রাজা রামমোহন রায় না কি ৩৩টি ভাষা জানতেন! তিনি পাঠশালায় বাংলা ভাষা শেখেন। সঙ্গে শেখেন সংস্কৃত। এর পর পাটনার একটি মাদ্রাসায় তিনি আরবি এবং ফারসি শেখেন। মনে রাখতে হবে, তিনি যখন পাটনা গিয়ে মাদ্রাসায় ভর্তি হন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ন’বছর। ফলে কুলীন হিন্দু ব্রাহ্মণ বংশের ছেলের যে তখনই স্বতন্ত্র মতামত পোষণ করার অধিকার জন্মেছে এমন নয়। তাঁর কুলীন পিতা নিশ্চয় আপত্তি করেননি। তো, এর পর রামমোহন বেনারস গিয়ে আরও গভীরভাবে শেখেন সংস্কৃত এবং হিন্দু শাস্ত্র , বেদ এবং উপনিষদ। তিনি হিন্দু ব্রাহ্মণ হয়েও ব্রাহ্ম ধর্মের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এবং তিনিই সতীদাহ প্রথা রদ করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি বিলাত গিয়েছিলেন সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে সওয়াল করতে। তিনি গ্রিক, ল্যাটিন ভাষাও শিক্ষা করেছিলেন। এবং আরবি ভাষায় প্রাচীনকালে মেয়েদের অধিকার সম্বন্ধে একটি গবেষণাপত্র লিখেছিলেন। এবং তখনকার কালেও হিন্দুরা তাঁকে প্রত্যহ ইঁট ছুড়ত, অধর্ম করার জন্য।
অতএব, আজ বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত সাহিত্য পড়ানোর অপরাধে অধ্যাপক ফিরোজ খানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ প্রদর্শন নিয়ে অবাক হওয়ার বা রাগে ফেটে পড়ার তো কোনও কারণ নেই। এটাই আমাদের ঐতিহ্যবাহী দেশের ঐতিহ্য। এবং আমরা আরও আরও সেই ঐতিহ্যের দিকে এগিয়ে যাব।
ভাষার কোনও ধর্ম হয় না, এ সত্য আমরা বুঝব না, বুঝতে চাইব না, কারণ তা হলে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে আরও “অপরাধী” করে তোলার হাতে-গরম উপকরণ ফসকে যেতে পারে। আমরা এখনও শ্রেণীবিশেষে সাহিত্য ও ভাষার অধিকার-অনধিকারের বোধ ফলাব। দলিত-সাহিত্য কোনও দিনই মূলধারার সাহিত্য হয়ে উঠতে পারবে না। অথচ, উচ্চবর্ণের মানুষ যখন দলিত মানুষদের নিয়ে সাহিত্য রচনা করবেন, তখন তা মূল ধারার অংশীদার।
আমাদের চিন্তাধারায় ভিন্নতা দেখলেই আক্রমণ, এই বীজ রোপিত বহু যুগ ধরে। অধ্যাপক ফিরোজ খানও সেই ভিন্নতার প্রতি অসহিষ্ণুতার শিকার। এখন সেই বীজকেই ফের রোদ-জল দিয়ে ধর্মের সালোকসংশ্লেষ দিয়ে হিংসার খাদ্য হিসেবে প্রস্তুত করছি। যে হিংস্র যুগে আমরা বাস করছি, তার উপযুক্ত জোগান দিয়ে চলা বেশ মুশকিল। কারণ হিংসার জঠর অতিবৃহৎ। তাকে যুক্তি দিয়ে প্রশমিত করা যায় না। দিতে হয় আরও হিংসা।
অধ্যাপক ফিরোজ খান বলছেন, তিনি সংস্কৃত পঠনের পুরো জীবনে কখনও আলাদা করে মুসলমান বলে চিহ্নিত হননি বা তাঁর এই অনুভূতি হয়নি। ভাবতে পারি রামমোহনের কথা, আরবি ফারসি পড়তে গিয়ে তাঁর নিশ্চয়ই কখনও মনে হয়নি যে তিনি ধর্মে মুসলমান নন। ফিরোজ খানকে ভাবতে হচ্ছে তাঁর ধর্মপরিচয়ের কথা। তাঁকে ভাবতে বাধ্য করা হচ্ছে। মূলধারার ভারত বলে নিজেকে জাহির করতে এবং কায়েম করতে তৎপর এক সঙ্কীর্ণ হিন্দু ভারত বাধ্য করছে।
সেই ভারত কেবল সঙ্কীর্ণ নয়, ভয়ানক রকমের অশিক্ষিত। তার পাল্লায় পড়লে ইংরেজি সাহিত্য পড়তে বা পড়াতে গেলে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করতে হবে, চিনা-জাপানি সাহিত্য পড়াতে গেলে কনফুসিয়াস বা বুদ্ধের ভক্ত হতে হবে, এবং রবীন্দ্রসাহিত্য পড়াতে গেলে অবশ্যই ব্রাহ্ম হতে হবে।
সঞ্চারী মুখোপাধ্যায় হাসিখুশি, এমনকী যখন সেই মোড-এ থাকেন না, নিজেকে ঠেলে হিঁচড়ে হিহিহোহো’তেই ল্যান্ড করানোর চেষ্টা করেন। জাপটে ভালবাসেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সিরিয়াল, গান, রাস্তায় নেড়িবাচ্চার লটরপটর কান। পড়াশোনার সময় ফিল্ড করেছেন, হাতুড়ি দিয়ে পাথর ভেঙেছেন, গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়েছেন, এক বার পাহাড় থেকে অনেকটা হড়কে পড়ে মুচ্ছো গেছিলেন, উঠে দেখেন, কবর! এক বার ম্যানেজমেন্ট কোর্সের অঙ্গ হিসেবে চিন গেছিলেন, রাত্তির দুটোয় সাংহাইয়ের রাস্তায় হারিয়ে গিয়েও কাঁদেননি। ফিউজ সারাতে পারেন, পাখার কার্বন বদলাতে পারেন, কাগজের চোঙ পাকিয়ে গাড়িতে পেট্রল ঢালতে পারেন, চিনেবাদাম ছুড়ে দিয়ে মুখে নিপুণ লুফতে পারেন। ব্যাডমিন্টন খেলার ইচ্ছে খুব, কিন্তু জায়গা ও র্যাকেট নেই। অরোরা বোরিয়ালিস যারা দেখেছে, তাদের একাগ্র ভাবে হিংসে করেন। দেশের বাড়িটা উনি বড় হওয়ার পর ছোট হয়ে গেছে বলে, আর আমির খান এক বার কার্টুন এঁকে দিয়েছিলেন— সে কাগজ হারিয়ে গেছে বলে, জেনুইন কষ্ট পান। এক বার ঈগলের রাজকীয় উড়ান আগাগোড়া খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন।