মহম্মদ ইউনুসের (Md. Yunus) সঙ্গে দেখা হলে আমি বলবো,‘’আপনার কি মনে আছে আমাদের দেখা হয়েছিল, একবার বা দু’বার, ইউরোপে? সম্ভবত ফ্রান্সের দোভিলে। উইমেন’স ফোরামের প্রোগ্রামে। সম্ভবত সাল ছিল ২০০৫। গালা ডিনারে অথবা লাঞ্চে এক টেবিলে আমাদের বসার ব্যবস্থা হয়েছিল, যে টেবিলে বড় বড় লোক ছিলেন। চেরি ব্লেয়ার ছিলেন, সে কথা মনে আছে। আমি সম্ভবত কী-নোট স্পিকার ছিলাম সেবার।(Md. Yunus)
আপনি খাবার টেবিলে বেশ কিছুক্ষণ আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, খাবার শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কিছুক্ষণ। আপনি বার বার বলছিলেন, ”দেশে চলে আসুন, দেশে চলে আসুন”। আমি বলেছিলাম, ”কী করে যাবো? আমাকে তো দেশের সরকার যেতে দেয় না দেশে”। আপনি বলেছিলেন, ”যেতে দেয় না আবার কী? ওটা তো আপনার দেশ, আপনার দেশে আপনার যাওয়ার, থাকার অধিকার আপনার জন্মগত, আপনাকে বাধা দেওয়ার রাইট কোনও সরকারের নেই”।(Md. Yunus)

আমি দুঃখ করে বলেছি, ”আমি তো দূতাবাসে গেলাম কতবার, আমাকে ভিসাও দেয় না, আমার বাংলাদেশের পাসপোর্ট রিনিউও করে না”। আপনি বলেছিলেন, ”রিনিউ করবে না, বললেই হলো? দেশের মেয়ে দেশে চলে আসুন তো!” আমি বলেছিলাম, ”আপনি তাহলে চেষ্টা করুন। সরকারকে বলুন। আপনি বললে নিশ্চয়ই হবে।” আপনি কথা দিয়েছিলেন আপনি চেষ্টা করবেন। আজ বহু বছর পর জানতে ইচ্ছে করছে, আপনি কি আমাকে দেশে ফেরাবার চেষ্টা করেছিলেন? সরকারকে বলেছিলেন আমার সম্পর্কে কিছু? হয়তো তখন, যে কোনও কারণেই হোক কিছু করা আপনার পক্ষে সম্ভব হয়নি। (Md. Yunus)
কিন্তু এখন তো আপনি দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ধারণ করে আছেন। এখন কি আর আগের মতো বলবেন না, ”কী এত বাইরে বাইরে থাকছেন, দেশের মেয়ে দেশে চলে আসুন”? আগের মতো কি বলবেন না ”ও দেশ তো আপনার দেশ, আপনার দেশে আপনার যাওয়ার, থাকার অধিকার আপনার জন্মগত, আপনাকে বাধা দেওয়ার রাইট কোনও সরকারের নেই”? (Md. Yunus)

বলুন আবার আগের মতো। দেশে ফিরতে দিন। এখন তো আপনার হাতেই সব। নাকি ভয় পাচ্ছেন? আপনাকে ঘিরে আছে যারা, তারা যে সবাই ইসলামী মৌলবাদি, তা তো আমার চেয়ে বেশি আপনি জানেন। আপনি কি ভয় পাচ্ছেন আমাকে সাহায্য করলে আপনার বিরুদ্ধে সরব হবে আপনার নতুন জিহাদি বন্ধুরা? শুধু আমার মুণ্ডুই নয়, আপনার মুণ্ডুও কেটে ফেলে রাখবে ঢাকার রাস্তায়? (Md. Yunus)
কাদের নিয়ে শেষ বয়সে সংসার করছেন? অনুতাপ হয় না? আমার তো নির্বাসনেই কেটে গেল ৩০ বছর। বাকি ক’টা বছর, যতদিন আছি, কেটে যাবে। এই অহংকার নিয়ে অন্তত আমি মরতে পারবো যে, কোনও সুযোগ সুবিধের জন্য দেশের শত্রুদের সঙ্গে আপোস করিনি। আপনার কি এমন কোনও অহংকার আছে?’’ (Md. Yunus)
এখানে ওখানে গিয়ে গলা কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে শিবিরকর্মী আবু সাইদের মৃত্যুর বর্ণনা দেওয়া আর স্বাধীনতা স্বাধীনতা বলে চেঁচানো তাঁকে মানায় না। তাঁকে মনে রাখতে হবে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, সেই স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য যতই তিনি দু হাত দুদিকে প্রসারিত করুন না কেন, কাজ হবে না।
ইউনুস কি আমাকে কোনও উত্তর দেবেন? সবাই জানি, দেবেন না। কী হচ্ছে বাংলাদেশে? যাকেই পছন্দ নয়, তাকেই হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। কোনও ভিন্নমত, ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শকে বরদাস্ত করা হচ্ছে না। হয় খুন করা হচ্ছে, নয় জেলে ভরা হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা তাদের সাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থীর মুখোশ খুলে ফেলেছে। তারা মেধাবী শিক্ষার্থীও নয়, তারা বৈষম্যবিরোধীও নয়। বরং বৈষম্যে প্রচণ্ড বিশ্বাস তাদের। সরকারের পতন হয়ে গেছে, জামাতেইসলামপন্থী এন জি ও সরকার বসানো হয়ে গেছে। এখন তারা তাদের আসল চেহারায় ধরা দিয়েছে। তারা জামাতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন শিবির এবং হিযবুত তাহরীর নামের জঙ্গি গোষ্ঠী। (Md. Yunus)
হিজবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করেছে পৃথিবীর অনেক দেশই, যেমন, জার্মানী, রাশিয়া, অস্ট্রিয়া, যুক্তরাজ্য, মিশর, জর্ডান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, সৌদি আরব, কাজাকিস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং এশিয়া আর আরবের আরও নানা দেশ। এই সংগঠনের উদ্দেশ্য জিহাদ করা, পৃথিবীর সব অমুসলিমকে হত্যা করা, পৃথিবী শুধু মুসলিমের বসবাসের জন্য রাখা, এবং ইসলামের খলিফা প্রতিষ্ঠিত করা। (Md. Yunus)

হাসিনার পতন হওয়ার পর ইউনুস এসে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীরের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন, জামাতে ইসলামির ওপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা তুলেছেন। এখন হিজবুত তাহরীর সংগঠনটির জঙ্গিদের নিয়ে ইউনুস সুদূর আমেরিকায় পাড়ি দিয়ে সারা বিশ্বকে জঙ্গি মাহফুজ আলমকে দেখিয়ে উচ্ছসিত প্রশংসা করেছেন, বলেছেন সে-ই এঁকেছে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের নীল নকশা। (Md. Yunus)
গণঅভ্যুত্থান হঠাৎ করে হওয়া কোনও বিপ্লব নয়, ইসলামি জঙ্গিদের কতল করার জন্য যে আমেরিকা শত শত বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে, সে আমেরিকা আনন্দে হাততালি দিয়েছে, এমনকী প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনও হাততালি দিয়েছেন। মাহফুজ আলম শিক্ষার্থী সেজে বাংলাদেশের বোকা মানুষদের দ্বিগুণ বোকা বানিয়েছিল, আর ইউনুস আমেরিকার অন্দরমহলে এক জঙ্গিকে মহান বিল্পবী সাজিয়ে ঢুকিয়ে বুদ্ধিমান মানুষদের বোকা বানিয়েছেন। বোকা বানাবার প্রতিযোগিতায় জঙ্গি মাহফুজকে হারিয়ে দিয়েছেন ইউনুস। নোবেল কি তিনি খামোকা পেয়েছিলেন? (Md. Yunus)

যত জিহাদি জঙ্গি ছিল কারাগারে, সবাইকে ইউনুস সরকার মুক্তি দিয়েছে। কিছুদিন আগে জঙ্গী সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৩২ জন সদস্যকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। শিবির-তাহরীর গোষ্ঠী কিছুদিন আগে ঢাকার একটি অঞ্চলে ঈদের নামাজের জায়গায় পূজা হতে দেবে না জানিয়ে দিয়েছে, কারণ এরা মনে করে ঈদ পবিত্র, পূজা অপবিত্র। (Md. Yunus)
ইউনুস দেশকে মোটেও ভালবাসেন না। ভালবাসলে তিনি দেশের মব লিঞ্চিং দূর করার চেষ্টা করতেন। হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে প্রচণ্ড ঘৃণা করতেন, ৭১ সালে বাংলাদেশকে ‘বটমলেস বাস্কেট’ বা তলাহীন ঝুড়ি বলে গালি দিয়েছিলেন, তিনিও নোবেল পিস প্রাইজ পেয়েছিলেন। সুতরাং কেউ নোবেল পিস প্রাইজ পেলেই ভেবে নেওয়ার কোনও দরকার নেই তিনি অটোমেটিক্যালি বাংলাদেশের শুভাকাঙ্ক্ষী। (Md. Yunus)

নিষিদ্ধ ইসলামী সন্ত্রাসী দল হিজবুত তাহরীরের নেতা মাহফুজ আলম মুহম্মদ ইউনুসের বিশেষ সহকারী? নাকি মাহফুজ আলমের বিশেষ সহকারী মুহম্মদ ইউনুস? আমার কিন্তু মনে হচ্ছে মাহফুজ আলমের বিশেষ সহকারী মুহম্মদ ইউনুস। হাসিনার অপমানের প্রতিশোধ নিতে ইউনুস স্বেচ্ছায় সন্ত্রাসীদের সেবক হলেন। দেশের ভেতর অরাজকতা চলছেই, যাকে ইচ্ছে তাকে সন্ত্রাসীরা হেনস্থা করছে, খুন করছে; সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই ইউনুসের। শিবির-তাহরীর তাঁকে দেশের প্রধান বানিয়েছে, এই কৃতজ্ঞতা তাঁকে দিয়ে খুব সহজেই ওদের বিশেষ সহকারীর কাজ নয় শুধু, ওদের নওকর, বা আর্দালি চাপরাশির কাজও করাতে পারে।
হাসিনাও ক্ষমতায় বসেছিলেন তাঁর বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে। বাবার নাম দিয়ে, ছবি দিয়ে, ভাস্কর্য দিয়ে দেশ ভরে ফেলেছেন। আর মানুষের মস্তিস্ক খুলে ঠেসে ভরে দিয়েছেন ইসলাম, ইসলাম আর ইসলাম। তিনি ভেবেছিলেন ইসলামের নেশায় এরা বুঁদ থাকবে, বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পাবে, আর তিনি গদিতে বসে অনন্তকাল আরাম করবেন। যদি এদের ভেতর থেকে দু একটা জিহাদি ভুল করে জন্ম নিয়ে নেয়, ব্যস গুলি চালিয়ে দেবেন, বিশ্ব খুশি থাকবে, তিনিও খুশি থাকবেন। তিনি ভাবেননি ইসলামের নেশায় বুঁদ হওয়াগুলো সবাই যে একদিন জিহাদি হয়ে উঠবে, তখন গুলি চালিয়ে অল্প কিছুকে হয়তো মেরে ফেলা যাবে, সবাইকে যাবে না। যে সাপ পুষেছিলেন তিনি, সেই সাপ ফণা তুলে দাঁড়াতেই তাঁকে পগার পার হতে হলো।

যতই নওকর সাজুন না কেন ইউনুস, যদি তিনি ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বাকস্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তাঁকেও ছোবল দেবে জিহাদিরা। সুতরাং হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে গেছে, পালিয়ে যাওয়ার চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে তিনি ভালোয় ভালোয় কেটে পড়ুন, নিশ্চিন্তে বিশ্রাম করুন, কন্যার অপেরা সংগীত শুনুন, সেটাই এই বয়সের জন্য উত্তম। এখানে ওখানে গিয়ে গলা কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে শিবিরকর্মী আবু সাইদের মৃত্যুর বর্ণনা দেওয়া আর স্বাধীনতা স্বাধীনতা বলে চেঁচানো তাঁকে মানায় না। তাঁকে মনে রাখতে হবে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, সেই স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য যতই তিনি দু হাত দুদিকে প্রসারিত করুন না কেন, কাজ হবে না।
