(Little Magazine)
মৈত্রী এক্সপ্রেস
সকালে খুব অশান্তি হল। ঝগড়াঝাঁটি।
তার মধ্যেই পুজো সারলে তুমি।
লুচি করলে, সাদা আলুর তরকারিও।
তার মধ্যেই এক ঝাঁক টিয়া এল আমগাছে
তার মধ্যেই বাংলাদেশের মৈত্রী এক্সপ্রেস
গেল তার সব শ্বেত ও শুভ্রতা নিয়ে।
অন্য দেশের গাড়ি, আমাদের হৃদয়কে
জানলার ধারে বসিয়ে সীমান্তের দিকে উড়ে গেল
ওই বাংলাদেশের গাড়ি
সকালের অশান্তি বিকেলে—
এইভাবে পৌঁছে দেয় বিদেশে রোজ।
বামপন্থী হাওয়া দখিন দুয়ার খুলে
আসে তোমার পুজোর আসনে
এইভাবে, আমাদের বাড়ি
জবা ফুলের মতো, খোলা জানলার মতো—
ফুটে থাকে রোজ। (Little Magazine)
আরও পড়ুন: মথ: অন্য ভাষায় উড়ান- অনুবাদ: সৌতিক সেন
শান্তিহীনতা আসলে জ্যৈষ্ঠের গনগনে রোদ। পিঠ, গা তার সঙ্গে মনও পুড়তে থাকে। মনে হয় গান থেমে গেছে চারিদিকে। কবি তার লেখা খুঁজে পাচ্ছে না। প্রবল রোদে আমাদের পেয়ারা গাছ কুঁকড়ে আছে, তুলসী গাছ তাপে নেতিয়ে পড়েছে গ্রীষ্মের গায়ে। একটু বৃষ্টি এলো তো আমাদের সংসারে গান জেগে উঠল আবার। আমাদের বাড়ির বাচ্চা মেয়েটি জল রঙে ছবি আঁকতে বসল। আমরা সবাই মিলে তাকে উৎসাহ দিতে লাগলাম। আর সেই সময়ই আমাদের বাড়ির পাশের রেললাইন দিয়ে বাংলাদেশের ট্রেন ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’ তার শ্বেত ধবল রং নিয়ে, যেন শান্তির বার্তা নিয়ে চলেছে, ধীর গতিতে। আমরা সবাই তখন ছাদে উঠে, মৈত্রী এক্সপ্রেস-এর যাত্রীদের দিকে হাত নাড়তে থাকি, করতালি দিতে থাকি। (Little Magazine)
তাদের সঙ্গে আমরাও যেতে থাকি খুলনা, বরিশাল, কিংবা আমাদের দেশের বাড়ি ফরিদপুর বা ঢাকা শহরের দিকে।
যেদিন বাড়িতে কেউ মুখ গোমড়া করে নেই, কারোর মনখারাপ নেই, নেই কোনো মতানৈক্য বা মনোমালিন্য নেই— সেদিন আমরা প্রায় সবাই গুনগুন করে গাইছি, ‘আমরা এমনি এসে ভেসে যাই’— বা ‘… প্রতিদিন যদি কাঁদিবি কেবল, একদিন নয় হাসিবি তোরা, একদিন নয় বিষাদ ভুলিয়া সকলে মিলিয়া গাহিব মোরা…’ সত্যিই সেইদিন সব বিষাদ ভুলিয়া আমাদের বাড়িতে সাদা লুচি আর সাদা আলুর তরকারি হবেই। সেদিন আমাদের কারোর অম্বল হবে না, কেউ গান গাইতে গাইতে গানের কথাও ভুলে যাবে না। সম্পূর্ণ গান গেয়ে আমরা দুপুরে আবার খিচুড়ির সঙ্গে আলুভাজা আর ডিমের অমলেট খাব চেটেপুটে। (Little Magazine)
“তখন চারিদিকে ঠান্ডা হাওয়া বইছে আমাদের জীবনে ও মনে, আমাদের তানপুরায়, আমাদের পুরনো গিটারটিতে, আমাদের ফুলের বনে তখন রঙিন প্রজাপতি এসে বসেছে। এবং বাড়িতে ছোটোমামা এসেছে তার ফুটফুটে ছেলেমেয়েদের নিয়ে।”
আর মনে মনে বাংলাদেশের ট্রেনের সঙ্গে আমরা বিষাদের ওইপারে যাব, ওপার বাংলার সবুজ দেখতে, নদী দেখতে। বিস্তীর্ণ আকাশ দেখতে। (Little Magazine)
এইরকম দিনই তো আমরা কাটাতে চেয়েছিলাম। মনে মনে ট্রেনের বা মনের জানলার ধারে বসে, প্রতিদিনের সব মালিন্য ও গ্লানি ভুলে, সকালের অশান্তিকে নিভিয়ে, আমরা বিকেলের নরম ধানখেত পুকুর নারকেল সারির ভিতর দিয়ে যেতে চেয়েছি আরও শান্তির দিকে। তোমার সহজ হাসিমুখের দিকে, তোমার সুখের দিকে। তখন চারিদিকে ঠান্ডা হাওয়া বইছে আমাদের জীবনে ও মনে, আমাদের তানপুরায়, আমাদের পুরনো গিটারটিতে, আমাদের ফুলের বনে তখন রঙিন প্রজাপতি এসে বসেছে। এবং বাড়িতে ছোটোমামা এসেছে তার ফুটফুটে ছেলেমেয়েদের নিয়ে। (Little Magazine)
সরব অশান্তিতে আমার খুব ভয়, কারণ তা প্রায় এক নিকষ অন্ধকারের দিকে পৌঁছে যায়, অবশ্য আমার নীরব অশান্তিতেও ভয় হয়, নীরবতা আরও কঠিন, রক্ত তাতে নীরবে ঝরে। (Little Magazine)
তবু আমাদের জীবনে প্রদীপ জ্বলে সন্ধেবেলায়, হঠাৎ শ্রাবণ আসে ঝমঝমিয়ে, শরৎ আসে উৎসব নিয়ে। একঝাঁক টিয়া আসে আমাদের ফুলবনে, আমাদের গীতবিতানে, আমাদের অশ্রু মুছিয়ে তারা আবার উড়ে যায় দূরদেশের কোনো সরল বালিকার কাছে। (Little Magazine)
(বানান অপরিবর্তিত)\
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।
 
								 
								 
								 
															 
											
 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								 
								