Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

প্লাবনধারা ও ১৯৭৮

মধুময় পাল

সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২

Floods of Bengal
Bookmark (1)
Please login to bookmark Close
ঘরের ভেতর বর্ষাধারা

বালকবেলা যে বস্তিতে কেটেছে, সেখানে আমাদের জন্য বন্যাকে চেনা ও বন্যাত্রাণ শিক্ষার একটা আয়োজন ছিল৷ বাংলায় ১৯৭৮-এর অতিবৃষ্টি ও বন্যা, প্রকৃতঅর্থে প্লাবন নিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অভিজ্ঞতা বলবার আগে, এই কথাটা বলা জরুরি মনে হয়৷ জলের মুখোমুখি হবার সে আয়োজন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত৷ ঘণ্টা দুই টানা বৃষ্টি হলে উঠোনে একহাঁটু, পথের জলের সমান সমান৷ গাড়ি গেলে পথের ঢেউ ঘরের সিঁড়িতে ভাঙে৷ ঘরের ভেতর বালতি গামলা হাঁড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসানো, টালির চাল থেকে অবিরাম ঝরে পড়া জল আটকাতে৷ দেয়াল চুঁইয়ে নামা জল ঠেকাতে ন্যাতাকাপড়৷ রাতে বৃষ্টি হলে ঘুম চৌপাট৷ বিছানা সরিয়ে সরিয়ে বা বিছানার ওপর হাঁড়ি গামলা পেতে সারা রাত কার্যত জেগে থাকা৷ বিছানা মানে চটের বস্তার ওপর চাদর আর মাথার বালিশ৷ ভিজলে কবে শুকোবে ঠিক নেই৷ বৃষ্টি ধরলে দিনের আলোয় চালে উঠে টালি ঠিকঠাক বসানো, আলকাতরার চট চাপা দেওয়া ইত্যাদি৷ তাতে জলকে ঠেকানো কি যায়? এই বালকবেলা পরবর্তীকালে বহুবার দেখা ও শোনা বন্যাদুর্গতদের ছবি ও কাহিনির প্রিলুড যেন৷ সুন্দরবনের নদীবাঁধে খোলা আকাশের নীচে বন্যার্তদের যে ছবি বছর বছর খবরের কাগজে ছাপা হয়, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সম্প্রচার করা হয়, সেসব যেন আমাদের সেই দিনগুলি রাতগুলির প্রতিচ্ছায়া৷ নদী থেকে মাইল মাইল দূরে বাস হলেও সেই শৈশব জলের সহবাসী৷ জমা জল নেমে যেত তাড়াতাড়ি৷ নিকাশি ব্যবস্থা সচল ছিল তখন৷ পুরসভা কাজের ছিল৷ উন্নয়নের বর্বরতা সেইসময়ের প্রত্যন্ত পূর্ব কলকাতায় জলযন্ত্রণার স্থায়ী ব্যবস্থা করেনি তখনও৷

স্বাভাবিক বর্ষায় অন্তত দশ-বারো দিন খেতে হত খিচুড়ি আর আলুসেদ্ধ দু’বেলা৷ কয়লা ঘুঁটে গুল সব ভেজা, উনুন ধরে কীভাবে! স্টোভ জ্বালিয়ে কোনওক্রমে ফুটিয়ে নেওয়া৷ বর্ষা টানা হলে রান্নাবান্না চুলোয়৷ স্টোভ ধরাতে যে কেরোসিন লাগে, সেটা জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়ে৷ দোতলা-তিনতলা বাড়ির লোকজন বেশি দামে কিনে নেয় জ্বালানি৷ দোকানে গিয়ে আমরা শুনি স্টকে নেই৷ অগত্যা চিঁড়ে-মুড়ি-ভেলি গুড় ভরসা৷ গ্রাম-গ্রামান্তরে বন্যার জল যখন নামতে শুরু করে, বানভাসি মানুষ বস্তির দুয়ারে আসেন৷ গলায় হারমোনিয়ম-ঢোল ঝুলিয়ে গান করেন: বানের জলে ভাসিয়া এসেছি আমরা স্বদেশবাসী/ বাড়িঘর মোদের গিলিয়া খেয়েছে বন্যা সর্বনাশী…৷ প্রতি বছরই আসে কোনও না কোনও দল৷ আসে দামোদরের পাড় থেকে, মুণ্ডেশ্বরীর পাড় থেকে৷ ভেবে কিছুটা সুখ পেয়েছি, আমরা শহরের লোক জলজর্জর হলেও ওঁদের মতো ভেসে যাইনি৷ 

