(Muhammad Yunus) যাঁরা নোবেল পুরস্কারকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পুরস্কার মনে করেন এবং বিশ্বাস করেন নোবেল যোগ্য লোকদের দেওয়া হয়, তাঁদের কি এবার ভুল ভেঙেছে? ইউনুস সাহেব তো প্রমাণ করলেন শান্তি পুরস্কার পাওয়া লোক কত অমানবিক, কত অনুদার, কত অবিবেচক হতে পারেন, কতটা হিংস্র হতে পারেন, দেশ জুড়ে কতটা অশান্তি সৃষ্টি করতে পারেন!

নতুন করে দেশের সংবিধান রচনা করলেন তিনি, সেই সংবিধান থেকে উড়িয়ে দিলেন ধর্মনিরপেক্ষতা। তাঁকে ক্ষমতায় বসিয়েছে ধর্মান্ধ মৌলবাদী দল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন শিবিরের ছেলেরা, যারা জুলাই আগস্টের ছাত্র জনতার আন্দোলনের নেপথ্যে ছিল। এই ছেলেরা মানুষ হত্যায় খুব পারদর্শী। তারা বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘকাল ধরেই প্রগতিশীল মানুষকে হত্যা করছে। ছাত্র জনতার আন্দোলনে শিবিরকে শক্তি জুগিয়েছে হিজবুত তাহরীর নামের সন্ত্রাসী সংগঠন। কখনও কি ভেবেছি ইউনুস জামায়াতে ইসলামীর লোক, তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, তিনি একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, তিনি পাকিস্তানপন্থী, এবং প্রচণ্ড ভারতবিদ্বেষী? ভেবেছিলাম তিনি খুবই শান্তিপ্রিয় মানুষ। (Muhammad Yunus)
এখন জামাতি-জিহাদি-জঙ্গি-বিরোধী শক্তিকে এক জোট হতে হবে। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা আর বাকস্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। নিজেদের মধ্যে লড়াই করা বন্ধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের শত্রু অসুরের শক্তি ধারণ করে আছে। এই অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে হলে, দেশকে ওদের থাবা থেকে মুক্ত করতে হলে, দল আর তুচ্ছ ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে বৃহত্তর স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শুভ শক্তিগুলোর একত্র হওয়া প্রয়োজন।
শান্তিতে যে মানুষ নোবেল পান, তিনি যদি শান্তিপ্রিয় নন, তবে কে শান্তিপ্রিয়? অথচ মানুষটি ক্ষমতায় বসেই ভারতের ৭টি রাজ্য দখল করবেন এই রকম একটা হুমকি দিয়ে বসলেন। তারপর শুরু হলো রিসেট বাটন টেপা। বাংলাদেশের ইতিহাসকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করার জন্য তিনি উঠে পড়ে লাগলেন। তিনি যদি সত্যিই ভাল মানুষ হতেন, নির্বাচনের আয়োজন করতেন।রাজনীতিকদের হাতে দায়িত্ব দিয়ে ভালোয় ভালোয় বিদেয় নিতেন। কিন্তু ৮৪ বছর বয়সে দেশ ধ্বংস করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। (Muhammad Yunus)

