আজ মরোক্কোর আকাশে আকাশে আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর। বীরেন্দ্রকিশোর ভদ্রের কণ্ঠে মিশে যায় ফেসের আজান ধ্বনি প্রতিধ্বনিতে ধাক্কা খেয়ে
হাজার হাজার বছরের প্রাচীর প্রাচীরে যেন জাগিয়ে তুলছে
এক এক কিংবদন্তি অসংখ্য আরবী অশ্বক্ষুরের শব্দ তবলার নাকাড়ায় জানায় শ্যামলী মাতৃকার চিন্ময়ীকে মৃন্ময়ীতে আহ্বান। (Poetry)
মুহম্মদের মার্জারেরা রাতের পাহারা সেরে সকালের গলা রোদে পিঠ দিয়ে পোহায় নরম উত্তাপ। একটু পরেই শুরু হবে লক্ষ মানুষের পথচলা মেদিনার কবলস্টোনের গলি উপগলিতে।
এক একটা ক্ষয়ে যাওয়া পাথর থেকে উঠে আসে জানা অজানা গল্প
ইতিহাস বিক্রি হয় দোকানে দোকানে আমি শোনার চেষ্টা করি মাত্র।
জনকোলাহলের মধ্যে শুনি রুমির সুফি ভালোবাসার গান
বাউলের গলায় অসীম ছন্দে বেজে ওঠে রূপলোক রসলোকে আনে নব ভাবমাধুরী সঞ্জীবনী মৃত কাসবায়। চোখের রূপালী পর্দায় দেখি বার্বার রাণী “কাহিনা দিহা” রোদ ঝলসানো তরবারী হাতে নেমে আসছেন আটলাস পর্বতের পাথর ভেঙে
পেছনে হাজার বার্বার যোদ্ধা পুরুষ, খন্ডকাটা করেন আগ্রাসী আরবী সৈনিকদের আর ভূমধ্যসাগরের জল হয়ে ওঠে ভোরের রোদের রঙে রক্তিম।
সেই মানুষের রক্তাক্ত ইতিহাস যেন পিছু নেয় আজও, যুগযুগান্তরে থামে না মৃত্যুর ইতিহাস সন্তান হারোনো মায়েদের কান্না জালালুদ্দিন রুমির টোরাহ আর কোরানের ভালেবাসার কাব্যগ্রন্থ শুধু ওড়ে নীল আকাশে বিষাদ গান মেখে।
আমি কান পেতে শুনতে চেষ্টা করি এই আশ্বিনের মহালয়ার ভোরে আমার কলকাতার তিলোত্তমার শেষ নিশ্বাস।

(ফেস Fes মরোক্কোর এক পুরোনো শহর, মেদিনা-প্রাচীর ঘেরা মানুষের বাসস্থান, কাসবা- প্রাচীর ঘেরা দুর্গ, বার্বার Berber- আরবদের আগে মরোক্কোর আটলাস পাহাড়ে বসবাসকারী জাতি, মহম্মদ বিড়াল ভালোবাসতেন বলে এইসব দেশে বিড়াল সমাদৃত ও সর্বত্র)
অলংকরণ – আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়
জন্ম ১৯৫৯ | ইংরাজি ও বাংলা দুই ভাষায় লেখেন।প্রকাশিত পাঁচটি কবিতার বই | 'বরফে হলুদ ফুল'-এর জন্য ২০০৫ সালে পেয়েছেন জসীমউদ্দিন পুরস্কার | ২০০৮ সালে সুধীন্দ্রনাথ পুরস্কার "গৃহযুদ্ধের দলিল" কাব্যগ্রন্থের জন্য। ভাষানগর পুরস্কার ২০১৭ সাল। তাঁরই প্রচেষ্টার ফসল 'উড়ালপুল' |