নোংরা মেঝেয় পড়ে থাকে মানবতা

শহরেও ভেসে যাওয়া ছিল৷ সেই সময়ের, ষাট দশকের প্রান্তিক পূর্ব কলকাতা টানা তিন-চার দিন বৃষ্টি হলে ভেসে যেত৷ টালি-খোলা-টিনের চালের বস্তির বাসিন্দারা উঠতেন গিয়ে পাকা স্কুলবাড়িতে৷ সেরকম বাড়িও খুব বেশি ছিল না ওই অঞ্চলে৷ এ পাড়া সে পাড়া থেকে বৃষ্টিদুর্গতদের জন্য ত্রাণ পাঠানো হত৷ ঠেলাগাড়ির চাকা খুলে তাতে মিষ্টির-দোকানের নৌকা-ভর্তি খিচুড়ি আর পাঁউরুটি-বিস্কুট-চিঁড়ে-গুড় জলে ভাসিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যেত ছেলেরা৷ এই ত্রাণের দলে আমিও জুটে গেছি৷ কে যেন ভেতর থেকে ঠেলা দিত৷ একবার বেঙ্গল পটারিজ় কারখানার অঞ্চল থেকে বৃষ্টিদুর্গত বহু মানুষকে শেলটার দেওয়া হল আমাদের পাড়ার কর্পোরেশন স্কুলে৷ মানুষের এরকম দুর্দশা কাছ থেকে সেই প্রথম দেখা৷ কয়েকশো শিশু-নারী-বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নোংরা খালি মেঝেয় পড়ে আছে৷ খাবার জুটছে কোনওরকম৷ জীবনধারণের বাকি যে ব্যবস্থা— সন্ধের পর আলো, পাখার বাতাস, একটু আব্রু, সাধারণ ওষুধপত্র— কিছুই নেই৷ গুমোট গরমে, স্নান করা তো দূরের কথা, মাথা ভেজাবার জলও নেই৷ স্কুলের বাথরুমে যে ধারায় জল পড়ে তাতে একজনের মাথা ভেজাতে অনেক সময় লাগে৷ লাইনে যারা আছে, তারা চেঁচায়৷ কাঁদতে কাঁদতে মানবশিশুর দম আটকে আসে৷ সেই কান্না শুনে আরও শিশু কেঁদে ওঠে৷ অশেষ ক্লেশ সয়ে তারা টিকে আছে৷ থাকার জন্য পাকা জায়গা পেয়েছে, এই তো ঢের৷ স্থানীয় হাওড়া মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকে দু’চার রকম সবজি-সহ তৈরি খিচুড়ি আসত৷ আর শিশুদের জন্য হরিণঘাটার কয়েক বোতল দুধ৷ পাড়ার মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলে খরচ জোগানো হয়েছিল৷

Flood Relief
নৌকা-ভর্তি খিচুড়ি আর পাঁউরুটি-বিস্কুট-চিঁড়ে-গুড় জলে ভাসিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যেত ছেলেরা

ক্লাস নাইনে আমাদের রচনা লিখতে দিয়েছিলেন নবীন বাংলা শিক্ষক৷ এক বছরের জন্য এসেছিলেন তিনি৷ নিয়মিত শিক্ষক বিটি পড়বার জন্য ছুটিতে যান৷ তাঁর জায়গায়৷ রচনার বিষয়: তোমার চোখে বাংলার বর্ষা৷ এতদিন যেভাবে রচনা লেখা শেখানো হয়েছে, তার চেয়ে আলাদা এই নবীন শিক্ষকের ভাবনা৷ বললেন, বই দেখে লিখবে না৷ তোমরা সবাই বর্ষা দেখেছ৷ যে যেমন দেখেছ, সেটাই লিখবে৷ বাড়ি থেকে লিখে আনবে৷ নিজেরা লিখবে৷ ফুলস্ক্যাপ কাগজের দুই পৃষ্ঠায় আমি বর্ষায় আমাদের ঘরে উঠোনে কী সমস্যা হয় থেকে কর্পোরেশন স্কুলে আশ্রয় নেওয়া বর্ষাদুর্গতদের কথা লিখেছিলাম৷ নবীন শিক্ষক বললেন, এসব তোমার দেখা? জবাব দিয়েছিলাম, আমাদের উঠোনের জলে ভেসে কতরকম নোংরা আসে, সেসব তো লিখিনি৷ শিক্ষকের নাম শুভাশিস গোস্বামী৷ পরে জেনেছি, তিনি কবি৷ ‘পরিচয়’ পত্রিকায় তাঁর কবিতা দেখেছি৷ আমার বর্ষা উপভোগের নয়, দুর্ভোগের৷ যদিও “নীল অঞ্জন ঘন কুঞ্জ ছায়ায় সম্বৃত অম্বর, হে গম্ভীর’ বা ‘মেঘলা আকাশে উতলা বাতাসে কী গান গাব যে’ এরকম আরও বর্ষার গান শুনতে বেশ লাগে৷