অপারেশান ডেভিল হান্ট নামে একটি অপারেশান শুরু করেছেন, আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী সমর্থক সকলকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশে। আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগকে নিষিদ্ধ করেছেন, এখন আওয়ামী লীগকে আর নিষিদ্ধ নয়, একেবারে নিশ্চিহ্নই করতে চাইছেন, আওয়ামী লীগের সবাই হয় ইউনুসের কাছে আত্মসমর্পন করবে, নয়তো তাদের মেরে ফেলা হবে। তিনি তাঁর জিহাদি বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছেন এই অপারেশান সাক্সেসফুল করতে। এটিই তাঁর কাছে সংস্কার। আওয়ামী লীগের কাউকে বাঁচিয়ে রাখলে নাকি দেশ গড়া সম্ভব হবে না। সুতরাং আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত তাঁর সংস্কার সম্পূর্ণ হবে না। এমন অসহিষ্ণুতা এবং বর্বরতা কেউ কি অনুমান করতে পারে? সারা পৃথিবীতে মহম্মদ ইউনুস ভীষণ প্রশংসিত। প্রচুর পুরস্কার পেয়েছেন, প্রচুর সম্মান পেয়েছেন। অথচ তিনি সেই সব সম্মানের এতটুকু মর্যাদা দিচ্ছেন না। (Muhammad Yunus)

ইউনুস যা চাইছেন, জিহাদিরা তাই তাঁকে উপহার দিচ্ছে। আর জিহাদিরা যা চাইছে, তাই তাদের উপহার দিচ্ছেন ইউনুস। মাঝে মাঝে লোক দেখানো বিবৃতি দিচ্ছেন। যেন লোকে তাকে ভালমানুষ বলে মনে করে। জিহাদিরা মুক্তচিন্তক লেখক প্রকাশকের ওপর হামলা করতে চাইছে, হামলা করতে দেওয়া হচ্ছে। বইমেলায় বইয়ের স্টল বন্ধ করতে চাইছে, স্টল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। স্যানিটারি ন্যাপকিনের স্টল ছিল মেয়েদের, সেটিও নারীবিদ্বেষী জিহাদিরা বন্ধ করতে চাইলো, সেটি বন্ধ। ভালবাসা দিবসে ফুলের দোকানগুলোয় হামলা চালাতে চাইলো, হামলা চালাতে দেওয়া হলো। (Muhammad Yunus)
মকর সংক্রান্তির ঘুড়ি উৎসব বন্ধ করতে চাইলো, বন্ধ হলো। দেশ জুড়ে বসন্ত উৎসব বন্ধ করতে চাইলো, বন্ধ করায় সাহায্য করলো সরকার। লালন স্মরণোৎসব বন্ধ করতে চাইলো, হলো। নাট্যোৎসব বন্ধ করতে চাইলো, বন্ধ হলো। এর আগেও মুক্তিযুদ্ধের সব ভাস্কর্য আর জাদুঘর নিশ্চিহ্ন করতে চাইলো, দিলো নিশ্চিহ্ন করতে। জিহাদিরা যা চাইছে, সরকার তাদের তাই দিচ্ছে। যেদিন ওরা ইউনুসের মুণ্ডুটা চাইবে, সেদিন ইউনুস কি নিজেই নিজের মুণ্ডুটা কেটে দেবেন ওদের? (Muhammad Yunus)
এখন জামাতি-জিহাদি-জঙ্গি-বিরোধী শক্তিকে এক জোট হতে হবে। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা আর বাকস্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। নিজেদের মধ্যে লড়াই করা বন্ধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের শত্রু অসুরের শক্তি ধারণ করে আছে। এই অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে হলে, দেশকে ওদের থাবা থেকে মুক্ত করতে হলে, দল আর তুচ্ছ ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে বৃহত্তর স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শুভ শক্তিগুলোর একত্র হওয়া প্রয়োজন। (Muhammad Yunus)

বিরাট এক রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়ে গেল। কিন্তু সুফল পাওয়া গেল না। আসলে হাসিনা আর ইউনুসের মধ্যে আশ্চর্য মিল। হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে চাননি। ইউনুস ক্ষমতা ছাড়তে চান না। হাসিনা প্রচণ্ড প্রতিশোধ পরায়ণ। ইউনুসও প্রচণ্ড প্রতিশোধ পরায়ণ। দেশে যা কিছু মন্দ ঘটছে, সব কিছুর দোষ হাসিনা বিএনপির ঘাড়ে চাপাতেন। দেশে যা কিছু মন্দ ঘটছে, সব কিছুর দোষ ইউনুস আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চাপান। ইসলামী মৌলবাদিদের প্রশ্রয় দিতেন হাসিনা। ইসলামী মৌলবাদিদের প্রশ্রয় দেন ইউনুস। হাসিনা প্রেস ফ্রিডম দিতেন না, সবাইকেই হাসিনার স্তুতি গাইতে হতো। ইউনুস প্রেস ফ্রিডম দেন না, সবাইকে ইউনুসের স্তুতি গাইতে হয়। আর, ও তো বলাই বাহুল্য, হাসিনা তসলিমাকে দেশে ফিরতে দেননি। ইউনুস তসলিমাকে দেশে ফিরতে দেন না। (Muhammad Yunus)
কিছুদিন আগে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছেন রাত ৩টায়। মনে হচ্ছে রাতে কারও ঘুম আসে না। উপদেষ্টারা জেগে থাকেন। সাংবাদিকগণ জেগে থাকেন। যেমন চোর ডাকাত ছিনতাইকারী জেগে থাকে। খুনী ধর্ষক নারীনির্যাতক জেগে থাকে। আতঙ্কে জেগে থাকে নিরীহ জনতা। কল কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জেগে থাকে বেকার নারী-শ্রমিক, জেগে থাকে অন্ধকার গলিতে দেহ বিক্রির আশায়। অজস্র ধর্ষক জেগে থাকে নারীকে ছিঁড়ে খাওয়ার জন্য।(Muhammad Yunus)

বাংলাদেশে প্রচুর কল কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রচুর নারী পুরুষ বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছে। বেকার পুরুষেরা চুরি ডাকাতি ছিনতাই করছে, বেকার নারীরা দেহ বিক্রি করছে নয়তো ভিক্ষে করছে। সবচেয়ে সুখে আছে ধর্ম ব্যবসায়ীগুলো। এই ব্যবসাই শুধু রমরমা চলছে। লক্ষ লক্ষ গোবর-মাথা ধর্মের ফাঁদে পড়ে বিপথে যাচ্ছে। দেশে শুধু চুরি ডাকাতি খুন ধর্ষণ, আগুন, ভাঙচুর, অন্যায়, নির্যাতন চলছে না, ধর্মবাদী জিহাদিদের যা-ইচ্ছে-তাই চলছে। চলছে ধ্বংসযজ্ঞ। চলছে মৌলবাদ। চলছে ইসলামী সন্ত্রাস। ভয়ে সিঁটিয়ে আছে দেশ। যদি এখনও রুখে না দাঁড়ায় সচেতন জনগণ, নর্দমার নোংরায় পড়ে খাবি খেতে থাকবে দেশ, এভাবেই আগুনের পিণ্ড হয়ে উঠবে দেশ। আর দেশকে জাহান্নাম বানিয়ে ইউনুস সাহেব হাসবেন পুষ্পের হাসি। (Muhammad Yunus)
মহম্মদ ইউনুস খুব ক্ষমতালোভী, স্বার্থপর, অনুদার, নিষ্ঠুর আর হিংস্র লোক। নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়ে তিনি যতটা শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন, বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসে তিনি তার চেয়ে বেশি অশ্রদ্ধা এবং ঘৃণা অর্জন করেছেন। রাজনীতিকদের হাতে দেশ দিয়ে তিনি ভালোয় ভালোয় বিদেয় হলেই ভাল। তাঁর সন্ত্রাসী সঙ্গী সাথী নিয়ে দেশের সর্বনাশ তিনি অনেক করেছেন, আর নয়। কিন্তু তিনি কি ভালো উপদেশ শুনবেন? শুনবেন না। (Muhammad Yunus)

শান্তির দূত দেশের খুন ধর্ষণ চুরি ডাকাতি ছিনতাই আগুন আর ভাঙচুরের মহামারি বন্ধ করতে মোটেও উৎসাহী নন। বন্ধ হলে শান্তি ফিরে আসবে, শান্তি ফিরে এলে আবার সমস্যা। তিনি তো সেই হাসিটি তাহলে আর হাসতে পারবেন না, অশান্তির আগুনের ওপর বসে তিনি যে পুষ্পের হাসিটি হাসতে চান। আসলে ইদানীং তিনি ব্যস্ত তাঁর শিবির-হিজবুতি জিহাদি গ্যাংদের দিয়ে একখানা পলিটিক্যাল পার্টি বানাতে। যেন ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনের একখানা জম্পেশ উৎসব করে পেয়ারের ছানাপোনাদের জিতিয়ে যেতে পারেন। বড় রাজনীতিকরা অগত্যা বসে বসে আঙুল চুষবেন। আর ডানা মেলে উড়তে উড়তে শান্তির দূত তাদের আঙুল চোষা দেখবেন, এবং খিলখিল করে হাসবেন। (Muhammad Yunus)
ছবি সৌজন্য: EN.HABERLER.COM, Facebook, Organiser Free Malaysia Today , Instagram
____________________________________________________
পড়ুন:
- সব ধর্মের সব জাতের পুরুষই নারীহত্যা করে
- শাস্তি দিয়ে ধর্ষণ বন্ধ হয় কি?
- ভ্যালেন্টাইন’স ডে
- ধর্ষণহীন দিন
- নারী দিবসে
- রোজায় আমি কী ভাবছি,
- বাঁধ ভেঙে দাও
- টাঙ্গাইল শাড়ির জি আই বাংলাদেশের প্রাপ্য কেন?
- তারকাময় রাজনীতি ভাল নয়
- ধর্মানুভূতি নয়, এ ধূর্তদের কৌশল
- লিঙ্গসূত্র (১)
- লিঙ্গসূত্র (২)
- হিন্দু-মুসলমানের বিয়ের পরিণতি
- বাংলাদেশ আজ প্রশ্নের সম্মুখীন
- ধর্ষণ পুরুষতন্ত্রের উপসর্গ
- বাংলাদেশ দখল করে নিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী ইসলামী সন্ত্রাসী
- হারাম হালালের সংজ্ঞার বদল দরকার
- আমার দুঃখিনী বাংলাদেশ
- কাঁদো আমার প্রিয় দেশ
____________________________________________________
বর্তমান বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদী মুখ তসলিমা নাসরিন। বাঙালি হয়েও তিনি আন্তর্জাতিক। গদ্য ও কবিতার সব শাখাতেই অনায়াস বিচরণ তসলিমার। সাহিত্য-সাধনার পাশাপাশি তাঁকে আমরা চিনি ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী ও নারীবাদী একজন চিন্তাশীল হিসেবেও। নারীর অধিকার, মানবাধিকার, বাক-স্বাধীনতা, মানববাদ, বিজ্ঞান ও সহনশীলতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে চলেছেন তিনি। লেখালিখির পাশাপাশি তাঁর বিশ্বব্যাপী উদার ও মুক্তচিন্তার জন্য দেশে-বিদেশে তিনি সম্মানিত হয়েছেন একগুচ্ছ পুরস্কার ও সম্মাননায়। 'নির্বাচিত কলাম' ও আত্মজীবনী গ্রন্থের জন্য পেয়েছেন দু'দুবার আনন্দ পুরস্কার। পেয়েছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের শাখারভ পুরস্কার। ফ্রান্স সরকারের মানবাধিকার পুরস্কার, কার্ট টুকোলস্কি পুরস্কার সহ একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা। লিখেছেন 'ফেরা', 'লজ্জা', 'ফরাসি প্রেমিক'-এর মতো অসামান্য উপন্যাস; বেশ কিছু ছোটগল্প, আত্মজীবনীমূলক রচনা, ব্যক্তিগত ও সামাজিক নানা বিষয়ে অসংখ্য প্রবন্ধ।