শারদীয়া বর্তমান তার জন্মলগ্ন থেকেই শারদ সংখ্যার মিছিলে একেবারে “ফার্স্ট বয়”। বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় এর আগেও প্রচুর পুজোসংখ্যার জন্ম হয়েছে, পরেও হয়েছে। কিন্তু শারদীয়া বর্তমানকে তার মানের নিরিখে এবং সর্বোপরি বিক্রির দিক থেকে এক চুলও কেউ নড়াতে পারল না। এই ১৪২৭ সাল অবধিও। কেন তার এই অভূতপূর্ব সাফল্য, তা ভাবতে বহু তথাকথিত “পণ্ডিতেরাও” হিমসিম খান। হিমসিম খান এই কলকাতায় বহু সংবাদপত্রগোষ্ঠীর লক্ষাধিক টাকার বেতনভূক স্ট্র্যাটেজিস্টরাও। কিসের জোরে “শারদীয়া বর্তমান”-এর এত বিপুল জনপ্রিয়তা, এইটা বলতে গেলে আমাকে স্মরণ করতে হবে বর্তমান সংবাদপত্রের জনক শ্রী বরুণ সেনগুপ্তকে। এ কথা সকলেরই জানা, তিনি এই সংবাদপত্র গোষ্ঠী তৈরি করার আগে আনন্দবাজার পত্রিকার রাজনৈতিক সংবাদদাতা ছিলেন। পুরোদস্তুর সাংবাদিক বরুণবাবুর খ্যাতি তখন মধ্যগগনে।
[the_ad id=”266918″]
তাঁর রাজনৈতিক কলাম পড়বার জন্য পাঠকরা উন্মুখ হয়ে বসে থাকতেন প্রতি সপ্তাহে। আর যাদের উদ্দেশে তাঁর এই লেখাগুলি, সেইসব মন্ত্রী-সান্ত্রীরাও সেই কলামকে উপেক্ষা করতে পারতেন না। বাংলা সংবাদপত্র জগতে বরুণ সেনগুপ্ত নামটি তখন ধ্রুবতারার মতো জ্বলজ্বল করছে। যে কোনও জায়গায় তাঁর উপস্থিতিই বুঝিয়ে দিত বরুণ সেনগুপ্তর ক্যারিশমা কোন পর্যায়ে। এইরকম খ্যাতির মধ্যগগনে যখন তিনি, তখনই পরিকল্পনা করেন এমন এক সংবাদপত্র তিনি প্রকাশ করতে চান, যা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে। ফলে আনন্দবাজার থেকে পদত্যাগ করে তিনি “বর্তমান” কাগজ তৈরির দিকে মন দেন। ১৯৮৪ সালের ৭ ডিসেম্বর এই কাগজ প্রকাশিত হয়। বর্তমান প্রকাশিত হবার পরেই বোঝা যায়, সম্পাদকের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। “বর্তমান” সংবাদপত্রকে বাঙালি সমাজের মধ্যবিত্তরা গ্রহণ করল। শুধু মধ্যবিত্তরা নয় এই সমাজের নব্য শিক্ষিতরাও এই কাগজের প্রতি আকৃষ্ট হন। সংবাদপত্রের হাত ধরেই জন্ম হয় পূজাবার্ষিকী অর্থাৎ শারদীয়া পত্রিকার। অসম্ভব পরিশ্রমী ও উদ্যোগী এই পুরুষকে খুব কাছ থেকে এর আগে এমন করে দেখার সুযোগ ঘটেনি। তিনি যখন জলদগম্ভীর স্বরে বার্তাবিভাগে দাঁড়িয়ে সকলকে নির্দেশ দিতেন তখন সমস্ত কর্মীই সেই আদেশ মানতে বাধ্য হতেন।
বর্তমান শারদীয়া প্রথম থেকেই একটি সুনির্দিষ্ট নীতি মেনে চলেছে। বরুণবাবুর কড়া নির্দেশ ছিল এটির চরিত্র হবে একেবারে নিটোল এক পারিবারিক পত্রিকার। যাতে একই পরিবারের সব সদস্যদের হাতে হাতে এটি ঘুরতে পারে। কোনও অশ্লীলতা বা দুর্বোধ্য কোনও সাহিত্য যাতে এই শারদীয়ায় প্রকাশিত না হয়। আর শারদীয়ার দাম থাকবে মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে।