বানের সমুদ্রে লোকাল জলদস্যু   

বন্যার ভাঙন ও ভাসান আর জমাজলের যন্ত্রণা বাংলার প্রতি বছরের ঘটনা৷ এক নিরাময়হীন ব্যাধি৷ এই ব্যাধি থেকে এক শ্রেণির লোক কোটি কোটি টাকা লুটে নেয়, বহুকাল শুনছি৷ তারা বন্যা ও খরার অপেক্ষায় থাকে৷ বন্যা ও খরা তাদের কাছে ‘ঠাকুরের আশীর্বাদ’৷ ত্রাণে বরাদ্দ যত বেশি হয়, তাদের আনন্দ তত থইথই৷ এই শ্রেণির লোকেরা প্রভাবশালী হয়৷

আমরাও একবার লোকাল লুটমারের পাল্লায় পড়েছিলাম৷ আমতা-শিয়াখালা অঞ্চলে৷ সাল সম্ভবত ১৯৬৯৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি৷ সরকারি দপ্তরে ত্রাণসামগ্রী দিলে কর্তারা মেরে দেয় বলে ট্রাক নিয়ে উঁচু পিচরাস্তা ধরে গ্রামের মানুষের কাছে যেতে চেয়েছি৷ ট্রাকে বড়ো মাঝারি কুড়ি প্যাকেট শুকনো খাবার৷ কয়েক বস্তাবোঝাই জামাকাপড়৷ সেবার ত্রাণ সংগ্রহ করা হয় বড়োবাজার অঞ্চলে ঘুরে৷ হাত খুলে দিয়েছিলেন বাসিন্দারা, দোকানদাররা৷ পরিকল্পনা ছিল, কোনও বাজার এলাকায় ট্রাক দাঁড় করিয়ে ত্রাণ বিলি করা হবে৷ বাজার কেন? কেননা বাজার সাধারণত উঁচু জায়গায় হয়, পাকা দোকান থাকে, মানুষজন আসে, গ্রামবাসী সহজে খবর পাবে৷ আামদের সঙ্গে ছিলেন সংস্কৃত কলেজের এক অধ্যাপক৷ এই অঞ্চলে তাঁর আত্মীয় বাড়ি৷ তিনি কয়েকবার এসেছেন৷ আরও খানিকটা এগনো যাক, আর একটু ভেতরে যাওয়া যাক, বলতে বলতে আমরা যেখানে পৌঁছলাম, সেখানে শুধু জল, অনন্ত জলরাশি, নারকেলগাছের মাথাটুকু জেগে আছে, চোখের অতিদূর পর্যন্ত ঘরবাড়ির চিহ্ন নেই৷ উঁচু পিচরাস্তায় হাঁটুজল৷ সামনে পথ দেখা যাচ্ছে না৷ ড্রাইভার আর এগোতে নারাজ৷ অধ্যাপক বললেন, দামোদরের বন্যা৷ দামোদর বাউন্ডুলে নদ৷ শাখা-প্রশাখার শেষ নেই৷ বহু জায়গায় নদীখাত মিশেছে শস্যখেতে৷ তেমন বৃষ্টি হলে বোঝা যায় নদী কীভাবে প্রতিশোধ নেয়৷ চারদিকে অপার জলরাশির মধ্যে ট্রাকে বসে নদী-বিষয়ক লেকচার শোনার মানসিকতা থাকবার কথা নয়৷ আমরা শুনছিলাম না৷ তিনি বলছিলেন৷ 

