(Comedian)
পরপর আসরানি এবং সতীশ শাহের চরাচরে পাড়ি দেওয়ার খবর শোনার পর থেকে মাথায় ঘুরছে একটা প্রশ্ন। হিন্দি সিনেমায়, আরও সঠিকভাবে বললে ভারতীয় সিনেমায় কমেডিয়ানদের যুগের কি সমাপ্তি ঘটল? সেভাবে পুরোপুরি নির্ভেজাল কমেডি ছবি আর আসে না তো! যেখানে একজন কমেডিয়ানই নায়ক! একটা দুটো দৃশ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে কমেডিয়ানের কাজ। তখন মনে হবে, দৃশ্যটা না থাকলেও চলত। (Comedian)
সোশ্যাল মিডিয়া ভরে যাচ্ছে আসরানি বা সতীশ শাহের সিনেমার ক্লিপিংসে। যা তাঁদের অভিনয়ের বিচিত্র দিকগুলোকে তুলে ধরে আমাদের কাছে। (Comedian)
ভারতের ফিল্ম অ্যান্ড টিভি ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন প্রেসিডেন্ট অশোক পন্ডিত একটি পুরোনো ভিডিও প্রকাশ করেছেন। যেখানে বহু বছর আগের জনপ্রিয় গান ‘দো দিওয়ানে শহর মে’ গানে লিপ দিয়েছেন সতীশ শাহ, দীপ্তি নাভাল। তখন তাঁরা এফটিটিআইয়ের ছাত্র। সেই দৃশ্য নিয়ে মুম্বইয়ে গুলজার সহ প্রযোজক-পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন কাজের জন্য। বাস্তবে ঘরোন্দা ছবিতে ভূপিন্দর-লুনা লায়লার এই গানটা সিনেমায় লিপ গেয়েছিলেন অমল পালেকর ও জারিনা ওয়াহাব। সতীশ ও দীপ্তি নিজেদের প্রতিভা দেখাতে বেছে নিয়েছিলেন এই গানের সঙ্গে অভিনয়। (Comedian)
এরই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠে আসছে আসরানির কিছু পুরোনো ক্লিপিংস। সেখানে তিনি বাবুর্চি ছবিতে রাজেশ খান্নার সঙ্গে একটা গান করেছেন। বাস্তবে মান্না দের সঙ্গে। ছবিতে আসরানির গানের একটা বড় অংশ কেটে দেওয়া হয়েছিল। তবে বোঝা যাচ্ছে, আসরানির অভিনয় বৈচিত্র্য কী জায়গায় ছিল! (Comedian)

মানুষ দেখছে, মানুষ আলোড়িত হচ্ছে। কখনও ভাবছে, সতীশ শাহ বা আসরানিকে কি আমাদের সিনেমা জগৎ ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পেরেছে? না একেবারে টাইপ কাস্ট করে ফেলেছে? (Comedian)
কমেডি কারে কয়? এমনিতে আজকাল এই প্রশ্নটা করা হলে দু’ধরনের উত্তর আসতে পারে! অনেকে বলবেন, কপিল শর্মার মতো লোকেরাই আসলে কমেডিয়ান। নতুন প্রজন্মের অনেকে স্ট্যান্ড আপ কমেডির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন ব্যাপারটা। (Comedian)
“ইন্টারনেটে সার্চ দিলেই দেখা যাবে মেহমুদের লিপে কত সুপারহিট গান রয়েছে মান্না দে এবং মহম্মদ রফির গলায়। সিনেমার মতো গানগুলো থেকে গিয়েছে আজীবনের জন্য।”
নাম করবেন বীর দাস, জাকির খান, অনুভব সিং বাসসি, আকাশ গুপ্তা, বিশ্ব কল্যাণ রথদের। তাঁদের অনেকেই জানেন না মেহমুদ বা জনি ওয়াকারের নাম। যাঁরা আসলে কমেডিয়ান হলেও সিনেমায় গুরুত্ব পেতেন নায়কের মতো। নায়কের অন্তত কুড়ি শতাংশ সময় তিনি পেতেন সিনেমায়। তাঁদেরও একজন প্রেমিকা থাকত। তাঁদের লিপে গানও থাকত। (Comedian)
কিশে্ার কুমার? তিনি সর্বোত্তম গায়কের মতো সর্বোত্তম কমেডিয়ান হওয়ারও দাবিদার।
মেহমুদ কমেডিয়ান, কিন্তু তাঁর নামে সিনেমা পর্যন্ত হয়েছে। একটা নয়, দুটো। এবং সেটা ছয় বছরের ব্যবধানে। ১৯৬৫ সালে জোহর, মেহমুদ ইন গোয়া। ১৯৭১ সালে জোহর, মেহমুদ ইন হংকং। এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন মেহমুদ। প্রথম ছবিটি সুপারহিট, পরেরটি ফ্লপ। জনি ওয়াকারও কম কী! মধুবালার পর তাঁর নামেই দুটো সিনেমা হয়েছিল। ১৯৫৭ সালে হিন্দিতে, ১৯৯২ সালে মালয়ালমে। (Comedian)
“জনি ওয়াকারই প্রথম অভিনেতা, যিনি সচিব রাখতে শুরু করেন বলিউডে। তিনিই প্রথম অভিনেতা, যিনি বলে দেন রবিবার কাজ নয়।”
ইন্টারনেটে সার্চ দিলেই দেখা যাবে মেহমুদের লিপে কত সুপারহিট গান রয়েছে মান্না দে এবং মহম্মদ রফির গলায়। সিনেমার মতো গানগুলো থেকে গিয়েছে আজীবনের জন্য। (Comedian)
শুধু মেহমুদ বলছি কেন, জনি ওয়াকারের লিপেই কি কম গান? মেহমুদ-মান্নার বন্ধনে যেমন অসংখ্য গান, তেমনই রফির সঙ্গে জনির গানের যুগলবন্দি মানেই হিট। মনে করে দেখুন— অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল বা সর জো তো টকরায়ে বা জানে কাঁহা। ইউটিউবে খুঁজে পাবেন মেহমুদ বা জনি ওয়াকারের ৫০ সেরা গান। এখনকার সেরা কমেডিয়ানরা কেউ এত গান পাওয়ার কথা ভাবতেই পারবেন না। পরিচালক ভাববেন, কমেডিয়ানের লিপে গান শুনবে লোকে? অথচ এই কমেডিয়ানদের নিজস্ব স্টাইল ছিল এক এক জনের। (Comedian)
জনি ওয়াকারই প্রথম অভিনেতা, যিনি সচিব রাখতে শুরু করেন বলিউডে। তিনিই প্রথম অভিনেতা, যিনি বলে দেন রবিবার কাজ নয়। জনি অনুসরণ করতেন অবিভক্ত ভারতের প্রথম কমেডি কিং নুর মহম্মদ চার্লিকে। স্বাধীনতার পরে পাকিস্তানে চলে যাওয়া চার্লি আবার ফ্যান ছিলেন চার্লি চ্যাপলিনের। তাই নামের সঙ্গে যোগ হয়ে যায় চার্লির নাম। (Comedian)
আরও পড়ুন: প্রয়াণের এক যুগ পরেও মান্নার প্রেমের গান অমর
আগা নামে এক জনপ্রিয় কমেডিয়ান ছিলেন। তিনি অভিনয় করতেন আমেরিকান কিংবদন্তি কমেডিয়ান বব হপের স্টাইলে। আগার লিপেও বা কত গান রয়েছে। তাঁর ছেলেই জালাল আগা— শোলে ছবির মেহবুবা, মেহবুবা গানের রাবাব বাদক। আগার জামাই আবার অভিনেতা টিনু আনন্দ। তিনিও কমেডি করেছেন বহু ছবিতে। (Comedian)
আসল সত্যি হল, মেহমুদ পর্দা থেকে সরে যাওয়ার পর থেকেই যেন কমেডিয়ানদের গলা থেকে গান আস্তে আস্তে কেড়ে নেওয়া হল মুম্বইয়ে। একটা সময়, নায়কদের মতো কমেডিয়ানদের গলাতেও একটা করে অন্তত গান বাধ্যতামূলক ছিল প্রত্যেক সিনেমায়। মেহমুদ চলে যাওয়ার পর থেকে তা পাল্টে যেতে লাগল। (Comedian)

মেহমুদের পরে সফলতম কমেডিয়ান হয়তো জনি লিভারই। মেহমুদের মতো তাঁর চোখও কথা বলে। আমাদের বাংলায় যেমন তুলসী চক্রবর্তী, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় বা রবি ঘোষের। ভেবে দেখুন, জনি লিভারের লিপে কটা গান জনপ্রিয় রয়েছে। বা পরেশ রাওয়ালের লিপে। পরেশ সম্প্রতি আক্ষেপ করে বলেছেন, বাবুভাই চরিত্রটি তাঁর অন্য চরিত্রকে ঢেকে দিয়েছে পুরোপুরি। সেটা একেবারে খাঁটি কথা। (Comedian)
পরেশের মতো আরও অন্তত দু’জন কমেডিয়ান অসংখ্য ভিলেনের রোল করেছেন সিনেমায়। তবে দিনের শেষে তাঁদের কমেডিয়ান হিসেবেই দেখেন অধিকাংশ সিনেমাপ্রেমী। কাদের খান এবং শক্তি কাপুর। দু’জনে মিলে বহু ছবিতে নায়ক-নায়িকার দিক থেকে নিজেদের দিকে মনোযোগ ঘুরিয়ে নিয়েছেন বারবার। (Comedian)
“প্রথম দিকে দো বিঘা জমিন, সিআইডি, পিয়াসার মতো মাইলফলক সিনেমায় ছোট ছোট চরিত্র দিয়ে মেহমুদের অভিনয় শুরু। উত্তরণ সাংঘাতিক।”
এঁদের মতো হয়তো বেশি সময় বরাদ্দ থাকত না দু’জন বাঙালি কমেডিয়ানের। তবে যথনই পর্দায় হাজির হতেন, মানুষের আনন্দের মাত্রা বেড়ে যেত। অসিত সেন এবং কেষ্ট মুখার্জি। (Comedian)
এঁদের মধ্যে কমেডিয়ানদের জনপ্রিয়তা ও বাজারের প্রেক্ষাপটে কিশোর কুমারকে বাদ দিলে মেহমুদ তুলনাহীন। যাঁকে বলা হয়, বলিউডের আসল ভাইজান। তাঁর বাবা মুমতাজ আলি ছিলেন চল্লিশ থেকে সত্তরের এক নামী ড্যান্সার ও অভিনেতা। বাবাকেও ছাপিয়ে গিয়েছিলেন মেহমুদ। বৈচিত্র্য ছিল তাঁর অভিনয়ের অস্ত্র। (Comedian)

প্রথম দিকে দো বিঘা জমিন, সিআইডি, পিয়াসার মতো মাইলফলক সিনেমায় ছোট ছোট চরিত্র দিয়ে মেহমুদের অভিনয় শুরু। উত্তরণ সাংঘাতিক। অমিতাভ বচ্চন হয়তো অমিতাভই হতেন না মেহমুদ তাঁকে বম্বে টু গোয়া ছবিতে লিডরোল না দিলে। সে সময় অমিতাভকে লিড রোল দিচ্ছিলেন না প্রযোজকরা। ছবিটা পাল্টাতে শুরু করে তারপরই। (Comedian)
মেহমুদ ছিলেন ছবির প্রযোজক। একবার দ্য হিন্দু কাগজ খবর করেছিল, মেহমুদ অমিতাভের রোলটা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন রাজীব গান্ধিকে। এতটাই প্রভাব ছিল তাঁর। রাজীব রাজি হননি অবশ্য। (Comedian)
“পড়োশনে তিনি মান্না দের লিপে গান গেয়ে কিশোরের লিপের সুনীল দত্তের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। চন্দন কি পালনায় তাঁর প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন আর এক বিশিষ্ট কমেডিয়ান মারাঠি ধুমল।”
দু’টো ছবির গান দিয়ে মেহমুদের অভিনয় বৈচিত্র্য বোঝানো যায়।
১৯৬৮ সালে পড়োশন ছবিতে তাঁর দক্ষিণ ভারতীয় চরিত্রের জনপ্রিয়তা নতুন প্রজন্মের মাঝেও অটুট। সেখানে বাঙালিবাবু সাজা কিশোর কুমারের সঙ্গে তাঁর গানের টক্করের কথা সবাই জানেন। মান্না-কিশোরের যুগলবন্দি ‘এক চতুরনার’ জনপ্রিয়তায় আজও সেরা গানের মধ্যে। (Comedian)
অনেকেই জানেন না, রাহুল দেববর্মন এক বছর আগে চন্দন কি পালনা ছবিতে এরকমই এক গানের যুদ্ধ সিকুয়েন্সে সুর দিয়েছিলেন। সেখানে মেহমুদের ভূমিকা ছিল ধুতি পাঞ্জাবি পরা এক বাঙালির। যিনি হিন্দি গানে সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে-র মতো রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে উঠতে পারেন। যিনি প্রতিপক্ষের সঙ্গে নাচ গানের যুদ্ধে নেমে তান কর্তনের মাঝে বলে উঠতে পারেন— মেরে ফালুমো তোকে। (Comedian)
আরও পড়ুন: বদলে যাওয়া মানচিত্রে বিস্মিত লালদীঘি!
পড়োশনে তিনি মান্না দের লিপে গান গেয়ে কিশোরের লিপের সুনীল দত্তের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। চন্দন কি পালনায় তাঁর প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন আর এক বিশিষ্ট কমেডিয়ান মারাঠি ধুমল। ধুমলের সঙ্গে তিনি নাচ-গানের প্রতিযোগিতায় নামেন। ধুমলের গান গাইছিলেন আবার মহম্মদ রফি। পড়োশন ছবিতে হেরে গিয়েছিলেন মেহমুদ, চন্দন কি পালনায় আবার জেতেন তিনিই। (Comedian)
পড়োশন ছবিতে গানের যুদ্ধের কেন্দ্রে ছিলেন সায়রাবানু। চন্দন কি পালনায় আবার মুমতাজ। তখন মেহমুদ-মুমতাজ জুটি ছিল মারাত্মক জনপ্রিয়। অনেক ছবিতে নায়ক-নায়িকার পাশাপাশি সহনায়ক-সহনায়িকার চরিত্রে গুরুত্ব পেতেন মেহমুদ-মুমতাজ। (Comedian)
এখানে একটা লাইন লিখে রাখা ভাল। মুমতাজ সেই বিরল নায়িকাদের অন্যতম, যিনি ছোট ছোট সাইডরোলে অভিনয় করতে করতে হয়ে ওঠেন সুপারস্টার। এমন উদাহরণ বলিউডে খুবই কম। (Comedian)
“আইএমডিবির তালিকায় উৎপল দত্তকে দেখে সবচেয়ে আনন্দ হয়। ভিলেন থেকে কমেডিয়ান, সব ভূমিকাতে তাঁর সাফল্য বাঙালি হিসেবে গর্ব করার মতো।”
সিনেমা নিয়ে যাঁরা খোঁজ খবর করেন, তাঁদের কাছে আইএমডিবি সংস্থার নামটা অতি পরিচিত। বিশ্বে সিনেমা সংক্রান্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় সিনেমা ওয়েবসাইট এটাই। সম্প্রতি এরা গত ২৫ বছরে সেরা ১০০ ভারতীয় সিনেমার তালিকা তৈরি করেছে। প্রথম ছবির স্বীকৃতি পেয়েছে থ্রি ইডিয়টস। তাদের তৈরি ভারতীয় সিনেমার সর্বকালের সেরা ৫০ কমেডিয়ানের তালিকা দেখছিলাম। তাতে দেখলাম ২ নম্বরে মেহমুদ। (Comedian)
এক নম্বরে কে, জানতে চাইবেন? এবং জানলে অবাক হবেন! ব্রহ্মানন্দন। তেলেগু ছবির কমেডিয়ান তিনি। দেশের হায়েস্ট পেড কমেডিয়ানদের একজন। ১০০০ এর বেশি ছবি করেছেন। ৩ নম্বরে আবার এক দক্ষিণ ভারতীয়, মালয়ালী জাগতি শ্রীকুমার। চার .যুগ ধরে ১৫০০ ছবিতে কাজ করেছেন। (Comedian)

আইএমডিবির এই শতাব্দীর সেরা ১০০ ছবিতে বাংলা ছবি ছিল না। সর্বকালে সেরা ৫০ কমেডিয়ানের তালিকায় বাঙালিরা আছেন। রবি ঘোষ ৭ নম্বরে, উৎপল দত্ত ১২ নম্বরে। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ১৪ নম্বরে। জহর রায় ৩৭ নম্বরে। এঁরা বোধহয় তুলসী চক্রবর্তী বা অনুপ কুমারের নাম শোনেননি। (Comedian)
হিন্দি ছবির পরিচিত কমেডিয়ানরা কে কোন জায়গায়, সেটা জানানো দরকার। আগেই লিখেছি মেহমুদ ২ নম্বরে। তারপর রয়েছেন জনি ওয়াকার (৪), পরেশ রাওয়াল (৫), জনি লিভার (৬), কাদের খান (৮) রাজপাল যাদব (১১), আসরানি (১৫), শক্তি কাপুর (২২) অনুপম খের (২৪), সতীশ কৌশিক (২৮), জগদীপ (২৯), লক্ষ্মীকান্ত বের্দে (৩২), সঞ্জয় মিশ্র (৩৫), টিকু তালসানিয়া (৪০), পেন্টাল (৪২), কেষ্ট মুখার্জি (৪৩)। বাকি সব জায়গা দক্ষিণীদের দখলে। (Comedian)
“আইএমডিবির তালিকায় অনেকেই নেই, যাঁদের নাম শুনলে অনেকের নানা দৃশ্যের কথা মনে পড়বে। যে দৃশ্য অনেকের মাথায় থাকবে। কে ভুলতে পারে ওমপ্রকাশ বা দীনেশ হিঙ্গুর হাসার স্টাইল?”
পঞ্চাশ জনের মধ্যে একমাত্র মহিলা উপাসনা সিং। তিনি রয়েছেন ৫০ নম্বরে। উপাসনা প্রথম নজর করেছিলেন ১৯৯৭ সালে জুদাই ছবিতে। একটা সংলাপ— আব্বা ডাব্বা জাব্বা তাঁকে রাতারাতি বিথ্যাত করে দেয়। মজা হল, ছোট একটা সংলাপের জন্য উপাসনা অভিনয় করতেই চাননি প্রথমে। ছবিতে এক মুক ও বধির অর্ধোন্মাদ তরুণীর ভূমিকায় ছিলেন উপাসনা। ছবিতে স্বামী ছিলেন জনি লিভার। বাবা ছিলেন পরেশ রাওয়াল। (Comedian)
আইএমডিবির তালিকায় উৎপল দত্তকে দেখে সবচেয়ে আনন্দ হয়। ভিলেন থেকে কমেডিয়ান, সব ভূমিকাতে তাঁর সাফল্য বাঙালি হিসেবে গর্ব করার মতো। যে ভদ্রলাক শুটিংয়ের ফাঁকে শুধু ভারী ভারী বই পড়ে যেতেন, তিনি কী করে অত সুন্দর হাস্যরস আনতেন সিনেমায়, তা শেখার মতো। কলকাতা থেকে মুম্বই গিয়ে কমেডিয়ান-ভিলেন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া, সহজ নয়। পরবর্তীতে অনেক অবাঙালিকে তিনি প্রভাবিত করেছিলেন অভিনয়ের স্টাইলে, এটা বিশাল ব্যাপার। (Comedian)

আইএমডিবির তালিকায় অনেকেই নেই, যাঁদের নাম শুনলে অনেকের নানা দৃশ্যের কথা মনে পড়বে। যে দৃশ্য অনেকের মাথায় থাকবে। কে ভুলতে পারে ওমপ্রকাশ বা দীনেশ হিঙ্গুর হাসার স্টাইল? বা তাঁদের পরের প্রজন্মের, বছর চুয়ান্নর রাজপাল যাদবকে? এঁদের সঙ্গে মনে পড়বে মুকরি, রাজেন্দ্রনাথ, আইএস জোহর, ধুমল, জুনিয়র মেহমুদ, অশোক শরাফ, জাভেদ জাফরি, দেবেন বর্মা, মুস্তাক খান, লিলিপুটকে। এবং অবশ্যই টুনটুন। নায়কদের মধ্যে কিশোরকুমার ছাড়া গোবিন্দা, সঞ্জয় দত্ত, আর্শাদ ওয়ার্সির কমেডির টাইমসেন্স চমৎকার। (Comedian)
এবার খেয়াল করে দেখুন, এই সব নামগুলোর গলায় কিন্তু গান আর নেই। গান এমনিতেই হিন্দি সিনেমায় অনেক গুরুত্ব হারিয়েছে। কমেডিয়ানরা কোথায় পাবেন গান গাওয়ার সুযোগ? (Comedian)
“ক্লাস সেভেনের পর পড়াশোনা চালাতে পারেননি পরিবারের আর্থিক সমস্যায়। বাবা অপারেটরের কাজ করতেন হিন্দুস্থান ইউনিলিভার কোম্পানিতে। সেখানে ছয় বছর মজুরের কাজ করেছিলেন জনি।”
বাংলা ছবি এই লেখার বিষয়ে থাকার কথা নয়। তবু দু’টো একটা কথা বলে নিলে ভাল। বাংলা ছবিতে অনুপকুমার বাদে কোনও কমেডিয়ানের ভাগ্যে বেশি গান গাওয়ার সুযোগ ঘটেনি। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ‘তুমি আকাশ এখন যদি হতে’, চিন্ময় রায় ‘ভারত আমার ভারতবর্ষ’ বা ‘আমি বাঘ নই যে’র মতো গান গেয়েছেন। তবে বেশি গান তাঁর ভাগ্যেও জোটেনি। তবে মেহমুদের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে যেমন তাঁর নামে সিনেমা হয়েছে, তেমনই ভানু এবং জহরের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে বাংলায় হয়েছে ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্টেন্ট সিনেমা। (Comedian)
লেখা শেষ করার আগে একটু আলাদা করে উল্লেখ দরকার জন প্রকাশ রাও জানুমালা নামের এক তেলেগু ভদ্রলোকের। ইন্দোরের বদরুদ্দিন জামালুদ্দিন কাজি যেমন মুম্বই ফিল্মে পরিচিত হন জনি ওয়াকার নামে, তেমন জন প্রকাশ রাওই আজকের জনি লিভার। বাস কন্ডাকটর হিসেবে জনি ওয়াকারকে নামটা দিয়েছিলেন গুরু দত্ত, স্কচ হুইস্কির ব্র্যান্ডের প্রেক্ষাপটে। (Comedian)
জনি লিভার কমেডি দেখিয়ে বেড়াতেন বিভিন্ন নামী ব্যক্তিত্বের সঙ্গে। দেশের প্রথম দিকের স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান। কল্যাণজি আনন্দজি গ্রুপের সঙ্গে গানের ফাঁকে ফাঁকে কমেডি দেখাতেন। ক্লাস সেভেনের পর পড়াশোনা চালাতে পারেননি পরিবারের আর্থিক সমস্যায়। বাবা অপারেটরের কাজ করতেন হিন্দুস্থান ইউনিলিভার কোম্পানিতে। সেখানে ছয় বছর মজুরের কাজ করেছিলেন জনি। হিন্দুস্থান লিভার কোম্পানির এক অনুষ্ঠানে কিছু অফিসারের নকল দেখিয়েই জনির নাম শুরু। (Comedian)
আরও পড়ুন:উত্তর কেন দেশের সব রাজ্যই বঞ্চিত, উত্তর নেই
সেখানকার কর্মীরা ডাকতে শুরু করে দেন, জনি লিভার। বাবার অফিসের নামের একটা অংশ যোগ দিয়ে তৈরি হয়ে যায় নিজের নাম। মুম্বইয়ে এসে সেই নামটাই রেখে দেন জনি লিভার।
জি টিভিতে বছর কুড়ি আগে তিনি একটা শো করেছিলেন। নাম জনি আলা রে। (Comedian)
আলা রে তো নন! এখন পূর্ণ মহিমায়, এসেই গিয়েছেন তিনি। আটষট্টি বছরেও হাসির প্রদীপ জ্বালিয়ে, হিন্দি ছবিতে কমেডির আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন জন প্রকাশ রাও জানুমালা। দর্শকদের চোখের সামনে এসে দাঁড়ালেই যেন তাঁর চোখ কথা বলা শুরু করে। তাঁকে দেখলেই মনে হবে, কমেডিয়ানদের দিন শেষ হতে পারে না। তবে প্রশ্ন, তাঁদের ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রেখে আর কটা ছবি হচ্ছে হিন্দিতে? জনি ওয়াকার যেমন দূর অতীতে গুরুত্ব পেতেন, জনি লিভার যেমন সাম্প্রতিক অতীতে গুরুত্ব পেতেন। (Comedian)
মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত
বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই সময় সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কভার করেছেন একাধিক বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিক গেমস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, খেলা, গান, সিনেমা, ভ্রমণ, খাবারদাবার, মুক্তগদ্য— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।