ইউনুসের মতো অশীতিপর মহাজন এন জি ও চালাতে গিয়েই দরিদ্রের প্রচুর সর্বনাশ করেছেন, দেশ চালাতে গিয়ে ১৭ কোটি মানুষের সমূহ সর্বনাশ করবেন, এতে কোনও সন্দেহ নেই। তাঁর হয়ে যে জিহাদিরা দেশ চালাচ্ছে, তাদের তো বড় সড় লাভ হচ্ছেই। তাছাড়া এর মধ্যে লাভবান হচ্ছে জামাত শিবির রাজাকার গোষ্ঠী সহ সব ধর্মান্ধ গোষ্ঠী। তারা যাকে তাকে খুন করছে, যাকে তাকে দেশছাড়া করছে, যাকে তাকে হেনস্থা করছে। যাকে তাকে চাকরিতে নিয়োগ দিচ্ছে, যাকে তাকে ক্ষমতায় বসাচ্ছে। ইউনুস কিন্তু এসবের খবরও রাখেন না, অথবা খবর রাখলেও কী করে সন্ত্রাস আর অরাজকতা বন্ধ করতে হয়, জানেন বলে মনে হয় না। জানলে শান্তি পুরস্কার পাওয়া লোকের অধীনে এত অশান্তি কেন?
ছবি সৌজন্য: EN.HABERLER.COM, Rtv, Free Malaysia Today
____________________________________________________
পড়ুন:
- সব ধর্মের সব জাতের পুরুষই নারীহত্যা করে
- শাস্তি দিয়ে ধর্ষণ বন্ধ হয় কি?
- ভ্যালেন্টাইন’স ডে
- ধর্ষণহীন দিন
- নারী দিবসে
- রোজায় আমি কী ভাবছি,
- বাঁধ ভেঙে দাও
- টাঙ্গাইল শাড়ির জি আই বাংলাদেশের প্রাপ্য কেন?
- তারকাময় রাজনীতি ভাল নয়
- ধর্মানুভূতি নয়, এ ধূর্তদের কৌশল
- লিঙ্গসূত্র (১)
- লিঙ্গসূত্র (২)
- হিন্দু-মুসলমানের বিয়ের পরিণতি
- বাংলাদেশ আজ প্রশ্নের সম্মুখীন
- ধর্ষণ পুরুষতন্ত্রের উপসর্গ
- বাংলাদেশ দখল করে নিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী ইসলামী সন্ত্রাসী
- হারাম হালালের সংজ্ঞার বদল দরকার
- আমার দুঃখিনী বাংলাদেশ
____________________________________________________
বর্তমান বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদী মুখ তসলিমা নাসরিন। বাঙালি হয়েও তিনি আন্তর্জাতিক। গদ্য ও কবিতার সব শাখাতেই অনায়াস বিচরণ তসলিমার। সাহিত্য-সাধনার পাশাপাশি তাঁকে আমরা চিনি ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী ও নারীবাদী একজন চিন্তাশীল হিসেবেও। নারীর অধিকার, মানবাধিকার, বাক-স্বাধীনতা, মানববাদ, বিজ্ঞান ও সহনশীলতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে চলেছেন তিনি। লেখালিখির পাশাপাশি তাঁর বিশ্বব্যাপী উদার ও মুক্তচিন্তার জন্য দেশে-বিদেশে তিনি সম্মানিত হয়েছেন একগুচ্ছ পুরস্কার ও সম্মাননায়। 'নির্বাচিত কলাম' ও আত্মজীবনী গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন দু'দুবার আনন্দ পুরস্কার। পেয়েছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের শাখারভ পুরস্কার। ফ্রান্স সরকারের মানবাধিকার পুরস্কার, কার্ট টুকোলস্কি পুরস্কার সহ একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা। লিখেছেন 'ফেরা', 'লজ্জা', 'ফরাসি প্রেমিক'-এর মতো অসামান্য উপন্যাস; বেশ কিছু ছোটগল্প, আত্মজীবনীমূলক রচনা, ব্যক্তিগত ও সামাজিক নানা বিষয়ে অসংখ্য প্রবন্ধ।