Flooded
বন্যার ভাঙন ও ভাসান আর জমাজলের যন্ত্রণা বাংলার প্রতি বছরের ঘটনা

একটা কথা অবশ্য শোনবার মতো৷ আমাদের নদী পরিকল্পনার মধ্যেই আছে লুটের সুসংহত প্রকল্প৷ তখন দুপুরের কাছাকাছি৷ আসবার পথে চোখে পড়েছে কিছু ডিঙি৷ এদিক সেদিক৷ দূরে দূরে চলে যাচ্ছে৷ আশা করা গিয়েছিল সেরকম কিছু ডিঙি এখানে পাওয়া যাবে৷ স্থানীয় মানুষ আমাদের ত্রাণ পৌঁছে দিতে সাহায্য করবেন৷ বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম আমরা৷ দেখতে চেয়েছি কাউকে বা কোনও ডিঙি, যদি খবর পাঠানো যায়৷ ড্রাইভার অস্থির৷ ফিরতে হবে৷ গাড়ি ঘোরাবার জায়গা নেই৷ ব্যাক গিয়ারে যেতে হবে৷ গাড়ি ঠিক রাখা কঠিন৷ নরম মাটিতে চাকা বসে যেতে পারে৷ আলো কমে গেলে এই বন্যার সমুদ্রে সারা রাত কাটাতে হবে৷ সেটা কতটা বিপদের হতে পারে ভাবা যায় না৷ ত্রাণের আবেগ তখন মিইয়ে যেতে শুরু করেছে কারও কারও৷ স্বাভাবিক৷ অবস্থা অনেকটা অকূল পাথারে৷ এই সময় কয়েকটা ডিঙি চোখে পড়ল৷ ট্রাক থেকে ডাক দেওয়া হল৷ ওরা জানাল, আমাদের কাছেই আসছে৷ ওরা এল৷
– ত্রাণ আনছেন, বাবু? আমাদের সব ভেসে গেছে৷ বানের জলে ঘরবাড়ি কিছু নাই৷ খাবার নাই৷ সরকারের লোক খোঁজ নেয় নাই৷ কীভাবে বেঁচে আছি বলবার নয়৷
এইসব বলতে বলতে ওরা পিচরাস্তায় দাঁড়ালে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া শুরু হয়৷ দশ-বারো জন এসেছিল৷ তারা বলে,
– আরো দেন৷ আসতে পারে না অনেকে৷ দূরে দূরে আছে অনাহারে৷ আমরা নিয়া যাব৷ বিলি করব৷ এই সোতের জল ভাঙি কয়জন আসে৷ 

flood NB
ত্রাণ আনছেন, বাবু? আমাদের সব ভেসে গেছে

কথায় যুক্তি আছে৷ শহরে বসে যেভাবে ত্রাণ দেবার কথা ভাবা গিয়েছিল সেটা যে কত অবাস্তব স্পষ্ট হতে থাকল৷ ওরা ট্রাকে উঠে পড়তে চায়৷ গোটা প্যাকেট গোটা নেবার জন্য কাড়াকাড়ি করে৷ আমরা ছ-সাতজন৷ ট্রাকে উঠে পড়লে বাধা দেবে কে? শুনবেই বা কেন? ক্ষুধা ওদের মারকুটে করে তুলেছে৷ তখনই ডিঙির চেয়ে বড়ো একটা নৌকা হাজির হল৷ নৌকায় চারজন৷ দু’জন ষণ্ডামার্কা সোজা উঠে পড়ল ট্রাকে৷ জিনিসপত্র দেখে একজন বলল,
– এই এনেছেন? বেশ৷ আমরা নিয়ে যাচ্ছি৷ আপনারা বিলি করতে পারবেন না৷ কেউ বেশি নেবে৷ কেউ পাবে না৷ লোকজন মাথাখারাপ হয়ে আছে৷ রক্তারক্তি করতে পারে৷ আমরা নিয়ে যাই৷ নিশ্চিন্তে থাকেন, যাদের পাওয়া দরকার তারাই পাবে৷ আপনারা তাড়াতাড়ি ফিরে যান৷ চারদিকে বাঁধ ভাঙছে৷ জল বাড়ছে৷ গাড়ি আটকালে খুব বিপদে পড়বেন৷

