Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Post Type Selectors

নিঃশব্দ ঘাতক

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

আগস্ট ৪, ২০২৩

opioid crisis in America
opioid crisis in America
Bookmark (0)
Please login to bookmark Close

২০১৯ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি। নিউইয়র্ক শহরের গুগেনহাইম মিউজিয়ামে একটা প্রতিবাদ অনুষ্ঠান হয়। পারডিউ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির মালিক স্যাকলার পরিবারের বিরুদ্ধে এই অভূতপূর্ব প্রতিবাদটি হয় নিউয়র্কবাসী বিখ্যাত ফটোগ্রাফার ন্যান্সি গোল্ডিনের নেতৃত্বে। অক্সিকনটিন (oxycontin) পারডিউ ফার্মার (Purdue Pharma) মিরাকেল পেইনকিলার হিসাবে আসে বাজারে এবং দাবি কদরা হয়, এর কোনও ক্ষতিকারক প্রভাব বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।পাঁচ বছরের মধ্যে এই ওষুধ আমেরিকার সবচেয়ে বেশি প্রেস্ক্রাইবড ওষুধ হিসাবে বাজার দখল করে নেয় আর তার সঙ্গে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে কীভাবে মানুষ এই ওষুধে আসক্ত হয়ে পড়ছে এবং কীভাবে বাড়ছে অক্সিকনটিন ওভারডোজে মৃত্যুর সংখ্যা। ন্যান্সি গোল্ডিনের একটি সাধারণ সার্জারির পর ডাক্তার তাকে এই পেইনকিলারটি প্রেসক্রাইব করেন। তার থেকে আসক্তি এবং তার থেকে ওভারডোজ থেকে প্রায় মৃত্যু। ন্যান্সি গোল্ডিন নিজের আসক্তির সঙ্গে লড়াই করে ফিরে আসেন এবং আরও অনেক মানুষ যারা তাদের পরিজনদের হারিয়েছেন তাদের সঙ্গে নিয়ে এই প্রতিবাদ জানান। গুগেনহাইমের উঁচু তলা গুলো থেকে সেদিন নীচে উড়িয়ে দেওয়া হয় নকল প্রেসক্রিপশন, ওষুধের বোতল। নীচে খোলা মাটিতে শুয়ে মৃত মানুষ সেজে পড়ে ছিলেন বেশ কিছু প্রতিবাদী। আর ওপর থেকে টাঙিয়ে দেওয়া হয় ব্যানার; যাতে লেখা ছিল গুগেনহাইম আর অন্যান্য মিউজিয়াম স্যাকলার পরিবার থেকে কোনওরকম অনুদান আর নেবে না। আর্টের গায়ে যেন এই অপরাধের ছায়া না পড়ে। এই প্রতিবাদ কার্যকরী হয়। আমেরিকা ইউরোপের বহু বিশ্ববিখ্যাত মিউজিয়াম স্যাকলার পরিবারের নাম মুছে ফেলে। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আমেরিকার ওপিঅয়েড ক্রাইসিসের (opioid crisis in America) ওপর একটা জোরালো ফোকাস লাইট এসে পড়ে। কিন্তু কীভাবে শুরু হয় এই মারাত্মক ওপিঅয়েডের যাত্রাপথ? জানতে গেলে আমাদের একটু অতীতে ফিরে যেতে হবে।   

Nan Goldin
ন্যান্সি গোলডিন যিনি ন্যান গোল্ডিন নামে সুপরিচিত।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও হেরোইন জাতীয় ড্রাগের ব্যবহার বরাবরই ছিল, কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে তার সঙ্গে যুক্ত হয় একটা অন্য জিনিস– পেইনকিলার। যেটা এই মাদকাসক্তিকে একটা অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঠেরোশো সালের আগে, বিভিন্ন নিরাময়হীন যন্ত্রণাদায়ক অসুখে ডাক্তাররা ব্যথা কমানোর জন্য কোকেন, এবং অনান্য ওপিঅয়েড প্রেসক্রাইব করতেন। সময়ের সঙ্গে সেগুলো যে কোনও ধরনের মামুলি রোগের চিকিৎসাতেও এত বেশি ব্যবহার হতে শুরু করে, রাস্তাঘাটে হেরোইন এত সহজলভ্য হয়ে যায়, মরফিন এত বেশি ব্যবহার হয়, যে ১৯১৪ তে আসে ‘হ্যারিসন নার্কোটিক কন্ট্রোল অ্যাক্ট’। এর পরে বহু বছর যে কোনও ধরনের রোগে ওপিঅয়েড ভিত্তিক ব্যথা উপশমকারী ওষুধ এবং ব্যবহার প্রায় নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এমনকি ক্যানসার রোগীদের একেবারে শেষ অবস্থায় পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত পরামর্শ দেওয়া হতো এ ধরনের কোনও ওষুধ ব্যবহার না করতে।

এই কঠোর দৃষ্টিভঙ্গী আর আইন চালু থাকে বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে। ১৯৭০ এর পর থেকে চিকিৎসক এবং বৈজ্ঞানিক মহল থেকে এই বিষয়ে প্রচুর মতামত প্রকাশিত হতে থাকে যে এই কঠোর আইন, ম্যালিগন্যান্ট যন্ত্রনায় থাকা মানুষদের কাছ থেকে বেঁচে থাকার শেষ একটু স্বস্তিও কেড়ে নিচ্ছে। তারা বলেন, প্রচণ্ড যন্ত্রণায় থাকা রোগীদের, চিকিৎসকদের নির্দেশ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত মাপে ওপিঅয়েড নির্ভর ওষুধ দিলে, সেটা কষ্টের উপশম ঘটিয়ে শরীরকে রোগের সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে। আর বিরুদ্ধ মত ছিল এই নিয়ন্ত্রিত মাপের ওপিঅয়েড খুব তাড়াতাড়ি আসক্তিতে পরিণত হতে পারে। যারা এর পক্ষে ছিলেন, তাদের খানিকটা জয় হয়, ক্যান্সার রোগীদের যন্ত্রনা উপশমের জন্য এর ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু শুধু ক্যান্সার কেন? কেন অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী দুরারোগ্য যন্ত্রণার জন্য এই ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না এই নিয়ে চলতে থাকে চাপান উতোর। ১৯৯৫ সালে আমেরিকান পেইন সোসাইটি একটি জোরালো ক্যাম্পেন চালু করে ‘Pain is the fifth vital sign’ নামে। এই ক্যাম্পেনের ভিত্তি হলো রোগীর ব্যথার কারণ বোঝা আর তার সঙ্গে চিকিৎসার একটা সুসংবদ্ধ ব্যবস্থা করা। আজকের আমেরিকায় যে কোনও ব্যথাজনিত সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে, ব্যথার পরিমাণ বুঝতে সংখ্যার ব্যবহার- একটা প্রচলিত ব্যবস্থা। অর্থাৎ ব্যথাটা সে সময়ে ১-১০ এর পরিমাপে কোন জায়গায় আছে বলে রোগীর মনে হচ্ছে। ব্যথাকে সংখ্যায়িত করার এই প্রচলনও ওই সময়টাতেই শুরু হয়। চিকিৎসা জগতে একটা ভীষণ দ্রুত পরিবর্তন আসে যেটা একটা বিপরীতমুখী ধারা তৈরি করে– রোগী প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে এলে, তাকে প্রথমে ব্যথা মুক্ত করতে হবে এই বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। 

কিন্তু তখন যে ওপিঅয়েড যুক্ত ওষুধ বাজারে চালু ছিল, সেগুলোকে অন্যভাবে নেশার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা রোগীরা নির্ভরশীল ও আসক্ত হতে পারে বলে সেগুলোর ওপর চিকিৎসকদের খুব ভরসা ছিল না। সেই পরিস্থিতিতেই পারডিউ ফার্মা ১৯৯৬ সালে নিয়ে আসে বলতে গেলে এক মিরাকেল ওষুধ-অক্সিকনটিন। এই কোম্পানি দুটো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দাবি করে– প্রথমতঃ এই ওষুধে খুব ধীরে ধীরে রক্তে নিঃসৃত হয় তাই তার প্রভাব থাকে বারো ঘন্টা পর্যন্ত, যে কারণে বেশি ওষুধ খাবার প্রয়োজন নেই । দ্বিতীয়তঃ রিসার্চে দেখা গেছে, এই ওষুধে আসক্তি হবার সম্ভানা শতকরা মাত্র এক শতাংশ। অচিরেই ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশনের স্বীকৃতি পেয়ে যায় অক্সিকনটিন আর এর পরের পর্ব হল– বিরাট ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির বাজার দখল করার একমুখী নির্লজ্জ লোভ, সাধারণ মানুষের অসহায়তা এবং নির্ভরযোগ্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত নিস্পৃহতার এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। 

