(Indian Politics)
বিহার নির্বাচনের ফল ঘোষণার সামান্য পরেই রোহিনী আচার্য যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করলেন, ‘আমি আর লালু যাদব পরিবারের কেউ নই’, তখন কার কথা মনে হল সবার আগে?
বিশেষ একজনের নয়। একসঙ্গে অনেকের কথা। মানেকা গান্ধী থেকে অজিত পাওয়ার, উদ্ধব ঠাকরে থেকে দয়ানিধি মারান, জগন রেড্ডি থেকে শর্মিলা, লক্ষ্মী পার্বতী থেকে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া। নামগুলো লিখেও ভাবলাম আরও কত বাকি রয়ে গেল! (Indian Politics)
আরও পড়ুন: খেলার ভারতে মহিলা কর্ত্রী কোথায়?
সবচেয়ে বেশি করে মনে পড়ল কার কথা জানেন? তিনিও ভারতীয় রাজনীতিতে এক বিখ্যাত বাবার মেয়ে। তেলেঙ্গানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাওয়ের মেয়ে কালভাকুন্তলা কবিতা। সবে এই সেপ্টেম্বরে কবিতার বাবা তাঁর প্রতিষ্ঠিত পার্টি ভারত রাষ্ট্র সমিতি থেকে বহিষ্কার করেছেন মেয়েকে। (Indian Politics)
অপরাধ? কারণটা শুনলে লালুর মেয়ের কথাই মনে পড়বে আগে! মিল অনেক। কবিতার অপরাধ, তিনি দলে তাঁর দুই খুড়তুতো ভাই হরিশ রাও এবং সন্তোষ কুমারের ক্রমাগত সমালোচনা করছিলেন। বাবা এখানে মেয়ের পাশে তো দাঁড়ানইনি, উল্টে চরম শাস্তি দিয়েছেন। (Indian Politics)
রোহিনী যেমন লালুকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন কিডনি দিয়ে, তেমনই কবিতা তাঁর বাবার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আলাদা তেলেঙ্গানার দাবি নিয়ে। হয়ে উঠেছিলেন আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ। শেষ পর্যন্ত সেই বাবাই তাঁকে বহিষ্কার করলেন দল থেকে। ভাইদের সঙ্গে গোলমালের জেরে। (Indian Politics)
রাজনীতি কত সর্বনাশা এবং জটিল, তা ভারতের রাজনৈতিক পরিবারগুলোতে চোখ রাখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে বারবার। এখানে দাদা-ভাই, বাবা-মেয়ে, বাবা-ছেলে, এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গিয়েছে বারবার! বিশেষ করে আঞ্চলিক দলগুলোতে।
আমাদের চারপাশে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় বিভিন্ন দেশে প্রচুর পরিবারই রাজনীতিতে ক্ষমতাবান। তবে ভারতের মতো পরিবারের মধ্যে প্রকাশ্যে এত ব্যাপক হারে খেয়োখেয়ি খুব কমই দেখা গিয়েছে। (Indian Politics)
“ভারতীয় রাজনীতিতে পারিবারিক ঝামেলার প্রেক্ষিতে এমন মৃত্যু ঘটেনি এখনও। তবে নাটক অনেক বেশি দেখেছে ভারত। নাটক অনেক করেছেন ভারতীয় নেতারা। ক্ষমতার মোহ বড় সাংঘাতিক।”
অনেক ভেবেচিন্তে মনে পড়ছে পাকিস্তানে বেনজির ভুট্টো ও তাঁর মা নুসরত ভুট্টোর চরম তিক্ততার কথা।
জুলফিকার আলি ভুট্টোর ফাঁসি হয়ে গিয়েছে তখন। সে সময় পিপলস পার্টির দায়িত্ব নেবেন কে, এই প্রশ্নে গণ্ডগোল শুরু হয় বেনজির ভুট্টো এবং তাঁর ভাই মুর্তাজা ভুট্টোর। মা নুসরত এই বিতর্কে সরাসরি দাঁড়িয়েছিলেন ছেলের দিকে।
মুর্তাজার আপত্তি ছিল বেনজিরের স্বামী আসিফ জারদারির দুর্নীতি ও ছড়ি ঘোরানো নিয়ে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বেনজিরই তখতে বসলেন। সমস্যা মিটল কোথায় আর? ১৯৯৬ সালে সরকারের নানা কাজের বিরুদ্ধে সরব মুর্তাজা ও তাঁর ছয় সঙ্গী পুলিশের গুলিতে নিহত হন। (Indian Politics)

অনেকটা অনিবার্যভাবে অনেকেই এ জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করান বেনজির ও তাঁর স্বামীকে। মুর্তাজার মেয়ে ফতিমা ভুট্টো এখন বিশ্বে পরিচিত নাম, বিশিষ্ট লেখক। তিনি বাবার মৃত্যুর জন্য পিসি এবং পিসেমশাইকেই দায়ী করেছিলেন।
বেনজির যখন ভাইয়ের শেষকৃত্যে যাচ্ছিলেন, তাঁর গাড়ির ওপর পাথর ছোঁড়ে পিপলস পার্টিরই অনেক সমর্থক। জারদারি গ্রেফতার হয়েছিলেন। এবং প্রেসিডেন্ট ফারুক লেগহরি একমাসের জন্য বাতিল করে দিয়েছিলেন সরকারকে। (Indian Politics)
ভারতীয় রাজনীতিতে পারিবারিক ঝামেলার প্রেক্ষিতে এমন মৃত্যু ঘটেনি এখনও। তবে নাটক অনেক বেশি দেখেছে ভারত। নাটক অনেক করেছেন ভারতীয় নেতারা। ক্ষমতার মোহ বড় সাংঘাতিক।
ভুলে যাবেন না, রোহিনী পাটনায় সোচ্চার হয়েছিলেন তাঁর ভাই তেজস্বী যাদব, দুই তেজস্বী ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় যাদব ও রামিজের বিরুদ্ধে। রোহিনীর ধারণা, দলকে ডুবিয়েছেন তেজস্বী দুই অনুগতই। বারবার বলেছেন। কোনও লাভ হয়নি।
অসুস্থ লালু এখন বৃদ্ধ শাজাহান প্রায়। তেজস্বী দাপট চলছে পরিবারে। যে কারণে তিনি সবার সামনে দিদির দিকে চপ্পল ছোঁড়ার সাহস পেয়েছেন। অথচ এই দিদিকেই তিনি সিঙ্গাপুর থেকে আনিয়েছিলেন রাঘোপুরে তাঁর হয়ে প্রচার করার জন্য। রোহিনী সিঙ্গাপুরপ্রবাসী। তিনি চেয়েছিলেন সারান জেলার সব কেন্দ্রে প্রচার করতে। তেজস্বী শুধু মাধোপুরেই রেখেছিলেন তাঁকে। (Indian Politics)
এ বছরই পরিবার থেকে সরে গিয়ে আলাদা দল করেছেন লালুর বড় ছেলে তেজপ্রতাপ। উপায়ও ছিল না। বিবাহিত তেজপ্রতাপ মে মাসে হঠাৎ ঘোষণা করেন তিনি অনুষ্কা যাদব নামে এক তরুণীর সঙ্গে ১২ বছর সম্পর্কে রয়েছেন। তার পরের দিনই লালু যাদব টুইটারে ঘোষণা করেন, পরিবার ও পার্টি থেকে তেজপ্রতাপ বহিষ্কৃত।
ভোটের আগে কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি তেজপ্রতাপের ভাই তেজস্বী। লালু পোস্টটা করেছিলেন টুইটারে। টুইট করার মতো লোকই নন তিনি, এতটা অসুস্থ। যে কোনও লোকই বুঝবে, এর পেছনে রয়েছে তেজস্বীর খেলা। (Indian Politics)
“রোহিনীর পাশাপাশি লালুর আরও তিন মেয়ে পরপর লাইন দিয়ে পাটনায় মায়ের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি চলে গিয়েছেন। রাগিনী, চন্দা ও রাজলক্ষ্মী।”
লালুকে কিডনি দিয়ে বাঁচানোর জন্য তার পার্টির সদস্যদের কাছে ঈশ্বরীর মর্যাদা পাচ্ছিলেন রোহিনী। বলা হচ্ছিল, আর কেউ যখন কিডনি দিতে এগিয়ে আসছিল না, তখন রোহিনীই মুখ রক্ষা করেছেন বাবার। তাতে কী লাভ হল? (Indian Politics)
রোহিনীর পাশাপাশি লালুর আরও তিন মেয়ে পরপর লাইন দিয়ে পাটনায় মায়ের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি চলে গিয়েছেন। রাগিনী, চন্দা ও রাজলক্ষ্মী।
এতদিন আমরা যে মেয়ের নাম বেশি শুনতাম ডাক্তারি কলেজে ভর্তি বিতর্ক থেকে শুরু করে এমপি হওয়া নিয়ে, সেই মিসা ভারতীর সঙ্গে রোহিনীর আগে ঝামেলা ছিল। তিনি এই যুদ্ধে কার দিকে সেটা স্পষ্ট নয়। তিনি আবার এমপি। রোহিনী পাটনা থেকে দিল্লি গিয়ে তাঁর বাড়িতেই উঠে বয়ান বদল করেছেন অনেকটা। পর দিনই মিসা আবার বৈঠক করেছেন তেজস্বীর সঙ্গে বাবা মাকে নিয়ে। (Indian Politics)

রাজনীতি ঘিরে পারিবারিক বিতর্কে উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম এক। আমাদের বাংলায় সুভাষচন্দ্র বসুর শিক্ষিত উত্তরসূরিদের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুড়ি আমরা প্রকাশ্যে দেখেছি। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ছোট ভাই বাবুনের দাদাগিরি দেখে একবার তাঁকে ত্যাজ্যভাই ঘোষণা করেছিলেন। এক যুগ আগে রায়গঞ্জ লোকসভা নির্বাচনে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির স্ত্রী দীপার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন ভাই সত্যরঞ্জন দাশমুন্সি। পারস্পরিক খেয়োখেয়িতে হেরে গিয়েছিলেন দু’জনেই।
লালু পরিবারের মতোই একটা সময় দিনের পর দিন সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে এসেছে গান্ধী পরিবার।
“রাজশেখরের ছেলে জগন এবং মেয়ে শর্মিলার মধ্যে সম্পত্তি নিয়েই তুমুল ঝামেলা। মা বিজয়াম্মা প্রকাশ্যেই মেয়ের হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন।”
মানেকা গান্ধী যখন পরিবার থেকে বেরিয়ে গেলেন। এটা এত বহুল চর্চিত, তা নিয়ে বিস্তৃত লেখার মানে হয় না। অটল বিহারী বাজপেয়ীর ভাইঝি প্রয়াত করুণা শুক্লা ছিলেন লোকসভার সাংসদ। ৩২ বছর বিজেপির সঙ্গে থাকার পর তিনি চলে গিয়েছিলেন কংগ্রেসে। নরেন্দ্র মোদিকে কড়া সমালোচনা করে। বাজপেয়ী থাকলে হয়তো এমন নাটক কিছুতেই হত না। (Indian Politics)
মানেকার পর সবচেয়ে নাটকীয় উপাদান ছিল, দুই দক্ষিণী মেগাস্টার তামিলনাড়ুর এমজি রামচন্দ্রন ও অন্ধ্রপ্রদেশের এনটি রামা রাওয়ের পরিবারে।
রামচন্দ্রনের পার্টি এআইডিএমকে নিয়ে একপ্রস্থ টানাটানি চলেছিল স্ত্রী জানকী ও বান্ধবী জয়ললিতার। জানকী দ্রুত রণে ভঙ্গ দিয়েছিলেন। রামা রাওয়ের স্ত্রী লক্ষ্মী পার্বতী, ছেলে, মেয়ের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয় দীর্ঘদিন। রামা রাওয়ের ছিল বারো সন্তান। খানিকটা অনিবার্যই ছিল ঝামেলা। (Indian Politics)
এনটিআরের তৃতীয় কন্যা ভুবনেশ্বরীর স্বামী চন্দ্রবাবু নাইডু শেষ পর্যন্ত শ্বশুরের দলের দখল নিয়েছেন। দ্বিতীয় কন্যা পুরন্ডেশ্বরী আবার এটা মেনে নেননি। তিনি প্রথমে যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেসে, সেখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হন। এখন আবার ডিগবাজি খেয়ে ভারতীয় জনতা পার্টিতে। রামা রাওয়ের দ্বিতীয়া স্ত্রী, লক্ষ্মী পার্বতী প্রথম দিকে চেষ্টা করেছিলেন পার্টি দখলের। শেষ পর্যন্ত রামচন্দ্রনের মতোই দ্রুত হাল ছেড়ে দেন।
“ভারতীয় রাজনীতিতে গান্ধী পরিবারই শুধু ক্ষমতার সংঘাত দেখেনি, দেখেছে ঠাকরে পরিবার, সিন্ধিয়া পরিবার। ওখানে রাজ-উদ্ধব স্টাইলে কখনও ছাড়াছাড়ি হয়েছে, কখনও মিলন। তবে ঝামেলার রেশ তো থেকেই গিয়েছে।”
অন্ধ্রপ্রদেশের আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাজশেখর রেড্ডির মৃত্যুর পরই বা কী কম রাজনীতি হয়েছে তাঁদের পরিবারে! রাজশেখরের ছেলে জগন এবং মেয়ে শর্মিলার মধ্যে সম্পত্তি নিয়েই তুমুল ঝামেলা। মা বিজয়াম্মা প্রকাশ্যেই মেয়ের হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। (Indian Politics)
লালুর ছেলে-মেয়ের মধ্যে যা হয়েছে, তার চেয়েও ভয়ঙ্কর ঘটনার সাক্ষী ওয়াইএসআর পরিবার। জগন এবং শর্মিলা পারিবারিক চিঠিপত্র পর্যন্ত ফাঁস করে দেন, এত ঝামেলা হয় দুই ভাইবোনের। শর্মিলা এখন বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত পার্টি ছেড়ে চলে গিয়েছেন কংগ্রেসে।
আরও পড়ুন: বদলে যাওয়া মানচিত্রে বিস্মিত লালদীঘি!
তামিলনাডু়তে শুধু এমজিআরের পরিবারই নিজেদের ঝামেলার জন্য প্রচারে আসেনি, করুণানিধির পরিবারও দেখেছে তুমুল দ্বন্দ্ব। স্টালিন যখন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন, তখন বড়দা আলাগিরির সঙ্গে তাঁর ঝামেলা প্রকাশ্যে আসে। করুণানিধি অনেকটা লালু স্টাইলেই স্টালিনের পাশে দাঁড়িয়ে বহিষ্কার করে দেন আলাগিরিকে। স্টালিনের ছেলে উদয়ানিধিকে নিয়েও পরিবারে ঝামেলা রয়েছে। করুণানিধির মেয়ে কানিমোঝি তা মানতে পারেননি। স্টালিন না থাকলে ভবিষ্যতে কী হবে, এখনই বলা কঠিন। (Indian Politics)
করুণানিধি পরিবারেরই অঙ্গ মারান পরিবার। সেখানে সান টিভির অধিকার নিয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দয়ানিধি মারান ও ভাই কলানিধি মারানের গণ্ডগোল গড়ায় আদালত পর্যন্ত। দয়ানিধি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন ভাইকে। এঁদের মামলা মোকদ্দমা এখনও তামিল জনতার আমোদের খোরাক।

এমন পরিস্থিতি হয়েছে পিএমকে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা রামাদোসের পরিবারেও। বাবা-ছেলের ঝামেলা যে কত তীব্র হয়, তার উদাহরণ এই পরিবার। সেখানে রামাদোস প্রকাশ্যে তাঁর ছেলে আনবুমানির সমালোচনা করেছিলেন বিজেপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জন্য। এমনও বলেছিলেন, ওকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করার সুপারিশই মারাত্মক ভুল হয়েছে। (Indian Politics)
ভারতীয় রাজনীতিতে গান্ধী পরিবারই শুধু ক্ষমতার সংঘাত দেখেনি, দেখেছে ঠাকরে পরিবার, সিন্ধিয়া পরিবার। ওখানে রাজ-উদ্ধব স্টাইলে কখনও ছাড়াছাড়ি হয়েছে, কখনও মিলন। তবে ঝামেলার রেশ তো থেকেই গিয়েছে। মাধবরাও সিন্ধিয়া এবং তাঁর বোন বসুন্ধরার সঙ্গে ঝামেলা বহু আলোচিত। একজন ছিলেন কংগ্রেসে, অন্যজন বিজেপিতে। এখন তো মাধবরাওয়ের ছেলে জ্যোতিরাদিত্য নাম লিখিয়েছেন পিসির দলেই। একদা মাধবপুত্র ছিলেন রাহুল গান্ধীর সবচেয়ে বিশ্বস্তদের একজন।
“রাজনৈতিক পরিবারে যত ঝামেলা, তত লাভ কংগ্রেস ও বিজেপির। এঁদের অধিকাংশই পরিবারে বিদ্রোহ করে একবার কংগ্রেসে যান, একবার বিজেপিতে। যে পার্টি যত সুবিধে দেবে।”
উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম যাদবের পরিবারের রাজনীতি একটা সময় নয়াদিল্লির কাগজগুলোর প্রথম পাতা দখল করে রাখত, মনে আছে। মুলায়মের পরিবারের অন্তত ২০ জন রাজনীতিতে জড়িয়ে। একবার, মুলায়মের ভাই শিবপালের সঙ্গে লেগে গেল ভাইপো অখিলেশের। মুলায়ম তখন দাঁড়িয়ে গেলেন ভাইয়ের পাশে। অখিলেশকে রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে মুলায়ম সেখানে বসান ভাইকে। ওদিকে অখিলেশ তখন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি শিবপালের ঘনিষ্ঠ সব মন্ত্রীকে সরিয়ে দিলেন মন্ত্রিসভা থেকে। শিবপাল আবার পার্টি থেকে বহিষ্কার করে দিলেন অখিলেশ ঘনিষ্ঠ সব মুখকে। রামগোপাল যাদব, উদয়বীর যাদব। (Indian Politics)
এঁরা কিন্তু পরিবারেরই সদস্য। শিবপাল ভাইপোর সঙ্গে ঝামেলা করে নিজেই আর একটা পার্টি খুলে দিয়েছিলেন ২০১৮ সালে। প্রগতিশীল সমাজবাদী পার্টি (লোহিয়া)। চারবছর পর লোহিয়াবাদ আবার বিসর্জনে। আবার কাকা-ভাইপোর মিলন হয়ে গিয়েছে। কতদিনের জন্য বলা কঠিন।

পরিবারের বেশি লোক রাজনীতিতে ঢুকে পড়লে কত বিপদ, সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্পষ্ট। চলা যাক পাঞ্জাব ও হরিয়ানায়। প্রকাশ সিং বাদলের প্রয়াণের পর অকালি দলের ক্ষমতায় এলেন ছেলে সুখবীর সিং বাদল। প্রকাশের ভাইপো মনপ্রীত এবার বিদ্রোহ করলেন সুখবীরের বিরুদ্ধে। নিজে তৈরি করলেন নতুন পার্টি— পিপলস পার্টি অফ পাঞ্জাব। তারপরে আবার চলে গেলেন প্রথমে কংগ্রেসে, পরে বিজেপিতে। (Indian Politics)
রাজনৈতিক পরিবারে যত ঝামেলা, তত লাভ কংগ্রেস ও বিজেপির। এঁদের অধিকাংশই পরিবারে বিদ্রোহ করে একবার কংগ্রেসে যান, একবার বিজেপিতে। যে পার্টি যত সুবিধে দেবে। কংগ্রেসের পর দেশে সবচেয়ে পুরোনো পার্টি অকালি দল, ১০৫ বছর হয়ে গেল। সেখানেও একবার পার্টির এক নম্বর প্রয়াত প্রকাশ সিং বাদলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন ভাই গুরদাস সিং বাদল।
“আমেরিকায় বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন ও তাঁর ছেলে উইলিয়ামের ঝামেলা নিয়ে আজও লেখালেখি হয়। রুজভেল্ট পরিবারের দুই বিখ্যাত নাম টেডি এবং ফ্র্যাঙ্কলিন ছিলেন দুই দিগন্তের মুখ। একজন রিপাবলিকান, একজন ডেমোক্র্যাট।”
পঞ্জাব ছেড়ে হরিয়ানায় গেলে ঝামেলায় সব লালে লাল। দেবীলাল, ভজনলাল, বংশীলালের মতো নেতাদের পরিবারে তাকালে সর্বত্র মুলায়ম বা লালুর মতো ঝামেলা। প্রাক্তন উপ প্রধানমন্ত্রী দেবী লালের পরিবারেই ঝামেলা সবচেয়ে বেশি। মনে আছে, ওমপ্রকাশ চৌতালার দুই ছেলে অজয় এবং অভয়ের মধ্যে মারাত্মক খেয়োখেয়ি। ওই সময় অজয় এবং তাঁর দুই ছেলেকে বহিষ্কার করা হল পার্টি থেকে। লোক দল পার্টি থেকে তৈরি হল জননায়ক জনতা পার্টি। করলেন অজয়ের ছেলে দুষ্যন্ত। এরা আবার বিজেপি সরকারের সঙ্গীও হয়ে গেল হরিয়ানায়। কদিন আগে ১৯৯০ সালে মেহমে গুলি চালনার ঘটনা নিয়ে অজয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন অভয়ের ছেলে করণ চৌতালা। (Indian Politics)
এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি ভজনলাল ও বংশীলালের পরিবারেও হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে প্রথম লক্ষণই হল, পরিবারের একজনের বিরুদ্ধে আর একজনের নির্বাচনে দাঁড়িয়ে পড়া। সেটাই হয়েছে।
ইউরোপ বা আমেরিকায় এমন রাজনৈতিক পরিবার অনেক। সেখানে ছবিটা কেমন? চোরাগোপ্তা টেনশন অনেক রাজনৈতিক পরিবারে রয়েছে। আমেরিকায় বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন ও তাঁর ছেলে উইলিয়ামের ঝামেলা নিয়ে আজও লেখালেখি হয়। রুজভেল্ট পরিবারের দুই বিখ্যাত নাম টেডি এবং ফ্র্যাঙ্কলিন ছিলেন দুই দিগন্তের মুখ। একজন রিপাবলিকান, একজন ডেমোক্র্যাট। (Indian Politics)
আরও পড়ুন:উত্তর কেন দেশের সব রাজ্যই বঞ্চিত, উত্তর নেই
কেনেডি বা বুশের পরিবারেও মাঝেমাঝে রাজনৈতিক মতবাদের দ্বন্দ্ব প্রবল হয়েছে। বিশেষ করে কেনেডি পরিবারে ঝামেলা স্পষ্ট হয়েছে নানা ইস্যুতে। এই তো ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাইঝি মেরি ট্রাম্পও সমালোচনা করেছেন তাঁর নীতির। তবে ফ্রান্সে দক্ষিণপন্থী দল ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা, বহু পরিচিত প্রয়াত জাঁ মারি লা পেনের ভাগ্যে যা জুটেছিল, তা অবিশ্বাস্য।
দশ বছর আগে লা পেনকে তাঁরই পার্টি থেকে বহিষ্কার করে দেন তাঁর মেয়ে মারিয়ন লা পেন। নিজের ও পার্টির ভাবমূর্তি ফেরাতে। বাবার ওরকম আক্রমণাত্মক বিতর্কিত উগ্রবাদী কথাবার্তা মেয়ের পছন্দ নয়। দলে নিয়ন্ত্রণ নিয়েই বাবাকে ছাঁটাই করে দেয় মেয়ে। (Indian Politics)
পাটনার রোহিনী, হায়দরাবাদের কবিতারা অন্তত বাবাকে এমন হেনস্থার মধ্যে ফেলেননি!
মুদ্রিত ও ডিজিটাল মাধ্যমে সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই সময় সংবাদপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী সম্পাদক। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে কভার করেছেন একাধিক বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিক গেমস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, খেলা, গান, সিনেমা, ভ্রমণ, খাবারদাবার, মুক্তগদ্য— বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে ভালবাসেন।