প্যাকেট ধর, বস্তা ধর বলে ওরা চারজন সব নিয়ে গেল৷ ডিঙি নিয়ে যারা এসেছিল, তাদের চেঁচামেচি থেকে বোঝা গেল, এরা লোক সুবিধের নয়, কাউকে কিছু দেবে না, সব বেচবে৷ ওরা আমাদের গাল দিতে লাগল৷ বোঝা গেল, আমরা কতটা মূর্খ৷ লুট হয়ে গেল ত্রাণ৷ বাধা দেবার কথা ভাবা যায়নি৷ রক্তারক্তি হতে পারে৷ বাঁধ ভাঙছে৷ জল বাড়ছে৷ দিনের আলো মুছে যাবার আগে প্রবল স্রোতের জল ভেঙে, জলের ভয়ংকর হয়ে উঠতে-থাকা শব্দের মধ্যে আমরা কোনওক্রমে পালিয়ে এসেছিলাম৷ 

প্লাবনকালের নায়কেরা

বৃষ্টি ঝরছিল মাঝে মাঝে থেমে থেমে৷ ১৯৭৮-এর ২৬ সেপ্টেম্বর৷ বড়ো একটা বৃষ্টির প্রস্তুতি ছিল আকাশে৷ পরদিন বৃষ্টির তোড় বাড়ল৷ তখনও বোঝা যায়নি বৃষ্টি থেকে অতিবৃষ্টির মধ্যে দিয়ে আমরা প্লাবনের মুখে পড়ব৷ পূর্বাভাস কিছু ছিল কিনা আজ আর মনে নেই৷ আমরা তখন আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে মজা করতাম৷ বিশ্বাসযোগ্য ছিল না তেমন সেটা৷ ২৮ তারিখ অবিশ্বাস্য বৃষ্টি৷ মুষলধারায় বিরতিহীন৷ ট্রানজিস্টরে ঘন ঘন বৃষ্টির বুলেটিন, মনে আছে৷ ৪৪ বছর পরে সব কথা মনে থাকা সম্ভব নয়৷ স্মৃতির ভরসায় লেখা কতটা নিখুঁত হতে পারে তা নিয়ে নিজেরই সংশয় আছে৷ গুগল বলছে, ২৮ তারিখে কলকাতা ও লাগোয়া এলাকায় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৩৬৯.৬ মিমি৷ চারদিনে পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ৯০০ মিমি৷ অঙ্কের হিসেব থেকে নিশ্চয় একটা ছবি পাওয়া যায়৷ কিন্তু সেটা ক-জনের মাথায় ঢোকে! মৃত্যু এবং ক্ষয়ক্ষতির হিসেব বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়৷ সেদিকে যাচ্ছি না৷ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি৷ 

Flood boat
যত এগোই চোখে পড়ে শুধু জল আর জল৷ সব গ্রাম ডুবে

আমরা তখন ভদ্রেশ্বরে বসতি বানিয়েছি৷ কলোনি এলাকা৷ গাছপালা পুকুর মাঠ চালাঘর বাঁশের বেড়া ইত্যাদি নিয়ে বেশ একটা গ্রাম গ্রাম ভাব৷ প্রথম দু’দিনের বৃষ্টিতে জল তেমন জমেনি কোথাও৷ নিচু জায়গা ছাড়া৷ ২৮ তারিখ, খুব সম্ভবত শনিবার, সন্ধে পর্যন্ত আলো ছিল৷ একটু রাত হতে চলে গেল৷ ঝোঁ ঝোঁ অন্ধকারে আকাশভাঙা বৃষ্টি৷ বাড়ির গায়ে পুকুর৷ জলের শব্দ ভয়ধরানো হয়ে উঠতে থাকল৷ মা বললেন, ঘরে জল ঢুকবে৷ রাত জাগতে হবে৷ তুই একটু শুয়ে নে৷ কিছু জিনিস তক্তপোশে তুলে মায়ে-পুতে বসে থাকি৷ মা ঘুমোননি৷ আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম৷ ভোরের দিকে মা ডাকলেন৷ বৃষ্টি ধরেছে৷ আলো ফুটছে৷ দেখি, পুকুর ঘরে ঢুকবে বলে পা তুলে দাঁড়িয়ে আছে৷ অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, স্পষ্ট মনে আছে, একঘণ্টার মধ্যে জল নেমে গিয়েছিল৷ ন’টা নাগাদ বেরিয়ে পড়েছিলাম৷ স্টেশনের পশ্চিমদিকে পঞ্চায়েত এলাকা প্রায় পুরোটাই জলের নীচে৷ কুন্তী নদীর মজা খাত দিয়ে প্রবল বেগে জলস্রোত বইছে৷ স্পিডবোট টাল সামলাতে পারছে না৷ বাজার পেরিয়ে ঘুঙির খালের পোলের ওপর দিয়ে যে স্রোত ছুটছে সেখানে পা রাখা যাচ্ছে না৷ নৌকোয় ত্রাণ নিয়ে গ্রামে ঢোকার তোড়জোড় করছে স্থানীয় যুবকরা৷ রেললাইন ধরে বৈদ্যবাটি স্টেশনের দিকে এগোনো গেল৷ উদ্দেশ্য, কোনও পথ দিয়ে যদি কোনো গ্রামে ঢোকা যায়৷ যত এগোই চোখে পড়ে শুধু জল আর জল৷ সব গ্রাম ডুবে৷ দু’পার থেকেই লাইনে উঠে এসেছেন হাজার হাজার বানভাসি মানুষ৷ লাইনের নীচে ডিভিসি ক্যানেলের জল ছুটছে৷ শব্দ হচ্ছে গোঁ গোঁ৷ লাইন যেন ভেঙে পড়বে৷ এই বন্যার পর কয়েক মাস ট্রেন চলেছে ‘কশান’ মেনে ধীরগতিতে৷ এই বন্যার পর এইখানে ক্যানেল চওড়া করা হয় বছরখানেক ধরে৷ সেদিন দেখেছি ক্লাবের ছেলেদের, যারা গ্রামের ভেতর থেকে তুলে এনেছিল বিপন্ন মানুষদের প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে৷ 

