Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়(১৯১৯-২০১৬): নদী থেকে সাগরে

অরিজিৎ মৈত্র

মার্চ ২৯, ২০২৫

Arabinda Mukhopadhyay
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

(Arabinda Mukhopadhyay)

তাঁর তৈরি করা ছবি যতবার দেখেছি, এক অনাবিল আনন্দ পেয়েছি। এক কঠিন সময়ে একদিন তাঁর ‘পাকাদেখা’ ছবিটি দেখে মন থেকে সব মেঘ সরে গিয়েছিল। চার্লি চ্যাপলিনের অনুরাগী, রবীন্দ্রনাথের ছাত্র, বনফুলের ভাই, বাংলা চলচ্চিত্রের ঢুলুদা আর বাংলা ছায়াছবির অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দেন বিমল রায়ের কন্যা রিঙ্কি ভট্টাচার্য। ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে কলকাতার চাপলিন হলে বিমল রায় মেমোরিয়াল কমিটির পক্ষ থেকে অরবিন্দদা সহ আরও কয়েকজনকে সম্মানিত করা হয়েছিল। (Arabinda Mukhopadhyay)

সেই সময় স্মারকগ্রন্থের প্রয়োজনে অরবিন্দদার কথা লিপিবদ্ধ করার উদ্দেশে প্রায়ই ওঁর টালিগঞ্জের বাড়িতে যেতাম। অবাক হয়ে যেতাম তাঁর স্মৃতিশক্তি দেখে। ওঁর দেখা নিউ থিয়েটার্স ষ্টুডিও দিকপাল মানুষদের কর্মকান্ড, কলাকুশলীদের কথা, ষ্টুডিওর প্রাঙ্গনে রবীন্দ্রনাথের আসা এবং নটির পূজা ছবির শুটিং-এর স্মৃতি, সব অবলীলায় বলে যেতেন। শুনতে শুনতে মনে হত বাংলা ছায়াছবির জীবন্ত encyclopidia কথা বলছেন। মনে হয়েছিল অরবিন্দদার কথাগুলো যদি ধারাবাহিকভাবে ধরে রাখা যায়, পরে এর থেকেই বাংলা চলচ্চিত্রের অতীত নিয়ে একটা প্রামান্য গ্রন্থ হতে পারে। কিন্তু আমরা সঠিক সময় সঠিক কাজ করে উঠতে পারি না। (Arabinda Mukhopadhyay)

যাইহোক কাজের সূত্রে অরবিন্দদার বাড়ি যাতায়াত শুরু হল। টালিগঞ্জের সিনেমাপাড়ার পুরোনো গল্প শোনার লোভে আরও যেতাম। যখনই যেতাম দেখতাম উনি এক গোছা কাগজ নিয়ে অনেক কিছু লিখে চলেছেন। পরে ওঁর কাছ থেকেই শুনেছিলাম ‘শ্রীগুপ্ত’ ছদ্মনামে উনি সাহিত্যচৰ্চা করেন নবকল্লোল পত্রিকায়। মাঝে মাঝে ওঁদের বিহারের ভাগলপুরে শৈশবের স্মৃতিরোমন্থন করতেন, শুনতে বেশ লাগত। অরবিন্দদার কাছেই শুনেছিলাম যে বিমল রায়ের এক নিকট আত্মীয় শান্তিনিকেতনে অধ্যাপনা করতেন। ভীষণ শ্রদ্ধা করতেন নিউ থিয়েটার্স স্টুডিওর কর্ণধার বি.এন.সরকারকে। মি.বড়ুয়া মানে প্রমথেশ বড়ুয়ার কথাও বলতেন প্রায়ই। (Arabinda Mukhopadhyay)

একদিন গল্প করতে করতে বললেন, ‘তোমরা বিমলদার নামে কলকাতার একটা রাস্তার নামকরণ করবার জন্য প্রস্তাব পাঠাও কর্পোরেশনের কাছে, আমরা সবাই সই করব।’ ওঁর কথা মতো বিমল রায়ের কন্যা রিঙ্কিমাসির সঙ্গে কথা বলে কলকাতার তৎকালীন মহানাগরিক সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কাছে শহরের বিশিষ্ট নাগরিকদের সই সংগ্রহ করে একটা চিঠি পাঠানো হয়েছিল কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। মনে আছে সেই সময় অরবিন্দদা নিজে ফোন করে বহু অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরকে অনুরোধ করেন তাঁরা যাতে এই চিঠিতে সই দেন, সেই জন্য। যখন গল্প করতেন তখন কিন্তু নিজের ছবি সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বলতেন না, অন্য পরিচালকদের কাজ নিয়ে আলোচনা এবং প্রশংসা করতেন। (Arabinda Mukhopadhyay)

একদিন একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন, সেখানে উপস্থিত ছিলেন তপনদা, নির্মলদা, মাধবীদি এবং আরও কয়েকজন। বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘মাঝে মধ্যে মনে হয় যদি তপনের মতো একটা ছবি করতে পারতাম!’ একটু থেমে তপনদার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, ‘আরও একটা সুন্দর ছবি তৈরি কর, যাতে চলে যাওয়ার আগে তৃপ্তি নিয়ে যেতে পারি।’ উনি নিজে কত বড় পরিচালক! কিন্তু কী মুক্তকণ্ঠে সবার কাজের প্রশংসা করতেন! বাংলা ছায়া ছবির স্টারদের নিয়ে ছবি তৈরি করেছেন, সেইসব ছবি বক্সঅফিসে সুপার ডুপার হিট করেছে কিন্ত কোনও অহংকার অরবিন্দদাকে স্পর্শ করেনি। সাহিত্যভিত্তিক ছবি নির্মাণ করেছেন, মানুষ নির্ভেজাল আনন্দ পেয়েছে সেইসব ছবি দেখে। একদিন খুব অল্প সময়ের জন্য সকালের দিকে অরবিন্দদার বাড়ি গিয়েছিলাম, খুব তাড়াহুড়ো করছি দেখে উনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন আজকে এত তাড়া করছি কেন। যখন শুনলেন নীচে ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে এসেছি আর ট্যাক্সিতে আমার এক আত্মীয় বসে আছে, তখন উনি সমান তাড়া করে আমার সঙ্গে কাজ শেষ করে খালি পায়ে নীচে নেমে এলেন ওই আত্মিয়ার সঙ্গে দেখা করতে। (Arabinda Mukhopadhyay)

পরনে শুধু লুঙ্গি আর গেঞ্জি। তাড়াতাড়িতে গায়ে জামাটা চাপাতেও ভুলে গেছেন! এমনই সাধারণ জীবনযাপন করতেন তিনি। তাঁর একাধিক ছবিতে উত্তমকুমার অভিনয় করেছিলেন তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই তাঁর কথায় ও গল্পে উত্তমকুমারের প্রসঙ্গ উঠে আসত। অনেক অজানা কথাও শুনতে পেতাম। আজ আর সব মনে নেই, শুধু তাই নয় সব কথা প্রকাশ্যে বলাটাও সঙ্গত নয়।

আরও পড়ুন: অলোক আলপনায়

সদাহাস্যময় সরল মনের মানুষ অরবিন্দদা বিমল রায়ের মেয়ে রিঙ্কিমাসির নামটা মাঝে মধ্যেই ভুলে গিয়ে রিঙ্কু বলে ডাকতেন আর সেটা শুনে রিঙ্কিমাসি হেসে বলতেন, ‘ঢুলুদা, আমার নাম রিঙ্কি, রিঙ্কু তো শর্মিলা ঠাকুরের ডাকনাম।’ আমি এক একসময় মজা করে অরবিন্দদাকে বলতাম, ‘আপনাদের বাড়ির সকলে সুন্দর দেখতে।’ সত্যিই ওঁদের বাড়ির সকলে সুন্দর! দীর্ঘদিন ধরে ওঁর বাড়িতে যাতায়াত করতে করতে ওঁদের বাড়ির সকলের সঙ্গে একটা পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল এবং আজও তা অটুট রয়েছে। ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত তথাকথিত চলচ্চিত্রবিশেষজ্ঞরা আরও অনেক চলচ্চিত্রপরিচালকদের মতো অরবিন্দদা এবং ওঁর কাজ নিয়ে নীরব থেকেছেন! (Arabinda Mukhopadhyay)

ওঁরা আসলে সত্যজিৎ, ঋত্বিক আর মৃণালভজনা ছাড়া কোনও কিছুই ভাবতে পারেননি কখনও! নিজের বিষয় আক্ষেপ না করলেও উনি মাঝে মধ্যে কার্তিক চট্টোপাধ্যায়, নির্মল দে, অজয় কর প্রমুখ পরিচালকদের সঠিক মূল্যায়ন না হওয়াতে মন খারাপ করতেন। পরিণত বয়সেই চলে গিয়েছিলেন কিন্তু শেষ দেখাটা আমার আর দেখা হয়নি তবে সাংবাদিকতার দায়িত্ব ঘাড়ের ওপর থাকাতে ওঁর প্রস্থানের সংবাদটা যত্ন নিয়ে পরিবেশনের সুযোগ পেয়েছিলাম। (Arabinda Mukhopadhyay)

অরিজিৎ মৈত্র পেশায় সাংবাদিক। তপন সিংহ ফাউন্ডেশনের সম্পাদক অরিজিৎ পুরনো কলকাতা নিয়ে চর্চা করতে ভালবাসেন। নিয়মিত লেখালিখি করেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। প্রকাশিত বই: অনুভবে তপন সিনহা, ছায়ালোকের নীরব পথিক বিমল রায়, চিরপথের সঙ্গী - সত্য সাই বাবা, বন্দনা, কাছে রবে ইত্যাদি।

Picture of অরিজিৎ মৈত্র

অরিজিৎ মৈত্র

অরিজিৎ মৈত্র পেশায় সাংবাদিক। তপন সিংহ ফাউন্ডেশনের সম্পাদক অরিজিৎ পুরনো কলকাতা নিয়ে চর্চা করতে ভালবাসেন। নিয়মিত লেখালিখি করেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। প্রকাশিত বই: অনুভবে তপন সিনহা, ছায়ালোকের নীরব পথিক বিমল রায়, চিরপথের সঙ্গী - সত্য সাই বাবা, বন্দনা, কাছে রবে ইত্যাদি।
Picture of অরিজিৎ মৈত্র

অরিজিৎ মৈত্র

অরিজিৎ মৈত্র পেশায় সাংবাদিক। তপন সিংহ ফাউন্ডেশনের সম্পাদক অরিজিৎ পুরনো কলকাতা নিয়ে চর্চা করতে ভালবাসেন। নিয়মিত লেখালিখি করেন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। প্রকাশিত বই: অনুভবে তপন সিনহা, ছায়ালোকের নীরব পথিক বিমল রায়, চিরপথের সঙ্গী - সত্য সাই বাবা, বন্দনা, কাছে রবে ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস