Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

১৯৭৮-এ বাগবাজারে নৌকো চলল

কিন্নর রায়

অক্টোবর ১৭, ২০২২

1978 flood in Bengal
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

‘খরা বামুন বান
দক্ষিণা পেলে যান
বন্যা বামুন বান
দক্ষিণা পেলে যান’

কারা বানিয়েছিলেন এই ছিকুলি, মুখে মুখে? কারা? উত্তর পাই না। চিরকাল জেনেছি কেলেঘাই, দামোদর, অজয়, পাগলা ভৈরব, রূপনারায়ণ, গঙ্গাও – বন্যাপ্রবণ। অখণ্ড বঙ্গের পদ্মা– প্রমত্তা পদ্মা– কীর্তিনাশা। মেঘনা, ধলেশ্বরী, কর্ণফুলি, মধুমতী, আড়িয়াল খাঁ, কপোতাক্ষ, বুড়িগঙ্গা, নবগঙ্গা, কীর্তনখোলা, সুগন্ধা– সবাই ‘বন্যা’ নামের ঘনিয়ে ওঠা জল-উচ্ছ্বাসের সঙ্গী। শোণ, যমুনা, গণ্ডকি, বহির্বঙ্গের এইসব নদীও অনেকসময়ই ‘বাঁধ ভেঙে দাও বাঁধ ভেঙে দাও– ভা-আ-ঙো’ সুরে গেয়ে ওঠে ধ্বংসবীজের প্রলয়সঙ্গীত। সুবর্ণরেখা, শিলাবতী-শিলাই, ময়ূরাক্ষী, বিড়ালাক্ষী-বিড়াই, কংসাবতী-কাঁসাই, মুণ্ডেশ্বরী— সকলেই থাকে নদীনৃত্যে স্রোত ভাসানিয়া মারণ গানে। ভেঙে যায় ভেসে যায় মানুষের ঘরবাড়ি, কাঁচা ঘর, দালানকোঠাও। ভেসে ভেসে ভেসে দূরে চলে যেতে থাকে গরু, মোষ, ছাগল, ভেড়া, কুকুর, শুয়োর, হাঁস-মুরগি-মোরগ, সাপও— বিষাক্ত ও নির্বিষ। সকলের বাসা-গর্তেই জল ঢুকেছে। কেউ আর নিরাপদ নয়। বড় বড় বাঁধ দিয়ে নদীকে, নদকে পোষ মানানো যায় না। ফরাক্কা ব্যারেজ বা ফরাক্কা বাঁধ তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। বড় বাঁধে নদ-নদী ক্রমশ ক্ষয়ে যায়। হয়ে ওঠে বিদ্রোহী। তখনই ‘বাঁধ ভেঙে দাও, বাঁধ ভেঙে দাও – ভা-আ-ঙো…’। গুঁড়িয়ে যায় বাঁধ, জলের তোড়ে ভেসে যায় সর্বস্ব। লকগেট খুলে দেওয়া হয় বাঁধ— বড় বাঁধ বাঁচানোর জন্য। তখন মানুষের ঘরবাড়ি, শস্যক্ষেত, গরু-ছাগল-মোষ-ভেড়া— সব জলস্রোতে ভেসে যাওয়া ভাঙা খেলনা। 