আমাদের নদী পরিকল্পনার মধ্যেই আছে লুটের সুসংহত প্রকল্প৷ তখন দুপুরের কাছাকাছি৷ আসবার পথে চোখে পড়েছে কিছু ডিঙি৷ এদিক সেদিক৷ দূরে দূরে চলে যাচ্ছে৷ আশা করা গিয়েছিল সেরকম কিছু ডিঙি এখানে পাওয়া যাবে৷ স্থানীয় মানুষ আমাদের ত্রাণ পৌঁছে দিতে সাহায্য করবেন৷ বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম আমরা৷ দেখতে চেয়েছি কাউকে বা কোনও ডিঙি, যদি খবর পাঠানো যায়৷ ড্রাইভার অস্থির৷ ফিরতে হবে৷ গাড়ি ঘোরাবার জায়গা নেই৷ 

সাংবাদিক-সম্পাদক জ্যোতির্ময় দত্ত লিখেছিলেন ‘হিরোজ অফ ডিল্যুজ’৷ প্লাবনকালের নায়কেরা৷ অমৃতবাজার পত্রিকা ছেপেছিল প্রথম পৃষ্ঠায় এক-কলমের প্রতিবেদন৷ এই নায়ক কারা? যাদের আমরা বলি বখাটে, লুচ্চা, রকবাজ ইত্যাদি৷ কীভাবে তারা প্লাবনকালের নায়ক হয়ে উঠেছিল? ৪৪ বছর আগেকার প্রতিবেদন মনে রাখা সম্ভব নয়৷ পেপার কাটিং রাখার মতো গোছানো মানুষ নই কোনওকালে৷ এখন ইচ্ছে করলে যে সেদিনের সংবাদপত্র দেখে নেব তেমন সুযোগ খুবই সীমাবদ্ধ এবং শ্রম ও বিড়ম্বনাসাধ্য৷ যতদূর মনে পড়ে সে লেখা আমার-আপনার চোখে বখে-যাওয়া সেইসব রকবাজ বুকনিবাজ বেকার মস্তানি-করা মেয়ে-পটানো অপোগণ্ডদের কথা বলেছিল, যারা আমার-আপনার দুয়ারে এসেছে বুকজল গলাজল ভেঙে, নৌকো বেয়ে খাবার নিয়ে, জল নিয়ে, দুধ নিয়ে, ওষুধ নিয়ে; যারা জরাজীর্ণ বাড়ি থেকে বের করে এনেছে বিপন্ন বাসিন্দাদের; উপড়ে-পড়া গাছ কেটে পথ খুলে দিয়েছে৷