আমেরিকার প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ঝাঁ চকচকে, তুখোড়, বুদ্ধিমান ছেলেমেয়েদের নিয়ে তৈরি হয় পারডিউ ফার্মার মার্কেটিং টিম। অবিশ্বাস্য মাত্রার বোনাসের প্রতিশ্রুতিতে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় ছোট ছোট গ্রাম, শহরের ফার্মেসিতে, ডাক্তারের অফিসে, যেখানে তারা কোম্পানি নির্ভর রিসার্চের তথ্য ছাপার অক্ষরে, গ্রাফের ওঠানামায় বোঝাতে থাকে। সঙ্গে থাকে এই ওষুধ প্রেসক্রাইব করে ডাক্তররা আসলে তাদের ব্যথায় কষ্ট পাওয়া রোগীদের কতটা উপকার করছেন, সেটা বোঝানোর চেষ্টা। কোথায় এই রোগীরা? ভার্জিনিয়ার ছোট ছোট মাইনিং শহর বা গ্রামে। মেইন স্টেটে, যেখানে গাছ কাটা আর কাঠ চেরাইয়ের কাজ হয়। অর্থাৎ যেখানে শারীরিক কারণে কাজের জন্য মানুষের ব্যথার প্রকোপের সম্ভাবনা অনেক বেশি। এমন কমিউনিটি যারা বাকি আমেরিকার থেকে খানিকটা বিচ্ছিন্ন, অবস্থানগত কারণে আর তাদের কাজের পৃথিবীটা সেখানেই সীমাবদ্ধ। তারা গরিব। কাজেই সেখানে হওয়া কোনও সমস্যার কথা বাকি আমেরিকায় পৌঁছতে সময় লাগবে।

ওষুধ কাজ করতে শুরু করে কিন্তু কিছু সময় পর যখন ১০ মিলিগ্রামে কাজ না হয়, অচিরেই কোম্পানি ২০, ৪০, ৮০ মিলিগ্রামের ওষুধ তৈরি করে এবং মার্কেটিং টিম মসৃণ ভাবে পৌঁছে দেয় ডাক্তারের কাছে। আর শুধু প্রাণবিপন্নকারী বা নিয়ন্ত্রণহীন ব্যথার জন্য নয়, যে কোনও সার্জারি, অন্যান্য অসুখ বা মাঝারি ধরনের ব্যথা কমানোর জন্য ব্যপক হারে এই ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। যেহেতু প্রথম থেকেই পারডিউ ফার্মা ঘোষণা করে এতে আসক্তির সম্ভাবনা প্রায় নেই, ওষুধ প্রেস্ক্রাইব করার মাত্রা বাড়তে থাকে। ব্যথাও কমে কিন্তু তার সঙ্গে শুরু হয় অন্ধ নির্ভরতা। আসক্তি। নিজের অজান্তে আকস্মিক দুর্ঘটনা বা সার্জারির পর নেওয়া সাধারণ মানুষ আসক্ত হতে শুরু করে অক্সিকনটিনে। মার্কেটিংয়ের মানুষজন এই সব জায়গার ডাক্তারদের কোম্পানির খরচে বিলাসবহুল ভ্রমণে নিয়ে যায় বড় শহরে, যেখানে তারা আমেরিকান পেইন সোসাইটির সঙ্গে যুগ্ম ভাবে এই ওষুধের হয়ে তাদের রোগীদের সেরে ওঠার কথা বলতে থাকেন। এই প্রবল প্রচারের মধ্যে অক্সিকনটিন আসক্তির কথা চাপা পড়ে যেতে থাকে। পারডিউ ফার্মার লাভ হতে থাকে আকাশছোঁয়া। 

এই কোম্পানি দুটো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দাবি করে– প্রথমতঃ এই ওষুধে খুব ধীরে ধীরে রক্তে নিঃসৃত হয় তাই তার প্রভাব থাকে বারো ঘন্টা পর্যন্ত, যে কারণে বেশি ওষুধ খাবার প্রয়োজন নেই । দ্বিতীয়তঃ রিসার্চে দেখা গেছে, এই ওষুধে আসক্তি হবার সম্ভানা শতকরা মাত্র এক শতাংশ। অচিরেই ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশনের স্বীকৃতি পেয়ে যায় অক্সিকনটিন আর এর পরের পর্ব হল– বিরাট ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির বাজার দখল করার একমুখী নির্লজ্জ লোভ, সাধারণ মানুষের অসহায়তা এবং নির্ভরযোগ্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত নিস্পৃহতার এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।

আমেরিকার প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ঝাঁ চকচকে, তুখোড়, বুদ্ধিমান ছেলেমেয়েদের নিয়ে তৈরি হয় পারডিউ ফার্মার মার্কেটিং টিম। অবিশ্বাস্য মাত্রার বোনাসের প্রতিশ্রুতিতে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় ছোট ছোট গ্রাম, শহরের ফার্মেসিতে, ডাক্তারের অফিসে, যেখানে তারা কোম্পানি নির্ভর রিসার্চের তথ্য ছাপার অক্ষরে, গ্রাফের ওঠানামায় বোঝাতে থাকে। সঙ্গে থাকে এই ওষুধ প্রেসক্রাইব করে ডাক্তররা আসলে তাদের ব্যথায় কষ্ট পাওয়া রোগীদের কতটা উপকার করছেন, সেটা বোঝানোর চেষ্টা। কোথায় এই রোগীরা? ভার্জিনিয়ার ছোট ছোট মাইনিং শহর বা গ্রামে। মেইন স্টেটে, যেখানে গাছ কাটা আর কাঠ চেরাইয়ের কাজ হয়। অর্থাৎ যেখানে শারীরিক কারণে কাজের জন্য মানুষের ব্যথার প্রকোপের সম্ভাবনা অনেক বেশি। এমন কমিউনিটি যারা বাকি আমেরিকার থেকে খানিকটা বিচ্ছিন্ন, অবস্থানগত কারণে আর তাদের কাজের পৃথিবীটা সেখানেই সীমাবদ্ধ। তারা গরিব। কাজেই সেখানে হওয়া কোনও সমস্যার কথা বাকি আমেরিকায় পৌঁছতে সময় লাগবে।

opioid crisis in America
ব্যথাও কমে কিন্তু তার সঙ্গে শুরু হয় অন্ধ নির্ভরতা।

ওষুধ কাজ করতে শুরু করে কিন্তু কিছু সময় পর যখন ১০ মিলিগ্রামে কাজ না হয়, অচিরেই কোম্পানি ২০, ৪০, ৮০ মিলিগ্রামের ওষুধ তৈরি করে এবং মার্কেটিং টিম মসৃণ ভাবে পৌঁছে দেয় ডাক্তারের কাছে। আর শুধু প্রাণবিপন্নকারী বা নিয়ন্ত্রণহীন ব্যথার জন্য নয়, যে কোনও সার্জারি, অন্যান্য অসুখ বা মাঝারি ধরনের ব্যথা কমানোর জন্য ব্যপক হারে এই ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। যেহেতু প্রথম থেকেই পারডিউ ফার্মা ঘোষণা করে এতে আসক্তির সম্ভাবনা প্রায় নেই, ওষুধ প্রেস্ক্রাইব করার মাত্রা বাড়তে থাকে। ব্যথাও কমে কিন্তু তার সঙ্গে শুরু হয় অন্ধ নির্ভরতা। আসক্তি। নিজের অজান্তে আকস্মিক দুর্ঘটনা বা সার্জারির পর নেওয়া সাধারণ মানুষ আসক্ত হতে শুরু করে অক্সিকনটিনে। মার্কেটিংয়ের মানুষজন এই সব জায়গার ডাক্তারদের কোম্পানির খরচে বিলাসবহুল ভ্রমণে নিয়ে যায় বড় শহরে, যেখানে তারা আমেরিকান পেইন সোসাইটির সঙ্গে যুগ্ম ভাবে এই ওষুধের হয়ে তাদের রোগীদের সেরে ওঠার কথা বলতে থাকেন। এই প্রবল প্রচারের মধ্যে অক্সিকনটিন আসক্তির কথা চাপা পড়ে যেতে থাকে। পারডিউ ফার্মার লাভ হতে থাকে আকাশছোঁয়া। 

অন্য দিকে বিচ্ছিন্ন ভাবে হতে থাকা দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আসল ছবিও সামনে আসতে থাকে। দীর্ঘদিন ব্যথায় থাকা মানুষ যেমন বোঝে ৪০ বা ৮০ মিলিগ্রামের অক্সিকনটিন কত তাড়াতাড়ি আসক্তি তৈরি করতে পারে তেমনই ড্রাগ খুঁজে বেড়ানো অল্পবয়সীরা খুব তাড়াতাড়ি বুঝে যায় এর বাইরের কোটিং খুলে নিয়ে গুঁড়ো করে ইনহেল করলে এটা তূরীয় ড্রাগের কাজ করে। ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এড বিস্ক নামে একজন মাঝবয়সী, আইটি কর্মী অফিসে তার মেয়ের কাছ থেকে একটা প্রচণ্ড আতঙ্কগ্রস্ত ফোন কল পান। ফিলাডেলফিয়ার শহরতলিতে তাদের বাড়িতে তার ছেলে বাথরুমে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। মেয়ে বুঝে উঠতে পারছেনা ভাইয়ের কী হয়েছে। তিনি বাড়ি পৌঁছনোর আগেই প্যারামেডিকসরা তাদের যুদ্ধে হেরে যান। বোধহীন এড যখন প্রশ্ন করছেন কী হয়েছে, প্যারামেডিকদের একজনের কাছে তিনি “অক্সি” শব্দটা জীবনে প্রথম শোনেন, যা তার হাইস্কুলে পড়া ছেলের জীবন কেড়ে নিল। গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমসে এবং অন্যান্য খবরের কাগজে এই খবরটি বেরোয় এবং তার পরে আরও অনেক অনেক খবর। কিন্তু যতদিনে দেশজোড়া সচেতনতা গড়ে ওঠে ততদিনে এই ছোট ছোট গরিব শহর গ্রামগুলোর সর্বনাশ হয়ে গেছে।

বেথ মেসির লেখা ‘ডোপসিক’ নামের একটি বই যেটা সাম্প্রতিক কালে একটি টিভি সিরিজ হয়েছে, অত্যন্ত বিস্তৃত এবং গভীরভাবে তুলে ধরেছে কুড়ি বছর ধরে ধীরে ধীরে ড্রাগের কবলে চলে যাওয়া অজস্র মানুষের কথা। তিনি পাঠকদের নিয়ে গেছেন এই মহামারীর উপকেন্দ্রে, মধ্য আপেলেচিয়ার ছোট কমুনিটির থেকে বড় শহরের শহরতলিতে যেখানে স্কুলের ছাত্র থেকে কারখানায় বা খনিতে কাজ করা সাধারণ মানুষ আসক্ত হয়ে নষ্ট করে ফেলেছে নিজেদের জীবন। যখন আর ডাক্তারের কাছে ওষুধ পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না তখন হেরোইনের মতো ড্রাগস-এর নেশায় জড়িয়ে পড়ছেন তারা| ড্রাগ ডিলার, আইন, চিকিৎসা ব্যবস্থা, সরকার, মিডিয়া এই সমস্ত কিছুর জটিল সম্পর্ক, সংঘাত আর তার মাঝখানে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ, যারা কিছুদিন আগেও স্বাভাবিক জীবন যাপন করত, চাষি বা ছোট ব্যবসায়ী, ধর্মভীরু, ছোট ছোট আশা আকাঙ্ক্ষায় ভরা পরিবার যাদের নিজেদের বা সন্তানদের জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে আসক্তির কবলে, তাদের কথা উঠে এসেছে এই বইতে।

এরপর প্রশ্ন আসে– এর প্রতিরোধ কী? কারা প্রতিবাদ করে? অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন পারডিউ ফার্মার বিরুদ্ধে মামলা করে, বিচ্ছিন্নভাবে। বিচ্ছিন্নভাবে নিউয়র্কের বিখ্যাত ফোটোগ্রাফার ন্যান গোল্ডিনের মতো কিছু মানুষ। ডোপসিক বইটি থেকে জানা যায়, ছোট ছোট জায়গার আইনজীবীবিদের এই লড়াই অত বড় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির বিরুদ্ধে-নেহাতই ডেভিড আর গোলিয়াথের গল্প হয়ে যায়। তাছাড়া আসক্তি ওষুধ থেকে আসছে এটা প্রমাণ করা অত্যন্ত কঠিন। মানুষের জীবন পাল্টে দেওয়া এই ওষুধ; যারা সেটার অপব্যবহার করছে, সেটা সম্পূর্ণ ভাবে তাদের দায়িত্ব, তাদের দুর্বলতা– পারডিউ এর আইনজীবীদের কাছে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। 

যখন কোনও সম্প্রদায় তলকুলহীন সমস্যার মধ্যে ডুবতে থাকে, যখন প্রত্যেকটা দিনই একটা যুদ্ধ, তখন সবসময়ই তাদের লড়াই লড়ার মতো, তাদের কথা বলার মতো মানুষেরা উঠে আসেন তাদেরই মধ্যে থেকে। তারা তাদের পাশের মানুষজনকে ডুবতে দেন না, হাত ধরে ভাসিয়ে রাখেন| ছোট ছোট জায়গায় তৃণমূল স্তরে কাজ করা স্বাস্থ্যকর্মী, সমাজকর্মী, ডাক্তার, আইনজীবী, মাদকাসক্তদের পরিবারের মানুষজন লড়ে চলেছেন- ক্যান্সারের মতো ভেতর থেকে ছিবড়ে হয়ে যাচ্ছে এক একটা জায়গা। প্রায় পাঁচ লাখ মৃত্যু জড়িত এই ড্রাগের সঙ্গে। তবে এই লড়াই নীচে থেকে ধীরে ধীরে উঠে এসেছে ওপরে– ওই কোম্পানি ওই পরিবারের বিরুদ্ধে দুই দশক ধরে করা বহু মামলা কেন্দ্রীভূত হয়েছে। আটটি রাজ্য একসঙ্গে মামলা করেছে পারডিউ ফার্মা এবং স্যাকলার পরিবারের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালে নিউইয়র্ক, নিউজার্সিতে ফেডারেল কোর্ট রায় শুনিয়েছে, মালিকপক্ষ ফেডারেল ফুড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন কে ভুল তথ্য জানিয়েছে– অক্সিকনটিন আসক্তির কারণ হতে পারে জেনেও তারা উৎপাদন বাড়িয়ে গেছে এবং যে কোনও উপায়ে যাতে এই ওষুধ ডাক্তারদের কাছে পৌঁছয়, তার ব্যবস্থা করেছে। মামলায় হারার পর এই কোম্পানি নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করার চেষ্টা করেছিল। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এটর্নি জেনারেল জন ফোমেলা ঘোষণা করেন ওপিঅয়েড মহামারীর অপরাধ কাঁধে নিয়ে স্যাকলার ফ্যামিলি কে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে যা ওপিঅয়েডজনিত মৃত্যু, চিকিৎসা আর প্রতিরোধের কাজে খরচ করা হবে।

Fentanyl opioip
ফেন্টানিল নামে একটা নতুন সিন্থেটিক ড্রাগ।

কিন্তু গ্রিক মিথলজির হাইড্রা সাপের মতোই একটা সাপের মাথা কাটলে বেরিয়ে আসে তিনটে মাথা।  এক্ষেত্রেও ফিরে এসেছে বিষ অনেক গুণ বেশি শক্তিতে– ফেন্টানিল নামে একটা নতুন সিন্থেটিক ড্রাগের রূপে। এই ড্ৰাগ অনায়াসে মিশে যায় প্রেস্ক্রিপ্সন পেনকিলার বা অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্টের সঙ্গে। কালোবাজারে অনায়াসে বিক্রি হয়; হেরোইনে আসক্ত মানুষ অথবা খেলাচ্ছলে পরীক্ষা করতে চাওয়া অল্পবয়সীচেদের কাছে, যার সন্ধান তারা পায় অনায়াসে সোশ্যাল মিডিয়াতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এই পিলের শক্তি হেরোইনের প্রায় তিরিশগুণ। আর এটা সস্তা, তাই পাওয়া যায় অনেক বেশি। কোভিডের প্রথম বছরে ড্রাগ ওভারডোজ থেকে মারা গেছে প্রায় এক লক্ষ মানুষ, যেটা আমেরিকার একটি রেকর্ড, আর এই সংখ্যা আগের তিরিশগুণ। প্রতি চারটি ওভারডোজ মৃত্যুর মধ্যে তিনটিই এখন ফেন্টানিলের কারণে ঘটছে। ল্যাবেরটরিতে বানানো এই ড্রাগের ২ মিলিগ্রামই কেড়ে নিতে পারে জীবন। আর সাম্প্রতিক সময়ে কোভিডের বিচ্ছিন্নতা, একাকীত্ব, চাকরি হারানো, ড্রাগ জনিত চিকিৎসা, পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়া, কাউন্সেলিং বন্ধ হওয়া সব মিলিয়ে গোটা পরিস্থিতিকে করে তুলেছে আরও বিপজ্জনক। ২০২২ সালের ইউনাইটেড স্টেটস ড্রাগস এনফোর্সমেন্ট এডমিনিস্ট্রেশনের হাতেই ৫০০ লাখেরও বেশি ফেন্টানিল বা ওই ধরনের ড্রাগস ধরা পড়েছে যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি পিলের একটি ডোজ, মৃত্যুর কারণ হতে পারে। অর্থনৈতিক ভাবেও ভীষণভাবে প্রভাব ফেলেছে এই ক্রাইসিস। গত বছর ইউনাইটেড স্টেটস কংগ্রেস জয়েন্ট ইকোনমিক কমিটির পরিসংখ্যান বলছে এই ওপিঅয়েড অতিমারীর জন্য ২০২০ সালে আমেরিকার ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে যা গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্টের ৭%।

সম্পূর্ণ সমস্যাটা এত গভীর, এত ব্যপ্ত আর এত ক্ষতিকর যে এর সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য অক্লান্ত কর্মী, সুচিন্তিত পলিসি এবং আইন দরকার দেশ এবং আন্তর্জাতিক স্তরে। বিভিন্ন দেশের সরকারের যেমন উচিত সস্তায় ল্যাবেরটরিতে সহজপ্রাপ্য কেমিক্যাল থেকে এই ড্রাগ বানানো বন্ধ করা, তেমনই আমাদের মতো সাধারণ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে অনেক বেশি সচেতনতা প্রয়োজন। পরিবারে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলা থেকে শুরু করে, স্কুলে, স্পোর্টস টিমে, পাড়ায় প্রত্যেক জায়গায় অক্লান্তভাবে প্রচার করে যেতে হবে, কীভাবে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাণ, শুধুমাত্র একটা ভুল সিদ্ধান্তে। কোভিডের কারণে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সামনে এসেছে গত বছর। তাই এই সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে বড় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে আর তার সঙ্গে আমেরিকার অনেক ছোট জায়গায়, বড় শহরে উঠে আসছে প্রতিবাদ বিচ্ছিন্ন বা সংঘবদ্ধ ভাবে– সেই সব অভিভাবকদের কাছ থেকে যারা তাদের সন্তানদের হারিয়েছেন। তারা যেমন এই মৃত্যুর বিচার চাইছেন এটাও চাইছেন যাতে আরও অনেকে তাদের মতো, সন্তান বা প্রিয়জনদের না হারান। সহমর্মিতার আলো না থাকলে এই গভীর অসুখ সারার নয়।

তথ্যঋণ:

https://en.wikipedia.org/wiki/Opioid_epidemic_in_the_United_States#:~:text=In%20the%20United%20States%2C%20there,for%20500%2C000%20of%20those%20deaths.

https://www.cdc.gov/opioids/basics/epidemic.html

https://www.cfr.org/backgrounder/fentanyl-and-us-opioid-epidemic

ছবি সৌজন্য: Wikipedia

mahua sen mukherjee

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায় বস্টন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। মূলতঃ ছোট গল্প এবং আর্টিকেল লেখেন। ছোট গল্প সংকলন ক্যালাইডোস্কোপ এবং অপরাজিতা প্রকাশিত হয়েছে, কমলিনী,দেজ পাবলিকেশন থেকে।একটি ছোট গল্পের অনুবাদ শর্টলিস্টেড হয়েছে, ‘Armory Square Prize for women writers in South Asian literature’ এ। অনুদিত গল্পটি প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত Words Without Borders এর পাতায় ।আনন্দবাজারের বিদেশ পাতার নিয়মিত লেখেন তাছাড়া রোববার-সংবাদ প্রতিদিন, বাংলা লাইভ, গুরুচণ্ডালী এবং আরো কিছু ম্যাগাজিনে গল্প এবং ছোট বড় প্রবন্ধ নিয়মিত লেখেন।

Picture of মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায় বস্টন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। মূলতঃ ছোট গল্প এবং আর্টিকেল লেখেন। ছোট গল্প সংকলন ক্যালাইডোস্কোপ এবং অপরাজিতা প্রকাশিত হয়েছে, কমলিনী,দেজ পাবলিকেশন থেকে।একটি ছোট গল্পের অনুবাদ শর্টলিস্টেড হয়েছে, ‘Armory Square Prize for women writers in South Asian literature’ এ। অনুদিত গল্পটি প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত Words Without Borders এর পাতায় ।আনন্দবাজারের বিদেশ পাতার নিয়মিত লেখেন তাছাড়া রোববার-সংবাদ প্রতিদিন, বাংলা লাইভ, গুরুচণ্ডালী এবং আরো কিছু ম্যাগাজিনে গল্প এবং ছোট বড় প্রবন্ধ নিয়মিত লেখেন।
Picture of মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায় বস্টন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। মূলতঃ ছোট গল্প এবং আর্টিকেল লেখেন। ছোট গল্প সংকলন ক্যালাইডোস্কোপ এবং অপরাজিতা প্রকাশিত হয়েছে, কমলিনী,দেজ পাবলিকেশন থেকে।একটি ছোট গল্পের অনুবাদ শর্টলিস্টেড হয়েছে, ‘Armory Square Prize for women writers in South Asian literature’ এ। অনুদিত গল্পটি প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত Words Without Borders এর পাতায় ।আনন্দবাজারের বিদেশ পাতার নিয়মিত লেখেন তাছাড়া রোববার-সংবাদ প্রতিদিন, বাংলা লাইভ, গুরুচণ্ডালী এবং আরো কিছু ম্যাগাজিনে গল্প এবং ছোট বড় প্রবন্ধ নিয়মিত লেখেন।

One Response

  1. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি বাস্তব সমস্যার খুব তথ্যপূর্ণ কভারেজ, পটভূমি এবং গত 3 দশকে এটি কীভাবে ঘটেছে…এখনও কোন সমাধান নেই এবং সবচেয়ে দুর্বল জনগোষ্ঠী ভুগছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Subscribe To Newsletter

কথাসাহিত্য

সংস্কৃতি

আহার

বিহার

কলমকারী

ফোটো স্টোরি

উপন্যাস

Banglalive.com/TheSpace.ink Guidelines

Established: 1999

Website URL: https://banglalive.com and https://thespace.ink

Social media handles

Facebook: https://www.facebook.com/banglaliveofficial

Instagram: https://www.instagram.com/banglalivedotcom

Twitter: @banglalive

Needs: Banglalive.com/thespace.ink are looking for fiction and poetry. They are also seeking travelogues, videos, and audios for their various sections. The magazine also publishes and encourages artworks, photography. We however do not accept unsolicited nonfiction. For Non-fictions contact directly at editor@banglalive.com / editor@thespace.ink

Time: It may take 2-3 months for the decision and subsequent publication. You will be notified. so please do not forget to add your email address/WhatsApp number.

Tips: Banglalive editor/s and everyone in the fiction department writes an opinion and rates the fiction or poetry about a story being considered for publication. We may even send it out to external editors/readers for a blind read from time to time to seek opinion. A published story may not be liked by everyone. There is no one thing or any particular feature or trademark to get published in the magazine. A story must grow on its own terms.

How to Submit: Upload your fiction and poetry submissions directly on this portal or submit via email (see the guidelines below).

Guidelines:

  1. Please submit original, well-written articles on appropriate topics/interviews only. Properly typed and formatted word document (NO PDFs please) using Unicode fonts. For videos and photos, there is a limitation on size, so email directly for bigger files. Along with the article, please send author profile information (in 100-150 words maximum) and a photograph of the author. You can check in the portal for author profile references.
  2. No nudity/obscenity/profanity/personal attacks based on caste, creed or region will be accepted. Politically biased/charged articles, that can incite social unrest will NOT be accepted. Avoid biased or derogatory language. Avoid slang. All content must be created from a neutral point of view.
  3. Limit articles to about 1000-1200 words. Use single spacing after punctuation.
  4. Article title and author information: Include an appropriate and informative title for the article. Specify any particular spelling you use for your name (if any).
  5. Submitting an article gives Banglalive.com/TheSpace.ink the rights to publish and edit, if needed. The editor will review all articles and make required changes for readability and organization style, prior to publication. If significant edits are needed, the editor will send the revised article back to the author for approval. The editorial board will then review and must approve the article before publication. The date an article is published will be determined by the editor.

 

Submit Content

For art, pics, video, audio etc. Contact editor@banglalive.com