flood relief
আমি বহুবার বন্যায় ত্রাণ দিতে গেছি।

অখণ্ড মেদিনীপুরের পিংলা, সবং বন্যাতুর অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত হয়ে যায়। প্রতি বছরই প্রায় সেখানে ভয়াবহ বন্যা। আমি বহুবার বন্যায় ত্রাণ দিতে গেছি— রিলিফ। বানভাসি মানুষের জন্য ত্রিপল, শুকনো চিঁড়ে-গুড়, শাড়ি-লুঙ্গি-পায়জামা, ধুতি। হালফিল সময়ে ‘আয়লা’ আর ইয়াশ-যশ-এর পর ঘাড়ে রিলিফের বস্তা নিয়ে– ব্লিচিং পাউডার, গুঁড়ো সাবান, বিস্কুটের প্যাকেট, চিনি, প্লাস্টিক প্যাকেটবন্দি পানীয় জল, হাত ধোয়ার সাবান, চাল-ডাল-গুড়– মাস্ক, স্যানিটাইজার। আয়লার সময় করোনা ছিল না। ‘যশ’-এর সময় করোনা। ফলে মাস্ক, স্যানিটাইজার। ‘আয়লা’ আর ‘যশ’-এর পর ‘মাতৃসংঘ জনকল্যাণ আশ্রম’-এর কর্মীবাহিনী, ডাক্তারদের কয়েকজন, সঙ্গে ওআরএস, অন্য ওষুধ-বিষুধ। কালীঘাটে ‘কল্যায়ণ’ বলে একটি লোককল্যাণমূলক সংগঠন ছিল, তাদের সঙ্গেও রিলিফ দিতে গেছি। ‘যশ’-এর পর দেখেছি রান্না করা খাবার– খিচুড়ি ইত্যাদি নিয়ে যাচ্ছেন ভারত সেবাশ্রম সংঘের সাধু মহারাজরা। আবার বন্যার জায়গাতে পৌঁছেও রান্নাবান্না হচ্ছে। স্থানীয় বানভাসি মানুষদের নিয়ে করাচ্ছেন ভারত সেবাশ্রম সংঘ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সাধু মহারাজরা। অন্য অন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, গণসংগঠন, ক্লাব সংগঠন, কোনও কোনও এনজিও— সকলেই এগিয়ে আসেন বানভাসিদের রিলিফ দিতে। আয়লা ও ‘যশ’-এর সময় সুন্দরবন, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, রাক্ষসখালি— সর্বত্র গেছি রিলিফ নিয়ে। কাকদ্বীপ থেকে ডাবল ইঞ্জিন বোটে রাক্ষসখালি পাঁচঘণ্টা লাগে, যদি আবহাওয়া ভালো থাকে। যেতে পাঁচ ঘণ্টা, আসতে পাঁচঘণ্টা। আবার জোড়া মোটরে চালানো ভুটভুটি এই ধরাবাঁধা সময়ও ফেল করে ঝড়-তুফান থাকলে। বন্যায় দেখেছি মানুষ আর সাপ প্রাণ বাঁচাতে একসঙ্গে গাছের ডালে। দেখেছি শূন্য ঘরের ছাদে উঠে বাড়ি আগলাচ্ছে পোষা সারমেয়টি। তার পাশে জল। 

flood in Bengal
সেই জলে ভেসে থাকে সংসারের-মানুষের ভেসে যাওয়া ঘরবাড়ির উমনো ঝুমনো।