ব্যক্তিগত দেখা ও শোনা থেকে এই ‘অপোগণ্ডদের’ কথা কিছু বলা যেতে পারে৷ ভদ্রেশ্বর স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম আর ওয়েটিং রুমে কয়েকশো বানভাসি মানুষ এসেছিলেন৷ মিউনিসিপাল এলাকার বহু কলোনির ঘরে জল ঢুকেছে৷ পানীয় জল বন্ধ৷ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ৷ দরজায় তালা মেরে প্ল্যাটফর্মে চলে এসেছেন বহু মানুষ৷ এঁদের নিয়ে এসেছে পাড়ার সেই ‘অপোগণ্ডরা’৷ খাবারের ব্যবস্থা করেছে চটজলদি-বানানো উনুনে৷ পঞ্চায়েত এলাকার অবস্থা ভাবা যায় না৷ ধানখেত বানিয়ে-দেওয়া নিজের খাতে জেগে উঠেছে কুন্তী ও সরস্বতী৷ ভয়ংকর স্রোতে ছুটছে নদী৷ মাইল মাইল এলাকা পাঁচ-ছয় ফুট জলের নীচে৷ এক সপ্তাহের মতো এই বিপন্ন জনতাকে দেখভাল করেছে প্লাবনকালের নায়কেরা৷ বালিগঞ্জ প্লেসের মতো বনেদি এলাকাও ভেসে গিয়েছিল৷ অনুজ-বন্ধু রঞ্জন মিত্রর কাছে শুনেছি ওদের বাড়ির কথা৷ একতলা ছেড়ে ওঁদের উঠে যেতে হয় দোতলায়৷ মজুত খাবার মেপে খেয়েও, ডাল-ভাত আর ডিম আধখানা খেয়েও অন্নকষ্টে পড়েন৷ বুকজলে নিজেরা রিকশা চালিয়ে ত্রাণে হাজির হয় সেই নায়কেরা৷ বাচ্চাদের দুধ ছিল না ঘরে৷ ওরা এনে দিয়েছিল হরিণঘাটার দু বোতল দুধ৷ 

Flood 1
বন্যার ভাঙন ও ভাসান আর জমাজলের যন্ত্রণা বাংলার প্রতি বছরের ঘটনা

হাওড়ার শালিমার গেট থেকে শিবপুর বিই কলেজের দিকে যেতে বাঁদিকে ব্রিটিশ পেইন্টসের (তৎকালীন) লাগোয়া পাড়ার একতলায় জল উঠেছিল কম করে পাঁচ ফুট৷ দোতলার মানুষ ডেকে নিয়েছেন একতলার বিপদগ্রস্তদের৷ ভাগ করে খেয়েছেন যা ছিল ঘরে৷ শুনেছি, সেখানে নৌকো চেপে চাল-ডাল-আটা-ডিম এনে দিয়েছে ‘পাড়ার মস্তানরা’৷ চুঁচুড়ার জোড়াঘাটে গঙ্গার প্রবল স্রোতে ঘরের চালে ভেসে যেতে-থাকা অন্তত শ-দুয়েক মানুষকে উদ্ধার করেছে পাড়ার ডাকাবুকো ছেলেরা৷ এই বানভাসিরা বর্ধমানের, হুগলির নানা জায়গার৷ ঘর ডুবে গেলে বাঁচার জন্য চালে বসেছিলেন৷ চাল ভেসে গেছে বানে৷ 

সাল ১৯৭৮৷ বলা দরকার, সন্ত্রাস-উপদ্রুত, রক্তস্নাত সত্তর দশকের অবসান ঘটছে৷ নৃশংসতম পুলিসি অত্যাচার, অসংখ্য মৃত্যু ও খুনোখুনি দেখেছে মানুষ৷ এক বছর আগে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে বামফ্রন্ট৷ সুন্দর দিনের স্বপ্ন দেখছেন রাজ্যবাসী৷ অনেক আঘাত সয়েও যে মানবিকতাটুকু, যে মূল্যবোধটুকু তাঁরা বাঁচিয়ে রেখেছেন, তার উদ্ভাস দেখা গেল এই প্লাবনকালে৷ হয়তো সর্বত্র নয়৷ যেটুকু দেখেছি, শুনেছি৷ ১৯৭৮-এর গ্রামাঞ্চলের বানভাসিরা ভিক্ষা চাইতে শহরে আসেনি৷ বিপর্যয় দরদী হাতে সামলেছিল সরকার৷ মানুষ দাঁড়িয়েছিল মানুষের পাশে৷ অনুজ-বন্ধু অর্ক চৌধুরীর কথা দিয়ে শেষ করি৷ কাশ্মীরে ট্রেনিং সম্পূর্ণ করে জম্মু থেকে বাড়ির দিকে রওনা হন অর্ক৷ ২৬ সেপ্টেম্বর৷ তখন বাংলায় বৃষ্টির খবর নেই তাঁর কাছে৷ পেলেন মাঝপথে৷ ট্রেনের নির্ধারিত যাত্রা বাতিল হল৷ একটার পর একটা ট্রেন পালটে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক-একটা স্টেশনে পড়ে থেকে, আধপেটা খেয়ে বা না-খেয়ে, ছ’দিন পর পৌঁছন বর্ধমানে৷ সেখান থেকে হুগলিঘাট স্টেশন৷ বাকিটা পথ হেঁটে, দুটো ব্যাগ কাঁধে নিয়ে যখন তিনি বাড়ি ফিরছেন, ভোর হচ্ছে, রেডিওতে মহিষাসুরমর্দিনী শেষ লগ্নে৷ প্লাবনবিধ্বস্ত বাংলায় মহালয়া৷ 

