্য' ও 'মেঘবালিকার জন্য'। অন্য়ান্য় প্রকাশিত বই 'আরোহন', 'পরবাস', 'দেশান্তরের স্বজন'। বাংলা সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের জন্য নিউইয়র্কের বঙ্গ সংস্কৃতি সঙ্ঘ থেকে ডিস্টিংগুইশড সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