এবার ১৯৭৮ সালের ভয়াবহ বন্যার কথা বলি। ১৯৭৮-এ পুজোর খানিকটা আগে সমস্ত পশ্চিমবাংলাই প্রায় জলের তলায়। তখনও রিলিফের বস্তা ঘাড়ে। সেই চটের বস্তার ভেতর চিঁড়ে, মুড়ি, ভেলিগুড়, গুঁড়ো সাবান, চাল-আটা, চা পাতা, সেই সব বিবরণে যাচ্ছি না আপাতত। ১৯৭৮-এ কলকাতার বন্যার কথাই বলব। কলকাতার দক্ষিণে, কলকাতার উত্তরে, যেমন দেখেছি জল, জল আর জল। ঘোলা, বিশ্রী দুর্গন্ধময়। সেই জলে ভেসে থাকে সংসারের-মানুষের ভেসে যাওয়া ঘরবাড়ির উমনো ঝুমনো। কলকাতার দক্ষিণে আদি বালিগঞ্জ, কালীঘাট, বালিগঞ্জ ট্রামলাইন— সবই জলের তলায়। কালিঘাট– হাওড়া ট্রামলাইনও তাই। কালিঘাট ট্রামডিপোর বড়সড়, পোক্ত টিনের দরজা বন্ধ। এই বন্যা মরশুমেই কলকাতা-সহ অন্যান্য জায়গায় মুক্তি পেয়েছে সত্যজিৎ রায়ের ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’। প্রখ্যাত উর্দু-হিন্দি কথাকার, ‘হংস’ পত্রিকার সম্পাদক মুন্সি প্রেমচন্দের গল্প নিয়ে এই সিনেমা। সত্যজিৎ রায় অবশ্য গল্পের শেষটুকু বদলে দিয়েছিলেন তাঁর সিনেমা-অনুভব, চলচ্চিত্র ভাবনার অন্যতর ফ্রেমে। ‘শোলে’-র গব্বর-খ্যাত আমজাদ খান ওয়াজিদ আলি শা, রিচার্ড অ্যাটেনবরো আউট্রাম। আর ছিলেন সঞ্জীবকুমার, সৈয়দ জাফরি—দুই দাবাড়ু নবাব– মির্জা ও মির। ছিলেন শাবানা আজমি, ফারুখ শেখ, ফরিদা জালাল। চমৎকার ছবি। অ্যানিমেশনের কাজ দারুণ। যদিও পূর্ণেন্দু পত্রীর ‘স্ত্রী-র পত্র’-তে রবীন্দ্রনাথের কাহিনি নিয়ে যে ছবি, তাতে দেখেছি দুর্দান্ত অ্যানিমেশন, ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’-র অনেক বছর আগেই। তো সেই ১৯৭৮-এর বন্যায় বড় রাস্তার ওপর কিয়স্কে কিয়স্কে মেরে দেওয়া শতরঞ্জ কে খিলাড়ির রঙিন পোস্টার বৃষ্টিতে আলগা হয়ে যায়, খসে পড়ে। রোজ কালীঘাটের ১৬/১ ঈশ্বর গাঙ্গুলি স্ট্রিটে বড় মামিমার বাড়ি থেকে ১৬৬ নম্বর বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিটে যেতাম। তখন দৈনিক বসুমতীর জন্য টুকটাক লেখা লিখে থাকি, ছোটখাটো খবর করি। ‘যুগান্তর’-এও লিখি। এই বন্যায় ‘যুগান্তর’ বাড়ির সামনে গলা জল। আনন্দ চ্যাটার্জি লেনের ভেতর, বাগবাজার স্ট্রিট, হরলাল মিত্র স্ট্রিট— সর্বত্র জল আর জল– বন্যার জল। নোংরা, দুর্গন্ধ, বিষাক্ত। যে জলে ভাসে স্যানিটারি ন্যাপকিন, ওষুধের খালি ফয়েল, হাত ছেঁড়া, পা ছেঁড়া প্লাস্টিকের পুতুল, প্লাস্টিকের ফাটা-ভাঙা বাসনপত্র। সঙ্গে আরও সাত সতেরো হাবিজাবি। ঝরে যাওয়া আলগা চুলের নুটি, ডিমের খোসা, রবারের ফুটো হয়ে যাওয়া, ফাটা বল, পাউডারের খালি কৌটো, সেই সঙ্গে ফলের আধপচা, পচা খোসা। আনন্দ চ্যাটার্জি লেনে ‘যুগান্তর’, ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’ বাড়ি থেকে রিপোর্টার, সাব-এডিটর, প্রেসের লোকজন অনেকেই থেকে গেছেন অফিসে। বেশ কয়েক দিন ধরে— সেখানেই খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, ডিউটি। বেশিরভাগ গাড়িতেই জল ঢুকে যাচ্ছে। পুরনো গাড়ি রাস্তায় নামলে ফেঁসে যাওয়ার ভয়। বিডন স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া, বৌবাজার স্ট্রিট, বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট, সর্বত্র জল। 