 

ছবি সৌজন্য: আনন্দবাজার

Madhumoy Paul

মধুময়ের জন্ম ১৯৫২ সালে পূর্ববঙ্গের ময়মনসিংহে, কিশোরগঞ্জে। লেখাপড়া কলকাতায়। শৈশব-যৌবন কেটেছে স্টেশনে, ক‍্যাম্পে, বস্তিতে। গল্প লিখে লেখালেখি শুরু। পরে উপন‍্যাস। বই আখ‍্যান পঞ্চাশ, আলিঙ্গন দাও রানি, রূপকাঠের নৌকা। অনুসন্ধানমূলক কাজে আগ্রহী। পঞ্চাশের মন্বন্তর, দাঙ্গা-দেশভাগ, নকশালবাড়ি আন্দোলন নিয়ে কাজ করেছেন। কেয়া চক্রবর্তী, গণেশ পাইন তাঁর প্রিয় সম্পাদনা। প্রতিমা বড়ুয়াকে নিয়ে গ্রন্থের কাজ করছেন চার বছর। মূলত পাঠক ও শ্রোতা।

Picture of মধুময় পাল

মধুময় পাল

মধুময়ের জন্ম ১৯৫২ সালে পূর্ববঙ্গের ময়মনসিংহে, কিশোরগঞ্জে। লেখাপড়া কলকাতায়। শৈশব-যৌবন কেটেছে স্টেশনে, ক‍্যাম্পে, বস্তিতে। গল্প লিখে লেখালেখি শুরু। পরে উপন‍্যাস। বই আখ‍্যান পঞ্চাশ, আলিঙ্গন দাও রানি, রূপকাঠের নৌকা। অনুসন্ধানমূলক কাজে আগ্রহী। পঞ্চাশের মন্বন্তর, দাঙ্গা-দেশভাগ, নকশালবাড়ি আন্দোলন নিয়ে কাজ করেছেন। কেয়া চক্রবর্তী, গণেশ পাইন তাঁর প্রিয় সম্পাদনা। প্রতিমা বড়ুয়াকে নিয়ে গ্রন্থের কাজ করছেন চার বছর। মূলত পাঠক ও শ্রোতা।
Picture of মধুময় পাল

মধুময় পাল

মধুময়ের জন্ম ১৯৫২ সালে পূর্ববঙ্গের ময়মনসিংহে, কিশোরগঞ্জে। লেখাপড়া কলকাতায়। শৈশব-যৌবন কেটেছে স্টেশনে, ক‍্যাম্পে, বস্তিতে। গল্প লিখে লেখালেখি শুরু। পরে উপন‍্যাস। বই আখ‍্যান পঞ্চাশ, আলিঙ্গন দাও রানি, রূপকাঠের নৌকা। অনুসন্ধানমূলক কাজে আগ্রহী। পঞ্চাশের মন্বন্তর, দাঙ্গা-দেশভাগ, নকশালবাড়ি আন্দোলন নিয়ে কাজ করেছেন। কেয়া চক্রবর্তী, গণেশ পাইন তাঁর প্রিয় সম্পাদনা। প্রতিমা বড়ুয়াকে নিয়ে গ্রন্থের কাজ করছেন চার বছর। মূলত পাঠক ও শ্রোতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com