প্লিভা সাহেবের বেকারি (Glenary’s bakery) বেশ ভালই চলছিল। পার্টি, গান, হইহই করে দিন কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু বাধ সাধল ভারতের স্বাধীনতা। ১৯৪৫ থেকে ৪৭ সালের মধ্যে সাহেবসুবো মানুষেরা সবাই ভারতবর্ষ ছেড়ে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে শুরু করলেন। দার্জিলিং (Darjeeling) শহরে তখন বাঙালি ও মারওয়াড়িদের আনাগোনা শুরু হয়ে গেল। টি এস্টেটগুলো একে একে হাতবদল হতে লাগল। প্লিভা সাহেব দার্জিলিং এবং ওঁর বেকারিকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন তাই বেশ কিছুদিন ইতস্তত করেও রয়ে গেলেন। কিন্তু শেষমেশ পারলেন না। সাধের বেকারি বিক্রি করে দিলেন পাটনার এক ব্যবসায়ী মিস্টার টি সিনহার (Mr. T. Sinha) কাছে। তবে ব্যবসা ছেড়ে দিলেও প্রাণে তার বেকারি রয়েই গেল। সিনহা সাহেবকে অনুরোধ করে এ টি এডওয়ার্ডস (Mr. Augustine Tarcius Edwards) কে ম্যানেজার হিসেবে বেকারির তত্ত্বাবধান এ থাকতে বলা হয়। এডওয়ার্ডস সাহেব ছিলেন দারুণ চনমনে একজন মানুষ; কালিম্পং-এ জন্ম। কিন্তু হলে কী হবে, উনি ছিলেন খুব ছটফটে প্রকৃতির। কিছুদিন চাকরি করেই উনি পাততাড়ি গুটিয়ে চলে গেলেন ব্রিটিশ আর্মি তে নাম লেখাতে। শুরু হল গ্লেনারির (Glenary’s) অধঃপতন। ১৯৪৭ সালে তিনি আবার ফিরে আসেন দার্জিলিং শহরে; বেকারির তখন লাটে ওঠার অবস্থা। প্রাণের বেকারির দুরবস্থা দেখে আর ফেরত গেলেন না।

বাদল ও গুলস্তান নামক দুই ব্যবসায়ীকে নিয়ে উনি আবার হাল ধরলেন গ্লেনারির। কয়েক বছরের মধ্যেই, ১৯৫৯ সালে উনি সিনহা বাবুর কাছ থেকে বেকারিটি ভাড়ায় মানে লিজ এ নিয়ে নিলেন। সিনহাবাবু নানারকম উল্টো পাল্টা নতুন চেষ্টা চালাচ্ছিলেন বেকারিটিকে মিষ্টির দোকান বানানোর পরিকল্পনায়। কিন্তু এডওয়ার্ডস সেই সব চেষ্টা বন্ধ করে দেন এবং বেকারিটিকে ফিরিয়ে নিয়ে যান প্লিভা সাহেবের ফর্মুলাতে– ইংলিশ জার্মান ইতালিয় মানে এককথায় ইউরোপিয় পদ্ধতির বেকারিতে। গ্লেনারিজ আবার জেগে উঠল রইরই করে। গ্লেনারিজ-এর বর্তমান মালিক শ্রীঅজয় এডওয়ার্ডস (Ajoy Edwards) এই এ টি এডওয়ার্ডস-এরই বংশধর। দার্জিলিং চা ও স্বনামধন্য গ্লেনারিজ এর গল্প ফুরোল। কিন্তু তা হলে শুধু মন ভরবে কেন?
তাই আজকের শেষ চায়ের সঙ্গে টা হলো স্প্যানিশ একটি খাবার যার নাম চুরোস (churros)।

উপকরণ:
১ কাপ জল
২ ½ টেবিলচামচ সাদা চিনি
১/২ চা চামচ নুন
২ টেবিল চামচ সূর্যমুখী তেল
১ কাপ ময়দা
১ টি ডিম
১/৪ চামচ বেকিং পাউডার (এইটি ট্র্যাডিশনাল চুরোস এ দেওয়া হয়না)
২ কাপ তেল- ভাজার জন্য
১/২ কাপ সাদা চিনি
১ চা চামচ দারচিনি গুঁড়ো
প্রণালী:
একটি ছোট সসপ্যানে জল ও ২ ½ টেবিল চামচ চিনি, লবণ এবং ২ টেবিল চামচ তেল মেশান এবং মাঝারি আঁচে রাখুন। বেশ খানিকটা গরম হলে (ফোটাবেন না) ভাল করে হাতা দিয়ে নাড়ুন ও আঁচ থেকে নামিয়ে নিন। এতে আস্তে আস্তে ময়দা ও একটু দারচিনি পাউডার মেশাবেন যতক্ষণ না মিশ্রণটি একদম মসৃণ হয়ে যায়।
একটি ননস্টিক ডিপ ফ্রাই প্যানে (nonstick deep fry pan) ২ কাপ তেল দিয়ে গরম করুন। একটি আইসিং ব্যাগে মিশ্রণটি টি নিন এবং একটি মিডিয়াম স্টার টিপ সেই ব্যাগের মুখে লাগান । সাবধানে কিছু ৫-থেকে ৬-ইঞ্চি সোজা পাইপ এর মতন আকারে মিশ্রণটি গরম তেলে ছাড়ুন। পাইপের আকারে চুরোস গুলো সোনালি হয়ে যাওয়া পর্যন্ত ভাজুন। একটি প্লেটে এ টিস্যু পেপারের ওপরে চুরসগুলো ভেজে নামিয়ে আলগা তেলটা ঝরিয়ে নিন। হালকা দারুচিনি ও চিনির গরম চুরস এর ওপরে ছড়িয়ে দিন। একটু ঠাণ্ডা হলে গরম গরম চায়ের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
এবং তার সঙ্গে দার্জিলিং সেকেন্ড ফ্লাশ চা থাকলে বিকেলটাই সুন্দর হয়ে উঠবে। আমার গল্প তাহলে এখানেই ফুরোল। আবার হাজির হব অন্য কোনও গল্প নিয়ে।
ছবি সৌজন্য: মহুয়া রায় ও গ্লেনারিজ-এর ফেসবুক পেজ।
মহুয়া এক কর্পোরেট সংস্থায় কর্মরত কাউন্সিলর। ভ্রমণ এবং নতুন নতুন খাদ্য-সংস্কৃতি সম্বন্ধে তাঁর অসীম আগ্রহ।
One Response
Amazing write up