আনন্দ চ্যাটার্জি লেনে ‘যুগান্তর’, ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’ বাড়ি থেকে রিপোর্টার, সাব-এডিটর, প্রেসের লোকজন অনেকেই থেকে গেছেন অফিসে। বেশ কয়েক দিন ধরে— সেখানেই খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, ডিউটি। বেশিরভাগ গাড়িতেই জল ঢুকে যাচ্ছে। পুরনো গাড়ি রাস্তায় নামলে ফেঁসে যাওয়ার ভয়। বিডন স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া, বৌবাজার স্ট্রিট, বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট, সর্বত্র জল।

দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাটের ঈশ্বর গাঙ্গুলি স্ট্রিট, মুখার্জিপাড়া লেন, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, কালী লেন, নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রিট, নকুলেশ্বরতলা লেন— সব জলের নীচে। কালীঘাটে আবার ‘বোঝার ওপর শাকের আঁটি’ ষাঁড়াষাঁড়ির বানের কিছু অংশ, অমাবস্যার ভরা কোটালের টুকরো টুকরো আদি গঙ্গার না-স্রোতের ভেতর ঢুকে আদিগঙ্গাকে করে তুলেছে স্রোতময়ী। 

পলির ভার বুকে বয়ে নিয়ে চলা গঙ্গা বানভাসাভাসি জল টইটম্বুর। পাড়ে উপচে জল চলে আসছে জনপদের ভেতর। বাজারে জল, পাকা বাড়ির ভেতরে জল, বস্তি ডুবে গেছে। বস্তি ডুবেছে বাগবাজারেও। সেই বস্তির অনেকটাই ‘যুগান্তর’-এর মালিক ঘোষেদের। সারি সারি বস্তিবাড়ি। তার ভেতর গাদাগাদি করা মানুষ। কালীঘাট বন্যার জলে ডুবে যাচ্ছে কার্তিকের ঘাট, দাঁড়ান, ভেসে থাকা নৌকোয় বুকে পা দিয়ে দিয়ে কালীঘাট-চেতলা, চেতলা-কালীঘাট করা মাঝিবিহীন পারানি নৌকো, যাদের কারও ছই নেই, সব আদিগঙ্গার স্রোতের গভীরে। 

আরও পড়ুন: প্লাবনধারা ও ১৯৭৮

গ্রামে গরু-মোষ-ছাগল-ভেড়া-শুয়োর-কুকুর-হাঁস-মুরগি— সব ভাসে। ভেসে যায় সর্বগ্রাসী বন্যায়। মারা যায় জলে ভেসে গিয়ে, খাদ্য না পেয়ে। গরু-ছাগল মোষেদের জন্য তো আর রিলিফের চিঁড়ে-গুড়, মুড়ি, চাল, আসে না, ফলে যা হওয়ার তাই হয়। গো মড়ক লাগে বন্যার পর। শহরে জলে কুকুর মরে। মরা কুকুরের পচা গন্ধে বাতাস ভারী। ভেসে যায় সারমেয়-শব। গঙ্গায় তখন ভরাস্রোত। ঘাট-টাট অদৃশ্য প্রায়। ‘দৈনিক বসুমতী’তে লেখার জন্য গঙ্গাকূলে গিয়ে দেখেছি ঘোলা স্রোতে ভেসে যাচ্ছে অনেক অনেক সবুজ সবুজ কচুরিপানা। পচে, ফুলে, ঢোসকা হয়ে যাওয়া মরা গরু-মোষ। মোষ-মহিষ কম, গরু বেশি। চেতলার সবজিবাগান, মহেশ দত্ত লেন, জৈনুদ্দিন মিস্ত্রি লেন, গোবিন্দ আঢ্যি রোড, চেতলা হাট সব জলতলে। জলে জল। চেতলা পার্কে জল, কালীঘাটে জল। এই বানভাসি ধারা ভেঙে কালীঘাট থেকে বৌবাজার, ‘দৈনিক বসুমতী’ অফিস। খবর দেওয়া, এক কলম। আস্ত এক কলম খবর ছাপা হলে পাঁচ টাকা পাই। যাওয়া-আসার ভরসা সরকারি বাস। কালীঘাট থেকে বৌবাজার সম্ভবত চল্লিশ নয়া পয়সা টিকেট। ট্রাম বন্ধ। ট্রামের বিদ্যুৎ বন্ধ করে রাখা। 

Bengal flood
বন্যার জলে টেলিফোন লাইন বিপর্যস্ত। যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন।

কলকাতা কর্পোরেশনের লোকজন গাছ কাটছে বড় করাত আর কুড়ুল দিয়ে। অনেক প্রাচীন বৃক্ষ ভূপতিত হয়েছে এই বন্যায়। বিদ্যুতের খুব বড়সড় বিভ্রাট হয়নি কলকাতা শহরে। তবে সব খবরের কাগজ প্রতিদিন বেরিয়েছে কিনা, তা নিয়ে সংশয় আছে। এই বন্যার কারণে ‘দৈনিক বসুমতী’ একদিন বন্ধ ছিল, এমনটাই বলছে স্মৃতি। কলকাতার রাস্তায় পিচের খালি কালো ড্রাম, বাঁশ, কলাগাছ, বাতিল টায়ার-টিউব, এইরকম নানান খানা দিয়ে জমা জল পেরনোর ভেলা। ভেলা যায়। ভেলা আসে। ভেলা করে আনানো হয় খাওয়ার জল। বেলেঘাটা, বেলগাছিয়া, দমদম, পাতিপুকুর— সব জায়গায় জল, জল, জল। সেই রবীন্দ্রনাথের ‘দেবতার গ্রাস’ যেন— জল শুধু জল/ দেখে দেখে চিত্ত মোর হয়েছে বিকল’। কিংবা রবীন্দ্রনাথের সময় থেকে আরও অনেকটা এগিয়ে কোনও কবির কলমে ‘হ্যালো দমদম, হ্যালো দমদম।’ বন্যার জলে টেলিফোন লাইন বিপর্যস্ত। যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। কলকাতার অলিগলিতে প্রাচীন, অতি প্রাচীন ভাঙা-আধভাঙা, বাড়ির ইটের পাঁজার নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে বিষধর, না-বিষ সাপ, ইঁদুর, ছুঁচো— কারণ তাদের গর্তে জল। ছুঁচো, ধেড়ে ইঁদুর, নেংটি ইঁদুরের লাশ ভাসে বন্যার জলে।

কুমোরটুলির পটুয়াদের অবস্থা খুব খারাপ। মাটি, প্রতিমার উদ্যোগ রূপ— খড়-বাঁশের কাঠামোর ওপর মাটির ব্যবস্থা, সবই নষ্ট হওয়া, ধ্বংসের মুখে। ঘুরে ঘুরে ঘুরে ঘুরে বড় ডাণ্ডাওয়ালা ছাতা হাতে, কাঁধ ঝোলা, হাফপ্যান্ট আর শার্ট পরে পায়ে ‘বাটার’ দশ টাকা দামের হাওয়াই চটি দিয়ে টোটো করে বেড়াই, এখানে ওখানে। ভাঙা, আধভাঙা বাড়ির অতি প্রাচীন ইটের পাঁজা বা স্তূপ থেকে বেরিয়ে আসে তেঁতুলেবিছে, কাঁকড়াবিছে। কলকাতার গৃহস্থ তখনও ঘুঁটে-কয়লা-কাঠের উনুনে অনেকটাই অভ্যস্ত। জ্বালানীতে টান ধরে। কয়লা-ঘুঁটে-কাঠ ভিজে যায়। 

flooding
গুঁড়িয়ে যায় বাঁধ, জলের তোড়ে ভেসে যায় সর্বস্ব।

সেবারই তো বামফ্রন্ট সরকারের পূর্তির এক বছর। এ-রাজ্যে ১৯৭৭-এ ক্ষমতায় এসেছে বামফ্রন্ট। পশ্চিমবাংলার গ্রামের বন্যায় কো-অর্ডিনেশন কমিটির লোকজন একদম যাকে বলে কোমর বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজ করেছেন চুপচাপ। কোনও প্রচারের আশা না করেই। এই প্রথম দেখলাম বিপন্ন, বানভাসি মানুষ গ্রাম থেকে শহরে এলেন না ভিক্ষা করতে, সাহায্যের আশা নিয়ে। কিংবা শহরের বন্যাপীড়িত মানুষ গলায় হারমোনিয়াম বেঁধে— ‘বন্যায় ভেসে গেছি মোরা–’ বেসুরো গলায় গাইতে গাইতে ভিক্ষা, সাহায্যের জন্য এ-বাড়ি ও-বাড়ি করলেন না। আর এই প্রথম বন্যার পর মহামারি এল না কলেরা রূপে। বন্যার সময় আলিপুর চিড়িয়াখানায় দেখেছি বাঘ, হরিণ, হায়না, সাপদের কষ্ট। তখনও আলাদা করে সাপের বাড়ি তৈরি হয়নি। দেখেছি হাতি, গণ্ডার, শিম্পাঞ্জি, বাঁদর, পাখিদের দুরবস্থা। বেশ্যাপল্লিতে গ্রাহক কোথায়? ফলে তাঁরাও আতান্তরে। সোনাগাছি, রামবাগান, হাড়কাটা, কালীঘাট, খিদিরপুরের ওয়াটগঞ্জ— সর্বত্র এক দুর্দশা। অন্নাভাব, অর্থের অভাব। সস্তার স্নো-পাউডারে নিজেদের সাজিয়ে এইসব মেয়েরা রাস্তায়। তাঁদের ঘরে ‘বসা’, ‘বসানোর’ লোকজন নেই। তাঁদের আর্থিক দুর্গতি চরমে। এভাবেই বন্যা— কলকাতার বন্যা দেখেছি ঘুরে ঘুরে। দেখেছি বানভাসি মানুষের দুরবস্থা। যে কালীঘাটের ঈশ্বর গাঙ্গুলি স্ট্রিটে কোনওদিন বৃষ্টির জল জমেনি, সেখানে জল আর জল। নোংরা জল ‘ডিফেন্স ইউনিট’-এর মাঠে, সদানন্দ রোড, প্রতাপাদিত্য রোডে। ‘উজ্জ্বলা’ সিনেমা তখনও চালু, সেখানে শো বন্ধ। ‘বসুশ্রী’, ‘ভারতী’, ‘ইন্দিরা’, ‘বিজলী’, ‘পূর্ণ’, ‘রূপালী’— সব হল তখন ছবি দেখায়— নতুন সিনেমা রিলিজ করে শুক্রবার শুক্রবার, সে সবের বালাই নেই। ‘কালিকা’, একটু দূরের ‘প্রদীপ’— সব বন্ধ। ‘প্রদীপ’-এ তো আদিগঙ্গায় বান এলেই যে কোনও সময় জল ঢুকে পড়ে। তখন হলের স্ক্রিনে সিটের ওপর দু’পা তুলে বসার আবেদনলেখ। আর এমনিভাবেই ১৯৭৮-এর বন্যায় সারা কলকাতা চষে বেড়িয়েছি।

ছবি সৌজন্য: downtoearth.org, back2godhead.com, https://nidm.gov.in/

Picture of কিন্নর রায়

কিন্নর রায়

Picture of কিন্নর রায়

কিন্নর রায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com