অথচ তাঁর কর্মচারীদের তিনি প্রাণের থেকেও বেশি ভালোবাসতেন। বর্তমান সংবাদপত্রে বরুণবাবু একঝাঁক তরুণ কর্মী নির্বাচন করেন। এই তরুণ গোষ্ঠীর প্রতি আস্থা রাখতেন বলেই হয়তো তাঁর পত্রিকা এত দ্রুত সাফল্যের মুখ দেখেছিল। আমরা যখন এক দল তরুণ সাংবাদিক হিসাবে যোগ দিলাম, তখনও অনেকের গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ধ যায়নি। নতুন চাকরি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু নতুনতর জিনিস উপরি হিসাবে আমরা পেলাম। যেমন নতুন বাড়ি, নতুন চেয়ার-টেবিল, নতুন মেশিন — আধুনিকতার স্পর্শে সব কিছুই যেন তখন ঝাঁ চকচকে ছিল। নানা রকম অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যখন আমাদের যাত্রা শুরু হল। আর তখনই পুজো সংখ্যার পরিকল্পনাও বরুণবাবুর মাথায় এল।
[the_ad id=”266919″]
মনে আছে প্রথমে একটি শারদীয়া পুল-আউট প্রকাশিত হয়েছিল। তারপর থেকেই শারদীয়া বর্তমানের চলার শুরু। দু’একটি শারদীয়া প্রকাশ হবার পরে তিনি শারদীয়ার সম্পাদক নির্বাচিত করলেন কাকলি চক্রবর্তীকে। কাকলি চক্রবর্তীর সম্পাদনায়, বর্তমান শারদীয়া সংখ্যা যখন প্রকাশিত হতে শুরু করে, তখন আমি সংবাদপত্রের অন্য দফতরে কাজ করতাম। তবে কিছুদিনের মধ্যেই চলে আসি “শারদীয়া” দফতরে। শারদীয়ায় কাজ করার সুবাদে, প্রথমেই যেটা দেখলাম, এর কাজ সারা বছর ধরেই চলে।
বরুণ সেনগুপ্তর মতো দক্ষ প্রশাসক আমি জীবনে দেখিনি। এই বর্তমান কাগজেই আমার প্রথম ও শেষ চাকরি। আমার জীবনের প্রায় ৩৪-৩৫ বছর যে এক কোম্পানিতে কেটে গেল, তার কারণ হল, তাঁর কাগজ চালানোর মাস্টারপ্ল্যান। জহুরির চোখের মতো ইনি হীরা চিনতেন, আর তাকে কাজে লাগাতে বিন্দুমাত্র দেরি করতেন না। শারদীয়ার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
[the_ad id=”270084″]
বর্তমান সংবাদপত্রে জবরদস্ত এক সম্পাদকীয় পাতা থাকত। সেই সময় বড় বড় সংবাদপত্রে সব বিখ্যাত কলামনিস্টদের মতো এখানেও কলাম লিখতে শুরু করলেন তিনজন বিখ্যাত লেখক। তাঁর পরিকল্পনা ছিল, বাংলা সাহিত্য জগতের প্রবীণ সাহিত্যিকদের দিয়ে পোস্ট এডিটোরিয়াল লেখাবেন। তাই আমাদের পোস্ট এডিটোরিয়ালে অন্যান্য লেখকদের সঙ্গে তিনি যুক্ত করলেন আশাপূর্ণা দেবী, মহাশ্বেতা দেবী ও সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মতো লেখকদের। পাঠকরাও এঁদের লেখা গ্রহণ করলেন। আশাপূর্ণা দেবীর “ঢেউ গুনছি সাগরের”, মহাশ্বেতা দেবীর “জানালা খুলে” আর সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের “খোলা হাতে, খোলা মনে”-এর জনপ্রিয়তা শারদীয়া বর্তমানকে তৈরি করতে অনেক সাহায্য করেছিল। বরুণবাবু যেন মনে মনে ঠিক করেই ফেলেছিলেন শারদীয়া বর্তমানের চরিত্র কী হবে। এই সব সরস্বতীর বরপুত্রদেরই শারদীয়া বর্তমানের লেখকগোষ্ঠীর পুরোভাগে রাখলেন।

বর্তমান শারদীয়া প্রথম থেকেই একটি সুনির্দিষ্ট নীতি মেনে চলেছে। বরুণবাবুর কড়া নির্দেশ ছিল, এটির চরিত্র হবে একেবারে নিটোল এক পারিবারিক পত্রিকার। যাতে একই পরিবারের সব সদস্যদের হাতে হাতে এটি ঘুরতে পারে। কোনও অশ্লীলতা বা দুর্বোধ্য কোনও সাহিত্য যাতে এই শারদীয়ায় প্রকাশিত না হয়। আর শারদীয়ার দাম থাকবে মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে। ওঁর ওই নির্দেশ শারদীয়ার পরিকল্পনার শুরুতেই প্রায় শপথবাক্য পাঠের মতো মনে মনে আওড়াতে হত সবাইকে। আজকের দিনে কোনও সাহিত্য পত্রিকা এইসব শর্ত মেনে প্রকাশিত হয় বলে আমার জানা নেই। কিন্তু শারদীয়া বর্তমান এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে দিনের পর দিন। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা ও সর্বোচ্চ বিক্রিতে প্রথম হওয়া এই পত্রিকা প্রমাণ করে দিয়েছে, এও সম্ভব। কারণ পাঠকরা খুব সহজেই এই পত্রিকাকে পছন্দ করেছিল। বর্তমান শারদীয়ার জনপ্রিয় হওয়ার এটাই প্রধান কারণ।
[the_ad id=”270085″]
প্রতি বছর শারদীয়ার শেষে এই দফতরের বিজয়ার কার্ড লেখকরা যখন পেতেন, তখন খুব খুশি হয়ে আমাদের তা জানাতেন। সম্ভবত এই প্রথাটি এখনও চালু আছে। পুজো সংখ্যার কাজ একদম ক্যালেন্ডারের পাতা ধরে হত। জানুয়ারি মাসেই পুজোর মিটিং হয়ে যেত। কিন্তু সম্পূর্ণ পত্রিকার পরিকল্পনা কী হবে, তার সবটা তখন ঠিক হত না। প্রথমেই ঠিক হত উপন্যাস কারা লিখবেন। আশাপূর্ণা দেবী, মহাশ্বেতা দেবী, প্রফুল্ল রায়ের উপন্যাস বাঁধা থাকত। তার সঙ্গে যুক্ত হল তরুণ ঔপন্যাসিকদের উপন্যাস। বর্তমান শারদীয়ায় কে না লিখেছেন! প্রবীণদের কথা তো আগেই উল্লেখ করেছি, এছাড়াও সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, শংকর, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, দেবেশ রায়, বুদ্ধদেব গুহ, দিব্যেন্দু পালিত, বাণী বসু, নবনীতা দেবসেন, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, শৈবাল মিত্র, সমরেশ মজুমদার, হুমায়ুন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, সেলিনা হোসেন, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, ভগীরথ মিশ্র, অমর মিত্র, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অনিতা অগ্নিহোত্রী, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী কত নাম বলব। মজার ব্যাপার হল বরুণবাবু সম্পূর্ণভাবে আধুনিক কবিতা বাদ দিলেও ছোটদের বিভাগে ছড়া রেখে দিয়েছিলেন। কারণ শিশুরা যে ছড়া পছন্দ করে তা তিনি জানতেন। ফলে বাংলা সাহিত্যের প্রসিদ্ধ প্রায় সব ছড়াকারের কাছেই বর্তমান শারদীয়ার লেখার নিমন্ত্রণ পৌঁছত বা এখনও পৌঁছয়। অন্নদাশঙ্কর রায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, শঙ্খ ঘোষ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সাধনা মুখোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকার, কে না ছড়া লিখেছেন।
শারদীয়া বর্তমান সাহিত্য জগতের প্রচুর নতুন লেখকদের পাঠকদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছে। শারদীয়ার সাফল্য এল এইসব লেখকদের হাত ধরেই। এঁদের দিয়ে নানা ধরনের সাহিত্যকেন্দ্রিক রচনা লেখানো হল। এই বিশেষ লেখাগুলির আকর্ষণ উপন্যাস বা গল্পের থেকে কিছু কম নয়। আর অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে আমাদের এই বিশেষ রচনাগুলির পরিকল্পনা করা হত। এই বিশেষ রচনাগুলি শারদীয়া বিক্রির এটিও একটি বড় কারণ।
বরুণবাবু সম্পূর্ণভাবে আধুনিক কবিতা বাদ দিলেও ছোটদের বিভাগে ছড়া রেখে দিয়েছিলেন। কারণ শিশুরা যে ছড়া পছন্দ করে তা তিনি জানতেন। ফলে বাংলা সাহিত্যের প্রসিদ্ধ প্রায় সব ছড়াকারের কাছেই বর্তমান শারদীয়ার লেখার নিমন্ত্রণ পৌঁছত বা এখনও পৌঁছয়। অন্নদাশঙ্কর রায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, শঙ্খ ঘোষ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সাধনা মুখোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকার কে না ছড়া লিখেছেন।
মজার কথা শারদীয়া বর্তমানের এই রমরমা, বড় হাউসগুলির কাছে গলার কাঁটার মতো বিঁধতে থাকল। শারদীয়া বর্তমান প্রথম প্রকাশিত হবার আগে এইসব প্রতিষ্ঠানের কল্পনাতেও ছিল না, এইভাবে ফাইনাল ম্যাচে ক্রিজে দাঁড়িয়ে তাদের মার খেতে হবে। বড়ঘরের বড় কথা। কাকলি বা আমার আবার বড়ঘরের সঙ্গে জন্মসূত্রে যোগাযোগ। বড়ঘরের এইসব লেখক-লেখিকারা আমার বা কাকলির কেউ জ্যাঠা, কাকা, পিসি বা দিদি। ওইসব সংস্থার কর্তৃপক্ষেরা এইসব বিখ্যাত লেখকদের দিয়ে বলিয়ে নিলেন, বর্তমান শারদীয়ার সঙ্গে তাঁদের কোনও ওঠাবসা করা যাবে না। একেবারে সম্পর্কে ঢ্যাঁড়া ফেলে দিতে হবে। পিতৃসম লেখকদের মুখ থেকে এইসব শুনে আমরা দু’জন হতবাক হয়েছিলাম প্রথম প্রথম।
[the_ad id=”270086″]
কাকলি চক্রবর্তীর বাবা সন্তোষকুমার ঘোষ ও শ্বশুরমশাই নীরেন্দ্রনাথ চত্রবর্তী। আমারও অবস্থা তথৈবচ — বাবা গৌরকিশোর ঘোষ তখনও ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মী। যেমন কাকলির শ্বশুরমশাই নীরেনবাবুও। আবার ঘটনাচক্রে তাঁরা একই ঘরে পাশাপাশি টেবিলে বসে কাজ করতেন। সেখানে বড় বাড়ির এত বড় নিয়মের নিগড়ে তাঁদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। যখনই ওই বাড়ির কোনও ঘনিষ্ঠ সাহিত্যিককে ফোন করে পুজোর লেখা চেয়েছি, তখনই সেইসব লেখকরা পড়ে গেছেন মহা ফাঁপরে। তাঁরা নানা অজুহাত দিয়ে আমাদের এড়িয়ে যেতেন দিনের পর দিন। সে সব দিনের কথা আজকে মনে পড়লে খুবই মজা লাগে।
[the_ad id=”270086″]
তবে বরুণবাবুর কড়া নির্দেশে ওই সব স্টার লেখক ছাড়াই, শারদীয়া বর্তমান প্রকাশিত হয়েছে ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছে। খুব ধীরেসুস্থে তৈরি হত এই কাগজ। খুবই যত্ন করে আমরা শারদীয়া বর্তমান তৈরির কাজ করতাম, যেমনভাবে মা দুর্গাকে প্রতিবছর মৃৎশিল্পীরা তৈরি করেন। শারদীয়ার পরিকল্পনা করতাম আমরাই। পরিকল্পনাকে কার্যকরী করার জন্য নিজেরাই চলে যেতাম লেখকদের বাড়ি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে পৌঁছে যেতাম অন্য জগতে। আমার সঙ্গে আশাপূর্ণা দেবীর আলাপ হয়েছিল এইভাবেই। আর এইভাবেই মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গেও আমি পরিচিত হই। লেখক প্রফুল্ল রায় আমার কাছে এক বড় বিস্ময়। তাঁর মতো অত বড় ঔপন্যাসিকের কাছ থেকে যে ভালোবাসা ও প্রশ্রয় পেয়েছি তা অভাবনীয়। ২০০৮-এ বরুণ সেনগুপ্ত প্রয়াত হন। তাঁর মৃত্যুর পরে বর্তমান সংবাদপত্রের সম্পাদক হন তাঁর বোন শ্রীমতি শুভা দত্ত। তিনি শারদীয়া বর্তমানেরও প্রধান সম্পাদক ছিলেন। তাঁর অধীনে যখন এই শারদীয়ার কাজ করি তখন তিনিও তাঁর দাদার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। তাই শারদীয়ার ক্ষেত্রে কোনওকিছুরই বদল ঘটেনি। তবে আমি বর্তমান পত্রিকা থেকে গত বছর অবসর নেওয়ার পরে শুভাদিও ২০১৯-এ প্রয়াত হন। এই বছরেও শারদীয়া বর্তমান প্রকাশিত হয়েছে। তবে আশাকরি কর্তৃপক্ষ প্রয়াত বরুণ সেনগুপ্তের নির্দেশেকেই পালন করে গেছেন।
[the_ad id=”270088″]
শারদীয়া বর্তমান তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে পুরো বর্তমান অফিসের আবেগ। লেখা আসা, লেখা জমা দেওয়া, প্রুফ পড়া, ইলাস্ট্রেশন, বিজ্ঞাপন দফতর, মেশিন দফতরে গিয়ে ছাপা দেখা, এমন কত স্মৃতি এই পত্রিকা তৈরির পিছনে যুক্ত আছে। প্রতিটি দফতরের সহকর্মীরা প্রাণপণ প্রচেষ্টায় এই পত্রিকা তৈরি করে। কবে লেখা জমা পড়বে, কবে থেকে কম্পোজ হবে, এমনকি কাগজে কবে থেকে বিজ্ঞাপন বেরোবে, এসবই নির্দিষ্ট আছে। বছরের পর বছর সেই নিয়মের কোনও নড়চড় হয়নি। এই পত্রিকা তৈরি হয় তিল তিল করে। শারদীয়া যেদিন প্রকাশিত হয়, সেদিনকার আনন্দ ঠিক ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। কত ঝড়-জল সহ্য করে, কত বিপদকে তুচ্ছ করে এখনও যে “শারদীয়া বর্তমান” বছরের পর বছর প্রকাশিত হচ্ছে, আর সর্বাধিক বিক্রি হচ্ছে, এটাও কি আনন্দময়ীর এক অপার করুণা নয়? আমার মনে হয় এই আনন্দময়ীর আশীর্বাদই আজ “শারদীয়া বর্তমান”-এর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ।
সাহানা নাগ চৌধুরী দীর্ঘদিন সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত। তিন দশকের কিছু বেশি সময় তিনি বর্তমান সংবাদপত্রে কর্মরত থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। কর্মসূত্রে বরুণ সেনগুপ্ত ও পারিবারিক সূত্রে গৌরকিশোর ঘোষের মতো প্রবাদপ্রতীম সাংবাদিকদের আশীর্বাদধন্য সাহানা বই পড়ে ও পছন্দের বিষয়ে লেখালেখি করে অবসর জীবন অতিবাহিত করেন।
3 Responses
ক্লাস আর মাসে তফাৎ থাকবে সে তো জানা কথাই, কলেজ স্ট্রিট এ গেলে তথাকথিত বড় বাড়ির পত্রিকার পুরনো সংখ্যার এখনও যা ডিমান্ড, তার তুলনায় বর্তমান কেউ চায়ও না, চোখেও পড়ে না।
Barun Sengupta sangbadikotar jagote ek ullekhjogya byaktitwa. Lekhati pore bhalo laglo.
অপূর্ব লাগল পড়তে। কতকিছু জানলাম।