(Little Magazine)
বেলা পড়ে আসছিল। দ্রুত পাথুরে ঢাল বেয়ে নামছিল সপ্তদশী রুকমণিয়া। ব্যস্ততার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল তার হৃদস্পন্দন। প্রতিদিন শেষ বিকেলে চলে এই অভিসার পর্ব। লুকিয়ে চুরিয়ে মাহীর কাছে পৌঁছোনো। বিদর্ভের আকাশ আজ মেঘশূন্য। শ্রাবণের কৃপণতা মাটিকে কেমন রুক্ষ করে রেখেছে। কালো মাটিতে মিশে আছে অপার দৈন্য। যে বন্য আবেশ ঘিরে রাখে তাবৎ অঞ্চলকে, তারও হঠাৎ ছুটি আজ। (Little Magazine)
না, বরাবর এমনটা তো ছিল না। সতেরো বছরের জীবনে যতটা পিছন ফিরে দেখা যায়, ততটাই দেখার চেষ্টা করে রুকমণিয়া। ক্ষেতি, বাড়ি, ঘর-গেরস্থালির পুরোনো ফিকে হয়ে আসা ছবিটা মনের কোণে আঁতিপাতি করে খোঁজে কারণে অকারণে। (Little Magazine)
আরও পড়ুন: ‘আমি আর লীনা হেঁটে চলেছি’: বুক শুকিয়ে আসছে- মানস চক্রবর্তী
ছোটো থেকে বড়ো হওয়া মাহীর সান্নিধ্যে। ভালোলাগা মন্দলাগার যাবতীয় অনুষঙ্গে মিশে ছিল সে। হঠাৎ করেই কীভাবে সে শত্রু হল রুকমণিয়া এখনও বুঝেও উঠতে পারে না। কালো মাটির দেশের আদিগন্ত ছড়িয়ে থাকা তুলো খেতের সফেদ ফসলের মতনই হালকা ছিল ওদের দিনযাপন। সামাজিক, আর্থিক কোনও বোঝা চেপে বসেনি গ্রামীণ জীবনে। পালা-পার্বণে, যাপনে ওতপ্রোত মিশে ছিল মাহী। (Little Magazine)
সেদিনের কথা বেশ মনে পড়ে। একটা মেলা চলছিল পাশের গ্রামে দেওলিতে। পূর্ণিমা ছিল। আকাশজুড়ে চাঁদের জমজমাট দরবার। বসন্তকাল। জিরহুলের পত্রশূন্য ডালে বেগুনি ফুলের বসত। মেলা শেষে দল বেঁধে মেঠো পথ বেয়ে ফিরছিল ওরা নিজেদের গ্রাম নিম্বাতে। (Little Magazine)
“চলতে চলতে ভাবে এভাবে কতদিন, কতদিন আর আঁকড়ে ধরে রাখা যাবে প্রাণপ্রিয় মাহীকে? একরকম ঘোরের মধ্যে পৌঁছে যায় মাহীর কাছে।”
জ্যোৎস্নামাখা আকাশের কোনায় চুপটি করে বসে থাকা নক্ষত্রের মত রুকমণিয়াও চুপচাপ পা মেলাচ্ছিল সকলের সাথে।গাঁওবুড়ো কথাটা পাড়ল। সরকার বাহাদুরের হুকুম, সকলকে এলাকা ছেড়ে যেতে হবে। (Little Magazine)
বিকাশ হবে। এমন অজিব বাত শুনেছে কেউ কখনও? চৌদ্দ পুরুষের ঠিকানা ফেলে আর যাই হোক বিকাশ হয় না। সেই রাতে দুর্ভাবনায় ঘুম এল না কারওর। সরকারি হুকুমনামা এল দিনকতক পর। আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে ভিটে হারাবার ফরমান, সরকারি দস্তখতসহ। (Little Magazine)
“কৃষ্ণবর্ণ আকাশের বুক চিরে হঠাৎ আলোর রোশনাই। দূরে কোথাও ডেকে ওঠে একাকী কোয়েল। একবার কি কানে এলো মায়ের গলার আওয়াজ…..রুকমণিয়াআআআআআআআ…..।”
মা, চাচি, দাদিদের নাগাড়ে অশ্রুপাত। রুকমণিয়ার যেতে তো আপত্তি নেই, কিন্তু মাহী? তাকে না দেখে দিন কাটানো, অসম্ভব। শেষ বিকেলে, গেরস্থালির কাজ শেষে মা যখন ক্লান্ত, তখনই রুকমনিয়ার অভিসার।
চলতে চলতে ভাবে এভাবে কতদিন, কতদিন আর আঁকড়ে ধরে রাখা যাবে প্রাণপ্রিয় মাহীকে? একরকম ঘোরের মধ্যে পৌঁছে যায় মাহীর কাছে। যাকে ঘিরে এত দুশ্চিন্তা, যার বিরহ-বিলাসে নিত্য দিনযাপন, তার শাস্ত স্থির চেহারা আরো কষ্ট দেয় কন্যাকে। (Little Magazine)
আর নয়। রুকমণিয়া ভাবে। আসন্ন বিচ্ছেদভাবনায় ব্যাকুল কিশোরী একটু একটু করে এগিয়ে যায় মাহীর কাছে। প্রিয়তমের নিকশ কালো শরীরে নিজেকে মিলিয়ে দেবার মুহূর্তে সমস্ত চরাচর জুড়ে বেজে ওঠে মেঘেদের দুন্দুভি। কৃষ্ণবর্ণ আকাশের বুক চিরে হঠাৎ আলোর রোশনাই। দূরে কোথাও ডেকে ওঠে একাকী কোয়েল। একবার কি কানে এলো মায়ের গলার আওয়াজ…..রুকমণিয়াআআআআআআআ…..। ঠিক শ্বশুরাল যাবার সময় মায়েরা যেভাবে ডেকে ওঠে তাদের হৃদয়ের পুত্তলির নাম ধরে। (Little Magazine)
আরও পড়ুন: তবুও প্রয়াস: গোপাল ভাঁড় ও তৎকালীন সমাজচিত্র
নাহ, রুকমণিয়াকে আমি কখনও দেখিনি। তার বাপ, মা পরিবারকে এমনকি তার
ঘরবাড়িকেও নয়। বিদর্ভের কৃষিনির্ভর এই অঞ্চলের উন্নতিসাধনে মাহী নদীকে বেঁধে ফেলার চক্রান্তের অন্যতম শরিক আমি। নেহাতই পেটের দায়ে ঠিকাদারের কাছে কাজ করতে এসে স্থানীয় মানুষজনের মুখে শোনা গল্প। কিংবা গল্প হলেও সত্যি। (Little Magazine)
(বানান অপরিবর্তিত)
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।