লকডাউন তো চলছে। প্রশাসনিক তরফে বার বার বলাও হচ্ছে ঘর থেকে না বেরোতে। অথচ প্রায় প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে সকাল হতে না হতে থলি হাতে ব্রেড, দুধ ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সন্ধানে বাজারে ছুটছেন বাড়ির কর্তা। তাই করোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতনতা থাকলেও ঝুঁকি কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। আবার বয়স্ক মানুষ যাঁদের পক্ষে এইসময়ে ঘরের বাইরে যাওয়াটাও রীতিমতো চ্যালেঞ্জ, এমনকি পরিচারিকা/পরিচারকহীন বাড়িতে রান্না-বান্না করাটাও বেশ দুস্কর তাঁদের অবস্থা হয়ে দাঁড়াচ্ছে আরও সঙ্গীন। এইসব সমস্যার কথা ভেবেই এবারে শহরের বিভিন্ন আবাসনগুলিতে তাদের পাঁউরুটির পসরা নিয়ে হাজির হয়ে যাচ্ছে কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্যশালী বেকারি, “ফ্লুরিজ”।
‘চব্বিশ তারিখ লকডাউনের ঘোষণার আগেই এই রাজ্যে পাঁউরুটির একটা ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। কিন্তু ব্রেড তো আমাদের অত্যাবশ্যকীয় পণ্যগুলির অন্যতম। রেডিমেড খাবার হিসেবে এইসময় বাড়িতে মজুত থাকাটা জরুরিও। সেই ব্রেড এইভাবে বাজারে আসা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে মানুষ বিপদে পড়ে যান। সেটা দেখেই আমরা ভাবতে শুরু করেছিলাম কীকরে এটাকে সামলানো যায়। এদিকে যেহেতু কারফিউ চলছে,কারও পক্ষে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয় আর যেহেতু আমাদের মধ্যে অনেকেই শহরের বিভিন্ন আবাসনগুলিতে থাকেন সেখান থেকেই আমরা ভাবতে শুরু করলাম কেমন হয় যদি আমরা আমাদের ফুড ট্রাকে করে পাঁউরুটি সোসাইটিগুলোতে মানুষের কাছে পৌঁছে দিই। যেমন ভাবা তেমন কাজ। আর সেখান থেকেই শুরু। এখন তো এমনও হচ্ছে ব্রেড ফুরিয়ে যাচ্ছে, বার বার করে নিয়ে যেতে হচ্ছে। আমাদের মিল্ক ব্রেড, ব্রাউন ব্রেড আর হোয়াইট স্যান্ডউইচ ব্রেডের এতই চাহিদা!’ বলছিলেন ফ্লুরিজের এক্সিকিউটিভ শেফ, বিকাশ কুমার।
[videopress OejRIjbR]
ইতিমধ্যেই সাউথ সিটি, আরবানা, অভিষিক্তা, গ্রীনউড নুক, হাইল্যান্ড পার্ক ও অভিদীপ্তার মত আবাসনগুলিতে তাঁদের ফুড ষ্টল দিয়ে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে ফ্লুরিজ। ‘যতটা আশা করা হয়েছিল তার থেকে অনেকটাই বেশি চাহিদা দেখতে পাচ্ছি। এমনও হচ্ছে আবাসনের মানুষের প্রয়োজন মেটাতে একই আবাসনে বার বার যেতে হচ্ছে। এমনকি তাঁদের অনুরোধে কেক, কুকিজ প্যাটি, পেস্ট্রিও নিয়ে যেতে হচ্ছে। এইভাবে আমরা এই কঠিন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছি বলে ভালোও লাগছে’ বললেন বিকাশ।
তিরানব্বই বছরের পুরনো এই সংস্থা শহরের ইট-কাঠ-পাথরের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে বহুদিন। তাই শহরের মানুষের পাশে দাঁড়াতে বেশি ভাবতে হয়নি ফ্লুরিজকে। এমনকি ফুটপাথবাসী এবং ঘরহীন মানুষের জন্যও তাঁরা ভেবেছেন। কলকাতা পুলিশের সহযোগিতায় ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে সেকাজ।প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় পাঁউরুটি ও বেকারির কেক ও শুকনো খাবার বিলি করা হচ্ছে। এছাড়াও শহরের বিয়াল্লিশটি স্টোরের মধ্যে দুটি খোলা হয়েছে ও আরও কয়েকটি খোলার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে যাতে এই বিপদের দিনে কিছুটা হলেও মানুষের জীবন সহজ করে দেওয়া যায়।
লকডাউনের থোড়-বড়ি-খাড়াতে অনায়াসে একটু বৈচিত্র আনতে আর ইস্টার সানডেতে বাড়ির ছোটদের গোমড়া মুখে হাসি ফোটাতে নিজের স্পেশাল রেসিপিও শেয়ার করলেন সেলেব্রিটি শেফ, বিকাশ কুমার।

হোমমেড চকোলেট ফাজ উইথ টোস্টেড আমন্ড
উপকরণ :
ভেজে গুঁড়ো করে রাখা আমন্ড বাদাম – ১৫০ গ্রাম
মিষ্টি কনডেন্সড মিল্ক – ১ ক্যান
মোটা করে কুচি করা ডার্ক চকোলেট – ৫০০ গ্রাম
মাখন -৩০গ্রাম
ভ্যানিলা – ১০ মিলি লিটার চা চামচ
প্রণালী
১।প্রথমে বেকিং পাত্রটিতে নিচে ও চারিদিকে ভালো করে ফয়েল পেপার দিয়ে লাইন করে নিতে হবে।
২।এরপরে একটি স্টেনলেস স্টিলের পাত্রে কনডেন্সড মিল্ক, ডার্ক চকোলেট ও মাখন একসঙ্গে নিয়ে একটি সসপ্যানের অল্প অল্প ফুটতে থাকা জলে দিয়ে নাড়তে থাকতে হবে। খুব সাবধানে ঘন ঘন মাঝাড়ি আঁচে নাড়তে থাকতে হবে। যাতে বেশি গরম না হয়ে যায়। একটা সময় মিশ্রণটি ঘন ও মসৃন হয়ে যাবে। তখন মিশ্রণটিকে ওভেন থেকে সরিয়ে মিশ্রণটিতে ভ্যানিলা ও গুঁড়ো করে রাখা আমন্ড বাদাম দিয়ে দিতে হবে।
৩।এবারে আগে থাকতে প্রস্তুত করে রাখা বেকিং ট্রেতে ফজের মিশ্রণটি ঢেলে দিতে হবে।একটি চওড়া এবং পাতলা হাতা বা খুন্তির সাহায্যে ওপরটা যতটা সম্ভব মোলায়েম করে দিতে হবে। এই অবস্থায় ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে দিতে হবে ঠান্ডা করতে। ঠান্ডা হয়ে গেলে ফয়েলের কোনগুলি ধরে খুব সাবধানে ফজ বার করতে হবে এবং ছুরির সাহায্যে ছোট ছোট টুকরো করে নিতে হবে। সার্ভ করার আগেই কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে তারপরে পরিবেশন করতে হবে।
এক সময় বাংলা খবরের চ্যানেলে প্রোডাকশনের পেশায় যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে লেখালেখি করে আর দুই সন্তানের দেখভাল করেই হুশ করে কেটে যায় সংযুক্তার দিন। অবসর সময়ে ভালোবাসেন পরিবারের সকলের সঙ্গে বেড়াতে যেতে।